১১. দ্য ফায়ারবোল্ট

১১. দ্য ফায়ারবোল্ট

কি করে যে হ্যারি হানিডিউক্স সেলারে গিয়ে আবার সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে প্রাসাদে ফিরে এসেছে সে সম্পর্কে তার নিজেরই পরিষ্কার কোন ধারণা নেই। তার শুধু এটুকু মনে আছে ফিরে আসার সময়টা যেন মুহূর্তের মধ্যে ফুরিয়ে গেল, এবং সে কি করছে সেদিকে নজর দেয়ারই সময় পায়নি। কারণ থ্রি ব্রুমসস্টিকে টেবিলের নিচে বসে ওই কথাগুলো শোনার পর থেকে তার মাথা ঘুরছে।

তাকে কেউ বলেনি কেন? ডাম্বলডোর, হ্যাগ্রিড, মিস্টার উইজলি, কর্ণেলিয়াস ফাজ ওরা কেউ কখনো তার কাছে এই সত্যটা কেন বলেনি যে তার মা-বাবা মারা গিয়েছিল তাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধুর বিশ্বাসঘাতকতার কারণে?

ডিনারের পুরো সময়টা রন এবং হারমিওন হ্যারির দিকে তাকিয়েছিল, তারা বেশ নার্ভাস এবং যা শুনেছে তা নিয়ে আলাপ করার সাহস তারা পায়নি কারণ পার্সি বসেছিল কাছেই। উপর তলার জনাকীর্ণ কমনরুমে গিয়ে ওরা দেখল ফ্রেড এবং জর্জ অর্ধ ডজন হাত বোমা (ডাং বোমা) ছুঁড়েছে টার্ম শেষের আনন্দে। হ্যারি চায়নি জর্জ এবং ফ্রেড ওকে হাসমিড-এ যাওয়া বা আসা নিয়ে কোন প্রশ্ন করুক, সেজন্য সে চুপিসারে হোস্টেলে গিয়ে সোজা বিছানার পাশে কেবিনেটের সামনে চলে গেল। বইগুলো একপাশে সরিয়ে যা খুঁজছিল তাই পেয়ে গেল–দুই বছর আগে হ্যাগ্রিডের দেয়া চামড়া বাধানো ফটো অ্যালবাম, তার মা এবং বাবার জাদুকরী ছবিতে ভর্তি। বিছানায় বসে চারদিকে পর্দা টেনে সে অ্যালবামের পাতা ওল্টাতে লাগল, যে পর্যন্ত

বাবা মায়ের বিয়ের ছবি দেখে সে থামল। ওই যে বাবা তার দিকে হাত নাড়ছে, মুখ ভর্তি হাসি, অগছোলো চুলগুলো, যেটা হ্যারি পেয়েছে উত্তরাধিকার সূত্রে, সব চারদিকে সোজা হয়ে আছে। ওই যে মা, আনন্দে উদ্ভাসিত, বাবার হাতে হাত দেয়া। এবং ওই যে ওইখানে … নিশ্চয়ই সে হবে। ওই বরের সঙ্গী–হ্যারি কখনই তার সম্পর্কে আগে ভাবেনি।

সে যদি আগে না জানত এই সেই লোক, সে কখনও ভাবতেও পারত না যে পুরনো ছবিতে এই ব্ল্যাক। তার গালগুলো বসা কিন্তু চকচকে, সুন্দর দেখতে সে, হাসিখুশি। এই ছবি যখন নেয়া হয়েছিল তখন কি সে ভল্ডেমর্ট-এর জন্য কাজ করতে শুরু করে দিয়েছে? সে কী তার পাশের দুজনের মৃত্যু সম্পর্কে পরিকল্পনা করতে শুরু করেছে? সে কি বুঝতে পেরেছিল আজকাবানে তার বার বছরের জেল হবে, এবং এ বার বছরে সে আর চেনার মতো থাকবে না।

কিন্তু ডিমেন্টাররা তার ওপর কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি, হ্যারি ভাবল হাস্যরত সুন্দর মুখটার দিকে তাকিয়ে। কিন্তু ওরা যদি খুব কাছে চলে আসে তবুও ব্ল্যাককে তার মায়ের আর্তচিৎকার শুনতে হয় না

 হ্যারি অ্যালবামটা জোরে বন্ধ করে দিল, ওটা আবার কেবিনেটের ভেতর ঢুকিয়ে রাখল, পোশাক খুলে চশমাটা রেখে বিছানায় উঠে পড়ল, চারদিকে পর্দাগুলো তাকে আড়াল করে রাখল।

দরজাটা খুলে গেল।

হ্যারি? রনের অনিশ্চিত গলা।

কিন্তু হ্যারি নিথর হয়ে শুয়ে থাকল, ঘুমের ভান করে। ও শুনতে পেল রন চলে যাচ্ছে, চিৎ হয়ে শুলো। চোখ খোলা।

তার মধ্যে তখন বিষের মতো ছড়িয়ে পড়েছে একটা ঘৃণা, এর আগে যে অনুভূতি কখন হয়নি তার। সে যেন দেখতে পাচ্ছে অন্ধকারের মধ্যে ব্ল্যাক তার দিকে তাকিয়ে হাসছে, যেন অ্যালবাম থেকে কেউ ছবিটা তার চোখে সেঁটে দিয়েছে। সে দেখল, যেন কেউ ফিল্ম দেখাচ্ছে, সাইরিয়াস ব্ল্যাক পিটার পেটি গ্রুকে (যে দেখতে নেভিল লংবটম-এর মতো) হাজারো টুকরায় বিস্ফোরিত করছে। সে যেন নিচু স্বরে উত্তেজিত বিড়বিড় শুনতে পাচ্ছে, হে প্রভু ওটা ঘটেছে … পটাররা আমাকে তাদের গোপনীয় রক্ষাকারী নিযুক্ত করেছে… এর পর আরেকটা শব্দ শোনা গেল, তীক্ষ্ণ ভয়াবহ হাসি, সে একই হাসি যেটা হ্যারি শুনতে পায় ডিমেন্টাররা তার কাছে এলে….

***

হ্যারি, তোমাকে–তোমাকে ভয়াবহ দেখাচ্ছে।

ভোর হওয়ার আগে হ্যারির ঘুম আসেনি। ঘুম থেকে উঠে দেখল হোস্টেল খালি, কাপড় পড়ল, ঘোরানো সিঁড়ি দিয়ে নেমে কমনরুমে গেল। রন এবং হারমিওন ছাড়া ওখানে আর কেউ নেই। পেটের ওপর হাত বুলাতে বুলাতে রন পিপারমেন্ট ব্যাঙ খাচ্ছে, হারমিওন তিন টেবিল জুড়ে তার হোমওয়ার্ক ছড়িয়ে রেখেছে।

আর সবাই কোথায়? বলল হ্যারি।

চলে গেছে! ছুটির আজকে প্রথম দিন মনে আছে? হ্যারিকে ঘনিষ্ঠভাবে দেখতে দেখতে বলল রন। প্রায় লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে, আমি তো এক্ষুণি যাচ্ছিলাম তোমাকে ঘুম থেকে তোলার জন্য।

আগুনের পাশে একটি চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ল হ্যারি। বাইরে তখনও বরফ পড়ছে। কুকশ্যাংকস ছড়িয়ে আছে আগুনের সামনে একটা কম্বলের মতো।

তোমাকে সত্যি ভালো দেখাচ্ছে না হারমিওন বলল, উদ্বেগের সাথে হ্যারির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে ও।

