১১. আট লাখ হিরে শ্রমিকের দেশ—এই ভারত
উইপোকা আর লাল কাঁকড়া বিছে পাহারা দিয়ে চলেছে হিরের যে খনি অঞ্চল, তা নিয়ে আরও কথা বলতে ভুলেই গেছিল কুশলী বক্তা রবি রে। মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ লাইনটাই তো বকমবাজদের লাইন-আজকাল অবশ্য মেয়েরাও এই লাইনে লাইন দিয়ে নামছে। ছেলেদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নাম-টামও করে ফেলেছে। কেন না, সুধী ব্যক্তি মাত্রই জানেন, ঈশ্বর মহোদর নারীজাতিকে জিহ্বা সঞ্চালনের ক্ষমতা কিঞ্চিৎ অধিক দিয়েছেন, সেই সঙ্গে দিয়েছেন কণ্ঠস্বরের তীক্ষ্ণতা। বুদ্ধিমত্তার ক্ষিপ্রতা এর সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ায় দশভুজা হতে পারে শুধু তারাই…
যাচ্চলে, আবার কল্পনা-কাহিনিতে চলে আসছি নাকি? যত নষ্টের গোড়া অবশ্য সেই সবুজময়না—কিন্তু তার আগে আরও কিছু বলে নেওয়া যাক…, যা-যা জেনেছিলাম মহা ডানপিটে রবি রে’র পেট থেকে…
হিরের খনির ভেতরে হাঁটতে হাঁটতে হেঁট হয়েছিল বলে ধমক খেয়েছিল রবি রে। তারপর কি হয়েছিল, সে প্রসঙ্গে আর না গিয়ে চলে এসেছিল এই পৃথিবীর ডায়মণ্ড বাজারে হৃৎপিণ্ড যেখানে, সেইখানে-অ্যান্টওয়ার্প রেলরোড স্টেশনের পাশের তিনটে রাস্তায়-কালাহারির কথা আধাখাচড়া রেখে দিয়ে এমন একটা জায়গায়—হিরে যেখানে উড়ছে। খনি থেকে তোলা এবড়ো-খেবড়ো অতিশয় অসুন্দর। হিরেদের শতকরা আশিভাগের লেনদেন হচ্ছে সরু সরু তিনটে রাস্তায় আর এই বিশাল হিরে বাজারের শাখা প্রশাখা ছড়িয়ে রয়েছে বিশ্বের অন্য অন্য শহরেও।
আমি প্রকৃতই জ্ঞান বুভুক্ষুর মতো জানতে চেয়েছিলাম, রবি, সে শহরগুলো কোথায় রে?
নিউইয়র্কে, লণ্ডনে, তেল আভিভে, আর বোম্বাইতে।
বোম্বাইতে!
অপেরা হাউস ডিসট্রিক্টে কখনও যাসনি?
সেটা কোথায়?
বোম্বাইতে।
বম্বে যে একটা ডায়মণ্ড সিটি, আমার তা অজানা ছিল না। এত বুক নয় এই ইন্দ্রনাথ রুদ্র। বম্বে একা এখন আর ডায়মণ্ড সিটি নয়, এই গৌরব ছড়িয়ে পড়েছে ইণ্ডিয়ার অন্য অন্য শহরেও।
যেমন, ব্যাঙ্গালোরে।
ব্যাঙ্গালোরের সুনাম অনেক দিক দিয়ে। ছিল গার্ডেন সিটি, হল আইটি সিটি, এখন শুতে চলেছে ডায়মণ্ড সিটি…শুধু একজনের উদ্যমে। তার নাম শ্রীযুক্ত রবি রে। এত লম্বা কাহিনি সেই কাহিনিরই ভূমিকা।
রবি অনেকদিন ধরেই স্বপ্ন দেখেছিল, এই পৃথিবীর সেরা সম্পদ নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে, ভারতকে আবার সেই রত্নময় ভারতের জায়গায় নিয়ে যাবে।
বাঙালির ব্রেন যখন খেপে ওঠে, তখন সে পারে না, এমন কিছু নেই। ওষুধ বিক্রির সুযোগকে হাতিয়ার করে ও ঢুকে গেছিল হিরের জগতে…এই ভারতের হীরক দুনিয়ায়…যে দুনিয়ায় আট লাখ শ্রমিক নানা শহরে বসে আকাটা হিরে কেটেকুটে খাসা হিরে বানিয়ে চলেছে…সাইজে এক ক্যারাটের কম হলেও ঝকমকে হিরের কণা বের করেছে…রমণীর নাকের জেল্লা বাড়িয়ে দিচ্ছে…ফলে, শুধু নাক নেড়েই কেল্লা মেরে দিচ্ছে মেয়েরা। ‘
মূলে রয়েছে আট লাখ হিরে কারিগর!
আমি হাঁ হয়ে গেছিলাম রবিব হিম্মৎ কাহিনি শুনে। কি অসাধারণ বুকের পাটা। যে বাজারে গুজব ভাসছে হাওয়ায়, যেখানে হিরের দাম ঠিক হয়ে যায় শুধু চোখের ইশারা আর একটি মাত্র হিব্রু শব্দ উচ্চারণের মধ্যে দিয়ে, সেই বাজারে বাংলার ছেলে জাঁকিয়ে বসেছিল শুধু ব্রেন আর ব্যক্তিত্ব খাটিয়ে।
আমি আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করেছিলাম, হিব্রু শব্দটা কী রে?
মজল।
মা-মানে?
গুড লাক।
সিক্রেট শব্দটা ডায়মণ্ডের সমতুল্য। একটু-আধটু ব্যতিক্রম ব্যতিরেকে, ডায়মণ্ড মহোদয়রা কক্ষনো জানতে দেয় না কোন ডায়মণ্ড কোন খনিতে আবির্ভূত হয়েছিল। চেহারা দেখে চেনা যায় না। কোন মুলুকের মাল। চেহারা দেখে চরিত্র বুঝতে হবে-জন্মস্থান জানা যাবে না। পাকেও তো পদ্ম ফোটে।
রবি রে ওর ডায়মণ্ড চক্ষুর নৃত্য দেখিয়ে বলেছিল, মাই ডিয়ার ইন্দ্রনাথ রুদ্র, ওই যে একটা কথা আছে না, স্ত্রীয়াশ্চরিত্রম দেবা ন জানস্তি, ডায়মণ্ডদের ক্ষেত্রে কথাটা খাটে। জলুস দেখে কেউ বলতে পারবে না–কোন মুলুকের মাল। তুই তো সূত্রান্বেষী ইন্দ্রনাথ রুদ্র–
ক্ষীণ স্বরে বলেছিলাম, মৃগাঙ্ক থাকলে তোর এই বিশেষণটা লুফে নিত।
বাগড়া পেয়ে থমকে গিয়ে চোখ পাকিয়ে রবি বলেছিল, কোন বিশেষণটা?
সুত্রান্বেষী। একদা আমাকে ছিদ্রান্বেষী বিশেষণ দিয়ে একখানা জম্পেস গল্প বানিয়েছিল। সূত্রান্বেষী…সূত্রান্বেষী…গুড অ্যাডজেক্টিভ।
বিরক্ত হয়েছিল রবি। এটা আমার ইচ্ছাকৃত। কথার টানা স্রোতকে হঠাৎ হঠাৎ ঘুলিয়ে দিতে হয়। আচমকা আচমকা বাগড়া পড়লে অনেক অনিচ্ছার কথা ফুসফাস করে বেরিয়ে আসে। চতুর পাঠক এবং চতুরা পাঠিকা, আপনারা এই টেকনিক বাস্তব জীবনে কাজে লাগিয়ে দেখতে পারেন। রতিপতির বাণ যখন মানব মনকে শিথিল করে দেয়, তখন এইভাবে আলটপকা ঢিল মেরে দেখতে পারেন-অনেক কদর্য কাহিনি বেরিয়ে এলেও আসতে পারে। এই জগতের যারা মাতাহারি, তারা জানে এই গুপ্ত কৌশল। জানে কল্পনা চিটনিস…।
যাচ্চলে, ঘুরে ফিরে সবুজনয়না ফের চলে এসেছে লেখনী অগ্রে…
এবার টেনে কলম চালাচ্ছি। শী বলছিলাম? ও হ্যাঁ, হিরে দেখে অতি ওস্তাদ জহুরিও বলতে পারে না, ধরণীর কোন খনন ভূমিতে ঝিকিমিকি পাথরটির প্রথম আবির্ভাব ঘটেছে। আদিভূমি অজানা থেকে গেলেও হিরের টুকরোর সার্টিফিকেট দিতে কসুর করে না ডায়মণ্ড এক্সপার্টরা। লক্ষ কোটি হিরে-পাথর এই মুহূর্তে পাইপলাইন দিয়ে স্রোতের আকারে বয়ে চলেছে, অথচ তাদের প্রত্যেকেই উৎসবিহীন। এবড়ো-খেবড়ো আকৃতি ঝেড়ে ফেলে ঝকঝকে চকমকে হয়ে উঠছে, কিন্তু কোনমতেই জানতে দিচ্ছে না ধরণীর কোন কোণ থেকে তারা এসেছে।
উৎস অজানা, কিন্তু ঔৎসুক্য কারোরই কম থাকেনি। অ-রূপ পাথরটাকে রূপময় করে তোলার ব্যাপারে। সার্টিফিকেট না পেলে বুনো পাথরে দাম চড়বে কী করে? স্বপ্নাচ্ছন্নের মতো রবি বলে গেছিল এবড়ো-খেবড়ো অতি কদাকার একখানা পাথরকে মেজে ঘষে কেটে কুটে কীভাবে ৫৮ দিকওয়া হিরে বানানো হচ্ছে। এ দৃশ্য দেখবার সৌভাগ্য ওর হয়েছিল নিউইয়র্কে—মানহাট্টান ডিসট্রিক্টের ঠিক মাঝখানে—কড়া পাহাবায় রাখা ওয়ার্ক রুমে এক অপরাহ্নে। হিরে কারিগর ঘুরিয়ে যাচ্ছিল একটা চাকা–পুরনো দিনের গানের রেকর্ড গ্রামোফোনের ওপর বাই বাই করে ঘুরত যেভাবে—সেইভাবে। ঘুরন্ত চাকায় তেল আর হীরক-চূর্ণের আস্তরণ…কুমোরের চাকা ঘুরছে বলে মনে হয়েছিল রবির…বাংলার ছেলে তো…হিরে-কারিগরের সঙ্গে কুমোরের মিল খুঁজে পেয়েছিল মনের মধ্যে…মিল থাকার কারণও ছিল যথেষ্ট…এক তাল মাটিকে যেমন টিপে টুপে মূর্তির অবয়ব ইত্যাদি এনে দেয় কুমোর, প্রায় সেই একই পন্থায় হিরে-কারিগর আকাটা হিরেকে কেটেকুটে খাসা হিরে বানাচ্ছে…একপাশের ফ্ল্যাম্পে আটকানো রয়েছে অধরা হিরে…দু’মাস ধরে সাজাচ্ছে বদখৎ বৃহৎ হীরকখণ্ডকে—খনি থেকে যখন এসেছিল কাটাই-ঘরে, তখন সেই হিরে ছিল অস্বচ্ছ, অর্ধ-আয়তাকার একটা চাই…একপ্রান্ত আর এক প্রান্তের চেয়ে থ্যাবড়া…
অস্বচ্ছ? এই পর্যন্ত শুনে আমি মুখ খুলে ফেলেছিলাম, হিরে আবার অস্বচ্ছ হয় নাকি?
হয় বন্ধু, হয়। ভেতরের ত্রুটি চেপে রেখে দেওয়ার জন্যেই হীরকজননী সত্তানতুল্য হিরেকে ঈষৎ ধোঁয়াটে রেখে দেয়।
ধোঁয়াটে হিরে!
আজ্ঞে। মনে হয় যেন এক তাল কুয়াশা জমাট হয়ে রয়েছে ভেতরে। ঘুরন্ত সেই হিরোকে কয়েক মিনিট অন্তর চোখের সামনে তুলে ধরে অন্তর্ভেদী চোখে চেয়ে থাকে হিরে-কাটিয়ে…আমি যাকে দেখেছি, এ ব্যাপারে তার মতো ওস্তাদ খুবই কম আছে এই দুনিয়ায়…তিরিশ বছর ধরে শুধু হিরে কাটছে…কাটছে…কাটছে। যে হিরেটাকে দেখেছিলাম গ্রামোফোন ডিস্কের মতো চাকার ওপর ঘুরতে, সেটার পিছনে লেগেছিল মাস দেড়েক…একখানা হিরে কাটতে দেড় মাস।
বিড় বিড় করে বলেছিলাম, সাধারণ হিরে নিশ্চয় নয়।
একেবারেই নয়। সত্যিই অসাধারণ। জীবনে এমন হিরে আমি দেখিনি, ইন্দ্র। আর আমাকে তা দেখানোর জন্যে, আমার চোখ তৈরি করার জন্যে—দেওয়া হয়েছিল দুর্লভ এই সুযোগ।
যোগ্য বলেই প্রশংসাটা করেছিলাম অন্তর থেকে। রবি রে অকারণে রবি রশ্মি হয়নি। হীরক রশ্মির জগতে ও দুম করে চলে আসেনি। জীবন বিপন্ন করে দেখেছে, অন্তরশক্তিকে জাগ্রত করেছে-তবেই না, অধুনা ব্যাঙ্গালোরের ডায়মণ্ড কমপ্লেক্সের জনক হতে পেরেছে। হৃদয়জাত শক্তি দিয়ে চিনেছে পৃথীজাত পাথরকে…
কিন্তু চিনতে পারেনি ত্রাটক যোগসিদ্ধা কল্পনা চিটনিসকে।
দম নিয়ে ফের শুরু করেছিল রাব—এই যে দিনের পর দিন একটা মাত্র হিরে পাথরকে অনবরত মেজে ঘযে কেটেকুটে যাওয়া,এর মধ্যে আসল আর্টটা কি জানিস?
অপচয় যাতে কম হয়, আলটপকা বলে দিয়েছিলাম আমি।
দ্যাটস রাইট; খুশি উপচে পড়া চোখে বলেছিল রবি রে, কাটতে গিয়ে, পালিশ করতে গিয়ে যেন বেশি হিরে ধুলো হয়ে না যায়—
টুক করে জিজ্ঞেস করেছিলাম, সেই ধুলো থেকে কি হিরে ভস্ম তৈরি হয়?
হিরে ভস্ম!
যা খেয়ে নাকি নবাব-বাদশারা হারেম ম্যানেজ করে যেত।
স্টুপিড! হচ্ছে হিরে-কথা, চলে গেল হারেমে। ইন্দ্র, তোর মতিগতি বিশুদ্ধ নয়
নীরব থাকাই শ্রেয় মনে করলাম।
সেকেণ্ডে কয়েক ব্যাজার থাকবার পর ঝেড়ে উঠল রবি। বললে, ইদ্র, যে হিরেটাকে সেদিন রিভলভিং স্টেজে নেচে নেচে কাটাই হতে দেখেছিলাম, মামুনি হিরে সেটা নয়। একখানা পাথরে আটান্নটা দিক-এক-একদিকে এক-রকম জলুস। সে যে রোশনাই, না দেখলে তুই ধারণায় আনতে পারবি না।
আনতে চাইও না। তুই বলে যা।
জুল জুল করে আমার চোখের দিকে চেয়ে রইল রবি। চোখে চোখে কথা যখন হল না, অর্থাৎ আমার হিরে-নিরেট মাথায় যখন ওর মনের কথা জাগ্রত হল না, তখন বাচন আকারে যে কথাটা বলেছিল রবি, তা এই–
ইন্দ্র, হিরেটা সাইজে ঠিক একটা ডিমের মতো।
অশ্বডিম্বের মতো নয় নিশ্চয়।
নিতান্ত অসময়ে নেহাৎই অপ্রাসঙ্গিক এইরকম অনেক রসিক আমি করে ফেলি। বাক্য বীরাঙ্গনা কবিতা বউদি তখন আমার ওপর তেড়ে ওঠে। হে সুবুদ্ধি পাঠক এবং হে জ্ঞানবতী পাঠিকা, আপনারা দয়া করে সেই ইচ্ছা সম্বরণ করুন। কথার খই অনেক সময়ে খেই ধরিয়ে দেয়।
রবি একটু বিরক্ত হয়েছিল। কিন্তু হীরক-উপাখ্যানে নিমগ্ন থাকার ফলে তা নিমেষে কাটিয়েও উঠেছিল। বলেছিল, ডিম। হিরের ডিম। হিরে-ইতিহাসে এমন অতিকায় ডিম আর জন্মায়নি।
বলতে বলতে স্মৃতির কুয়াশার আবিল হয়ে গেছিল হীরক উপাধ্যায় রবি রে।
আমি ওর ঘোর কাটানোর জন্যে আলতোভাবে বলেছিলাম, অজ্ঞর অজ্ঞতা ক্ষমাঘেন্না করে একটা প্রশ্নের জবাব দিবি?
প্রশ্নটা যে রকম, জবাবটা সেই রকম হবে।
তেড়ে উঠছে দেখে, আলতোভাবে পেশ করেছিলাম কৌতূহলটা, হিরে কি চেঁচায়?
অদ্ভুত চোখে কিছুক্ষণ চেয়ে রইল রবি। তারপর বললে, সত্যিই তুই ভাল গোয়েন্দা।
থ্যাঙ্কস ফর দ্য সার্টিফিকেট। কিন্তু…হিরে কি চেঁচায়?
হ্যাঁ, চেঁচায়…মাঝে মাঝে…কাটাই করার সময়ে। জননীর জঠর থেকে বেরিয়ে এসে শিশু যেমন কেঁদে ওঠে, হিরে তেমনি কাঁদে…রূপান্তর ঘটানোর সময়ে।
অ, বলে নিশ্চুপ রইলাম সেকেণ্ড কয়েক।
আর একটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলাম তারপরেই—হিরে কি খানখান হয়ে যেতে পারে বেমক্কা ঠোক্করে?
বিপুল বিস্ময়ে চেয়ে রইল রবি। বললে তারপরে, আঁচ করলি কী করে? হিরে তো কঠিনতম পদার্থ এই পৃথিবীতে…হিরেকে ভাঙা যায় না—এইটাই তো সবাই জানে। ইন্দ্র, তুই একটা জিনিয়াস। হ্যাঁ, হিরেও খান খান হয়ে যেতে পারে—বেঠিক জায়গায় ঠোক্কর খেলে।
হিরে কঠিন মানুষদের মতো—আমি দার্শনিক হওয়ার চেষ্টা করেছিলাম।
হীরকপ্রতীম রবি রে কিন্তু দর্শন-ফর্শনের ধার ধারে না। বললে, এই জন্যেই একজন ঘুরন্ত চাকার নিচে লম্বা হয়ে শুয়ে থাকে। হিরে হাত ফসকে গেলে যেন। মাটিতে না আছড়ে পড়ে—লুফে নিতে পারে তার আগেই।
মুখখানাকে বোক চন্দরের মতো করে আমি জানতে চেয়েছিলাম, মস্ত হিরেকে কি কেটে খানকয়েক করা হয়েছিল?
হ্যাঁ…হ্যাঁ…তেড়াবেঁকা ছিল যে আকাটা হিরে।
ক’টা হিরে বেরিয়েছিল?
ছটা।
ছ’টা! খনির হিরের মূল ওজন তাহলে ছিল কত?
দু’শ পঁয়ষট্টি দশমিক বিরাশি ক্যারাট।
পেল্লায় হিরে যে। ডায়মণ্ড মার্কেট কাঁপানো হিরে। বন্ধু, এবার বল তো, এ হিরে কোথাকার হিরে?
কঙ্গোর হিরে।
এই আখ্যায়িকার নামকরণে একটু ভুল করেছি। নাম রাখা উচিত ছিল ‘হিরের ডিম’।
তবে হ্যাঁ, ক্ষুরধার বুদ্ধি প্রয়োগে পাঠক এবং পাঠিকা নিশ্চয় আঁচ করে ফেলেছেন, অনিক্স পাথরের ডিমের সঙ্গে হিরের ডিমের কোথায় যেন একটা মিল আছে।
সবুর…সধুর…আর একটু।