কন্যাপক্ষীয় মেহমানদের আসবার বিরাম নেই। রিকশা এসে থামছে। হাসিমুখে নামছে চেনা লোকজন। কিছুক্ষণের মধ্যেই মিশে যাচ্ছে বিয়েবাড়ির স্রোতে। এরকম একটা উৎসবে কাউকেই আলাদা করে চেনা যায় না। সবাই বাড়ির লোক হয়ে যায়। আনিসের মা তাই রিকশা থেকে নেমে হকচকিয়ে গেলেন।
আনিসের মা যে আসবেন তা সবাই জানত। তাঁকে চিঠি লিখে জানান হয়েছে, আনিস সতের তারিখে আমেরিকা যাচ্ছে, জটিল অপারেশন হবে, একবার যেন তিনি আসেন। সেই চিঠি পেয়ে আনিসের মা যে এত আগেভাগে এসে পড়বেন, তা কেউ ভাবে নি।
অনেক দিন পরে দেখা, তবু জরীর মা ঠিকই চিনলেন। চিনলেও না চেনার ভান করলেন। বললেন, আপনাকে চিনতে পারলাম না তো!
আনিসের মা কুণ্ঠিত হয়ে বললেন, আমি আশরাফী, আনিসের মা।
তাঁর স্বামী ভদ্রলোকটি মোটাসোটা ধরনের গোবেচারা ভালোমানুষ। তিনি বিনীত হেসে বললেন, আপা, ভালো আছেন? কার বিয়ে?
আমার সেজো মেয়ের।
বলতে গিয়ে জরীর মার একটু লজ্জা লাগল। কারণ পরীর বিয়ের সময় এদের কোনো খবর দেন নি, জরীর বিয়েতেও না। জরীর মা বললেন, আপনারা হাত-মুখ ধোন। আনিসের সঙ্গে দেখা করলে দোতলায় যান।
আনিসের মা দোতলায় উঠলেন না। তার হয়তো কোনো কারণে লজ্জা বোধ হচ্ছিল। বিয়েবাড়িতে অতিথি হিসেবেও নিজেকে অবাঞ্ছিত লাগছে। কিন্তু তাঁকে তো আসতেই হবে। কারণ, এই বাড়িতে তাঁর একটি অসুস্থ ছেলে আছে। সেই ছেলেটি একসময় এতটুকুন ছিল। দুটি ছোট ছোট দুধৰ্দাত দেখিয়ে অনবরত হাসত। কথা শিখল অনেক বয়সে। তাও কি, ম বলতে পারত না। আম্মাকে ডাকত আন্না বলে। আহ, চোখে জল আসে কেন?
পুরনো কথায় বড়ো মন খারাপ হয়ে যায়। তিনি ছোট ছোট পা ফেলে ভিড়ের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। এ বাড়ির লোকজন অনেকেই আজ তাঁকে চিনতে পারছে না, এও এক বাঁচোয়া। চিনতে পারলে আরো খারাপ লাগত। মাঝবয়েসী এক মহিলা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি জরীর কী হন?
তিনি থতমত খেয়ে কি একটা বললেন। লোকজনের সঙ্গ ছেড়ে চলে গেলেন ভেতরের দিকে।