আমি চমৎকার আছি বলল হ্যারি।

হ্যারি শোন, বলল হারমিওন, রনের সঙ্গে ওর দৃষ্টি বিনিময় হলো, গতকাল আমরা যা শুনেছি তা নিয়ে নিশ্চয়ই তুমি বিচলিত হয়ে আছ। কিন্তু কথা হচ্ছে তোমার এখন বোকার মত কিছু করা উচিত হবে না।

কী রকম? বলল হ্যারি।

যেমন ব্ল্যাকের পেছনে লাগা, তীব্রভাবে বলল রন।

হ্যারি বুঝতে পারছে ও যখন ঘুমিয়ে ছিল এ কথাগুলো ওরা প্রাকটিস করেছে ওকে বলবে বলে। সে কিছু বলল না।

ও নিশ্চয়ই সেরকম কিছু করবে না, তাই না হ্যারি? বলল হারমিওন।

কারণ ব্ল্যাকের মৃত্যুর মূল্য ওর সমান হতে পারে না বলল রন।

হ্যারি ওদের দিকে তাকাল। ওরা বিষয়টা যেন বুঝতেই পারছে না।

তোমরা জান, যখনই কোন ডিমেন্টার আমার কাছে আসে তখন আমি কী দেখি আর কী শুনি? রন এবং হারমিওন মাথা নাড়ল, কিছু একটা শোনার অপেক্ষায় থাকল। আমি শুনতে পাই আমার মা চিৎকার করছেন এবং দয়া ভিক্ষা করছেন ভল্টেমর্টের কাছে। এবং তোমরা যদি তোমাদের মায়ের মরণের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে এই আর্তনাদ শুনতে তাহলে কখনই এত তাড়াতাড়ি সেটা ভুলতে পারতে না। এবং আরও যদি জানতে, যে তাদের বন্ধু ছিল সেই তাদের সঙ্গে বেঈমানি করেছে এবং তাদের পেছনে ভন্ডেমর্টকে লেলিয়ে দিয়েছে–

তুমি কিছুই করতে পারবে না! বলল হারমিওন। ডিমেন্টাররা ব্ল্যাককে ধরে আজকাবানে পাঠিয়ে দেবে–সেটাই হবে তার উপযুক্ত সাজা!

তোমরা শুনেছো ফাজ কি বলেছেন। সাধারণ লোকের মত আজকাবান ব্ল্যাকের কোন ক্ষতি করতে পারেনি। অন্যদের জন্যে যেমন, ব্ল্যাকের জন্য আজকাবান কোন শাস্তি নয়।

তাহলে তুমি কী বলতে চাও? বলল রন, ওকে খুবই উত্তেজিত দেখাচ্ছে। তুমি–তুমি ব্ল্যাককে হত্যা করতে চাও অথবা ওরকম কিছু?

বোকার মতো কথা বল না, ভীতসন্ত্রস্ত হারমিওন বলল। হ্যারি কাউকে হত্যা করতে চায় না, তাই না হ্যারি?

আবার হ্যারি কোন জবাব দিল না। সে নিজেই জানে না সে কি করতে চায়। যা সে জানে, সেটা হচ্ছে ব্ল্যাক যখন মুক্ত তখন তাকে কিছু করা হবে না এই চিন্তাটা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।

ম্যালফয় জানে, হঠাৎ সে বলল। মনে আছে পোশন ক্লাসে সে আমাকে কী বলেছিল? যদি আমি হতাম, আমি নিজে তাকে খুঁজে বের করতাম আমি প্রতিশোধ নিতাম।

আমাদের কথা না শুনে তুমি ম্যালফয়ের উপদেশ শুনবে? ক্ষিপ্ত রন বলল। শোন তুমি জান পেট্টিগ্রুঞর মা কি পেয়েছিল ব্ল্যাক ওকে মেরে ফেলার পর? বাবা আমাকে বলেছেন–অর্ডার অফ মারলিন, ফার্স্ট ক্লাস, এবং একটি বাক্সে পেটির আঙুল। ওটাই ছিল পেটির দেহের সবচেয়ে বড় অংশ যেটা আস্ত পাওয়া গিয়েছিল। ব্ল্যাক একটা পাগল হ্যারি এবং সাংঘাতিক রকমের বিপদজনক

ম্যালফয়ের বাবা নিশ্চয়ই তাকে বলেছে, বলল হ্যারি, রনের কথাগুলোকে উপেক্ষা করে, উনি ছিলেন ভল্টেমর্টের ভেতরের লোক–

উঁহু ইউ–নো–হু, বলবে? মাঝখানে বাধা দিয়ে বলল রন।

সুতরাং এটা নিশ্চিত, ম্যালফয়রা জানত যে ব্ল্যাক ভল্টেমর্টের জন্য কাজ করছে।

এবং পেটিগ্রুর মতো তোমাকে এক মিলিয়ন টুকরায় বিস্ফোরিত হতে দেখলে ম্যালফয় সবচেয়ে বেশি আনন্দিত হবে! মনে রেখ তোমার সঙ্গে কুইডিচ খেলার আগে ম্যালফয় আশা করছে তুমি নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে নিয়ে যাবে।

হ্যারি প্লিজ, বলল হারমিওন, কান্নায় চোখ চকচক করছে, প্লিজ বুঝতে চেষ্টা কর। ব্ল্যাক একটা ভয়ানক, ভয়ানক ঘটনা ঘটিয়েছে, কিন্তু তুমি নিজেকে বিপদের মুখে ঠেলে দিও না, এটাই ব্ল্যাক চাচ্ছে … ওহু, হ্যারি, তুমি যদি ওর পেছনে ছোটো তাহলে সেটাই হবে, যেটা ব্ল্যাক চাচ্ছে। তোমার মা-বাবা নিশ্চয়ই চাইত না। তোমার ক্ষতি হোক, চাইতো কি। ওরা কখনই চাইত না যে তুমি ব্ল্যাককে খুঁজে বেড়াও!

ওরা কি চাইতেন সেটা আমি কখনই জানতে পারবো না, এর জন্য ব্ল্যাক দায়ী, আমি তাদের সঙ্গে কখনও কথা বলিনি, সংক্ষেপে বলল হ্যারি।

নীরবতা নেমে এল। ক্রুকশ্যাংকস হাত–পা ছড়িয়ে থাবাগুলো মেলে ধরল, বন্ধ করল। রনের পকেটে কি একটা নড়েচড়ে উঠল।

আচ্ছা, বলল রন, বিষয় পরিবর্তন করতে চাচ্ছে সে, এখন তো ছুটি! ক্রিস্টমাস প্রায় এসে গেছে! চল আমরা নিচে গিয়ে হ্যাগ্রিডের সঙ্গে দেখা করি। যেন এক যুগ হয়ে গেল আমরা ওকে দেখছি না!

না! সঙ্গে সঙ্গে বলল হারমিওন, হ্যারির প্রাসাদের বাইরে যাওয়ার কথা না, রন–

ঠিক আছে, চল যাই, বলল হ্যারি, উঠে বসল, আমি তাকে জিজ্ঞেস করবো আমার বাবা-মা সম্পর্কে যখন বলল তখন কেন ব্ল্যাকের কথা বলেনি!

ব্ল্যাককে নিয়ে আবার আলোচনা হোক এটা অন্তত রন চায়নি।

অথবা আমরা একপ্রস্থ দাবাও খেলতে পারি, দ্বিধার সঙ্গে বলল সে, অথবা গবস্টোন, পার্সি একসেট রেখে গেছে–

না, চল হ্যাগ্রিডকে দেখতে চাই, দৃঢ় স্বরে বলল হ্যারি। হোস্টেল থেকে কোট নিয়ে ছবির ফুটো দিয়ে (স্যার ক্যাডোগানের দাঁড়াও এবং লড়াই কর হলুদ–পেটের কুকুর ছানা! শুনতে শুনতে) শূন্য প্রাসাদের মধ্য দিয়ে দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল।

লনের উপর দিয়ে আস্তে ধীরে হেঁটে গেল, বরফের ওপর অগভীর রেখা তৈরি করে। নিষিদ্ধ বনটাকে দেখে মনে হচ্ছে যেন ওটার ওপরে কেউ যাদু করেছে, প্রত্যেকটা গাছ রূপায় মোড়ানো, এবং হ্যাগ্রিডের কেবিন দেখতে যেন বরফের কেক।

নক করল রন, কিন্তু কোন জবাব নেই।

কেমন যেন একটা অদ্ভুত শব্দ, সে বলল। শোন–ওটা কি ফ্যাং? হ্যারি আর হারমিওন কান পাতল। ভেতর থেকে নিচু স্বরে গোঙানি শোনা যাচ্ছে।

আমরা বরং গিয়ে কাউকে নিয়ে আসি? বলল রন, তাকে নার্ভাস দেখাচ্ছে।

হ্যাগ্রিড! ডাকল হ্যারি, দরজা পেটাচ্ছে সে। হ্যাগ্রিড, তুমি কী ভেতরে আছ?

ভারি পদশব্দ শোনা গেল, শব্দ করে দরজাটা খুলল। দাঁড়িয়ে আছে হ্যাগ্রিড। চোখ লাল ও ফোলা; চামড়ার ওয়েস্টকোট বেয়ে অঝোর ধারায় পড়ছে চোখের পানি। তোমরা শুনেছ! সে চিৎকার করল হ্যারির গলা জড়িয়ে ধরল।

সাধারণ লোকের চেয়ে আকৃতিতে হ্যাগ্রিড দ্বিগুণ, ওর ভারে হ্যারির পড়ে যাওয়ার দশা। রন এবং হারমিওন হ্যাগ্রিডের দুই হাত ধরে ওকে তুলল, কেবিনের ভেতরে নিয়ে গেল। চেয়ারের কাছে গিয়ে টেবিলের ওপরে হুমড়ি খেয়ে পড়ল সে, কাঁদছে, চোখের পানিতে ভেসে যাচ্ছে মুখ, দাড়ি বেয়ে পড়ছে চোখের পানি।

হ্যাগ্রিড, কী হয়েছে? হতভম্ব হারমিওন।

টেবিলের ওপরে একটা অফিসিয়াল চিঠির মতো দেখতে পেল হ্যারি।

এটা কী হ্যাগ্রিড?

হ্যাগ্রিডের কান্না বেড়ে গেল, চিঠিটা হাত দিয়ে হ্যারির দিকে ঠেলে দিল।

জোরে জোরে পড়ছে হ্যারি:

প্রিয় মিস্টার হ্যাগ্রিড,
তোমার ক্লাসের একজন ছাত্রের ওপর হিপোগ্রিফ-এর আক্রমণ সম্পর্কে তদন্ত করে, আমরা প্রফেসর ডাম্বলডোর-এর নিশ্চয়তায় আশ্বস্ত হয়েছি যে এই ঘটনায় আপনার কোন দায়দায়িত্ব নেই।

বেশ, ওটা তো ঠিকই আছে, হ্যাগ্রিড! রন বলল ওর কাঁধে চাপড় মেরে। কিন্তু হ্যাগ্রিড কেঁদেই চলেছে, বিশাল এক হাত নেড়ে হ্যারিকে চিঠিটা পড়ে যেতে বলল।

অবশ্য, হিপোগ্রিফটা সম্পর্কে আমাদের আশংকা জানাতেই হচ্ছে। আমরা মিস্টার লুসিয়াস ম্যালফয়ের অফিসিয়াল অভিযোগ গ্রহণ করে ব্যাপারটা বিপদজনক জন্তুর ব্যবস্থাকরণ কমিটির কাছে সুপারিশ করছি। ২০শে এপ্রিল শুনানি হবে এবং আমরা ওই তারিখে আপনাকে হিপোফিকে নিয়ে কমিটির লন্ডনস্থ অফিসে উপস্থিত হওয়ার জন্য নির্দেশ দিচ্ছি। ইতোমধ্যে হিপোগ্রিফটা আলাদা করে বেধে রাখতে হবে।
আপনার সুহৃদ…

এরপর রয়েছে স্কুল গভর্নরদের একটি তালিকা।

ওহ বলল রন। কিন্তু হ্যাগ্রিড, তুমি তো বলেছিলে বাকবিক কোন খারাপ হিপোগ্রিফ না। আমি বাজি ধরে বলতে পারি ওর কিছু হবে না

হ্যাঁ, তোমরা কমিটির লোকজনদেরকে জানো না! ধরা গলায় বলল হ্যাগ্রিড, জামার হাতা দিয়ে চোখের পানি মুছল।

হ্যাগ্রিডের কেবিনের কোণ থেকে হঠাৎ একটা শব্দে হ্যারি, রন এবং হারমিওন চমকে ঘুরে দাঁড়াল ওই কোণায় বাকবিক শুয়েছিল একটা কিছু চিবোচ্ছিল, মেঝেটা ভরে আছে রক্তে।

বাইরে বরফের মধ্যে ওকে তো আমি বেঁধে রাখতে পারি না, ধরা গলায় বলল হ্যাগ্রিড। একা একা, এই ক্রিসমাসের সময়!

হ্যারি রন আর হারমিওন পরস্পরের দিকে তাকাল।

স্বপক্ষে তোমাকে খুব জোরালো যুক্তি দিতে হবে হ্যাগ্রিড, বলল হারমিওন। আমি নিশ্চিত তুমি প্রমাণ করতে পারবে যে বাকবিক নিরাপদ।

কিছু আসে যায় না! কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলল হ্যাগ্রিড। ওই ব্যবস্থাকরণ শয়তানগুলো, সবগুলো লুসিয়াস ম্যালফয়ের পকেটে! ওকে ভয় পায়! যদি আমি হেরে যাই, বাকবিক–

নিজের গলার ওপর আঙুল দিয়ে ছুরি চালানোর ভঙ্গি করলো হ্যাগ্রিড। বিকট একটা চিৎকার দিয়ে দুহাতে মুখ ঢাকল।

ডাম্বলডোর কী বলেন, হ্যাগ্রিড? হ্যারি বলল।

তিনি ইতোমধ্যেই আমার জন্য প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি করেছেন, গুঙিয়ে উঠল সে। ওর এখন অনেক সমস্যা ডিমেন্টারদেরকে প্রাসাদের বাইরে রাখা, সাইরিয়াস ব্ল্যাক ঘুরে বেড়াচ্ছে মুক্ত।

রন আর হারমিওন পলকে হ্যারির দিকে তাকাল, যেন এখনই সে হ্যাগ্রিডকে অভিযোগে অভিযুক্ত করবে ব্ল্যাক সম্পর্কে সত্য কথাটা না বলার জন্যে। কিন্তু ওটা বলতে পারল না হ্যারি, বিশেষ করে এখন যখন হ্যাগ্রিড ভীত এবং বিপর্যস্ত।

শোন হ্যাগ্রিড, সে বলল, তোমার হতাশ হলে চলবে না। হারমিওন ঠিকই বলেছে, তোমার পক্ষে জোরালো যুক্তির দরকার। তুমি আমাদেরকে সাক্ষী হিসেবে রাখতে পার।

আমি নিশ্চিত, আমি হিপ্রোগ্রিফকে উস্কানি দেয়া প্রসঙ্গে একটা মামলা সম্পর্কে পড়েছি, চিন্তিতভাবে বলল হারমিওন, ওই মামলায় হিপোগিফটা বেকসুর খালাস পেয়ে গিয়েছিল। ওটা তোমার জন্যে আমি খুঁজে বের করব। দেখা যাক কি ঘটেছিল আসলে।

আরও জোরে চিৎকার করে কেঁদে উঠল হ্যাগ্রিড। হ্যারি এবং হারমিওন রনের দিকে তাকালো সাহায্যের জন্যে।

ইয়ে–মানে, আমি কী চা বানাব? বলল রন।

হ্যারি ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

যখনই কেউ বিচলিত হয় তখনই আমার মা চা করে দেন, কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল রন।

অবশেষে সাহায্যের অনেক প্রতিশ্রুতি দেয়ার পর, সামনে এক কাপ গরম চা নিয়ে, টেবিল ক্লথের সাইজের রুমাল দিয়ে নাক ঝেড়ে হ্যাগ্রিড বলল, তোমরা ঠিক বলেছ। এভাবে ভেঙে পড়লে চলবে না। আমাকে স্থির হতে হবে

ফ্যাং, ভয়ে ভয়ে টেবিলের নিচে থেকে বেরিয়ে এসে হ্যাগ্রিডের হাঁটুর উপর মাথা রাখল।

আমি কিছুদিন ধরে যেন আর নিজের মধ্যে ছিলাম না, ফ্যাং-এর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল হ্যাগ্রিড। এক হাতে মুখ মুছে বলল বাকবিক সম্পর্কেই ছিল যত দুশ্চিন্তা, এবং কেউই আমার ক্লাসটিকে আজ যেন পছন্দ করছিল না

আমরা পছন্দ করেছি! মিছে করে বলল হারমিওন।

ঠিক, সাংঘাতিক রকমের ভালো! বলল রন, টেবিলের নিচের নিজের আঙুল ক্রস করল। ইয়ে–মানে, ফ্লবারওয়ার্মগুলো কেমন আছে?

মারা গেছে, মুখ ভার করে বলল হ্যাগ্রিড। খুব বেশি লেটুস পাতা খেয়ে।

ওহ্, না! বলল রন, ঠোঁট কুচকে।

আর ওই ডিমেন্টাররা আমাকে অসুস্থ করে তোলে, বলল হ্যাগ্রিড, ওর গাঁ কেঁপে উঠল। যতবার থ্রি মস্টিক-এ কিছু খেতে যাই ততবারই তাদের পাশ দিয়ে যেতে হয়। মনে হয় যেন আজকবানে ফিরে গেছি

হ্যারি রন আর হারমিওন শ্বাসরুদ্ধ করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকল। এর আগে কখনই ও আজকাবানের থাকার অভিজ্ঞতা বলেনি। সামান্য বিরতির পর ভয়ে ভয়ে হারমিওন জিজ্ঞাসা করল, ওখানে কি ভয়াবহ ব্যাপার, হ্যাগ্রিড প্রশ্ন করল।

তোমাদের কোন ধারণাই নেই, শান্তভাবে বলল হ্যাগ্রিড। ওরকম কোন জায়গায় এর আগে যাইনি, ভেবেছিলাম পাগল হয়ে যাব। মনের ভেতরে সব ভয়াবহ ব্যাপার স্যাপার হচ্ছিল… যেদিন আমাকে হোগার্টস থেকে বের করে দেয়া হল… সেদিন আমার বাবা মারা গেলেন… ঐদিন নরবেটকে যেতে দিতে হয়েছিল

পানিতে ভরে এল ওর চোখ। নরবেট, শিশু ড্রাগন, হ্যাগিড্র জিতেছিল তাসের খেলায়।

কিছুদিন পরে তুমি মনে করতে পারতে না তুমি কে। বেঁচে থাকার কোন অর্থই তোমার কাছে আর থাকত না। আমি সব সময় আশা করতাম যেন ঘুমের মধ্যেই মৃত্যু হয় ওরা যখন আমাকে ছেড়ে দিল, আমার যেন নতুন জন্ম হল, সবকিছু আবার বন্যার মত ফিরে এল, আমার মনের ওটাই ছিল সবচেয়ে ভালো অবস্থা। মনে রেখ, ডিমেন্টাররা আমাকে ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারে মোটেই আগ্রহী ছিলো না।

কিন্তু তুমি তো নির্দোষ ছিলে! বলল হারমিওন।

নাক দিয়ে শব্দ করল হ্যাগ্রিড।

তুমি কী মনে কর ওদের কিছু এসে যায়? ওরা ওসব পাত্তা দেয় না। যতদিন পর্যন্ত ওখানে কয়েকশ মানুষ বন্দি রয়েছে এবং তাদের ভেতর থেকে সুখের সব বোধ বের করে নিতে পারছে ওরা, ভাবেই না কে দোষী আর কে নির্দোষ।

কয়েক মুহূর্তের জন্য চুপ করল হ্যাগ্রিড, ওর হাতের চায়ের পেয়ালার দিকে তাকিয়ে আছে। তারপরে আবার শান্তভাবে বলল, ভাবছিলাম বাকবিককে ছেড়ে দেব কি না ওকে উড়িয়ে দেব কিন্তু কীভাবে একটা হিপোফিকে বোঝাবো যে ওর পালিয়ে থাকা দরকার? এবং-এবং আইন ভাঙার ব্যাপারেও আমি ভয় পাচ্ছি… ওদের দিকে মুখ তুলে তাকাল হ্যাগ্রিড, গাল বেয়ে পানি পড়ছে। আমি আর কখনই আজকাবানে ফিরে যেতে চাই না।

***

হ্যাগ্রিডের ওখানে যাওয়া আনন্দের হয়নি কিন্তু রন এবং হারমিওন যেটা আশা করেছিল সেটাই হয়েছে। হ্যারি অবশ্য ব্ল্যাকের কথা ভুলে যায়নি, কিন্তু হ্যাগ্রিডকে মামলায় বিজয়ী হতে সাহায্য করতে হলে সব সময় প্রতিশোধ নেয়ার কথা ভাবা যায় না। সে, রন এবং হারমিওন পরদিন লাইব্রেরিতে গেল, কমনরুমে ফিরে এল অনেকগুলো বই নিয়ে, এগুলো বাকবিকের ব্যাপারে মামলায় সাহায্য করতে পারে। তিনজন আগুনের সামনে বসে ধুলোমাখা বইগুলোর পাতা উল্টিয়ে এই ধরনের জম্ভ সম্পর্কে বিখ্যাত মামলাগুলো দেখতে লাগল, সময় সময় প্রাসঙ্গিক কিছু পেলে নিজেরা আলোচনা করে নিত।

এই যে এখানে দেখা যাচ্ছে … ১৭২২ সালে একটা মামলা হয়েছিল কিন্তু তখন হিপোগ্রিফটাকে সাজা দেয়া হয়েছিল–ওহহ দেখ ওরা ওকে কি করেছে, অসহ্য–।

এটাও সাহায্য করতে পারে, দেখ–১২৯৬ সালে একজনকে মেরে ফেলেছিল একটা ম্যান্টিকো কিন্তু ওরা বিচারে ওটাকে ছেড়ে দিয়েছিল–ওহ–না, ছেড়ে দিয়েছিল কারণ ওর কাছে যেতে সবাই ভয় পেত

ইতোমধ্যে, অপূর্ব সুন্দরভাবে প্রাসাদটাকে সাজানো হলো ক্রিসমাস উপলক্ষে, কিন্তু খুব কম ছাত্র ছিল স্কুলে। করিডোর থেকে কাগজের ফিতা আর চিরহরিৎ পরজীবী গোটা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছিল, যোদ্ধাদের বর্মের ভেতর থেকে রহস্যময় আলো এবং গ্রেটহল-এর ভেতরে বরাবরের মত ১২টি ক্রিসমাস গাছ সোনালী তারায় চকমক করছে। মজাদার খাবারের সুগন্ধীতে করিডোর ম ম করছে। এবং ক্রিসমাসের সন্ধ্যায় এই গন্ধ এত জোরালো হয়ে গেল যে স্ক্যাবার্সও রনের পকেট থেকে মুখ বার করে নাক দিয়ে গন্ধ টেনে নিল।

ক্রিসমাস সকালে রনের ছোঁড়া বালিশে ঘুম ভাঙল হ্যারির।

ওহ্! উপহার!

হ্যারি হাত বাড়িয়ে চশমাটা নিয়ে চোখে দিল, আধো অন্ধকারে বিছানায় পায়ের কাছে অনেকগুলো পার্সেলের একটি স্তূপ দেখতে পেল। রন এরই মধ্যে নিজের পার্সেলের কাগজ ছিঁড়তে শুরু করেছে।

মায়ের কাছ থেকে আরেকটা জাম্পার আবার মেরন রঙের দেখি তুমি কি পেয়েছে।

হ্যারিও পেয়েছে। মিসেস উইজলি ওর জন্য টকটকে লাল রঙের একটা জাম্পার পাঠিয়েছেন, ওটার সামনে গ্রিফিন্ডারের সিংহ আঁকা, ঘরে বানানো অনেকগুলো পিঠা, কিছু ক্রিসমাস কেক এক বাক্স বাদাম। এসব একপাশে সরিয়ে রাখতেই সে দেখল নিচে একটা লম্বা পাতলা প্যাকেট পড়ে আছে।

ওটা কী? রন বলল, ওর হাতে একজোড়া মেরন রঙের নতুন মোজা।

জানি না

হ্যারি পার্সেলটা খুলে ফেলল এবং চমৎকার চকচকে ব্রুমস্টিক বিছানায় গড়িয়ে পড়ল, হা হয়ে গেল হ্যারির মুখটা। রন ওর মোজাটা ফেলে দিয়ে এক লাফে সামনে চলে এল।

আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না, ভাঙা গলায় বলল।

এটা একটা ফায়ারবোল্ট, ডায়গন অ্যালিতে দেখা হ্যারির স্বপ্নের ব্রুমস্টিক। হ্যান্ডেলটা চকচক করছে। ওটা যেন কাঁপছে এবং ছেড়ে দেয়ার পর কোনরকম সাহায্য ছাড়াই শূন্যে ভাসছে ঠিক ওর নিজের উচ্চতার মাপে। ওর চোখ ঘুরে এল উপরের সোনালী রেজিস্ট্রেশন নাম্বার থেকে একেবারে নিচের মসৃণ সমান করা বার্চ-এর কচি ডালে।

কে পাঠিয়েছে এটা? রন জিজ্ঞাসা করল চাপা গলায়।

দেখ তো কোন কার্ড আছে কি না, বলল হ্যারি।

রন ফায়ারবোল্টের উপরের র‍্যাপিংটা ছিঁড়ে ফেলল।

কিছু নেই! বিশ্বাস করো, এত খরচ কে করল?

আচ্ছা, বলল হ্যারি, হতবাক হয়ে গেছে ও, আমি বাজি ধরে বলতে পারি ডার্সলিরা ওটা পাঠায়নি।

আমি বাজি ধরে বলতে পারি ডাম্বলডোর পাঠিয়েছেন, বলল রন, ও ফায়ারবোল্টটার চারপাশে হাঁটছে, প্রত্যেকটি ইঞ্চি খুটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। মনে আছে তোমাকে অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার জামাও বেনামে উনিই পাঠিয়েছিলেন।

ওটা আমার বাবার ছিল যদিও, বলল হ্যারি। ডাম্বলডোর শুধু ওটা আমার কাছে উত্তরাধিকার হিসেবে পাঠিয়ে দিয়েছেন। তিনি নিশ্চয়ই আমার জন্য একশ গ্যালিয়ন খরচ করবেন না। তিনি ছাত্রদেরকে এরকম মূল্যবান উপহার দেবেন না।

সে কারণেই তো বলবেন না যে তিনি নিজেই ওটা দিয়েছেন! বলল রন। যদি ম্যালফয়ের মতো কেউ বলে যে তিনি পক্ষপাতিত্ব করছে। হে, হ্যারি– রন বিকট একটা হাসি দিল, ম্যালফয়! এটা ও দেখলে যে কি করবে! শুয়োরের মতো অসুস্থ হয়ে যাবে! এটা একটা আন্তর্জাতিক মানের ব্রুম, অবশ্যই!

আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না, হ্যারি বিড় বিড় করে বলল, ফায়ারবোল্টের গায়ে হাত বুলাচ্ছে সে, হ্যারির বেডে বসে হাসছে রন, হাসছে ম্যালফয়ের কথা ভেবে। কে–?

আমি জানি, বলল রন, নিজেকে সামলে নিল সে। আমি জানি কে হতে পারে–লুপিন!

কী? বলল হ্যারি, এখন সে নিজেই হাসতে শুরু করেছে। লুপিন? শোন, যদি তার কাছে অত সোনা থাকত, তাহলে নিজের জন্যে নতুন পোশাক কিনতে পারতেন।

হ্যাঁ, কিন্তু উনি তোমাকে পছন্দ করেন বলল রন। এবং যখন তোমার নিম্বাসটা গুড়ো গুড়ো হয়ে গেল তখন তিনি ওখানে ছিলেন না, সব শুনে স্থির করলেন ডায়াগন অ্যালিতে গিয়ে তোমার জন্য এটা নিয়ে আসবেন।

তিনি ছিলেন না মানে, কি বোঝাতে চাচ্ছ? বলল হ্যারি। আমি যখন ম্যাচ খেলছিলাম তিনি তো তখন অসুস্থ ছিলেন।

বেশ, তিনি তো হাসপাতালে ছিলেন না, রন বলল। আমি ওখানে ছিলাম, বেডপ্যান পরিষ্কার করেছি, মনে আছে সেইপের ডিটেনশন?

হ্যারি ভ্রূ কুঁচকে রনের দিকে তাকাল।

আমার মনে হয় না এরকম একটা দামি জিনিস কেনার সামর্থ লুপিনের রয়েছে।

তোমরা দুজন কী নিয়ে হাসছ?

হারমিওন ঢুকল ঘরে, পরনে ড্রেসিং গাউন হাতে কুকশ্যাংকস,ওটাকে খুব মন মরা দেখাচ্ছে।

ওকে এখানে এনো না! রন বলল, বিছানার উপর থেকে তাড়াতাড়ি করে স্ক্যাবার্সকে ও নিজের পাজামার পকেটে ঢুকিয়ে দিল। কিন্তু হারমিওন ওর কথা যেন শুনতে পায়নি সে সিমাস-এর শূন্য বিছানায় কশ্যাংককে নামিয়ে রেখে অপলক চোখে মুখ হা করে তাকিয়ে রয়েছে ফায়ারবোল্টের দিকে।

ওহ্, হ্যারি! তোমাকে কে পাঠাল ওটা?

কোন ধারণাই নেই, বলল হ্যারি। এটার সঙ্গে কোন কার্ড বা অন্য কিছু নেই।

এই খবরে হারমিওন অবাকও হলো না উত্তেজিতও হলো না। উল্টো মুখ বেজার হয়ে গেল এবং ঠোঁট কামড়ে ধরল সে।

তোমার হলোটা কী? বলল রন।

আমি জানি না, বলল হারমিওন ধীরে ধীরে। এটা একটু অদ্ভুত তাই না? আমি বলতে চাচ্ছি এটা খুব ভালো ব্রুম তাই না?

হতাশ হয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল রন।

এটাই সবচেয়ে ভালো ব্রুম, হারমিওন, সে বলল।

তাহলে এটা নিশ্চয়ই খুব দামি

সম্ভবত স্লিথারিনদের সবার ব্রুম যোগ করলে যে দাম হবে তার চেয়ে বেশি, বলল রন, খুশি সে।

বেশ এরকম একটা দামি জিনিস হ্যারিকে কে পাঠালো, এবং জানতেও দেবে না যে সে পাঠিয়েছে? বলল হারমিওন।

তাতে কী আসে যায়? অসহিষ্ণুভাবে বলল রন। হ্যারি, আমি একটু ওটা চড়তে পারি? পারি?

আমি মনে করি না এখনই কারো এটা চড়া উচিত! তীক্ষ্ণ স্বরে বলল হারমিওন।

হ্যারি এবং রন তাকাল ওর দিকে।

হ্যারি তোমার কি মনে হয় এটা দিয়ে কী করবে–ঘর ঝাড়ু দেবে? বলল রন।

কিন্তু হারমিওন জবাব দেয়ার আগেই, সিমাস-এর বিছানার উপর থেকে এক লাফে কুকশ্যাংক রনের বুকের উপর লাফিয়ে পড়ল।

ওকে-এখান–থেকে–নিয়ে–যাও! চিৎকার করে উঠল রন, এক থাবায় রনের পাজামা ছিঁড়ে ফেলেছে কুকশ্যাংক আর ওর কাঁধের উপর দিয়ে এক লাফে পালিয়ে গেল স্ক্যাবার্স। স্ক্যাবার্সের লেজটা ধরে ফেলল রন আর

ক্রুকশ্যাংককে লক্ষ্য করে ছুড়ল এক লাথি, ওটা বেড়ালটার গায়ে না লেগে হ্যারির বিছানার শেষে ট্রাংকটায় লেগে ওটা পড়ল রনের পায়ের ওপরে। ব্যথায় লাফিয়ে উঠল রন।

হঠাৎ ক্রুকশ্যাংকের গায়ে লোমগুলো খাড়া হয়ে গেল। রুমের ভেতর অস্পষ্ট কিন্তু তীক্ষ্ণ বাঁশির শব্দ শোনা গেল। আংকল ভারননের পুরনো মোজা থেকে পকেট সিকোস্কোপটা পড়ে গিয়ে মেঝেতে ঘুরছে আর চকচক করছে।

আমি ওটার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম! হ্যারি বলল, নুয়ে সিকোস্কোপটা তুলে নিল। যদি উপায় থাকে ওই ধরনের মোজা আমি পরি না…।

ওর হাতের তালুতে মিকোস্কোপটা ঘুরছে আর বাঁশি বাজাচ্ছে। ফসফস আওয়াজ করছে কশ্যাংকস, আর থুথু ফেলছে।

ওই বিড়ালটাকে এখান থেকে নিয়ে যাও হারমিওন, ক্ষিপ্ত হয়ে বলল রন; হ্যারির বিছানায় বসে পায়ের আঙুল মালিশ করছে ও। ওটাকে আটকিয়ে রাখতে পার না? হারমিওন রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেল, কশ্যাংকের হলুদ চোখগুলো বিতৃষ্ণার দৃষ্টিতে রনের দিকে তাকিয়ে রইল যেতে যেতে।

স্নিকোস্কোপটাকে মোজার ভেতরে ভরে ট্রাংকে ছুঁড়ে মারল হ্যারি। এখন ঘরের ভেতর একটাই আওয়াজ রনের গোঙানি এবং রাগের। স্ক্যাবার্স গুটিসুটি হয়ে রনের হাতে। অনেক দিন পর হ্যারি স্ক্যাবার্সকে দেখল এবং এক সময়ের নাদুস নুদুস এই ইঁদুরটাকে এখন ওর কাছে মনে হল হাড্ডিসার, গা থেকে লোমও পড়ে গেছে।

ওকে খুব সুস্থ মনে হচ্ছে না, তাই না? হ্যারি বলল।

ওর ওপর খুব চাপ পড়েছে! ও খুবই ভালো থাকবে যদি ওই হতভাগা বেড়ালটা ওকে জ্বালাতন না করে!

হ্যারির মনে আছে ম্যাজিক্যাল মেনাগেরিতে ওই মহিলা বলেছিলেন ইঁদুর মাত্র তিন বছর বাঁচে, ওর এখন মনে হচ্ছে স্ক্যাবার্সের যদি কোন লুকনো শক্তি না থাকে তাহলে ও জীবনের শেষ দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এবং যদিও রন সবসময় বলে স্ক্যাবাসটা কোন কাজের না, বিরক্তিকর, তবুও ওটা যদি না থাকে তবে রন খুবই মর্মাহত হবে।

পরদিন সকালে গ্রিফিন্ডর কমনরুমে ক্রিসমাস নিয়ে খুব উৎসাহ দেখা যায়নি। কুকশ্যাংকসকে হারমিওন তার রুমে বন্ধ করে এসেছে, কিন্তু রন যে ওকে লাথি মারতে চেয়েছিল তাতে সে তখনও ক্ষেপে আছে; অন্যদিকে রনও ক্ষিপ্ত হয়ে আছে কারণ কশ্যাংকস আবারও স্ক্যাবার্সকে খেয়ে ফেলতে চেয়েছিল। ওদের দুজনের মধ্যে মিল করিয়ে দিতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে হ্যারি চেষ্টাটাই বাদ দিল। এখন সে ফায়ারবোল্টটা পরীক্ষা করার কাজে ব্যস্ত, ওটাকে সে সঙ্গে করে কমন রুমে নিয়ে এসেছে। কোন একটা কারণে এটা হারমিওনকে স্বস্তি দিচ্ছে না; সে অবশ্য কিছু বলল না, কিন্তু ক্ৰমটার দিকে কেমন যেন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

লাঞ্চের সময় ওরা গ্রেটহলে গিয়ে দেখল হাউজের টেবিলগুলো আবার দেয়ালের সঙ্গে লাগানো, এবং হলের মাঝখানে বার জন বসতে পারে এমন একটা টেবিল সাজানো। প্রফেসর ডাম্বলডোর, ম্যাকগোনাগল, স্নেইপ, স্প্রাউট এবং ফ্লিটউইক ওখানে রয়েছেন, কেয়ারটেকার ফিলচও রয়েছে। মাত্র তিনজন ছাত্র; দুজন অত্যন্ত নার্ভাস প্রথম ইয়ারের এবং একজন স্লিথারিন-এর পঞ্চম বর্ষের গোমড়ামুখো ছাত্র।

মেরি ক্রিসমাস! বললেন ডাম্বলডোর, হ্যারি রন আর হারমিওন টেবিলটার কাছে পৌঁছাল। যেহেতু আমরা মাত্র কয়েকজনই রয়েছি, হাউজ টেবিল ব্যবহার করাটা বোকামি হবে বসে পড়!

হ্যারি, রন এবং হারমিওন টেবিলের প্রান্তে পাশাপাশি বসল।

পটকা! উৎসাহের সময় বললেন ডাম্বলডোর, স্নেইপকে রূপালী একটা পটকার প্রান্ত ধরিয়ে দিলেন, অনিচ্ছা সত্ত্বেও স্নেইপ সেটা নিলেন। বিকট শব্দে পটকাটা ফেটে গেল, বেরিয়ে এল ডাইনিদের বড়সড় চোখা হ্যাট–ওটার মাথায় রয়েছে একটা শকুনি।

দৃশ্যটি দেখে বোগার্টের কথা মনে পড়তেই হ্যারি তাকাল রনের দিকে এবং ওরা দুজনেই হাসল নিঃশব্দে; স্নেইপের মুখটা সরু হয়ে গেল, হ্যাটটা উনি ঠেলে দিলেন ডাম্বলডোরের দিকে, নিজের হ্যাটের জায়গায় ওটা পরে ফেললেন তিনি।

শুরু কর! সকলের উদ্দেশ্যে বললেন ডাম্বলডোর।

হ্যারি আলুর রোস্ট খাচ্ছিল যখন, তখন গ্রেটহলের দরজা আবার খুলে গেল। ভেতরে আসছেন প্রফেসর ট্রিলনি, ওদের দিকে, যেন চাকায় চড়ে। সবুজ পোশাক পরনে, চকচকে যেন একটা বড়সড় ড্রাগনফ্লাই।

সিবিল, কি চমৎকার! বললেন ডাম্বলডোর দাঁড়িয়ে।

আমি ক্রিস্টালের মধ্যে দিয়ে দেখছিলাম, বললেন প্রফেসর ট্রিলনি, ওর রহস্যময়ী স্বরে যেন অনেক দূর থেকে, এবং বিস্ময়ে দেখলাম একা একা লাঞ্চ খাওয়া ছেড়ে আমি আপনাদের সঙ্গে চলে এসেছি। ভাগ্যের নির্দেশ অস্বীকার করার আমি কে? সঙ্গে সঙ্গে আমি চলে এসেছি, তবে দেরিতে আসার জন্য ক্ষমা চাচ্ছি।

নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই, বললেন ডাম্বলডোর, ওর চোখ মিটমিট করছে। আপনার জন্য একটা চেয়ার নিয়ে আসি

এবং সত্যি সত্যি মধ্য বাতাসে যাদুর কাঠি ঘুরিয়ে তিনি একটি চেয়ার টেনে আনলেন, প্রফেসর স্নেইপ এবং প্রফেসর ম্যাকগোনাগল এর মাঝখানে ধপ করে পড়ার আগে চেয়ারটা কয়েকবার ঘুরিয়ে নিলেন। প্রফেসর ট্রিলনি অবশ্য বললেন, না। তার বড় বড় চোখ জোড়া টেবিলের চারদিক ঘুরছে এবং হঠাৎ একটা আস্তে করে আর্তচিৎকার করলেন তিনি।

আমি সাহস পাচ্ছি না, হেডমাস্টার! যদি আমি টেবিলে বসি তাহলে আমরা তেরজন হয়ে যাব! এর চেয়ে দুর্ভাগ্যের আর কি হতে পারে! কখনই ভুলে যাবেন না যখন তের জন একসঙ্গে খায় তখন সবচেয়ে আগে যে টেবিল ছেড়ে ওঠে সে মারা যায়।

আমরা এ ঝুঁকিটা নেব, সিবিল, বললেন প্রফেসর ম্যাগগোনাগল অধৈর্যের সঙ্গে। বস, টার্কিটা পাথরের মত ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে।

প্রফেসর ট্রিলনি একটু ইতস্তত করে বসলেন, চোখ বন্ধ এবং মুখটা জোর করে যেন বন্ধ করে রাখা, যেন টেবিলের উপরে বাজ পড়ে রয়েছে। প্রফেসর ম্যাগগোনাগল চামচ নিয়ে কাছের স্যুপ বোন-এ ডোবালেন।

দেব, সিবিল?

প্রফেসর ট্রিলনি ওর চক্ষু এড়িয়ে গেলেন। আবার চারদিক তাকিয়ে বললেন, কিন্তু প্রিয় প্রফেসর লুপিন কোথায়?

বেচারা আবার অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, বললেন ডাম্বলডোর, যার যার খাওয়ার নেয়ার জন্য ইশারা করলেন তিনি। ক্রিসমাসের দিনেই এমন হবে এটা খুবই দুঃখজনক।

কিন্তু আপনি তো ইতোমধ্যেই সেটা জানতেন, সিবিল? বললেন প্রফেসর ম্যাগগোনাগল।

প্রফেসর ট্রিলনি শীতল দৃষ্টিতে তাকালেন প্রফেসর ম্যাগগোনাগলের দিকে।

নিশ্চয়ই আমি জানতাম, মিনারভা, বললেন তিনি শান্তভাবে। কিন্তু কেউই এটা জাহির করে না যে সে সবজান্তা। অনেক সময়ই আমি এমন ভাব দেখাই যে আমার কোন অন্তর্দৃষ্টি নেই, যেন অন্যেরা এতে ঘাবড়ে না যায়।

এ দিয়ে অনেক কিছু বোঝা গেল, কাটাকাট ভাবে বললেন প্রফেসর ম্যাকগোনাগল।

হঠাৎ করেই প্রফেসর ট্রিলনির স্বরের রহস্যময়তা কমে গেল।

যদি আপনি জানতেই চান, মিনারভা, তাহলে বলছি, আমি দেখতে পেয়েছি প্রফেসর লুপিন বেশিদিন আর আমাদের সঙ্গে নেই। উনি নিজেও যেন সচেতন যে তার দিন ফুরিয়ে এসেছে। আমি যখন ক্রিস্টাল বলে তার ভবিষ্যৎ দেখতে চেয়েছিলাম তিনি দৌড়ে চলে গেলেন–।

কল্পনা করন, শুষ্ক স্বরে বললেন প্রফেসর ম্যাকগোনাগল।

আমার সন্দেহ আছে, বললেন ডাম্বলডোর, আনন্দের কিন্তু উচ্চস্বরে, ফলে প্রফেসর ম্যাকগোনাগল এবং ট্রিলনির আলোচনার সমাপ্তি হয়ে গেল। যে প্রফেসর লুপিন কোন আশু বিপদের মুখে রয়েছেন। সেভেরাস, আপনি কী তার জন্য আবারও পোশন বানিয়েছেন?

হ্যাঁ, হেডমাস্টার, বললেন স্নেইপ।

বেশ, বললেন ডাম্বলডোর। তাহলে যেকোন মুহূর্তে তিনি ভালো হয়ে উঠবেন ডেরেক, ওই চিপোলাতাসটা নিয়েছো? দারুণ হয়েছে।

প্রথম বর্ষের ছাত্রটি একেবারে লাল হয়ে গেল, হাজার হোক ডাম্বলডোর সরাসরি ওর সঙ্গে কথা বলেছে, কাঁপা কাঁপা হাতে আরো সসেজ তুলে নিল সে।

ক্রিসমাস ডিনার প্রায় শেষ হয়ে যাওয়া পর্যন্ত প্রফেসর ট্রিলনি স্বাভাবিক থাকলেন। দুই ঘণ্টা পর। হ্যারি এবং রন তখনও মাথায় পটকার হ্যাট পরনে, পেট ভর্তি খাবার, উঠে দাঁড়ালো।

মাই ডিয়ার! তোমাদের দুজনের মধ্যে কে আগে আসন ছেড়েছো?

জানি না, বলল রন, অপ্রতিভভাবে চেয়ে রইল হ্যারির দিকে।

এতে কোন পার্থক্য হবে বলে আমার মনে হয় না, শীতল স্বরে বললেন প্রফেসর ম্যাকগোনাগল, যদি না দরজার বাইরে মাথা কাটার জন্য কোন পাগল জল্লাদ দাঁড়িয়ে থাকে।

রন হাসল। প্রফেসর ট্রিলনিকে ক্ষুব্ধ মনে হল।

আসছো? হারমিওনকে জিজ্ঞাসা করল হ্যারি।

না, বিড় বিড় করে বলল হারমিওন। আমি প্রফেসর ম্যাকগোনাগলের সঙ্গে দ্রুত কয়েকটি কথা সেরে নিতে চাই।

সম্ভবত ও দেখতে চায় তিনি আর কোন ক্লাস নেবেন কি না, হাই তুলে বলল রন, এন্ট্রান্স হলের দিকে যেতে যেতে।

ছবির ফুটোর কাছে যখন পৌঁছল দেখল স্যার ক্যাডোগান কয়েকজন সাধুকে নিয়ে ক্রিসমাস পার্টি করছে। আরও রয়েছেন হোগার্টসের কয়েকজন সাবেক হেড মাস্টার এবং তার মোটাসোটা ঘোড়ার বাচ্চাটা। ওদের উদ্দেশ্যে টোস্ট করলো স্যার ক্যাডোগান।

মেরি–হিক–ক্রিসমাস! পাসওয়ার্ড?

স্কার্ভি কার, বলল রন।

এবং আপনাকেও তাই, স্যার! গর্জন করে উঠলেন স্যার ক্যাডোগান, ছবিটা সামনের দিকে ঘুরে গেল ওদেরকে ভেতরে ঢুকতে দেয়ার জন্য।

সোজা তার রুমে গেল হ্যারি, ফায়ারবোল্ট আর ওর জন্মদিনে হারমিওনের দেয়া ব্রুমস্টিক সার্ভিসিং কিটটা নিয়ে নিচ তলায় এল। ফায়ারবোল্টটাকে কিছু একটা করার চেষ্টা করল; অবশ্য ওটার কোন শাখা বেঁকে নেই যে ছাটতে হবে এবং হাতলটা এত চকচকে যে নতুন করে পলিশ করার কোন মানেই হয় না। সে আর রন বসে বসে প্রশংসার দৃষ্টিতে ওটাকে দেখল, ছবির ফুটোটা খুলে গেল, ভেতরে এল হারমিওন সঙ্গে প্রফেসর ম্যাকগোনাগল।

যদিও প্রফেসর ম্যাকগোনাগল গ্রিফিনডর হাউজের প্রধান, এর আগে একবার মাত্র হ্যারি তাকে কমনরুমে দেখেছে, তাও একটি দুঃখজনক ঘোষণা দেয়ার জন্য। সে এবং রন এক পলকে তাকিয়ে থাকল প্রফেসরের দিকে, হাতে ধরা ফায়ারবোল্ট। হারমিওন ওদের পাশে এল, বসল, হাতের কাছের বইটা নিয়ে ওটার পেছনে মুখ লুকাল।

তাহলে এটাই সেটা? প্রফেসর ম্যাকগোনাগল বললেন, হেঁটে আগুনের কাছে গিয়ে ফায়ারবোল্টের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। মিস গ্রেঞ্জার এই মাত্র আমাকে জানালেন যে, পটার, তোমাকে একটি ব্রুমস্টিক পাঠানো হয়েছে।

হ্যারি এবং রন হারমিওনের দিকে তাকাল। ওরা দেখতে পাচ্ছে বইটার আড়ালে ওর কপালটা লাল হয়ে গেছে, বইটা অবশ্য উল্টোভাবে ধরা।

দেখতে পারি? বললেন প্রফেসর ম্যাকগোনাগল, জবাবের জন্য অপেক্ষা না করে তিনি ওদের হাত থেকে ফায়ারবোল্টটা টেনে নিলেন। হাতল থেকে শাখার মাথা পর্যন্ত ভালো করে পরীক্ষা করলেন। হুম, এবং এর সঙ্গে কোন কিছুই লেখা নেই, পটার? কোন কার্ড? কোন ধরনের চিঠি?

না, ফাঁকা স্বরে বলল হ্যারি।

হু … বললেন প্রফেসর ম্যাকগোনাগল। বেশ, আমি দুঃখিত এটা আমাকে নিয়ে যেতে হচ্ছে, পটার।

কী–কী? এক লাফে উঠে দাঁড়াল হ্যারি। কেন?

এটা অলুক্ষণে কি না পরীক্ষা করে দেখতে হবে, বললেন প্রফেসর। অবশ্য, আমি এ ব্যাপারে এক্সপার্ট নই, কিন্তু আমি বলতে পারি ম্যাডাম হুচ এবং প্রফেসর ফ্লিটউইক এটাকে একেবারে খুলে ফেলবে

খুলে ফেলবে? পুনরাবৃত্তি করল রন, যেন প্রফেসর ম্যাকগোনাগল পাগল হয়ে গেছেন।

কয়েক সপ্তাহর বেশি লাগবে না, বললেন প্রফেসর। যদি দেখা যায় এটা অলুক্ষণে নয় তাহলে আবার ফেরত পাবে।

এটার কোন সমস্যা নেই! বলল হ্যারি, গলার স্বর কাঁপছে। সত্যি প্রফেসর।

তুমি কিছুই জানতে পার না, পটার, বললেন প্রফেসর নরম গলায়, যতক্ষণ তুমি ওটাতে চড়ে ওড়ার চেষ্টা করেছে, যেকোন ভাবেই হোক, ওটা এখন আর সম্ভব নয়, যে পর্যন্ত না নিশ্চিতভাবে জানা যাচ্ছে যে ওটা অলুক্ষণে নয়। আমি তোমাদেরকে সব সময় অগ্রগতি জানাতে থাকব।

ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রফেসর ফায়ারবোল্টটা নিয়ে বেরিয়ে গেলেন। এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে হ্যারি, তার হাতে তখনও ধরা পলিশের টিনটা। রন অবশ্য সঙ্গে সঙ্গে হারমিওনকে আক্রমণ করল।

তুমি আবার প্রফেসর ম্যাকগোনাগলের কাছে দৌড় গিয়েছিলে কেন?

হারমিওন তার বইগুলো একদিকে ছুঁড়ে মারল। তখনও ওর মুখ লাল, কিন্তু উঠে দাঁড়িয়ে রনের মুখোমুখি হলো।

কারণ, আমি মনে করেছি-এবং প্রফেসর ম্যাকগোনাগলও আমার সঙ্গে একমত–যে ওই মস্টিকটা হ্যারিকে পাঠিয়েছে সাইরিয়াস ব্ল্যাক!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *