১০. লুনা লাভগুড
হ্যারির রাতে ভাল করে ঘুম হলো না। নানারকম স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে যায়। ও স্বপ্নে বারবার মা-বাবাকে দেখতে পায়। ওর কাছে এসে দাঁড়ান। কিন্তু কোন কথা বলেন না। স্বপ্নে দেখে, ক্রেচারের মৃতদেহের কাছে বসে মিসেস উইসলি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন। রন আর হারমিওন ওদের মাথায় মুকুট, আবার সেই অন্ধকার করিডর দিয়ে হাঁটছে, করিডরের শেষ প্রান্তে দরজাটা বন্ধ। তারপর ওর ঘুম ভেঙ্গে গেলে কপালের পুরনো ক্ষতটা অসম্ভব চুলকোয়। ঘুম ভেঙে চোখ মেলে দেখে রন বেশভূষা পরিবর্তন করে ওর সামনে বসে কথা বলছে।
–তাড়াতাড়ি ওঠ, মা অসম্ভব চিৎকার রাগারাগি করছেন, বলছেন, আর দেরি করলে তোমরা ট্রেন মিস করবে।
হ্যারি জানতে পারল বাড়িতে নানারকম বাদবিসম্বাদ, গোলমাল হয়েছে। ফ্রেড আর জর্জ ভারি ভারি ট্রাঙ্কগুলো বয়ে না নিয়ে জাদু বলে নিচে নিয়ে যাবে। ফলে জিনিকে ধাক্কা দিয়ে সিঁড়ি থেকে ঠেলে ফেলে দিয়েছে। যথারীতি মিসেস ব্ল্যাক পর্দার আড়াল থেকে গালমন্দ করছেন, চেঁচাচ্ছেন, কিন্তু মিসেস উইসলি থামছেন না।
–তোমাদের বুদ্ধিশুদ্ধি নেই? ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলে, হাড় ভাঙলে কি হতো! মূর্খের দল সব।
–নোংরা জারজ! আমার বাবার বাড়িটা নোংরা কলঙ্কিত করে দিচ্ছে সবাই।
হারমিওন হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকল ওর চোখেমুখে দারুণ উত্তেজনার ছাপ। হ্যারি তখন ওর জুতোর ফিতে বাঁধছিল। হেডউইগ হারমিওনের কাঁধে বসে ডানা ঝটপট করতে লাগল। ওর হাতে ওর বেড়াল কুকশ্যাংক।
হারমিওন বললো–বাবা-মার কাছ থেকে ও এইমাত্র ফিরে এসেছে।
হারমিওনের কাঁধ থেকে হেডউইগ ওর খাচার ওপর বসল।
–আরে তুমি এখনও রেডি হওনি?
–একটু বাকি আছে। জিনি বেশি লাগেনি তো তোমার? হ্যারি চশমার কাঁচ মুছতে মুছতে বললো।
মিসেস উইসলি অনেক কষ্টে ওর কান্না থামিয়েছেন। হারমিওন বললো, ম্যাড আই বলছে স্টারগিস পডমোর না আসা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে, তা নাহলে আমাদের রক্ষীর সংখ্যা একজন কমে যাবে।
–দেহরক্ষী? হ্যারি বললো, দেহরক্ষী নিয়ে আমাদের কিং ক্রস স্টেশনে যেতে হবে?
–হ্যাঁ যেতে হবেই হবে, হারমিওন বললো।
–কেন? হ্যারি অসহিষ্ণু হয়ে বললো–আমি তো ভেবেছি ভোল্ডেমর্ট এখন ধরাশায়ী হয়ে আছে। তুমি বলতে চাও ও একটা ডাস্টবিন থেকে আমাদের ওপর লাফিয়ে পড়বে?
হারমিওন হাতঘড়িতে সময় দেখতে দেখতে বললো, অতশত জানি না। মুডি তো এই কথা বলেছেন। এখনই আমরা যদি না বেরোই তাহলে ট্রেন ফেল করবো।
–কি হে তোমরা বকবক করে যাবে, অনুগ্রহ করে নিচে এস।
মিসেস উইসলির ধারালো কথা শুনে হারমিওন এক সেকেন্ড দেরি না করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। হ্যারি হেডউইগকে ধরে খাচার ভেতর ঢুকিয়ে ওর ট্রাঙ্কটা টানতে টানতে হারমিওনের পিছু পিছু নিচে চলল।
ওদিকে মিসেস ব্ল্যাক পোর্ট্রেট থেকে অবিরত চেঁচিয়ে যাচ্ছে, কেউ এসে ওর প্রোট্রেটটার পর্দা টেনে দেয় না। নিচে ছেলেমেয়েরা হোগার্টসে যাচ্ছে তারই কোলাহল, তার জন্য মিসেস ব্ল্যাকের উত্মা।
মিসেস উইসলি বললেন–তুমি আর টংকস সঙ্গে যাবে।
ওপর থেকে মিসেস ব্ল্যাক সমানে উচ্চস্বরে চেঁচাচ্ছেন–মাড ব্লাডস! সমাজের আবর্জনা! নোংরা জন্তু জানোয়ার
মিসেস উইসলি হ্যারিকে বললো–এই তোমার ট্রাঙ্ক আর পেঁচা এখানে রাখোত। অ্যালস্টর বাক্স বিছানার ব্যবস্থা করবে। ওহ! ঈশ্বরের দোহাই সিরিয়স, ডাম্বলডোর কিন্তু না বলেছেন।
ভালুকের মত দেখতে একটা কাল রং-এর কুকুর হ্যারির পাশে দাঁড়াল। হ্যারি তখন ওর ট্রাঙ্ক ইত্যাদি ঘর ঘর ঝন ঝন শব্দ করে টানাটানি করছিল।
মিসেস উইসলি ভীষণ রেগে গিয়ে বললেন–ওহ! তুমি থামবে হ্যারি। তুমি কী ওগুলো মাথায় চাপিয়ে স্টেশনে নিয়ে যাবে?
মিসেস উইসলি ওদের নিয়ে দরজা খুলে দরজার গোড়ায় দাঁড়ালেন। সেপ্টেম্বরের ভোর, বেশ ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা ভাব। হ্যারি আর কাল কুকুরটা মিসেস উইসলির পাশে এসে দাঁড়াল। দরজাটা বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে মিসেস ব্ল্যাকের চিৎকার অশ্রাব্য গালিগালাজের শব্দ আর শোনা গেল না।
বার নম্বর বাড়ির পাথরের ফলকের সামনে দাঁড়িয়ে হ্যারি বললো–টংকস, টংকসকে দেখতে পাচ্ছি না।
বার নম্বর বাড়ি ততক্ষণে অদৃশ্য হয়ে গেছে! ওরা তখন ফুটপাতে এসে দাঁড়িয়েছে।
মিসেস উইসলি হ্যারির পাশে ল্যাক ল্যাকে জিব বার করা কালো কুকুরটাকে দেখে বললেন–ও (টংকস) এখানেই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
রাস্তার কোণ থেকে এক বৃদ্ধা ওদের গ্রিট করল। মাথায় ধবধবে সাদা কোঁকড়ান কোঁকড়ান চুল শক্ত করে বাধা। মাথায় বেগুনি রং-এর হ্যাট, আকৃতিটা শুয়রের মাংসের কিমার বড়ার মত!
হ্যারি হাত ঘড়ি দেখতে দেখতে ও বললো–মল্লী একটু তাড়াতাড়ি যেতে হবে, সময় খুব কম।
মিসেস উইসলি লম্বা লম্বা পা ফেলে যেতে যেতে বললেন–হা হা আমি জানি। ম্যাড আই তো স্ট্রারগিসের জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে বলেছেন। মন্ত্রণালয় থেকে একটা গাড়ি পেলে খুব সুবিধা হতো; কিন্তু ফাজ দিতে চায় না। কে জানে মাগলরা জাদু ছাড়া কেমন করে যাতায়াত করে।
কাল কুকুরটার উৎসাহের অন্ত নেই। ঘেউ ঘেউ করে লেজ নাড়তে নাড়তে লাফিয়ে লাফিয়ে চলেছে, পায়রা, পাখি দেখলেই তাড়া করছে। হ্যারির সব দেখে খুব মজা লাগল, মাঝে মাঝে হো হো করে হেসে উঠছে। মিসেস উইসলি অনেকটা আন্টি পেটুনিয়ার মত জিব দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিলেন।
প্রায় কুড়ি মিনিট হাঁটার পর ওরা কিং ক্রস স্টেশনে পৌঁছল। কুকুর বনে যাওয়া সিরিয়স দুএকটা বেড়ালকে ভয় পাইয়ে দিতে লাগলেন। ওরা নিরাপদে স্টেশনে পৌঁছল বলতে পারা যায়।
ন নম্বর প্লাটফমে। ঠিক নটা বেজে পঁয়তাল্লিশ মিনিটে হোগার্টস এক্সপ্রেস ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে সিটি বাজিয়ে প্লাটফরমে দাঁড়াল। হ্যারি আনন্দে অধীর। আবার ও হোগার্টসে ফিরে যাচ্ছে। মিসেস উইসলি পেছনে তাকিয়ে ছেলেমেয়েদের জোরে জোরে হাঁটার জন্য তাড়া দিলেন। ওদের সঙ্গে নতুন ছেলেমেয়েরাও হোগার্টস-এ যাচ্ছে। ওদের পরিবারের লোকেরাও এসেছে।
হ্যারি কুকুরটা তো খুব সুন্দর তোমার। এক লম্বা মতো ছেলে হ্যারিকে বললো।
হ্যারি হেসে বললো–ধন্যবাদ লী।
কুকুর বনে যাওয়া সিরিয়স এমনভাবে লেজ নাড়তে লাগল যেন খসে পড়বে ল্যাজটা।
–ও বাঁচলাম, মিসেস উইসলি স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন অ্যালস্টরকে মালপত্র নিয়ে আসতে দেখে।
পোর্টারের একটা ক্যাপ প্রায় চোখ পর্যন্ত টেনে, মুডি একটা ট্রলি ঠেলেঠুলে নিয়ে এসে দাঁড়াল।
টংকস আর উইসলিকে দেখে বললেন–সব ঠিকঠাক তো? মনে করো না যে আমাদের কেউ ফলো করছে না।
তারপরই রন আর হারমিওন মি. উইসলির সঙ্গে হাজির হল। মুডির ট্রাঙ্ক-বাক্স ভর্তি ট্রলি থেকে মালপত্র নামান যখন প্রায় শেষ হয়ে গেছে তখন ফ্রেড, জর্জ, জিনি এল। ওদের সঙ্গে রয়েছে লুপিন!
মুডি বললেন, দেরি কেন লুপিন? কোনও বিপত্তি…?
কিছুই না–লুপিন বললেন।
মুডি খোৎ খোৎ করে বললেন, এই নিয়ে দুবার হল স্টারগিস বলা সত্ত্বেও এলো না। ব্যাপারটা আমাকে ডাম্বলডোরকে বলতেই হবে। দিন দিন মুভানগাসের মত ফাঁকিবাজ হয়ে যাচ্ছে।
লুপিন সকলের সঙ্গে করমর্দন করতে করতে হ্যারির কাঁধ চাপড়ে মুডিকে বললেন, নিজের চরকায় তেল দাও।
মুডি হ্যারির সঙ্গে হাত মিলিয়ে বললেন, মাথাটা নিচু করে চারদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখবে, তোমরা সকলে যখন কিছু লিখবে খুবই সতর্ক থাকবে, সন্দেহ হলে লেখালেখির মধ্যে একদম যাবে না।
টংকস, জিনি আর হারমিওনকে বুকে চেপে বললো–এ কদিন তোমাদের সঙ্গে খুব আনন্দে দিন কাটালাম। তারপর অন্যদের দিকে তাকিয়ে বললো, আবার তোমাদের সঙ্গে দেখা হবে।
গাড়ি ছাড়ার প্রথম হুইসিল দিল ট্রেনের গার্ড। ছাত্ররা যারা প্লাটফরমে দাঁড়িয়েছিল তড়িঘড়ি করে ট্রেনে উঠে পড়ল। মিসেস উইসলি বিক্ষিপ্তভাবে সকলকে স্নেহভারে বুকে চেপে হ্যারিকে দুবার বললেন–চিঠি লিখবে, ভাল ছেলে হয়ে থাকবে, যদি কিছু ফেলে গিয়ে থাক জানাবে পাঠিয়ে দেব। নাও, তাড়াতাড়ি উঠে পড় ট্রেন ছেড়ে দেবে।
হঠাৎ কালো ভালুকের মত কালো কুকুরটা হ্যারির দুকাধে সামনের দুটো পা তুলে দিতেই মিসেস উইসলি হিস শব্দ করে সিরিয়সকে কামরার দরজার কাছে নিয়ে গিয়ে বললো, সিরিয়স তুমি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছ। ঠিক কুকুরের মত তোমার চালচলন নয় কিন্তু।
হ্যারি হেসে কুকুররূপী সিরিয়সের গায়ে হাত বুলিয়ে বললো–আহারে, সিরিয়সকে তোমরা অনেকদিন বেঁধে রেখেছ।
ট্রেন চলতে শুরু করলে খোলা জানালা দিয়ে হ্যারি মুখ বাড়িয়ে বললো আবার দেখা হবে।
রন, হারমিওন, জিনি ওর পাশে দাঁড়িয়ে হাত নাড়াতে লাগল।
একটু একটু করে টংকস, লুপিন, মুডি, মি. ও মিসেস উইসলি অনেক দূরে থেকে গেলেও কালো কুকুরটা হ্যারির দিকে তাকিয়ে লেজ নাড়াতে নাড়াতে ট্রেনের সাথে সাথে দৌড়াতে লাগল। তারপর ট্রেনটা বাঁক নিলে আর কাউকে দেখা গেল না। সকলেই ওদের দৃষ্টির বাইরে চলে গেল। হারমিওন একটু চিন্তিত মুখে বললো–সিরিয়সের কিন্তু স্টেশনে আসা ঠিক হয়নি।
রন বললো–বেচারা প্রায় এক মাসের বেশি দিনের আলো দেখতে পায়নি। হাজার হলেও আসলে ও তো মানুষ!
ফ্রেড বললো–এখন ওসব কথা থাক। লীর সঙ্গে আমাদের ব্যবসা সংক্রান্ত কথাবার্তা বলতে হবে। পরে এসব কথা হবে।
ও আর জর্জ করিডর ধরে ডান দিকে চলে গেল।
ট্রেন একটু একটু করে স্পীড নিতে শুরু করল। বাইরের সব বাড়িগুলি সটাসট সরে যেতে লাগল। ওরা যেখানে দাঁড়িয়েছিল সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দুলতে লাগল ট্রেনের গতির সঙ্গে।
–হ্যারি বললো–অন্য একটা কামরায় যাবে?
রন আর হারমিওন পরস্পরের দিকে তাকাল।
–কেন? রন বললো।
–বেশতো আছি। কথাটা হারমিওন বললো, রন আর আমার অবশ্য প্রিফেক্টদের সঙ্গে বসা উচিত। কথাটা হ্যারির কাছে বোকার মতো শোনাল।
রন হ্যারির দিকে তাকাচ্ছিল না। বাঁহাতের আঙ্গুলের নখের দিকে আগ্রহের সঙ্গে তাকিয়ে ছিল।
হ্যারি বললো–ঠিক আছে, ভাল প্রস্তাব। হারমিওন বললো–আমার মনে হয় সারা পথটা আমাদের এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। আমাদের কাছে যে চিঠি এসেছিল তাতে লেখা আছে আমাদের হেড গার্ল আর হেড বয়দের কাছে ইনস্ট্রাকশন নিতে হবে, তারপর মাজে মাঝে পেট্রলিং করতে হবে করিডরে।
হ্যারি বললো–খুব ভাল, পরে তোমাদের সঙ্গে দেখা হবে, তাহলে।
রন বললো–অন্যদের সঙ্গে বসে থাকাটা আনন্দের কথা নয়, তাহলেও বাধ্য হয়ে যেতে হবে। আমি তো পার্সি নই…।
হ্যারি বললো–খুব ভাল করেই জানি তোমরা ওর মত নও।
হারমিওন ও রন ওদের বাক্স প্যাটরা ছোট পেঁচা কুকশ্যাংকসকে নিয়ে চলে গেল। হ্যারির খুব মন খারাপ হয়ে গেল। রন ছাড়া আজ পর্যন্ত কখনও হোগার্টস এক্সপ্রেসে ও যাতায়াত করেনি।
জিনি হ্যারিকে বললো–এখান থেকে আমরা অন্য কোথাও জায়গা করে নিই, একটু ফাঁকা হলে আমরা বসতে পারবো।
–ঠিক বলেছ, হ্যারি বললো।
তারপর ও আর জিনি ওদের ট্রাঙ্ক দুটো আর হেডউইগকে নিয়ে করিডর ধরে চলল। এক কামরা থেকে অন্য কামরায় যেতে যেতে অনেক কাঁচ লাগান দরজা পার হতে হল। বিভিন্ন কামরায় যারা বসেছিল তারা একটু কৌতূহলী অবাক হয়ে হ্যারির দিকে তাকালো। পাঁচ পাঁচটা কামরা ছেড়ে এগিয়ে যাবার পর ওর মনে পড়ল ডেইলি প্রফেট পুরো গরমের ছুটিটা ওর সম্বন্ধে নানা আজগুবি কথা পাঠকদের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। তাই বোধ হয় ওরা ওর দিকে তাকাচ্ছে, ফিস ফিস করে ওকে দেখিয়ে কিছু বলছে।
ট্রেনের একেবারে শেষ কামরায় ওদের নেভিল লংগবটমের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। ও হ্যারির ফিফথইয়ারের গ্রিফিন্ডর। ওর এক হাতে ট্রাঙ্ক আর অন্য হাতে ব্যস, টেভরকে নিয়ে হিমসিম খাচ্ছে।
হাই হ্যারি, হাই জিনি ও হাঁপাতে হাঁপাতে বললো, কোথায়ও এক ফোঁটা জায়গা নেই, সব ভর্তি। একটাও বসার জায়গা পাচ্ছি না।
–কে বললো জায়গা নেই? কথাটা বলে সামনের কামরার দিকে তাকিয়ে বললো–ওই তো ওখানে সিট খালি রয়েছে, লুনা লাভগুড ছাড়া আর কেউ নেই।
নেভিল খুব আস্তে বললো–কাউকে বিরক্ত করা…।
জিনি বললো–বোকার মত কথা বলবে না। ও আছে তো কি হয়েছে। জিনি দরজাটা ঠেলে কামরাতে ঢুকল। ওর পরে ঢুকল হ্যারি আর নেভিল।
জিনি বললো–হাই লুনা, ওই সিটে আমরা বসলে তোমার কোনও অসুবিধে হবে না তো?
জানালার ধারে বসে থাকা মেয়েটি ওদের দিকে তাকাল। ওর মাথার সোনালি রং-এর কোমর পর্যন্ত ছড়ানো চুলগুলো যেমনি নোংরা তেমনি অবিন্যস্ত! ভুরু ফ্যাকাশে, ড্যাবড্যাবে দুটো চোখ, দেখলেই অস্বস্তি লাগে। হ্যারি বুঝতে পারল নেভিল কামরাটা খালি দেখেও ওখানে বসতে চায়নি কেন।
ওর দিকে তাকালেই মেজাজ বিগড়ে যায়। এমনও হতে পারে ও ম্যাজিক ওয়ান্ডটা হারাবার ভয়ে কানের পাশে রেখেছে, অথবা একগাদা ছিপি দিয়ে বানান নেকলেস পরেছে গলায় অথবা উল্টো করে একটা ম্যাগাজিন পড়ছে। ও প্রথমে নেভিল তারপর হ্যারির মুখের দিকে তাকাল। জিনির কথা শুনে ও সম্মতি জানিয়ে ঘাড় নাড়ল।
জিনি মৃদু হেসে বললো, ধন্যবাদ।
হ্যারি আর নেভিল তিনটে ট্রাঙ্ক আর হেডউইগের খাঁচাটা লাগেজ র্যাকে রেখে লুনার বিপরীত দিকে বসল। লুনা ওর উল্টানো ম্যাগাজিন কুইবলারের ফাঁক দিয়ে ওদের দেখতে লাগল। ও ঠিক সাধারণ মানুষের মত চোখের পাতা ফেলছে না। ও শুধু হ্যারির দিকে তাকিয়ে থাকে।
জিনি বললো–হাই লুনা গরমের ছুটি তোমার খুব মজাসে কেটেছে?
লুনা হ্যারির দিকে যেমনভাবে তাকিয়েছিল তেমনি স্বপ্নের ঘোরে বললো, হ্যাঁ, হ্যাঁ খুব আনন্দে কেটেছে। তারপর হ্যারি পটারকে বললো–তুমি কী হ্যারি পটার?
হ্যারি বললো, তাইতো জানি।
নেভিল মুখ টিপে হাসল। লুনা ওর স্বপ্নলু দুচোখ ওর দিক থেকে সরিয়ে নিল।
তুমি কে জানতে পারলাম না। আমি কেউ না; নেভিল বললো সঙ্গে সঙ্গে।
জিনি তীক্ষ্মভাবে বললো, না তুমি তাই নয়, নেভিল লংগবটম–আর ও হচ্ছে লুনা লাভগুড। লুনা আমার ক্লাসে পড়ে, কিন্তু হাউজ আলাদা। ও র্যাভেন হাউজে।
মানুষের নাগালের বাইরে অসীম উদ্ভাবনী শক্তি সবচেয়ে বড় সম্পদ।
লুনা ওর হাতের ম্যাগাজিনটা সোজা করে তুলে মুখটা ঢেকে বসল। চুপ করে রইল। নেভিল আর হ্যারি পরস্পরের মুখের দিকে তাকিয়ে ভুরু উঁচু করল। জিনি হাসি চেপে রাখল।
ট্রেন দূরন্ত গতিতে খট খট শব্দ করে ছুটে চলল। দুধারে মাঠঘাট শস্যক্ষেত্র। আকাশে কখনও প্রখর সূর্য আবার কখনও মেঘের ঘনঘটা।
নেভিল বললো, বলতে পার এবার আমার জন্মদিনে কি উপহার পেয়েছি?
আরেকটি রিমেমব্রেল? হ্যারি বললো, ওর মনে পড়ে গেল নেভিলের ঠাকুরমা ওর অন্তহীন স্মৃতিশক্তি বাড়াবার জন্য পাথরের যে জিনিসটা পাঠিয়েছিলেন সেটির কথা।
নেভিল বললো, না, একটাই আমার যথেষ্ট, বহুদিন আগে পুরনোটা খুইয়েছি। নাও, এইটে দেখ। ওর স্কুল ব্যাগের ভেতর হাত পুরে ছোট একটা পাত্রে রাখা ধূসর :
রং-এর ক্যাকটাস বার করল। কাটাছাড়া গাছের গায়ে গোল গোল বীজ কোষ।
মিমবুলাস মিমরিটোনিয়া–ও গর্বের সঙ্গে গাছের নামটা বললো।
হ্যারি গাছের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইল। গাছটা মৃদু মৃদু কাঁপছে, এটা শরীরের অভ্যন্তরীণ রুগ্ন অসুস্থ অঙ্গ বলে মনে হয়।
নেভিল বললো, সত্যি সত্যি এটা দুপ্রাপ্য গাছ। আমি অবশ্য বলতে পারি না।
হোগার্টসের গ্রীন হাউজে এরকম ক্যাকটাস আছে কি নেই। থাকলেও আমি প্রফেসর প্রাউটকে এটা দেখাতে চাই না। আমার দাদুর কাকা অলজিয়ে আমার জন্য অ্যাসিরিয়া থেকে এনে দিয়েছেন। আমি ভাবছি এটা থেকে বীজ তৈরি করে ফলানো যায় কি না।
হ্যারি জানে নেভিলের প্রিয় সাবজেক্ট হারবোলজি। কিন্তু তাহলেও ওর জীবনধারা দেখে মনে হয় না, যা চাইছে তা ও করতে পারবে কিনা।
ও বললো–সত্যি তুমি ফলাতে পারবে?
নেভিল বললো–অবশ্যই, ট্রেভর (ব্যাঙ) একটু ধরবে?
কথাটা বলে নেভিল ব্যাঙ বন্ধুকে হ্যারির কোলের ওপর ফেলে দিয়ে স্কুল ব্যাগ থেকে একটা পাখির পালক বার করল।
লুনা লাভগুড ওর মুখের সামনে ধরে রাখা ম্যাগাজিনের ওপর দিয়ে তাকিয়ে ম্যাগাজিনটা উল্টো করে ধরল। দেখতে লাগল নেভিলের কান্ড কারখানা। নেভিল মিমবুলাস মিমরিটোনিয়া চারাটা নিজের চোখের কাছে ধরল। দাঁতের ফাঁক দিয়ে জিবটা সামান্য বার করে চারাটার একটা জায়গা বেছে নিয়ে পাখির পালক দিয়ে গর্ত করতেই চারাটার ছিদ্র থেকে ঘন চটচটে সবুজ রং-এর জলীয় পদার্থ ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে কামরা সিলিং, কাঁচ বন্ধ জানালা শুধু নয় লুনা লাভগুড়ের গায়ে, হাতের ম্যাগাজিন ভরে গেল। সামনে বসে থাকা জিনি সময়মত ওর মুখটা দুহাতে দিয়ে চাপা না দিলে চোখে লাগত। কিন্তু ওর মাথার চুল রেহাই পেল না। এমনভাবে জমা হল দেখে মনে হয় একটা তলতলে সবুজ হ্যাট মাথায় দিয়েছে। হ্যারির কোলে ছিল ট্রেভর। খানিকটা চটচটে সবুজ সেই জলীয় পদার্থ ওর মুখে এসে লাগল। তীব্র গন্ধ অনেকটা পচা চর্বির মত।
নেভিলেরও সেই একই অবস্থা। চোখের ওপর পড়া সেইগুলো মাথা নেড়ে সরিয়ে দিল।
ও খুব লজ্জায় পড়ে গেল। মুখটা কাচুমাচু করে বললো–দুঃখিত। আসলে এমন অবস্থা হবে বুঝতে পারিনি। তবে স্টিংকস্যাপস্ বিষাক্ত নয়। আগে কখনও দেখার চেষ্টা করিনি। তাই।
ঠিক সেই সময় ওদের কামরার দরজাটা সামান্য ফাঁক করে একটি মেয়ে হাসিমুখে উঁকি মারল। মেয়েটি দেখতে সুন্দরী, মাথার কালো চকচকে চুল কোমর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে।
মনে হচ্ছে অসময়ে এলাম। ওর গলার স্বরটা সামান্য ভীত ভীত।
হ্যারি ওকে দেখে চটপট চশমার কাঁচ দুটো মুছে নিল। ট্রেভর তখন কোল থেকে লাফ দিয়ে পালিয়েছে।
চো-চাং ওদের স্কুলের মেয়ে। ব্ল্যাভেনক্ল কিডিচ টিমে খেলে।
হাই চো, হারি খুব সাধারণভাবে বললো।
চো বললো, এখান দিয়ে যাচ্ছিলাম, শুনলাম তুমি এই কামরায় আছ, তাই হ্যালো করে গেলাম। তারপর ওদের রেখে চো-চ্যাং দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে চলে গেল।
হ্যারি চুপ করে বসে রইল।
অনেক বন্ধুদের একসঙ্গে বসে হৈ-হুঁল্লোড় করা আর লুনা লাভগুড়ের সঙ্গে ব্যাঙ হাতে স্টিংকস্যাপ মুখে লাগিয়ে বসে থাকা এক কথা নয়।
নেভিল আবার বললো–দুঃখিত। যাকগে যা হবার তা হয়েছে, জিনী হাসতে হাসতে বললো। তবে আমরা অতি সহজেই এই নোংরা থেকে মুক্তি পেতে পারি। কথাটা বলে ও কানের পেছন থেকে ওর ওয়ান্ডটা বার করে বললো, স্কাউর গিফি…, বলার সঙ্গে সঙ্গে সকলেই আগের মত যে যেমনটি ছিল তেমনি হয়ে গেল। স্টিংস্যাপ অদৃশ্য হয়ে গেল।
রন আর হারমিওনের দেখা নেই। প্রায় ঘণ্টাখানেক পরে ওরা হ্যারির কামরায় এল। হ্যারি, জিনি, নেভিল পামকিন প্যাস্টিস শেষ করে চকোলেট ফ্রগ কার্ডস খাচ্ছিল। রনের সঙ্গে কুকশ্যাংকস, আর খাঁচার মধ্যে পিগউইজিয়ন।
আমার দারুণ ক্ষিধে পেয়েছে। হেডউইগের পাশে পিগউইজিয়নকে গাদাগাদি করে রেখে, হ্যারির পাশে বসে খানিকটা চকোলেট ফ্রগ খাবলে নিল রন। তারপর চকোলেটের মোড়কটা ছিঁড়ে মুখে খানিকটা পুরে হাত-পা ছড়িয়ে দুচোখ বন্ধ করে বসল। সকাল থেকেই ওর খুব ধকল চলেছে, একটু বিশ্রাম করতে চায়।
হারমিওন বললো, প্রত্যেকটি হাউজে দুজন করে প্রিফেক্ট। ব্যাপারটা পছন্দ হয়নি এমন এক মুখ করে বললো। একটি ছেলে একটি মেয়ে।
–আন্দাজ করে বলত স্নিদারিন হাউজের প্রিফেক্ট কে? রন বললো। তখনও ওর চোখ বন্ধ।
–ম্যালফয়; হ্যারি এক সেকেন্ড সময় ব্যয় না করে বললো। ও নিশ্চিত যে ওর যা ভয় তাই হয়েছে।
রন তিক্ত স্বরে বললো–অবশ্যই; চকোলেটের বাকি অংশ মুখে পুরে দিয়ে আরও খানিকটা তুলে নিল।
–আর ওই গরুর মত প্যানসি পারকিনসন; হারমিওন বিদ্বেষপূর্ণ গলায় বললো–কে জানে কেমন করে ও প্রিফেক্ট হল, ও বেঁটে বামন ভূতের চেয়েও এক কাঠি বেশি।
হ্যারি বললো, হাফলপাফ হাউজে কারা কারা হয়েছে?
–এরনি ম্যাকমিলন আর হান্না অ্যাবট; রন গোমড়া মুখে বললো।
–অ্যান্থনি গোল্ডস্টেইন আর পদ্মা পাতিল র্যাভেনক্লতে, হারমিওন বললো।
–তুমি তো পদ্মা পাতিলের সঙ্গে ইয়ুল বলের (নাচ) কাছে গিয়েছিলে। ওরা শুনতে পেল নিরাসক্ত এক কণ্ঠস্বর।
ওরা সবাই লুনালাভগুডের দিকে তাকাল। ও, দ্য কুইবলার ম্যাগাজিনের ওপর দিয়ে রনের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়েছিল। রন এক মুখ ভর্তি ফ্রগ গিলে ফেলল।
–হ্যা আমি গিয়েছিলাম; একটুও আশ্চর্য না হয়ে রন বললো।
লুনা বললো–ও মনে করে ওর সঙ্গে তুমি ভাল ব্যবহার করনি, কারণ তুমি ওর সঙ্গে নাচতে চাওনি। ওর জায়গায় আমি হলে কিছু মনে করতাম না। আমি নাচফাচ একদম পছন্দ করি না। আবার ও দ্য কুইবলার দিয়ে মুখ ঢাকল। রন ম্যাগাজিনের কভারটা হাঁ করে দেখল মাত্র কয়েক সেকেন্ড। তারপর জিনির দিকে তাকাল, জিনি হাসি চাপতে মুখে আঙ্গুল চাপা দিল। রনও মৃদু মৃদু হাসল। তারপর হাতঘড়ির দিকে তাকাল।
–আমাদের বারে বারে করিডরে ঘুরে ফিরে দেখতে হবে, ও হ্যারি আর নেভিলকে বললো; যদি কেউ অদ্র ব্যবহার করে তাহলে আমরা শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারি। আমি অহেতুক ক্র্যাবে আর গোয়েলের অপেক্ষা করতে পারি না।
হারমিওন বললো–তাই বলে তুমি ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পার না।
রন বেঁকিয়ে বেঁকিয়ে বললো–ইয়া রাইট, যথার্থ বলেছ, কারণ ম্যালফয় একদম ক্ষমতার অপব্যবহার করে না।
–তাহলে তুমি ওর পর্যায়ে নেমে আসছ?
–আমি ওর বন্ধুদের আমার দলে আনতে চাই। আমার বন্ধুদের যাতে কজা করতে না পারে।
–ঈশ্বরের দোহাই, রন।
রন আনন্দের সঙ্গে বললো–আমি গোয়েলকে ধাতস্থ করব, ওকে মেরে ফেলব। ও চিঠি লেখাটেখা পছন্দ করে না। ও মজা করে গোয়েলের ক্যারিকেচার করল: গোয়েলের গলার স্বর মুখ বিকৃতি করল, শূন্যে হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে লেখল। আমি… কখনই… পেছন থেকে বেবুনের পেছনের মত দেখতে হব না।
ওর মুখাভিনয় দেখে সবাই একসঙ্গে হেসে উঠল। কিন্তু লুনা লাভগুডের মত কেউ হোঃ হোঃ করে দম ফাটানো হাসতে পারল না। ওর হাসের শব্দে ঝিমিয়ে পড়া ক্লান্ত হেডউইগ জেগে গেলো, বিরক্তি মাখান মুখে ডানা ঝটপট করতে লাগল, কুকশ্যাংকস এক লাফে মালপত্র রাখার তাকের ওপর দাঁড়িয়ে হিস হিস শব্দ করতে লাগলো। শুধু তাই নয়–হাসার সময় ওর হাত থেকে পায়ের ওপর ম্যাগাজিনটা পড়ে গেল।
দারুণ মজার ব্যাপার কিন্তু! রনের দিকে তাকিয়ে ওর ড্যাব ড্যাবে ফুলে ফুলে দুচোখ জলে ভরে গেল, নিঃশ্বাস নিতে পারছে না যেন। হাসার সময় সোজা হয়, পেছন ফেরে, ঝুঁকে পড়ে সামনে।
সবাই লুনার হাসি দেখে হেসে আকুল; কিন্তু হ্যারি হাসে না। ওর চোখ মাটিতে পড়ে থাকা ম্যাগাজিনের মলাটের ওপর। এমনকিছু একটা দেখছে সেটাকে যেন ও ডুবুরির মত তুলে আনতে চায়। একটা ছবি! যেমন করেই ম্যাগাজিনটা পড়ে থাকুক না কেন ছবিটা যে কর্নেলিয়স ফাজের কোনও সন্দেহ নেই। ওর লেবু রং-এর হ্যাট তো ও ভুলতে পারে না।
ছবিতে কাজ এক হাতে একটা সোনাভর্তি থলে ধরে রয়েছেন। অন্য হাতে একটা কদাকার বেঁটে ভূতের গলা টিপে ধরেছেন। ব্যাঙ্গচিত্রের তলায় ক্যাপশন: গেন গ্রিনগটসের কাছে কতটা ফাজ যেতে পারবেন?
ব্যাঙ্গ চিত্রের তলাতে অন্যান্য প্রতিবেদনের সূচিপত্র।
কিডিচ লীগ খেলায় দুর্নীতি: টর্নাডোরা কেমন করে নিজেদের আয়ত্বে আনছে প্রাচীন বর্ণমালার অক্ষর পুনঃরুদ্ধার রহস্য সিরিয়স ব্ল্যাক: দুবৃত্ত না বলির পাঠা?
–তোমার ম্যাগাজিনটা কি দেখতে পারি? হ্যারি লুনাকে জিজ্ঞেস করল। লুনা তখনও রনের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রয়েছে। শুধু মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল।
হ্যারি ম্যাগাজিনটা হাতে নিয়ে প্রথমেই সূচিপত্র দেখল। দেখতে দেখতে একবারও মনে পড়ল না দ্য কুইবলারের এই সংখ্যাটি কিংসলে সিরিয়সকে দেবার জন্য মি. উইসলিকে দিয়েছিলেন।
হ্যারি ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনগুলো উল্টেপাল্টে দেখতে লাগল। তারপর সিরিয়সকে নিয়ে লেখা প্রতিবেদনটা পড়ার জন্য সূচিপত্র দেখল।
প্রথমেই একটা কার্টুন। অতি নিম্নমানের আঁকা কার্টুন। তলায় সিরিয়সের নাম দিলে বোঝে কারসাধ্য! সিরিয়স এক গাদা মানুষের হাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে আছে, হাতে ম্যাজিক ওয়ান্ড। প্রতিবেদনের শিরোনাম সিরিয়স–ছবির মতই কালো
কুখ্যাত হত্যাকারী অথবা নিরীহ সংবেদনশীল গায়ক? হ্যারি প্রথম বাক্যটি বারবার পড়ল যতক্ষণ না সে নিশ্চিত হতে পারছিল যে সে ভুল বোঝেনি।
বিগত চৌদ্দ বছর ধরে আমাদের এই বিশ্বাস সিরিয় ব্ল্যাক বারজন নিরীহ মাগলস ও একজন জাদুকরকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে। দুবছর পূর্বে ব্ল্যাকের আজকাবান থেকে দুঃসাহসিকভাবে পলায়নের পর ম্যাজিক মন্ত্রণালয় ব্যাপকভাবে গণতল্লাশি চালায় তাকে গ্রেপ্তার করে ডিমেন্টরদের হাতে তুলে দেবার জন্য। কিন্তু সত্যই কী সে অপরাধী?
চাঞ্চল্যকর তথ্য আমাদের হস্তগত হয়েছে তাতে জানা যাচ্ছে ব্ল্যাক হয়ত সেই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল না। তাকে সম্ভবত ভুলবশত আজকাবানে পাঠানো হয়েছিল। আসলে, ডোরিস পারকিস, ১৮ অ্যাকানথিয়া ওয়ে, লিটিল নরটন বলেছেন, ব্ল্যাক সেই হত্যাকাণ্ডের সময় ঘটনাস্থলে ছিল না।
আমরা একটা কথা জানি না যে সিরিয়স ব্ল্যাক তার আসল নাম নয়, মিসেস পারকিস বলেছেন। ওর আসল নাম স্টাবিব বোর্ডম্যান, দ্য হবগবলিনস জনপ্রিয় সঙ্গীতদলের এক প্রখ্যাত গায়ক। প্রায় ১৫ বছর পূর্বে লিটিল নরটন চার্চ হলে সঙ্গীত অনুষ্ঠান সমাপ্ত করে ফেরার সময়, এক গাড়ি দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হবার পর, সঙ্গীত জগত থেকে অবসরগ্রহণ করেন। দৈনিক পত্রিকায় তার ছবি ছাপার পর আমি তাকে চিনতে পারি। এখন মনে হয় স্টাব্বি ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কোনও রূপে জড়িত নয়। ওইদিন স্টাব্বি আমার সঙ্গে রোমান্টিক ক্যান্ডেল লিট ডিনারে ছিলেন। আমি এই মর্মে মিনিস্টার অব ম্যাজিককে সবিস্তারে একটি চিঠি দিয়েছি, আশা করছি তারা
স্টাব্বি ওরপে সিরিয়সকে যত শীঘ্র সম্ভব মুক্তি দেবেন। লেখাটা পড়া হলে অবিশ্বাস্য চোখে হ্যারি প্রতিবেদনটার দিকে তাকিয়ে থাকে। ভাবে এটা একটা জোক ছাড়া কিছুই নয়, ওর ধারণা ম্যাগাজিনে মাঝে মাঝে ওইরকমভাবে খবর ছেপে পাঠকদের ধাপ্পা দেয়। তারপর পাতা উল্টাতে উল্টাতে ফাজের ব্যাপারটা পেল।
কর্নেলিয়স ফাজ, পাঁচ বছরের জন্য জাদুমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হবার পর বলেছেন, তার উইজার্ডিং ব্যাঙ্ক, গ্রিনগটস ব্যাংককে অধিগ্রহণ করার কোনও পরিকল্পনা নেই। ফাজ বলেছেন, তিনি সর্বদাই চেষ্টা করে যাচ্ছেন আমাদের দেশে স্বর্ণসম্পদের অধিকারীদের সঙ্গে সর্বোতোভাবে সহযোগিতার হাত বাড়াতে। তাছাড়া তিনি আর কিছু চান না। কিন্তু সত্যই কী তাই করছেন? মন্ত্রী মহোদয়ের ঘনিষ্ঠরা সম্প্রতি আমাদের দৃষ্টিগোচর করেছেন যে, ফাজের সবচেয়ে বড় আকাঙ্খা গবলিনদের স্বর্ণ সরবরাহ নিজের নিয়ন্ত্রণে আনা এবং তা ব্যহত হলে প্রয়োজনবোধে দমন করতে দ্বিধা না করা।
মন্ত্রণালয়ের ভেতরের লোকেরা বলেন, কর্নেলিয়স ফাজ এই প্রথম গবলিন ক্রাশার করতে চাইছেন না। বন্ধুরা তাই ওর নাম দিয়েছে গবলিন ক্রাশার। তিনি গবলিনদের বিষ খাইয়েছেন, নদীতে ডুবিয়ে মেরেছেন বাড়ির ছাদ থেকে ফেলে দিয়েছেন, তাদের কেটে টুকরো টুকরো করে কিমা বানিয়েছেন।
হ্যারি প্রতিবেদনটা পড়া শেষ করল না। ফাজের অনেক দোষত্রুটি থাকতে পারে কিন্তু বিশ্বাস করা অতি কঠিন যে তিনি গবলিনদের কেটে টুকরো টুকরো করে কিমা বানিয়েছেন। তারপর পাতা উল্টাতে উল্টাতে পড়ল। অনেকেই দোষারোপ করেছে টাটশিল টর্নের্ডস কিডিচ লিগ জিতেছে স্রেফ ব্ল্যাকমেইল করে শুধু নয়, অবৈধভাবে ঝাড় পরিবর্তন এবং ভয় দেখিয়ে। এক জাদুকরের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে জানা গেছে যে, তিনি ক্লিন সুইপ অবলম্বন করে চাঁদে গিয়ে প্রমাণস্বরূপ এক ব্যাগ মুন ফ্রগ নিয়ে এসেছেন।
প্রাচীন টিউটনিক বর্ণমালার অক্ষর সম্বন্ধে পড়ে হ্যারি জানতে পারল কেন লুনা ম্যাগাজিনটা উল্টে পড়ছে। ম্যাগাজিনের বক্তব্য, যদি সেই অক্ষরগুলি উল্টে দেয়া যায় তাহলে তোমার শত্রুর কান কামকোয়াটস-এ পরিবর্তিত করার পন্থা জানা যাবে। সব প্রতিবেদন ও ছুটকো খবর পড়ার পর হ্যারি বুঝল, একমাত্র সিরিয়স সম্বন্ধে লেখা–সে হয়ত দ্য হবগবলিনস দলের একজন নামী গায়ক ছিল সেটা গ্রহণযোগ্য।
পড়ার পর হ্যারি ম্যাগাজিনটা লুনাকে ফেরত দিতে যাবে তখন রন বললো, পড়ার মত কিছু আছে? হ্যারি কিছু বলার আগে হারমিওন বললো, অবশ্যই না দ্য কুইবলার একটি বাজে ম্যাগাজিন সকলেই জানে। লুনা হারমিওনের কথা শুনে তার স্বপ্নের জগত থেকে ফিরে এসে বললো, ক্ষমা করবে আমার বাবা ওই ম্যাগাজিনের সম্পাদক।
হারমিওন তোতলাতে তোতলাবে বললো, না না তা নয় ম্যাগাজিনে পড়ার মত অনেক লেখা আছে মানে ওটা খুবই…।
আমাকে ফেরত দাও। কথাটা বলে একরকম ম্যাগাজিনটা হ্যারির হাত থেকে টান মেরে নিয়ে নিল। ম্যাগাজিনের সাতানুপাতা বার করে সেটা উল্টে আগের মতই মুখ ঢেকে পড়তে লাগল।
এই নিয়ে তৃতীয়বার কামরার দরজা কেউ খুলল। হ্যারি দরজার দিকে তাকাল। ও একটুও চায়নি ড্রেকো ম্যালফয় ওর দুই অন্তরঙ্গ বন্ধু ক্র্যাবি আর গোয়েলকে নিয়ে কামরায় টু মারে।
ম্যালফয় কিছু বলার আগেই হ্যারি বিরক্ত মুখে বললো, কী ব্যাপার? ম্যালফয় টেনে টেনে আলস্য ভরা কণ্ঠে বললো, সভ্যের মত কথা বলতে শেখ
টেনসন দিতে বাধ্য হব। ওর মুখটা অনেকটা ওর বাবার মতো। শোন, আমি প্রিফেক্ট হয়েছি বলে তোমার আমাকে পছন্দ নয়। তার মানে এই নয় যে আমি তোমাকে পছন্দ করছি না। তোমাকে শাস্তি দেবার ক্ষমতা আছে বলেই শাস্তি দেব।
তাই নাকি? হ্যারি বললো–কিন্তু তুমি অপদার্থ যা আমি নই, অতএব এখান থেকে বেরিয়ে যাও, আমাদের বিরক্ত না করলে খুশি হব।
রন, হারমিওন, জিনি, নেভিল সবাই হ্যারির কথা শুনে হো: হো: করে হেসে উঠল।
ম্যালয়ের ঠোঁট কুঞ্চিত হল, উইসলি পরিবারে সেকেন্ড বেস্ট হয়ে থাকতে কেমন লাগছে পটার?
হারমিওন তীক্ষ্মভাবে বললো–ম্যালফয় আর একটি কথাও বলবে না।
আহাঃ মনে হচ্ছে তুমি সাপের গর্তে পা দিয়েছ, ম্যালফয় বোকার মত হাসল সাবধানে থাকবে পটার, এই বান্দা সর্বদাই তোমার দিকে চোখ রেখে চলবে যাতে তুমি সোজা পথে চল।
হারমিওন দাঁড়িয়ে উঠে দৃঢ় স্বরে বললো–তুমি এখান থেকে যাবে, কি যাবে না?
ঘর থেকে বেরিয়ে যাবার আগে আবার ম্যালফয় বোকার মত হাসলো শুধু তাই নয়, বিদ্বেষের দৃষ্টিতে দুই অন্তরঙ্গ বন্ধুকে পাশে নিয়ে বাঁকা চোখে তাকাল।
হারমিওন সিট থেকে উঠে সশব্দে দরজাটা বন্ধ করে হ্যারির দিকে তাকাল। ও হ্যারির মতোই বুঝতে পারল ম্যালফয় এক নম্বরের শয়তান সাবধানে পা ফেলে চলতে হবে।
–এই আর এক টুকরো ফ্রগ দাও। ওর কথা শুনে মনে হল ও ম্যালফয় আর তার বন্ধুদের তেমন লক্ষ্য করেনি, কথা বার্তাও শোনেনি।
হ্যারি, নেভিল আর লুনার সামনে বিশেষ কিছু বলতে চাইল না। শুধু সামান্য ভীত হয়ে হারমিওনের দিকে একবার তাকিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইল।
সিরিয়স কুকুর রূপে স্টেশনে এসেছিল তাই হ্যারির খুব মজা লেগেছিল শুধু তাই নয়, ভাল লেগেছিল। তবে মনে হল হারমিওন ঠিকই বলেছিল, সিরিয়সের স্টেশনে আসাটা ঠিক হয়নি।
ওর আরও মনে হল মি. ম্যালফয় কাল কুকুরটা দেখে কিছু বুঝতে পারেনি তো! ড্রেকোকে কিছু বলেনি তো? ওরা কী জানে–উইসলি, লুপিন, টংকস, মুড়ী, সিরিয়স কোথায় আছেন?
হ্যারির কিছু ভাল লাগছে না। মাথায় অনেক চিন্তা। ও তাই জানালার কাছে কপালটা চেপে চলন্ত ট্রেনে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইল। বাইরে কখনও ঘন অন্ধকার, কখনও আবছা আলো। মাঝে মাঝে বৃষ্টি পড়ছে। ছাটে কাঁচ ভিজে যাচ্ছে। হ্যারি অন্ধকারের মধ্য দিয়ে হোগার্টসকে দেখার চেষ্টা করে যেতে লাগল। আলোর চেয়ে অন্ধকার বেশি তাই কামরায় বাতি জ্বলে উঠল। লুনা চটপট উঠে নিজের জিনিসপত্র, ম্যাগাজিন গোছগাছ করে নিল।
হারমিওন বললো, আমরা পোশাক চেঞ্জ করে নিই কি বল? ট্রাঙ্ক খুলে ওরা স্কুলের ইউনিফর্ম বার করল।
হারমিওন আর রন ওদের ইউনিফর্মের পকেটে প্রিফেক্ট ব্যাজ লাগিয়ে নিল। হ্যারি দেখল কাল কাঁচে রন ওর প্রতিবিম্ব দেখছে।
হোগার্টে আসতে আর দেরি নেই। সারা ট্রেনে হোগার্টসের ছাত্রছাত্রীরা নামার জন্য তৈরি হতে লাগল। সঙ্গে তাদের পেটসরাও।
রন আর হারমিওন দুজনে কামরা থেকে অন্য কামরায় যাবার আগে ওদের ইঁদুর আর পেঁচাকে ওর কাছে রেখে চলে গেল।
সকলে করিডরে নিজেদের জিনিসপত্র নিয়ে দাঁড়াল স্কুল টিচারের নির্দেশের অপেক্ষায়। হ্যারি বহুদিন পর পাইন গাছের মিষ্টি গন্ধে তাজা হয়ে উঠল। চোখের সামনে ভেসে উঠল লেকের ধারে সারি সারি পাইন গাছ। লেকের দুপাশে পাহাড়। কাছাকাছি কয়েকটি দৃর্গ, লেকে ভাসছে ছোট ছোট অনেক নৌকো।
ট্রেন প্লাটফরমে এলে সকলে নেমে পড়ল।
হ্যারিও নামল। চারদিকে তাকাল। ফাস্ট ইয়ার্স… ফাস্ট ইয়ার্স এদিকে লাইন করে দাঁড়াও। কিন্তু অতি পরিচিত আদেশটি কানে এলো না।
কিন্তু সেই কণ্ঠ স্বরের বদলে শুনতে পেল একটি মহিলার কণ্ঠস্বর, ফাস্ট ইয়ার্স তোমরা সকলে এদিকে লাইন করে দাঁড়াও। আমার দিকে।
লণ্ঠন দোলাতে দোলাতে একজনকে ওর দিকে আসতে দেখল। ও অতিপরিচিত প্রফেসর গ্রাবলি প্ল্যাংককে দেখতে পেল। কদমছাট চুল আর ইয়া গোল গোল মুখ।
হ্যারি জিনিকে বললো, হ্যাগ্রিডকে দেখতে পাচ্ছি না? জিনি বললো, আমিও দেখতে পাচ্ছি না।
জিনি অন্যদিকে চলে গেলে হ্যারি অনেক ভিড় আর অন্ধকারের মধ্যে হ্যাগ্রিডকে দেখতে চেষ্টা করল কিন্তু দেখতে পেলো না। তাহলে হ্যাগ্রিড কোথায় গেলেন?
হ্যারি নিজের মনে বললো–কোথায় যেতে পারেন? কথাটা বলে স্টেশনের গেটের দিকে এগোতে লাগল, ভাবে হয়ত তিনি অসুস্থ। জিনি অন্যদিকে চলে গেল।
ও রন আর হারমিওনের খোঁজ করল। ওদের কাছ থেকে জানতে ইচ্ছে করল প্রফেসর গ্রাবলি প্রাঙ্কের পুন:আবির্ভাবের ব্যাপারে। কিন্তু ভিড় ওকে এক জায়গাতে দাঁড়াতে দিল না। সকলের সঙ্গে ও বৃষ্টির জলে ভেজা চকচকে কালো রাস্তায় দাঁড়াল।
হগসমিড স্টেশনের ধারে দেখল প্রথম বর্ষের ছাত্রদের ক্যাসেলে নিয়ে যাবার জন্য প্রায় একশ বা তারও বেশি অশ্ববিহীন স্টেজ ক্যারেজ দাঁড়িয়ে রয়েছে। হ্যারি সেইদিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে আবার রন আর হারমিওনের খোঁজ করতে লাগল।
কোচগুলো আর অশ্ববিহীন রইল না। রুগ্ন, অস্থিচর্মসার কাল রং-এর ঘোড়াগুলো দেখে ওর খুব মায়া হল। ওদের দেহের প্রতিটি পাজর গোনা যায়। ওদের গায়ের কাল কোট কঙ্কাল সার দেহতে ঝুলছে, প্রতিটি দেহের হাড় গোনা যায়। ড্রাগনের মাথার মতো তাদের মাথা। তারাবিহীন চোখগুলো সাদা, ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে রয়েছে। দেখলে ভয় করে। হ্যারির মনে হল ওদের ছাড়াই তো ছেলেমেয়েরা কোচে মালপত্র চাপিয়ে নিজেরাই টেনে নিয়ে যেতে পারে ক্যাসেলে।
হঠাৎ ডান ধারে শুনতে পেল রনের গলা–আমার পিগ কোথায়?
হ্যারি বললো, লুনার কাছে আছে। হ্যাগ্রিড কোথায় জানার জন্য বললো–তুমি হ্যাগ্রিডকে দেখেছ?
–হ্যাগ্রিড? আমি তো দেখিনি; রন বললো।
সামান্য দূরে ও দেখতে পেল ম্যালফয় আর তার অন্তরঙ্গ বন্ধুদের। ওরা ঠেলেঠুলে একটা কোচ অধিকারের জন্য চলেছে। একটু পর ভিড়ের মধ্য থেকে হারমিওন হাঁফাতে হাঁফাতে বেরিয়ে এলো।
হারমিওন বললো–ম্যালফয় নতুন ছেলেমেয়েদের সঙ্গে দারুণ খারাপ ব্যবহার করছে। মাত্র কয়েক মিনিট আগে প্রিফেক্টের ব্যাজ বুকে লাগিয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করছে। ওর নামে রিপোর্ট করতে হবে। কশ্যাংস কোথায়?
হ্যারি বললো–জিনির কাছে, ওই তো ওখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে। জিনিকে কুকশ্যাংকসকে কোলে নিয়ে আসতে দেখল ভিড়ের মধ্য থেকে।
বেড়ালটা জিনির কোল থেকে নিয়ে হারমিওন বললো–তাড়াতাড়ি চল, দেরি করলে ক্যারেজ ভর্তি হয়ে যাবে।
রন বললো–আরে আমার পিগকে দেখতে পাচ্ছি না। হারমিওন দৌড়ল কোচের দিকে। হ্যারি আর রন দাঁড়িয়ে রইল।
হার জিরজিরে ঘোড়াগুলোকে দেখিয়ে হ্যারি রনকে বললো, ওগুলো কি বলতে পার? ওগুলো তো ঘোড়া নয়।
–কোনগুলো?
–ক্যারেজের সামনে যেগুলো রয়েছে। লুনা খাঁচায় বন্দী পিগউইজিয়নকে নিয়ে দাঁড়াল। ছোট পেঁচাটা খাঁচার ভেতর উত্তেজনায় ছটফট করছে।
–আ, তোমরা এখানে?
লুনা বললো–খুব সুন্দর তোমার প্যাঁচা।
–তাই?
ও খুব ভাল, রন বললো–চল একটা ক্যারেজ ধরা যাক। ও হ্যাঁ কি বলছিলে হ্যারি…?
যে ক্যারেজটায় হারমিওন আর জিনি বসে আছে; তার ঘোড়াটাকে দেখিয়ে বললো–ওগুলো কি ঘোড়া?
–হা ঘোড়া তো বটেই। ওরা ক্যারেজ টেনে নিয়ে যাবে। দেখতে পারছো না? ভাল করে দেখ।
–ওরা কি ঘোড়া?
–কী দেখব; রন বললো।
–ক্যারেজগুলো কারা টানছে? রন হ্যারির কথা শুনে হকচকিয়ে গেল।
–তুমি ঠিক আছ তো হ্যারি?
–আমি? হ্যাঁ, আমি ঠিক আছি।
হ্যারির সবকিছু যেন গোলমাল হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু শীতের রাতে জীর্ণ ঘোড়াগুলো দাঁড়িয়ে রয়েছে যাত্রির অপেক্ষায়। নাক দিয়ে ওদের বাষ্প বেরোচ্ছে। স্টেশনের আবছা আলোতে সব দেখতে পাচ্ছে হ্যারি। কিন্তু এগুলো তো ঘোড়া নয়।
–আশ্চর্য! রন তুমি কেন বুঝতে পারছো না কতগুলো কালো কালো রং-এর বাদুড় ডানা মেলে ক্যারেজের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে!
রন, হ্যারির উল্টোপাল্টা কথায় খুব চিন্তিত হল। হঠাৎ হ্যারি কিসব বলছে? হ্যারি অদ্ভুত চোখে বললো, সত্যি তুমি দেখতে পাচ্ছ না?
–ঠিক আছে, ঠিক আছে, গাড়িতে গিয়ে বস, রন বললো, আশ্চর্য তো! তুমি ঘোড়াকে ঘোড়া দেখতে পাচ্ছ না? তুমি কী পাগল হয়ে গেছ?
রন গাড়ির ভেতর ঢুকে গেল। হ্যারি লুনাকে বললো, তুমি দেখতে পাচ্ছ?
হ্যারি ক্যারেজের সামনে ঘোড়ার বদলে দেখতে পাচ্ছে একগাদা বাদুড়ের মতো ডানামেলা ঘোড়া!
লুনা বললো, হ্যাঁ, দেখছি তো। বরাবরই তো ওরা টেনে নিয়ে যায়। তুমি আমি কেউ বদলাইনি। যেমন ছিলাম তেমনিই আছি।
কথাটা বলে ও গাড়ির মধ্যে ঢুকে গেল। হ্যারি দ্বিধাগ্রস্ত মনে ওর পিছু পিছু গাড়িতে বসল।