১১. অনুভবসিদ্ধ জ্ঞান
এটি সাধারণভাবে প্রচলিত যে যা কিছু আমরা বিশ্বাস করি তাকে প্রমাণের যোগ্য হতে হবে বা অন্তত বেশি পরিমাণে সম্ভাব্য হতে হবে। অনেকে মনে করে যে বিশ্বাসের স্বপক্ষে কোন কারণ দেয়া যায় না হল অযৌক্তিক বিশ্বাস। মূলত, এই মত হল সঠিক। আমাদের প্রায় সব সাধারণ বিশ্বাস হল অন্য বিশ্বাসের থেকে অনুমানলব্ধ বা অনুমানযোগ্য, যেগুলোকে তাদের কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সাধারণ কারণটি ভুলে যাওয়া হয় বা কখনওই তা আমাদের মনে সচেতনভাবে উপস্থাপিত হয় না। আমাদের মধ্যে খুব কমজনই নিজেদের প্রশ্ন করে, উদাহরণস্বরূপ, এর পেছনে কি কারণ আছে যে, যে খাবার আমরা খাবো তা বিষে রূপান্তরিত হবে না। তথাপি প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হলে আমরা অনুভব করি যে এর ভালো কারণ পাওয়া যেতে পারে, এমনকি সেই মুহূর্তে আমরা তৈরি থাকলেও এবং এই বিশ্বাসে আমরা সাধারণত সঠিক বলে বিবেচিত হই।
কিন্তু আসুন, কল্পনা করা যাক একজন সক্রেটিসের কথা যিনি, যে কারণই আমরা তাকে দেখাই না কেন, সর্বদা কারণের কারণ দাবি করেন। আমরা অবশ্যই আগে বা পরে এবং হয়তো বা অনেক পরে এমন এক দিকে উপনীত হব যেখানে আমরা আর কোন কারণ পাব না এবং যেখানে এটি প্রায় নিশ্চিত যে আর কোন কারণ কখনই তথ্যগতভাবে আবিষ্কার করা সম্ভব নয়। প্রাত্যহিক জীবনের সাধারণ বিশ্বাস দিয়ে শুরু করে, আমরা এক দিক থেকে আরেক দিকে উপনীত হই যতক্ষণ না আমরা কোন সাধারণ বচনে বা সাধারণ নীতির কোন দৃষ্টান্তে আসি, যা আলোর মত প্রকাশিত এবং যাকে আর কোন বেশি সত্যের থেকে নিঃসৃত করা যায় না। প্রাত্যহিক জীবনের বেশিরভাগ প্রশ্নে, যেমন আমাদের খাবার পুষ্টিযুক্ত হবে এবং বিষযুক্ত নয়, আমরা আরোহের নীতিতে ফিরে যাই যা আমরা ষষ্ঠ অধ্যায়ে আলোচনা করেছি। কিন্তু এর পরে, আর কোন পেছনে যাবার রাস্তা নেই। এই নীতিটি সর্বদাই আমাদের যুক্তিতে ব্যবহৃত হয়, কখনও সচেতনভাবে, কখনও অচেতনভাবে। কিন্তু এরকম কোন যুক্তি নেই যা কোন স্বপ্রকাশিত নীতির থেকে শুরু করে আমাদের এর সিদ্ধান্ত হিসেবে আরোহের নীতিতে উপনীত করায় এবং এই একই কথা অন্যান্য যৌক্তিক নীতির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এগুলোর সত্যতা আমাদের কাছে স্পষ্ট এবং আমরা প্রয়োগের ক্ষেত্র এদের ব্যবহার করি; কিন্তু তারা নিজে বা অন্তত এদের মধ্যে কয়েকটি প্রয়োগের অনুপযুক্ত।
তবে স্বতঃ প্রমাণতা শুধুমাত্র প্রমাণে সমর্থ সাধারণ নীতির ক্ষেত্রে আবদ্ধ থাকে না। কিছু সংখ্যক যৌক্তিক নীতি স্বীকার করা হলে অবশিষ্টাংশ তাদের থেকে নিঃসৃত করা যায়; কিন্তু নিঃসৃত বচনগুলো, যেগুলোকে প্রমাণ ছাড়া গ্রহণ করা হয়েছে, তাদের মতই স্বতঃসিদ্ধ। সমস্ত পাটিগণিতকে যুক্তি বিজ্ঞানের সাধারণ নীতি থেকে নিঃসৃত করা গেলেও পাটিগণিতের সহজ বচন যেমন দুই আর দুই মিলে চার হল যুক্তিবিজ্ঞানের নীতির মতই স্বতঃসিদ্ধ।
অধিকতর বিতর্কিত হলেও আমাদের আরও মনে হয় যে কিছু স্বতঃসিদ্ধ নৈতিক যুক্তি আছে যেমন আমাদের সেই বিষয় অনুসরণ করা উচিত যা ভাল বলে পরিচিত।
এটা দেখা উচিত যে সব সাধারণ নীতির ক্ষেত্রে বিশেষ দৃষ্টান্ত, যা জানা বিষয় নিয়ে চলে, তা সাধারণ নীতির তুলনায় বেশি সিদ্ধ। উদাহরণস্বরূপ, বিরোধবাধক নিয়ম বলে যে কোন বিষয়ের একই সঙ্গে কোন বিশেষ গুণ থাকতে এবং না থাকতে পারে না। যখনই এই বিষয়টি বোধগম্য হয় তখনই এটি প্রকাশিত হয়, কিন্তু এটি কোন বিশেষ গোলাপের মত অতটা প্রকাশিত নয় যা আমরা দেখি একই সঙ্গে লাল এবং অ-লাল হতে পারে না। (অবশ্য গোলাপের কিছু অংশ লাল এবং কিছু অংশ অ-লাল হতে পারে বা গোলাপটিতে গোলাপি রঙের কোন মাত্রা থাকতে পারে যাকে লাল না অ-লাল কি বলা হবে আমরা বুঝে উঠতে পারি না; কিন্তু প্রথম ক্ষেত্রে এটি পরিষ্কার যে গোলাপটি সম্পূর্ণ নয়, কিন্তু পরের ক্ষেত্রে উত্তরটি তথ্যগতভাবে নির্দিষ্ট হবে যখনই আমরা লালের কোন নির্দিষ্ট সংজ্ঞায় উপনীত হতে পারবো।) সাধারণত বিশেষ দৃষ্টন্তের মাধ্যমেই আমরা সাধারণ নীতিতে উপনীত হতে পারি। শুধুমাত্র যারা অমূর্তবাদ নিয়ে চলে তারাই দৃষ্টান্তের সাহায্য ছাড়া সাধারণ নীতি বুঝতে পারে।
সাধারণ নীতি ছাড়া অন্যান্য স্বতঃসিদ্ধ সত্য হল সেগুলো যা তাৎক্ষণিক সংবেদনের থেকে পাওয়া যায়। আমরা এই ধরনের সত্যকে প্রত্যক্ষ সত্যবলবো এবং যে বিধান এদের প্রকাশ করে তাদের প্রত্যক্ষ বিধান বলব। কিন্তু এখানে বিশেষ সতর্কতার প্রয়োজন যে সমস্ত সত্য স্বতঃসিদ্ধ তার সঠিক প্রকৃতিতে উপনীত হবার জন্য। বাস্তব ইন্দ্রিয়-উপাত্তগুলো সত্যও নয় মিথ্যাও নয়। দৃষ্টান্তস্বরূপ, কোন বিশেষ রঙের অংশ যা আমি দেখছি, শুধুমাত্র অস্তিত্বশীল; এটি সত্য বা মিথ্যা এই ধরনের বিষয় নয়। এটি সত্য যে এরকম ধরনের অংশ আছে, এর নির্দিষ্ট আকার ও উজ্জ্বলতার মাত্রা আছে, এটি অন্যান্য রঙ দিয়ে পরিবেষ্টিত রয়েছে। কিন্তু অংশটি নিজে, অন্যান্য ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয়ের মতই সেই সব বিষয়ের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা যা সত্য বা মিথ্যা হতে পারে, সুতরাং একে যথার্থ অর্থে সত্য বলে চিহ্নিত করা যায় না। এভাবে যে সমস্ত স্বতঃসিদ্ধ সত্য ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে পাওয়া যায় সেগুলো অবশ্যই যে ইন্দ্রিয়-উপাত্তের থেকে এগুলো গ্রহণ করা হয়েছে তার তুলনায় আলাদা।
এটা মনে হয় যে দু ধরনের স্বতঃসিদ্ধ প্রত্যক্ষ সত্য আছে, যদিও শেষ বিশ্লেষণের এই দুই ধরন একীভূত হতে পারে। প্রথমত, সেই ধরনের সত্য যা শুধুমাত্র ইন্দ্রিয়-উপাত্তের অস্তিত্ব স্বীকার করে, কোনভাবেই তার কোন বিশ্লেষণ করে না। আমরা একটি লাল অংশ দেখি, এবং বিচার করি এখানে-এই ধরনের লাল অংশ রয়েছে, বা আরও বিশেষভাবে এখানে এটি রয়েছে; এটি হল এক প্রকারের অনুভবসিদ্ধ প্রত্যক্ষ বিধান। দ্বিতীয় প্রকারের জ্ঞান আসে যখন ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয়টি জটিল হয় এবং আমরা সেটিকে বিশ্লেষণের আওতায় আনি। দৃষ্টান্তস্বরূপ, যদি আমরা একটি লাল গোল অংশ দেখি, তাহলে আমরা বিচার করতে পারি যে ওই লাল অংশটি হল গোল। এটি আবার একটি প্রত্যক্ষসিদ্ধ বিধান, কিন্তু একটি আমাদের পূর্বের ধরনের থেকে আলাদা। আমাদের বর্তমান ক্ষেত্রে একটি একক উপাত্ত রয়েছে যার রঙ এবং আকার উভয়ই রয়েছে, রঙটি হল লাল এবং আকারটি হল গোল। আমাদের বিধান উপাত্তটিকে রঙ এবং আকারে বিশ্লেষিত করে এবং তারপর পুনর্মুক্তিকরণ করে একথা বলে যে লাল রঙটি হল আকৃতিতে গোল। এই ধরনের বিধানের একটি উদাহরণ হল এটি হয় ওটির ডানদিকে, যেখানে এটি এবং ওটি একসঙ্গে দেখা যায়। এই ধরনের বিধানে ইন্দ্রিয়-উপাত্তের এমন বিধান রয়েছে যার একে সঙ্গে অপরের কিছু সম্বন্ধে রয়েছে এবং এই বিধানটি বলে যে এই উপাদানগুলো এই সম্বন্ধ রয়েছে।
অন্য আর এক ধরনের অনুভবসিদ্ধ বিধান, যার সঙ্গে ইন্দ্রিয়ের সাদৃশ্য রয়েছে অথচ আবার তাদের থেকে আলাদ, তাহলে স্মৃতি সম্বন্ধীয় বিধান। স্মৃতির প্রকৃতি সম্পর্কে এখানে বিভ্রান্তির বিপদ রয়েছে, এই কারণে যে বিষয়ের স্মৃতি, বিষয়ের প্রতাঁকের সাথে থাকে। এটি সহজেই বোঝা যায় এই ব্যাপারটি দেখে যে প্রতিচ্ছবি হল বর্তমানে, অপরপক্ষে যা মনে করা হচ্ছে তা অতীতের জ্ঞাত হয়েছে। এছাড়া আমরা নিশ্চিতভাবে কিছু অংশে আমাদের প্রতিরূপকে বিষয়ের স্মৃতির সঙ্গে তুলনা করতে পারি, এভাবে আমরা জ্ঞাত হই কিছু বিস্তৃত সীমার মধ্যে আমাদের এই প্রতিরূপ কতদূর যথার্থ। কিন্তু এটি অসম্ভব বলে পরিগণিত হবে যতক্ষণ না বিষয়টি প্রতিরূপের বিপরীতে কোন না কোনভাবে মনের সামনে উপস্থাপিত হচ্ছে। এভাবে স্মৃতির সত্তা প্রতিরূপের দ্বারা গঠিত নয়, বরং মনের সামনে বিষয়টি অতীতের বিষয় বলে তাৎক্ষণিকভাবে জানার দ্বারা গঠিত। কিন্তু এই অর্থে স্মৃতির বিষয়ে, আমরা জানতে পারি না যে কোন অতীত আদৌ ছিল কিনা, বা কোন জন্মান্ধ ব্যক্তির কাছে আরো শব্দটির যে অর্থ তার থেকে বেশি করে বুঝতে পারি না। অতীত শব্দটির অর্থ কি। এভাবে অবশ্যই স্মৃতির স্বতঃসিদ্ধ বিধান থাকবে এবং শেষ পর্যন্ত এর উপরেই আমাদের সমস্ত অতীতের জ্ঞান নির্ভর করবে।
তবে স্মৃতির ক্ষেত্রটি অবশ্যই অসুবিধার সৃষ্টি করে, কেননা এটি ভীষণভাবে দোষযুক্ত এবং সই কারণে সাধারণত বিশ্বাসযোগ্য স্বতঃসিদ্ধ বিধানের উপর সন্দেহের ছায়া ফেলে। এই অসুবিধাটি কোন সাধারণ অসুবিধা নয়। তবে এর সীমাটি যথাসম্ভব ছোট করে নেয়া যাক। ব্যাপক অর্থে বললে-অভিজ্ঞতার নিখুঁততা এবং সময়ের সঙ্গে তার নৈকট্যের অনুপাতেই স্মৃতি বিশ্বাসযোগ্য হয়। যদি পাশের বাড়ির দরজাটি আধা মিনিট আগে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় তাহলে আমার স্মৃতিতে যা আমি দেখেছি ও শুনেছি এতটাই বিশ্বাসযোগ্য হবে যে এটা সন্দেহ করা অসংগত হবে ওখানে আদৌ কোন ঝলকানি হয়েছিলো কি না। এই একই বিষয় কম স্পষ্ট অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা সম্পর্কিত থাকে। আমি সম্পূর্ণ নিশ্চিত যে আধ মিনিট আগ আমি এই একই চেয়ারে বসেছিলাম যে চেয়ারে আমি এখন বসে আছি। দিনের পশ্চাদ্ভাগের কথা চিন্তা করলে আমি সেসব বিষয়গুলো দেখি যার সম্বন্ধে আমি নিশ্চিত, অন্যান্য বিষয় যার সম্বন্ধে প্রায় নিশ্চিত, কিছু বিষয় যার সম্বন্ধে চিন্তার দ্বারা এবং আনুষঙ্গিক পরিবেশের কথা চিন্তা করে নিশ্চিত হতে পারি ও অন্য কিছু বিষযে যার সম্বন্ধে আমি কোনভাবই নিশ্চিত নই। আজ সকালে আমি প্রাতরাশ করেছিলাম এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত, কিন্তু যদি আমি আমার প্রাতরাশ সম্পর্কে দার্শনিকদের যেরকম উদাসীন থাকা উচিত সেরকম থাকি তাহলে আমার এ ব্যাপারে সন্দিহান হওয়া উচিত। প্রাতরাশের সময়কার কথোপকথন প্রসঙ্গে কিছু বিষয় আমি সহজেই মনে করতে পারি, কিন্তু চেষ্টার সাহায্যে, কিছু প্রভূত সন্দেহের সঙ্গে এবং কিছু একেবারেই মনে করতে পারি না। এইভাবে স্বতঃসিদ্ধতার একটি ধারাবাহিক মাত্রা রয়েছে যা আমি মনে করতে পারি এবং এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আমার স্মৃতির বিশ্বাসযোগ্যতারও একটি মাত্রা আছে।
এভাবে ভ্রান্তিমূলক স্মৃতির অসুবিধার ক্ষেত্রে প্রথম উত্তর হবে যে স্মৃতির স্বতঃসিদ্ধতার বিভিন্ন মাত্রা রয়েছে এবং এগুলো বিশ্বাসযোগ্যতার মাত্রার সঙ্গে আনুপূর্বিকতা রাখে–নিখুঁত স্বতঃসিদ্ধতার সীমায় পৌঁছে এবং স্মৃতির সদ্য ও স্পষ্ট ঘটনাবলির নিখুঁত বিশ্বাসযোগ্যতায় পৌঁছে।
তবে এটা মনে হয় যে স্মৃতিতে এরকম ধরনের সুদৃঢ় বিশ্বাসের কিছু ক্ষেত্র রয়েছে যা সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা। এসব ক্ষেত্রে এটা সম্ভবপর যে আসলে যা মনে করা হচ্ছে, মনের সামনে তাৎক্ষণিকভাবে উপস্থিত থাকার অর্থে, তা এমন কিছু যা মিথ্যা বিশ্বাসের থেকে আলাদা, যদিও তা এমন কিছু যা সাধারণভাবে এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। বলা হয় যে চতুর্থ জর্জ শেষ পর্যন্ত বিশ্বাস করেছিলেন যে তিনি ওয়াটারলুর যুদ্ধে গিয়েছেন, কেননা তিনি প্রায়ই বলতেন যে তিনি গিয়েছিলেন। এই ক্ষেত্রে যা তাৎক্ষণিকভাবে মনে পড়ছে তা হল তাঁর বারবার বলা, যে বিষয়ে তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করছেন সেই সম্বন্ধে বিশ্বাস (যদি এটা থেকে থাক) তা অনুষঙ্গের দ্বারা মনে করা এবং সেক্ষেত্রে বিষয়টি সঠিক স্মৃতির ক্ষেত্র হবে না। ভ্রান্ত স্মৃতির ক্ষেত্রগুলো সম্ভবত এভাবে আলোচনা করা হবে অর্থাৎ সঠিক অর্থে এদের স্মৃতির ক্ষেত্র বলা যাবে না।
স্বতঃসিদ্ধতার বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক স্মৃতি পরিষ্কার করে দিয়েছে, তা হল– স্বতঃসিদ্ধতার বিভিন্ন মাত্রা রয়েছে। এটি এমন কোন গুণ নয় যা উপস্থিত বা অনুপস্থিত থাকছে, বরং এমন একটি গুণ যা কম বা বেশি উপস্থিত থাকতে পারে, মাত্রাভেদে সম্পূর্ণ, মাত্রাভেদে সম্পূর্ণ নিশ্চয়তার থেকে শুরু করে অস্পস্ট অপ্রত্যক্ষযোগ্যতা পর্যন্ত। প্রত্যক্ষের সত্যতার এবং যুক্তিবিজ্ঞানের কিছু নীতির সবচয়ে বেশি মাত্রায় স্বতঃসিদ্ধতা রয়েছে, তাৎক্ষণিক স্মৃতির সত্যতারও প্রায় একই মাত্রা রয়েছে। যুক্তিবিজ্ঞানের অন্যান্য নীতির তুলনায় আরোহের নীতির কম স্বতঃসিদ্ধতা রয়েছে, যেমন সত্য যুক্তিবাক্য থেকে যা নিঃসৃত হয় তা অবশ্যই সত্য। স্মৃতি যতই দূরবর্তী ও অস্পষ্ট হয়, তার স্বতঃসিদ্ধতাও তত কমে যায়। তর্কবিজ্ঞান ও গণিত যত জটিল হয়ে পড়ে, তাদের স্বতঃসিদ্ধতাও তত কমে যায়। নৈতিক ও সৌন্দর্য বিষয়ক মূল্যের বিধানোর কিছু স্বতঃসিদ্ধতা আছে, তবে তা খুব বেশি নয়।
স্বতঃসিদ্ধতার মাত্রা জ্ঞানতত্ত্বের ক্ষেত্রে খুবই প্রযোজনীয়, যেহেতু বচনগুলো সত্য না হলেও যদি তাদের কিছু স্বতঃসিদ্ধতা থাকে, তাহলে স্বতঃসিদ্ধতা ও সত্যতার মধ্যে সমস্ত সংযোগ ছিন্ন করা প্রয়োজনীয় নয়, বরং শুধুমাত্র বলা দরকার যে যেখানেই কোন বিরোধী থাকবে, সেখানে বেশি স্বতঃসিদ্ধ বচন থাকবে এবং কম স্বতঃসিদ্ধ বচন বাদ দেয়া হবে।
তবে এটা অবশ্যই খুবই সম্ভাব্য যে উপরিউক্ত দুটি স্বতঃসিদ্ধতার ব্যাখ্যায় দুটি ভিন্ন ধারনা একত্রিত করা হয়েছে; এদের মধ্যে একটি যা সবচেয়ে বেশি স্বতঃসিদ্ধতার মাত্রার অনুরূপ হয়, তাহলে-সত্যই অভ্রান্ত সত্যতার নিশ্চয়তা; অন্যটি, যা অন্য সব মাত্রার সঙ্গে চলে, কোন অভ্রান্ত সত্যতার নিশ্চয়তা; অন্যটি, যা অন্য সব মাত্রার সঙ্গে চলে, কোন অভ্রান্ত নিশ্চয়তা দেয় না, শুধুমাত্র কম বা বেশি অনুমান দেয়। এটি অবশ্য শুধুই প্রস্তাব, যা আমরা আর সম্প্রসারণ করতে পারি না। সত্যের প্রকৃতি সম্পর্কে বলার পর, জ্ঞান এবং ভ্রান্তির পার্থক্য সম্বন্ধে আলোচনার সূত্র ধরে আবার আমরা স্বতঃসিদ্ধতার বিষয়ে ফিরে যাব।