সে আশা করেছিল, টেলিগ্রাম আসবে। বড় ভাই টেলিগ্রামটিতে ড্রাফট এখনো না পাওয়ার ব্যাপারটি জানাবেন। টেলিগ্রামের ভাষা হবে–নো ড্রফট। সিরিয়াস পোবলেম। এই জাতীয় টেলিগ্রাম তিনি আগেও করেছেন। তাঁর বড় মেয়ের এ্যাপেণ্ডিসাইটিস অপারেশন হল। তিনি টেলিগ্ৰাম পাঠালেন–রুমা অপারেশন। সিরিয়াস প্রবলেম। সেও মানি।
অপারেশনটি হাসপাতালে বিনা পয়সায় করা যেত। কিন্তু তিনি মেয়েকে ক্লিনিকে নিয়ে গিয়েছিলেন। ভালোই করেছেন। ক্লিনিকগুলিতে আজকাল নাকি ভালো চিকিৎসা হচ্ছে। পাশার কল্যাণে যদি ভালে চিকিৎসার একটা সুযোগ তৈরী হয়, যোক না। অন্তত একটি পরিবার যদি ভাবে–বড় রকমের ঝামেলাতেও তাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তাদের পেছনে আমেরিকান ডলার আছে। সেটাও তো মন্দ নয়। আত্মশ্লাঘার একটা ব্যাপার তো বটেই। প্রতীক্ষিত টেলিগ্রাম এবং চিঠি পাশা পেল। ক্রিসমাসের আগের দিন। টেলিগ্রামটি আর্জেন্ট। সেখানে লেখা–ড্রাফট মিসিং। টেক এ্যাকশান। কী ধরনের এ্যাকশান নেবার কথা বড়ো ভাই ভাবছেন, কে জানে।
চিঠিটা মজার। এটা পোস্ট করা হয়েছে আমেরিকা থেকে। বড় ভাই কাউকে বের করেছেন, যে আমেরিকা আসছে। এইসব কাজ তিনি খুব ভালো পারেন। তার হাত ধরে বলেছেন, ভাই রিকোয়েস্ট, এই চিঠিটা আপনি আমেরিকায় গিয়েই পোস্ট করে দেবেন। খুব জরুরী। এই কাজটা ভাই আপনাকে করতেই হবে, খুব জরুরী।
চিঠিটা দীর্ঘ। তাতে হারান ড্রাফটের পাত্তা লাগানর জন্যে তিনি এ পর্যন্ত যা যা করেছেন তার নিখুঁত বর্ণনা আছে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে তিনি এই প্রসঙ্গে দৈনিক বাংলায় একটা চিঠি লিখেছেন। পাঠকের মতামত কলামে সেই চিঠি ছাপাও হয়েছে। তিনি চিঠির একটি কাটিং পাঠিয়েছেন। চিঠিটা এরকম:
বিদেশী ড্রাফট কোথায় যায়?
বিদেশ থেকে যেসব ড্রাফট বা চেক দেশে অবস্থিত আত্মীয়স্বজনকে পাঠান হয়, তার সব কি ঠিক জায়গামত পৌঁছয়? আমার তা মনে হয় না। বাংলাদেশ পোস্ট অফিসের কারসাজিতে প্রায়ই একটি বিশেষ মহলের হাতে কিছু কিছু ড্রাফট বা চেক চালান হয়ে যায়। যার ফল হিসেবে অবর্ণনীয় দুঃখকষ্টের মধ্যে পড়তে হয়……
দীর্ঘ চিঠি। বড়ো ভাই লিখেছেন, এই জাতীয় একটা চিঠি তিনি ইংরেজি খবরের কাগজেও লিখেছেন, তবে সেই চিঠি ছাপা হয় নি।
এ মাসের ডাফটও পাঠান হয় নি। সামনের মাসে পাঠান হবে এমন কোনো সম্ভাবনা নেই।
পাশা যে জিনিসটা করতে যাচ্ছে, তার নাম হচ্ছে–ড়ুব দেওয়া।
এটা কোন নতুন ব্যাপার নয়। অতীতে অনেকেই করেছে। ভবিষ্যতেও অনেকে করবে।
পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার একটি ছেলে ছিল প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়–সে ক্ৰমাগত সাত বছর দেশে টাকা পাঠাল। প্রতি মাসে এক শ ত্রিশ ডলার। তার বাইরেও মাঝেমধ্যে কিছু বড়ো অঙ্ক। ছোট ভাই পোলট্রি ফার্ম দেবে-পাঁচ শ ডলার। বোনের বিয়ে হবে–পাঁচ শ ডলার। বনগাঁয় জমি রাখা হবে–এক হাজার ডলার।
তারপর হঠাৎ এক সকালবেলা সে ঠিক করল ড়ুব মারবে। এবং যথারীতি তা করল। ড়ুব দেওয়ার পদ্ধতি হচ্ছে ঠিকানা বদলে ফেলা। দেশের কোনো চিঠির জবাব না দেওয়া। প্রথম কয়েক বছর নিজ দেশের কারো সঙ্গে যোগাযোগ না রাখা, কারণ যোগাযোগ রাখলেই মন দুর্বল হয়ে যায়। দেশে টাকা পাঠাতে ইচ্ছা করে।
টেলিফোন বাজছে। পাশা উঠে গিয়ে কোন ধরল।
হ্যালো, পাশা চৌধুরী।
বলছি।
আমি বেল টেলিফোন থেকে বলছি, আমার নাম–
পাশা তাকে কথা শেষ না করতে দিয়ে বলল, আমি তোমাদের টেলিফোন বিল মিটিয়ে দিয়েছি, চেক পাঠান হয়েছে গত পরশু।
হ্যাঁ, তা আমরা জানি। তোমাকে টেলিফোন করা হয়েছে অন্য কারণে।
বল কারণটা।
তুমি জানুয়ারির এক তারিখ থেকে টেলিফোন লাইন ডিসকানেক্ট করতে বলেছ।
হ্যাঁ, বলেছি।
কেউ যদি তোমাকে পুরনো নাম্বারে টেলিফোন করে, তাহলে তাকে কি তুমি নতুন কোন নাম্বার দিতে চাও কিংবা যেখানে যাচ্ছ–তার ঠিকানা দিতে চাও? দিতে চাইলে সেটা আমার কম্পুটারে রেকর্ড করে রাখব। এবং এক সপ্তাহ পর্যন্ত যদি কেউ তোমাকে টেলিফোন করে, তাহলে ম্যাসেজটা পাবে।
আমি কোথায় যাব, তা নিজেও জানি না।
তার মানে কিছু দিতে চাও না?
পাশা কয়েক সেকেণ্ড ভেবে বলল, এই ম্যাসেজটি দেওয়া যেতে পারে –আপনি এই নাম্বারে যাকে খুঁজছেন তিনি নেই। তাঁর কোন ঠিকানাও নেই। কি, দেওয়া যাবে?
নিশ্চয়ই যাবে। মেরি ক্রিসমাস, মিঃ পাশা।
মেরি ক্রিসমাস।
এবার কিন্তু হোয়াইট ক্রিসমাস হচ্ছে, মিঃ পাশা।
তা হচ্ছে।
ওপাশের অল্পবয়স্ক মেয়েটির হয়তো আরো কিছু বলার ছিল। পাশা টেলিফোন নামিয়ে রাখল।