১১. ঘটনা এবং প্রতিটি চরিত্র কাল্পনিক

নীলা হাউসে তাহের এবং পারুল সুখেই আছে। পারুলের এখন আট মাস চলছে। তার শারীর ভারী হয়েছে। আগের মত পরিশ্রম করতে পারে না। সে বেশীর ভাগ সময় বারান্দার বেতের চেয়ারে বসে থাকে। তাহের এখন দিনরাত ঘরেই থাকে। পারুলের পাশে বসার তার সময় হয় না। তার এখন অনেক কাজ। কুকুরের দেখাশোনা, বাগান। করা। বলতে গেলে দম ফেলার সময় নেই।

নীলা হাউসের বাগান খুব সুন্দর হয়েছে। অসংখ্য গোলাপ ফুটেছে। রহমান সাহেব বাগান দেখে খুব প্রশংসা করে গেছেন। তাহেরের পিঠে হাত রেখে বলেছেন, বড় সাহেব গোলাপ বাগান দেখলে খুব খুশি হবেন।

তাহের বলেছে, উনি কবে আসবেন?

বুঝতে পারছি না। চিকিৎসা চলছে। ক্যান্সার তো, এর চিকিৎসাও জটিল।

অবস্থা কেমন?

আছে মোটামোটি। এইসব নিয়ে তুমি চিন্তা করবে না। তুমি তোমার কাজ কর।

তাহের কাজ করে যাচ্ছে। দিনরাতই কাজ করছে।

সে বাড়ির পেছনে দুটা বড় গর্ত করে রেখেছে। পারুল করতে বলেছে, সে করেছে। তার কাছে মনে হয়েছে থাকুক না দুটা গর্ত। কখন কি কাজে আসে কে জানে। গর্ত করা এমন কিছু পরিশ্রমের কাজ না।

আজকাল তাদের সময় খুব আনন্দে কাটে। তাহেরের এখন প্রায়ই মনে হয় তাদের সব সমস্যার সমাধান হয়েছে। শুধু জোছনার রাতগুলিতে একটু সমস্যা হয়। কুকুর তিনটা চাপা গলায় কাঁদে। সেই কান্না ভয়ংকর লাগে। জোছনা রাতে বাগানে আরো কিছু অদ্ভুত দৃশ্য দেখা যায়–যেন দুজন মানুষ। তারা পাশাপাশি থাকে। মাঝে মাঝে তারা নীলা হাউসের দিকে তাকায়। লোক দুটির চোখের মণি কুকুরের চোখের মণির মতই জ্বল জ্বল করে। দূর থেকে জ্বলন্ত অঙ্গারের মত লাগে।

তাহের জানে এইসব কিছুই না, চোখের ভুল। চোখের ভুলকে গুরুত্ব দেয়া ঠিক  না। কোন কিছুকেই আসলে গুরুত্ব দেয়া ঠিক না। এই পৃথিবীতে একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল বেঁচে থাকা। আর সবই গুরুত্বহীন।

তারা দুজন বেঁচে থাকতে চায়। শুধুই বেঁচে থাকতে চায়। প্রকৃতির অমোঘ নির্দেশ পালন করতে চায়–হে মানব, তোমরা বেঁচে থাক। মানব প্রজাতি রক্ষার জন্যে সন্তান উৎপাদন কর। কিছুতেই যেন এই প্রজাতির বিস্তার বন্ধ না হয়। কারণ, তোমাদের নিয়ে আমার অনেক বড় পরিকল্পনা আছে। তোমরা যথাসময়ে তা জানবে।

পারুল তার সন্তানের জন্যে যে আগ্রহ, যে আনন্দ নিয়ে অপেক্ষা করে ঠিক সেই পরিমাণ আগ্রহ ও আনন্দ নিয়ে অপেক্ষা করে নিকি। সেও সন্তান-সম্ভবা হয়েছে। প্রকৃতি সব ধরনের প্রজাতিই রক্ষা করতে চায়। সবাইকে নিয়েই তার হয়ত পরিকল্পনা আছে।

আমরা তুচ্ছ মানুষ। আমরা সেই মহাশক্তির বিপুল রহস্য বুঝতে পারি না বলেই বিচলিত হই। বিচলিত হবার কিছু নেই।*

 

—————-

* ঘটনা এবং প্রতিটি চরিত্র কাল্পনিক।

1 Comment
Collapse Comments

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *