2 of 3

১১।৩ একাদশ কাণ্ড : তৃতীয় অনুবাক

তৃতীয় অনুবাক
প্রথম সূক্ত : ব্রহ্মচর্যম
[ঋষি : ব্ৰহ্মা দেবতা : ব্রহ্মচারী ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, শক্করী, বৃহতী, জগতী, অনুষ্টুপ, উষ্ণিক]

ব্রহ্মচারীষ্ণংশ্চরতি রোদসী উভে তস্মিন্ দেবাঃ সন্মনসো ভবন্তি। স দাধার পৃথিবীং দিবং চ স আচার্যং তপসা পিপর্তি ॥১॥ ব্রহ্মচারিণং পিতরো দেবজনাঃ পৃথগ দেবা অনুসংযন্তি সর্বে। গন্ধর্বা এনমায় ত্রয়স্ত্রিংশৎ ত্রিশতাঃ ষট্‌সহস্রাঃ সর্বাস দেবাংশুপসা পিপর্তি ॥২॥ আচার্য উপনয়মানো ব্রহ্মচারিণং কৃণুতে গর্ভমেন্তঃ। তং রাত্রীস্তিস্র উদরে বিভর্তি তং জাতং দ্রষ্ট্রমভিসংযন্তি দেবাঃ ॥৩॥ ইয়ং সমিৎ পৃথিবী দৌদ্বিতীয়োতান্তরিক্ষং সমিধা পৃণাতি। ব্রহ্মচারী সমিধা মেখলয়া শ্রমেণ লোংস্তপসা পিপর্তি ॥৪॥ পূর্বো জাতো ব্ৰহ্মণণা ব্রহ্মচারী ঘর্মং বসানস্তপসোদতিষ্ঠৎ। তম্মাজ্জাতং ব্রাহ্মণং ব্রহ্ম জ্যেষ্ঠং দেবাশ্চ সর্বে অমৃতেন সাকুম্ ॥৫ব্রহ্মচার্যেতি সমিধা সমিদ্ধঃ কাষ্ণং বসানো দীক্ষিতো দীর্ঘশ্মঃ। স সদ্য এতি পূর্বম্মাদুত্তরং সমুদ্রং লোকাৎসংগৃভ্য মুহুরাচরিৎ ॥৬৷৷ ব্রহ্মচারী জনয়ন্ ব্ৰহ্মাপো লোকং প্রজাপতিং পরমেষ্ঠিনং বিরাজ। গর্ভো ভূত্বামৃতস্য যোনাবিদ্ৰো হ ভূত্বাসুরাংস্তুতই ॥৭॥ আচাৰ্যস্ততক্ষ নভসী উভে ইমে উৰী গম্ভীরে পৃথিবীং দিবং চ। তে রক্ষতি তপসা ব্রহ্মচারী তস্মিন দেবাঃ সম্মনসো ভবন্তি ॥৮ ইমাং ভূমিং পৃথিবীং ব্রহ্মচারী ভিক্ষামা জভার প্রতমো দিবং চ। তে কৃত্বা সমিধাবুপাস্তে তয়োরার্পিতা ভুবনানি বিশ্বা ॥৯॥ অৰ্বাগন্যঃ পরো অনন্যা দিবশৃষ্ঠাদ গুহা নিধী নিহিতৌ ব্রাহ্মণস্য। তৌ রক্ষতি তপসা ব্রহ্মচারী তৎ কেবলং কৃণুতে ব্রহ্ম বিদ্বান্ ॥১০৷৷

বঙ্গানুবাদ –আকাশ ও পৃথিবী এই দুই লোককে ব্যাপ্ত করণশালী ব্রহ্মচারীর (বেদান্তক ব্রহ্মে অভ্যস্ত জনের) প্রতি সকল দেবতা সমানমনস্ক (অর্থাৎ অনুগ্রহবুদ্ধিযুক্ত) হয়ে থাকেন। তিনি আপন তপের প্রভাবে পৃথিবী ও আকাশকে পোষণ করে থাকেন এবং আপন গুরুকেও পালন করেন। (অর্থাৎ সৎ পথাবলম্বনের প্রবৃত্তির দ্বারা আচার্যকেও পরিপালন করেন)। ১।

ব্রহ্মচারীর রক্ষার নিমিত্ত দেবজন সংজ্ঞায় পরিচিত দেবগণ এবং ইন্দ্র প্রমুখ সকল দেবতা তার অনুসরণ করেন; গন্ধর্ব বিশ্বাবসু ইত্যাদিও তার পশ্চাতে গমন করতে থাকেন। অষ্টবসু ইত্যাদি ত্রয়স্ত্রিংশৎ (৩৩) দেবতা, তার বিভূতিরূপ তিনশত তিন (এ্যত্তরত্রিশতসংখ্যক) দেবতা হতে আরম্ভ করে ছয় সহস্র দেবতা পর্যন্ত সকলকে আপন তপের দ্বারা পোষণ করে থাকেন। ২৷

 উপনয়মান মানবককে উপগময়ন (উপনয়ন করণশালী) আচার্য আপন বিদ্যাময় শরীরের মধ্যে (গর্ভে) স্থাপিত করে, তিন রাত্রি পর্যন্ত তাকে (সেই ব্রহ্মচারী মানবককে) আপন উদরে রক্ষা করেন, চতুর্থ দিবসে সেই বিদ্যাময় শরীর হতে উৎপন্ন ব্রহ্মচারীকে দর্শনের নিমিত্ত তার সম্মুখে আগত হন ৷ ৩৷

 পরিদৃশ্যমান পৃথিবী এই ব্রহ্মচারীর প্রথম সমি, এবং আকাশ তাঁর দ্বিতীয় সমিৎ। অধিকন্তু অন্তরিক্ষে অর্থাৎ আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যভাগের অগ্নিতে স্থাপিত সমিধের দ্বারা ব্রহ্মচারী সংসারকে সন্তুষ্ট করে থাকেন। এই প্রকারে সমিধসমূহ, মেখলা (শরপত্র ইত্যাদি দ্বারা নির্মিত ধারণীয় উপবীত), ইন্দ্রিয় নিগ্রহ-উদ্ভূত শ্রম ও দেহসন্তাপক অন্যান্য নিয়মগুলিকে পালন পূর্বক (অর্থাৎ তপস্যায়) পৃথিবী ইত্যাদি লোকসমূহকে পোষণ করে থাকেন। ৪

ব্রহ্মচারী ব্ৰহ্ম হতেও প্রথমে প্রকট হয়েছেন; তিনি তেজোময় রূপ ধারণ করে তপের সাথে যুক্ত হয়েছেন। সেই ব্রহ্মচারী রূপের দ্বারা দীপ্ত হয়ে ব্রহ্মার দ্বারা শ্রেষ্ঠ বেদাত্মক ব্ৰহ্ম প্রকট হয়েছেন এবং তার দ্বারা প্রতিপাদিত অগ্নি ইত্যাদি দেবতাও আপন অমৃতত্ব। ইত্যাদি গুণ সমুদায়ের সাথে প্রকট হয়েছেন। ৫

প্রাতে ও সায়ংকালে অগ্নিতে রক্ষিত সমিধ সমূহ এবং সেগুলি হতে উৎপন্ন তেজের দ্বারা তেজস্বী, কৃষ্ণ মৃগচর্মধারী যে ব্রহ্মচারী আপন ভিক্ষাচরণ ইত্যাদি নিয়মসকল পালন করে থাকেন, সেই দীর্ঘশ্মশ্রুধারী ব্রহ্মচারী শীঘ্রই পূর্ব সমুদ্র হতে উত্তর সমুদ্রে গমন করেন। (অর্থাৎ তার তপস্যার মহিমা ব্যাপ্ত হয়–এটাই তাৎপর্য)। তথা তিনি পৃথিবী অন্তরিক্ষ ইত্যাদি লোকসমূহকে হস্তে ধারণ পূর্বক আপন অভিমুখীন করে থাকেন। ৬।

ব্রহ্মচারী ব্রহ্মতেজের (বা ব্রহ্মচর্যের) দ্বারা ব্রাহ্মণ জাতিকে উৎপন্ন করে থাকেন। তিনিই গঙ্গা ইত্যাদি নদীগুলিকে প্রকট করে থাকেন। তিনিই স্বর্গ ইত্যাদি লোক সমূহ, প্রজাপতি পরমেষ্ঠী এবং বিরাটকে উৎপন্ন করে থাকেন। এই অমরণশীল ব্রহ্মের সত্ত্ব-রজঃ-তমঃ গুণের সাথে যুক্ত (অর্থাৎ ত্রিগুণাত্মিকা) প্রকৃতির মধ্যে গর্ভরূপ স্বীকার করে প্রথম ব্রহ্মচারী প্রাণধারীগণকে উৎপন্ন করছেন এবং তার পরে ইন্দ্র হয়ে সুরবিরোধী রাক্ষসগণকে বিনাশ করছেন ॥ ৭৷

এই আকাশ ও পৃথিবী বিশাল। এই পৃথিবী ও আকাশের উৎপাদক আচার্যকেও ব্রহ্মচারী রক্ষা করেন। সকল দেবতা এমনই ব্রহ্মচারীর উপর কৃপা বর্ষণ করে থাকেন। এই বিস্তীর্ণ পৃথিবীকে ব্রহ্মচারী প্রথমে ভিক্ষারূপে গ্রহণ করে পুনরায় দ্বিতীয় ভিক্ষারূপে সেই আকাশকে গ্রহণ করেছেন ॥ ৮।

 পুনরায় আকাশ ও পৃথিবীকে সমিধরূপে অগ্নিকে আরাধনা পূর্বক জগৎসংসারের সকল প্রাণীকে সেই আকাশ ও পৃথিবীর আশ্রয়ীভূত করেছেন। ৯

দুলোকের পৃষ্ঠ (অর্থাৎ উপরিভাগ) হতে অবাকে (অর্থাৎ অর্ধেভূলোকে) একটি নিধি (অর্থাৎ বেদাত্মক ধন) গুহায় (অর্থাৎ আচার্যের হৃদয়রপ গুহার অভ্যন্তরে) গচ্ছিত আছে। তার উপরিদেশস্থ গুহায় অপর একটি দেবতারূপ নিধি আছে, যা জ্ঞাত হওয়া যায় না। অধীতবেদের সম্বন্ধিনী (অর্থাৎ বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণের গচ্ছিত) সেই নিধি দুটি ব্রহ্মচারী। তপস্যার দ্বারা (অর্থাৎ আপন ব্রহ্মচর্য-মহিমায়) রক্ষা করছেন। বেদরাশির শব্দ ও অর্থের সাথে যা সম্বন্ধিত (অর্থাৎ অধিষ্ঠানভূত) পরব্রহ্মকে বেদবি ব্রাহ্মণ সাক্ষাৎ করে থাকেন। ১০।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— তৃতীয়েনুবাকে পঞ্চ সূক্তানি। তত্র ব্রহ্মচারীষ্ণংশ্চরতি ইত্যাদিস্ত্রিভিঃ সূক্তৈব্ৰহ্মচারিণো মাহাত্মং উচ্যতে। তস্য ব্রহ্মযজ্ঞ জপে বিনিয়োগঃ ॥(১১কা, ৩অ. ১সূ.)।

টীকা –এই অনুবাকের পাঁচটি সূক্তের মধ্যে প্রথম তিনটি সূক্তে ব্রহ্মচারীর মাহাত্ম্য-কথা বর্ণনা করা হয়েছে। এগুলি ব্ৰহ্মযজ্ঞ-জপে বিনিয়োগ করণীয় ॥ (১১কা, ৩অ. ১সূ)।

.

দ্বিতীয় সূক্ত : ব্রহ্মচর্যম

[ঋষি : ব্রহ্মা দেবতা : ব্রহ্মচারী ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, শক্করী, বৃহতী, জগতী, অনুষ্টুপ, উষ্ণিক]

অবাগন্য ইতত অন্যঃ পৃথিব্যা অগ্নী সমেতো নভসী অন্তরেমে। তয়োঃ শয়ন্তে রশ্ময়োহধি দৃঢ়াস্তানা তিষ্ঠতি তপসা ব্রহ্মচারী৷ ১৷৷ অভিক্ৰন্দ স্তনয়ন্নরুণঃ শিতিঙ্গো বৃহচ্ছেপোহনু ভূমৌ জভার। ব্রহ্মচারী সিঞ্চতি সানৌ রেতঃ পৃথিব্যাঃ তেন জীবন্তি প্রদিশতঃ ॥ ২॥ অগ্নৌ সূর্যে চন্দ্রমসি মাতরিশ ব্রহ্মচাৰ্যন্দু সমধিমা দধাতি। তাসামচীংষি পৃথগত্রে চরন্তি তাসামাজ্যং পুরুষো বৰ্ষমাপঃ ৷ ৩৷৷ আচার্যো মৃত্যুবরুণঃ সোম ওষধয়ঃ পয়ঃ। জীমূতা আসৎসত্বানস্তৈরিদং স্বরাভূত৷৷ ৪৷ অমা ঘৃতং কৃণুতে কেবলমাচার্যো ভূত্বা বরুণো যদ্যদৈচ্ছৎ প্রজাপতৌ। তদ ব্রহ্মচারী প্রাযচ্ছৎ স্বান্ মিত্রো অধ্যাত্মনঃ ৷৷ ৫৷৷ আচার্যো ব্রহ্মচারী ব্রহ্মচারী প্রজাপতিঃ। প্রজাপতির্বি রাজতি বিরাডিন্দ্রোহভবদ বশী৷৷ ৬৷৷ ব্রহ্মচর্যেণ তপসা রাজা রাষ্ট্রং বি রক্ষতি। আচার্যো ব্রহ্মচর্ষেণ ব্রহ্মচারিণমিচ্ছতে৷৷ ৭৷৷ ব্রহ্মচর্যেণ কন্যা যুবানং বিন্দুতে পতিম্। অনড়ান্ ব্ৰহ্মচর্যেণাশ্বো ঘাসং জিগীতি৷ ৮৷৷ ব্রহ্মচর্যেণ তপসা দেবা মৃত্যুমপাঘ্নত। ইন্দ্রো হ ব্ৰহ্মচর্যেণ দেবেভ্যঃ স্ব রাভরৎ ৯৷৷ ওষধয়ো ভূতভব্যমহোরাত্রে বনস্পতিঃ। সম্বৎসরঃ সহর্তুভিস্তে জাতা ব্রহ্মচারিণঃ ১০

বঙ্গানুবাদ –এক অনুদিত সূর্যাত্মক অগ্নি এই পৃথিবীর নীচে বর্তমান রয়েছে, অপর পার্থিব অগ্নি পৃথিবীর উপরে রয়েছে। সূর্যোদয়ের পর এই আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে ঐ দুই অগ্নি পরস্পর মা সংযুক্ত হয়ে থাকে। সেই সূর্য ও অগ্নি-সম্বন্ধি রশ্মিসমূহ পরস্পর সম্মিলনের দ্বারা অতি দৃঢ় হয়ে আকাশ ও পৃথিবীকে আশ্রয় করে। এই অগ্নিদ্বয়োপেত (দুই অগ্নিকে প্রাপ্ত) ভূমিতে ব্রহ্মচারী আপন। তপোমহিমায় অধিষ্ঠান করেন। (অর্থাৎ অগ্নিরূপে সেই ভূমির অধিদেবতা হয়ে থাকেন)। ১।

সর্বদিকে গর্জনকারী জলপূর্ণ মেঘকে প্রাপ্ত হয়ে বরুণ দেবতা আপন বীর্যকে পৃথিবীর উদ্দেশে প্রেরণ করছেন। ব্রহ্মচারী সেই বরুণাত্মক বীর্যকে আপন তপোমহিমায় পৃথিবীর উন্নতপ্রদেশে বর্ষণ করছেন। সেই উদকলক্ষণ বীর্যের দ্বারা প্রাচী ইত্যাদি চারি প্রধান দিকের প্রাণীগণ প্রাণ ধারণ করে (বা সমৃদ্ধ হয়)। (যে রাজ্যে ব্রহ্মচারী বাস করেন, সেই স্থানে যথাকালে বৃষ্টি হয়–এটাই তাৎপর্য)। ২।

ব্রহ্মচারী (অর্থাৎ ব্রহ্মচর্যনিয়মবান্ পুরুষ) পার্থিব অগ্নিতে অন্তরিক্ষগত সূর্যে, চন্দ্রে, মাতরিশ্বা বায়ুতে ও অন্দু (অর্থাৎ জলে সমিধসমূহ প্রক্ষেপণ করেন। এই অগ্নি ইত্যাদির তেজ পৃথক পৃথক রূপে অন্তরিক্ষে অবস্থান করে। ব্রহ্মচারীর সমিধের দ্বারা সমৃদ্ধ অগ্নি ইত্যাদি আজ্য (অর্থাৎ গো-সমৃদ্ধি), পুরুষ (অর্থাৎ পুত্র ইত্যাদির সমৃদ্ধি), বর্ষ (অর্থাৎ কালে বৃষ্টির আবির্ভাব) ও আপ, (অর্থাৎ বাপী, কূপ, তড়াগ ইত্যাদির সমৃদ্ধি) উৎপন্ন করে থাকেন ৷ ৩৷

আচার্যই মৃত্যু দেবতা (কারণ, অপরাধাচরণের নিমিত্ত রুষ্ট হয়ে অপরাধীর জীবন অপহরণ করেন); তিনিই বরুণ অর্থাৎ পাপের নিষেধক (কারণ পরিচর্যাকারী ব্রহ্মচারীর পাপের নিবারণ করেন); তিনিই সোম বা চন্দ্রমা (কারণ চন্দ্রবৎ আহ্বালকর); তিনিই ওষধি সমূহ (কারণ ব্রীহি যব ইত্যাদি ঔষধিরূপে প্রাণরক্ষক), তিনিই পয়ঃ বা দুগ্ধ (কারণ দুগ্ধরূপে পুষ্টিদায়ক)। এই সবই আচার্যের প্রসাদে লভ্য বলে এগুলি সবই আচাৰ্যাত্মক। (অথবা মৃত্যু দেবতা যুম নচিকেতাকে ব্রহ্মবিদ্যা উপদেশের দ্বারা, কিংবা বরুণ দেবও ভৃগুকে উপদেশ দান করে যেমন আচার্য হয়েছেন, সেই রকম আচার্য হলেন সর্বদেবাত্মক এটাই তাৎপর্য)। বরুণ দেবতা যে সদনশীল মেঘগুলিকে আপন পার্শ্বে রক্ষা করেছেন, তারাই তার অনুচর, তারাই বর্ষণশীল জলকে ধারণ করছে (বা আহরণ করছে)। ৪।

