১১. ই. এস. পি. প্র্যাকটিস

১১. ই. এস. পি. প্র্যাকটিস

ই. এস. পি, মানে এক্সট্রাসেনসরি পারসেপশন।

ই. এস. পি, কি সত্যি আছে? আজ প্রায় সব অভিজ্ঞ ব্যক্তিই স্বীকার করেন, হা, সত্যি আছে। সম্ভাব্যতার নিরিখে প্রমাণ করা সম্ভব হয়েছে, পাঁচটা ইন্দ্রিয়ের মাধ্যম ছাড়াও অন্য মাধ্যমের সাহায্যে তথ্য পাওয়া সম্ভব, আমরা পাই। এই তথ্য অতীত, বর্তমান বা ভবিষ্যৎ থেকে আসতে পারে। আসতে পারে কাছাকাছি কোথাও বা বহু দূর থেকে। সময়, মহাশূন্য বা অন্য কিছুই এর আসার পথে বাধা হতে পারে না।

ই. এস. পি.-এর অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্যে ‘অনুমান করো’ ধরনের অনুশীলনের মধ্যে যাবো না। এ ধরনের অনুশীলন করানো হয় মানুষ অতীন্দ্রিয় ক্ষমতার অধিকারী কিনা প্রমাণ করার জন্য। কিন্তু আমাদের প্রমাণ করার দরকার নেই, আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি, মানুষের ওই ক্ষমতাটা আছে। কাজেই নিজেদের জন্যে আরো বড় কাজ বেছে নেবো আমরা। সেই কাজটা কি? কাজটা হলো, বাস্তব জীবনের সাথে অতীন্দ্রিয় জগতের সমন্বয় ঘটানো। আমরা এর সাহায্যে এমন সব কাজ করতে চাই যা আমাদের বাস্তব জীবনে উপকার বয়ে আনবে।

এই বইতে যতোগুলো টেকনিক দেয়া আছে সেগুলো চর্চা করে দক্ষতা অর্জন করে থাকলে আপনি ই. এস. পি. চর্চা করার জন্যে প্রস্তুত হয়েছেন। মনের গভীর স্তরে চলে গিয়ে আপনার পক্ষে সম্পূর্ণ সচেতন থাকা সম্ভব হবে, সেই সাথে মনের পর্দায় বস্তু এবং ঘটনার ছবি চাক্ষুষ এবং উপলব্ধি করতে পারবেন। এই দুটো হলো অতীন্দ্রিয় জগতে ঢাকার দরজা।

বিদেশে অনেক স্কুল আছে যেখানে মনকে নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতি শিক্ষা দেয়া হয়, সেই সাথে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে ই, এস, পি, ও চর্চা করানো হয়। মনকে নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতি আয়ত্ত করার পর অতীন্দ্রিয় লেভেলে বিচরণ শুরু করে তারা-শরীরের বাইরে আরোপ করে তাদের সচেতনতা। একে বলে এক্সট্রা সেনসরি প্রজেকশন।

মনের পর্দায় ছবি দেখার সহজ পদ্ধতি দিয়ে শুরু করে তারা। অত্যন্ত গভীর ধ্যানমগ্ন অবস্থায় পৌঁছে যে যার বাড়ির সামনে দেখতে পায় নিজেদের। নিজেদের ওখানে দেখতে পাওয়া সম্ভব করে তুলতে কল্পনার আশ্রয় নেয় তারা। সামনের দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে লিভিং রুমে দক্ষিণ দেয়ালের দিকে মুখ করে দাঁড়াবার আগে গভীর একাগ্রতার সাথে একটাই কাজ করতে হয় তাদেরকে, বাড়ির সামনে যা যা আছে সব অত্যন্ত সতর্কতার সাথে খুটিয়ে লক্ষ্য করা। প্রথমে এই কামরাটাকে রাতের বেলা আলো জ্বালা অবস্থায় দেখে, তারপর দেখে দিনের বেলা, যখন জানালা দিয়ে রোদ আসছে। এই ঘর সম্পর্কে যা যা মনে পড়ে, সব দেখতে হয় তাদেরকে। এরপর তারা দক্ষিণ দেয়াল স্পর্শ করে, এবং ঢুকে পড়ে দেয়ালের ভেতর।

অনেকের কাছে ব্যাপারটা অবাস্তব বলে মনে হতে পারে, কিন্তু মনের পর্দায় ছবি দেখায় যারা দক্ষতা অর্জন করেছে তাদের কাছে সম্পূর্ণ বাস্তব একটা ব্যাপার এটা।

দেয়ালের ভেতর জায়গাটা, এমন একটা জায়গা যেখানে জীবনে কখনো আসেনি তারা, তাই আলো দেখে, গন্ধ শুঁকে, উত্তাপ অনুভব করে এবং দেয়ালের বাইরের দিকে টোকা দিয়ে দেয়ালের নিরে–টত্বসহ নতুন পরিবেশটাকে তারা পরীক্ষা করে নেয়। দেয়ালের বাইরে আবার বেরিয়ে এসে দেয়ালের দিকে মুখ করেই দাঁড়ায় তারা, তারপর ৪টার রঙ বদলে একবার কালো, একবার লাল, একবার সবুজ, একবার বেগুনি এবং সব শেষে ওটার নিজস্ব রঙে ওটাকে দেখে। এরপর তারা একটা চেয়ার তুলে নিয়ে এই পরিস্থিতিতে যার কোনো ওজন নেই–দেয়ালের পাশে রেখে আবার একবার দেয়ালের রঙ বদলের সাথে সাথে চেয়ারটার আকার আকৃতি বা রঙের কি পরিবর্তন হয় না হয় লক্ষ্য করার জন্যে বিশেষ মনোযোগ দেয়। শুধু চেয়ার নয়, এই অনুশীলন তারা একটা তরমুজ, একটা লেবু, একটা কমলা, তিনটে কলা, তিনটে গাজর এবং শাক নজির সাহায্যেও চর্চা করে।

এই অধিবেশন শেষ হওয়া মানে গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ নেয়া হয়ে গেল। যুক্তিবাদী মনকে বসিয়ে দেয়া হয়েছে পিছনের আসনে, আর কল্পনাপ্রবণ মনটাকে এগিয়ে নিয়ে এসে বসানো হয়েছে সামনের আসনে, যেখানে কন্ট্রোল প্যানেল রয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের যুক্তিবাদী মন তাদেরকে বলে, ‘না, এসব কথা আমাকে বলো না! একটা দেয়ালের ভেতর ঢুকেছে বা এই রকম অবাস্তব আর কোথাও গেছো, এ আমি বিশ্বাস করি না। তুমি ভালো করেই জানো, এ সম্ভব নয়। তুমি আসলে এখানেই বসে আছো।

কিন্তু কল্পনাপ্রবণ মন, পর্দায় ছবি দেখতে যে দক্ষতা অর্জন করেছে, যুক্তিবাদী মনের এই কথা অগ্রাহ্য করতে পারবে। কল্পনাশক্তি যতই জোরালো হয়ে উঠবে, ততোই শক্তিশালী হয়ে উঠবে অতীন্দ্রিয় (সাইকিক) ক্ষমতা। এই ক্ষমতাটা চুপি চুপি গা। ঢাকা দিয়ে থাকে কল্পনাপ্রবণ মনের ভেতরই।

