পঞ্চম অনুবাক
প্রথম সূক্ত : শত্রুনিবারণম
[ঋষি : কাডকায়ন। দেবতা : অর্বুদি। ছন্দ : শক্করী, অনুষ্টুপ, উষ্ণিক, জগতী, পংক্তি, ত্রিষ্টুপ, গায়ত্রী।]
যে বাহবো যা ইষবো ধন্বনাং বীর্যাণ চ। অসী পরশুনায়ুধং চিত্তাকূতং চ যদ্ধৃদি। সর্বং তদবুদে ত্বমমিত্রেভ্যো দৃশে কুরূদারাংশ্চ প্ৰ দৰ্শয় ॥১৷ উত্তিষ্ঠত সং নহ্যধ্বং মিত্রা দেবজনা হ্যায়। সম্পৃষ্টা গুপ্তা বঃ সন্তু যা নো মিত্ৰাণ্যঝুঁদে২। উত্তিষ্ঠতমা রভেথামাদানসন্দানাভ্যাম্। অমিত্রাণাং সেনা অভি ধমকুঁদে ৷৩৷৷ অপুঁদিনাম যো দেব ঈশানশ্চ ন্যঝুঁদিঃ। যাভ্যামন্তরিক্ষমাবৃতমিয়ং চ পৃথিবী মহী। তাভ্যামিমেদিভ্যামহং জিমন্বেমি সেনয়া ॥ ৪৷৷ উত্তিষ্ঠ ত্বং দেবজনাবুদে সেনয়া সহ। ভঞ্জন্নমিত্রাণাং সেনাং ভোগেভিঃ পরি বারয় ॥৫॥ সপ্ত জাতা ন্যঝুঁদ উদারাণাং সমীক্ষয়। তেভিষ্টমাজ্যে হুতে সর্বৈরুত্তিষ্ঠ সেনয়া ॥৬৷৷ প্রতিঘানামুখী কৃধুকণী চ ক্রোশতু। বিকেশী পুরুষে হতে দিতে অকুঁদে তব ৷৷ ৭ সংকর্ষন্তী করূকরং মনসা পুত্ৰমিচ্ছন্তী। পতিং ভ্রাতরমাত্মান রদিতে অবঁদে তব 8 অলিক্লবা জামদা গৃভ্রাঃ শ্যেনাঃ পতত্ৰিণঃ। ধ্বাক্ষাঃ শকুনয়স্তৃপ্যমিষু সমীক্ষয় রদিতে অবঁদে তব ॥৯॥ অথো সর্বং শ্বাপদং মক্ষিকা তুপতু ক্রিমিঃ। পৌরুষেয়েহধি কুণপে রদিতে অবঁদে তব ১০।
বঙ্গানুবাদ –আমাদের যোদ্ধৃবর্গের আয়ুধগ্রাহী হস্তগুলি, ইষু অর্থাৎ বাণসমূহ, ধন্ব অর্থাৎ ধনুক সমূহ, অসি অর্থাৎ খঙ্গ সমূহ, পরশু অর্থাৎ কুঠারাস্ত্র সমূহ, এবং অন্যান্য আয়োধনসাধন শস্ত্রসমূহের সাথে আমাদের যোদ্ধৃগণের হৃদয়ে অবস্থিত (বা সঞ্জাত) শত্রুগণকে মারণবিষয়ে যে ধৈর্যযুক্ত সঙ্কল্পসমূহ, হে অর্বুদ নামক সর্পঋষি (বা অবুদের হে পুত্র, হে সর্প)! তুমি ঐগুলি (অর্থাৎ ঐ অস্ত্র ইত্যাদি) আমাদের শত্রুগণকে দর্শন করাও। যার দ্বারা তারা ভয়ভীত হয়ে যাবে। অপিচ, মন্ত্ৰসামর্থ্যে উদ্ভাবিত অন্তরিক্ষচর রাক্ষস-পিশাচ ইত্যাদিকে অথবা সূর্যরশ্মিপ্ৰভব উল্কা ইত্যাদি অন্তরিক্ষের উৎপাত সমূহ আমাদের শত্রুগণের পরাজয়ের নিমিত্ত তাদের (অর্থাৎ আমাদের শত্রুগণকে) প্রদর্শন করো (প্ৰদৰ্শয়)। ১।
আমাদের জয়ের নিমিত্ত প্রবৃত্ত হে মিত্রভূত দেববর্গ! এক্ষণে আমাদের সেনানিবেশ হতে উত্থিত হও এবং সংগ্রামের নিমিত্ত অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত (সন্নদ্ধ) হও। তোমাদের দ্বারা সম্যক্ নিরীক্ষিত আমাদের সৈন্যগণ রক্ষিত (গুপ্তা) হোক। হে অকুঁদে (স)! আমাদের যে মিত্ৰসমূহ শত্রুর সাথে সংগ্রামের নিমিত্ত আগত হয়েছে, তুমি তাদেব রক্ষা করো। ২।
হে অর্বুদি! তুমি ও ন্যর্বুদি উভয়ে আপন স্থান হতে উত্থিত হয়ে যুদ্ধের উপক্রম করো। অনন্তর আদান নামক রঞ্জুযন্ত্র ও সন্দান নামক বন্ধনরঞ্জুর দ্বারা শত্রুসম্বন্ধিনী সনাগণকে বন্ধন করো (বা বশীভূত করো) ৷৩৷
অর্বুদি নামে প্রসিদ্ধ সাত্মক যে দেবতা এবং সকলকে বশকারী (ঈশানঃ) যে ন্যর্বুদি ও নামক সর্প, যাঁদের দ্বারা অন্তরিক্ষ ও এই পরিদৃশ্যমান পৃথিবী আবৃত হয়েছে (অর্থাৎ যাঁরা তাঁদের শরীরের দ্বারা বেষ্টন করে রেখেছেন, তাঁরা সংগ্রামজয়-কর্মে সর্ব-উৎকর্ষের দ্বারা বিদ্যমান রয়েছেন। ৪
দ্যাবাপৃথিবী ব্যাপী বর্তমান ইন্দ্রের স্নেহধন্য (স্নিগ্ধ) সেই শ্রেষ্ঠ অবুদি-ন্যবুদির দ্বারা জয়কৃত (জিত) শত্রুবলের পশ্চাতে আমি সেনাগন সহ (আক্রমণের উদ্দেশ্যে) অনুগমন করছি। হে দেবজন (অর্থাৎ দেবজাতীয় বা দেবতুল্য) অবুদি! তুমি আপন সেনাগণের সাথে উত্থিত হও এবং সেনাগণকে ভগ্নবীর্য করে (ভঞ্জ) আপন শরীরের দ্বারা তাদের পরিবেষ্টন করো। (অর্থাৎ শত্রুসেনা যেন আমাদের দর্শন করতে পারে, তেমন ভাবে তাদের চক্ষু আবৃত করে দাও–এটাই বক্তব্য) ৫।
হে ন্যর্বুদি নামক সর্প দেব! প্রাগুক্তলক্ষণ সপ্তসংখ্যায় উৎপন্ন দৃষ্টি-তিরোধক উৎপাতগুলি শত্রুদের সম্যক দর্শন করিয়ে আজাহুতি প্রদানের পর তুমি সেই আজ্যোপলক্ষিত দ্রব্যের সাথে আমাদের সেনাগণ সহ উদ্দত (বা উত্তিষ্ঠিত) হও ৬
হে অর্বুদি! তোমার দস্তাঘাতে (বা ভক্ষণে) আমাদের শত্রু নিহত হলে তার জায়া তার দিকে মুখ করে নিজের বক্ষতাড়না করুক, অশ্রুমুখী হোক, এবং কর্ণাভরণ পরিত্যাগ পূর্বক বিকীর্ণকেশা (বিক্ষিপ্ত কেশাশালিনী) হয়ে রোদন করুক ॥৭।
হে অর্বুদি! তোমার দংশনে শত্ৰু বিষাবেশবশতঃ নিপাতিত হলে সেই শস্ত্রী তার হস্তাঙ্গুলির সঙ্কর্ষনে অনুকরণশব্দ করে (করূকর) আপন পুত্র, পতি, ভ্রাতা ও আত্মীয়বর্গের বিষপ্রতিকারের ইচ্ছা করুক। (অর্থাৎ কর্তব্য অবধারণে অসমর্থ (ইতিকর্তব্যতামূঢ়া) হোক–এটাই বক্তব্য) ৮
শরীরের ক্লান্তিদায়ক অলিক্লবা (অর্থাৎ ধৃষ্ট) পক্ষীগণ, মাংসাভিলাষী শকুনি (গৃধ্র), বাজপক্ষী (শ্যেন) এবং মাংসভক্ষক অন্যান্য পক্ষী,যথা ধ্বক্ষ (অর্থাৎ কাক) ইত্যাদিও তোমার রদনে (অর্থাৎ দংশনে) নিপাতিত শত্রগণকে লক্ষ্য করুক (অর্থাৎ তাদের মরণের জন্য প্রতীক্ষমাণ থাকুক এবং তারপর, অর্থাৎ তাদের মরণ ঘটলে, তাদের ভক্ষণ করে তৃপ্ত হোক) ॥৯॥
(হে অর্বুদি!) সকল শ্বাপদ (অর্থাৎ শৃগাল, ব্যাঘ্র ইত্যাদি সমূদায়), মক্ষিকা (অর্থাৎ মাংসনিষেবিনী নীলমক্ষিকা ইত্যাদি), কৃমি (অর্থাৎ জীর্ণ মাংসে জায়মান প্রাণী সমূহ) তোমার দংশনে মৃত পুরুষসম্বন্ধিনী শবশরীরের উপরে তৃপ্তি লাভ করুক (অর্থাৎ শত্রুগণের মৃতদেহ ভক্ষণ করুক– এটাই বক্তব্য) ॥১০
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –পঞ্চমেনুবাকে ষট্ সূক্তানি। তুত্র যে বাহবঃ ইত্যাদি সূক্তত্ৰয়ং অর্থসূক্তং। উত্তিষ্ঠত সং নহ্যধ্বং ইত্যাদি সূক্তত্ৰয়ং অর্থসূক্তং। আভ্যাং অর্থসূক্তাভ্যাং জয়কামো রাজা যুদ্ধকালে যথালিঙ্গং স্বীয়া ভটা প্রতি সম্প্রৈষং কুর্যাৎ জপং কুর্যাচ্চ।…ইত্যাদি। (১১কা, ৫অ. ১সূ.)।
টীকা— পঞ্চম অনুবাকের ছটি সূক্তই অর্থসূক্ত। এই সূক্তগুলির দ্বারা জয়কামী রাজা কর্তৃক যুদ্ধকালে আপন সৈন্যগণকে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রেরণ করণীয় এবং জপনীয়। এই অনুবাকের সূক্তমন্ত্রগুলির দ্বারা পৃষদাজ্য ও সত্ত্ব-হোম করণীয়। এইগুলির দ্বারা ধনুঃ সমিধ, ইষুসমিধ গ্রহণ করা হয়। এই অনুবাকের দ্বারা ধনুঃ অভিমন্ত্রিত করে রাজাকে প্রদান করা হয়ে থাকে। এই অনুবাকের দ্বারা ধনুঃ অভিমন্ত্রিত করে রাজাকে প্রদান করা হয়ে থাকে। এই অনুবাকের দ্বারা শিতিপদী গাভী পৃষদাজ্যের দ্বারা অভিমন্ত্রিত করে রাজার চিহ্নিত কেতুদণ্ডে বন্ধন ও অন্য শিতিপদী গাভী অভিমন্ত্রিত করে শত্রুসেনার মধ্যে প্রেরণ ইত্যাদি করণীয়। এই মন্ত্রের দ্বারা যুদ্ধার্থে সেনানায়ক উৎসৃজিত হয়ে থাকে। এই সবই কৌশিক সূত্র অবলম্বনে করণীয়।..(কৌ. ২/৭)।–ঐতরেয় ব্রাহ্মণ অনুসারে কপুত্র অর্বুদ নামক সপঋষির দুই পুত্র–অর্বুদি ও ন্যর্বুদি। (১১কা ৫অ. ১সূ.)।
.
দ্বিতীয় সূক্ত : শত্রুনিবারণম
[ঋষি : কাডকায়ন। দেবতা : অর্বুদি। ছন্দ : শক্করী, অনুষ্টুপ, উষ্ণিক, জগতী, পংক্তি, ত্রিষ্টুপ, গায়ত্রী।]
আ গৃহীতং সং বৃহতং প্রাণাপানা ন্যদ। নিবাশা ঘোষাঃ সং যমিত্ৰেযু সমীক্ষয় রদিতে অকুঁদে তব। ১। উদ বেপয় সং বিজন্তাং ভিয়ামিত্রাসং সৃজ। উরুগ্রাহৈাহুঙ্কৈর্বিধ্যামিত্রা ন্যকুঁদে। ২। মুহ্যন্বেষাং বাহবশ্চিত্তাকৃতং চ যদ্ধৃদি। মৈষামুচ্ছেষি কিং চন রদিতে অবঁদে তব ৷ ৩৷ প্রতিষ্মানাঃ সং ধাবন্তুরঃ পটুরাবায়ানাঃ। অঘারিণীর্বিকেশ্যো রুদত্যঃ পুরুষে হতে দিতে অকুঁদে তব ৷ ৪৷৷ শূন্বতীরঙ্গরসো রূপকা উতাকুঁদে। অন্তঃপাত্রে বেরিহতীং রিশাং দুৰ্ণিহিতৈষিণী। সর্বাস্তা অবঁদে ত্বমমিত্ৰেভ্যো দৃশে কুরূদারাংশ্চ প্ৰ দৰ্শয়। ৫খডুরেহধিচক্ৰমাং খর্বিকাং খর্ববাসিনীম্। য উদারা অন্তৰ্হিতা গন্ধর্বাপ্সরসশ্চ যে। সর্পা ইতরজনা রক্ষাংসি ৷৷ ৬ ৷৷ চতুর্দংষ্ট্রাছ্যাবদতঃ কুমুর্ষ অঙ্খা। স্বভ্যসা যে চোদ্ভ্যসাঃ॥ ৭৷৷ উদ বেপয় ত্বমবুদেইমিত্রানামমূঃ সিচঃ।। জয়াংশ্চ জিষ্ণুশ্চামিত্রী জয়তামিমেদিনৌ ৷ ৮৷ প্রীননা মৃদিতঃ শয়াং হতোহমিত্রো ন্যকুঁদে। অগ্নিজিহ্বা ধূমশিখা জয়ন্তীর্যন্ত সেনয়া ॥ ৯৷৷ তয়াকুঁদে প্রণুত্তানামিন্দ্রো হন্তু বরংবরম্। অমিত্রাণাং শচীপতিৰ্মামীষাং মোচি কশ্চন ॥ ১০।
বঙ্গানুবাদ –হে ন্যর্বুদি! তুমি ও অর্বুদি উভয়ে আমাদের শত্রুসম্বন্ধি প্রাণাপানকে গ্রহণ করো এবং তারপর তাদের সমূলে উৎখাত করো। হে অবুদি! তোমার দংশনের কারণে বিষনীপিড়িত শত্রুগণের আর্তধ্বনি সম্যক উৎসারিত (বা উৎপাদিত), হোক ॥১॥
হে ন্যর্বুদি! নামক সর্পজাতীয় দেব! তুমি আমাদের শত্রুবর্গকে উৎকম্পিত করো, এবং তারপর তারা উদ্বিগ্ন হয়ে স্বস্থান হতে প্রচলিত হোক। তারপর ঊরু ও বাহুর বক্ৰবন্ধনে আমাদের শত্রুদের তাড়িত করো (বিধ্য) ॥ ২॥
হে অর্বুদি! তোমার দ্বারা দংশিত হওয়ার পর শত্রুগণের বাহুসমুদায় বিষাবেশ বশতঃ মূহ্য (অর্থাৎ ব্যাপারসাধনে অসমর্থ হয়ে যাক। শত্রুগণ তাদের চিত্তের দ্বারা সঙ্কল্পিত প্রার্থনাসমূহও বিস্মৃত হয়ে যাক। অপিচ, সেই শত্রুগণের কোনও রথ-অশ্ব-হস্তী ইত্যাদি সমন্বিত বল যেন অবশিষ্ট না থাকে। (অর্থাৎ সবই তুমি নিঃশেষে হনন করো) ॥৩॥
হে অর্বুদি। তোমার দ্বারা দংশিত হয়ে শত্রুবর্গীয় পুরুষগণ নিহত হলে তাদের স্ত্রীগণ আপন বক্ষ তাড়না পূর্বক উন্মুক্তকেশা হয়ে ভর্তৃ-বিয়োগজনিত দুঃখে আর্ত হয়ে সঞ্জাতরোদনা রূপে মৃত পুরুষ সমীপে শীঘ্র গমন করুক ॥ ৪৷৷
হে অর্বুদি! মায়াবশে, রূপমাত্রের দ্বারা উপলভ্যমান (অর্থাৎ সেনারূপধারী) কুকুরগুলির সাথে ক্রীড়মানা অপ্সরাগণকে (অর্থাৎ, গন্ধর্বস্ত্রীগনকে) শত্রুদের প্রদর্শন করো। তথা পাত্রের মধ্যে পুনঃ পুনঃ লেহনকারী দুষ্ট-ইচ্ছাকারিণী গাভীগণকে এবং উল্কাপাত ইত্যাদি বিকৃতদর্শন যক্ষ ও রাক্ষসগণকে ঐ পূর্বোক্ত শত্ৰুগণের নিকট প্রদর্শন করো ॥৫॥
আকাশের (অর্থাৎ দূরদেশের) উপরে চক্রমনশীলা (বা মায়াবশে ইতস্ততঃ প্রাদুর্ভূতা) হ্রস্বদেহা ও অল্প শব্দায়মানা মাতৃগণকে প্রদর্শন করো, যাতে তারা পরাজিত হয়। যে যক্ষ-রাক্ষস ইত্যাদি স্বমায়ায় অন্তর্হিত হয়ে আছে, যে গন্ধর্ব-অপ্সরা ঐ রকম দৃষ্টির অগোচরে আছে, সেই সবই ঐ শত্রুগণকে পরাজয়ার্থে দর্শন করাও ॥৬॥
সর্পস্বরূপ ইতরজন-সংজ্ঞক দেবজাতীকে, রাক্ষসগণকে, দংশনসাধন চতুর্দন্তযুক্ত, শ্যামবর্ণ দন্তযুক্ত মায়াময়গুলি (অর্থাৎ মায়াগঠিত সব কিছু) শত্রুদের দর্শন করাও। তথা কুম্ভমুষ্কা অর্থাৎ কুম্ভ বা ঘটের ন্যায় আকৃতিসম্পন্ন অণ্ডকোষ-যুক্ত, রক্তময় মুখশালী, স্বায়ত্তভীত অর্থাৎ ভীতি-উৎপাদক ও উতভীত অর্থাৎ ভীতি-উমকারী রাক্ষসদের (অর্থাৎ বিবিধ ভয়জনক মায়াময় রাক্ষসগণকে) শত্রুদের দর্শন করাও ॥৭॥
হে অর্বুদি! তুমি শত্রুসেনাবর্গকে বিষাবেশজনিত শোকে ঊকম্পিত করো। শত্রুসেনাবর্গকে পরাভূত করে জিষ্ণু (অর্থাৎ জয়শীল) অবুদি ও ন্যঝুঁদি ইন্দ্রের দ্বারা স্নেহপূরিত হয়ে আমাদের জয়প্রাপ্তি সঙ্টিত করুন ৷৷ ৮
হে ন্যর্বুদি! প্রকৃষ্টরূপে ভীত আমাদের শত্রুগণ সম্যক মর্দিত দেহে গতাসু হয়ে শায়িত থাকুক। মায়াবশে তোমার দ্বারা উৎপাদিত অগ্নির জ্বালা ও ধূমশিখা সমূহ শত্রুসেনাগণকে জয় করতে করতে (জয়ন্ত) আমাদের সেনাগণের সাথে গমন করুন।৯।
হে অর্বুদি! যুদ্ধক্ষেত্র হতে প্রত্যাবৃত্ত শত্রুগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ শ্রেষ্ঠ বীরগণকে শচীপতি (ইন্দ্র) হত্যা করুন; শত্রুগণের মধ্যে কেউই যেন মুক্তিপ্রাপ্ত না থাকে। (অর্থাৎ ক্রমশঃ সকলকেই হত্যা করুন–এটাই বক্তব্য)।১০
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –আ গৃহ্নীত ইত্যাদি সূক্তস্য শত্ৰুজয়কর্মনি বিনিয়োগ উক্তঃ ॥ (১১কা. ৫অ. ২সূ)।
.
তৃতীয় সূক্ত : শত্রুনিবারণম
[ঋষি : কাডকায়ন। দেবতা : অর্বুদি। ছন্দ : শক্করী, অনুষ্টুপ, উষ্ণিক, জগতী, পংক্তি, ত্রিষ্টুপ, গায়ত্রী।]
উৎকন্তু হৃদয়ানূর্ধ্বঃ প্রাণ উদীতু। শৌষ্কাস্যমনু বর্তমমিত্রা মোত মিত্ৰিণঃ ॥ ১৷৷ যে চ ধীরা যে চাধীরাঃ পরাঞ্চো বধিরাশ্চ যে। তমসা যে চ পরা অথো বস্তাভিবাসিনঃ। সর্বাংস্তা অবঁদে ত্বমমিত্রেভ্যো দৃশে কুরূদারাংশ্চ প্ৰ দৰ্শয়॥ ২ অর্বুদিশ্চ ত্ৰিষন্ধিশ্চামিত্রান নো বি বিধ্যতাম। যথৈমিন্দ্র বৃহন্ হনাম শচীপতেহমিত্রাণাং সহস্রশঃ ৷৩৷৷ বনস্পতী বানস্পত্যানোষধীরুত বীরুধঃ। গন্ধর্বারসঃ সর্পা দেবান্ পুণ্যজনা পিতৃন। সর্বাংস্তা অবঁদে ত্বমমিত্রেভ্যো দৃশে কুরূদারাংশ্চ প্ৰ দৰ্শয়॥ ৪৷৷ ঈশাং বো মরুততা দেব আদিত্যো ব্ৰহ্মণস্পতিঃ। ঈশাং ব ইন্দ্রাশ্চাগ্নিশ্চ ধাতা মিত্রঃ প্রজাপতিঃ। ঈশাং ব ঋষয়শ্চরমিত্ৰেষু সমীক্ষয় রদিতে অকুঁদে তব ৷৷ ৫৷৷ তেষাং সর্বের্ষামামীশানা উত্তিষ্ঠত সং নহ্যধ্বং মিত্রা দেবজনা হ্যায়। ইমং সংগ্রামং সঞ্জিত্য যথালোকং বি তিধ্বম্ ৷ ৬ ৷
বঙ্গানুবাদ –শত্রুবর্গের দেহ হতে অন্তঃকরণসমূহ উগত হয়ে যাক। শত্রুবর্গের শরীর হতে তাদের প্রাণবায়ুসমূহ ঊর্ধ্বমুখী হয়ে নির্গত হয়ে যাক (ঊর্ধ্ব সন উদীষ)। ভীতিবশে শত্রুগণের মুখ (আস্য) শুষ্কতা (নিদ্ৰবত্ব) প্রাপ্ত হোক। অপিচ, আমাদের মিত্রভূত জনগণের ক্ষেত্রে যেন তার অনুবর্তন না ঘটে (অর্থাৎ মিত্রবর্গের আস্য যেন বিশুষ্ক না হয়)।১।
যে সৈন্যগণ বীর (ধীরাঃ), যে সৈন্যগণ কাতর (অধীরাঃ), যে সৈন্যগণ যুদ্ধ হতে পলায়মান (পরাঞ্চো), যারা ভয়বশতঃ হতশ্রবণসামর্থ (বধির), যে সৈন্যগণ মোহবশে শৃঙ্গহীন পশুর মতো অবস্থিত (তমসা যে চ তুপরাঃ), যে সৈন্যগণ ছাগের ন্যায় শব্দকারী (বস্তাভিবাসিনঃ), হে অবুদি! তোমার আপন মায়ায় উদ্ভাবিত সেগুলি শত্রুবর্গকে পরাজয়ের নিমিত্ত দর্শন করো (দৃশে কুরু)। ২।
হে ত্রিসন্ধি অর্থাৎ, সেনামোহনকারী (কোনও) দেবতা (বা সন্ধিত্রয়োপেত বজ্ৰায়ুধাভিমানী কোন দেবতা) ও অবুদি! তোমরা উভয়ে আমাদের শত্রুবর্গকে বিবিধ ভাবে তাড়না করো (বিধ্যতাং)। হে বৃহন্তা শচীপতি (ইন্দ্রদেব)! যে ভাবেই হোক আমরা যাতে সংহস্ৰসংখ্যক শত্রুকে এক-উদ্যোগে হনন করতে পারি, তেমনভাবে তাড়না করো ॥৩৷৷
হে অর্বুদি! বনস্পতি নামক সমগ্র বনস্পতি সমূহের বিকার সমুদায়, ব্রীহি-যব ইত্যাদি ওষধিরাশি,বিরোহণশীল আরণ্য-সম্ভার (বীরুধ), গন্ধর্ব ও অপ্সরা নামক দেবযোনিবর্গ, বিকৃতবিষ সর্পসমষ্টি, পুণ্যজন যক্ষবৃন্দ, মৃত পিতৃপুরুষগণ–তোমার মায়াময় এই সকলকে শত্রুবর্গের দৃষ্টির বিষয়ীভূত করো (দৃষ্টিবিষয়ান্ কুরু) ॥৪॥
হে শবর্গ! মরুৎ ইত্যাদি দেবগণ, আদিত্যগণ ও ব্রহ্মণস্পতি দেব তোমাদের নিয়ন্তা (দমনকারী) হোন। তথা ইন্দ্র, অগ্নি, ধাতা, মিত্র ও প্রজাপতি তোমাদের দণ্ডদাতা হোন। তথা অথবা, অঙ্গিরা প্রভৃতি ঋষিগণ তোমাদের শিক্ষক (শাসনকর্তা) হোন।
হে অর্বুদি! তোমার দন্তের দ্বারা বিদারিত আমাদের শত্রুগণের দৃষ্টিগোচর হলে সেই অবলোকিত দেব ও ঋষিগণ তাদের (অর্থাৎ শত্রুগণকে) নিয়ন্ত্রিত বা দণ্ডিত করুন ॥ ৬।
টীকা –পূর্ব সূক্তের অনুরূপ এই সূক্তটিরও বিনিয়োগ শত্রুজয়কর্মে করা হয়ে থাকে। (১১কা, ৫অ. ১) ৩সূ.)।
.
চতুর্থ সূক্ত : শত্রুনাশনম্
[ঋষি : ভৃগ্বঙ্গিরা। দেবতা : ত্রিষন্ধি। ছন্দ : বৃহতী, জগতী, পংক্তি, অনুষ্টুপ, শক্করী, গায়ত্রী।]
উত্তিষ্ঠত সং নহ্যধ্বমুদারাঃ কেতুভিঃ সহ। সর্পা ইতরজনা রক্ষাংস্যমিত্রাননু ধাবত। ১ ঈশাং ববা বেদ রাজ্য ত্রিষন্ধে অরুণৈঃ কেতুভিঃ সহ। যে অন্তরিক্ষে যে দিবি পৃথিব্যাং যে চ মানবাঃ। ত্রিষন্ধেস্তে চেতসি দুর্ণামান উপাসতাম্ ॥ ২॥ অয়োমুখাঃ সূচীমুখা অথথা বিকঙ্কতীমুখাঃ। ক্ৰব্যাদো বাতরংহস আ সজমিত্রা বজ্রেণ ত্রিষন্ধিনা৷ ৩৷৷ অন্তর্ধেহি জাবেদ আদিত্য কুণপং বহু। ত্রিষন্ধেরিয়ং সেনা সুহিতাস্তু মে বশে ৷৷ ৪৷৷ উত্তিষ্ঠ ত্বং দেবজনাবুদে সেনয়া সহ। অয়ং বলিব আহুতস্রিষন্ধেরাহুতিঃ প্রিয়া ৫শিতিপদী সং দ্যতু শরব্যেহয়ং চতুষ্পদী। কৃত্যেহমিত্রেভ্যো ভব ত্রিষন্ধেঃ সহ সেনয়া। ৬। ধূমাক্ষী সং পততু কৃধুকণী চ ক্রোশতু। ত্রিষন্ধেঃ সেনয়া জিতে অরুণাঃ সন্তু কেতবঃ ॥ ৭৷ অবায়াং পক্ষিপণা যে বয়াংস্যন্তরিক্ষে দিবি যে চরন্তি। শ্বাপদো মক্ষিকাঃ সং রভন্তামামাদো গৃভ্রাঃ কুণপে রদন্তাম্ ॥ ৮যামিন্দ্রেণ সন্ধাং সমধখা ব্ৰহ্মণা চ বৃহষ্পতে। তয়াহমিন্দ্রসন্ধয়া সর্বান দেবানিহ হুব ইতো জয়ত মামুত ॥ ৯ ৷৷ বৃহস্পতিরাঙ্গিরস ঋষয়ে ব্রহ্মসংশিতাঃ। অসুরক্ষয়ণং বধং ত্ৰিষন্ধিং দিব্যাশ্রয় ১০
বঙ্গানুবাদ –হে ঔদার্যগুণযুক্ত সেনানায়কবৃন্দ! তোমরা নিজ নিজ ধ্বজাগুলি উড্ডীয়মান পূর্বক (বা ধ্বজাণ্ডলি সহ) উখিত হও এবং কবচ ইত্যাদি ধারণ পূর্বক যুদ্ধের নিমিত্ত উদযুক্ত হও। হে সর্পকৃতি ও সর্পব্যতিরিক্ত দেবজন! হে (পূর্বোক্ত মায়াময়) রাক্ষসগণ! তোমরাও আমাদের শত্রুগণের পশ্চাদ্ধাবন করো ॥১॥
হে শত্রুবর্গ! বজ্রাভিমানী দেব ত্রিসন্ধি, (পূর্ব সূক্ত, ৩ মন্ত্র) তোমাদের তোমাদের রাজ্যকে অপহরণপূর্বক স্ববশান্বিত করুন। হে ত্রিসন্ধি! তোমার অরুণবর্ণ কেতুর (ধ্বজাঃ) সাথে উথিত হও। সেইসঙ্গে সেই কেতুগুলি, যেগুলি অন্তরিক্ষে উৎপাতরূপে প্রাদুর্ভূত, যেগুলি দ্যুলোকে ভূলোকে ও মনুষ্যসম্বন্ধী, সেইগুলিও উখিত হোক ॥ ২॥
হে ত্রিসন্ধি! তোমার মনে (বা চেতনায়) বর্তমান আমাদের দুষ্ট সংজ্ঞক যে শত্রুগণ উপাসত (বা সম্ভজন্ত) হয়ে আছে, তাদের প্রতি তোমার দ্বারা প্রেরিত অয়োমুখ (লৌহাগ্র বাণের ন্যায় তুণ্ডযুক্ত), সূচীমুখ (সূচির ন্যায় আকারসম্পন্ন তুণ্ডযুক্ত), বিকঙ্কতীমুখ (বহুকন্টকযুক্ত বৈঁচি নামক বৃক্ষবিশেষের ন্যায় তুণ্ডযুক্ত), ক্রব্যাদ (মাংস ভক্ষণকারী গৃধ্র ইত্যাদি) ও বাতরংহস (বায়ুর ন্যায় গতিশীল) পক্ষীসমূহ আসক্ত (বা সম্বন্ধযুক্ত) হোক। (অর্থাৎ তোমার বর্জ্যের দ্বারা যেমন দুষ্টেরা হত হয়, তেমনই ঐ পক্ষীগণের তুণ্ডাঘাতে আমাদের শত্রুগণ হত হোক)। (যারই নিকটে এইরকম পক্ষীগণ উপসৰ্পন অর্থাৎ গমন করে, তার অবশ্যই মরণ হয়–শাকুনিকশাস্ত্রে এমনই প্রসিদ্ধি আছে) ॥৩॥
হে জাতমাত্রকেই জ্ঞাপিত (সাংগ্রামিক অগ্নি বা) আদিত্য! তুমি শত্রুগণের শবদেহের দ্বারা অন্তরিক্ষকে আচ্ছাদিত করো। ত্রিসন্ধিদেবের এই সেনাগণ আমার বশে সম্যক স্থাপিত হোক (সুহিতান্তু)। (অর্থাৎ তাদের দ্বারা আমি আমাদের শত্রুগণকে জয় করতে পারবো) ॥৪॥
হে দেবজন অবুদি! তুমি আপন সেনাগণ সহ উগমন করো। হে অবুদি! এই হৃয়মান পৃষদাজ্য (আহুতি) তোমাদের তৃপ্তিকর হবির্ভাগ (বলি)। (অর্থাৎ যেহেতু তোমাদের সর্পসমূহ বলিপ্রিয়, সেই হেতু আমাদের এই বলি স্বীকার পূর্বক তোমরা আমাদের শত্রুগণকে হনন করো–এটাই বক্তব্য) ॥৫॥
শিতিপদী (অর্থাৎ শ্বেতবর্ণ পাদবিশিষ্টা) চতুষ্পদী গাভী শরসংহতি রূপে (বানসমূহের রূপ ধরে) আমাদের শত্রুগণের প্রাপ্ত হোক। হে কৃত্যা (কৃত্যারূপিনী অর্থাৎ অভিচার-কর্মের দ্বারা উৎসৃষ্টা শিতিপদী গাভী)! তুমি ত্রিসন্ধি দেবের সেনাগণের সাথে মিলিত হয়ে আমাদের শত্রুগণের সংহারকত্রী হত (সংহত্রী ভব)। (অর্থাৎ সেনাগণও তোমার সহায়ভূত হোক–এটাই বক্তব্য) ৷৷ ৬ ৷৷
শুত্রুসম্বন্ধিনী সেনাগণের চক্ষুগুলি মায়াময় ধূমের দ্বারা আবৃত হয়ে যাক এবং তারা কৃধুকর্ণী (অর্থাৎ অল্পশ্রোতা) হয়ে ও ঢক্কানিনাদ শ্রবণে হতশ্রবণসামর্থ্য হয়ে ইতিকর্তব্যতামূঢ় হয়ে যাক। ত্রিসন্ধি দেবতার সেনাগণের দ্বারা পরকীয় বল (অর্থাৎ শত্রুসেনাগণ) বিজিত হলে তাদের ধ্বজাসমূহ রুধিরাক্ত হয়ে অরুণবর্ণ ধারণ করুক ৭
আকাশে যে পক্ষীগণ সঞ্চরণ করছে, সেই পক্ষীগণ মৃত শত্রুসেনার মাংস ভক্ষণের উদ্দেশ্যে নিম্নমুখী হয়ে নিপতিত হোক (নিপদ্যাং)। তথা দ্যুলোকে বিচরণকারী পক্ষীগণও তা-ই করুক। আমমাংসভক্ষক (অর্থাৎ অপক্ক বা কাঁচা মাংস ভক্ষণকারী) কুকুর (শ্বাপদ অর্থাৎ শুন-পাদা), শৃগাল ইত্যাদি ও মক্ষিকাগণ ঐ শত্রুগণের শবভক্ষণার্থে উপক্ৰম করুক (উপক্রমন্তাৎ)। তথা আমমাংসভক্ষণকারী গসমূহ শত্রুসেনাগণের শবশরীরে (কুণপে) আপন তুণ্ড ও পাদের দ্বারা বিলিখন করুক (অর্থাৎ আঁচড়াতে থাকুক) ৮
হে বৃহস্পতি দেব! দেবগণের অধিপতি ইন্দ্র ও ব্রহ্মা এবং তাদের স্রষ্টা প্রজাপতি যে প্রতিজ্ঞারূপ সন্ধানক্রিয়ায় সংহিতবান্ (মিলিত) হয়েছিলেন, এবং হে ইন্দ্র! তোমার সেই প্রতিজ্ঞারূপ সন্ধানক্রিয়ার দ্বারা সকল দেবতাকে এই সংগ্রামে আহ্বান করছি। হে আহূত দেববর্গ! তোমরা আমাদের এই সেনাগণকে জয়যুক্ত করো (ইতঃ জয়ত), শত্রুসেনাগণকে নয় (মা অমূতঃ) ॥৯॥
আঙ্গিরস (অর্থাৎ অঙ্গিরসের পুত্র) দেবমন্ত্রী বৃহস্পতি ও আপন আপন মন্ত্রের দ্বারা তেজঃপ্রাপ্ত (তীক্ষ্ণীকৃত) অন্য ঋষিগণ ও অসুরবর্গের বিনাশকারী হননসাধন (ক্ষয়কর) আয়ুধ দ্যুলোকে অবস্থিত ত্রিসন্ধি নামক দেবের বা সন্ধিত্রয়োপেত বজ্রের ভজনা করুক। (অর্থাৎ বৃহস্পতি দেব ও অন্যান্য ঋষিগণও অসুরনাশী হিংসা-সাধন বজ্রের বা ত্রিসন্ধি দেবের সহায়তা গ্রহণ করুক ॥১০৷
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— উত্তিষ্ঠত ইতি সূক্তস্য শত্ৰুজয়কর্মনি সম্প্রৈষণাদিষু বিনিয়োগ উক্ত। চ (১১কা, ৫অ. ৪সূ)।
.
পঞ্চম সূক্ত : শত্রুনাশনম্
[ঋষি : ভৃগ্বঙ্গিরা। দেবতা : ত্রিষন্ধি। ছন্দ : বৃহতী, জগতী, পংক্তি, অনুষ্টুপ, শক্করী, গায়ত্রী।]
যেনাসৌ গুপ্ত আদিত্য উভাবিশ্চ তিষ্ঠতঃ। ত্রিষন্ধিং দেবা অভজন্তৌজসে চ বলায় চ ৷৷ ১ সর্বাংল্লোকাসমজয়ন্ দেবা আহুত্যানয়া। বৃহস্পতিরাঙ্গিরস বজ্রং যমসিঞ্চতাসুরক্ষয়ণং বধ ৷৷ ২। বৃহস্পতিরাঙ্গিরসো বজ্রং যমসিঞ্চতাসুরক্ষয়ণং বধ। তেনাহমমুং সেনাং নি লিম্পামি বৃহষ্পতেইমিত্রা হন্মোজসা। ৩ সর্বে দেবা অত্যায়ন্তি যে অশন্তি বষট্কৃত। ইমাং জুষধ্বমাহুতিমিতো জয়তঃ মামুতঃ। ৪সর্বে দেবা অত্যায়ন্তু ত্রিষন্ধেরাহুতিঃ প্রিয়া। সন্ধাং মহতীং রক্ষত যয়াগ্রে অসুরা জিতাঃ ॥ ৫॥ বায়ুরমিত্রাণামিম্বগ্রাণ্যাঞ্চ। ইন্দ্র এষাং বাহু প্রতি ভন মা শক প্ৰতিধামিষুম৷৷ ৬ ৷৷ আদিত্য এষামন্ত্ৰং বি নাশয়তু চন্দ্রমা যুমগতস্য পন্থা৷ ৭৷ যদি প্রেয়ুর্দেপুরা ব্ৰহ্ম বর্মাণি চক্রিরে। তনূপানং পরিপাণং কৃথানা যদুপোচিরে সর্বং তদসং কৃধি ॥ ৮ক্রব্যাদানুবৰ্ত্তয় মৃত্যুনা চ পুরোহিত। ত্রিষন্ধে প্রেহি সেনয়া জয়ামিত্রা প্র পদ্যস্ব ॥৯॥ ত্রিষন্ধে তস্য ত্বমমিত্রা পরিবারয়। পৃষদাজ্যপ্রণুত্তানাং মামীষাং মোচি কশ্চন৷ ১০। শিতিপদী সং পতত্বমিত্রাণানমূঃ সিচঃ। মুহ্যদ্যামূঃ সেনা অমিত্রাণাং ন্যকুঁদে। ১১।
বঙ্গানুবাদ –যে ত্রিসন্ধির দ্বারা ঐ দূরে দিবিলোকে দৃশ্যমান আদিত্য রক্ষিত (অর্থাৎ অসুরকৃত উপদ্রব পরিহার পূর্বক পালিত) হয়ে আছেন; যে ত্রিসন্ধির বজের বা বলের দ্বারা সেই আদিত্য ও ইন্দ্র উভয়ে স্বস্থানে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছেন, সেই অসুরক্ষয়কারী আয়ুধভূত ত্রিসন্ধি দেবকে সকল দেবতা ওজঃ (অর্থাৎ শরীরান্তৰ্গত অষ্টম ধাতু) ও বল (অর্থাৎ তেজঃ) প্রাপ্তির নিমিত্ত সেবা করে থাকেন (অভজন্ত)।১।
(ইন্দ্র ইত্যাদি) দেবগণ এই আহুতির (অর্থাৎ পৃষদাজ্য হোমের) দ্বারা অসুরগণকে নিহত করে সর্ব লোক সম্যক জয় করেছিলেন। আঙ্গিরস বৃহস্পতি অসুরগণের ক্ষয়কর রে (অর্থাৎ তাদের বধসাধন) এই আয়ুধ (বা বজ্র) সেচনের দ্বারা নির্মিত করেন (অসিঞ্চত নির্মিতবান)। (অর্থাৎ পৃষদাজাহুতিই এই বজ্ররূপে (বজ্রাত্মনা) পরিণত হয়েছিল–এটাই বক্তব্য) ॥ ২
আঙ্গিরস বৃহস্পতি সেচনের দ্বারা অসুরগণের বধসাধন বজ্ৰায়ুধ নির্মাণ করেছিলেন। হে বৃহস্পতি! তোমার নির্মিত অসুরগণের অন্তকারী সেই বজ্রের দ্বারা শত্রুসেনাকে নিরন্তর ছিন্ন করছি; তারপর (অর্থাৎ সেনাচ্ছেদনের পর) তাদের অধিপতি-শত্রুদের আপন বলের দ্বারা (ওজসা) সংহার করছি ৷৩৷৷
ইন্দ্রপ্রমুখ সকল দেবতা শত্রুগণকে অতিক্রম পূর্বক (বা তাদের সংহারপূর্বক) আমাদের অভিমুখে আগমন করেছেন, যে দেবগণ বষট্রারের দ্বারা দত্ত হবিঃ ভোগ করেন, এমনই হে দেববৃন্দ। আপনারা আমাদের আহুতি সেবন করে প্রীত হয়ে আমাদের সেনাগণকে জয়প্রাপ্ত করুন এবং পরকীয় সেনাগণকে পরাজয় প্রাপ্ত করুন (অর্থাৎ তারা যেন জয়লাভ করতে না পারে) ॥৪॥
ইন্দ্র প্রমুখ সকল দেবতা শত্রুগণকে অতিক্রম পূর্বক আমাদের অভিমুখে আগমন করছেন। তথা সেনাগণকে মোহনকারী ত্রিসন্ধি নামক দেবের পক্ষে আমাদের (নিবেদিত) এই আহুতি প্রীতিকরী হোক। হে দেববর্গ! পূর্বে দেবাসুরযুদ্ধকালে যে জয়বিষয়ক প্রতিজ্ঞার দ্বারা আপনারা অসুরগণকে পরাজিত করেছিলেন, এখন সেই জয়বিষয়ক প্রতিজ্ঞা রক্ষা করুন ৷৷ ৫৷
বায়ুদেব শত্রুগণের শরের (বাণের) অভিমুখে গমন করুন। (অর্থাৎ প্রতিকুল বায়ুর দ্বারা লক্ষ্যপ্রাপ্তির পূর্বেই শত্রুগণের বাণসমূহ নিপাতিত হয়ে যাক)। তথা ইন্দ্রদেব এই শত্রুগণের বাহুগুলি প্রতিকূল আঘাতের দ্বারা ভগ্ন করুন, যাতে তারা আয়ুধগ্রহণে অসামর্থ্য হয়ে যায় (অর্থাৎ ধনুতে পুনরায় শর-যোজনা করতে না পারে) ॥৬॥
সূর্য (আদিত্য) এই শত্রুদের আয়ুধসমূহের সামথ্য-সঙ্কোচন পূর্বক বিনষ্ট করুন এবং চন্দ্রমা (অর্থাৎ সোম) শত্রুগণের (পক্ষে আমাদের প্রাপ্তির উপায়ভূত) পথসমূহকে পৃথক করুন। ৭।
(হে দেব!) শত্রুগণ যদি ইতিপূর্বেই মন্ত্রময় কবচ ধারণ করে থাকে, তবে তাদের সেই মন্ত্রকেই ব্যর্থ করে দাও; সেই সঙ্গে তাদের বৃদ্ধিপ্রাপ্ত দেহ ও অন্নরস ইত্যাদি সবকিছুই বিশুষ্ক করে দাও (অরস কৃধি)। [এই মন্ত্রটি ৫ম কাণ্ডে, ২য় অনুবাকের ৩য় সূক্তে প্রাপ্তব্য] ॥৮॥
হে ত্রিসন্ধি দেব! সম্মুখবর্তী এই আমমাংসভক্ষক শত্রুগণের পশ্চাৎ মৃত্যুদেবতা সহ আপন সেনাগণ সমভিব্যাহারে অনুগমন করো; এবং তার পরে (গত্বা চ) সেই শত্রুগণকে জয়ের নিমিত্ত তাদের মধ্যে প্রবেশ করো (বিশ) ॥৯৷৷
হে ত্রিসন্ধি নামক দেবতা! তুমি তমসা অর্থাৎ মায়াময় অন্ধকারের দ্বারা শত্রুগণকে পরিবেষ্টিত করো। হুয়মান পৃষদাজ্যের (অর্থাৎ হোমের জন্য বিহিত দধিমিশ্র আজ্যের) দ্বারা প্রকৃষ্টরূপে নিক্ষিপ্ত (প্রণুত্তানাং) শত্রুবর্গের মধ্যে একজনও যেন না মুক্ত থাকে। (অর্থাৎ সকল শত্রুকে তমসাবৃত করে হত্যা করো–এটাই বক্তব্য) ॥১০৷৷
শিতিপদী (অর্থাৎ শ্বেতবর্ণপাদশালিনী) গাভী (পূর্ব সূক্তের ৬ষ্ঠ মন্ত্রে উল্লিখিত) আমাদের আয়ুধের দ্বারা পীড্যমান শত্রুসেনার সাথে সঙ্গত হোক। (অর্থাৎ আভিচারিক মন্ত্রে উৎসৃষ্ট গাভীর শত্ৰুহননে নিযুক্ত হোক)। হে ন্যঝুঁদি নামক সর্প! দূরে দৃশ্যমান শত্রুর সেনাদল অদ্য (অর্থাৎ ইদানীং যুদ্ধসময়ে) মুহ্যমান হয়ে পড়ুক। (অর্থাৎ তুমি আপন মায়াবশে তাদের মোহ উৎপাদন করো–এটাই বক্তব্য) ১১।
টীকা –এই সূক্তটিও প্রথম সূক্তের ন্যায় বিনিযুক্ত হয়ে থাকে। (১১কা, ৫৩, ৫সূ)।
.
ষষ্ঠ সূক্ত : শত্রুনাশনম্
[ঋষি : ভৃগ্বঙ্গিরা। দেবতা : ত্রিষন্ধি। ছন্দ : বৃহতী, জগতী, পংক্তি, অনুষ্টুপ, শক্করী, গায়ত্রী।]
মূঢ়া অমিত্রা ন্যকুঁদে জহ্যেষাং বরংবরম্। অনয়া জহি সেনয়া। ১। যশ্চ কবচী যশ্চাকবচোহমিত্রো যশ্চাত্মনি। জ্যাপাশৈঃ কবচপাশৈরজ্ঞনাভিহতঃ শয়াম্ ॥ ২॥ যে বর্মিণো যেহবর্মাণো অমিত্রা যে চ বর্মিণঃ। সর্বাংস্তা অবুদে হতাচ্যুনোহদন্তু ভূম্যা৷ ৩৷৷ যে রথিনো যে অরথা অসাদা যে চ সাদিনঃ। সর্বানদন্তু তা হতান গৃভ্রাঃ শ্যেনাঃ পত্ৰিণঃ ॥ ৪। সহস্ৰকুণপা শেতামামিত্রী সেনা সমরে বধানাম। বিবিদ্ধা ককজাকৃতা৷ ৫৷৷ মর্মাবিধং রোরুবতং সুপর্ণৈরদন্তু দুশ্চিতং মৃদিতং শয়ান। য ইমাং প্রত চীমাহুতিমমিত্রো নো যুযুৎসতি৷ ৬ ৷৷ যাং দেবা অনুষ্ঠিন্তি যস্যা নাস্তি বিরাধন তয়েন্দ্রো হন্তু বৃত্ৰহা বজ্রেণ ত্ৰিষন্ধিনা। ৭৷৷
বঙ্গানুবাদ –হে ন্যর্বুদি নামক দেব! তুমি তোমার মায়ায় আমাদের শত্রুবর্গকে সঞ্জাতমূঢ় করো (অর্থাৎ কর্তব্য-অকর্তব্য সম্পর্কে বিভাগজ্ঞান-শূন্য করে দাও)। এই শত্রুগণের মধ্যে যারা অপেক্ষাকৃত শ্রেষ্ঠ, তাদের নিধন করো। তথা আমাদের সেনাগণ তাদের নিধন করুক। (অর্থাৎ তোমার প্রসাদে আমাদেরও সেনাবর্গ জয়লাভ করুক–জয়ং লভতাং–এটাই বক্তব্য) ১।
আমাদের যে শত্রু কবচী (অর্থাৎ কবচবান বা তনুত্রাণে আবৃত শরীর), যে শত্রু অকবচ (অর্থাৎ কবচরহিত বা অনাবৃতশরীর), যে শত্রু রথ ইত্যাদ যানে বর্তমান, সেই সকল শত্রু জ্য-পাশে (অর্থাৎ আপন আপন ধনুর্গত মৌর্বী বা ছিলাতে), কবচ-পাশে (অর্থাৎ বর্ম বন্ধনের রজ্জতে) ও রথ। ইত্যাদি সম্পর্কিত রঞ্জুতে) বদ্ধ হয়ে সেই স্থানেই শায়িত থাকুক। (অর্থাৎ স্ব-রক্ষণার্থে গৃহীত যে ধনু-কবচ ইত্যাদি তারা ধারণ করেছে, সেগুলিই তাদের গতি-প্রতিবন্ধক হোক)। ২
যে শত্রুগণ বর্মযুক্ত (অর্থাৎ শস্ত্রবারক কবচের দ্বারা যুক্ত), যারা অবর্মিত (অর্থাৎ বর্মরহিত) এবং যে শত্রুগণ বর্ম ব্যতিরিক্ত অন্য কোন শস্ত্র-নিবারকে (প্রকরণে) আচ্ছাদিত, হে অবুদি! তারা সকলে তোমার দ্বারা হত হয়ে ভূমিতে নিপাতিত হোক এবং কুকুর শৃগাল ইত্যাদি শ্বাপদগণ তাদের ভক্ষণ করুক। (অন্তু) ॥৩৷
যে শত্রুগণ রথারূঢ় (রথিনঃ), যারা রথরহিত (অরথাঃ), যারা পদাতিক (অর্থাৎ অশ্ব ইত্যাদি যানরহিত) এবং যারা অশ্বারূঢ়, হে অবুদি! তোমার প্রসাদে আমাদের দ্বারা হত সেই সকল শত্রুকে গৃধ্র, শ্যেন ইত্যাদি পক্ষীগণ নখ ও তুণ্ডের দ্বারা বিদারণ করুক। (অর্থাৎ বিদারণ পূর্বক ভক্ষণ করুক–এটাই বক্তব্য) ॥৪॥
শক্রসম্বন্ধিনী সেনাগণ (আমিত্রী বা শাবী) আমাদের সেনাগণের হননসাধন আয়ুধের সঙ্গমনে (সমরে) বিবিধ শস্ত্রপাতের দ্বারা আহত হয়ে অসংখ্যাত শবযুক্ত হয়ে কুৎসিত বা বিলোল আকৃতিসম্পন্ন হোক ॥৫॥
শোভনপতন (সুপর্ণৈঃ) শরে মর্মবিদ্ধ হয়ে (অর্থাৎ স্তনমূল ইত্যাদি স্থানে বিধ্যমান হয়ে) মর্মান্তিক দুঃখে পূরিত ও চূর্ণীকৃত অঙ্গে আতাঁরব উৎসারণকারী ভূমিতে শায়িত শত্রুকে কুকুরশৃগাল ইত্যাদি শ্বাপদগণ ভক্ষণ করুক। যে শত্রু আমাদের সম্বন্ধিনী এই পৃষদাজ্যের দ্বারা হৃয়মান আহুতিকে প্রতিনিবৃত্তিগতি করার নিমিত্ত যুদ্ধ করতে ইচ্ছা করে তারাও এইভাবে ভক্ষিত হোক ॥৬।
যে পৃষদাজ্যাতি বর্জ্য উৎপাদনের নিমিত্ত দেবগণ অনুষ্ঠিত করেছেন, যে আহুতিতে অমোঘ বীর্যতা বিদ্যমান (অর্থাৎ যাতে অপ্রহিত শক্তি বিদ্যমান), যে আহুতির দ্বারা উৎপাদিত ত্রিসন্ধিসম্পন্ন (অর্তাৎ সন্ধিত্রয়োপেত) বজ্রের দ্বারা ইন্দ্র বৃত্রাসুরকে নিহত করেছিলেন, সেই বজ্রের দ্বারা আমাদের শত্রুগণ হনন প্রাপ্ত হোক (হিনস্তু) ॥৭॥
টীকা –উপযুক্ত সূক্তটিও পূর্ববর্তী সূক্তের ন্যায় শত্ৰজয় কর্মে বিনিযুক্ত হয়ে থাকে। (১১কা, ৫অ. ৬সূ.)।
.
.
[এই অংশটি স্বর্গীয় দুর্গাদাস মহাশয় কর্তৃক সম্পাদিত ও মুদ্রিত অথর্ববেদ-সংহিতার চতুর্থ খণ্ডে যোড়শ কাণ্ডের পরে একাদশ কাণ্ড, দ্বিতীয় অনুবাক, দ্বিতীয় পর্যায় রূপে উপস্থাপিত হয়েছে। যদিও সেইস্থলে এইটির ব্যাখ্যা ইত্যাদি দেওয়া হয়নি; কারণ, এই ৭২টি মন্ত্রই একাধারে ১৮টি মন্ত্রে সংগঠিত হয়ে ১১শ কাণ্ডের ২য় অনুবাকের দ্বিতীয় সূক্তে যথাযথ ব্যাখ্যাত হয়েছে। এই প্রসঙ্গে স্বর্গীয় দুর্গাদাসের বক্তব্য উল্লেখনীয়–অথর্ববেদের অনুক্রমণিকা অংশে একাদশ কাণ্ড দ্বিসপ্ততি অবসানে বিভক্ত হইয়াছে। বক্ষ্যমান দ্বিতীয় পর্যায় তাহারই অন্তর্ভুক্ত বলিয়া উক্ত হয়। এস্থলে অনুক্রমণিকার নির্দেশ মত সেই দ্বিতীয় পর্যায় প্রদত্ত হইল।– ]
.
দ্বিতীয় অনুবাক (দ্বিতীয় পর্যায়)
একতম সূক্ত : ওদনঃ
ততশ্চৈনমন্যেন শীষ্ণা প্রাশীর্ষেন চৈতং পূর্ব ঋষয়ঃ প্রাশন। ১। জ্যেষ্ঠতস্তে প্রজা মরিষ্যতীত্যেনমাহ। ২ তং বা অহং নার্বাঞ্চং ন পরাঞ্চং ন প্রত্যঞ্চ৷৷ ৩৷৷ বৃহস্পতিনা শীষ্ণা ॥ ৪৷৷ তেনৈনং প্রাশিষং তেনৈনমজীগমম্ ॥ ৫৷৷ এষ বা ওদনঃ সর্বাঙ্গঃ সর্বপরুঃ সর্বতঃ॥ ৬৷ সর্বাঙ্গ এব সর্বপরুঃ সর্বতঃ সঃ ভবতি য এবং বেদ ॥৭॥ ততশ্চৈনমন্যাভ্যাং শ্রোত্ৰাভ্যাং প্ৰাশীৰ্যাভ্যাং চৈতং পূর্ব ঋষয়ঃ প্রশ্ন ৮বধিররা ভবিষ্যসীত্যেনমাহ। তং বা অহং নার্বাঞ্চং ন পরাঞ্চং ন প্রত্যঞ্চম। ৯। দ্যাবাপৃথিবীভ্যাং শ্রোত্রাভ্যাম্ ॥ ১০। তাভ্যামেনং প্রাশিষং তাভ্যামেনমজীগম। এষ বা ওদনঃ সর্বাঙ্গঃ সর্বপরুঃ সর্বর্তনুঃ। সর্বাঙ্গ এব সর্বপরুঃ সর্বতঃ সং ভবতি য এবং বেদ। ১১। ততশ্চৈনমন্যাভ্যামক্ষীভ্যাং প্ৰাশীৰ্যাভ্যাং চৈতং পূর্ব ঋষয়ঃ প্রশ্নন। ১২। অন্ধো ভবিষ্যসীত্যেনমাহ। তৎ বা অহং নার্বাঞ্চং ন পরাঞ্চং ন প্রত্যঞ্চ৷ ১৩৷৷ সূর্যাচন্দ্রমসাভ্যামক্ষীভ্যাম্ ॥ ১৪৷ তাভ্যামেনং প্রাশিষং তাভ্যামেনমজীগম। এষ বা ওদনঃ সর্বাঙ্গঃ সর্বপরুঃ সর্বর্তনূঃ। সর্বাঙ্গ এব সর্বপরুঃ সর্বতঃ সং ভবতি য এবং বেদ ॥ ১৫৷৷ ততশ্চৈনমন্যেন মুখেন প্রাশীর্ষেন চৈতং পূর্ব ঋষয়ঃ প্রাশন। ১৬ মুখতস্তে প্রজা মরিষ্যতীত্যেনমাহ। তং বা অহং নাৰ্বাঞ্চং ন পরাঞ্চং ন প্রত্যঞ্চ৷ ১৭৷৷ ব্ৰহ্মণ মুখেন।১৮তেনৈনং প্রাশিষং তেনৈনমজীগম। এষ বা ওদনঃ সর্বাঙ্গঃ সর্বপরুঃ সর্বতঃ। সর্বাঙ্গ এব সর্বপরুঃ সর্বতঃ সং ভবতি য এবং বেদ। ১৯৷৷ ততশ্চৈনমন্যয়া জিয়া প্রাশীয়া চৈতং পূর্ব ঋষয়ঃ প্রশ্ন৷ ২০৷ জিহ্বা তে মরিষ্যতীত্যেনমাহ। তং বা অহং নার্বাঞ্চং ন পরাঞ্চং ন প্রত্যঞ্চ৷৷ ২১। অগ্নেজিহ্বায়া ॥ ২২। তয়ৈনং প্রাশিষং তয়ৈনমজীগম। এষ বা ওদনঃ সর্বাঙ্গঃ সর্বপরুঃ সর্বতঃ। সর্বাঙ্গঃ এব সর্বপরুঃ সর্বতঃ সং ভবতি য এবং বেদ। ২৩৷৷ ততশ্চৈনমন্যৈদন্তৈঃ শীর্যেশ্চৈতং পূর্ব ঋষয়ঃ প্রশ্ন। ২৪ দন্তাস্তে শস্যন্তীত্যেনমাহ। তং বা অহং নার্বাঞ্চং ন পরাঞ্চং ন প্রত্যঞ্চম ॥ ২৫৷৷ ঋতুভির্দন্তৈঃ ॥ ২৬। তৈরেনং প্রাশিষং তৈরেনমজীগম। এষ বা ওদনঃ সর্বাঙ্গঃ সর্বপরুঃ সর্বতনূঃ। সর্বাঙ্গ এব সর্বপরুঃ সর্বতঃ সং ভবতি য এবং বেদ। ২৭ ৷৷ ততশ্চৈনমন্যৈঃ প্রাণাপানৈঃ শীর্যেশ্চৈতং পূর্ব ঋষয় প্রশ্ন ২৮৷ প্রাণাপানাস্তা হাস্যন্তীত্যেনমাহ। তং বা অহং নাৰ্বাঞ্চং ন পরাঞ্চং ন প্রত্যঞ্চ ॥ ২৯। সপ্তর্ষিভিঃ প্রাণাপানৈঃ ॥ ৩০। তৈরেনং প্রাশিষং তৈরেনমজীগম। এষ বা ওদনঃ সর্বাঙ্গঃ সর্বপরুঃ সর্বতঃ। সর্বাঙ্গ এব সর্বপরুঃ সর্বর্তনুঃ সং ভবতি য এবং বেদ ৷৷ ৩১ ॥ ততশ্চৈনমন্যেন ব্যচসা প্রাশীর্ষেন চৈতং পূর্ব ঋষয়ঃ প্রশ্ন৷ ৩২ রাজযক্ষ্মাস্ত্রা হনিষ্যতীত্যেনমাহ। তং বা অহং নার্বাঞ্চং ন পরাঞ্চং ন প্রত্যঞ্চ। ৩৩। অন্তরিক্ষেণ ব্যচসা ॥ ৩৪৷৷ তেনৈনং প্রাশিষং তেনৈনমজীগম। এষ বা ওদনঃ সর্বাঙ্গঃ সর্বপুরুঃ সর্বতঃ। সর্বাঙ্গ এব সর্বপরুঃ সর্বতঃ সং ভবতি য এবং বেদ। ৩৫ততশ্চৈনমন্যেন পৃষ্ঠেন শীর্ষেন চৈতং পূর্ব ঋষয়ঃ প্রশ্নন ৷৷ ৩৬৷৷ বিদ্যুৎ স্বা হনিষ্যতীত্যনমাহ। তং বা অহং নার্বাঞ্চং ন পরাঞ্চং ন প্রত্যঞ্চ। ৩৭। দিবা পৃষ্ঠেন। তেনৈনং প্রাশিষং তেনৈনমজীগমম। এষ বা ওদনঃ সর্বাঙ্গঃ সর্বপরুঃ সর্বর্তনুঃ। সর্বাঙ্গ এব সর্বপরুঃ সর্বতঃ সং ভবতি য এবং বেদ ॥ ৩৮ ততশ্চৈনমন্যেনোরসা প্রাশীর্ষেন চৈতং পূর্ব ঋষয়ঃ প্রাশন। ৩৯। কৃষ্যা ন রাৎস্যসীত্যেনমাহ। তং বা অহং নার্বাঞ্চং ন পরাঞ্চং ন প্রত্যঞ্চ ৷৷ ৪০ পৃথিব্যোরসা। তেনৈনং প্রাশিষং তেনৈনমজীগম। এষ বা ওদনঃ সর্বাঙ্গঃ সর্বপরুঃ সর্বতনূঃ। সর্বাঙ্গ এব সর্বপরুঃ সর্বতঃ সং ভবতি য এবং বেদ ॥ ৪১। ততশ্চৈনমন্যেনোদরেণ প্রাশীর্ষেন চৈতং পূর্ব ঋষয়ঃ প্রশ্ন ৷৷ ৪২৷৷ উদরদারস্তুা হনিষ্যতীত্যেনমাহ। তৎ বা অহং নার্বাঞ্চং ন পরাঞ্চং ন প্রত্যঞ্চম ৷ ৪৩৷৷ সত্যেনোদরেণ। তেনৈনং প্রাশিষং তেনৈনমজীগমম। এষ বা ওদনঃ সর্বাঙ্গঃ সর্বপরুঃ সর্বতঃ। সর্বাঙ্গ এব সর্বপরুঃ সর্বতঃ সং ভবতি য এবং বেদ ॥ ৪৪৷৷ ততশ্চৈনমন্যেন বস্তিনা প্রাশীর্ষেন চৈতং পূর্ব ঋষয়ঃ প্রশ্ন ৷৷ ৪৫৷৷ অন্দু মরিষ্যসীত্যেনমাহ। তং বা অহং নাবাঞ্চং ন পরাঞ্চং ন প্রত্যঞ্চম ৷৷ ৪৬। সমুদ্রেণ বস্তিনা ॥ ৪৭ ॥ তেনৈনং প্রাশিষং তৈনৈনমজীগম। এষ বা ওদনঃ সর্বাঙ্গঃ সর্বপরুঃ সর্বতঃ। সর্বাঙ্গ এব সর্বপরুঃ সর্বর্তনুঃ সং ভবতি য এবং বেদ ৷৷ ৪৮৷৷ ততশ্চৈনমন্যাভ্যামূরুভ্যাং প্ৰাশীৰ্যাভ্যাং চৈতং পূর্ব ঋষয়ঃ প্রাশন। ৪৯৷ ঊরু তে মরিষ্যত ইত্যেনমাহ। তৎ বা অহং নাৰ্বাঞ্চং ন পরাঞ্চং ন প্রত্যঞ্চ ৷৷ ৫০৷৷ মিত্রাবরুণয়োরূরুভ্যাম্ ॥ ৫১। তাভ্যামেনং প্রাশিষং তাভ্যামেনমজীগম। এষ বা ওদনঃ সর্বাঙ্গঃ সর্বপরুঃ সর্বতঃ। সর্বাঙ্গ এব সর্বপরুঃ সর্বর্তনুঃ সং ভবতি য এবং বেদ। ৫২। ততশ্চৈনমন্যাভ্যামষ্ঠীব্যাং প্ৰাশীৰ্যাভ্যাং চৈতং পূর্ব ঋষয়ঃ প্রশ্ন ৷৷ ৫৩৷৷ শ্রামো ভবিষ্যসীত্যেনমাহ। তং বা অহং নাৰ্বাঞ্চং ন পরাঞ্চং ন প্রত্যঞ্চম্ ॥ ৫৪৷ ত্বষ্টুরষ্ঠীবদ্যা। তাভ্যামেনং প্রাশিষং তাভ্যামেনমজীগম। এষ বা ওদনঃ সর্বাঙ্গঃ সর্বপরুঃ সর্বতঃ। সর্বাঙ্গ এব সর্বপরুঃ সর্বতঃ সং ভবতি য এবং বেদ। ৫৫৷৷ ততশ্চৈনমন্যাভ্যাং পাদাভ্যাং প্ৰাশীৰ্যাভ্যাং চৈতং পূর্ব ঋষয়ঃ প্রশ্ন৷ ৫৬৷৷ বহুচারী ভবিষ্যসীত্যেনমাহ। তং বা অহং নার্বাঞ্চং ন পরাঞ্চং ন প্রত্যঞ্চম্ ॥ ৫৭। অশ্বিনোঃ পাদাভ্যাম। তাভ্যামেনং প্রাশিষং প্রাশিষং তাভ্যামেনমজীগম। এষ বা ওদনঃ সর্বাঙ্গঃ সর্বপরুঃ সর্বতঃ। সর্বাঙ্গ এব সর্বপরুঃ সর্বর্তনুঃ সং ভবতি য এবং বেদ ॥ ৫৮৷ ততশ্চৈনমন্যাভ্যাং প্রপদাভ্যাং প্ৰাশীৰ্যাভ্যাং চৈতং পূর্ব ঋষয়ঃ প্রশ্ন ৷৷ ৫৯৷ সর্পস্থা হনিষ্যতীত্যেনমাহ। তং বা অহং নাৰ্বাঞ্চং ন পরাঞ্চং ন প্রত্যঞ্চ ৷৷ ৬০৷ সবিতুঃ প্রপদাভ্যাম। তাভ্যামেনং প্রাশিষং তাভ্যামেনমজীগম। এষ বা ওদনঃ সর্বাঙ্গঃ সর্বপরুঃ সর্বর্তনূঃ। সর্বাঙ্গ এব সর্বপরুঃ সর্বতঃ সং ভবতি য এবং বেদ। ৬১ ততশ্চৈনমন্যাভ্যাং হস্তাভ্যাং প্ৰাশীৰ্যাভ্যাং চৈতং পূর্ব ঋষয়ঃ প্রশ্ন৷ ৬২। ব্রাহ্মণং হনিষ্যসীত্যেনমাহ। তং বা অহং নার্বাঞ্চং ন পরাঞ্চং ন প্রত্যঞ্চম ৷ ৬৩ ৷৷ ঋতস্য হস্তাভ্যাম্ ৷৷ ৬৪ ৷৷ তাভ্যামেনং প্রাশিষং তাভ্যামেনমজীগম, এষ বা ওদনঃ সর্বাঙ্গঃ সর্বপরুঃ সর্বর্তঃ। সর্বাঙ্গ এব সর্বপরুঃ সর্বর্তনুঃ সং ভবতি য এবং বেদ। ৬৫৷৷ ততশ্চৈনমন্যয়া প্রতিষ্ঠয়া প্রাশীয়া চৈতং পূর্ব ঋষয়ঃ প্রশ্ন৷ ৬৬৷৷ অপ্রতিষ্ঠানোহনায়তনো মরিষ্যসীত্যেনমাহ৷ ৬৭৷ তং বা অহং নার্বাঞ্চং ন পরাঞ্চং ন প্রত্যঞ্চম ৷ ৬৮। সত্যে প্রতিষ্ঠায়। ৬৯। তয়ৈনং প্রাশিষং তয়ৈনমজীগম ৷৷ ৭০৷৷ এষ বা ওদনঃ সর্বাঙ্গঃ সর্বপরুঃ সর্বঃ ॥ ৭১। সর্বাঙ্গ এব সর্বপরুঃ সর্বতঃ সং ভবতি য এবং বেদ। ৭২
[ইতি একাদশং কাণ্ডং সমাপ্তম]