একাদশ পরিচ্ছেদ
কাজলের স্কুল হইতে ফিরিবার পথে একটা দোকান পড়ে। ছাত্রেরা দোকান হইতে চকোলেট বিস্কুট কিনিয়া খায়। সেদিন কাজল দোকানটায় ঢুকিল। উদ্দেশ্য, বিশেষ এক ধরনের লজেন্স ক্রয় করা। একদিন খাইয়া ভালো লাগিয়াছিল, আবার কিনিবার জন্য সুরপতির নিকট হইতে পয়সা লইয়া আসিয়াছে।
দোকানদারকে সবাই আন্টি বলিয়া ডাকে। ওষ্ঠদেশে প্রলম্বিত গুম্ফযুক্ত একজন দশাসই পুরুষের উদ্দেশে কেন যে উক্ত বিদেশী স্ত্রীলিঙ্গ শব্দটি প্রযুক্ত হয় বোঝা মুশকিল। তবে মানুষটি ওই ডাকে সাড়া দিয়া থাকে কোনো উত্মা প্রকাশ না করিয়াই।
আন্টি কাজলকে লজেন্স গণিযা দিতেছে, এমন সময় দোকানের পিছন হইতে বেশ ভাল গলায় গাওয়া গান ভাসিয়া আসিল। কাজল জিজ্ঞাসা করিল—কে গান গাইছে আন্টি?
আন্টি বলিল—আপনাদের ইস্কুলেই ছেলে, এখানে এসে বসে মাঝে মাঝে।
আন্টি তর্জনী আর মধ্যমা একত্রে ঠোঁটের কাছে ধরিয়া হুশ হুশ করিয়া ব্যাপারটা বুঝাইয়া দিল।
কৌতূহলী কাজল দোকানের পিছন দিকে ঢুকিল।
জায়গাটা আন্টির শুইবার স্থান। দরমার বেড়া দিয়া ঘেরা, উপরে টিনের চাল। মেঝেয় কালি পড়া মেটে হাঁড়ি, এনামেলের সানকি, তোলা-উনান এবং ঘরের কোণে রাখা একটা প্যাকিং বাক্সে তৈল-তণ্ডুলাদি। একপ্রান্তের দড়ির খাটিয়ায় ময়লা কুটকুটে বিছানা, তাহার উপর বসিয়া একটি ফরসামত ছেলে চোখ বুজিয়া হাত সামনে বাড়াইয়া রীতিমত ওস্তাদি ঢঙে গান গাহিতেছে। কোনো ষষ্ঠেন্দ্রিয় দ্বারা কাজলের উপস্থিতি বুঝিয়া সে গান থামাইল এবং চোখ খুলিয়া তাকাইল।
কাজল এবং ফরসা ছেলেটি কিছুক্ষণ পরস্পরের দিকে তাকাইয়া রহিল। নীরবতা অস্বস্তিকর হইয়া উঠিতেছে দেখিয়া কাজল বলিল—গাও না, বেশ তো গাইছিলে।
ছেলেটি হাসিল। ময়লা বিছানার এক প্রান্ত হাত দিয়া ঝাড়িয়া বলিল—এখানে বসো।
এতক্ষণে কাজলের মনে পড়িয়াছে, ছেলেটি তাহাদেরই ক্লাসে অন্য সেকশনে পড়ে। আলাপ হয় নাই, দূর হইতে বারকয়েক দেখিয়াছে। কাজল জিজ্ঞাসা করিল-তুমি তো বি-সেকশনে পড়ো, না? তোমার নাম কী?
ছেলেটি মাথা পিছনে হেলাইয়া, চোখ অর্ধনিমীলিত করিয়া গম্ভীর গলায় বলিল—আমার নাম ব্যোমকেশ চৌধুরী।
তাহার ভঙ্গি দেখিয়া সন্দেহ হইতে পারিত সে বলিতেছে–আমার নাম নেপোলিয়ন বোনাপার্ট।
কাজল বুঝিল একটি অদ্ভুত চরিত্রের সহিত তাহার পরিচয় হইতে চলিয়াছে। সে আন্টির বিছানায় বসিল।
—তুমি কী গাইছিলে? সুন্দর সুর।
–মালকোষ গাইছিলাম, বেশ মেজাজ আসে গাইলে।
কাজল অবাক হইল। এ অঞ্চলে রবীন্দ্রসংগীতই কেহ গায় না, তার উপর রাগসংগীত।
-তুমি গান শেখো?
—ছোড়দা শেখে। ছোড়দা ওস্তাদের কাছে শেখে, আমি ছোড়দার কাছে শিখি। কাজেই আমিও শিখি বলতে পারো। তুমি সিগারেট খাও?
খাওয়া দূরের কথা, কাজল কল্পনাও করিতে পারে না।
—আমিই খাই তবে।
পকেট হইতে একটা সিগারেট বাহির করিয়া আন্টির বিছানার নিচ হইতে ব্যোমকেশ দেশলাই বাহির করিল। সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়িয়া বলিল—আমাদের দেশ বগুলায়। বগুলার নাম শুনেছো? বগুলার কাছেই কুমারী রামনগর গ্রামে আমাদের বাড়ি। বাবা ডাক্তার। তোমার বাড়ি কোথায়?
আমাদের দেশ নিশ্চিন্দিপুবে, সেও গ্রাম। বাবা মা যাওয়ার পর এখানে মামাবাড়িতে থাকি।
-রবি ঠাকুরের কবিতা কেমন লাগে?
কাজল বিপদে পড়িল। রবীন্দ্রনাথের কবিতা তাহার খুব বেশি পড়া নাই, দুই-একটা যাহা পড়িয়াছে, সম্পূর্ণ মানে বোঝে নাই। বলিল—বেশি তো পড়ি নি, যা পড়েছি বেশ লেগেছে।
অনেক কথাবার্তা হইল। কাজল দেখিল, ব্যোমকেশ একটু ছিটগ্রস্ত। মনের খুশিতে ঘোরে, গান গায়, বই পড়ে। মাঠে মাঠে ঘুরিয়া গাছপালা চিনিয়া বেড়ায়। এমন সব গাছপালাব নাম করিল, যাহা কাজল চিনিলেও অনেক শহুরে ছেলে নামও শোনে নাই। উঠিবার সময়ে আড়মোড়া ভাঙিয়া বলিল—তাও কতকিছু ভুলে যেতে বসেছি। গ্রামে থাকতে অনেক কিছু জানতাম–
—গ্রাম ছেড়ে এলে কেন?
–ছোড়দা এখানে চাকরি করে। ছোড়দার কাছে থেকে পড়ি। বাবর একার আয়ে চলে না। নতুন পাস করা ভালো ভালো সব ডাক্তার গিয়ে বাবার পসার মাটি করেছে। বাবা খুব তেজী সোক ছিলেন, জানো? অনেকদিন আগে সেটেলমেন্টের লোক জমি জরিপ করতে গিয়েছিল—সঙ্গে ছিল এক সায়েব। সে কঠিন অসুখে পড়লে বাবা চিকিৎসা করে তাকে সারিয়ে তোলেন। সায়েব বলেছিল বাবাকে বিলেতে নিয়ে যাবে। এক রাত্তিরে বাবা তো পালিয়ে যাওয়ার মতলব করলেন। বাবার বয়স তখন সাতাশ-আটাশ, রক্ত গরম। কথা ছিল মাইল দশেক দূরে এক জায়গায় দেখা করার, সেখান থেকে সায়েব বাবাকে নিয়ে চলে যাবে, ঠাকুমা কী করে জানতে পেরে আগে থেকে রাস্তায় গিয়ে দাঁড়ালেন। বাবা ঘোড়ায় চেপে বাড়ির পাশে বড়ো আমবাগানটা পার হচ্ছেন, ঠাকুমা এসে পড়লেন একেবারে ঘোড়ার সামনে। বললেন–হরু, যেতে হয় আমার উপর দিয়ে ঘোড়া চালিয়ে যা। বাবার আর বিলেতে যাওয়া হল না।
পরের দিন আবার দেখা হইবে বলিয়া কাজল বিদায় লইল।
ব্যোমকেশের সহিত কাজলের ঘনিষ্ঠতা বেশ বাড়িয়া উঠিল। দুইজনে শহর ছাড়াইয়া গ্রামের দিকে বেড়াইতে যায়, কাঠালিয়া গ্রামের আখের আলির বাড়ি যায়। ব্যোমকেশ মাঠের মধ্যে হাত পা নাড়িয়া গান করিতে করিতে হাঁটে। কখনও বৃষ্টি আসিলে দুজনে দৌড়াইয়া চাষীদের ধান পাহারা দেওয়া চালার নিচে আশ্রয় নেয়। বৃষ্টি দেখিতে দেখিতে ব্যোমকেশ একটা সিগারেট ধরাইয়া বলে— চমৎকার বৃষ্টি, গাইতে ইচ্ছে করছে। দেশ আর মল্লার—এ দুটো ঝম ঝম বৃষ্টিতে ভারি জমে, বুঝলে?
কোথায় একটা পাখি ডাকিয়া ওঠে—কুউ-কুউ-কুউ-কুউ। স্বরটা খাদ হইতে আরম্ভ হইয়া চড়ায় গিয়া শেষ হয়। ব্যোমকেশ বলে–বর্ষাকোকিল ডাকছে, শুনছো?
কাজল ডাকটা আগেও শুনিয়াছে, কিন্তু পাখির নামটা যে বর্ষাকোকিল তাহা জানিত না। সে বলিল—বর্ষার কোকিল আছে নাকি আবার?
–নেই তো ওটা কী ডাকছে?
চারিদিকে বুক সমান ধানগাছ দেখাইযা ব্যোমকেশ বলে—রামনগরে এইরকম ধানক্ষেতে বর্ষার দিনে আমাকে একবার সাপে তাড়া করেছিল। টিপ টিপ বৃষ্টি হচ্ছে, আলের ওপর দিয়ে হাঁটছি, এমন সময় ধানগাছের ভেতর থেকে বিরাট এক কেউটে এসে আলের ওপর উঠল। কী তার ফেঁসফোসানি, কী তার কুলোপানা চক্কর! নেহাত আমার কাছে বেদের দেওয়া সাপের ওষুধ ছিল, তাই বেঁচে গেলাম।
-কী করলে ওষুধ দিয়ে?
—ওষুধ একরকম শেকড়। সাপের ভয়ে তাই সবসময পকেটে নিয়ে ঘুরতাম—আমাদের ওদিকে ভীষণ সাপের উপদ্রব কিনা। ছোবল মারবে বলে সাপটা যেই ফণা তুলেছে, অমনি শেকড়টা সামনে বাড়িয়ে দিলাম। সাপ মাথা নিচু করে চলে গেল, না কামড়ে।
স্কুল-জীবনে ব্যোমকেশ কাজলের অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিল—একমাত্র বন্ধু। পরে অবশ্য যোগাযোগ ক্ষীণ হইয়া আসিয়াছিল। প্রবেশিকা পরীক্ষায় তিন দিন পরীক্ষা দিবার পর ব্যোমকেশ আর আসিল না। কে আসিয়া বলিল—স্কুলে আসিবার সময়ে সে দেখিয়াছে ব্যোমকেশ মাঠের ধারে বসিয়া গান গাহিতেছে, পাশে খাতা-কলম-দোয়াত।
পরীক্ষা হইয়া যাইবার পর কাজল ব্যোমকেশকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিল, তুই পরীক্ষা দিলি না কেন?
ব্যোমকেশ হাসিল। পরীক্ষা দিবে বলিয়াই খাতা-কলম লইয়া সে বাহির হইয়াছিল, পথে মাঠের দৃশ্যটা এমন ভাল লাগিয়া গেল যে বসিয়া একটা গান না গাহিয়া সে পারে নাই। গানটা কিঞ্চিৎ দীর্ঘ হওয়ায় দেড়ঘণ্টা সময় পার হইয়া গিয়াছি।
ব্যোমকেশ কোনদিনই প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাস করিতে পারে নাই। বৎসর চারেক বাদে একদিন কাজলের সহিত তাহার দেখা হইয়াছিল—তখন ব্যোমকেশের খুব দুঃসময় যাইতেছে। পড়াশুনা হয় নাই, চাকরি পায় নাই। বাবা মারা গিয়াছেন, দাদার সংসারে অনটন—সেখানে বসিয়া বসিয়া খাওয়া ভাল দেখায় না। শুষ্ক মুখে চাকরির সন্ধানে ঘুরিতেছে। আর গান গায় না, আগের সে প্রাণোচ্ছলতা নাই। কাজলের খুব খারাপ লাগিতেছিল, কিন্তু করিবার কিছু ছিল না।
প্রথম আলাপের মাসখানেক বাদে একদিন বিকালে ব্যোমকেশ কাজলের বাড়িতে আসিল। কাজল ঘরে বসিয়া পড়িতেছে (পাঠ্য নহে—-অপাঠ্য বই), হৈমন্তী আসিয়া বলিল–বুড়ো, তোকে কে ডাকছে। বাইরে দাঁড়িয়ে আছে, ভেতরে আসতে বললাম, এলো না।
কাজল বাহির হইতেই ব্যোমকেশ বলিল—খুব বেশি হলে পাঁচ মিনিট সময় দেওয়া যেতে পারে। চট করে একটা জামা গলিয়ে বেরিয়ে পড়বি। দেরি করিস না, যা
—কিন্তু যাবোটা কোথায়?
—সে সব পরে। আগে বেরিয়ে আয়।
বাহির হইয়া ব্যোমকেশ বলিল—বিপুলগড়ের শিবমন্দিরে যাবো, চল্। যাবো যাবো করছিলাম, আজকে মনস্থির করে ফেলেছি।
—বিপুলগড়ে যাবি এখন? তোর কি মাথা খারাপ?
–মেলা বকিস না। খুব মজা হবে, দেখবি।
বিপুলগড় কাঁঠালিয়া ছাড়াইয়া অনেক দূর। গ্রামের বাহিরে জঙ্গলের ভিতরে একটা পোড়ো শিবমন্দির আছে। দিনের বেলাও কেহ সেখানে যায় না। কারণ প্রথমত ঘন জঙ্গল, দ্বিতীয়ত মন্দিরে আকর্ষণীয় কিছু নাই। বড়লোক জমিদার শখ করিয়া মন্দির বানাইয়াছিল–তাহারা সপবিবারে কলিকাতায় উঠিয়া গিযাছে। সে প্রায় সত্তর বৎসর আগের কথা। তাহাদের বড়ো বাড়ির ভগ্নাবশেষ পাশেই পড়িয়া আছে—জঙ্গলাবৃত অবস্থায়।
কাজল একটু আপত্তি করিয়া বলিল–বৃষ্টি আসতে পারে, দেখছিস না আকাশে মেঘ। অমন জায়গায় যাওযাটা উচিত হবে এখন?
–তবে থাক তুই।
ব্যোমকেশ সত্যই চলিয়া যাইতেছে দেখি কাজল দৌড়াইয়া তাহাকে ধরিল।
-রাগ করছিস কেন? চল, আমিও যাবো।
আকাশে মেঘ ছিল—আরও মেঘ চাপিয়া অন্ধকার হইয়া আসিল। ব্যোমকেশ বলিল–অ্যাডভেঞ্চারের পরিবেশ তো এই। মেঘলা দিন, জঙ্গলের ভেতরে পোড়ো মন্দির, ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা হাওয়া। একেবারে পাঁচকড়ি দের গল্প, অ্যাঁ?
ততক্ষণে কাজলেরও ভাল লাগিতে শুরু করিয়াছে। ওয়াইড ওয়ার্লড ম্যাগাজিন পড়িয়া বহু দুর্গম দেশে সে মনে মনে অ্যাডভেঞ্চার করিয়াছে। ঘন জঙ্গলের মধ্যে একটা সুঁড়িপথে তাহারা ঢুকিল। বেলা আছে, কিন্তু মনে হইতেছে সন্ধ্যা নামিল বলিয়া। শিবমন্দিবের চাতালে উঠিয়া দুইজনে দাঁড়াইল। মন্দিরের মাথায় বটগাছ গজাইয়াছে, ভারি কাঠের দরজা ভাঙিয়া কব্জায় আটকাইয়া ঝুলিতেছে। চাতাল চৌকা টালি বসাইয়া তৈয়ারি, এতদিন বাদেও বেশ মসৃণ। একটুও শব্দ নাই কোন দিকে, বাতাসে একটা বন্য গন্ধ।
কাজল চালের উপর বসিয়া পড়িল। কয়েকটা কালো ডেয়ো পিঁপড়া এখানে ওখানে ঘুরিতেছে। ঠিক নিচেই কতকগুলি বনতুলসীর গাছ জড়াজড়ি করিয়া আছে। দূরে ভাঙা নাটমন্দির দেখা যাইতেছে। কাজল ভাবিতেছিল, এই জায়গাটা না জানি কত জাঁকজমকপূর্ণ ছিল। দেলদুর্গোৎসবে কুলবধুরা ভিড় করিয়া পূজা দেখিত, ঝাড়লণ্ঠনের আলো প্রতিমার মুখে পড়িয়া ঘামতেল চকচক করিত। সন্ধ্যায় শাঁখ বাজিত, বৃদ্ধারা মালাজপ করিতেন। কে কোথায় চলিয়া গিয়াছে—কেহ নাই, কিছু নাই। তাহাদের চিহ্ন পৃথিবী হইতে একেবারে মুছিয়া গিয়াছে সাক্ষী হিসাবে রহিয়াছে কেবল এই ভাঙা নাটমন্দির।
ব্যোমকেশ ডাকিল–অমিতাভ।
–কী?
কী রকম একটা লাগছে না? কাজল ব্যোমকেশের দিকে তাকাইল। ব্যোমকেশের মুখ গম্ভীর, যেন একটা ভয়ানক কিছুর জন্য অপেক্ষা করিতেছে।
-কী রকম লাগছে মানে?
—চারিদিকে কেমন একটা থমথমে ভাব, তাই না? এমনি জায়গাতেই তো বহুদিনের মৃত আত্মারা নেমে আসে।
কাজল সমর্থন করিল। আসিয়াই জিনিসটা সে অনুভব করিয়াছে। বাতাসে রহস্যের গন্ধ। সাধারণত জীবনে যাহা ঘটে না, তাহা যেন এখানে এখনই ঘটিবে। কিছুদিন আগেই সে রিপ ভ্যান উইঙ্কল পড়িয়াছে। ওই সুঁড়িপথটির বাঁক হইতে এখনি হাফমুন জাহাজের কোনো মৃত নাবিক বাহির হইয়া আসিলে সে বিন্দুমাত্র অবাক হইবে না।
ব্যোমকেশ বলিল—মন্দিরের ভেতরে ঢুকে দেখি চল—
ভিতরে বেশ অন্ধকার। ব্যোমকেশ পকেট হইতে দেশলাই বাহির করিয়া জ্বালিল। কাঠি পুড়িতে যতটা সময় লাগে তার মধ্যেই দেখা গেল, মন্দিরের ভিতরে কালো পাথরের শিবলিঙ্গ, তাহার মাথায় কয়েকটি ফুল। ঘরের ভিতরে আর কিছু নাই—দেওয়ালে একটা কুলুঙ্গি ছাড়া।
বাহিরে আসিয়া একটা সিগারেট ধরাইয়া ব্যোমকেশ বলিল–একটু ভূপালী গাই।
কাজল হাঁটুর উপর থুতনি রাখিয়া শুনিতে লাগিল। ভূপালী রাগ ব্যোমকেশ ভালোই আয়ত্ত করিয়াছে। দরাজ গলায় ষড়জ লাগাইয়া আলাপ শুরু করিল। এমন সময় কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি পড়িল। গান থামাইয়া ব্যোমকেশ উপরদিকে তাকাইয়া বলি—বৃষ্টি এলো বলে মনে হচ্ছে।
কথা শেষ হইতে না হইতে ঝম ঝম বৃষ্টি নামিল। ব্যোমকেশ লাফাইয়া উঠিয়া বলিল—ঢোক মন্দিবে।
হুড়মুড় করিয়া তাহারা মন্দিরে ঢুকিল। বৃষ্টির তোড় প্রতি মুহূর্তে বাড়িতেছে। সাবধানে শিবলিঙ্গের স্পর্শ বাঁচাইয়া দুইজনে এক কোণে চুপ করিয়া দাঁড়াইল। দরজার ফ্রেমে আটকানো বাহিরের বনজঙ্গল, মন্দিরের চাতালেব কিয়দংশ প্রচণ্ড বৃষ্টিতে অদ্ভুত দেখাইতেছে। কাজল বলিলমুশকিল হল, এখন ফিরবো কী করে?
–ফেরবার তাড়া কীসের? বেশ তো লাগছে। ব্যোমকেশের গলা স্বপ্নালু।
বৃষ্টি কমিল না। জোলো হাওয়া এক একবার ভীষণ দাপটে দরজার ভাঙা পাল্লাটাকে খটখট করিয়া নাড়িতেছে। বাতাসের জোর খুব বাড়িয়াছে, অত ভারি পাল্লাটা নাড়িতেছে তখন। মাঝে মাঝে বৃষ্টির ছাঁট আসিয়া পড়িতেছে। ঠাণ্ডা হাওয়ায় শীত শীত করিতে লাগিল।
ঘরের ভিতর কিছু দেখা যায় না, ঘন অন্ধকার। ব্যোমকেশ বলিল–যখন আলো জ্বাললাম, ঠাকুরের মাথায় ফুল দেখেছিলি অমিতাভ?
–হুঁ।
–তার মানে, রোজ কেউ পুজো করে যায়। কুলুঙ্গিতে কী আছে দেখি দাঁড়া, মানুষ এখানে আসে যখন–
একটু পরেই অন্ধকারের ভিতর আবার ব্যোমকেশের গলার স্বর—কী পেলাম বল তো?
-কী?
–মোমবাতি। দাঁড়া জ্বালি। মোমবাতির সঙ্গে আরও একটা জিনিস আছে। গাঁজার কল্কে।
মন্দিরে অতএব শিবভক্তদের আনাগোনা প্রমাণিত হইল। কাজলের হাসি পাইতেছিল। মোমবাতি জ্বালাইয়া সেটাকে কোণের দিকে রাখিয়া ব্যোমকেশ গান ধরিল–দেশ রাগে।
বাহিরে হাওয়ার মাতামাতি—অন্ধকার, ভিতরে মোমবাতির কাঁপা কাঁপা স্বল্প আলো, তাহার সহিত ব্যোমকেশের গান। কাজল ভুলিয়া গেল বাড়ি ফিরিতে আজ অনেক দেরি হইবে, মা ভাবনা করিবে। ভুলিয়ে গেল যে স্থানে তাহারা বসিয়া আছে, তাহা আদৌ নিরাপদ নহে। রোমাঞ্চকর পরিবেশ তাহাকে সব ভুলাইয়া দিয়াছিল।
দরজার কাছে দাঁড়াইয়া কাজল বাহিরে তাকাইল। ভাঙা নাটমন্দিরের দিকটা একেবারে ভূতের দেশ বলিয়া মনে হইতেছে। বিদ্যুৎ চমকাইলে চারিদিক পলকের জন্য আলোকিত হইয়া উঠিয়াই আবার আবছা অন্ধকারে ডুবিয়া যাইতেছে। দরজার দুইদিকে হাত রাখিয়া সে অনেকক্ষণ দাঁড়াইয়া রহিল।
একনাগাড়ে প্রায় চার ঘণ্টা বৃষ্টি হইয়া তারপর থামিল। ব্যোমকেশ আর কাজল পাশাপাশি হাঁটিয়া বাড়ি ফিরিতেছিল। কাহারও মুখে কথা নাই। এই চার ঘণ্টার অভিজ্ঞতা তাহাদের প্রাণ পূর্ণ করিয়া দিয়াছে। মেঘ জমিয়া আছে, তবে বৃষ্টি নামিবার আপাতত আর আশঙ্কা নাই।
রাত্রে কাজল চোরের মতো বাড়িতে পা দিল, তখন তাহাকে খুঁজিবার জন্য লোক বাহির হইয়া গিয়াছে।
একদিন কানে আসিল খঞ্জনীর বাজনা—কে যেন খঞ্জনী বাজাইয়া গান গাহিতেছে। মানুষটাকে কাজলের চেনা লাগিল, তারপরই দৌড়াইয়া লোকটির কাছে গিয়া ডাকিল–রামদাস কাকা!
রামদাস প্রথমে কাজলকে চিনিতে পারে নাই। একটু পরেই প্রসন্ন হাসিতে তাহার মুখ ভরিয়া গেল। পুরাতন দিনের অভ্যাসমত খঞ্জনীটা একবার দ্রুত বাজাইয়া বলিল—খোকনবাবা না? তুমি এখানে কোথায়? তোমাকে মাধবপুরের মাঠে দেখেছিলাম–
কাজল তাহাকে সমস্ত ঘটনা বলিল, শুনিয়া রামদাস অনেকক্ষণ চুপ করিয়া দাঁড়াইয়া রহিল। একটু পরে গলা সাফ করিয়া বলিল–বাবার সঙ্গে দেখা হলো না, আমারই দোষ। তোমাকে কথা দিয়েছিলাম তোমাদের বাড়ি যাবো–গিয়ে উঠতে পারি নি।
কাজল দেখিল রামদাস একই রকম আছে, বিশেষ বদলায় নাই। কথায় কথায় হাসে, কথায় কথায় খঞ্জনী বাজায়। অপুর মৃত্যুর কথা শুনিয়া সে একটুখানি গম্ভীর হইয়াছিল বটে, কিন্তু পরমুহূর্তেই হাসিয়া বলিল—আমারই বা আর কদিন খোকনবাবা? তার নামেই জীবন, তার নামেই মৃত্যু। নিজের নামে কিছু রাখলেই যত বখেড়া এসে জোটে। বেশ তো আমি তাঁর নাম করে—
কাজল বলিল—তুমি আজ আমাদের বাড়ি যাবে চলো, কোনো কথা শুনবো না।
–কিন্তু আজকাল আমি একবেলা আহার করি, ওবেলা একবার হয়ে গেছে।
–মিষ্টি খাবে চল, তাতে দোষ নেই। মা তো একাদশীর দিন মিষ্টি খান।
—মিষ্টি খাওয়া যায় হয়তো, কিন্তু অত হাঙ্গামায় কী দরকার? খাওয়াটাই সব নয়, তার চেয়ে কোথাও বসে একটু কথা বলি তোমার সঙ্গে।
কাজল কিছুতেই শুনিল না, রামদাসকে ধরিয়া বাড়ি লইয়া গেল।
হৈমন্তী যত্ন করিয়া আসন পাতিয়া বসাইয়া তাহাকে খাওয়াইল। খাইতে পাইয়া রামদাস ছেলেমানুষের মতো খুশি হইল। খাইবে না খাইবে না করিয়া অনেকগুলি মণ্ডা খাইয়া ফেলিল। হৈমন্তী মুখ টিপিয়া হাসিয়া বলিল—আর দেবো বাবা?
রামদাস ব্যস্ত হইয়া বলে—আর না, আর না। খোকনবাবা, এবার তুমি খাও।
—আমি খেয়েছি কাকা, চলো তোমার সঙ্গে বরং একটু ঘুরে আসি।
বাহির হইবার আগে হৈমন্তী রামদাসকে বেশ বড়রকমের একটা সিধা আনিয়া দিল। সিধার চালের উপর একটা টাকাও আনিয়াছে। রামদাস হাসিয়া বলিল—এই সব কার জানো?
—এ আপনাকে নিতে হবে বাবা, সামান্য দিয়েছি।
–শ্রদ্ধার দান মাত্রেই অসামান্য, সামান্য নয়। কিন্তু এ তো আমি নিতে পারবো না।
–কেন বাবা?
—প্রয়োজন মতো আমি ভিক্ষা করি, প্রয়োজনের অধিক কখনও নিই না। তাতে আর একজনের অমে ভাগ বসানো হয়। আজ ভিক্ষা করে কালকের মতো চাল পেয়ে গেছি—আজ আর নেবে না।
বহু অনুরোধেও রামদাস রাজি হইল না। রাস্তায় বাহির হইয়া কাজলকে বলিল—নিলে কেবল লোভ বাড়ে, লোভ বড়ো খারাপ জিনিস খোকনবাবা।
লোভ কথাটা উচ্চারণ করিবার সময় সে এমন ভাব করিল যেন সামনে সাপ দেখিয়াছে।
কাজল বলিল–তোমাকে যদি এখন কেউ এক লাখ টাকা দেয়, তাও নেবে না?
–কী করব নিয়ে? তাতে আমার মনের শান্তি চলে যাবে, সব সময়ে ভালো খেতে ভালো পরতে ইচ্ছে হবে। রাত্তিরে জেগে বসে থাকতে হবে, পাছে চোরে টাকা নিয়ে যায়। এই করে করে যখন বুড়ো হব, তখন হঠাৎ একদিন দেখবো আমার এক লাখ টাকা কবে জমার খাতা থেকে খরচের খাতায় চলে গেছে, জমার খাতায় মস্ত বড় একটা শূন্য। না না, খোকনবাবা, তিনি আমাকে যেন কখনও টাকাপয়সা না দেন—সে আমি সহ্য করতে পারবো না, মরে যাবো।
কাজলের রামদাসের প্রতি শ্রদ্ধা হইল। সে বলিল—কিন্তু সারাজীবন এই ভাবে ছন্নছাড়ার মতো ঘুরে বেড়াতে তোমার ভালো লাগবে? শেষ জীবনে একটা আশ্রয় তো দরকার
রামদাস মৃদু মৃদু খঞ্জনী বাজাইতে বাজাইতে বলিল—ছন্নছাড়া! আমাকে ছন্নছাড়া বলছে, তোমার সাহস তো কম নয় বাবাজী। আমাকে তিনি যেমন রেখেছেন, তেমনি আছি। তিনি যেমনভাবে যেখানে খেলা শেষ করতে বলবেন, সেখানে তেমনিভাবে খেলা শেষ করে দেবো। তার হাতে আছি—তার মধ্যে আবার খারাপ ভালো কী?
কাজলের পক্ষে যদিও রামদাসের দর্শনের গভীরে প্রবেশ করা সম্ভবপর হইল না, তবুও তাহার কথা কাজলের ভালো লাগিতেছিল। সহজ বিশ্বাসের সুরটি তাহার হৃদয় অধিকার করিতে বেশি সময় নেয় নাই।
কাজল বলিল—এর মধ্যে অনেক ঘুরেছ তুমি, না? গল্প বলো না শুনি।
হ্যাঁ, এই চার বৎসরে রামদাস অনেক ঘুরিয়াছে, অনেক নূতন জায়গা দেখিয়াছে। একস্থানে সে বেশিদিন থাকিতে পারে না, প্রাণ পালাই পালাই করে। দুনিয়াটা যদি ঘুরিয়াই না দেখিবে, তবে ঈশ্বর তাহাকে চোখ দুইটা দিয়াছেন কী প্রয়োজনে?
একবার তাহার এক সাকরেদ জুটিয়াছিল। সে জোগাড় করে নাই, লোকটা জুটিয়া গিয়াছিল। ভক্তিভাবের কথা বলে, গদগদ কণ্ঠস্বর। দিন সাতেক ছিল সঙ্গে। এক শহরে কোন এক বড়লোকের বাড়ি গান করিয়াছিল রামদাস। তাহারা খুশি হইয়া রামাসকে একখানা নূতন কাপড় দিয়াছিল। রাত্রে সামান্য আহার করিয়া দুইজনে একটা হাটচালায় শুইয়াছিল। পরদিন সকালে ঘুম হইতে উঠিয়া দেখে সাকরেদটি উধাও—তন কাপড়খানাও নাই।
কাজল বলিল—তুমি কী করলে তখন?
—কী আবার করবো? ভারি দুঃখ হল মনে। কাপড়টা চেয়ে নিতে পারতো আমার কাছ থেকে, আমি দিয়ে দিতাম। অনর্থক চুরি করে সে পাপের ভাগী হল।
-তোমার রাগ হল না?
—না বাবাজী। তার নিশ্চয়ই আমার চেয়ে বেশি দরকার ছিল, নইলে সে নেবে কেন? তবে আমাকে বললেই পারতো। মানুষের অসাধুতা দেখলে বড়ো কষ্ট পাই মনে। কী লাভ অসাধুতায়! সেই তো একদিন সবকিছু ছেড়েছুড়ে বেরিয়ে পড়তে হবে চিরদিনের জন্য, তবে আর কেন পেছনে কুকীর্তি রেখে যাওয়া?
রামদাস বিদায় লইবার আগে কাজল তাহাকে বলিল—তুমি মাঝে মাঝে আসবে তো রামদাস কাকা? আমাদের বাড়ি তো চেনা হয়ে গেল।
–বলতে পারি না বাবাজী। কখন কোথায় থাকি তার তো ঠিক নেই। আজ এখানে আছি, কাল থাকব আর এক জায়গায়। সেখো না, সেই মাধবপুরের মাঠের পর আবার কতদিন বাদে আমার দেখা হল।
—তুমি বোধ হয় কাউকেই বেশি ভালোবাসোনা রামদাস কাকা, তাহলে কি না দেখে থাকতে পারতে? খালি ঘুরে ঘুরে বেড়ালে আর একজনকে ভালোবাসা যায়?
প্রশ্নটা শুনিয়া রামদাস কেমন অন্যমনস্ক হইয়া গেল, আনমনে খঞ্জনীতে টিন-টিন আওয়াজ তুলিতে লাগিল। কাজল বলিল—সত্যি কথা বলিনি, কাকা?
মুখটা এদিকে ফিরাইয়া রামদাস বলিল—একজনকে ভালোবাসার জন্য তো জীবনটা নয় বাবাজী, আমি চেয়েছিলাম সবাইকে ভালোবাসতে। তা আর হল কই? একজনকে ভালোবাসলে জীবনটা বড়ো ছোট হয়ে যায়। কিন্তু সবাইকে ভালোবাসার মতো হৃদয়ও তো ভগবান আমাকে দেননি, কী করি তুমিই বলো?
একটু চুপ করিয়া রামদাস বলিল—এখন মনে হয় গাছ নদী ফুল ফল সবকিছুর ভেতরেই আলাদা করে দেখবার মতো রূপ আছে, এমন কী পাথবের মধ্যে মাটির মধ্যে আলাদা সত্তা–আমি তাই দেখি। কী পেলে চাওয়া আমার পূর্ণ হয় তা আমি এখনও জানি না, তারই সন্ধানে ঘুরে বেড়াই।
অপুর শেষ উপন্যাসটা পাঠকমহলে আলোড়ন আনিয়াছিল। জীবনকে এত বিচিত্রভাবে অন্য কোনো লেখক দেখেন নাই—এই বলিয়া বড়ো বড়ো কাগজে সমালোচনা বাহির হইল। নূতন উপন্যাসখানির কাটতি অত্যন্ত বেশি, অন্যান্য বইও ভালো চলিতেছে। অপুর মৃত্যুর পর পাঠকেরা হঠাৎ যেন তাহাকে লইয়া ক্ষেপিয়া উঠিয়াছে।
বইপত্র হইতে আয়ের হিসাব এবং টাকাকড়ি আদায় ইত্যাদি এখন সুরপতি ও প্রতাপ করিয়া থাকে। হৈমন্তীর ভাঙা সংসারের হাল সুরপতি এখন শক্ত হাতে ধবিয়াছেন। মেয়েকে অভয় দিয়া বলিয়াছেন—তোর কোন ভয় নেই, হৈম, কাজলের ভবিষ্যতের ভার আমার হাতে রইল।
গ্রীষ্মে প্রখর রৌদ্র পৃথিবীটাকে পোড়াইয়া খা করে, বর্ষায় ঝর ঝর করিযা বৃষ্টি পড়ে অদৃশ্য হস্তনিষিক্ত শান্তিবারির মতো। হেমন্তে শিশির পড়ে, শীতে কুয়াশা পাক খায়—সমস্ত হৈমন্তী জানালায় বসিয়া দেখে। যে দেখিতে শিখাইয়াছিল, সে নাই।
কলিকাতা হইতে প্রথম প্রথম যখন প্রকাশকদেব নিকট হইতে অপুর লেখার জন্য মনি অর্ডার আসিত এবং হৈমন্তীকে সই করিয়া টাকা লইতে হইত, তখন হৈমন্তীর চোখে জল আসিত। সে যেন খালি টাকা চাহিয়াছিল! এ সকলইয়া সে কী করিবে? শেষ বইটা এত নাম করিল, অপু দেখিয়া গেল না। স্বামীর এত সুনাম এত যশ লইয়া সে এখন কী করিবে?
সুরপতির দৃঢ় বিশ্বাস কাজল বড়ো রকমেব একটা কিছু হইবে। জজ-ম্যাজিস্ট্রেট করিবার দিকে তাহার তেমন ইচ্ছা নাই, তিনি চান অপুর মতো কাজলও একটা স্থায়ী কিছু করুক। সন্ধ্যায় পড়াইতে পড়াইতে তিনি ডাক দেন-হৈম, একবার শুনে যা এদিকে।
হৈমন্তী আসিয়া বলে—কী বাবা?
–দেখ কাজল এই ইংরেজি এসেটা কী সুন্দর লিখেছে! বানান ভুল, ব্যাকরণের ভুল একটাও নেই। আমি বলে দিচ্ছি হৈম, এ ছেলে বংশের নাম উজ্জ্বল করবে।
—আশীর্বাদ করো বাবা, তাই যেন হয়।
হৈমন্তী নিজের ঘরে ফিরিয়া জানালার কাছে দাঁড়ায়। বাহিরে ঘন অন্ধকার। ওই অন্ধকারের ভিতর সুরপতি আলোর প্রতিশ্রুতি দিয়াছেন। কাজল মানুষ হইতেছে, সুরপতি বলিয়াছেন কাজল বড়ো হইবে।
ছেলেবেলা হইতে হৈমন্তী বাবাকে বড়ো বিশ্বাস করে।