বরুণদেব আচার্য হয়ে ক্ষরণশীল জলরাশিকে নিজের সাথে একাত্ম করে নিয়েছেন। তিনি প্রজাপতির নিকট হতে যে ফল ইচ্ছা করেছিলেন, মিত্রদেব ব্রহ্মচারী হয়ে স্বকীয় ব্রহ্মচর্য-মাহাত্মে আপন শরীর হতে সে সবই আচার্যভূত বরুণকে দিয়েছিলেন। (এর দ্বারা ব্রহ্মচারীর পালনীয় একটি নিয়ম কথিত হলো যে, শিষ্যরূপে বিদ্যা-উপদেশকারী আচার্যকে তার আকাঙ্ক্ষিত ধন দক্ষিণারূপে প্রদান করা কর্তব্য)। ৫৷৷

বিদ্যা উপদেশ করে আচার্য ব্রহ্মচারী রূপে প্রকট হয়ে থাকেন। তিনিই ব্রহ্মচর্য পালনরূপ তপস্যার দ্বারা মহিমাবা হয়ে প্রজাপতি অর্থাৎ জগৎস্রষ্টা হয়ে থাকেন। এবং সেই প্রজাপতি হতে তিনি বিরাটু (অর্থাৎ শ্রুতি-কথিত স্থলপ্রপঞ্চশরীরাভিমানী ঈশ্বর) বিরাজমান হয়ে যান। এবং বিরাট হতে তিনিই পরমৈশ্বর্যযুক্ত সর্বজগৎস্রষ্টা পরমাত্মা হয়ে থাকেন। (সেইজন্যই বলা হয় যে, পরম্পরা অনুক্রমে আচার্যের সর্বদেবাত্মক মহিমা কেউই বর্ণনা করতে সক্ষম নয়)। ৬।

 বেদকে ব্রহ্ম বলা হয়। বেদাধ্যয়নের নিমিত্ত আচরণীয় কর্মই (যথা,সমিধাদান অর্থাৎ যজ্ঞকাষ্ঠ স্থাপন, ভৈক্ষচর্য অর্থাৎ ভিক্ষাচরণ, ঊর্ধরেতস্কত্ব অর্থাৎ শুক্ৰসংযম ইত্যাদি) ব্রহ্ম। সেই ব্রহ্মচর্যের দ্বারা এবং তার দ্বারা পালিত উপবাস ইত্যাদি ব্রতনিয়মের দ্বারা রাজা আপন রাজ্য বিশেষভাবে রক্ষা করেন (অর্থাৎ পালন করেন) এবং আচার্যও ব্রহ্মচর্যের দ্বারাই ব্রহ্মচারীকে আপন শিষ্য করেন ॥৭॥

অকৃতবিবাহ (অবিবাহিতা) কন্যা ব্রহ্মচর্যের দ্বারাই যুবত্ব-গুণযুক্ত উৎকৃষ্ট পতি প্রাপ্ত হন। (এমনকি পশুজাতিও ব্রহ্মচর্যের দ্বারাই আপন অভিলষিত ফল লাভ করে, যেমন–) শকট-বহনকারী পুঙ্গম (বৃষ) ঊর্দ্ধরেতস্কত্ব ইত্যাদি ধর্মের (ব্রহ্মচর্যের) দ্বারাই উৎকৃষ্ট পতি লাভ করে এবং অশ্ব ব্রহ্মচর্যের দ্বারাই ১ ভক্ষণীয় তৃণ ইত্যাদি ভক্ষণ করতে ইচ্ছা করে। (বক্তব্য এই যে, অবিবাহিত কালে কন্যার আত্মসংযমরূপ ব্রহ্মচর্য তাকে মনোমত পতি প্রাপ্ত করায়; গাভী-সঙ্গমে অপারঙ্গম বলদ রেতঃ হীনতারূপ ব্রহ্মচর্যের দ্বারা মনোমত প্রভু লাভ করে; অশ্ব অশ্বী-সঙ্গমে অনিচ্ছারূপ ব্রহ্মচর্যের দ্বারাই মনোমত তৃণ ইত্যাদি নিরামিষ খাদ্য প্রাপ্ত হয়)। ৮

অগ্নি প্রমুখ দেবতাগণ ব্রহ্মচর্যের দ্বারাই মৃত্যুকে জয় (বা দূর) করেছেন। ব্রহ্মচর্যের দ্বারাই ইন্দ্র দেবতাগণকে স্বর্গপ্রাপ্ত করিয়েছেন। ৯।

ব্রীহি, যব ইত্যাদি গ্রাম্য ঔষধিসমূহ, অন্য বনৌষধিসমূহ, দিবা-রাত্রি, অতীত ও অনাগত কালসমূহ (বা দ্বাদশমাসাত্মক কাল), হেমন্ত-শীত ইত্যাদি ঋতুরাজি–এ সবই ব্রহ্মচারীর তপস্যা-মাহাত্মে উৎপন্ন হয়েছে। ১০।

টীকা –এই সূক্তটি প্রথম সূক্তের সাথেই বিনিয়োগ হয়ে থাকে। (১১কা, ৩অ. ২সূ.)।

.

তৃতীয় সূক্ত : ব্রহ্মচর্যম

 [ঋষি : ব্রহ্মা দেবতা : ব্রহ্মচারী ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, শক্করী, বৃহতী, জগতী, অনুষ্টুপ, উষ্ণিক]

পার্থিবা দিব্যাঃ পশব আরণ্যা গ্রাম্যাশ্চ যে। অপক্ষাঃ পক্ষিণশ্চ যে তে জাতা ব্রহ্মচারিণঃ ১। পৃথক সর্বে প্রাজাপত্যাঃ প্রাণানাত্মসু বিভ্রতি। তাৎসর্বান্ ব্ৰহ্ম রক্ষতি ব্রহ্মচারিণ্যাভৃত৷ ২দেবানামেতৎ পরিমূতমনভ্যারূটং চরতি রোমান। তস্মাজ্জাতং ব্রাহ্মণং ব্রহ্ম জ্যেষ্ঠং দেবাশ্চ সর্বে অমৃতেন সাক৷৷ ৩৷৷ ব্রহ্মচারী ব্ৰহ্ম ভ্ৰাজদ বিভর্তি তস্মিন্ দেবা অধি বিশ্বে সমোতাঃ। প্রাণাপানৌ জনয়ন্নাদ ব্যানং বাচং মনো হৃদয়ং ব্রহ্ম মেধা৷৷ ৪৷ চক্ষুঃ শ্রোত্রং যশো অস্মাসু ধেহন্নং রেতো লোহিতমুদর৷৷ ৫৷৷ তানি কল্পদ ব্রহ্মচারী সলিলস্য পৃষ্ঠে তোহতিষ্ঠৎ প্যমানঃ সমুদ্রে। স স্নাতত বঃ পিঙ্গলঃ পৃথিব্যাং বহু রোচতে৷ ৬

বঙ্গানুবাদ –পার্থিব জনগণ, দিব্যলোকের প্রাণীগণ, অরণ্যের সিংহ-শার্দুল ইত্যাদি ও গ্রাম্য। গো-অশ্ব-মহিষ ইত্যাদি পশুগণ, পক্ষরহুত ও পক্ষবন্ত জীব বা বস্তুসমূহ যা কিছু, তা সবই ব্রহ্মচর্যের প্রভাবেই উৎপন্ন হয়েছে ৷ ১।

প্রজাপতির দ্বারা সৃষ্ট দেব-মনুষ্য ইত্যাদি সকলেই আপন আপন প্রাণকে (স্বস্বসম্বন্ধিন এব) ধারণ বা পোষণ করছে। আচার্যের মুখ-নিঃসৃত বেদাত্মক ব্রহ্মই ব্রহ্মচারীর মধ্যে স্থিত হয়ে সকল প্রাণীকে রক্ষা করছে। ২৷৷

এই পরব্রহ্ম দেবতাগণ হতে পরোক্ষ নন, তিনি দেবতাগণের দ্বারা পরিগৃহীত (অর্থাৎ তাদের আত্মরূপে সাক্ষাৎকৃত)। তিনি আপন সচ্চিদানন্দ রূপে দীপ্তিবান্ থাকেন, তার অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ কেউ নেই। তার নিকট হতেই ব্রহ্ম-সম্বন্ধি বা ব্রাহ্মণগণের অসাধারণ (অর্থাৎ প্রবৃদ্ধতম বা প্রশংসনীয়) ধন বেদাত্মক ব্রহ্ম প্রকট হয়েছেন এবং তৎপ্রতিপাদ্য অগ্নি ইত্যাদি সকল দেবগণ অমৃতত্বের সাথে যুক্ত হয়ে প্রকট হয়েছেন। (অমৃতেন রে স্বাপতভাগ্যেন অমৃতত্বপ্রাপকেন সুধারসেন সহ জাতা ইত্যর্থঃ) ৷৷ ৩৷৷

ব্রহ্মচর্যবান পুরুষ দীপ্যমান বেদাত্মক ব্রহ্মকে ধারণ করে থাকেন। তার উপরে সকল দেবতা অবস্থান করে থাকেন। এবং সকল দেবতার নিবাসভূত ব্রহ্মচারী সর্বপ্রাণীর প্রাণ ও অপান বায়ুকে প্রকট করে থাকেন; পুনরায় ব্যান নামক বায়ু, শব্দাত্মিকা বাণী, অন্তঃকরণ ও তার আবাসস্থানরূপ হৃদয়কমল, বেদাত্মক ব্ৰহ্ম, মেধা (অর্থাৎ আশুবিদ্যাগ্রহণকুশলা বুদ্ধি)–এই সবই ব্রহ্মচারীর দ্বারা উৎপন্ন হয়ে থাকে। ৪

হে ব্ৰহ্মন (ব্রহ্মচাৰ্যাত্মক)! আমাদের অর্থাৎ তোমার স্তোতৃবর্গের মধ্যে রূপ-গ্রাহক নেত্র, শব্দগ্রাহক শ্রোত্র ও যশ (বা কীর্তি) স্থাপন করো। (অন্ধত্ব বধিরতা কখনও যেন আমাদের না হয়)। আমাদের ভোজ্য অর্থাৎ অন্ন, পুত্র ইত্যাদির নিমিত্ত রেতঃ, শরীরগত রক্ত এবং উদর উপলক্ষিত সমস্ত শরীর কল্পিত পূর্বক ব্রহ্মচারী সলিলের পৃষ্ঠে অর্থাৎ উদকের মধ্যে তপস্তপ্যমান হয়ে অবস্থান করছেন। সেই তপস্বী ব্রহ্মচারী সর্বদা স্নানের দ্বারা পবিত্ৰীকৃত ও পিঙ্গল বা বভ্রুবর্ণধারী হয়ে পৃথিবীতে দীপ্যমান হয়ে আছেন। ৫-৬।

টীকা –উপযুক্ত সূক্তটি প্রথম ও দ্বিতীয় সূক্তের অনুরূপ ব্রহ্মজ্ঞ জপে বিনিযুক্ত ও ব্রহ্মচারীর মাহাত্ম্য কীর্তনে প্রযুক্ত ॥ (১১কা, ৩অ. ৩সূ.)।

.

চতুর্থ সূক্ত : পাপমোচনম

 [ঋষি : শন্তাতি দেবতা : অগ্নি ইত্যাদি ছন্দ : অনুষ্টুপ]

অগ্নিং মো বনস্পতীনোষধীরুত বীরুধঃ। ইং বৃহস্পতিং সূর্যং তে নো মুঞ্চংহসঃ ॥১॥ মো রাজানং বরুণং মিত্রং বিষ্ণুমথো ভগম্। অংশং বিবস্বন্তং মস্তে নো মুঞ্চংহসঃ ॥ ২॥ মো দেবং সবিতারং ধাতারমুত পূষণম্। ত্বষ্টারমগ্রিয়ং ৰূমস্তে নো মুঞ্চন্তংহসঃ ॥ ৩৷৷ গন্ধর্বারসো মো অশ্বিনা ব্ৰহ্মণম্পতিম্। অর্যমা নাম যে দেবস্তে নো মুঞ্চন্তংহসঃ ॥ ৪৷ অরাত্রে ইদং ক্ৰমঃ সূর্যাচন্দ্রমসাবুভা। বিশ্বানাদিত্যান্ ক্ৰমস্তে নো মুঞ্চংহসঃ ॥ ৫॥ বাতং ব্রুমঃ পর্জন্যমন্তরিক্ষমথো দিশঃ। আশাশ্চ সর্বা ব্রুমন্তে নো মুঞ্চংহসঃ ॥ ৬৷৷ মুঞ্চন্তু মা শপথ্যাহোরাত্রে অথো উষাঃ। সোমা মা দেবো মুঞ্চতু যমাহুশ্চন্দ্রমা ইতি ॥ ৭. পার্থিবা দিব্যাঃ পশব আরণ্যা উত সে মৃগাঃ। শকুন্তা পক্ষিণো ক্ৰমস্তে নো মুঞ্চংহসঃ ॥ ৮ ভবাশর্বাবিদং মো রুদ্রং পশুপতি যঃ। ইমূর্ষা এষাং সংবিঘ্ন,তা নঃ সন্তু সদা শিবাঃ ॥ ৯৷৷ দিবং ক্রমো নক্ষত্রাণি ভূমিং যক্ষাণি পর্ব। সমুদ্রা নদ্যো বেশন্তাস্তে নো মুঞ্চংহসঃ ॥ ১০।

বঙ্গানুবাদ –সকল দেবতার আদিভূত অগ্নিদেবের উদ্দেশে আমরা স্তুতি পূর্বক অভীষ্ট ফল। প্রার্থনা করছি। আমরা বনস্পতির স্তুতি করছি। আমরা মহাবৃক্ষ ব্রীহি, যব, ইত্যাদি গ্রাম্য ও লতারূপ বনৌষধি সমূহের স্তুতি করছি। আমরা ইন্দ্র, বৃহস্পতি ও আদিত্যেরও স্তুতি করছি। এঁরা সকলে আমাদের পাপ হতে মুক্ত করুন–এটাই প্রার্থনা ॥১॥

আমরা রাজমা বা ঈশ্বরত্ব সম্পন্ন বরুণ দেবতার, সকলের মিত্রভূত মিত্র দেবতার, ব্যাপনশীল বিষ্ণু দেবতার, ভজনীয় ভগ দেবতার, অংশ ও বিবস্বান দেবতার স্তুতি করছি। এঁরা সকলেই আমাদের পাপ হতে মুক্ত করুন। ২।

 আমরা সর্বপ্রেরক ও দান ইত্যাদি গুণযুক্ত সবিতা দেবের স্তুতি করছি। তথা ধাতা, পূষা ও অগ্রগণ্য (অগ্রিয়ং) বৃষ্টাদেবের স্তুতি করছি। এঁরা সকলে আমাদের পাপ হতে মুক্ত করুন। ৩।

আমরা মন্ত্রপ্রসিদ্ধ গন্ধর্ব ও অপ্সরা নামক দেবগণের স্তুতি করছি। তথা অশ্বিদ্বয় দেবতার স্তুতি করছি। বেদপতি ব্রহ্মার ও অর্যমা দেবতার স্তুতি করছি। সেই দেবতাগণ আমাদের পাপ হতে মুক্ত করুন। ৪

আমরা দিবা ও রাত্রির উদ্দেশে এই স্ততিবাক্য উচ্চারণ করছি। তাদের অধিষ্ঠাত্ দেবতা সূর্য ও চন্দ্র এবং দেবমাতা অদিতির সকল পুত্রদের উদ্দেশেও স্তুতি করছি। তারা আমাদের সকল পাপ হতে মুক্ত করুন। ৫।

আমরা বায়ু, পর্জন্য, অন্তরিক্ষ ও দিক-বিদিকস্থ দেবতাগণের উদ্দেশেও স্তুতি করছি। এঁরা সকলে আমাদের পাপ হতে মুক্ত করুন ৷ ৬ ৷৷

 দিবা ও রাত্রির অভিমানী দেবতা আমাদের শপথাত্মক পাপ হতে মুক্ত করুন। উষাকালের অভিমানী দেবতা ও চন্দ্রমারূপ সোম দেবতা আমাকে শপথের কারণভূত পাপ হতে মুক্ত করুন। (শপথ করে তা রক্ষা না করার পাপ হতে এঁরা সকলে আমাকে রক্ষা করুন) ৭

আমরা পৃথিবীস্থ ও দিব্যস্থানস্থায়ী প্রাণীসকলের উদ্দেশে (অর্থাৎ দেহধারী মনুষ্য, অদৃশ্য দেবতা ইত্যাদির উদ্দেশে), গাভী ইত্যাদি গ্রাম্য ও হরিণশাদূলসিংহ ইত্যাদি আরণ্য পশু সমূহের উদ্দেশে এবং শকুনভূত পিঙ্গল ইত্যাদি পক্ষিগণের উদ্দেশেও স্তুতি করছি। এঁরা সকলে আমাদের পাপ হতে রক্ষা করুন ॥ ৮৷৷

 আমরা ভব ও শর্ব দেবতার উদ্দেশে এই স্তুতিবাক্য নিবেদন করছি। আমরা রুদ্র ও পশুপতি দেবতার উদ্দেশে স্তুতি করছি। এঁদের যে বাণগুলিকে আমরা পরিজ্ঞাত আছি, সেইগুলি আমাদের নিকট সুখপ্রদ হোক। ৯।

আমরা দ্যোতমান আকাশ, সেই স্থানে আশ্রিত পুণ্যবার্গের ধামরূপ নক্ষত্র সমূহ, পুণ্যক্ষেত্র ভূমিভাগ, হিমালয় প্রমুখ মহাগিরী, ভূমিস্থ সপ্তসংখ্যক প্রসিদ্ধ সমুদ্র, গঙ্গা ইত্যাদি নদীসমূহ এবং সরোবর ইত্যাদি ক্ষুদ্র জলাশয় সমূহের স্তুতি করছি। এরা সকলে আমাদের পাপ হতে মুক্ত করুক। ১০।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –অগ্নিং ব্রমঃ ইত্যাদি সূক্তদ্বয়ং অর্থসূক্তং। তস্য বৃহঙ্গনে লঘুগণে চ পাঠাৎ শান্তু্যদক মন্ত্রণাদৌ বিনিয়োগঃ…(কৌ. ৪/৮)। (১১কা, ৩অ. ৪সূ.)।

টীকা –উপযুক্ত সূক্তটি এবং এর পরবর্তী সূক্তটি বৃহষ্পণে ও লঘুগণে পঠিত শান্তুদক কর্মে বিনিযুক্ত হয়। সূত্রানুসারে সর্বভৈষজ্য ইত্যাদি কর্মে গণপ্রযুক্তে এগুলির বিনিয়োগ অনুসন্ধেয়।…উপযুক্ত সূক্তের দ্বারা আজ্যতন্ত্রে হোম করণীয় ৷ (১১কা, ৩অ. ৪সূ.)।

.

পঞ্চম সূক্ত : পাপমোচনম

 [ঋষি : শন্তাতি দেবতা : অগ্নি ইত্যাদি ছন্দ : অনুষ্টুপ]

সপ্তর্ষীন বা ইদং ক্ৰমোহপো দেবীঃ প্রজাপতি। পিতুন যমশ্রেষ্ঠা ক্ৰমস্তে নো মুঞ্চংহসঃ ॥১॥ যে দেবা দিবিষদো অন্তরিক্ষসদশ্চ যে। পৃথিব্যাং শক্রা যে শ্রিতাস্তে নো মুঞ্চংহসঃ ॥ ২॥ আদিত্যা রুদ্রা বসবো দিবি দেবা অথবাণঃ। অঙ্গিরসো মনীষিণস্তে নো মুঞ্চংহসঃ ॥ ৩। যজ্ঞং ক্ৰমো যজমানমৃচঃ সামানি ভেষজা। যজুংষি হোত্ৰা ক্ৰমস্তে নো মুঞ্চংহসঃ ॥ ৪৷ পঞ্চ রাজ্যানি বীরুধাং সোমশ্রেষ্ঠানি ক্ৰমঃ। দর্ভো ভঙ্গো যুবঃ সহস্তে নো মুঞ্চংহসঃ ॥ ৫॥ অরায়া ক্ৰমো রক্ষাংসি সর্পান পুণ্যজনান্ পিতৃন্। মৃত্যুনেকশতং ক্ৰমস্তে নো মুঞ্চংহসঃ ॥ ৬। ঋতু ক্ৰম ঋতুপতীনার্তানুত হায়না। সমাঃ সম্বৎসরা মাসাংস্তে নো মুঞ্চংহসঃ ॥ ৭৷৷ এত দেবা দক্ষিণতঃ পশ্চাৎ প্রাঞ্চ উদেত। পুরস্তাদুত্তরাচ্ছা বিশ্বে দেবাঃ সমেত্য তে নো মুঞ্চংহসঃ ॥ ৮বিশ্বান্ দেবানিদং ক্ৰমঃ সত্যসন্ধানৃতাবৃধঃ। বিশ্বাভিঃ পত্নীভিঃসহ তে নো মুঞ্চংহসঃ ॥ ৯৷৷ সর্বান্ দেবানিদং ক্ৰমঃ সত্যসন্ধানৃতাবৃধঃ। সর্বাভিঃ পত্নীভিঃ সহ তে নো মুঞ্চংহসঃ ॥ ১০ ভূতং ক্ৰমো ভূতপতিং ভূতানামুত যো বশী। ভূতানি সর্বা সঙ্গত্য তে নো মুঞ্চংহসঃ ॥ ১১। যা দেবীঃ পঞ্চ প্রদিশো যে দেবা দ্বাদশৰ্তবঃ। সম্বৎসরস্য যে দংষ্ট্রাস্তে নঃ সন্তু সদা শিবাঃ ॥ ১২। যন্মাতলী রথক্রীতমমৃতং বেদ ভেষজ। তদিন্দ্রো অঞ্জু প্রবেশয়ৎ তদাপো দত্ত ভেষজ ৷ ১৩.

 বঙ্গানুবাদ –আমরা এই স্তুতিবচন সপ্ত-ঋষির উদ্দেশে নিবেদন করছি (অথবা তাঁদের নিকট এই ফল যাচনা করছি)। আমরা অপোদেবী অর্থাৎ জলদেবতার, স্রষ্টা প্রজাপতি দেবতার, তথা মুখ্যোধিপতি বহিষদ-আগ্নিম্বাত্ত ইত্যাদি পিতৃবর্গের স্তুতি করছি। তারা সকলে আমাদের পাপ হতে মুক্ত করুন ৷ ১৷

যে দেবগণ দ্যুলোকে আছেন, যে দেবগণ অন্তরিক্ষে আছেন এবং যে শক্তিশালী দেবগণ পৃথিবীতে অর্থাৎ ভূমিতে আশ্রিত আছেন, তাঁরা সকলে আমাদের পাপ হতে মুক্ত করুন। ২।

দ্বাদশ আদিত্য, একাদশ রুদ্র, অষ্টবসু-দিব্যলোকের এই গণত্রয়াত্মক দেবগণ; বিংশতিকাণ্ডাত্মক বেদের (অর্থাৎ অথর্ববেদের) দ্রষ্টা মহর্ষি অথবা ও আঙ্গিরস ইত্যাদি মনীষি আমাদের স্তুতির দ্বারা সন্তুষ্ট হয়ে আমাদের সকল পাপ হতে মুক্ত করুন। ৩।

 আমরা অগ্নিষ্টোম ইত্যাদি যজ্ঞসমূহের স্তুতি করছি, সেই যজ্ঞফল প্রাপ্ত করণশালী যজমানের স্তুতি করছি, যজ্ঞসমূহে বিনিযুক্ত পাদবদ্ধ মন্ত্রসমূহের স্তুতি করছি। স্তোত্রসমূহকে সম্পন্ন করণশালী (অর্থাৎ প্রগীতমন্ত্রাত্মক রথন্তর, বৃহৎ, বৈরূপ ইত্যাদি) সামসমূহের স্তুতি করছি, সোমকে ও ঔষধিসমূহকে স্তুতি করছি, সোমবাগের (হোতা, মৈত্রাবরুণ, ব্রাহ্মণাচ্ছংসি,পোতা, নেষ্টা, অচ্ছাবাক, আগ্নী) সপ্ত বষট্‌কারের স্তুতি করছি, তাদের ক্রিয়া হোত্রার স্তুতি করছি। তারা আমাদের সব পাপ হতে বিমুক্ত করুন। ৪৷৷

 ভিষকগণের দ্বারা বিনিযুজ্যমান পত্র, কাণ্ড, ফল, পুষ্প ও মূল এই পঞ্চ রাজ্যশালিনী ঔষধিসমূহের মধ্যে সোমলতা শ্রেষ্ঠ অর্থাৎ সোমলতা এদের রাজা। আমরা এদের স্তুতি করছি। তথা দর্ভ অর্থাৎ কুশময়, ভঙ্গ অর্থাৎ শন, যব নামক প্রসিদ্ধ ঔষধি, সহ নাম (কোনও) ঔষধি বিশেষকেও আমরা স্তুতি করছি। এরাও আমাদের সকল পাপ মোচন করুন। ৫

আমরা দানপ্রতিবন্ধক (অর্থাৎ দানকর্মে বাধা দানকারী) হিংসকদের (অর্থাৎ রাক্ষসবৎ পিশাচ সমুদায়ের) স্তুতি করছি। তথা রাক্ষসগণের, সর্পগণের, যাতুনগণের (পুণ্যজন সমূহের), পিতৃলোকগত পূর্বপুরুগণের (পিতৃ) ও একশত একসংখ্যক মৃত্যুদায়ক (বা মৃত্যুর অধিষ্ঠাতৃ) দেবতাবৃন্দের স্তুতি করছি; তারা সকলে আমাদের পাপ হতে মুক্ত করুন ৷৷ ৬ ৷৷

আমরা বসন্ত ইত্যাদি ঋতু সমূহের স্তুতি করছি। তথা সেই ঋতু সমূহের অধিপতি দেবতা (বসন্তের) বসুগণ, (গ্রীষ্মের) রুদ্রগণ, (বর্ষার) আদিত্যগণ, (শরতের) ঋভুগণ এবং (হেমন্ত ও শিশিবের) মরুৎ-গণকে তথা ঋতু সমূহে উৎপন্ন পদার্থগুলির স্তুতি করছি। আমরা চান্দ্র-সৌর-সাবন ভেদাত্মক তিন প্রকার সম্বৎসরের এবং চৈত্র ইত্যাদি মাস সমূহের স্তুতি করছি। তারা সকলে আমাদের পাপ হতে মুক্ত করুক ॥ ৭

হে দেববর্গ! আপনারা যাঁরা দক্ষিণ দিকে স্থিত আছেন, তারা আগমন করুন। যাঁরা পশ্চিম দিকে, পূর্ব দিকে, উত্তর দিকে, সম্মুখে ও পশ্চাতে অবস্থান করছেন, তাঁরাও আপন আপন দিক হতে এই স্থানে আগমন পূর্বক আমাদের সকল পাপ হতে মুক্ত করুন। ৮ ৷৷

 আমরা বিশ্বদেবগণের উদ্দেশে এই স্তুতিবাক্য উচ্চারণ করছি (অথবা এই ফল যাচনা করছি)। তাঁরা সত্যসন্ধান (অর্থাৎ সত্যপ্রতিজ্ঞান), তারা ঋতাবৃধ (অর্থাৎ সত্যের বা যজ্ঞের বর্ধক)। তারা বিশ্বা নামে আখ্যাতা পত্নী সমভিব্যাহারে আমাদের দ্বারা স্তুত হয়ে আমাদের সকল পাপ হতে মুক্ত করুন। ৯।

 আমরা সকল দেবগণের উদ্দেশে এই স্তুতি বাক্য উচ্চারণ করছি। তারা সত্যবর্ধক, যজ্ঞ বা সত্যের বধক। তাঁরা সকল পত্নী সমভিব্যাহারে আমাদের দ্বারা স্তুত হয়ে আমাদের সকল পাপ হতে মুক্ত করুন ১০

ভূত অর্থাৎ লব্ধসত্তা বস্তুমাত্রের উদ্দেশেই আমরা স্তুতি করছি। ভূতপতি অর্থাৎ ভূতের অধিপতি বা ঈশ্বরের উদ্দেশে আমরা স্তুতি করছি। অধিকন্তু, সেই সকল ভূতের নিয়ন্তার উদ্দেশেও আমরা স্তুতি করছি। সকল ভূত একত্রিত হয়ে এই স্থানে আগমন করুন এবং আমাদের সকল পাপ হতে মুক্ত করুন। ১১

প্রধান দিকবর্তিনী যে প্রসিদ্ধা পঞ্চসংখ্যকা দেবী আছেন, দান ইত্যাদি গুণযুক্ত চৈত্র বৈশাখ ইত্যাদি। দ্বাদশ-সংখ্যক যে মাস আছে, ঐ দ্বাদশ-মাসাত্মক সম্বৎসরের যে ঋতু দেবতা আছেন, ঐ এক সম্বৎসররূপ প্রজাপতির বিষ্টি (অর্থাৎ যন্ত্রণাদায়ক) ইত্যাদি দোষযুক্ত যে কালাত্মক দন্তবিশেষ আছে, –তারা সকলে সর্বদা আমাদের কল্যাণের কারণ হোন (কল্যাণহেতবঃ সন্তু)। ১২।

ইন্দ্রের সারথি মাতলী রথের ক্রয়ের দ্বারা যে অমৃত (অর্থাৎ অমরণসাধন)ভেষজ জ্ঞাত হয়েছেন, রথের অধিপতি ইন্দ্র সেই ভেষজ জলে প্রক্ষিপ্ত করেছেন। হে আপঃ (জলরাশি)! তোমরা সেই মাতলীক্রীত ও ইন্দ্র কর্তৃক নিক্ষিপ্ত ঔষধ আমাদের প্রদান করো। ১৩৷৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –সপ্তঋষী বা ইদং ক্ৰমঃ ইতি সূক্তস্য পূর্ববৎ বিনিয়োগ। …ইত্যাদি। (১১কা.. ৩অ. ৫.)।

টীকা –উপযুক্ত সূক্তটির বিনিয়োগ পূর্ব সূক্তের অনুরূপ ৷ (১১কা, ৩অ. ৫সূ)।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *