।। ১১।।
দিনুকাকার বাড়িতে ফিরে আমি একেনবাবুকে জিজ্ঞেস করলাম, “কী ব্যাপার বলুন তো, এসব রহস্য আপনি উঘাটন করলেন কখন?”
“সবই তো আমার এই কেয়াদিদির জন্যে। যে মুহূর্তে বুঝলাম বাংলা ই-মেলটা দু’বছরের পুরনো তখনই মাথায় এল, কোথাও একটা খেলা শুরু হয়েছে। তারপর নানান সম্ভাবনার কথা ভাবতে লাগলাম। তার মধ্যে একটা মনে হল হলেও হতে পারে। নেভাডাতে হয়তো সুব্রতবাবু নাদিয়া ম্যাডামকে বিয়ে করবেন বলেই বন্ধুকে নিয়ে গিয়েছিলেন। একটা কিছু ওখানে ঘটেছিল –ওঁদের দু’জনের কথাবার্তার মধ্যে থেকেই হোক বা অন্য কোনো সূত্র থেকে অজয়বাবু সন্দেহ করলেন অলিভারের মৃত্যুর সঙ্গে সুব্রত ও নাদিয়া জড়িত। বিষাক্ত মাশরুম হয়তো সুব্রতই জোগাড় করেছিল। এ নিয়ে নিশ্চয়ই ওঁদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। এরমধ্যে অজয়বাবুর মায়ের অসুস্থতার খবরটা আসে। সুব্রতবাবু আর নাদিয়া ম্যাডাম চিন্তা করলেন, অজয়বাবু যদি ওঁর সন্দেহের কথা পুলিশকে জানান, আর নতুন করে ইনভেস্টিগেশন শুরু হয়, তাহলে একটা ঝামেলা। অলিভারের মতো অজয়বাবুকেও সরাতে হবে। কিন্তু কী করে? প্রথম কাজ হল ওঁরা বিয়ে করবেন না, বিয়ে করলে অলিভার হত্যার অভিযোগটা জোরদার হবে। সবচেয়ে ভাল হয় যদি দেখান যায় অজয়বাবু নাদিয়া ম্যাডামকে বিয়ে করেছেন। ব্যাপারটার মোড় তাহলে অনেকটাই ঘুরে যাবে। এটা খুবই দ্রুত ডিসিশন। সুব্রত অজয়বাবুর ড্রাইভার্স লাইসেন্সটা চুরি করেন।”
“তাহলে অজয় আইডেন্টিটি কার্ড ছাড়া প্লেনে উঠলেন কী করে?”
“কেন স্যার, গ্রিন কার্ড, পাসপোর্ট –একটা হলে তো চলে। একটা নিশ্চয়ই সঙ্গে ছিল। যাই হোক, এই প্ল্যানের টাইম লাইনে নানা রকম ফাঁক আছে ঠিকই, কিন্তু অজয়বাবুকে সরিয়ে দিলে ফাঁকগুলো আর ধরা পড়বে না। অজয়ের পরিচয় দিয়ে বিয়ে করতে খুব একটা সমস্যা হল না। অজয়বাবুর ট্যাক্সের বহু কাজই সুব্রতবাবু করে দিতেন। অজয়বাবুর সোশ্যাল সিকিউরিটি, ঠিকানা ইত্যাদি সবই ওঁর জানা।।
“যাক সে কথা, ফিরে এসে ওঁরা দেখেন এরমধ্যেই অজয়বাবু দেশে চলে গেছেন। তখন একটাই দুশ্চিন্তা অজয়বাবু পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে গেছেন কি না। একটু খোঁজ খবর করে সুব্রতবাবু বুঝলেন এখনও অজয়বাবু কিছু বলেননি। কিন্তু এটাও সুব্রতবাবু বুঝলেন গতিক সুবিধার নয়। ওঁর কোনো ই-মেলের উত্তর অজয়বাবু দিচ্ছেন না, ফোনও ধরছেন না। এই অবস্থায় নাদিয়া ম্যাডামকে ম্যানহাটানে বসিয়ে দিয়ে সুব্রতবাবু তক্কে তক্কে রইলেন কবে অজয়বাবু ফিরছেন। অ্যাপার্টমেন্টে অজয়বাবুর ছবি রাখা হল। অজয়বাবুর ই-মেল- এ ফেক ওয়ার্নিং পাঠানো হল- যেটা বছর দুই আগে অলিভার পাঠিয়েছিলেন সুব্রতবাবুকে। কারণ তখনই ওঁদের প্রেম শুরু হয়েছিল।”
“একটা কথা,” আমি প্রশ্ন করলাম,”একই সময় ভারত আর আমেরিকা থেকে ই মেল- এ ঢুকলে হ্যাঁকার ভেবে অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দেওয়া হয় না?”
একেনবাবু কেয়ার দিকে তাকালেন। “কেয়াদিদি, তুমিই বল।”
কেয়া বলল, “ঠিক একই সময় ঢোকার চেষ্টা করলে হয়। আইডেন্টিটি ভেরিফিকেশন করতে বলে। আমার বিশ্বাস সেই জন্যেই সুব্রত অজয়ের নামে আরেকটা অ্যাকাউন্ট খুলেছিল। সেটাই নাদিয়া ব্যবহার করছিল।”
“এগজ্যাক্টলি স্যার, আর নাদিয়া ম্যাডামও আমাদের ভুল পথে নিয়ে যাবার জন্যে অ্যাক্টিং করে গেলেন। তবে কি না স্যার, এসব ব্যাপারে বুদ্ধিমান লোকেরাও ভুল করে। ভেবে দেখুন স্যার, অজয়বাবু কবে আসবেন, না আসবেন –সেটা জানার জন্যে সুব্রতবাবুকে দিলীপ শর্মাকে ফোন করতে হবে কেন? বন্ধুর কাছ থেকেই তো জানতে পারতেন!”
“এবার বুঝেছি,” আমি বললাম, “দিলীপ শৰ্মার কাছে খবরটা জেনে পয়লা এপ্রিলই কুইন্স থেকে চলে এসেছিল। কাজ খতম করে ফিরে যায়।”
“শুধু শেষ রক্ষা হল না স্যার।”
“কারণ আমার একেনদাদার জন্যে” বলে কেয়া একেনবাবুর গলা জড়িয়ে ধরল।
একেনবাবু লজ্জা লজ্জা মুখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “দিদিকে নিয়ে আর পারা যায় না স্যার। আজকের এই শেষ দৃশ্য কিন্তু দিদিরই প্ল্যান। আমারে নাকি হারকিউল পয়রো সাজাতে হবে!”
“এ্যরকুল পোয়ারো,” কেয়া শুদ্ধ করে দিল।
“আমি কি দিদি অত সব উচ্চারণ জানি!” একেনবাবু স্নেহভরা চোখে কেয়ার দিকে তাকালেন।
—–