পেট্রোম্যাক্স নিভে গেছে। এখন তাহমিনার ঘরে জ্বলছে রাত দশটার বেডল্যাম্প। নিঝঝুম হয়ে গেছে চারদিক। শুধু দূর দিগন্ত থেকে কিসের একটা একটানা ধ্বনি আর নদীর জল বয়ে যাবার ঝাঁপসা আওয়াজ। কোথাও কেউ নেই। তাহমিনার দীর্ঘ কামরার দূর কোণায়। বেডল্যাম্পের আলো ভালো করে পৌঁছায় নি। সেখানে প্রায় অন্ধকার। খাটের উপচ্ছায়া। ফারুক দূরে বসেছিল একটা মখমল ঢাকা সোফায়। খোলা জানালা দিয়ে অস্পষ্ট রাত্রি। ফারুক ঘরের দূরতম কোণে চোখ রেখে আস্তে আস্তে প্রশ্ন করল, তুমি এ বিয়েতে সুখী নও তাহমিনা?
তার গলার স্বরে এত অবসাদ যে প্রশ্নটা প্রশ্ন বলে মনে হোলো না। স্বগত উক্তির মত শোনাল।
তাহমিনা বসেছিল খাটের ওপর। বাঁ হাতে হেলান দিয়ে। শুভ্র সুন্দর নিটোল বাহু তার এসে বিছিয়ে পড়েছে কোলের ওপর। মুখরেখা গড়ে উঠেছে মিহি আলোয়। এখন সে একবার মুখ তুলে তাকাল। উজ্জ্বল চোখ তার দেখাল কাঁচের বাটিতে রাখা স্বচ্ছ পানির মত। বলল, তোমাকে ঢাকা থেকে ডেকে এনেছি বলে তুমি অবাক হয়েছ, তাই না? ফারুক চুপ করে রইল।
কিন্তু তুমি জান না এই এক বছর আমি কী করে কাটিয়েছি। তোমার মনে আছে ফারুক? একবার বিয়ের আগে তোমায় বলেছিলাম এ হয়ত আমার আত্মহত্যা।
হ্যাঁ।
সে কথাই যে সত্যি হয়ে দাঁড়াবে, তা আমি ভাবিনি।
তুমি আশা করছিলে, তুমি সুখী হবে?
তাহমিনা যেন লজ্জিত হলো।
হ্যাঁ।
তোমার ভালোবাসা?
সেও সত্যি ছিল।
তাহলে?
আমি কিছুই বুঝতে পারি নি সেদিন।
আমিও পারি নি। তাহমিনা, তোমাকে আমি আজও ভালবাসি।
তাহমিনা কোনো কথা বলল না। ফারুক বলল, মনে পড়ে, তুমি একদিন বলেছিলে, ওকথা শোনাও তোমার পাপ?
ফারুকের দিকে চোখ তুলে তাকাল তাহমিনা। স্পষ্ট দেখতে পেল তাকে। বিরাট কামরার ভেতরে একটু ছোট দেখাচ্ছে ওকে। দূরে আয়নায় আরো ছোট হয়ে পড়েছে ওর প্রতিচ্ছবি। ফারুকের কপালে টলটল করছে কয়েক ফোঁটা ঘাম। শুকনো হয়ে গেছে ঠোঁটজোড়া। তাহমিনা জানে তার নিজের কথা। তার নাকের সমুখে এখন সঁচের চোখের মত ছোট ছোট ঘাম জমছে। আর কানের পেছনে। যে কোনো মুহূর্তে গড়িয়ে পড়তে পারে। সেই মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করল তাহমিনা। কিন্তু পড়ল না। অবশেষে বলল, আজ স্বীকার করতে আমার কোনো দ্বিধা নেই ফারুক। তারপর একটু থেমে বলল, একটা কথার জবাব দেবে?
কী?
আমাদের জীবনে আমরা কী চাই?
ফারুক একটু একটু করে প্রতিটি শব্দের ওপর জোর দিয়ে বলল, বিশ্বাস, শান্তি আর ঐশ্বর্য। আমিও তাই চেয়েছিলুম ফারুক। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমার।
অনেকক্ষণ থেমে ফারুক শুধালো, আজ দুপুরের সে কথা কি সত্যি তাহমিনা?
হ্যাঁ। আবিদ আমাকে তা দিতে পারে না।
কী করে জানো?
তাহমিনা অদ্ভুত হেসে বলল, আমি জানি।
তাহমিনা—-
কি হবে আমার ঐশ্বর্য দিয়ে? কী লাভ
হঠাৎ তাহমিনার চিবুকে সেই ঘামের ফোঁটা গড়িয়ে পড়ল। সে থামল। যে কথা সে উচ্চারণ করেছিল তা কামরাময় ঘুরে বেড়াল। প্রতিধ্বনি হয়ে জেগে রইল। আর ফারুক জানতে পারল এখুনি সে বলবে——– সব কিছু বলবে তাকে। সে অপেক্ষা করে রইল।
প্রথম সন্দেহ হয়েছিল বছর দেড়েক আগে। তাহমিনা জিজ্ঞেস করেছিল আবিদকে। আবিদ হেসে উড়িয়ে দিয়েছে কথাটা। কিন্তু একবার যখন প্রশ্নটা উঠেছে, তখন সন্দেহ তার মনেও গম্ভীর হয়ে উঠল। তখন থেকেই শুরু। তাহমিনা ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিল। তারপর একদিন আবিদ চলে এসেছে ঢাকায়। সবচে বড় ডাক্তার দেখিয়েছে। রিপোর্ট তিনি লিখে দিলেন, ভালো হবার কোনো আশা নেই। আবিদ যখন ফিরে এলো তখন তার চেহারা দেখেই সব অনুমান করে নিতে পেরেছিল তাহমিনা। কিন্তু জিগ্যেস করলে আবিদ বলেছে, ওটা একটা সাময়িক ব্যাপার। ওষুধ দিয়েছে, কোনো ভয় নেই।
তুমি লুকোচ্ছ নাতো?
আবিদ জোর করে হাসি টেনে উত্তর করেছে, তোমার কাছে লুকোবো মিনু?
একদিন পরেই তাহমিনার কাছে সব উঘাটিত হয়ে গেল। একদিন আবিদের সেফ ড্রয়ার কী কারণে খুলেছিল। সেখানে রাখা ছিল সেই মেডিক্যাল রিপোর্ট। কিছুই সে করে নি। ভাঁজ করে ওটা আগের জায়গাতেই রেখে দিয়েছে। আবিদ সন্ধ্যের সময় এলে পর, তাহমিনার গম্ভীর মুখ দেখে শুধিয়েছে, কী হলো আবার তোমার?
তুমি আমার কাছ থেকে লুকোলে কেন?
আবিদ চিৎকার করে চেঁচিয়ে উঠল, সেফড্রয়ার খুললে কেন তুমি?
আমার অধিকার আছে বলেই। কেন তুমি লুকোতে গেলে?
সে কৈফিয়ৎ তোমাকে দিতে হবে নাকি?
হ্যাঁ।
না, তোমাকে দেব না।
চিৎকার করে কথাটি উচ্চারণ করে উন্মত্তের মত আবিদ তার সমুখে থেকে চলে গিয়েছে। তারপর থেকেই দুজনে অসম্ভব দূরে সরে গেল এক মুহূর্তে। এক বিছানায় শুয়েও যেন দুজন দু মহাদেশের অধিবাসী। আবিদ উন্মাদ হয়ে গেল তার বন্দুক নিয়ে। দিন রাত অরণ্যে অরণ্যে ঘুরে তার ব্যর্থ পৌরুষত্বের শোধ নিতে লাগল। চোখের দৃষ্টিতে তার হিংসা। আর দিনে দিনে আতঙ্কিত হয়ে উঠল তাহমিনা। ব্যর্থ কান্নায় সে ডুবে গেল। সমস্ত ঐশ্বর্য তার কাছে তুচ্ছ।
সেদিন যখন আহত হয়ে আবিদ ফিরে এল জ্ঞানশূন্য অবস্থায়, তখন ভয়ে তার দম বন্ধ হয়ে এসেছে। সমস্ত বোধ তার লুপ্ত হয়ে গেছে। তাহমিনা প্রার্থনা করল মরে যাবার জন্যে। প্রার্থনা করল এই হিংস্রতা আর আঁধি দেয়ালের দেশ থেকে তার মুক্তির জন্যে। তখন যদি আবিদের মৃত্যুও হোত তার চোখের সমুখে, তবুও তার এতটুকু বিকার দেখা দিত না। ঘৃণায় ধিক্কারে উন্মাদ হয়ে গিয়েছিল তাহমিনা।
ফারুকের সোফার পাশেই ছিল রেডিও সেট। ব্যাটারি থেকে লাল আর নীল সরু তার উঠে এসেছে। তাহমিনা উত্তেজিত অথচ ফিসফিস স্বরে যখন বলে যাচ্ছিল এই ইতিহাস, তখন ফারুক চোখ নিচু করে রেডিওটার দিকে তাকিয়ে ছিল সারাক্ষণ। একসময়ে অন্ করে দিল সে। আস্তে আস্তে ঘুরিয়ে দেখল সমস্ত স্টেশন। বিচিত্র দুর্বোধ্য স্বচ্ছ জল অভিঘাতের নিচু শব্দ উঠতে লাগল। তাহমিনা একটু থামল। তারপর বলল, সকালে ওকে সদরে রেখে আসবার পর কী করে যে সময় আমার কেটেছে, তা তোমাকে কী করে বোঝাই!
তারপর তুমি আমার কাছে লিখলে?
হা। তুমি ছাড়া আর কেউ আমাকে মুক্তি দিতে পারবে না ফারুক। তুমি আমাকে ঠেলে দিও না।
হঠাৎ সমস্ত ঘরে ছড়িয়ে পড়ল সুর মূচ্ছনা। মিহি তার ধ্বনি ভাসিয়ে দিল কামরার রুদ্ধ বাতাস। অলস গড়িয়ে গেল মেঝের ওপর। ফারুক ভলুম কমিয়ে দিল। শুধু অনুভব হয়ে রইল সেই সংগীত। রক্তের ভেতরে জাগলো এক রিমঝিম। ফারুক বলল, পলিনেশিয়ার মোআনা মেলডি বাজছে।
তাহমিনা একটুখন চুপ করে রইল। মৌতাতের মত জড়িয়ে ধরল তাকে সেই সংগীত। সে উচ্চারণ করল, তুমি কি বোঝো না?
আমি বুঝি তাহমিনা। কিন্তু আবিদ রয়েছে যে।
আমি ওকে আর ভয় করি না।
সে কী করে হয়?
তুমি কাপুরুষ।
তাহমিনার স্বর শোনাল সেই অর্কেস্ট্রার একটা মিষ্টি যন্ত্রের ধ্বনির মত।
আমাকে ভাবতে দাও।
আর কবে?
তবু।
না।
বলতে বলতে তাহমিনা শুভ্রশয্যায় এলিয়ে চোখ বুজলো। মেঝের লাল কার্পেট আগুনের মত জ্বলে উঠল ফারুকের চোখে।
পলিনেশিয়ার প্রবাল কি এমনি লাল? সেখানে সেই পাম আর রবার বনে আজ নীল জোছনা। সাদা শীটের মত সমুদ্র আর বালিয়াড়ি। সেখানে উদ্দাম নৃত্য ভঙ্গিমায় শৃঙ্গারের মুদ্রা আজ। কুরঙ্গের মত গতি সেই নর্তক আর নর্তকীদের। আর ইউকেলেলির বুক স্পর্শ করা ঝংকার। অ্যাকর্ডিয়নের একক ধ্বনি তরংগ। কখনো সেই সুরতরংগ অলস মন্থর হয়ে আসছে, তারপর পরমুহূর্তেই একরাশ উজ্জ্বল শুভ্রতার মত চূর্ণ চূর্ণ হয়ে বিক্ষিপ্ত ছিটিয়ে পড়ছে। রক্তের জোয়ারকে আহত করছে ক্রমাগত। পলিনেশিয়ার জোছনা কি নীল? তার বালুকা বেলা কি শুভ্র? তার রবার বনে স্বপ্ন মর্মর?
ফারুক সেই মূৰ্ছনায় ভেসে গেল। বিস্মৃত হলো। সে বলল, আমি আর ভাবি না তাহমিনা। তাহমিনা একটুও নড়ল না। তেমনি চোখ বুজে পড়ে রইল। কিছু বলল না। সে কি শুনতে পায়নি ফারুকের স্বর। আজ সে সব বলেছে, আর তার কোনো ভাবনা নেই। সে মুক্ত। সমস্ত ভার তুলে দিয়েছে ফারুকের কাছে। এই সুরতরংগ শুধু অনুভব করা যায়। এখানে শুধু নিমগ্ন হয়ে যাওয়া যায়। ধীরে ধীরে একটা সুর স্পষ্ট হয়ে রইল তার কাছে জড়িয়ে ধরল—- বুঝতে পারল তার নাম ফারুকের সান্নিধ্য।
তার এক মুহূর্ত আগেই বুঝতে পেরেছে ফারুক। কোমল শব্দ উঠল সোফা থেকে। তাহমিনা স্বপ্নের ভিতর থেকে শুনতে পেল তার পদশব্দ। সে শুনলো।
ক্ষণকাল সে নিশ্বাস বন্ধ করে পড়ে রইল। তারপর ধীরে ধীরে সে ঠোঁট খুলল। মুখ নামিয়ে আনল ফারুক। এক হাতে নিভিয়ে দিল ল্যাম্প। অনেকক্ষণ। ফারুকের হাত তার খোঁপার গভীরে। আর. একটা হাত তার পিঠের আড়ালে। অনেকক্ষণ পড়ে রইল তারা। মোআনা মেলডি যেন হাজার মাইল দূর থেকে ভেসে আসছে এই অন্ধকার কামরায়।
চোখ মেলল তাহমিনা। হামাগুড়ি দিয়ে সরে গেল তারা খাটের কেন্দ্রে। ফারুকের কপালে স্বেদবিন্দু। চোয়ালের হাড় ফুটে বেরিয়েছে। কঠিন হয়ে গেছে। সে তাকে বাহুবন্ধনে বাঁধল। আর তারপর তাহমিনা তার কাঁধের ওপর দিয়ে দেখল অন্ধকার সিলিং। কাঠের বিমগুলো দূরে, প্রায় একটি বিন্দু থেকে, দ্রুত সমুখে এগিয়ে এসেছে এসে তার দেহের দুদিক দিয়ে বেরিয়ে গেছে। ফারুকের কাঁধে চিবুক ঠেকিয়ে তার চিবুকের নিচে সিফনের মত যে বঙ্কিমতা—- তাহমিনা অনুবভ করল এক আশ্চর্য নদীর হঠাৎ প্রবাহ। গেল। কিন্তু তাকে কৃতজ্ঞ করে দিয়ে গেল। যা সে পায়নি, এতকাল, পায়নি এমন কি যা পাবার আশা সে ছেড়ে দিয়েছিল, তা যেন হঠাৎ কেউ তাকে দুহাত ভরে দিয়ে গেল। কৃতজ্ঞতায়, তৃপ্তিতে, মুক্তিতে, বিশ্বাসের অসীমতায় মুহূর্তকাল আগে কঠিন হয়ে আসা শরীর তার কোমল কোমলতর হলো কেবলি। এমন কী তার মনে হলো, ঠিক এমনি করে, এই রাত্রি এই সময়ের অনন্ত পেরিয়ে, সে কেবলি রূপান্তরিত হবে কোমলতায় বিচ্ছিন্ন বিচ্ছিন্নতর হবে কোমলতায় প্রসারিত হবে সমস্ত অনুভূতি শাসিত মহাদেশে এবং তখন তার এই অস্তিত্ব থাকবে না, কিন্তু থাকবে তার অলৌকিক বিশাল কোমলতার মত এই কেবলি ছড়িয়ে পড়া, বিস্তৃত হওয়া একটি অস্পষ্ট কিন্তু সীমাহীন বিস্তৃতি।
এর বহুক্ষণ পরে নিজেকে মুক্ত করে উঠে বসলো তাহমিনা। কানের ঝুমকো ঠিক করতে করতে তাকাল ফারুকের দিকে। পাশেই সে শুয়ে। মাথার পেছনে তার হাত জোড়া করে রাখা। চোখ অলস মোদিত। কপালে সেই স্বেদ বিন্দু ঘন হয়ে দেখা দিয়েছে। তাহমিনা জানে তার কানের পেছনেও আঁকাবাঁকা রেখায় স্বেদ এখন গড়িয়ে যাচ্ছে। দুজনে তারা পরস্পর তাকিয়ে রইল। ফারুক জড়িত গলায় বলল, আমি তোমাকে ভালবাসি তাহমিনা। তারপর ওকে আবার আকর্ষণ করে, বক্ষের সন্ধিস্থলে চুমো আঁকল। তাহমিনা মৃদু দোলায় এগিয়ে এলো আরো ঘনিষ্ঠ হয়ে। সে তার উত্তাপ, তার ভালোবাসাকে অনুভব করতে চায়। নিঃশেষ করে দিতে চায়।
.
নিঃশব্দে দরোজা খুলে পায়ের পাতার ওপর ভর করে বেরিয়ে এলো ফারুক আর তাহমিনা। তাকাল ইতস্তত করে। অন্ধকারে আবদুলের ঘরেও বাতি নেই। বাতাস বইছে পাতার ভিতর দিয়ে। হিম হিম বাতাস। ভালো লাগা বাতাস। ফারুক ফিসফিস করে শুধালো, কেউ জেগে নেই তো?
দূর।
আবদুল?
কখন ঘুমিয়েছে। তা ছাড়া শোনা যায় না।
আমার খেয়াল ছিল না।
আমারও না।
ল্যাম্প হাতে করে তাহমিনা বাথরুমে ঢুকে দরোজাটা আস্তে শুধু ভেজিয়ে দিল। ফারুক বারান্দায় দাঁড়িয়ে রইল অন্ধকারে। একটু পরে কানে এলো তার সাবধান পানি ছিটানোর শব্দ। তারপর সাবান ফেনায় হাত ঘসবার মসৃণ আওয়াজ। আর একটা মৃদু মিষ্টি গুনগুন। তারপর থামিয়ে তাহমিনা শুধালো গলা বের করে, তোমার ভয় করছে নাতো?
উঁহু।
ঠিক করে বল।
নাঃ। আর করলেই বা।
ফারুক বুঝতে পারল। দরজা ঠেলে সে ভেতরে ঢুকলো। তাহমিনা টাওয়েল দিয়ে সারা শরীর চট করে ঢেকে বলল, ছেলেমানুষের মত, উম্, না না, এসো না।
আমার ভয় করছে বাইরে।
মিথ্যেবাদী। দ্যাখো, দ্যাখো, পড়ে যাব যে।
তাহমিনার গায়ে পানি ঢেলে দিল ফারুক। হেসে উঠল ও। আর সেই হাসির সাথে সাথে বুক থেকে কয়েক ফোঁটা পানি ছিটিয়ে পড়ল। শুকনো একটা টাওয়েল নামিয়ে ফারুক ওর পিঠ ঘষতে লাগল জোরে জোরে।
না, না, মরে যাব। যাঃ লাগছে। ছাড়ো।
চুপ।
দুজনেই যেন ছেলেমানুষ হয়ে গেছে। সব কিছু যেন ভুলে গেছে। শুধু এখনকার এই মুহূর্ত যেন সত্যি আর সব অবাস্তব। ঠাণ্ডা পানির স্পর্শে শীতল হয়ে এলো তাদের সমস্ত দেহ। সজীব হয়ে উঠল। অনেকক্ষণ ধরে পানি ঢালল। সবকিছু যেন ধুয়ে মুছে গেছে। ঝরঝরে আর হালকা লাগছে। বাতাসটা কী মিষ্টি! নতুন করে দুজনকে চিনল যেন এখন ওরা। ফারুক শুধালো টাওয়েল দিয়ে তাহমিনার দেহ মুছিয়ে দিতে দিতে, কেমন লাগছে মিনু?
এই তিন বছর বাদে ফারুক প্রথম ডাকল তাকে মিনু বলে। তাহমিনা ঘাড় ফিরিয়ে প্রায় ওর মুখের সাথে মুখ লাগিয়ে প্রতিবাদ করল, দূর, আমাকে মিনু বলে ডেকো না।
কেন?
মনে হয় এখনও ছোট্ট রয়ে গেছি।
খুব বড় হয়েছ, না?
তাছাড়া কী?
একটুও না।
বলেই হেসে ফেলল ফারুক। হাসল তাহমিনা। তারপর হঠাৎ থামল। স্পর্শের ভাষায় কী কথা যেন সঞ্চারিত হয়ে গেল দুজনের ভেতরে। তারা তাকিয়ে রইল দ্রুত নিঃশ্বাস নিতে নিতে। ফারুক ওকে জড়িয়ে ধরে গভীর চুমো আঁকল নতুন করে। তারপর আবার তাকিয়ে রইল পরস্পর।
এক হাতে আঁচল ঠিক করতে করতে অন্য হাতে বেডল্যাম্প নিয়ে বেরিয়ে এলো তাহমিনা। থামল। বলল, রাত অনেক হয়েছে। এবার শুতে যাও।