পরবর্তী অধিবেশনে ছাত্র-ছাত্রীরা কল্পনা আর মনের পর্দার সাহায্য নিয়ে নিজেদেরকে ধাতব পদার্থের ভেতর প্রবেশ করায়। এই ধাতব পদার্থ হতে পারে লোহা, স্টেনলেস স্টীল, সীসা, তামা বা পিতল। এসবের ভেতর ঢুকে আগের মতোই তারা আলো, গন্ধ, রঙ, টেমপারেচার এবং নিরেটত্ব পরীক্ষা করে। কাজগুলো দ্রুত সারতে চেষ্টা করে তারা, যাতে যুক্তিবাদী মন কাছে ঘেষতে না পারে।

প্রথম দিকে তারা ধাতুর তৈরি সহজ সরল আকার আকৃতির জিনিসের ভেতর ঢোকে, তারপর ধীরে ধীরে বেছে নেয় জটিল সব জিনিস। প্রথম দিকে হয়ত সিলিণ্ডার, পেরেক, আলপিন বা কিউবের ভেতরে ঢোকে। তারপর হয়ত বেছে নেয়, গ্রিল, তৈজসপত্র, যন্ত্রপাতি, মেশিন ইত্যাদি। এর পর ধাতব পদার্থ ছেড়ে বেছে নেয় ফলবান কোনো গাছ। একটা গাছ চার ঋতুতে চার রকম চেহারা পায়, তার প্রতিটি চেহারাতেই প্রবেশ করে ছাত্র-ছাত্রীরা। ফল এবং পাতার ভেতরও তারা ঢোকে। এর আগে অন্য কিছুর মধ্যে ঢুকে যা যা করেছে তারা, এবারও গাছ, ফল আর পাতার ভেতর ঢুকে ঠিক সেই কাজগুলোই করে। অর্থাৎ গভীর ভাবে অনুভব করে, উপলব্ধি করে এসবকে ওপর ওপর নয়, একেবারে ভেতর থেকে।

এরপর তারা এক লাফ দিয়ে অনেক সামনে চলে যায়। ঢুকে পড়ে পোষা কোনো প্রাণীর শরীরে।

এই পর্যায় পর্যন্ত এতোই সাফল্যের সাথে কাজগুলো করে তারা, ব্যাপারটা সম্ভব। কি সম্ভব নয় এই সন্দেহ প্রায় কারো মনেই আর অবশিষ্ট থাকে না। সত্যিই কি এই কাজ করছি আমি? এই প্রশ্ন মাত্র দু’ একজন ছাত্রের মনে উঁকি দেয়। এবার তারা। আত্মবিশ্বাসের সাথে মনের পর্দায় পরীক্ষা করে, খুটিয়ে দেখে পোষা একটা প্রাণীকে। এই দেখার সময়ও প্রাণীটির রঙ বারবার বদলে নেয় তারা। এবং তারপর, দৃঢ় আত্মবিশ্বাসের সাথে, এবার তারা প্রাণীটির খুলির ভেতর দিয়ে ঢুকে পড়ে তাজা ব্রেনে। ব্রেনট্রাকে কয়েক মিনিট পরীক্ষা করে বেরিয়ে আসে তারা, বাইরে থেকে প্রাণীটিকে আবার একবার ভালো করে দেখার জন্যে। এবার তারা ওটার শুধু বুক পরীক্ষা করে। পরীক্ষা শেষ করে ঢুকে পড়ে বুকের ভেতর। ওখানে ঢুকে তারা এক এক করে পরীক্ষা করে পাঁজরগুলো, শিরদাঁড়া, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস আর লিভার। বুকের ভেতর জিনিস গুলো পরীক্ষা করে বেরিয়ে আসে তারা। ইতিমধ্যে জমা হয়েছে অনেকগুলো সাফল্য, সেগুলো পুঁজি করে জীবনের সম্ভবত সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ঘটনা এবার তারা ঘটাতে যাবে–ঢুকে পড়বে একজন মানুষের শরীরে। কিন্তু তার আগে প্রস্তুতি নিতে হয় ওদেরকে।

ধ্যানের বিশেষ গভীর একটা স্তরে পৌঁছে, কখনো থিটার নিচের লেভেলও হতে পারে সেটা, উজ্জীবিত কল্পনাশক্তির সাহায্যে ছাত্র-ছাত্রীরা মনের পর্দায় তৈরি করে একটা ল্যাবরেটরী। এই ল্যাবরেটরী তাদের পছন্দ আর রুচি অনুসারে যে কোনো আকারের, যে-কোনো আকৃতির এবং যে-কোনো রঙের হতে পারে। নিজেদের পছন্দ করা ডিজাইন মতো সেই ল্যাবরেটরীতে একটা ডেস্ক আর একটা চেয়ার থাকবে। থাকবে একটা টেবিল বা দেয়াল ঘড়ি। থাকবে একটা ক্যালেণ্ডার, তাতে বর্তমান, অতীত এবং ভবিষ্যতের তারিখ থাকা চাই। আর, হ্যাঁ, একটা ফাইলিং কেবিনেটও থাকতে হবে। কিন্তু ল্যাবরেটরীতে বেমানান কিছু থাকতে পারবে না। তবে কেউ যদি এক গোছা ফুল রাখতে চান, রাখতে পারবেন। ফুল তো কোথাও বেমানান নয়।

পরবর্তী পদক্ষেপ বুঝতে হলে, আরেকবার উপলব্ধি করা দরকার, আমাদের সাইকিক (অতীন্দ্রিয়) সেনসিং অ্যাপারাটাস ভাষা এবং যুক্তি থেকে কতোটা দূরে, উপলব্ধি করা দরকার প্রতিবিম্ব আর প্রতাঁকের কোটা কাছাকাছি। কারণ ছাত্র ছাত্রীদের পরবর্তী পদক্ষেপ হবে মনের পর্দায় তেরি করা ল্যাবরেটরীটাকে ‘ইনমেন্ট’ দিয়ে সাজানো। মানুষের শরীরের ভেতর ঢুকে এটা সেটা পরীক্ষা করা অভ্যেস হয়ে যাবার পর একদিন তারা মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে বিশেষ একটা কাজে হাত দেবে। কাজটা দু’ভাগে ভাগ করে নেবে তারা। প্রথম কাজ, নির্দিষ্ট একজন মানুষের ভেতর ঢুকে খুঁজে বের করা তার শরীরের ভেতর কোথাও কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে কিনা। কিংবা এমন একজন মানুষের শরীরে ঢুকবে তারা যার শরীরের ভেতর কোনো রোগ আছে বলে আগে থেকেই ধারণা করা যায়। ত্রুটি-বিচ্যুতি আবিষ্কারের পর দ্বিতীয় কাজে হাত দেবে, ইনস্ট্রমেন্টের সাহায্যে সারিয়ে তুলবে সেই ত্রুটি বা রোগ।

ওদের বেশিরভাগ ইনমেন্ট দেখতে হবে অদ্ভুত, অন্য কোনো ল্যাবরেটরীতে এসব দেখতে পাওয়া যায় না। এই যন্ত্রপাতিকে সিমবোলিক বা প্রতীকী ইনমেন্ট বলা। যেতে পারে।

ল্যাবরেটরীতে একটা চালুনি বা ঝাঁজরি অবশ্যই থাকবে। এর সাহায্যে তারা রক্তে জমে থাকা দূষিত পদার্থ বা ভেজাল দূর করবে। আরো থাকবে একটা ঝাঁটা। কারো যদি গেঁটেবাত থাকে, অতীন্দ্রিয় ক্ষমতার সাহায্যে সেটা দেখতে পাওয়া যাবে, তখন ওই ঝাঁটা দিয়ে ঝেটিয়ে সেটা দূর করা হবে। ঘা যাতে তাড়াতাড়ি শুকায় তার জন্যে দরকার হবে মলম। আর দরকার হবে ডিসটিলড ওয়াটার, হোস পাইপ। এই দুটো লাগবে অপরাধবোধ ধুয়ে সাফ করার কাজে। উত্তেজনা, উদ্বেগ আর দুশ্চিন্তা থেকে নিষ্কৃতি দেয়ার জন্যে থাকবে প্রচুর ক্যাসেটসহ টু-ইন-ওয়ান বা মিনি ডেক। প্রত্যেকেরই একটা করে ল্যাবরেটরী থাকবে, এবং যে যার ল্যাবরেটরী নিজেই পছন্দমত যন্ত্রপাতি দিয়ে সাজাবে। যে-কোনো দুই সেট যন্ত্রপাতি কোনো ভাবেই হুবহু এক রকম দেখতে হবে না। ওগুলো তারা সংগ্রহ করবে এমন এক জায়গা থেকে, যেখানে সবকিছুই সম্ভব মনের গভীর স্তর। এবং এই সব যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করার। পর ছাত্র-ছাত্রীরা উপলব্ধি করে, অতীন্দ্রিয় জগতে পৌঁছে তারা যে কাজগুলো করবে সেসব কাজের সুনির্দিষ্ট প্রভাব পড়বে বস্তুগত দুনিয়ায়।

এসব যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করার সময়, ছাত্র-ছাত্রীরা পরামর্শদাতার অভাব বোধ করে। সাধারণ লোক বলে মনের ভেতর মন আছে, কখনো বা তার পরিচয় দেয়া হয় এই বলে–’শান্ত নিচু একটা কণ্ঠস্বর’। তারা এই শান্ত নিচু কণ্ঠস্বরের পরামর্শ চায়। তারা অবশ্য এটাকে নিচু কণ্ঠস্বর বলে না, তাদের কাছে ওটা অত্যন্ত জোরালো একটা কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিত। এবং ওই কণ্ঠস্বর একটা নয়, দুটো। ল্যাবরেটরীতে দু’জন পরামর্শদাতা নেয় ওরা। একজন পুরুষ, আরেকজন মহিলা। ওদেরকে আগেই বলে দেয়া হয় ধ্যানমগ্ন হবার পর নিজের ল্যাবরেটরীতে দু’জন পরামর্শদাতা নেবে তারা, কাজেই কাকে কাকে নেবে না নেবে সে-ব্যাপারে আগেই চিন্তা-ভাবনা করে রাখার সুযোগ থাকে তাদের।

এক ছাত্র, পরামর্শদাতা হিসেবে একবার চেয়ে বসলো খোদ আলবার্ট আইনস্টাইনকে। কিন্তু পেলো কাকে জানেন? একজন ভাঁড়কে। লোকটার মুখ ছিলো রঙ করা। নাকের জায়গায় ছিলো গোলাপি রঙের একটা পিং পং বল। যদিও, কার্যক্ষেত্রে, দেখা গেল, যুক্তিসঙ্গত এবং তথ্যমূলক উপদেশ দেয়ার ব্যাপারে তার জুড়ি মেলা ভার।

আরেকজন ছাত্র, তার নাম স্যাম মেরিল। এই ছাত্রটি নিউ টাইমস পত্রিকায় মন নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে একটা প্রবন্ধ লিখেছিল। মজার ব্যাপার, সে তার ল্যাবরেটরীতে পরামর্শদাতা হিসেবে ঠিক যাদেরকে চেয়েছিল, পেয়েছিলও তাদেরকেই।

ছাত্রটি তার ল্যাবরেটরী বানিয়েছিল বিখ্যাত সাবমেরিন ‘নটিলাস’-কে। এবার মেরিলের নিজের ভাষায় শুনুন, ছোটো একজন মানুষ, পরনে জানু পর্যন্ত ঢিলা লম্বা পায়জামা আর সিল্কের শার্ট, উদয় হলো ডিকমপ্রেশন চেম্বার থেকে। রোগা-পাতলা মানুষ, হরিণের মতো মায়াভরা চোখ কোটরে একেবারে ভেতরে সেধিয়ে আছে। দেখেই চিনতে পারলাম, আমার পরামর্শদাতা আর কেউ নন, স্বয়ং উইলিয়াম শেক্সপিয়ার। হাত নেড়ে আমি বললাম, হাই! কিন্তু উত্তর করলেন না তিনি। শরীর হীন একটা কণ্ঠস্বর থেকে ঘোষণা বেরিয়ে এলো, আমরা তীরে যাচ্ছি। আমি আর উইল একটা হ্যাঁচওয়ে থেকে লাফ দিয়ে পড়লাম নির্জন সৈকতে। ওখানেই দেখলাম আমার দ্বিতীয় পরামর্শদাতাকে। পরামর্শদাতা নয়, দাত্রী। উনি আর কেউ নন, সোফিয়া

লরেন। সবেমাত্র তিনি সাঁতার কেটে তীরে উঠেছেন, তাঁর সুতী টি-শার্ট চামড়ার সাথে একেবারে সেটে আছে। প্রথমে তিনিও আমাকে কোনো পাত্তা দিলেন না, কিন্তু শেক্সপিয়ারকে দেখতে পেয়ে আনন্দে একেবারে আত্মহারা হয়ে উঠলেন। তাঁরা করমর্দন করলেন, কুশলাদি বিনিময় করলেন, তারপর দুজনেই পড়ে গেলেন বালির ওপর। ওখানে তাঁরা ছটফট করতে লাগলেন, ঘোঁৎ ঘোঁৎ আওয়াজ বেরিয়ে আসতে লাগলো তাঁদের নাক-মুখ থেকে।’

পরদিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ করতে হবে। স্যাম মেরিলের ওরিয়েন্টো লজিস্ট তাকে ফ্লোরিডার এক বাষট্টি বছরের বুড়ির নাম বললো। দুই পরামর্শদাতা, যাঁরা নিজেদেরকে নিয়েই ব্যস্ত, খেলাচ্ছলে একবার পরীক্ষা করলেন বুড়িকে, তারপর নিজেদের কাজে চলে গেলেন।

পরামর্শদাতারা তাহলে কি পরামর্শ না দিয়েই চলে গেলেন? না। মেরিল দেখলো, মহিলার পেট বলে কিছু নেই, সম্পূর্ণটাই গায়েব হয়ে গেছে। তার জায়গায় লালচে রঙের এক প্রস্থ নাড়ি দেখা যাচ্ছে, ঠিক যেন নিওন বাতি, বিপদ সংকেতের মতো বারবার জ্বলছে আর নিভছে। পরে মেরিল তার ওরিয়েন্টোলজিস্টের কাছ থেকে জানলো, বৃদ্ধা মহিলা নাড়িতে তীব্র জ্বালা নিয়ে হাসপাতালে রয়েছেন।

মনকে যারা নিয়ন্ত্রণ করা শিখবেন তাঁদের কাছে এই পরামর্শদাতারা অত্যন্ত বাস্তব হয়ে উঠতে পারে। আসলে, কারা এরা? এর সঠিক উত্তর এখনো জানা সম্ভব হয়নি। হয়ত আদর্শ কল্পনার ফসল-অলীক উদ্ভাবন। হয়ত মনের ভেতর যে মন বা অন্তরের ভেতর যে কণ্ঠস্বর (ইনার ভয়েস) আছে তারই মূর্তি। কিংবা আত্মারই প্রতিচ্ছবি। অথবা অন্য কিছু। শুধু জানা গেছে যে পরামর্শদাতাদের সাথে পরিচয় এবং কাজ করতে শেখার পর, ওদের সাথে সম্পর্কটা হয়ে ওঠে সম্মানজনক। অচিরেই প্রমাণ হয়ে যায় এই সম্পর্ক একটা অমূল্য সম্পদ।

