১১. ঘুষ

১১. ঘুষ

হ্যারি ভাবল, ক্রেচার যদি ইনফেরি দিয়ে পরিপূর্ণ লেক থেকে বেঁচে আসতে পারে তাহলে মুন্ডুঙ্গুসকে ধরে আনাও তার জন্য মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যাপার। এই চিন্তা থেকেই হ্যারি সারা সকাল অপেক্ষা করতে থাকল। ভাবল এই তো ক্রেচার এসে পড়বে। কিন্তু সকাল পার হয়ে গেল। সকাল পার হয়ে দুপুর হলো কিন্তু ক্রেচারের দেখা নেই। সন্ধ্যা নেমে এলে হ্যারি উদ্বিগ্ন হলো এবং হতাশায় ভুগতে থাকল। রাতের খাবারের ব্যবস্থা হয়েছে, সেই খাবারের ওপর হারমিয়ন নানা বৈচিত্র্য আনতে চেষ্টা করেছে। তাতেও হ্যারির মধ্যে কোন পরিবর্তন হল না।

পরদিনও ক্রেচার ফিরে এলো না। তার পরের দিনও না। কিন্তু ১২ নম্বর বাড়িটির বাইরের চত্বরে আলখাল্লা গায়ে দুজনকে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেল। সারারাত তারা সেখানে এক রকম পাহারায় রইল। বাড়ির দিকে তারা এমনভাবে তাকালো যেন তারা বাড়িটি দেখতে পায়নি।

হ্যারি, রন এবং হারমিয়র ড্রইং রুমের জানালা দিয়ে ওদেরকে দেখল। রন বলল, অবশ্যই ওরা ডেথ-ইটার।

হারমিয়নকে আতঙ্কিত দেখা গেল। তারপরও সে বলল, আমার তা মনে হয় না। অথবা এমন হতে পারে তারা স্নেইপকে আমাদের পিছু নিতে পাঠিয়েছে। ঘটনাটা এমন হতে পারে না?

রন বলল, তোমার কি মনে মনে হয় যে সে এখানে এসেছে, এবং মুডির কাসের ফলে তার মুখ বন্ধ?

হারমিয়ন বলল, হ্যাঁ, তা না হলে স্নেইপ বলতে পারত এখানে কীভাবে প্রবেশ করতে হয়, তাই না? কিন্তু সম্ভবত ওরা লক্ষ্য রাখছে আমাদেরকে এখানে দেখা যায় কি-না। ওরা ভালো করেই জানে এই বাড়িটি এখন হ্যারির।

তা কীভাবে জানবে? হ্যারি বলতে শুরু করল।

উইজার্ডিং দলিলগুলো মিনিস্ট্রিতে পরীক্ষা করা হয়েছে, মনে আছে? ওরা ভালো করেই জানে সিরিয়স এই বাড়িটি তোমাকে দলিল করে দিয়েছেন।

বাইরে ডেথ-ইটারদের উপস্থিতির কারণে ঘরের ভেতর একটি ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি হলো। মিসেস উইসলির পেট্রোনাস কথা বলার পর ওরা অন্য কোনো কণ্ঠের কথা এখানে শুনতে পায়নি। রনের একটি বিশ্রী অভ্যাস হয়েছে যা বিরক্তিকর। বারবার সে পকেটের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে ডেলুমিনেটর চেপে খেলা করতে থাকে। ক্রেচারের জন্য অপেক্ষা করাটা দূরে সরিয়ে রাখার জন্য হারমিয়ন দ্য টেলস অফ বিডল দ্য বার্ড পড়ছে। রনের ওই খেলার কারণে বারবার লাইট বন্ধ হওয়া এবং জ্বলে ওঠা হারমিয়ন পছন্দ করছে না।

ক্রেচারের অনুপস্থিতির তৃতীয় সন্ধ্যায় রনের ওই অভ্যাসের কারণে ড্রইং রুমের বাতি নিভে যাওয়ায় হারমিয়ন বিরক্ত হয়ে বলল, তুমি কী থামবে!

সরি! সরি!, রন ডেলুমিনেটরে চাপ দিয়ে লাইট অন করে বলল, আমার মনে থাকে না যে আমি এই কাজটি করছি!

তুমি অন্য কোনো ভালো কাজে মন দিতে পারো?

কী, বাচ্চাদের গল্প পড়ব?

রন, ডাম্বলডোর এই বইটি আমাকে দিয়েছেন,

আর তিনি আমাকে এই ডেলুমিনেটর দিয়ে গেছেন। আমার মনে হয় এটাই তাহলে সারাক্ষণ আমার ব্যবহার করা উচিত।

এই তর্কের ভিতরে থাকতে না পেরে হ্যারি ওদের দুজনের অলক্ষ্যে আস্তে করে ঘর থেকে কেটে পড়ল। সিঁড়িতে নেমে সে নিচের কিচেনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো। হ্যারি ভালো করেই জানে ক্রেচার ফিরে ওখানেই আসবে। হলরুমে যাওয়ার পথে অর্ধেক সিঁড়ি পার হতেই সে সামনের দরোজায় ক্লিক করে ধাতব একটি শব্দ শুনতে পেল এবং চেইন টানার শব্দ পাওয়া গেল।

হ্যারির প্রতিটি নার্ভ শক্ত হয়ে গেল। টান দিয়ে সে তার যাদুদন্ডটি বের করল। নিঃশব্দে সে অন্ধকারের দিকে ঘরের ভুতদের ছিন্ন মাথা যেখানে রয়েছে তার কাছাকাছি সরে এলো এবং অপেক্ষা করতে থাকল। দেখল, আস্তে করে দরোজা খুলে যাচ্ছে। সে অল্প সময়ের জন্য দরোজা দিয়ে বাইরের উঠোনের আলো দেখতে পেল দরোজা দিয়ে একটি আলখাল্লা পড়া শরীর প্রবেশ করল। তারপর ভিতরে প্রবেশ করা লোকটি তার পেছনে দরোজাটি বন্ধ করে দিল। অনুপ্রবেশকারী কয়েক পা সামনে এগিয়ে এলো এবং মুডির গলায় ডেকে উঠল, সেভেরাস স্নেইপ? ঠিক তখনই হলের এক প্রান্ত থেকে ধুলোর শরীর জেগে উঠল এবং তার দিকে ছুটে গেল। ধুলোর শরীর মৃত হাত দুটো উপরে তুলে আছে।

একটি শান্ত কণ্ঠ বলল, আমি তোমাকে হত্যা করিনি অ্যালবাস।

ধুলো শরীরের অশুভ ভাব চলে গেল এবং শরীরটি আবার বিস্ফোরিত হলো। ধুসর ঘন ধুলোর মেঘে অনুপ্রবেশকারীকে চেনা অসম্ভব হয়ে গেল।

হ্যারি তার মধ্যেই যাদুদণ্ডটি তাক করল।

 বলল, ডোন্ট মুভ!

মিসেস ব্ল্যাকের ছবিটির কথা তার একেবারেই মনে ছিল না। হ্যারির চিৎকারে ব্ল্যাকের গোপন পর্দাটি খুলে গেল। তিনি চিৎকার করে বলতে থাকলেন, মাডব্লাড়! নোংরা, আমার বাড়িটির অসম্মান করছিস-

রন এবং হারমিয়ন হ্যারির পেছনে ছুটে এসেছে। ওরাও হ্যারির মতো যাদুদণ্ড তাক করে আছে। অজানা লোকটি তখন হাত উঁচু করে নিচে হলরুমের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে।

থামো, ফায়ার ছুড়ো না, আমি, আমি রেমুস!

ওহ গুডনেস! হারমিয়ন দুর্বল কণ্ঠে বলল। সে যাদুদণ্ডটি সরিয়ে নিয়ে মিসেস ব্ল্যাকের পোট্রেইটের দিকে ধরল। সঙ্গে সঙ্গে পোট্রেইটের পর্দাটি বন্ধ হয়ে গেল এবং মিসেস ব্ল্যাকের চেঁচামেচি থেমে গেল। রনও তার যাদুদণ্ডটি নামিয়ে ফেলল। কিন্তু হ্যারি তার যাদুদণ্ডটি তাক করেই থাকল।

নিজেকে প্রমাণ করো! সে উঁচু স্বরে বলল।

লুপিন আলোর দিকে এগিয়ে এলেন। তখনো তার হাত আত্মসমর্পণের ভঙ্গীতে উপরে তুলে আছেন।

আমি রেমুস জন লুপিন। ওয়ারও। কখনো কখনো আমাকে মুনিও বলা হয়। মারাউডারস ম্যাপের চারজন আবিষ্কর্তার আমি একজন। নিমফাডোরাকে বিয়ে করেছি। নিম্ফাডোরাকে সাধারণত টঙ্কস নামে ডাকা হয়। এবং আমিই তোমাদের শিখিয়েছি কী করে প্যাট্রোনাস বানাতে হয়, হ্যারি। প্যাট্রোনাস পুরুষ হরিণের রূপ ধারণ করে থাকে।

হ্যারি হাতের দণ্ডটি নামিয়ে ফেলল। বলল, ওহ, অল রাইট। কিন্তু আমার তো চেক করাটাই উচিত, তাই না?

তুমি কথা বলছ তোমার সাবেক ডিফেন্স অ্যাগেইনস্ট দ্য ডার্ক আর্টের শিক্ষকের মতো। আমি তোমার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত যে তোমার চেক করাটাই উচিত। রন এবং হারমিয়ন, তোমাদের এত তাড়াতাড়ি নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে যাদুদণ্ড নামিয়ে ফেলা উচিত নয়।

ওরা তিনজনই দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে তার দিকে নেমে এলো। তিনি গায়ে দিয়েছেন একটি মোটা কাপড়ের ভ্রমণে যাবার আলখাল্লা। তাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে। কিন্তু বোঝা গেল ওদের দেখে তিনি খুশি হয়েছেন।

তিনি জানতে চাইলেন, সেভেরাসের কোনো খবর নেই, তাই না?

হ্যারি বলল, না। ওদিকে কি অবস্থা চলছে? সবাই ঠিকঠাক আছে?

লুপিন বললেন, হ্যাঁ, কিন্তু আমাদের সবার দিকে দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। এখানে বাইরের চত্বরে কয়েকটি ডেথ-ইটার রয়েছে

আমরা জানি।

সামনের দরোজার উপরের সিঁড়িতে আমাকে খুব অল্প সময়ের মধ্যে অ্যাপারেট করতে হয়েছে যাতে ওরা না দেখে ফেলে। ওদের জানার কথা নয় যে তোমরা এখানে আছ। আমি নিশ্চিত যে ওদের আরো লোক আশেপাশে আছে। হ্যারি, তোমার সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন সব জায়গায় ওরা জড়ো হয়েছে। চলো নিচে যাই, অনেক কথা বলার আছে। আমি জানতে চাই বারোর বাড়ি থেকে তোমরা চলে আসবার পর কি কি ঘটেছে।

ওরা সবাই কিচেনে নেমে এলো। হারমিয়ন ফায়ার প্লেসের চুল্লির দিকে যাদুদণ্ড তাক করল। সঙ্গে সঙ্গে আগুন জ্বলে উঠল। পাথরের দেয়ালের কারণে ফায়ার প্লেসের আলো একটা আভা হয়ে রইল এবং সামনে কাঠের লম্বা টেবিলটার ওপর আগুনের আলো চিকচিক করতে থাকল। লুপিন তার ভ্রমনে বের হওয়ার আলখাল্লার ভেতর থেকে কয়েকটি বাটারবিয়ার বের করলেন এবং সবাই টেবিল ঘিরে বসে পড়ল।

আরো তিনদিন আগেই আমি এখানে আসতে পারতাম, কিন্তু ডেথ ইটারদের ঝামেলা ঝেরে ফেলে আসতে হয়েছে। লুপিন বললেন। তোমরা কী বিয়ে বাড়ি থেকে সরাসরি এখানে চলে এসেছ?

হ্যারি বলল, না, টোটেনহ্যাম কোর্ট রোডে একটি কফি হাউসে দুটি ডেথ ইটারকে শেষ করে আমাদের এখানে আসতে হয়েছে।

লুপিন ফস করে মুখ থেকে অধিকাংশ বাটারবিয়ার সামনে ফেলে দিলেন।

কী?

ওরা কী ঘটেছিল তা পুরোপুরি বর্ণনা করল। ওদের কথা শেষ হলে লুপিনকে উদ্বিগ্ন দেখা গেল।

কিন্তু ডেথ-ইটাররা তোমাদের এত দ্রুত খুঁজে বের করল কীভাবে? কেউ অ্যাপারেট করলে তো তার পিছু নেয়া অসম্ভব–যদি তারা অদৃশ্য হওয়ার সময় তাদেরকে টেনে না ধরে!

হ্যারি বলল, মনে হয় না যে ওরা টোটেনহাম কোর্ট রোড দিয়ে বিক্ষিপ্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছিল, তাই কি মনে হয়?

হারমিয়ন ইতস্তত করে বলল, আমরা চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। ভাবলাম এখনো হ্যারির ওপর ট্রেস আছে কি-না?

লুপিন বললেন, অসম্ভব।

তার কথা শুনে রনকে মনে হলো স্বস্তি পেয়েছে। হ্যারিও আশ্বস্ত হলো।

লুপিন বললেন, অন্য কথা বাদ দাও, হ্যারির ওপর যদি ট্রেস থাকতই তাহলে ওরা সর্বাগ্রে জেনে যেত যে হ্যারি এখানে–এই বাড়িটায় আছে। তারা জানত না? কিন্তু আমি একটা বিষয় বুঝতে পারছি না, সেটা হলো টোটেনহাম কোর্ট রোডে ওরা আবিষ্কার করল কীভাবে? এটা খুবই চিন্তার বিয়য়, খুই উদ্বেগজনক।

লুপিনকে খুব একটা ভালো অবস্থায় নেই বলে মনে হলো। কিন্তু হ্যারি যতক্ষণ স্বস্তি বোধ না করছে ততক্ষণ তো প্রশ্ন আসতে থাকবে।

আমরা চলে আসার পর কী হলো একুট খুলে বলেন তো, রনের ড্যাডের মুখে পরিবারের সবাই নিরপদ আছে–এ কথা শোনার পর থেকে আমরা আর কারো মুখে কিছু শুনিনি।

লুপিন বললেন, কিংসলে আমাদের রক্ষা করেছে। সতর্ক করার জন্য তাকে ধন্যবাদ। তার সতর্ক করার কারণেই ওরা নেমে আসার আগে বিয়ে বাড়ির অতিথিদের অধিকাংশই সরে পড়তে পেরেছিল।

হারমিয়ন জিজ্ঞাসা করল, ওরা কি ডেথ-ইটার, নাকি মিনিস্ট্রির লোকজন?

মিশ্রন ছিল। মিনিস্ট্রির যারা ছিল এবং ডেথ-ইটারদের উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য একই ছিল। ওরা সবাই মিলে ছিল প্রায় এক ডজনের মতো। কিন্তু ওরা জানতো

যে তুমি সেখানে আছ, হ্যারি। আর্থার একটি কথা শুনছে যে ওরা স্ক্রিমগিয়রকে মেরে ফেলার আগে তোমার খোঁজ জানার জন্য তাকে নির্যাতন করা হয়েছিল। কথাটা যদি সত্যি হয় তাহলে বুঝতে হবে ক্রিমগিয়র তোমার সঙ্গে বেঈমানি করেনি।

হ্যারি, রন এবং হারমিয়নের দিকে ফিরে তাকালো। কৃতজ্ঞতা বোধ ও আঘাত পাওয়ার এক মিশ্র প্রতিক্রিয়া তাদের মধ্যে দেখা গেল। হ্যারি কখনোই স্ক্রিমগিয়রকে খুব বেশি পছন্দ করত না। কিন্তু লুপিন যা বলছেন তা যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে বুঝতে হবে শেষ পর্যন্ত লোকটি হ্যারিকে রক্ষার চেষ্টাই করেছে।

লুপিন বলতে থাকলেন, ডেথ-ইটাররা বরোর বাড়িটির ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত সর্বত্র তল্লাশি চালিয়েছে। ওরা বাড়িতে পিশাচটিকে দেখতে পেয়েছে। কিন্তু খুব কাছে যায়নি। এরপর আমরা যারা কয়েক ঘণ্টা ধরে সেখানে ছিলাম তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। ওরা তোমার তথ্য জানতে চেষ্টা করেছে হ্যারি। কিন্তু অবশ্যই অর্ডার ছাড়া আর কেউ জানতো না যে তুমি সেখানে ছিলে।

কোনো প্রশ্ন করার আগেই তিনি আবার দ্রুত বললেন, একই সঙ্গে পাশাপাশি ওরা বিয়ের সবকিছু ভেঙে-চুড়ে দিয়েছে। অর্ডারের সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন দেশব্যাপী সব বাড়িতে ডেথ-ইটাররা হামলা চালিয়েছে। অবশ্য এতে কেউ মারা যায়নি। কিন্তু ওরা ছিল খুবই উদ্ধত! ওরা ডেডালুস ডিগলের বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু ডেডালুস যে সেখানে ছিলেন না সেটা তো তোমরা জানো। এবং ওরা টঙ্কসের পরিবারের ওপর কুসিয়াটাস কার্স প্রয়োগ করেছে। খুঁজে বের করতে চেষ্টা করেছে যে তুমি তাদের ওখান থেকে দেখা করে কোথায় গিয়েছ। ওরা সবাই ঠিক আছে, কারো কোনো ক্ষতি হয়নি। সবাই একটু ধাক্কা খেয়েছে–এই আর কি।

ডেথ-ইটাররা কি সব ধরনের সুরক্ষা করার চার্ম ভেঙে ফেলেছে? হ্যারি জানতে চাইল। তার মনে পড়ল যে রাতে সে টঙ্কসের বাবা-মায়ের বাড়ির বাগানে ক্রাশ করেছিল তখন এই চার্ম কতটা কার্যকর ছিল।

লুপিন বললেন, তোমাকে বুঝতে হবে হ্যারি, ডেথ-ইটাররা এখন মিনিস্ট্রির পুরো শক্তি পেয়ে গেছে। ওরা এখন ক্ষমতা পেয়েছে নিষ্ঠুর সব স্পেল ব্যবহার করার। তাদের এখন পরিচয় ফাঁস হয়ে যাওয়ার বা গ্রেফতার হওয়ার ভয় নেই। আমরা তাদের বিরুদ্ধে যে সুরক্ষাকারী স্পেলগুলো বেছে নিয়েছি সেগুলো ভেদ করে ওরা ঢুকে পড়েছে। এবং ওরা যা করছে তা প্রকাশ্যেই করছে। গোপন করার চেষ্টা করেনি। করবেই বা কেন, মিনিষ্ট্রি এখন তাদের হাতে।

হারমিয়নের কণ্ঠস্বর তীক্ষ্ণ শোনা গেল। সে জানতে চাইল, হ্যারির কাছের লোককে সকলের সামনে নির্যাতন করার সময় ওরা কোনো কেন কিছু বলেছে?

লুপিন একটু ইতস্তত করলেন। তারপর ডেইলি ফেটের একটি ভাঁজ করা কপি টেনে বের করলেন, দেখ, এই যে।

তিনি সেটি টেবিলের উপর হ্যারির দিকে ঠেলে দিয়ে বললেন, আজ হোক কাল হোক তোমরা জানতে পারবে। দেখ, তোমার পিছু নেয়ার জন্য ওরা কতটা ছলনার আশ্রয় নিয়েছে।

হ্যারি পত্রিকাটির ভাঁজ খুলল। সামনের পাতায় হ্যারির একটি বিশাল ছবি প্রায় পুরো পাতা জুড়ে। সে সংবাদের শিরোনামটি পড়ল।

ডাম্বলডোরের মৃত্যুর ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওয়ান্টেড ব্যক্তি

রন এবং হারমিয়ন ক্ষেপে গিয়ে চেঁচামেচি শুরু করে দিল। কিন্তু হ্যারি কোনো উচ্চবাচ্য করল না। সে ঠেলে সংবাদপত্রটি দূরে সরিয়ে দিল। ভিতরে কি লিখা আছে তা আর পড়ার আগ্রহ বোধ করল না সে। ভালো করেই জানে ওর ভিতরে কি লেখা থাকতে পারে। রিটা স্কিটার ইতিমধ্যেই উইজার্ড ওয়ার্লডকে বলেছে, ডাম্বেলডোর পড়ে যাবার পর সেখান থেকে হ্যারিকে দৌড়াতে দেখা গেছে। আর কেউ না জানলেও যারা তখন সেখানে ছিল তারা জানে কে প্রকৃতপক্ষে ডাম্বলডোরকে হত্যা করেছে।

লুপিন বলল, আমি দুঃখিত হ্যারি।

হারমিয়ন প্রচণ্ড ক্রোধের সঙ্গে বলল, তাহলে ডেথ-ইটাররা ডেইলি প্রফেটও দখল করে নিয়েছে?

লুপিন মাথা দোলালেন।

কিন্তু মানুষ তো বুঝতে পারছে প্রকৃত ঘটনাটা কি ঘটছে?

লুপিন বললেন, অভ্যুত্থানটি ছিল খুবই সুক্ষ্ম এবং নীরব। ক্রিমগিওরের হত্যার অফিসিয়াল বক্তব্য হলো, তিনি পদত্যাগ করেছেন; তার জায়গায় স্থলাভিষিক্ত হয়েছে পিয়াস থিকনেস। পিয়াস থিকনেস ইমপেরিয়াস কার্সের অধীনে আছে।

রন জানতে চাইল, ভোল্ডেমর্ট কেন নিজেকে ম্যাজিকের মিনিস্টার ঘোষণা করল না?

লুপিন হাসলেন।

তার সেটা দরকার পড়েনি রন। কার্যত সেই হলো আসল মন্ত্রী, তাহলে কেন সে মিনিস্ট্রির ডেস্কের পেছনে গিয়ে বসবে? থিকনেস হলো তার হাতের পুতুল। ভোল্ডেমর্টকে বাইরে ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য মুক্ত রেখে সেই সব কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

স্বাভাবিকভাবেই অনেক লোকই ধারণা করছে যে ব্যাপারটি কী হয়েছে। শেষ কয়েকদিনে মিনিস্ট্রির নীতিমালায় নাটকীয় পরিবর্তন হয়েছে। অনেকেই কানাঘুষা করছে যে এর পেছনে অবশ্যই ভোল্টেমর্টের হাত আছে। কিন্তু এটাই লক্ষণীয় বিষয় যে তারা কানাঘুষা করছে। তারা একজন আরেকজনের প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না, জানে না কাকে বিশ্বাস করা যায়। তারা মুখ ফুটে কথা বলতে ভয় পাচ্ছে। যদি তাদের সন্দেহ সত্যি হয়ে থাকে তাহলে তাদের পরিবার টার্গেট হয়ে যাবে। হ্যাঁ, ভোল্ডেমর্ট সত্যিই একটি ধূর্ত চাল চেলেছে। নিজেকে মিনিস্টার ঘোষণা করলে সরাসরি বিরোধিতার সম্মুখীন হওয়ার ভয় ছিল। সে খোলসের ভিতর থেকে দ্বিধা, অনিশ্চয়তা ও ভয় সৃষ্টি করেছে।

হ্যারি বলল, আর মিনিস্ট্রির এই নীতিমালা পরিবর্তন উইজার্ড ওয়ার্ল্ডকে ভোল্টেমর্টের পরিবর্তে আমার বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়েছে।

লুপিন বললেন, তা তো কিছুটা বটেই। এবং এটি একটি মহা কৌশল। ডাম্বলডোর এখন আর নেই। ভোল্ডেমর্টকে প্রতিরোধ করার মতো একমাত্র তুমিই বেঁচে আছ। এখন বৃদ্ধ হিরোর মৃত্যুতে তোমার হাত আছে এ কথা রটিয়ে ভোল্ডেমর্ট যে শুধু তোমার মাথার দাম ধার্য করেছে তাই নয়, যারা তোমার পক্ষ নিতে পারে তাদের ভয় দেখানো হচ্ছে।

অন্যদিকে মিনিস্ট্রি মাগল বর্নদের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করতে শুরু করেছে।

লুপিন ডেইলি প্রফেটের দিকে ইঙ্গিত করলেন।

 দু নাম্বার পাতায় দেখ।

হারমিয়ন পত্রিকাটি নিয়ে সিক্রেট অব দি ডার্কেস্ট আর্টের খোলার মতোই অনাগ্রহের সঙ্গে পত্রিকার পাতা উল্টোলো।

সে জোরে জোরে পড়তে থাকল, মাগল বর্ন রেজিস্টার–দি মিনিস্ট্রি অব ম্যাজিক তথাকথিত মাগল বর্নদের ব্যাপারে একটি সার্ভে করবে। তারা কীভাবে ম্যাজিক্যাল সিক্রেটে অন্তর্ভুক্ত হলো সেটা বোঝার জন্যই এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

রন পড়তে থাকল, সপ্রতি রহস্য উঘাটন বিভাগের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে ম্যাজিক কেবলমাত্র উইজার্ডদের মাধ্যমেই ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির মধ্যে ট্রান্সফার হতে পারে। যদি কারো বংশে উইজার্ডের অস্তিত্ব না থেকে থাকে তাহলে ওই মাগল বর্নরা উইজার্ড পাওয়ার হয় চুরি করেছে অথবা জোর করে নিয়েছে।

এ ধরনের নিয়ম বহির্ভুত ম্যাজিক্যাল পাওয়ার ব্যবহারকারীদের খুঁজে বের করতে মিনিস্ট্রি দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করেছে। সে কারণেই মিনিস্ট্রির নতুন রেজিস্ট্রেশন কমিশন সকল মাগল বর্নকে ইন্টারভিউর সম্মুখীন হতে আহ্বান জানিয়েছে।

রন বলল, জনগণ এটা হতে দেবে না।

লুপিন বললেন, হতে দেবে না কি, ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। আমরা যখন এখানে কথা বলছি তখন মাগল বর্নরা সাক্ষাতকারের জন্য রীতিমতো জড়ো হতে শুরু করেছে।

রন বলল, কিন্তু কীভাবে ধারণা করা হয় যে তারা ম্যাজিক চুরি করেছে? এটা একটা অসুস্থ চিন্তা। যদি কেউ চুরি করে তাহলে তো সে স্কুইব কেউ করতে পারবে না? পারবে কি?

লুপিন বললেন, আমি সেটা জানি, তারপরও তুমি যদি এখন প্রমাণ করতে পার যে অন্তত একজন ঘনিষ্ঠ আত্মীয় উইজার্ড আছে তাহলে ধরে নেয়া হবে যে তুমি ম্যাজিক পাওয়া অবৈধভাবে পেয়েছ। এবং এর জন্য শাস্তি ভোগ করতে হবে।

রন হারমিয়নের দিকে তাকাল। তারপর বলল, যদি পিওর ব্লাড এবং হাফ ব্লাড কেউ একজন মাগল বর্নকে আত্মীয় বলে দাবি করে তাহলে? আমি সবাইকে বলব যে হারমিয়ন আমার চাচাতো বোন

হারমিয়ন রনের হাতটা নিজের হাতে নিয়ে চেপে ধরল।

ধন্যবাদ রন, কিন্তু আমি তোমাকে সেটা বলতে দেব না

রনও নিজের হাত দিয়ে হারমিয়নের হাত চেপে বলল, এ ছাড়া তো তোমার আর কোনো উপায় নেই। আমি তোমাকে আমাদের বংশের সব আত্মীয়-স্বজনের পরিচয় শিখিয়ে দেব, যাতে তুমি প্রশ্নের উত্তর দিতে পার।

হারমিয়ন শরীর দুলিয়ে হাসল।

রন, আমরা হ্যারি পটারের মতো মোস্ট ওয়ান্টেডের সঙ্গে পালিয়ে বেড়াতে পারছি, আর ওটা তো কোনো বড় ব্যাপার বলে আমার মনে হয় না। আমি যদি স্কুলে ফিরে যেতাম তাহলে একটা কথা ছিল।

হারমিয়ন লুপিনের দিকে তাকিয়ে বলল, হোগার্টের ব্যাপারে ভোল্টেমর্টের পরিকল্পনা কি?

তিনি বললেন, প্রত্যেক তরুণ ছেলে এবং মেয়ে যাদুকরের জন্য এখন হাজিরা দেয়া বাধ্যতামূলক। গতকাল এটা ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে কখনো এ রকম বাধ্যবাধকতা ছিল না। এবারই পরিবর্তন করা হলো। অবশ্যই ব্রিটেনের প্রায় সব উইজার্ডই হোগার্টে শিক্ষা গ্রহণ করেছে। কিন্তু তাদের বাবা-মা ইচ্ছা করলে ঘরে অথবা বাইরেও কোথাও শিক্ষা গ্রহণ করাতে পারতেন। সে কারণে ভোল্ডেমর্ট গোটা উইজার্ড সম্প্রদায়কে তার নজরে আনতে পারবে। আর এভাবেই ভোল্ডেমর্ট মাগল বর্নদের বাছাই করতে পারবে। কারণ ছাত্রদেরকে অনুমোদন দেয়ার আগে প্রমাণ দিতে হবে যে তারা উইজার্ডদের উত্তরসূরী।

হ্যারি ভয়ানক রাগান্বিত হলো। অসুস্থ অনুভব করতে থাকল, ঠিক এই মুহূর্তে ১১ বছর বয়সীরা একগাদা নতুন কেনা স্পেল বইয়ের উপর অতি আগ্রহ নিয়ে হুমরি খেয়ে পড়েছে। ওরা জানে না যে কখনোই হোগার্ট দেখা হবে না, এমন কি হয়তো তাদের পরিবারকেও তারা আর কখনো দেখবে না।

এই চিন্তায় হ্যারি ভালো করে কথা বলতে পারছে না। কি বলবে তা খুঁজে পাচ্ছে না। শুধু বিড়বিড় করে বলল, এটা..এটা…

লুপিন শান্ত কণ্ঠে বললেন, আমি জানি।

লুপিন এবার দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে বললেন, তুমি আমাকে নিশ্চিত না করলেও আমি বুঝে নিতে পারব হ্যারি। কিন্তু অর্ডার এখন মনে করছে যে ডাম্বলডোর তোমাকে একটা মিশন দিয়ে গেছেন।

হ্যারি উত্তর দিল, হ্যাঁ, দিয়ে গেছেন। রন এবং হারমিয়নও সেই মিশনে আমার সঙ্গে আছে।

তুমি আমার উপর আস্থা রেখে বলতে পার যে মিশনটা কি?

হ্যারি অন্যদিকে একটি ধুসর, ঘন চুলের মুখের দিকে তাকাল। এবং মনে হলো তার অন্যরকম উত্তর দেয়া উচিত।

আমি বলতে পারছি না রেমুস, আমি দুঃখিত। যদি ডাম্বলডোর আপনাকে কিছু বলে থাকেন তাহলে আপনাকে কিছু বলা আমারও ঠিক হবে না।

লুপিনকে হতাশ দেখা গেল। বললেন, আমি ধারণা করেছিলাম তুমি এমন উত্তরই দেবে। তারপরও আমি তোমাদের কিছু কাজে লাগতে পারি। তুমি ভালো করেই জানো আমি কে এবং কি করতে পারি। আমি সঙ্গে আসতে পারি তোমাদের নিরাপত্তার জন্য। এতে আমার জানার প্রয়োজন হবে না যে তোমাদের মিশনটি কি।

হ্যারি দ্বিধায় পড়ে গেল। খুবই ভালো প্রস্তাব। যদিও সে বুঝতে পারছে না লুপিন সঙ্গে গেলে তার কাছ থেকে মিশন গোপন রাখবে কীভাবে।

হারমিয়নকে বিস্মিত মনে হলো।

সে জানতে চাইল, কিন্তু টঙ্কসের কী হবে?

লুপিন বললেন, টঙ্কসের কী হবে মানে?

হারমিয়ন একটু থেমে থেমে বলল, আপনি বিবাহিত! আপনি আমাদের সঙ্গে চলে গেলে তার অনুভূতিটা কী হবে?

লুপিন বললেন, সে ভালো এবং নিরাপদেই থাকবে। সে তার বাবা-মায়ের বাড়িতে থাকবে।

লুপিনের কণ্ঠে কিছু একটা অস্বভাবিক শোনা গেল। কণ্ঠ অনেকটাই শীতল শোনা গেল। টঙ্কসের বাবা-মায়ের বাড়িতে লুকিয়ে থাকার বিষয়টি কেমন যেন বেমানান মনে হলো। আর যাই হোক, টঙ্কস অর্ডারের একজন সদস্য। হ্যারি যতটা জানে সে সক্রিয় থাকতেই চাইবে।

হারমিয়ন দ্বিধাগ্রস্ত কণ্ঠে বলল, রেমুস, সব কিছু ঠিকঠাক আছে তো..আপনি ভালো করে জানেন আপনার এবং-

লুপিন বললেন, সবকিছু ঠিক আছে, ধন্যবাদ।

হারমিয়ন লাল হয়ে গেল। আরো একটি বিব্রতকর নিস্তব্ধ মুহূর্ত পার হয়ে গেল। একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে লুপিন বললেন, টঙ্কস শীঘ্রই মা হতে যাচ্ছে।

হারমিয়ন উল্লসিত হয়ে বলল, ওহ! চমৎকার!

রন আগ্রহ নিয়ে বলল, এক্সিলেন্ট!

 হ্যারি বলল, অভিনন্দন।

লুপিন একটি কৃত্রিম হাসি দিলেন যা অনেকটাই বেদনারই মনে হলো। বললেন, তাহলে তোমরা আমার প্রস্তাব গ্রহণ করছ? তিনজনের জায়গায় চারজন। ডাম্বলডোর এতে অরাজি হতেন বলে আমার মনে হয় না। ডার্ক আর্ট টিচারের বিরুদ্ধে তিনি আমাকে তোমার নিরাপত্তার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এবং আমি তোমাকে বলে রাখছি, আমার ধারণা আমরা এমন অনেক ম্যাজিকের সম্মুখীন হচ্ছি যেগুলোর বিরুদ্ধে কখনো দাঁড়াতে হয়নি বা আমরা কল্পনা করিনি।

রন এবং হারমিয়ন দুজনই হ্যারির দিকে তাকালো।

হ্যারি বলল, আমাদেরকে শুধু একটি কথা পরিষ্কার করে বলুন, আপনি চান যে টঙ্কসকে তার বাবা-মায়ের কাছে রেখে আমাদের সঙ্গে আসতে?

লুপিন বললেন, সে ওখানে সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকবে, ওর বাবা-মা ভালো মতোই দেখাশোনা করবে।

তার কথায় আগের মতোই চুড়ান্ত সিদ্ধান্তের সুর। বললেন, হ্যারি, আমি নিশ্চিত জেমসও তোমাদের সঙ্গে আমার যাওয়াটা চাইতেন।

হ্যারি বলল, আমার তা মনে হয় না। আমি মোটামুটি নিশ্চিত যে আমার বাবা জানতে চাইতেন, যে আপনি নবজাতকের সঙ্গে থাকছেন না কেন।

লুপিনের মুখের রঙ পাল্টে গেল। কিচেনের তাপমাত্রা মনে হচ্ছে ১০ ডিগ্রিতে নেমে এসেছে। রন রুমের চারদিকে তাকিয়ে ঘরটির সবকিছু মনে করতে চেষ্টা করছে। আর হারমিয়ন একবার হ্যারির দিকে এবং একবার লুপিনের দিকে তাকাঁচ্ছে।

শেষ পর্যন্ত লুপিন বললেন, তুমি বুঝতে পারছ না হ্যারি।

হ্যারি বলল, তাহলে বুঝিয়ে বলুন।

লুপিন ঢোক গিললেন।

আমি…আমি আসলে টঙ্কসকে বিয়ে করে ভয়ানক ভুল করেছি। আমি আমার সুবিবেচনাকে পাত্তা না দিয়ে কাজটি করেছি। এবং তখন থেকেই এরজন্য আমাকে পস্তাতে হচ্ছে।

হ্যারি বলল, বুঝতে পেরেছি, আপনি তাকে এবং বাচ্চাটিকে তার মা-বাবার কাছে ফেলে রেখে আমাদের সঙ্গে যেতে চাইছেন।

লুপিন লাফিয়ে উঠলেন। ধাক্কা লেগে তার চেয়ারটি পেছনে সরে গেল। এবং তিনি এতটা ভয়ানকভাবে ওদের দিকে তাকালেন যে এই প্রথম ওদের কাছে মনে হলো মানুষের মুখে তারা নেকড়ের ছায়া দেখতে পাচ্ছে।

তুমি বুঝতে পারছ না আমি আমার স্ত্রী এবং এখনো জন্ম না নেয়া শিশুটির উপর কি অন্যায় করেছি। আমার কখনোই তাকে বিয়ে করা উচিত হয়নি। আমি তাকে জাতিচ্যুত করে ফেলেছি!

লুপিন তার বসার চেয়ারটি লাথি মেরে দূরে সরিয়ে দিলেন।

তুমি আমাকে শুধু অর্ডারের ভেতরেই দেখেছ, অথবা হোগার্টে ডাম্বলডোরের নিরাপদ বলয়ের মধ্যেই দেখেছ। তুমি জানে না উইজার্ড ওয়ার্লডের অধিকাংশই আমাকে কিরকম ভয়ানক প্রাণীর মতো দেখেছে। তারা যখন আমার রাগ-ক্ষোভ দেখে তখন আমার সঙ্গে কথাই বলতে পারে না! আমি কী করেছি তুমি বুঝতে পারনি? শুরু থেকেই টঙ্কসের পরিবার আমার ব্যাপারে অসম্ভষ্ট। কোন বাবা মা চায় যে তাদের একমাত্র মেয়ের একজন ওয়ারও-এর সঙ্গে বিয়ে হোক? আর শিশুটি…শিশুটি…

লুপিন মুঠ ভরে নিজের চুল টেনে ধরলেন। ভয়ানক হতাশ দেখা গেল।

বললেন, আমার মতো মানুষরা শিশুর জন্ম দিতে পারে না! কারণ বাচ্চাটিও আমার মতো হবে। এই বিষয়টিই আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে। আমি নিজেকে কীভাবে ক্ষমা করব? আমি জেনেশুনে একটি নিষ্পাপ শিশুর মধ্যে আমার অবস্থান ঢুকিয়ে দিচ্ছি। আর যদি অলৌকিকভাবে সাধারণ একটি বাচ্চা হয়, তাহলে সে সারা জীবন আমার জন্য লজ্জাবোধ করবে!

হারমিয়নের চোখে জল চলে এসেছে। সে ফিসফিস করে বলল,রেমুস! এমন কথা বলবেন না। আপনার জন্য একটি বাচ্চা কেন লজ্জাবোধ করবে?

হ্যারি বলল, আমি সেটা জানি না হারমিয়ন, কিন্তু আমি হলে তার জন্য লজ্জাবোধ করতাম।

হ্যারি বুঝতে পারছে না এত রাগ তার কোথেকে আসছে। কিন্তু সে এতটাই রেগে গেছে যে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে। লুপিনের কাছে মনে হলো যে হ্যারি বোধ হয় তাকে মারতে উদ্দত হয়েছে।

হ্যারি বলল, এখন যদি নতুন ক্ষমতায় আসা লোকেরা মনে করতে পারে যে মাগল বর্নরা খারাপ, তাহলে আধা ওয়ারওকে তারা কি বলবে–যার বাবা কিনা আবার অর্ডারের সদস্য? আমার বাবা মারা গেছেন আমাকে এবং আমার মাকে রক্ষা করতে গিয়ে। আর আপনি কি মনে করেন, আমার বাবা আপনাকে কখনো বলতেন সন্তান রেখে আমাদের সঙ্গে অভিযানে বের হতে?

লুপিন বললেন, তুমি..তোমার কত দুঃসাহস! আমি কী সাধ করে সেটা করতে চাচ্ছি….. নাকি নিজের ভালোর জন্য অথবা নিজের বিপদ দেখে…তুমি কীভাবে এটা চিন্তা করলে-

হ্যারি বলল, আমার ধারণা আপনি একটা ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন। আপনি সিরিয়ুসের পথ অনুসরণ করছেন….।

হ্যারি না!, হারমিয়ন অনুরোধ করে বলল। কিন্তু হ্যারি লুপিনের হিংস্র মুখটির দিকে তাকিয়ে কথা বলে যেতে থাকল।

বলল, আমি কখনোই এটা বিশ্বাস করতে পারি না যে মানুষটি আমাকে ডেমেনটরদের সঙ্গে লড়াই করতে শিখিয়েছেন তিনি একজন ভীতু তোক।

লুপিন এত দ্রুত তার যাদুদন্ডটি বের করল যে হ্যারি নিজেরটা পুরোপুরি বের করতে পারল না। একটা বিকট শব্দ হলো! এবং হ্যারি বুঝতে পারল যে সে পেছনের দিকে উড়ে যাচ্ছে। প্রচণ্ড জোরে পাঞ্চ করলে যেমন হয়। হ্যারি কিচেনের দেয়ালের সঙ্গে গিয়ে বাড়ি খেল এবং নিচে মেঝেতে আছড়ে পড়ল। চোখের পলকে দেখতে পেল দরোজা দিয়ে লুপিনের আলখাল্লার শেষ অংশটা অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে।

রেমুস! রেমুস! ফিরে আসুন! হারমিয়ন চিৎকার করে বলতে থাকল। কিন্তু লুপিনের কোনো সাড়া পাওয়া গেল না। একটু পরেই সামনের দরোজা বন্ধ হওয়ার একটা শব্দ পাওয়া গেল।

হারমিয়ন চিৎকার করে বলল, হ্যারি! তুমি এটা কী করে পারলে!

হ্যারি উঠে দাঁড়িয়েছে। সে বলল, খুবই সহজ। সে অনুভব করল দেয়ালের যে জায়গাটিতে তার মাথা গিয়ে পড়েছে সে জায়গাটিতে একটি দাগ হয়ে গেছে। হ্যারি রাগে তখনও থরথর করে কাঁপছে।

হ্যারি তীব্র কণ্ঠে হারমিয়নের দিকে তাকিয়ে বলল, আমার দিকে তুমি ওভাবে তাকাবে না!

রন বাধ সেধে বলল, তুমিই তো ওর সঙ্গে শুরু করেছ!

হারমিয়ন লাফ দিয়ে দুজনের মাঝখানে এসে দাঁড়িয়ে বলল, না-না-, আমরা নিজেদের মধ্যে ঝামেলা করব না।

রন হ্যারির দিকে তাকিয়ে বলল, লুপিনকে কথাগুলো ওভাবে তোমার বলা উচিত হয়নি।

ওটাই তার জন্য সত্য কথা, হ্যারি বলল। হ্যারির মনের মধ্যে ভাঙা ভাঙা স্মৃতিগুলো একটি আরেকটির সঙ্গে দৌড়াচ্ছে: সিরিয়স কালো কাপড় পড়া অবস্থায় পড়ে যাচ্ছেন, ডাম্বলডোর শূন্যে ঝুলে আছেন; আর হ্যারির মা দয়া করার জন্য আবেদন নিবেদন করছেন…

একেবারেই বাধ্য না হলে বাবা-মার সন্তান ফেলে চলে যাওয়া একেবারেই অনুচিৎ।

হ্যারি- হারমিয়ন হাত বাড়িয়ে হ্যারিকে শান্ত করতে চেষ্টা করল। কিন্তু হ্যারি বাধা মানল না। সে হেঁটে ওর কাছ থেকে দূরে সরে গেল। হারমিয়ন যাদুর মাধ্যমে ফায়ার প্লেসে যে আগুন জ্বালিয়েছে সে দিকে হ্যারি তাকিয়ে আছে। এই ফায়ার প্লেসের সামনে বসেই এক সময় হ্যারি লুপিনের সঙ্গে কথা বলেছে। জেমসের ব্যাপারে জানতে চেয়েছে এবং লুপিন তাকে সান্ত্বনা দিয়েছে। আর এখন সেই লুপিনের আঘাতপ্রাপ্ত সাদা মুখটি যেন হ্যারির সামনে বাতাসে ভাসছে। একটা ভয়ানক অপরাধ বোধ হ্যারির অনুভব হলো। রন বা হারমিয়ন কেউ কথা বলছে। না, কিন্তু হ্যারি ঠিকই বুঝতে পারল যে ওরা একজন আরেকজনের মুখের দিকে তাকাচ্ছে। নীরব ভাষায় নিজেদের মধ্যে কথা বলছে।

হ্যারি ঘুরল এবং ওরা দ্রুত দুজন দুজনের দিক থেকে মুখ ফেরালো।

হ্যারি বলল, আমি জানি, তাকে আমার কাওয়ার্ড বলা উচিত হয়নি।

রন সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিল, না, উচিত হয়নি।

কিন্তু তার কাজ কারবারটা সে রকমই ছিল।

হারমিয়ন বলল, সেটা যাই হোক…

হ্যারি বলল, আমি জানি, কিন্তু এর কারণে সে যদি টঙ্কসের কাছে ফিরে যায় তাহলে আমার এই আচরণ খুব একটা বিফলে যায়নি বলতে হবে, তাই না?

হ্যারি আর কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছে না। হারমিয়নকে সহানুভূতিশীল মনে হচ্ছে। রনকে দ্বিধাগ্রস্ত দেখা গেল। হ্যারি চোখ নামিয়ে নিজের পায়ের দিকে তাকালো। ওর বাবার কথা চিন্তা করছে। লুপিনকে সে যা বলেছে সে ব্যাপারে তার বাবা কি তাকে সম্মতি দিত, নাকি নাকি তার পুরনো বন্ধুর সঙ্গে এমন আচরণ করার জন্য ছেলের ওপর রাগ করতেন?

রন এবং হারমিয়নের নীরব সমালোচনা এবং ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর কারণে কিচেনের ভিতর একটি পিনপতন নিস্তব্ধতা নেমে এলো। লুপিন ডেইলি প্রফেট পত্রিকার যে কপিটি সঙ্গে এনেছিলেন সেটি টেবিলের উপর পড়ে আছে। পত্রিকার প্রথম পাতায় হ্যারির নিজের বিশাল ছবিটি সিলিং এর দিকে তাকিয়ে আছে। হ্যারি হেঁটে পত্রিকাটির কাছে গেল এবং বসল। সে পত্রিকাটির পাতাগুলো উল্টাতে থাকল এবং ভাব করল যেন মন দিয়ে পড়ছে। কিন্তু সে একটি অক্ষরেও মন বসাতে পারছে না। তার ভিতরে লুপিনের সঙ্গে বিবাদের বিষয়টি ঘোরাফেরা করছে। হ্যারি নিশ্চিত যে ডেইলি প্রফেটের পিছনে ওরা দুজন আবার নিজেদের মধ্যে চোখাচোখি করতে শুরু করেছে। সে শব্দ করে একটি পাতা উল্টালো এবং সঙ্গে সঙ্গে ডাম্বলডোরের নামটি তার চোখে পড়ল। পত্রিকার ভেতর ছবির ভাষাটি বুঝতে তার এক অথবা দুইটি মুহূর্ত পার হয়ে গেল। ছবিটি একটি পারিবারিক ছবি। ছবিটির নিচে ক্যাপশান লেখা আছে : বাঁ থেকে ডানে-: অ্যালবাস, পারসিভাল নবজাতক অরিয়ানাকে কোলে নিয়ে আছেন, কেন্দ্রা এবং আবারফোর্থ।

হ্যারি মন দিয়ে ছবিটি দেখল। ছবিটি ভালো করে পরীক্ষা করল। ডাম্বলডোরের বাবা একজন সুদর্শন মানুষ ছিলেন। ওই অস্পষ্ট হয়ে আসা ছবিতেও দেখা যাচ্ছে তার চোখ দুটো বেশ প্রাণবন্ত। ছোট্ট শিশু অরিয়ানা একটি পাউরুটির চেয়ে হয়তো সামান্য একটু বড়, অন্য কোনো বিশেষ ব্যতিক্রম চোখে পড়ল না। ডাম্বলডোরের মা কেন্দ্রার ঘন কালো চুল পেছনের দিকে গোছা করে গুটিয়ে রেখেছেন। সে কারণেই তাঁর মুখটি অন্যরকম লাগছে। যদিও তিনি ছবিতে গলা পর্যন্ত ঢাকা সিল্ক গাউন পড়ে আছেন, তারপরও তার কালো চোখ, উঁচু চোয়াল এবং চোখা নাক দেখে হ্যারির আমেরিকান নেটিভদের কথা মনে হল। অ্যালবাস এবং আবারফোর্থ এক রকম লেস লাগানো রঙিন জ্যাকেট পড়ে আছেন। এবং দুজনেরই একই রকম কাঁধ পর্যন্ত লম্বা চুল। অ্যালবাসকে শুধু কয়েক বছরের বড় মনে হচ্ছে। তাছাড়া দুটি ছেলেই দেখতে একই রকম। অ্যালবাসের নাক ভেঙে যাওয়ার পর তিনি চোখে কালো চশমা পড়তে শুরু করেছিলেন। এই ছবিটি ছিল তার আগের।

ছবিতে পরিবারটিকে বেশ সুখী এবং স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে। পত্রিকার ছবিতে সবাইকে বেশ আনন্দমুখর মনে হচ্ছে। শিশু অরিয়ানা গায়ের কাপড়ের ভেতর থেকে অস্পষ্টভাবে হাতটি বের করে তুলতে চাচ্ছে। হ্যারি ছবিটির দিকে তাকালো এবং শিরোনামটি পড়ল:

অ্যালবাস ডাম্বলডোরের প্রকাশিতব্য
জীবনীর বিশেষ বিশেষ অংশ
বাই রিটা স্কিটার

হ্যারি ভাবল যে পূর্বেই যে বাজে অনুভূতি হয়েছে তার চেয়ে বেশি আর কি হবে। সে পড়তে শুরু করল।

আজকাবানে স্বামী পারসিভাল ডাম্বলডোরের গ্রেফতার এবং কারাগারে যাওয়ার খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে গর্বিত এবং উদ্ধত চরিত্রের কেন্দ্র ডাম্বলডোর আর মোল্ড অন দ্য ওন্ডে থাকতে পারেননি। তিনি তখন সিদ্ধান্ত নেন পুরো পরিবার নিয়ে গোড্রিচ হলো গ্রামে চলে যাবেন। গোড্রিচ হলো গ্রামটি পরে বিখ্যাত হয়েছিল হ্যারি পটার ইউ-নো-হুর হাত থেকে পালিয়ে সেখানে যাওয়ার কারণে।
মোন্ড অন দ্য ওন্ডের মতো গোড্রিচ হলোতেও ছিল বেশ কয়েকটি উইজার্ড পরিবারের বসবাস। যেহেতু কেন্দ্রা প্রতিবেশী কাউকেই চিনতেন না তাই তিনি পুর্বের গ্রামে তার স্বামীর অপরাধ নিয়ে চিন্তা করেই সময় পার করতেন। বারবার উইজার্ড পরিবারগুলোর বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয়া প্রত্যাখ্যান করার পর তিনি নিশ্চিত হন যে পরিবারটি এখন একা থাকতে পারবে।
বাথিলডা ব্যাগশট যেমন বলেছেন, আমি ঘরে তৈরী বিশাল কেক নিয়ে তাকে স্বাগত জানাতে গেলে তিনি আমার মুখের উপর ঠাস করে দরোজা বন্ধ করে দেন। প্রথম যেবার পরিবারটি এখানে আসে আমিও সেবারই শুধু ছেলে দুটিকে দেখেছি। আমি জানতেও পারতাম না যে তাদের একটি মেয়েও আছে, যদি সেই শীতের রাতে চাঁদের আলোতে আমি প্ল্যানজেনটাইন না তুলতাম। দেখলাম কেন্দ্রা অরিয়ানাকে নিয়ে বাগানে বের হয়ে এলেন। তারপর শক্ত করে তার হাত ধরে লনে ঘোরালেন। শেষে ঘরের ভেতর নিয়ে গেলেন। এর অর্থ আমি কিছু বুঝতে পারলাম না।
আমার কাছে এই ঘটনায় মনে হয়েছে কেন্দ্রা গোড্রিচ হলোতে অরিয়ানাকে সবার চোখ থেকে লুকিয়ে রাখার সবচেয়ে ভালো জায়গা মনে করে সেখানে স্থানান্তরিত হয়েছিলেন। এই পরিকল্পনাটি তিনি হয়তো কয়েক বছর ধরে করেছিলেন। সময়টা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। অরিয়ানা যখন সবার চোখের সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে যায় তখন তার বয়স মাত্র সাত বছর। এবং অধিকাংশ এক্সপার্টের মতে সাত বছর বয়সেই ম্যাজিক প্রকাশ পেয়ে থাকে। অরিয়ানার ছিটেফোঁটা ম্যাজিক্যাল ক্ষমতা ছিল এটা মনে করার মতো কেউ এখন আর জীবিত নেই। সে কারণেই এটা পরিষ্কার যে কেন্দ্রার একটি স্কুইব মেয়ে আছে সে লজ্জা ঢাকতে তিনি তাকে লুকিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। বন্ধু এবং প্রতিবেশীদের কাছ থেকে সরে থাকার কারণ সবাই জেনে যেত যে তিনি মেয়েটিকে আটকে ফেলেছেন। অল্প কয়েকজন শুধু জানতো অরিয়ানার অবস্থানের কথা। এর মধ্যে অরিয়ানার দুভাই ছিল, যারা তার মায়ের শিখিয়ে দেয়া কথা বলে অরিয়ানার কথা এড়িয়ে যেতো: আমার বোন স্কুলে যাওয়ার মতো সুস্থ নয়।
পরের সপ্তাহে : হোগার্টে ডাম্বলডোর–মূল্যায়িত এবং অভিযুক্ত

হ্যারির ধারণা ভুল। সে যা পড়ল তাতে তার মন সত্যিই আরো খারাপ হলো। সে আবার ছবির সুখী পরিবারটির দিকে তাকালো। এ কাহিনী কি সত্যি? কীভাবে সে তা উদঘাটন করবে? বাথিলডার তার সঙ্গে কথা বলার মতো অবস্থা নেই জেনেও সে গোড্রিচ হলোতে যেতে চেয়েছিল। হ্যারি এবং ডাম্বলডোর–দুজনই যেখানে তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছে সেখানে হ্যারি যেতে চেয়েছিল। সে পত্রিকাটি হাত থেকে নামিয়ে রাখতে গিয়ে কেবল রন এবং হারমিয়নের মতামত জানার জন্য প্রশ্ন করতে যাচ্ছে, ঠিক এমন সময় পুরো কিচেনে ক্র্যাক করে কান ফাটানো একটি শব্দ হলো। গত তিন দিনের মধ্যে হ্যারি প্রথমবারের মতো আজ ক্রিচারের কথা ভুলে গিয়েছিল। শব্দটি হওয়ার পরপরই হ্যারির প্রথমে মনে হলো লুপিন শব্দ করে রুমের ভেতর ফিরে এসেছেন। কিন্তু মুহূর্ত পরেই লক্ষ করল তার চেয়ারের কাছেই বাতাসের ভিতরে ধস্তাধ্বস্তি করতে দেয়া যাচ্ছে। হ্যারি লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়াল। ঠিক তখনই ক্রিচার হ্যারির দিকে মাথা অবনত করে বলল, চোর মুন্ডুঙ্গুস ফ্লেচারকে সঙ্গে করে ক্রিচার ফিরে এসেছে প্রভু।

মুন্ডুঙ্গুস গড়ান দিয়ে উঠে দাঁড়াল এবং নিজের যাদুদণ্ডটি টেনে বের করল। হারমিয়ন তড়িৎ গতিতে তাকে প্রতিরোধ করল

এক্সপেলিয়ারমুস!

মুভুক্ষুসের যাদুদণ্ডটি হাত থেকে খসে শূন্যে উড়ে গেল এবং হারমিয়ন সেটি ধরে ফেলল। বন্য চোখের মুন্ডুস সিঁড়ির দিয়ে লাফ দিয়ে ছুটে পালাতে চেষ্টা করল। রন রাগবি বল ধরার মতো ঝাঁপ দিয়ে তাকে ধরে ফেলল এবং ঘোৎ করে পাথরের মেঝেতে মুন্ডুঙ্গুস আঘাত পেল।

রনের হাত থেকে ছুটে যাওয়ার জন্য সে ঝাড়া দিল এবং চিৎকার করে বলল, কি! অমি কী করেছি। আমার পিছনে একটি ঘরের ভুত লাগিয়েছ! আমাকে ছেড়ে দাও! ছেড়ে দাও আমাকে ছেড়ে দাও নইলে-

হ্যারি বলল, ধমক দেয়ার মতো পরিস্থিত তোমার নেই! হ্যারি হাত থেকে সংবাদপত্রটি নামিয়ে রাখল এবং লম্বা পা ফেলে কিচেনের অন্য প্রান্তে গিয়ে মুন্ডুজুসের পাশে হাঁটু গেড়ে বসল। মুন্ডুঙ্গুস এখন জোড়াজুড়ি করছে না এবং ভয় পেয়েছে বলে মনে হলো। রন উঠে দাঁড়িয়ে হাঁপাতে থাকল। সে দেখল হ্যারি তার যাদুদণ্ডটি মুভুক্ষুসের নাক বরাবর তাক করে ধরেছে। মুভুক্ষুসের কাছ থেকে বিশ্রী তামাকের গন্ধ বের হচ্ছে। ওর চুলগুলো জট পাকিয়ে আছে। পরনের গাউনটা একেবারে মলিন।

ক্রিচার, ঘরের ভুতটি বলল, ক্রিচার চোর ধরে আনতে অনেক দেরি করে ফেলেছে, এজন্য সে ক্ষমা প্রার্থনা করছে প্রভু। কীভাবে ধরা পড়া থেকে সরে থাকতে হয় ফ্লেচার তা খুব ভালো করে জানে। তার অনেক জায়গা এবং সাহায্যকারী ছিল। তা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত ক্রিচার চোরটিকে আটকে ফেলেছে।

তুমি সত্যিই খুব কাজের কাজ করেছ ক্রিচার। হ্যারি বলল। ক্রিচার মাথা নিচু করে হ্যারির দিকে বো করল।

হ্যারি মুভুক্ষুসের দিকে ফিরে বলল, তোমাকে আমাদের কিছু প্রশ্ন করার আছে।

মুন্ডুঙ্গুস সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে বলল, আমি খুবই বিপদগ্রস্ত, ওকে? আমি কখনো স্বেচ্ছায় আসতে সরে যেতে চাইনি। এটা আমার কোনো দোষ না। কিন্তু আমি তোমাদের মৃত্যু হোক তা চাইনি। ওই ইউ-নো-হু আমার দিকে উড়ে এসেছিল। সেখানে আর কেউ তো উপস্থিত ছিল না। আমি বলেছি, আমি এটা করতে চাইনি।

হারমিয়ন বলল, তোমার জানার জন্য বলছি, আমাদের মধ্যে কেউ অদৃশ্য হয়ে যাইনি।

তোমরা তাহলে একদল হিরো। তোমরা না, কিন্তু আমি কখনো এমন চিন্তা করিনি যে নিজেকে নিজে হত্যা করব।

হ্যারি মুভুক্ষুসের চোখের আরো কাছে যাদুদণ্ডটি ধরে বলল, তুমি কেন ম্যাডআইকে ফেলে পালিয়ে গিয়েছিলে সে ব্যাপারে আমাদের কোনো আগ্রহ নেই। আমরা জানতাম যে তুমি একটা অবিশ্বাসী নচ্ছাড়।

তাহলে আমাকে ওই ঘরের ভুত দিয়ে ধরে আনা হয়েছে কেন? এটা কি আবার ওই পেয়ালাগুলোর জন্য? আমার কাছে ওর একটি পেয়ালাও অবশিষ্ট নেই। তুমি ওগুলো পেতে পার।

 হ্যারি বলল, ওই পেয়ালাগুলোর বিষয়েও না। এখন চুপ করো এবং মন দিয়ে শোনো।

হ্যারি বেশ স্বস্তি বোধ করল যে কাউকে পাওয়া গেছে যার কাছ থেকে কিছুটা হলেও সত্যি কথা আদায়করা যাবে। সে যাদুদণ্ডটি মুহূসের মুখের এত কাছে নিয়ে এলো যে মুন্ডুঙ্গুস দু চোখ বাঁকিয়ে সেটি দেখতে থাকল।

তুমি যখন এ বাড়ি থেকে মূল্যবান জিনিসগুলো সরিয়ে নিচ্ছিলে- হ্যারি বলতে শুরু করল। কিন্তু মুসুস তাকে বাধা দিয়ে বলল, সিরিয়স কখনো বাতিল জিনিসগুলোর ব্যাপারে খোঁজ খবর রাখতেন না।

দ্রুত পা ফেলার শব্দ পাওয়া গেল। দস্তার তৈরি কিছু একটা ঝলকে উঠল এবং চারদিকে ব্যথা পাওয়ার একটি শব্দ প্রতিধ্বনি তুলল: ক্রিচার দৌড়ে মুভুক্ষুসের কাছে গিয়ে তার মাথা সসপেন দিয়ে বাড়ি দিয়েছে।

ওকে থামাও! ওকে থামাও! ওকে ধরে আটকে রাখো! মুন্ডুস চিৎকার করে বলতে থাকল। ক্রিচার আবার ভারী সসপেনটা মাথার উপরে তুলল ওকে আঘাত করার জন্য।

হ্যারি উঁচু স্বরে বলল, ক্রিচার না!

ক্রিচারের চিকন হাত দুটো নিয়ন্ত্রণ রাখতে কষ্ট হওয়ায় কেঁপে উঠল। তখন সে সসপেনটি মাথার উপর ধরে আছে।

আর একটা মারি, প্রভু হ্যারি, সৌভাগ্যের জন্য?

রন হেসে উঠল।

হ্যারি বলল, ওকে আমাদের জ্ঞান থাকা অবস্থায় প্রয়োজন। কিন্তু যদি কথা শোনে তাহলে তুমি উচিত শিক্ষা দিও।

অসংখ্য ধন্যবাদ প্রভু, ক্রিচার আবারো মাথা নিচের দিকে বো করে বলল।

তারপর একটু দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকল। সে বিরক্ত চোখে মুভুক্ষুসের দিকে তাকিয়ে থাকল।

 হ্যারি আবার মুভুক্ষুসের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করল, তুমি যখন এ বাড়ির মূল্যবান সব জিনিস খালি করে নিয়ে যাচ্ছিলে তখন কিচেনের আলমিরার থেকে কিছু জিনিস নিয়ে গেছ। সেখানে একটি লকেট ছিল। সেটা তুমি কী করেছ?

হ্যারি এ প্রশ্ন করার সময় মুখের ভিতরটা শুকিয়ে গেল। সে বুঝতে পারল রন এবং হারমিয়নও প্রশ্নের উত্তরের জন্য উত্তেজিতভাবে অপেক্ষা করছে।

মুন্ডুস জানতে চাইল, কেন, সেটা কি মূল্যবান কিছু?।

 হারমিয়ন উঁচু গলায় বলল, সেটা তোমার কাছে এখনো আছে!

 পরিস্থিতি বিবেচনা করে রন বলল, না, ওর কাছে নেই। সে ভাবছে ওটার জন্য আরো বেশি টাকা দাবী করা যায় কি না।

মুন্ডুস বলল, আরো? তা পাওয়া খুব একটা কঠিন কিছু ছিল না…. বদমায়েশ সেটি নিয়ে গেছে। কোনো উপায় ছিল না।

তুমি কী বলতে চাচ্ছ?

ডায়াগন অ্যালিতে আমি ওগুলো বিক্রি করছিলাম। তখন সেই মহিলা এসে আমার কাছে জানতি চাইল যাদু বিষয়ক প্রত্ন সম্পদ বিক্রয় করার লাইসেন্স আছে কি না। মহিলা হলো গোপন তদন্তকারী। সে আমাকে জরিমানা করল। কিন্তু লকেটটি তার ভারী পছন্দ হলো এবং সে আমাকে বলল, লকেটটা তাকে দিলে সে আমাকে ছেড়ে দেবে।

হ্যারি জানতে চাইল, এই মহিলাটি কে?

আমি জানি না, মিনিস্ট্রির কোনো যাদুকর হবে।

 মুন্ডুঙ্গুস কিছুক্ষণ নীরব থাকল। তারপর মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠল।

ছোটখাটো মেয়েলোক। মাথায় বো টুপি।

সে চুপ করে থেকে আবার বলল, দেখতে কোলা ব্যাঙের মতো।

হ্যারি ওর যাদুদণ্ডটি ছেড়ে দিল। মুভুক্ষুসের নাকের উপর সেটি আঘাত করল এবং তার ভ জোড়া লাল আলো হয়ে জ্বলে উঠল।

হারমিয়ন চিৎকার করে বলল, আগুয়ামেনতি!

সঙ্গে সঙ্গে তার যাদুদণ্ড থেকে পানির স্রোত বের হয়ে মুভুক্ষুসের গা মুখ ভরে গেল। সে শব্দ করে নিঃশ্বাস নিতে থাকল।

হ্যারি মুখ তুলে উপরের দিকে তাকালো এবং দেখলরন এবং হারমিয়নের মুখেও তার মতোই হতাশা। ডান হাতের পিছনের স্কারটিতে চুলকাচ্ছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *