হাসান গেটের কাছে দাঁড়িয়ে ছিল। ইলাকে দেখে বলল, কোথায় যাচ্ছেন ভাবী?
ইলা হাসল। হাসান বলল, রিকশা ডেকে দেই?
দাও। টিটায় তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে হাসান। খুব মানিয়েছে।
হাসনি মাটির দিকে তাকিয়ে হাসল। ইলা বলল, তুমি সব সময় এমন ছোট হয়ে থাক কেন?
ছোট মানুষ ভাবী। এই জন্যেই ছোট হয়ে থাকি।
বড় মানুষ হত্যার চেষ্টা করলে কেমন হয়?
কিভাবে হব?
চেষ্টা করলেই পারবে। তোমার মত চমৎকার একটা ছেলে সারাজীবন মাথা নিচু করে থাকবে ভাবতেও খারাপ লাগে।
পরের আশ্রয়ে থাকি।
তা ঠিক। এই আমাকেই দেখ। পরের আশুয়ে আছি বলেই আমার নিজেরা মাথাটা নিচু। সারাক্ষণ ভয়ংকর আতংকের মধ্যে থাকি। সাহস গেছে নষ্ট হয়ে। এত বড় একটা ঘটনা আমি দেখলাম। ছেলে তিনটাকে বেরুতে দেখলাম–অথচ কাউকে কিছু বললাম না। ঠিক তোমার মত অবস্থ। ঠিক না হাসান?
হাসান কিছু বলল না। ইলা বলল, এই জায়গাটা কোন থানার আন্ডারে তুমি জান?
মোহাম্মদপুর থানা।
তুমি আমাকে একটা রিকশা ঠিক করে দাও। আমি প্রথম যাব মোহম্মদপুর থানায়। আমি যা জানি ওদের বলব।
এতে লাভ কিছু হবে না ভাবী।
লাভ হোক না হোক আমি বলব। অন্যের লাভের ব্যাপার না–আমার লাভ হবে। আমার সাহস নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। বলার সঙ্গে সঙ্গে সাহস ফিরে পাব। তুমি বোধহয় জান না হাসান, আমি সব সময় খুব সাহসী মেয়ে ছিলাম।
হাসান একটা রিকশা এনে দিল।
ইলা রিকশায় উঠল। রিকশাওয়ালাকে বলল, হুড ফেলে দিন।
খুব রইদ আম্মা।
থাক রোদ। চারদিক দেখতে দেখতে যাই।
ইলাকে অনেক জায়গায় যেতে হবে। প্রথমে যাবে মোহাম্মদপুর থানা, তারপর যাবে মার কাছে। মার সঙ্গে সে ঐদিন খুব খারাপ ব্যবহার করেছিল। আজ মাকে জড়িয়ে ধরে সে খানিকক্ষণ কাঁদবে। সেখান থেকে যাবে বি. করিম সাহেবের কাছে। সবশেষে যাবে লালবাগ থানায়। অনেক কাজ।
রিকশা এগুচ্ছে। নীল শার্ট পরা চমৎকার চেহারার একটা ছেলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।