খ্রীষ্টের চারশো বছরেরও আগে, গ্রীক দার্শনিক সক্রেটিসের একজন পরামর্শদাতা ছিলো। এই পরামর্শদাতার সাথে মন-নিয়ন্ত্রণ চর্চাকারীদের পরামর্শদাতার কিছু অমিল আছে। সক্রেটিসের পরামর্শদাতা তার উপদেশ শুধু সাবধান করে দেয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছিল। প্লেটোর কথা অনুযায়ী সক্রেটিস বলেছেন, সেই ছোটো বেলা থেকেই আধা-স্বর্গীয় একজনের অস্তিত্ব আমি অনুভব করে আসছি, যার কণ্ঠস্বর আমাকে মাঝে মধ্যেই নির্দিষ্ট কোনো কাজ করতে নিষেধ করে। কিন্তু আমাকে কি করতে হবে, সে নির্দেশ তার কাছ থেকে কখনোই আমি পাই না।

আরেকজন লেখক, জেনোফন (XENOPHON) সক্রেটিসের একটা উদ্ধৃতি তুলে দিয়েছেন। সক্রেটিস বলেছেন, আজ পর্যন্ত এই কণ্ঠস্বরের সাবধানবাণী কখনো ভুল প্রমাণিত হয়নি।

একটু পরই আপনি একজন ছাত্রকে তার ল্যাবরেটরীতে দেখতে পাবেন। দেখতে পাবেন, সে তার পরামর্শদাতাদের সাথে গোপন পরামর্শ করছে। নিজের এবং অন্যান্য দের উপকার করার কি যে ক্ষমতা এই ছাত্রের, দেখে আশ্চর্য হয়ে যাবেন আপনি।

তার আগে দুটো মানসিক অনুশীলন আছে, দুটোই এক বন্ধুর শরীর পরীক্ষা সংক্রান্ত। এই পরীক্ষার সাথে এর আগে করা পোষা প্রাণী পরীক্ষার তেমন কোনো তফাৎ নেই, এক্ষেত্রে শুধু আরো বেশি খুটিয়ে সব কিছু লক্ষ্য করতে হবে। কাজগুলো শেষ হলে, ছাত্ররা জোড়া বাঁধে।

প্রতিটি জোড়ার একজনকে বলা হয় সাইকো- ওরিয়েন্টোলজিস্ট, অপরজনকে বলা হয় সাইকিক অপারেটর।

সাইকো- ওরিয়েন্টোলজিস্ট একটা কার্ডে তার চেনা এক লোকের নাম, বয়স, সাধারণত কোথায় কোথায় তাকে দেখতে পাওয়া যায়, এবং তার বড় ধরনের কিছু শারীরিক ত্রুটি বা কষ্ট, এই সব লেখে। এবার সাইকিক অপারেটর, হয় নিজে অথবা। তার সাইকো-ওরিয়েন্টোলজিস্টের সাহায্য নিয়ে গভীর লেভেলে চলে যায়, সম্ভবত এই প্রথম এবং শেষবার এই সময় তার আত্মবিশ্বাস দোদুল্যমান অবস্থায় থাকে।

গভীর ধ্যানমগ্ন অবস্থায় ল্যাবরেটরীতে পৌঁছে পরামর্শদাতাদের সঙ্গ পাবার পর, ইঙ্গিতে জানায় সে, রেডি। এবার সাইকো–ওরিয়েন্টোলজিস্ট তার কার্ডে লেখা নাম, বয়স, এবং লোকটাকে কোথায় পাওয়া যেতে পারে, ইত্যাদি পড়ে শোনায়। এই লোকের সাথে কখনো পরিচয় হয়নি সাইকিক অপারেটরের, কিংবা এই লোকের কথা কারো মুখে শোনেওনি কখনো। তার কাজ হলো, লোকটার কোথায় কি অসুবিধে আছে। খুঁজে বের করা।

লোকটার শরীর, ভেতর এবং বাইরে থেকে, পরীক্ষা করে সে। দেয়াল, ধাতব পদার্থ, পোষা প্রাণী ইত্যাদি আগেই পরীক্ষা করে দক্ষতা অর্জন করেছে সে, পদ্ধতিটাও অভ্যেস হয়ে গেছে, কাজেই এই লোকের ভেতর-বার পরীক্ষা করতে কোনো অসুবিধে হবার কথা নয় তার, হয়ও না। পরীক্ষার সময় প্রয়োজনে পরামর্শদাতাদের সাথে আলোচনা করে সে। হয়ত কথা বলে লোকটার সাথেও।

সাইকিক অপারেটর তার কাজে কিভাবে এগোচ্ছে, জানার জন্যে সাইকো ওরিয়েন্টোলজিস্টের কাছ থেকে অনুরোধ আসে, ‘থেমো না, কথা বলতে থাকো, যদি মনে হয় অনুমান করছে, তবুও।’ এ-ধরনের একটা অধিবেশনে সাধারণত যা ঘটে, নিচে তা তুলে দেয়া হলো (এটা একটা বাস্তব অধিবেশনের অংশবিশেষ) : আত্ম-উন্নয়ন।

সাইকো-ওরিয়েন্টোলজিস্টঃ আমি এই কার্ডে জন সামার্স নামে এক লোকের নাম লিখে রেখেছি। তার বয়স আটচল্লিশ, ইণ্ডিয়ানার এল্কহার্টে বাস করে। এক–দুই তিন-ইণ্ডিয়ানা এল্কহার্টের জন সামার্স এখন তোমার পর্দায় চলে এসেছে। চেতনা দিয়ে উপলব্ধি করো তাকে, অনুভব করো, দেখো, কল্পনা করো, তৈরি করো, জানো

সে ওখানে আছে, নিঃসন্দেহে ধরে নাও সে ওখানে আছে। তোমার বুদ্ধিমত্তা দিয়ে শরীরটা তন্ন তন্ন করে পরীক্ষা করো। তুমি জানো মাথাটা কোথায় থাকতে পারে, সেখান থেকে শুরু করো। তুমি জানো পা কোথায় থাকতে পারে, সেখানে পৌঁছে শেষ করো। এইভাবে, একবার, দু’বার, অনেক বার প্রতি সেকেণ্ডে একবার করে।

এই ভঙ্গিতে শরীরটা তন্ন তন্ন করে পরীক্ষা করার সময়, বিশেষ ভাবে আকৃষ্ট করে এই রকম তিনটে অংশ নির্বাচন করার অনুমতি দাও তোমার কল্পনাকে। প্রতি সেকেণ্ডে একবার করে শরীর পরীক্ষা করাটা চালিয়ে যাও, এবং বিশেষ ভাবে যে অংশগুলো তোমাকে আকৃষ্ট করছে সেগুলোর কথা জানাও আমাকে। তোমার হয়ত মনে হবে, যেন নিজে থেকে বানাচ্ছো, তবু তোমার মাথায় যা আসে বলো আমাকে।

সাইকিক অপারেটরঃ তার ডান কাঁধটা একটু নিচু হয়ে আছে, সামনের দিকেও ঝুঁকে আছে একটু বাকি…সব ঠিক আছে বলেই মনে হয়, শুধু বাম গোড়ালিটা ছাড়া…এবার বুকের ভেতরটা দেখি সব কেমন উষ্ণ…ডান দিকে একটু ঠাণ্ডা ভাব…ঠাণ্ডা আর অন্ধকার একটু বেশি এদিকে আরে, ডান ফুসফুসটা দেখছি নেই…এবার সেই গোড়ালিটা…দেখে তো মনে হচ্ছে ঠিকই আছে, তবে সাদা একটা বাঁকা রেখা দেখতে পাচ্ছি…ঠাণ্ডার দিনে ব্যথা করে…কবে হয়ত ভেঙে গিয়েছিল বোধহয়, এইটুকুই থামো, আমার পরামর্শদাত্রী লোকটাকে ধরে ঘোরাচ্ছে, সম্ভবত আমাকে কিছু দেখাতে চাইছে। হ্যাঁ, ইঙ্গিতে লোকটার কানের পিছনটা দেখাচ্ছে সে…হাঁ, গভীর একটা ক্ষত চিহ্ন রয়েছে ওখানে…ওখানে একটা অপারেশন করা হয়েছিল…বেশ গভীর একটা দাগ রয়ে গেছে…ব্যস, আর কিছু বলার নেই আমার।

সাইকো- ওরিয়েন্টোলজিস্ট: ভেরি গুড। লোকটার ডান ফুসফুস নেই, আর একটা কানের পিছনে গভীর ক্ষতচিহ্ন আছে। গোড়ালি সম্পর্কে এখানে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। এবার, ডান ফুসফুস আর কানের পিছনে গভীর ক্ষতটার কথা যখন তুমি আমাকে বললে তোমার তখনকার অনুভূতি আরেকবার অনুভব করো। এই অনুভূতিটাকে পরবর্তী কেসের জন্যে একটা রেফারেন্স পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে তুমি।

এক মুহূর্তের বিরতির পর সাইকিক অপারেটর তার ধ্যান থেকে উঠে এলো বিটায়, হাসছে। ‘মাগো! কি অদ্ভুত!’

.

অদ্ভুত যে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এই পৃথিবীতে যতো রকমের অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যাই আমরা, সে-সবের সাথে এর কোনো মিল নেই। তবু, এই মাত্র যে দৃশ্যের বর্ণনা পড়লেন আপনি তার মধ্যে স্বাভাবিকত্ব বলে কিছু নেই। কেউ কেউ তাদের প্রথম কেসে সামান্য এক-আধটুর বেশি দেখতে পায় না, কেউ কেউ আবার প্রথম, দ্বিতীয় এবং এমনকি তৃতীয় কেসেও বিন্দুবিসর্গ কিছুই দেখে না। কিন্তু লেগে থেকে চর্চা করে চোলে, একদিন না একদিন সবাই সরাসরি এই অভিজ্ঞতার অধিকারী হয়, তখন তারা বুঝতে পারে ব্যাপারটা স্রেফ কাকতালীয় নয়, অত্যন্ত বাস্তব কিছু একটা কাজ করছে এখানে।

অনেক সময় আমরা মনে করি কল্পনার দায়িত্বজ্ঞান বলতে কিছু নেই, যতো সব উদ্ভট আর অর্থহীন চিন্তা-ভাবনার জনক সে। কখনো সখনো তা সত্যি বটে। কিন্তু সুসংহত, সুসংগঠিত কল্পনাই জন্ম দেয় মহৎ শিল্পকর্মের। মানুষ তার সমাজের জন্যে যতো ভালো কাজ করেছে তার একটাও কল্পনার সাহায্য ছাড়া সম্ভব হতো না। অতীন্দ্রিয় কর্মকাণ্ডের ফলাফলও বিশেষ ভাবে ট্রেনিং পাওয়া কল্পনার ফসল। একজন। ছাত্র, প্রথম যখন সে অতীন্দ্রিয় জগতে বিচরণ করতে শুরু করে, তার মনে হয় যা সে দেখছে সবই স্রেফ তার কল্পনা। সেজন্যেই সাইকো-ওরিয়েন্টোলজিস্ট তাকে বলে, ‘থেমো না, কথা বলতে থাকো, যদি মনে হয় অনুমান করছে, তবুও থামতে নিষেধ করা হয় এই কারণে যে তার যুক্তিবাদী মন তার নিজের মানদণ্ডে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করার সুযোগ পেয়ে যাবে, দমিয়ে রাখবে অতীন্দ্রিয় ক্ষমতাটাকে, দৈনন্দিন জীবনে যা সে করে অভ্যস্ত।

প্রথম সাফল্য অর্জিত হলে ছাত্রটি জানতে পারে, যা সে দেখছে একে শুধু কল্পনা বলা যায় না। সে কল্পনা করছে, এবং মনে যে জিনিসটা প্রথম আসে তার ওপর আস্থা আর বিশ্বাস রাখতে শিখছে। এভাবেই অতীন্দ্রিয় অভিজ্ঞতার ফসল আসতে শুরু হয়।

এখানে আসলে কাজ করছে প্রকৃতির নিখুঁত আইন। মানুষের মন মানুষের মাথার ভেতর বন্দী নয়। সে বেরিয়ে আসে। তার এই বেরিয়ে আসাটা সুষ্ঠু এবং নির্বিঘ্ন করার জন্যে তাকে বাসনার দ্বারা উজ্জীবিত, বিশ্বাসের দ্বারা উৎসাহিত এবং প্রত্যাশার দ্বারা উদ্বেলিত করতে হবে।

প্রথম কেসে ছাত্রদের প্রত্যাশা খুব বেশি একটা থাকে না। তাকে যদি আদৌ জানানো হয়ে থাকে এবং সে যদি মুক্তমনের অধিকারী হয়, তাহলে তার ভালো করেই জানা আছে যে ই. এস. পি, বলে একটা ব্যাপার আছে, কিন্তু এতোদিন তাকে শেখানো হয়েছে ওটা আর কারো ক্ষমতা, তার নয়। কিন্তু এই ভুল যখন ভাঙে, প্রথমবার যখন সে সফল হয়, তখন তার প্রত্যাশী লাফ দিয়ে বেড়ে ওঠে, সমস্ত সংশয় কাটিয়ে উঠে রওনা হয়ে যায় নিজের পথে।

‘আমি তো দেখছি, ছাত্র-ছাত্রীরা প্রায়ই রোগ ধরতে পারছে,’ লিখেছেন মিড নাইটের বিল স্টার। তাঁর প্রবন্ধটার নাম ছিলো, “মাইও কন্ট্রোল ক্লাসেস ক্যান ইমপ্রুভ ইওর মেন্টাল পাওয়ার”। এই প্রবন্ধে একটা কঠিন কেসের কথা বর্ণনা করেছেন তিনি। ঘটনার সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন। তিনি বা আর কেউ রোগটা কি তা জানতেন না। তাঁর ধারণা ছিলো, এই কেসের উপসর্গ দেখে রোগ নির্ণয় করা অত্যন্ত কঠিন হবে।

এর আগে, সেদিনই সকালে, মি. থমাস নামে একজন ছাত্র তাঁর ছেলেকে দেখার জন্যে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। কামরায় আরেকজন রোগী ছিলো। মি. থমাস এই রোগীর নাম ছাড়া আর কিছুই জানতে পারেননি।

সাইকিক অপারেটর সেই রোগী সম্পর্কে কি কি জানতে পারে, এখানে তার বিবরণ দেয়া হলো।

১। কেসের ডান পা এক রকম বলতে গেলে প্যারালাইজড হয়ে গেছে।

২। হাত আর কাঁধ আড়ষ্ট।

৩। পিছনের কয়েকটা হাড় ক্ষয়ে গেছে, সম্ভবত কোনো রোগ হয়েছিল।

৪। কেসের গলায় ঘা আছে।

৫। পেটে জ্বালা-পোড়া হয়।

৬। সে সাড়ে পাঁচ ফিট লম্বা। একশো পাঁচ পাউণ্ড ওজন।

হাসপাতালে ফিরে এলেন মি. থমাস। এখানে এসে রোগী আর তার ডাক্তারের সাথে কথা বলে তিনি জানতে পারলেন, রোগী ছোটোবেলায় একবার পোলিও-য় আক্রান্ত হয়েছিল। একবার হুইল চেয়ার থেকে পড়ে গিয়ে শিরদাঁড়া আর ডান কোমরে আঘাত পেয়েছিল। আর সব ব্যাপারেও সাইকিক অপারেটর যা যা বলেছে, সব ঠিক–শুধু গলার ক্ষত আর পেটে জ্বালা-পোড়া বাদ। ওগুলো মি. থমাসের ছেলের রোগ।

প্রথমদিকে এই রকম ছেটোখাটো ভুল-ভ্রান্তি হয়ে থাকে। তার জন্যে ঘাবড়াবার কিছু নেই। চর্চা করতে করতে লক্ষ্যভেদে নৈপুণ্য এসে যায়, তখন আর টার্গেট মিস হয় না।

আরো চর্চা করার পর সাইকিক অপারেটর শুধু মানুষের রোগ নয়, যে কোনো বস্তুর বৈশিষ্ট্য বা তার অবস্থানও নির্ণয় করতে পারবে।

ডিক মাজা, নিউইয়র্কের একজন অভিনেতা-গায়ক। লেখক এবং প্রকাশকদের পাণ্ডুলিপি টাইপ করে দিয়ে কিছু উপরি রোজগার করে সে। একদিন একটা সর্বনাশ ঘটে গেল, অত্যন্ত মূল্যবান একটা পাণ্ডুলিপি হারিয়ে ফেললো সে। উদভ্রান্তের মতো সম্ভাব্য সব জায়গায় খুঁজলো, কিন্তু পাণ্ডুলিপি পাওয়া গেল না। একজন ছাত্রের সাথে পরিচয় ছিলো তার, উন্মাদের মতো চেহারা নিয়ে হাজির হলো তার কাছে। সমস্যাটা কি শোনার পর ছাত্রটি তাকে সাহায্য করতে রাজি হলো।

রিহার্সেল দেয়ার জন্যে ছোটো একটা চার্চ অডিটোরিয়ামে ঢুকেছিল সে, মনে আছে ঢোকার সময় পাণ্ডুলিপিটা তার হাতেই ছিলো। ওই সময় যুবকদের একটা দল বেরিয়ে যাচ্ছিলো চার্চ থেকে, গ্র্যাজুয়েশন এক্সারসাইজের জন্যে এসেছিল তারা। পাণ্ডুলিপিটা ছিলো একটা সাদা এনভেলাপের ভেতর, এনভেলাপে ডিকের নাম ঠিকানা লেখা ছিলো, আর চার অক্ষরের একটা শব্দ–আর-ইউ-এস-এইচ।

ছাত্রটির পরামর্শদাতাদের মধ্যে একজন, মহিলাটি, ছিলেন বোবা। হ্যাঁ এবং না সূচক ভঙ্গিতে মাথা দোলাতেন তিনি, মাঝে মধ্যে আকার-ইঙ্গিতে মনের ভাব প্রকাশ করতেন। পুরুষ পরামর্শদাতা ভদ্রলোক প্রয়োজনে এই সব আকার-ইঙ্গিতের ব্যাখ্যা করে দিতেন। তিনি নিজে তো পরামর্শ দিতেনই।

ডিকের বর্ণনা অনুযায়ী পাণ্ডুলিপিটা মনের পর্দায়, ল্যাবরেটরীতে চাক্ষুষ করলো ছাত্রটি। বিরাট একটা ডেস্ক দেখতে পেলো সে, ডেস্কের ওপর অগোছাল হয়ে রয়েছে। রাজ্যের কাগজ-পত্র, সেই কাগজপত্রের স্তূপে পড়ে রয়েছে ডিকের পাণ্ডুলিপি।

পাণ্ডুলিপিটা ওখানে কি নিরাপদ?” তার মহিলা পরামর্শদাত্রীকে জিজ্ঞেস করলো ছাত্র।

মহিলা নিঃশব্দে মাথা কাত করে জানালেন, হ্যাঁ।

যারা আজ গ্র্যাজুয়েশন এক্সারসাইজের জন্যে চার্চে গিয়েছিল, পাণ্ডুলিপিটা কি তাদের কারো কাছে রয়েছে?

না।

ওই ডেস্কটা কি চার্চে?

না।

পাণ্ডুলিপিটা কি অচিরেই ফেরত দেয়া হবে?

হ্যাঁ।

পাণ্ডুলিপিটা এখন কার কাছে রয়েছে?

মহিলা পরামর্শদাত্রী হাত তুলে ছাত্রটিকে দেখালো।

আমার কাছে আছে? ভুরু কুঁচকে জানতে চাইলো ছাত্র।

না।

ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করার জন্যে এবার এগিয়ে এলেন পুরুষ পরামর্শদাতা। উনি বলতে চাইছেন, পাণ্ডুলিপিটা আপনার বয়েসী একজন ভদ্রলোকের কাছে আছে। ভদ্রলোক এক যুবতী মেয়েকে নির্দেশ দেন, তার সব কাগজ-পত্র যেন তুলে নিয়ে গিয়ে অফিসে রাখা হয়, কারণ ছাত্রদেরকে সাথে নিয়ে তিনি অন্য এক জায়গায় চলে যাচ্ছেন। যুবতী মেয়েটি তার সব কাগজপত্রের সাথে ভুল করে পাণ্ডুলিপিটাও তুলে নিয়ে গেছে। ভদ্রলোকের ডেস্কে রয়েছে সেটা, দেখতেই পাচ্ছেন। চিন্তার কিছু নেই, ভদ্রলোক ওটা দেখলেই ডিকের কাছে ফেরত পাঠাবেন।

দু’দিন পর চার্চের ওই শিক্ষক ভদ্রলোক ডিককে টেলিফোন করলেন। পাণ্ডুলিপিটা কিভাবে তাঁর অফিসের ডেস্কে এলো, ডিককে তিনি ব্যাখ্যা করে বোঝালেন। তাঁর ব্যাখ্যা আর ছাত্রটির পরামর্শদাতার ব্যাখ্যা, দুটোর মধ্যে কোনো অমিল খুঁজে পাওয়া গেল না।

.

কারো কারো মতে, এ-ধরনের কেস নিয়ে কাজ করে যে রেজাল্ট পাওয়া যায় সেটা পর্যালোচনা করলে কারো বুঝতে বাকি থাকার কথা নয় যে গোটা ব্যাপারটাই আসলে থট ট্রান্সফারেন্স।

তাই কি?

এর আগে উদাহরণ হিসেবে যে কেসটা ব্যবহার করেছি–যার একটা ফুসফুস ছিলো না-ওটা একটা বাস্তব কেস ছিলো। আপনি নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, সাইকিক অপারেটর ভাঙা গোড়ালির কথা বললেও, সাইকো ওরিয়েন্টোলজিস্ট তাকে জানালো, গোড়ালি সম্পর্কে এখানে তার কাছে কোনো তথ্য নেই।

পরে, যার কেস নিয়ে পরীক্ষা চালানো হচ্ছিল, তার সাথে যোগাযোগ করে জানা যায়, বেশ অনেক বছর আগে সে তার গোড়ালি ভেঙে ফেলে, ঠাণ্ডার দিনে খুব কষ্ট দেয়। এই ভাঙা গোড়ালি। থট ট্রান্সফারেন্স? থট ট্রান্সফারেন্স বলতে সাধারণত আমরা যা বুঝি, সে অর্থে নয়। ওরিয়েন্টোলজিস্টের মাথায় চিন্তাটা ছিলো না, কারণ ভাঙা গোড়ালি সম্পর্কে কিছুই জানতো না সে। এবং ঠিক সেই মুহূর্তে কেসের মনেও চিন্তাটা ছিলো কিনা সন্দেহ আছে।

আপনি প্রতিবাদ করে বলতে পারেন, লোকটার মনে চিন্তাটা হয়তো ছিলো। হ্যাঁ, হয়তো।

আরেকটা কেস। এক ছাত্র কেসটা নিয়ে কাজ করার সময় জানালো, এক মহিলার কনুইয়ে একটা দাগ রয়েছে, ওখানে হাড় ফেটে যাওয়ায় দাগটা হয়েছে। ওরিয়েন্টো লজিস্টের কাছে এ-বিষয়ে কোনো তথ্য ছিলো না, তাই মহিলার সাথে যোগাযোগ করতে হলো তাকে। মহিলা তাকে জানালো, না, কনুইয়ে তিনি কখনো ব্যথা পাননি। এর দিন কয়েক পর মহিলা ব্যাপারটা তার মাকে জানায়। মা তখন বললেন, হ্যাঁ, ছোটোবেলায়, তিন বছর বয়সে, পড়ে গিয়ে কনুইয়ে ব্যথা পেয়েছিল সে। এ কি থট ট্রান্সফারেন্স?

পরীক্ষায় দেখা গেছে, বড়দের চেয়ে ছোটোদের অতীন্দ্রিয় ক্ষমতা বেশি। বিটা লেভেলে কি সম্ভব তার একটা সীমা দেয়া আছে। এই সীমা গ্রাহ্য করার মধ্যে ছোটোরা নেই। বিটা লেভেলে যেটাকে অসম্ভব বলে মনে করা হয়, ছোটোরা সেটাকে নিঃসংশয়ে সম্ভব বলে বিশ্বাস করে বসে থাকে। তাছাড়া, বাস্তবতা সম্পর্কে তাদের চেতনা এখনো এতোটা প্রখর হয়নি যে শুধুমাত্র যুক্তিসঙ্গত ব্যাপারগুলো বিশ্বাস করবে।

এখানে একটা এক্সপেরিমেন্ট সম্পর্কে বলা হলো।

দুই বাচ্চা, টিমি আর জিমি। মূল অনুশীলনগুলো চর্চা করানো হয়েছিল ওদেরকে। দু’জনকে দুটো আলাদা ঘরে রাখা হলো, প্রত্যেকের সাথে থাকলো একজন পরীক্ষক, যাকে ওরিয়েন্টোলজিস্ট বলা হয়। জিমিকে বলা হলো, নিজের লেভেলে চলে গিয়ে তার যা খুশি, কল্পনার সাহায্যে কিছু একটা তৈরি করুক।

ওদিকে, আরেক কামরায়, টিমিকে বলা হলো, নিজের লেভেলে চলে গিয়ে কল্পনার সাহায্যে দেখো তো, জিমি কি তৈরি করছে।

জিমি তার পরীক্ষককে বললো, ‘আমি ছোটো একটা ট্রাক তৈরি করছি। ট্রাকের বডির রঙ সবুজ, চাকার রঙ লাল।

টিমির পরীক্ষক জানতে চাইলো, বলোতো, টিমি, জিমি কি তৈরি করছে?

জিমি? ও তো একটা ট্রাক তৈরি করছে।

তাই? বেশ বেশ। ট্রাকটা কি রকম দেখতে হচ্ছে, বলতে পারবে?

হ্যাঁ। ট্রাকের শরীরটা সবুজ রঙের, চাকাগুলো লাল।’

মন-নিয়ন্ত্রণ শেখার ক্লাসে বড়দের নিয়ে পরীক্ষা চালাবার সময় যে লেভেল ব্যবহার করা হয় এই লেভেল তার চেয়ে অনেক বেশি সূক্ষ্ম এবং গভীর। ছোটোদের। মতো গভীর স্তরে যেতে হলে বড়দের অনেক চর্চা দরকার হয়।

.

এবার একটা কেস বা সাবজেক্ট নিয়ে কাজ করার অনুশীলন। এখানে শুধু স্বাস্থ্য সমস্যা চিহ্নিত করা হবে। নিচের অনুশীলনটা ওরিয়েন্টোলজিস্টের জন্যে দেয়া হলো। যারা সাইকিক ইনভেস্টিগেশন শিখতে চায়, এই পদ্ধতিতে তাকে শিখতে সাহায্য করবে সে। যারা শিখতে চায় তাদেরকে সাইকিক অপারেটর বলা হয়।

ক-১। তিন–এক বা দশ–এক পদ্ধতির সাহায্যে তোমার লেভেলে এবং তোমার ল্যাবরেটরীতে চলে যাও তুমি।

২। এর আগে কোনো কেস বা সাবজেক্ট নিয়ে যদি নিখুঁত আর সঠিকভাবে কাজ করে থাকো, নতুন একটা কাজে হাত দেয়ার আগে সেই ঘটনাটা ভালো করে পর্যালোচনা করে নাও।

৩। তুমি তৈরি হলে, আমাকে জানাবে তৈরি হলে, কাজ শুরু করো।)।

৪। একটু পরই তোমাকে আমি একটা সাবজেক্ট সম্পর্কে তথ্য এবং সমস্যা দেবো। নিখুঁত এবং সঠিক উত্তর দিতে হলে নির্দিষ্ট একটা লেভেলে পৌঁছুতে হবে তোমাকে। সেখানে পৌঁছুবার জন্যে তোমাকে সময় এবং সুযোগ দেয়ার উদ্দেশে দশ থেকে এক পর্যন্ত গুণবো আমি। ১০-৯-৮-৭-৬-৫-৪-৩-২-১। এই নির্দিষ্ট লেভেলে তোমার মন এখন নিজেকে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। একটু পরই তোমাকে আমি একটা সাবজেক্ট সম্পর্কে তথ্য এবং সমস্যা দেবো, এই লেভেল থেকে তুমি নিখুঁত এবং সঠিক উত্তর দিতে পারবে।

খ- ১। আমি তিন পর্যন্ত গুণলে তোমার পর্দায় সাবজেক্টের নাম, বয়স, ঠিকানা, লিঙ্গ উল্লেখ করুন) প্রতিবিম্ব পড়বে।

২। ১-২-৩ (ঝট করে আঙুল খাড়া করুন)। তোমার পর্দায় সাবজেক্টের (নাম, বয়স, ঠিকানা, লিঙ্গ) প্রতিচ্ছায়া পড়েছে।

৩। ওটাকে অনুভব করো, (বিরতি) উপলব্ধি করো, (বিরতি) চাক্ষুষ করো, {বিরতি) কল্পনা করো, (বিরতি) তৈরি করো, (বিরতি) জানো সে ওখানে আছে, নিঃসন্দেহে ধরে নাও সে ওখানে আছে।

৪। তোমার বুদ্ধিমত্তা দিয়ে শরীরটা তন্ন তন্ন করে পরীক্ষা করো। তুমি জানো মাথাটা কোথায় থাকতে পারে, সেখান থেকে শুরু করো। তুমি জানো না কোথায় থাকতে পারে, সেখানে পৌঁছে শেষ করো। এইভাবে, একবার, দুবার, অনেক বার প্রতি সেকেণ্ডে একবার করে।

৫। এই ভঙ্গিতে শরীরটা তন্ন তন্ন করে পরীক্ষা করার সময়, বিশেষ ভাবে আকৃষ্ট করে এই রকম তিনটে অংশ নির্বাচন করো (বিরতি)।

৬। প্রতি সেকেওে একবার করে শরীর পরীক্ষা করার কাজটা চালিয়ে যাও, এবং বিশেষ ভাবে যে অংশগুলো তোমাকে আকৃষ্ট করছে জানাও আমাকে (বিরতি)।

৭। এটা একটা প্র্যাকটিস সেসন। তুমি যা উপলব্ধি আর অনুভব করছে, সব বেরিয়ে আসতে দাও।

৮। তোমার হয়তো মনে হতে পারে, সব নিজে থেকে বানাচ্ছো, তবু তোমার মাথায় যা আসে সব বলো আমাকে।

(এই পর্যায়ে সাইকিক অপারেটরকে কথা বলার জন্যে সব রকম উৎসাহ দিয়ে যান। তিনটে অংশ নির্বাচিত হওয়ার পর আবার শুরু করুন।)।

গ-১। আকৃষ্ট করছে এই রকম তিনটে অংশের ওপর সমস্ত মনোযোগ ঢেলে দাও এবার। এই তিনটে অংশ প্রতি সেকেণ্ডে একবার করে তন্ন তন্ন করে পরীক্ষা করো। এই তিনটের যে অংশটা সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করে সেটাকে চিহ্নিত করো।

(একটা অংশ চিহ্নিত করা হয়ে গেলে, তারপর আবার শুরু করুন।)

২। চিহ্নিত করা অংশটাকে প্রতি সেকেণ্ডে একবার তন্ন তন্ন করে পরীক্ষা করো। এই অংশের কোন বিশেষ জায়গাটা তোমাকে টানছে লক্ষ্য করো। সেই জায়গাটা চিহ্নিত করো।

(জায়গাটা চিহ্নিত করা হয়ে গেলে, তারপর আবার শুরু করুন।)

৩। নির্বাচিত এই জায়গাটা নিজের সুবিধে মতো আকারে বড় করে নাও। এই জায়গায় যদি কোনো ত্রুটি বা অসুবিধে থাকে, তোমার মনকে বলো সেটা যেন ধরতে পারে, চিহ্নিত করতে পারে। মনে রেখো, সমস্যাগুলো একবার ধরতে পারলে সেগুলো তুমি সমাধান করতে পারবে।

৪। তদন্ত চালিয়ে যাও, সেই সাথে কথাও বলতে থাকো। তোমার যা বলতে ইচ্ছে করে, সব বলো আমাকে। কোনো কথা, তা যতোই হাস্যকর আর অপ্রাসঙ্গিক হোক, চেপে রেখো না। তোমার হয়তো মনে হচ্ছে, যা বলতে চাইছে তা সবই তোমার নিছক কল্পনা, বাস্তব নয়। আসলে, ঠিক এই অনুভূতিটাই তোমার হওয়ার কথা আর দরকার। সত্যি-মিথ্যে, আসল-নকল, ভুল-নির্ভুল–এসব ভাবতে যেয়ো না। তোমার মনে যা আসছে তাই বলো আমাকে।

(ওরিয়েন্টোলজিস্টের উদ্দেশে কয়েকটা কথাঃ তথ্যগুলো অধিবেশনের আগেই আপনাকে লিখে রাখতে হবে। শুরুতে যাই বলুক সাইকিক, আরো বলতে উৎসাহ দিন তাকে। সম্পূর্ণ রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত ভালো বা মন্দ কিছুই বলবেন না। সম্পূর্ণ। রিপোর্ট পাবার পর, সাইকিক বিটা লেভেলে উঠে আসার আগেই তার সাথে আপনার লেখা তথ্য এবং তার আবিষ্কার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করুন। যে কটা বিষয়ে সঠিক উত্তর দিতে পেরেছে সে সেগুলোকে এক একটা রেফারেন্স পয়েন্ট হিসেবে গণ্য করতে হবে। একটা করে সঠিক উত্তর বেছে নিন, এবং সাইকিককে বলুন, এই উত্তরটি দেয়ার সময় তার যেসব অনুভূতি হয়েছিল সেগুলো আবার একবার অনুভব করুক সে, অর্থাৎ ঘটনাটির আবার একবার পুনরাবৃত্তি করুক সে। এবার তার ভুল গুলো সম্পর্কে। তার উত্তর সঠিক হয়নি, সরাসরি এ-কথা বলার দরকার নেই। বলবেন, এ-ব্যাপারে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই, তোমার কথা ঠিকও হতে পারে। আর, প্রতিটি উত্তরই যদি ভুল হয় বা আপনার লেখা তথ্যের সাথে না মেলে, মনে করতে হবে সাইকিক অন্য কোনো লোককে পরীক্ষা করেছে। সেক্ষেত্রে অন্য একটা কেস নিয়ে আবার নতুন করে অধিবেশন বসা দরকার। যে-সব সমস্যা চিহ্নিত করতে পারবে সাইকিক, তাকে দিয়ে সেগুলো সংশোধন করিয়ে নিতে যেন ভুল না হয়। এই কাজ বিটায় উঠে আসার আগেই করতে হবে তাকে। তাকে বলবেন, তোমার মনের পর্দায় লোকটার সুস্থ, সবল এবং হাসিখুশি ছবি দেখতে ভুলো না। মনে মনে কামনা করো এবং বলো, তুমি সুস্থ থাকো, সবল থাকো, আনন্দে থাকো। নিচের কথাগুলো সাইকিককে বলতে হবে জোর গলায়, অধিবেশন শেষ করার আগে।)

ঘ-১। মানবাত্মার কল্যাণের উদ্দেশ্য নিয়ে যখনই তুমি মনের এই গভীর স্তরে নেমে আসবে, এখন যেমন এসেছে, তখনই তোমার নিজেকে সাহায্য করা হবে। তোমার মেধা উত্তরোত্তর বাড়তে থাকবে, এবং প্রতিবার আরো বেশি সঠিক হবে তোমার উত্তর। আজকের অধিবেশন এখানেই শেষ হতে যাচ্ছে।

২। ধন্যবাদ। এবার তুমি বিটা লেভেলে উঠে আসতে পারো। ১-২-৩-৪-৫ ৬-৭-৮-৯-১০। সম্পূর্ণ সজাগ অবস্থায় জেগে উঠেছো তুমি। আগের চেয়ে তাজা এবং ঝরঝরে, সুস্থ এবং সবল লাগছে নিজেকে তোমার। তোমার চোখে, কানে বা মাথায় কোনো অসুবিধে নেই। তোমার শরীরে কোথাও কোনো ব্যথা নেই। তুমি আগের চেয়ে ভালো আছো।

বিশেষ কয়েকটি নীতি

১। এই পদ্ধতিতে রোগ নির্ণয় করে তা ভালো করার জন্যে ওষুধ দেয়া হয় না। সে অধিকার এবং লাইসেন্স শুধু পাস করা ডাক্তারদেরই আছে। এই পদ্ধতিতে দূর থেকে সাইকিক তদন্ত পরিচালনা করা হয়, অস্বাভাবিক কিছু থাকলে তা চিহ্নিত এবং দূর করার জন্যে ব্যবহার করা হয় সাইকিক পাওয়ার।

২। এই পদ্ধতিতে একজন লোকের উপস্থিতিতে তার ওপর সাইকিক তদন্ত চালানো হয় না।

৩। এই পদ্ধতি চর্চার সময় যাঁরা উপস্থিত থাকেন কেন্স হিসেবে তাঁরা নিজেদের নাম উপস্থাপিত করতে পারেন না।

৪। এই পদ্ধতি যাঁরা চর্চা করেন তাঁরা সমস্যা সৃষ্টি করেন না, সমস্যা সমাধান করেন।

৫। একজন লোক যখন তার গভীর লেভেলে রয়েছে, তাকে নেতিবাচক বা না সূচক সাজেশন দেয়া সম্পূর্ণ নিষেধ।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *