১১. প্রসারমান মহাবিশ্ব

১১. প্রসারমান মহাবিশ্ব

এ পর্যন্ত আমরা প্রধানত পৃথিবী কিংবা সৌরতন্ত্রের সঙ্গে জড়িত পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষা নিয়ে আলোচনা করছিলাম। শুধুমাত্র মাঝে মাঝে আমাদের তারকার প্রসঙ্গে যেতে হয়েছে। এই অধ্যায়ে আমাদের সীমার বিস্তার হবে দূরতর : আমরা দেখব সম্পূর্ণ মহাবিশ্ব সম্পর্কে অপেক্ষবাদের কি বক্তব্য।

জ্যোতির্বিজ্ঞানের যে সমস্ত পর্যবেক্ষণফল নিয়ে আমরা আলোচনা করব সেগুলি মোটামুটি সুপ্রতিষ্ঠিত বলে বিশ্বাস করা হয়। কিন্তু নুতন প্রযুক্তি নিয়ে আসছে নতুন পর্যবেক্ষণের সম্ভাবনা। ফলে সুপ্রতিষ্ঠিত পর্যবেক্ষণফলগুলি অবিরত সংস্কৃত হচ্ছে। তাছাড়া এই পর্যবেক্ষণফলগুলির তাত্ত্বিক ব্যাখ্যার চরিত্র যথেষ্ট দূরকল্পনাভিত্তিক (speculative)। সুতরাং এ অনুমান করা ঠিক হবে না যে এখন আমরা যে সমস্ত তাত্ত্বিক ব্যাপার পর্যলোচনা করছি তার স্থিরত্ব (solidity) এতক্ষণ পর্যন্ত আমরা যে আলোচনা করেছি তারই মতো। সেগুলির উন্নতি অবশ্যই প্রয়োজন। কোনো অপরিবর্তনীয় সত্য কিংবা কোনো চিরস্থায়ী অযৌক্তিক মত (eternal dogma) প্রতিষ্ঠা করা, বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য নয়। বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য: পারস্পরিক আসন্নতার (successive approximation) সাহায্যে সত্যের সমীপবর্তী হওয়া। কিন্তু চরম এবং সার্বিক নির্ভুলতা লাভ হয়েছে এ দাবী বিজ্ঞান কোনো স্তরেই করবে না।

মহাবিশ্বের সাধারণ রূপ সম্পর্কে কিছু প্রাথমিক ব্যাখ্যা প্রয়োজন। অত্যন্ত বিরাট মাত্রায় (on a large scale) পদার্থের বণ্টন সম্পর্কে অনেক কিছুই এখন জানা। আমাদের সূর্য বহু মিলিয়ন (১০,০০,০০০ দশ লক্ষ) তারকার একটি তন্ত্রের ভিতরের একটা তারকা। এগুলির নাম ছায়াপথ বা গ্যালাক্সি (galaxy)। গ্যালাক্সির আকার একটি বিরাট ক্যাথেরিন চক্রের* (Catherin Wheel) মতো। এই চক্রের উজ্জ্বল কেন্দ্র থেকে তারকা। দিয়ে গঠিত বহু সর্পিল বাহু (spiral arms) বেরিয়ে এসেছে।

তারকা দিয়ে গঠিত এইরকম একটি সর্পিল বাহুতে সূর্যের অবস্থান। ছায়াপথের চক্রকেন্দ্রের কেন্দ্র থেকে এর দূরত্ব বোধহয় ২৮,০০০ আলোক বৎসরের কাছাকাছি। ছায়াপথের মাপনীয় অধিকাংশ মাপনের মতো এই মাপনও গণনা করা শক্ত এবং ভবিষ্যতে এ মাপন সংশোধিত হতে পারে (ছায়াপথের মানদণ্ডে দূরত্ব প্রায়শই আলোকবর্ষে মাপা হয়। এক বৎসরে আলোক যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে এক আলোকবর্ষ বলে। পৃষ্ঠা ১৮-তে দেওয়া আলোকের বেগকে এক বছরে যে কটি সেকেন্ডে হয় সেই রাশি দিয়ে গুণ করে আপনি এই দূরত্ব গণনা করতে পারেন। এক বছরে সেকেন্ডের সংখ্যা ৩,১৫,৩৬,০০০। উত্তরটিকে মাইলে রূপান্তরিত করলে দাঁড়ায়–ছ মিলিয়ন, মিলিয়ন মাইল)।

আকাশ পরিষ্কার থাকলে, একদিক থেকে অন্যদিক পর্যন্ত বিস্তৃত উজ্জ্বল তারার মালার মতো, ছায়াপথকে দেখতে পাওয়া যায়। আমরা সর্পিল বাহুতে আমাদের অবস্থান থেকে দেখি শুধুমাত্র বাকী ছায়াপথের কিনারার দৃশ্য।

ছায়াপথের সীমারেখাগুলি কিন্তু মোটেই স্পষ্ট নয়। মূল তারকাপুঞ্জের একপাশ থেকে অন্যপাশের বিস্তার প্রায় ১,২০,০০০ আলোক বৎসর। কিন্তু তারকা ছাড়াও ছায়াপথে প্রচুর পরিমাণ বায়বীয় পদার্থ রয়েছে। এর ভিতরে বেশির ভাগই হাইড্রোজেন, তাছাড়া আছে ধূলি এবং আরো কিছু পদার্থ। কিন্তু সেগুলিকে শনাক্ত করা যায়নি। এই অজানিত পদার্থ একটি গোলকাকৃতি মেঘ সৃষ্টি করে বলে বৈজ্ঞানিকদের ধারণা। এই মেঘ দৃশ্যমান তারাকাপুঞ্জ থেকেও দূরে বিস্তৃত। এই মেঘ প্রত্যক্ষ দেখা যায় না, তারকা এবং অন্যান্য পর্যবেক্ষণযোগ্য পদার্থের উপর এর মহাকর্ষীয় অভিক্রিয়া থেকে এর অস্তিত্ব অনুমিত হয়। এই মেঘের বিস্তার হয়তো পাঁচ লক্ষ থেকে ছয় লক্ষ আলোক বৎসর।

তারকা বায়বীয় পদার্থ, ধূলি এবং শনাক্ত না করা এই পদার্থের সঞ্চিত পুঞ্জ চক্ৰকেন্দ্রকে প্রদক্ষিণ করে ধীরগতিতে আবর্তিত হয়। এই আবর্তনের চরিত্র থেকেই শনাক্ত না করার পদার্থের অস্তিত্ব অনুমান করা যায়। আবর্তনের বেগ চক্রকেন্দ্রের কেন্দ্র থেকে দূরত্ব অনুসারে এমনভাবে পরিবর্তিত হয় বলে অনুমিত হয় যে ঐ পদার্থ ছাড়া সে আবর্তনকে ব্যাখ্যা করা যায় না।

চক্রকে সাপেক্ষ সূর্যের অনুমিত দ্রুতি সেকেন্ডে প্রায় ২২০ কিলোমিটার। যদি দ্রুতি এবং কেন্দ্র থেকে দূরত্বের অনুমান সঠিক হয় তাহলে কেন্দ্রকে একবার প্রদক্ষিণ করতে সূর্যের প্রায় ২৪০ মিলিয়ন বৎসর লাগে।

পরিবেষ্টনীর মেঘের ভিতরকার ছায়াপথের পদার্থের ভর মনে হয় সূর্যের মিলিয়ন মিলিয়ন গুণ।

জানা যায় ছায়াপথের একদল অনুগামী (retinu of statellites) রয়েছে। সেগুলির ভিতরে ম্যাগেলানিক (Magellanic) মেঘই সবচাইতে পরিচিত এবং নিকটতম। এর অবস্থান চক্ৰকেন্দ্র থেকে দুই লক্ষ আলোক বৎসর দূরে।

এই ছায়াপথ কিন্তু মহাবিশ্বে একেবারেই নিঃসঙ্গ নয়। যে অঞ্চল দূরবীক্ষণে দেখা যায় তার ভিতরে বহু মিলিয়ন এই ধরনের তন্ত্র ছড়িয়ে আছে। অন্য তন্ত্রগুলিকেও ছায়াপথ বলা হয় (কিংবা কখনো কখনো বলা হয় নীহারিকা–Nebulae)। কিছু কিছু ছায়াপথ চ্যাপ্টা আমাদের ছায়াপথের মতো তাদেরও সর্পিল বাহু রয়েছে। কতকগুলি ফুটবলের মতো গোলকাকার, আবার কতকগুলি রাগবী বলের মতো ডিম্বাকৃতি, আবার কতকগুলি আছে যারা গঠনে অসমাঙ্গ (irregular)।

ছায়াপথগুলির পুঞ্জীভূত (groups) হওয়ার একটা স্পষ্ট প্রবণতা দেখা যায়। এই পুঞ্জগুলিকে বলা হয় গুচ্ছ (cluster)। একক একটি গুচ্ছের ভিতরে লক্ষ লক্ষ একক ছায়াপথ থাকতে পারে। তাদের প্রত্যেকটির ভিতরে আমাদেরটির মতো বহু মিলিয়ন তারকা থাকতে পারে। আমাদের ছায়াপথ একটি ক্ষুদ্র গুচ্ছের অংশ। তার নাম আঞ্চলিক পুঞ্জ (local groups)। এই আঞ্চলিক পুঞ্জের সদস্যের সংখ্যা নিশ্চিত নয়–তার কারণ সম্ভাব্য কয়েকটি সদস্য অতি অস্পষ্ট। কিন্তু মনে হয় এগুলির সংখ্যা কুড়িটির বেশি নয়। আঞ্চলিক পুঞ্জের ভিতরে সবচাইতে পরিচিত এবং সর্পিলের নিকটতম ছায়াপথের নাম এ্যান্ড্রোমিডা ছায়াপথ (Andromeda galaxy)। এর নাম হয়েছে যে গুচ্ছে একে দেখা যায় তার নাম থেকে। এটা প্রায় ২ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে। খালি চোখে একে অস্পষ্ট দেখা যায়। আঞ্চলিক পুঞ্জের বিস্তার প্রায় তিন মিলিয়ন আলোকবর্ষ হতে পারে।

দেখা যায় ছায়াপথের গুচ্ছগুলি আবার বৃহত্তর সত্ত্বায় গোষ্ঠীভূত। এগুলির নাম অতিগুচ্ছ (super cluster)। একটি অতিগুচ্ছের বিস্তার ত্রিশ মিলিয়ন থেকে একশ মিলিয়ন আলোকবর্ষ পর্যন্ত হতে পারে এবং এর ভর হতে পারে পুরো ছায়াপথের দশ হাজার গুণ। আধুনিক বিশ্বাস অনুসারে অতিগুচ্ছই মহাবিশ্বে পদার্থের শনাক্ত করার মতো বৃহত্তম সমাহার (aggregation)।

একক একটি গুচ্ছের অঙ্গীভূত ছায়াপথগুলি মহাকর্ষীয় বলের জন্যই পরস্পর সংযুক্ত থাকে এরকম চিন্তন থাকলেও অতিগুচ্ছগুলির ক্ষেত্রে এ তথ্য সত্য কিনা সেটা এখনো স্পষ্ট নয়। অতিগুচ্ছগুলির অস্তিত্ব এখন পর্যবেক্ষণের সাহায্যে মোটামুটি সুপ্রমাণিত কিন্তু তাদের বিকাশ সম্পর্কে কিছু জানা যায় না।

আধুনিক পর্যবেক্ষণে মনে হয় অতিগুচ্ছগুলির অন্তর্বর্তী স্থানে দৃশ্যমান কোনো পদার্থ নেই, থাকলেও রয়েছে অতি সামান্য। এই স্থান বোধহয় অতিগুচ্ছের চাইতেও বড়।

তারকার সমষ্টি ছায়াপথ, ছায়াপথের সমষ্টি গুচ্ছ, গুচ্ছের সমষ্টি অতিগুচ্ছ কিন্তু এগুলি সত্ত্বেও অনুমান করা হয় যথেষ্ট বড় মাত্রায় বিচার করলে মহাবিশ্ব প্রায় সুষম (uniform) এবং বর্তমান যন্ত্রপাতির সাহায্যে যে অংশ পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব সে অংশই হয়তো সমগ্র মহাবিশ্বের জাতিরূপ (typical)।

পর্যাপ্ত জ্যোতির্বিজ্ঞানভিত্তিক সাক্ষ্য প্রমাণের আগেই এ কল্পন ছিল যে বিরাট মাত্রার (large scale) বিচারে মহাবিশ্ব সুষম। এ কল্পনই এখন মূলগত স্বীকার্যের মর্যাদা পেয়েছে। সাধারণত একে বলা হয় মহাজাগতিক তত্ত্বের সূত্র’ (cosmo logical principle)। মহাজাগতিক তত্ত্বের সূত্র আসলে কোপার্নিকাসের চিন্তনের বিস্তার। সমস্ত বস্তুর কেন্দ্রে পৃথিবীর অবস্থান এই অহংবাদী ধারণা পরিত্যাগ করার সঙ্গে সঙ্গে আমরা বুঝতে পারব যে সূর্য একটি সাধারণ তারকামাত্র এবং মহাবিশ্বের বিবরণ একটি বিশেষ স্থানের দাবী পৃথিবীর চাইতে সূর্যের কোনোক্রমেই বেশি নয়। যখন আমরা দেখব যে আমাদের ছায়াপথ এবং যে গুচ্ছের অংশ আমাদের ছায়াপথ–এ সমস্তই জাতিরূপ নমুনা (typical speci mens) তখন যৌক্তিক বিচারে এগুলিকেও অন্যান্য সমরূপ বস্তুর সঙ্গে সমস্তরে প্রতিষ্ঠা করতেই হবে। পদার্থবিদ্যার বিধি একটি ছায়াপথগুচ্ছ থেকে অপর ছায়াপথগুচ্ছে নিয়মিতভাবে পরিবর্তিত হয় এ অনুমান করার কোনো পরীক্ষাভিত্তিক যুক্তি নেই।

এর নিহিতার্থ একটু অন্যভাবেও প্রকাশ করা যায়। ধরুন : আপনাকে একটি বাক্সে ভর্তি করা হয়েছে। বাক্সটির কোনো জানালা নেই। এই অবস্থায় আপনাকে মহাবিশ্বের সুদূর এক অংশে চালান করা হয়েছে। বাক্স থেকে ছাড়া পেলে আপনি নিশ্চয়ই পৃথিবী থেকে তারকা এবং ছায়াপথের যে বিশেষ বণ্টন দেখা যায় সে বণ্টন দেখতে পাবেন না আপনার নতুন পরিবেশের ভৌগোলিক খুঁটিনাটিতে (details) পার্থক্য থাকবে কিন্তু মহাবিশ্বতত্ত্বের সূত্র অনুসারে মহাবিশ্বের সর্বাঙ্গীণ বাহ্যরূপ একই থাকবে। খুঁটিনাটিগুলি বাদ দিলে আপনি বলতে পারবেন না মহাবিশ্বের কোন অংশে আপনার অবস্থান।

আমাদের ছায়াপথের আঞ্চলিক গুচ্ছের মহাবিশ্বে একটা বিশেষ স্থান নিশ্চয়ই রয়েছে : এই অনুমানের পথিকৃৎ বোধহয় একটি লক্ষণীয় পরিঘটনা। সে পরিঘটনা হল–দূরের ছায়াপথগুলির বর্ণালীর তথাকথিত ‘লাল প্রান্তমুখী স্থানচ্যুতি’ (red shift)। এবার আমরা বুঝতে পারব–এই পরিঘটনার জন্যই মহাবিশ্বকে প্রসারমান বলা হয়।

এখন আমরা যে অভিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করছি সে অভিক্রিয়া নবম অধ্যায়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সে অধ্যায়ে অবশ্য আমরা প্রত্যক্ষভাবে এর সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। শব্দের সঙ্গে যে সাদৃশ্য তখন উল্লেখ করা হয়েছিল সে সাদৃশ্য আপনার মনে পড়বে : একটি ট্রেন যখন আপনার অভিমুখে আসে তখনকার বাঁশির সুর ট্রেনের স্থির অবস্থার স্বরের তুলনায় তীক্ষ্ণতর হয়। কিন্তু ট্রেনটি যখন আপনার কাছ থেকে দূরে সরে যায় তখন তার বাঁশির স্বরের তীক্ষ্ণতা কমে যায়। আলোর ক্ষেত্রে অভিক্রিয়া অতীব সমরূপ (very similar)। আলোকের উৎস যদি আপনার অভিমুখে চলমান হয় তাহলে আলোকের সম্পূর্ণ বর্ণলীটা বেগুনি রঙের দিকে স্থানচ্যুত হয়। আর উৎস আপনার কাছ থেকে দূরে অপসরণশীল হলে বর্ণালীর স্থানচ্যুতি হবে লালের দিকে, বর্ণালীর এই স্থানচ্যুতি ট্রেনের বাঁশির সুরের তীক্ষ্ণতার পরিবর্তনের অনুরূপ। স্থানচ্যুতির পরিমাণ আপনি এবং আলোকের উৎসের মধ্যবর্তী দূরত্বের পরিবর্তনের হারের উপর নির্ভরশীল। (এর সঙ্গে আলোকের নিজস্ব দ্রুতির কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা দেখেছি এই দ্রুতি উৎসের গতি নিরপেক্ষ)। বর্ণালীর স্থানচ্যুতি তারকা এবং ছায়াপথগুলির দ্রুতি নির্ধারণের একটি উপায়। সেটা করা হয় তারকা থেকে নির্গত আলোকের বর্ণালীর সঙ্গে পৃথিবীর গবেষণাগারে উৎপন্ন সমরূপ বর্ণালীর তুলনা করে। এইভাবে মাপলে দেখা যায় আঞ্চলিক পুঞ্জের (local group) ছায়াপথগুলির দ্রুতি সেকেন্ডে তিনশ মাইল পর্যন্ত হতে পারে। দৈনন্দিন মাপকাঠিতে এ দ্রুতি খুবই বেশি। কিন্তু ছায়াপথগুলির অন্তবর্তী দূরত্ব অতি বিশাল হওয়ার দরুন তাদের অবস্থানের লক্ষণীয় পরিবর্তন হতে বহু মিলিয়ন বৎসর লাগবে।

আঞ্চলিক পুঞ্জের কিছু কিছু ছায়াপথ চলমান আমাদের অভিমুখে আবার কিছু কিছু চলমান আমাদের বিপরীত মুখে। এই গতির ভিতরে বিরাট বৈশিষ্ট্য কিছু নেই। এর তুলনা করা চলে একটি আঁকের মৌমাছির গতির সঙ্গে। মৌমাছিগুলি পরস্পর সাপেক্ষ চলমান, পুরো ঝকটা কিন্তু একসঙ্গে থাকে। আমাদের নিজেদের গুচ্ছের (cluster) বাইরে পরীক্ষা করলে দেখা যায় পরিস্থিতিটা অন্যরকম। এখানেও প্রতিটি গুচ্ছের ভিতরে অভ্যন্তরীণ গতি আছে কিন্ত দৃশ্যত অন্য প্রতিটি গুচ্ছই আমাদের গুচ্ছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। আমাদের কাছ থেকে তারা যত দূরে, তারা চলমান তত দ্রুত। এই লক্ষণীয় পরিঘটনাই প্রসারমান মহাবিশ্বের ইঙ্গিত।

যেহেতু দৃশ্যত সমস্ত গুচ্ছই আমাদের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে সেই জন্য আমাদের মনে হতে পারে আঞ্চলিক পুঞ্জের অবস্থান প্রসারমান মহাবিশ্বের কেন্দ্রে। এটা কিন্তু ভুল হবে, তার কারণ, এ চিন্তন গতির আপেক্ষিকতাকে অগ্রাহ্য করে। এ বইয়ে বারবার সে দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। মৌমাছির ঝাঁকের সঙ্গে তুলনাটা আবার বিচার করুন। ধরে নেওয়া যাক আঁকগুলি সুশিক্ষিত। সেগুলি পশ্চিম থেকে পূর্ব বরাবর রেখায় দশ গজ দূরে দূরে মাটির উপরে উড়ছে। আরো অনুমান করা যাক একটি ঝাঁক ভূমি সাপেক্ষ স্থিতিশীল, এর দশ গজ পূর্বদিকের ঝক মিনিটে এক গজ করে পূর্বদিকে চলেছে। পূর্বদিকে কুড়ি গজ দূরে ঝাঁক পূর্ব অভিমুখে মিনিটে দু’গজ চলছে… ইত্যাদি। আবার পশ্চিমদিকের ঝকগুলি ঐ একই ভাবে পশ্চিম অভিমুখে চলেছে। তাহলে যে কোনো ঝাকের যে কোনো চলমান কিংবা স্থিতিশীল মৌমাছির মনে হবে অন্য আঁকগুলি তাদের দূরত্বের অনুপাতে দূরে সরে যাচ্ছে। স্থিতির মাপকরূপে যদি ভূমি না পাওয়া যেত তাহলে কোনো একটি ঝক বিশেষভাবে নির্বাচিত এ অনুমান করার কোনো যুক্তি থাকত না।

ছায়াপথের গুচ্ছগুলির আচরণ একেবারেই একরকম। আমাদের সুশিক্ষিত মৌমাছির ঝাকগুলির মতো লাইন করে না থেকে তারা সর্বদিকে অনিয়মিতভাবে ছড়িয়ে আছে, সন্দেহ নেই কিন্তু ঝাকগুলির মতো এ ক্ষেত্রেও যে কোনো একটি গুচ্ছের একজন পর্যবেক্ষকের মনে হবে অন্যগুলি তার কাছ থেকে দৃশ্যত সরে যাচ্ছে। মহাবিশ্বে স্থিতির কোনো পরম মানক (absolute standard) নেই, সুতরাং দৃশ্যত প্রসারণ সমস্ত গুচ্ছের ক্ষেত্রেই সমরূপ।

যে সমস্ত গুচ্ছ নিয়ে অনুসন্ধান করা হয়েছে তার ভিতরে যেটা দূরতম সেটার লাল অভিমুখী স্থানচ্যুতি, দূর অপসরণের যে গতির অনুরূপ সে গতি আলোকের বেগের প্রায় অর্ধেক। (এই বিরাট পরিমাণ লাল অভিমুখী স্থানচ্যুতির অনুরূপ দূর অপসরণের গতি গণনা করতে হলে অবশ্যই তার ভিত্তি হবে ষষ্ঠ অধ্যায়ে বিবৃত লোরেঞ্জ রূপান্তর সঙ্কেত)।

জ্যোতির্বিজ্ঞানে এ পর্যন্ত সবচাইতে বেশি লাল অভিমুখী বিচ্যুতি যে ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে সেগুলি দূরের গুচ্ছ নয়–সেগুলি তথাকথিত কোয়াসার (quasi stellar objects-তারকাকল্প বস্তু)। এগুলির লালমুখী বিচ্যুতি আলোকের বেগের নয় দশমাংশ বেগে অপসরণের অনুরূপ। এদের চরিত্র কিন্তু এখনো বোঝা যায়নি। সেইজন্য জ্যোতির্বিজ্ঞানের উপাত্ত (data) যখন তাত্ত্বিক প্রতিরূপ (model) গঠনের জন্য ব্যবহার করা হয় তখন এগুলিকে ঠিকভাবে গণনার ভিতরে আনা যায় না।

এইবার দেখা যাক মহাকর্ষ সম্পর্কীয় এই সংবাদগুলিকে কিভাবে ব্যাপক অপেক্ষবাদের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো যায়। আমরা দেখেছি সূর্যের মহাকর্ষীয় ক্রিয়ার বিবরণ স্থান-কালে একটি পাহাড়ের বিবরণের মতো দেওয়া যায়। একটি ছায়াপথ, একটি গুচ্ছ কিংবা একটি অতিগুচ্ছের প্রতিরূপও এইভাবে হতে পারে, তবে ভর অনেক বেশি হওয়ার দরুন পাহাড়টাকে অনেক বড় হতে হবে। এর সঙ্গে যদি আমরা প্রতিটি ছায়াপথের তারকা এবং প্রতিটি গুচ্ছের ছায়াপথ যুক্ত করতে চাই তাহলে বহু পর্বত শৃঙ্গ আর উপত্যকা মিলিয়ে অত্যন্ত জটিল একটি পাহাড় হবে। সে ক্ষেত্রে আমরা চেষ্টা করতে পারি বিবরণ এমনভাবে দিতে যে, পুরো মহাবিশ্বের প্রতিরূপ। এইরকম প্রতিরূপ গণিতের দিক থেকে হবে অত্যন্ত জটিল কারণ তার ভিতরে থাকবে নানারকম ‘ভৌগোলিক’ খুঁটিনাটি। অথচ মহাবিশ্বের পূর্ণাঙ্গ রূপের বিবরণের জন্য সেগুলি আবশ্যিক নয়। বিবরণ সরল করার জন্য আমরা এমন প্রতিরূপ দিয়ে শুরু করব যে প্রতিরূপে দৃশ্যত মূলগত অবয়বগুলি রক্ষিত হবে অথচ ভৌগোলিক খুঁটিনাটি বাদ পড়বে। অবয়বের যে দিকগুলি আমরা রক্ষা করতে চাই সেগুলি হল : বিরাট মাত্রার বিচারে (large scale uniformity) সমরূপত্ব এবং সম্প্রসারণ (expansion)। যেগুলি আমরা রাখতে চাই না সেগুলি হল : সঠিক অবস্থান, আকার (size), গঠন (composi tion), একক ছায়াপথ, গুচ্ছ এবং অতিগুচ্ছের।

সুতরাং আমরা মহাবিশ্বকে প্রায় (approximate) সমরূপ না ভেবে সম্পূর্ণ সমরূপ অনুমান করে প্রতিরূপ গঠনের (to represent) জন্য স্থান-কালের আদল (model) তৈরি করতে পারি। এই সমস্ত সরলীকৃত প্রতিরূপে পদার্থ জমে জমে পুঞ্জ পুঞ্জ হয়েছে এবং তাদের মাঝে মাঝে বিরাট বিরাট স্থান রয়েছে–এরকম না ভেবে আমরা কল্পনা করি পদার্থ মসৃণ হয়ে অবিচ্ছিন্নভাবে বন্টিত।

ঠিক যেরকম সঞ্চিত পদার্থ পুঞ্জে পরিণত এই বিবরণ দেওয়ার জন্য বলা যায়, স্থান-কালে একটা বড় পাহাড় আছে যেখানে পুঞ্জ দেখা যায় কিংবা বলা যায় স্থান কাল সেই পুঞ্জের নিকটে বক্র ঠিক তেমনি মহাবিশ্বের মসৃণ আদলে পদার্থের অবিচ্ছিন্ন বণ্টনের বর্ণনা দেওয়া যায় স্থান-কাল সমরূপে বক্র এই ঘোষণার সাহায্যে। বিভিন্ন গুচ্ছ গঠনকারী পদার্থকে মসৃণ করার ফল হবে অনুরূপ বক্রতাকে মসৃণ করে সামগ্রিক সামান্য বক্রতা সৃষ্টি করা। মহাবিশ্বের এই সামগ্রিক বক্রতাকে পৃথিবীর বক্রতা অনেকটা সাধারণ স্থানে একটি গোলকের বক্রতার সদৃশ। কিন্তু স্থান-কালের সঙ্গে বক্রতার এই সাদৃশ্যকে আরো এগিয়ে নিয়ে স্থান-কালের সামগ্রিক বক্রতাকে পৃথিবীর বক্রতার সঙ্গে তুলনা করা সঠিক নয়, তার কারণ এ পদ্ধতি সহজেই আমাদের ভুল পথ নির্দেশ করবে এরকম আশঙ্কা রয়েছে।

অপেক্ষবাদের মহাকর্ষীয় বিধি এবং মসৃণ হওয়া অনুমান অর্থাৎ নির্ভুল সমরূপত্ব অনুমান এই দুইয়ের সহযোগে আমরা মহাবিশ্বের নানারকম প্রতিরূপ গঠনের অনুমোদন পেতে পারি। সেই প্রতিরূপগুলিতে সামগ্রিক বক্রতা নানারকম ভিন্ন ভিন্ন অবয়ব গ্রহণ করে। এই সামগ্রিক বক্তৃতার প্রধান ক্রিয়া : কোনো কোনো প্রতিরূপে আমরা এই ইঙ্গিত পাই যে, দূরস্থিত বস্তুর বর্ণালী লাল অভিমুখে স্থানচ্যুত হবে। এই লাল অভিমুখে স্থানচ্যুতির কারণ দূরাপসরণ গতি না স্থান কালের বক্রতা–সে নির্বাচন নেহাতই রুচির ব্যাপার। যে কোনো একটা বেশে এ অভিক্রিয়া দেখা দেবে। সেটা নির্ভর করবে মহাবিশ্বের বর্ণনায় কোন স্থানাঙ্কতন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে তার উপর। অপেক্ষবাদের ভবিষ্যদ্বাণী অবশ্য স্থানাঙ্কতন্ত্র নির্বাচনের উপর নির্ভরশীল নয়।

মহাবিশ্বের যে প্রতিরূপ আমরা বিচার করছি তার সঙ্গে আমাদের মহাবিশ্বের পর্যবেক্ষণ করা সামগ্রিক ধর্মের কমবেশি মিল রয়েছে। নতুন বিধি এবং সমরূপত্ব অনুমানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একাধিক অন্য প্রতিরূপও রয়েছে। সে প্রতিরূপগুলিতে লাল অভিমুখী স্থানচ্যুতির স্থলে রয়েছে মহাবিশ্বের সঙ্কোচনের (contraction) অনুরূপ নীল অভিমুখী স্থানচ্যুতি। এইরূপ একাধিক প্রতিরূপের অস্তিত্ব কিন্তু নতুন তত্ত্বকে পরিত্যাগ করার সপক্ষে কোনো যুক্তি নয়। এর ইঙ্গিত : তত্ত্বটি সম্পূর্ণ নয়, প্রয়োজন বাড়তি আরো কিছু অনুমান– যার সাহায্যে অবাঞ্ছিত প্রতিরূপগুলিকে বহিষ্কার করা যায়। নানারকম অনুমানের ইঙ্গিত আসছে কিন্তু সম্পূর্ণ সন্তোষজনক কোনো অনুমান এ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

সম্প্রসারণে আরো একটু দূরতর ফল বিচার করা যাক। এ কাজে অবশ্য মনে রাখতে হবে যে, আমরা যা বলি প্রয়োজন হলে সব সময়েই সেটা স্থান-কাল বক্রতার বাগ্বিধিতে নতুন করে প্রকাশ করা যাবে। সবচাইতে সহজ প্রতীয়মান ফল হল : ছায়াপথের স্তম্ভগুলি যদি দূরতর হতে থাকে তাহলে অতীতে তারা নিশ্চয়ই এখনকার তুলনায় নিকটতর ছিল। ধরে নেওয়া যাক, সম্প্রসারণের সম্পূর্ণ ইতিহাস নথিভুক্ত করার জন্য সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্বের বহু মিলিয়ন বৎসরব্যাপী একটি চলচ্চিত্র তোলা হয়েছে। এই রকম একটি চলচ্চিত্র যদি অতীত অভিমুখে চালানো হয় তাহলে সে চিত্র মহাবিশ্বের ইতিহাস উল্টোভাবে দেখাবে। দেখা যাবে ছায়াপথের সমস্ত গুচ্ছ পরস্পর থেকে দূরে অপসারণ করে তারা পরস্পরের অভিমুখে ধাবমান। চলচ্চিত্রটি যত বেশি অতীতে যাবে এগুলি ততই নিকটতর হতে থাকবে। শেষ পর্যন্ত তারা এত কাছাকাছি হবে যে তাদের ভিতরে আর কোনো ব্যবধান থাকবে না। আমরা অনুমান করতে পারি আরো অতীতে তারাগুলির অন্তবর্তী স্থানও পূরিত হবে। প্রাপ্তিযোগ্য সমস্ত স্থান অত্যন্ত ঘনীভূত তপ্ত বায়বীয় পদার্থে পূর্ণ থাকবে। এই বায়বীয় পদার্থ থেকেই তারকাগুলি বিবর্তিত হয়ে থাকতে পারে।

জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইদানীংকার হ্রস্বতরঙ্গ পর্যবেক্ষণের ফল–এই অতীব ঘনীভূত অবস্থার অস্তিত্ব প্রমাণ করেছে। পৃথিবীতে অবস্থিত গ্রাহকযন্ত্রে (receiver) যে বেতার শক্তি উপনীত হয় তার একটি অংশ আন্তঃতারকা বায়বীয় পদার্থ কিংবা তারকা থেকে নির্গত নয় বরং আদিম যুগে সমগ্র মহাবিশ্ব যখন অতীব ঘনীকৃত অবস্থায় ছিল তখনকার বিকিরণের যতটুকু এখনো দৃশ্যমান বলে আশা করা যেত তার সঙ্গে এ অংশের মিল রয়েছে এ তথ্যই যুক্তিযুক্ত।

তাত্ত্বিক প্রতিরূপের ঘনীভূত অবস্থা সম্পর্কীয় ভবিষ্যদ্বাণী কিন্তু খুব বেশি বিশ্বাস করা যায় না। পদার্থের কোয়ান্টাম ধর্ম সম্পর্কে যতটা জানা যায় তা থেকে মনে হয় যথেষ্ট আদিম কালে এই ধর্মগুলির গুরুত্বপুর্ণ অভিক্রিয়া থাকবার কথা। কখন এটা হওয়ার কথা ছিল সে সম্পর্কে কোনো সাধারণ মতৈক্য নেই তবে কোনো ক্ষেত্রেই অপেক্ষবাদের একার পক্ষে এই ধরনের অভিক্রিয়ার বিবরণ দানের ক্ষমতা নেই। একটি সন্তোষজনক বিবরণ দানের জন্য অপেক্ষবাদ এবং কোয়ান্টাম তত্ত্বের বিকাশের ভিত্তিতে ইদানীং বিরাট প্রচেষ্টা চলেছে। কিন্তু বিকাশগুলির কোনোটির কোনো স্থায়ী গুরুত্ব থাকবে কিনা সেটা এখনো স্পষ্ট নয়।

এ সমস্তই দূর কল্পনা। খুব সম্ভব অতীব ঘনীকৃত অবস্থা থেকে মহাবিশ্ব বিবর্তিত হয়েছে এবং আরো বেশি সম্ভব যে কাল সম্পর্কে কখনো কোনো বৈজ্ঞানিক সংবাদ পাওয়া যাবে তার ভিতরে আদিমতম কালের প্রতিরূপ এই অতীব ঘনীকৃত অবস্থান। এরকম অবস্থা সত্যই ঘটেছিল কিনা তা নিয়ে এখন কোনো দ্বন্দ্ব নেই। এই অতীব ঘনীকৃত অবস্থাই মহাবিশ্বের শুরু’ কিংবা মহাবিশ্ব সৃষ্টির লগ্ন’ কিংবা এইরকম কিছু মতবাদের দিকে অনেকে ঝুঁকছেন। এটা দুর্ভাগ্য। এ মতগুলির অর্থ : ‘এই হল আদিমতম কাল যার সম্পর্কে কখনো কোননা বৈজ্ঞানিক তথ্য পাওয়া সম্ভব’–এর বেশি কোনো অর্থ এ সমস্ত শব্দগুচ্ছের নেই। সেগুলিকে এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। কারণ এ থেকে হতে পারে অবাঞ্ছিত অধিবিদ্যক ফল (metaphysical implications)।

এখনকার অবস্থানুসারে, অপেক্ষবাদ থেকে আহরিত মহাবিশ্বের কিছু প্রতিরূপ এবং অতীব ঘনীকৃত অবস্থা থেকে সম্প্রসারণকে জ্যোতির্বিজ্ঞানের উপাত্তের সঙ্গে সহজেই মানিয়ে নেওয়া যায়। এগুলির প্রতিটিরই দোষ রয়েছে, তার ভিতর সবচাইতে স্পষ্ট প্রতীয়মান দোষ : এগুলি প্রকাশ করে মসৃণীকৃত চিত্র। সে চিত্র থেকে ছায়াপথ এবং গুচ্ছের আকার এবং গঠন সম্পর্কে কোনো কারণ পাওয়া যায় না।

সম্পূর্ণ সন্তোষজনক প্রতিরূপ গঠন নির্ভর করে কতগুলি গুরুত্বপূর্ণ গাণিতিক সমস্যা সমাধানের উপর। একটি বিশেষ সময়ে প্রাপ্তিসাধ্য প্রতিরূপগুলির ভিতর কোটি পছন্দ হবে সেটা অবশ্যই নির্ভর করবে গাণিতিক উপাত্তের উপর।

———
*Catherine Wheel-a wheel with spikes projeeting from the rim-qa 9aft status পরিধির বেড় থেকে সূচীমুখ কঠিন কীলক বেরিয়ে এসেছে। (Webster).

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *