১০. রাত বেশি হয় নি

রাত বেশি হয় নি, মাত্র আটটা বাজে। কিন্তু এর মাঝে কি অন্ধকার। আমি আর রাশেদ সেই অন্ধকারেই গুটিগুটি হেঁটে যাচ্ছি। বাজারের কাছে এসে খানিকক্ষণ একটা দোকানের পাশে লুকিয়ে থাকতে হল, কয়েকটা রাজাকার যাচ্ছিল কথা বলতে বলতে। নদীর কাছে এসে আমাদের মাঠে নেমে যেতে হল, বড় বীজটার দুই পাশে এখন মিলিটারী পাহারা। রাত্ৰিবেলা কেউ এখন ব্রীজটা পার হতে পারে না। দিনের বেলাতেই মিলিটারীরা দাঁড় করিয়ে হাজার রকম প্রশ্ন করে একটু সন্দেহ হলেই নদীর তীরে নিয়ে গুলী করে মেরে পেলে। লোকজন কেউ এখন আর বীজ দিয়ে পার হয় না নৌকা করে পার হয়।

রাশেদ মনে হয় এলাকাটা বেশ ভাল করে চিনে। মাইলখিানেক অন্ধকারে হেঁটে হেঁটে এক জায়গায় এল, নদীতে অনেকগুলি নৌকা সেখানে কাছাকাছি রাখা। রাশেদ এদিক সেদিক তাকিয়ে চাপা গলায় ডাকল, হানিফ ভাই –

কে?

আমি রাশেদ।

এই যে এদিকে।

আমরা হাতড়ে হাতড়ে নৌকাটাতে উঠে পড়ি। নৌকার মাঝি বলল, আর কেউ কি আসবে?

হানিফ নামের মানুষটা বলল, না। চল ও পাড়ে।

মাঝি লাগি দিয়ে ধাক্কা দিয়ে নৌকাটা ছেড়ে দিল। হানিফ নামের মানুষটা বলল, তোমার সাথে কে?

আমার বন্ধু ইবু। আপনাকে বলেছিলাম, মনে নাই?

ও।

হানিফ মানুষটা মনে হয় বেশি কথা বলতে পছন্দ করে না। নৌকায় বসে গুনগুন করে গান গাইতে লাগল, ওমনা মনারে আমার ছাইড়া তুমি কই গেলা রে . . .

গলায় সুর নেই। আর গানের কথাগুলিরও কোন অর্থ নেই। কিন্তু হানিফ আপন মনে গান গেয়ে যেতে থাকল। অন্ধকারে, নদীর ঠাণ্ড বাতাসে, নৌকার দুলুনীতে একটু পর গানটা আমার বেশ ভালই লাগতে থাকে।

আমি গলা নামিয়ে রাশেদকে জিজ্ঞেস করলাম, এ কি মুক্তিবাহিনী?

না, মুক্তিবাহিনীর লোক।

ও।

নদীর ওপাড়ে নেমে আমরা আবার হেঁটে যেতে থাকি। অনেক দূর হেঁটে আমরা গাছপালা ঢাকা একটা ছোট বাড়িতে হাজির হলাম। রাস্তায় একটা কুকুর ঘেউঘেউ করতে থাকে আর একজন মানুষ রাগ-রাগ গলায় জিজ্ঞেস করল, কে?

আমি হানিফ।

কোন হানিফ?

রাশেদ আমার কানের কাছে মুখ এনে বলল, গোপন পাশওয়ার্ড।

অন্ধকার থেকে মানুষটা এবারে বের হয়ে এল, হাতে আলগোছে একটা রাইফেল ঝুলিয়ে রেখেছে। বলল, আস ভিতরে। সাথে এই বাচ্চা কারা?

যার কথা বলেছিলাম।

একেবারে বাচ্চা ছেলে দেখি!

ভিতরে একটা হারিকান জ্বলিয়ে বেশ কিছু মানুষ বাসে আছে। কয়েকজন তাস খেলছে। বিছানায় বসে। হারিক্যানের অল্প আলোয় চকচক করছে কয়েকটা স্টেনগান।

চশমা পরা একজন বলল, হানিফ কি খবর তোমার।

ভাল। মিলিটারী ক্যাম্পের ম্যাপ যারা তৈরি করেছে তাদের নিয়ে এসেছি।

আরে! এ দেখি দুধের বাচ্চা! চশমা পরা মানুষটা অবাক হয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে বলল, কাছে আসি, কাছে আস।

আমরা কাছে গেলাম, চশমা পরা একজন মানুষ আমাদের মাথায় হাত দিয়ে চুলগুলি এলোমেলো করে দিয়ে বলল, ম্যাপ দেখে আমি ভেবেছিলাম তোমরা আরো বড় হবে। ফার্স্ট ক্লাস একটা ম্যাপ। এত সুন্দর ম্যাপ তৈরি করা শিখলে কেমন করে?

রাশেদ বলল, শিখি নাই! আন্দাজে আন্দাজে করেছি। আমি বললাম, আমরা যখন গুপ্তধন খেলতাম তখন ম্যাপটা তৈরি করেছিলাম। আমাদের সাথে আশরাফ নামের একজন আছে সে বিল্ডিংগুলি, ক্লাশ ঘর, পুকুর, গাছ এই সব এঁকেছে।

আর মিলিটারী ক্যাম্পে এখন কোনটা কি—

সেগুলো রাশেদ করেছে।

চশমা পরা মানুষটা আবার অবিশ্বাসের ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল আস্তে আস্তে বলল, সাংঘাতিক একটা কাজ করেছ তোমরা। সাংঘাতিক কাজ! কিন্তু আমি ভেবেছিলাম তোমরা আরো বড় হবে। স্কুলে নাইন টেনে পড়ে এরকম বেশ বড় বড় ছেলে আছে তো সেরকম। কিন্তু তোমার এত ছোট জানলে কিছুতেই আসতে বলতাম না। কিছুতেই না। তোমাদের বাসায় চিন্তা করবে না?

আমি ইতস্ততঃ করে মাথা নাড়লাম, না।

কেন?

নাসায় জানে না।

জানে না? চশমা পরা মানুষটা মাথায় হাত দিয়ে বসে রইল। কিছুক্ষণ। তারপর আমাদের দিকে তাকিয়ে বলল, যাই হোক যা হবার হয়েছে। আমাকে তোমরা কাজল ভাই বলে ডাকতে পার।

কাজল ভাই?

হ্যাঁ। আমার আসল নাম কিন্তু কাজল না। আমরা একটা স্পেশাল মিশনে এসেছি, আসল নাম বলা নিষেধ। কাজল নামটা আমার খুব পছন্দ। তাই এখন আমার নাম কাজল ভাই।

গোফওয়ালা একজন তার গোফ টানতে টানতে বলল, আমার মাঝে মাঝে মানে থাকে না, তখন কাজল না ডেকে সুরমা ডেকে ফেলি।

কাজল ভাই হো হো করে হেসে বললেন, ধুর। সুরমা তো মেয়েদের নাম।

আরেকজন হঠাৎ মাথা নেড়ে গান গেয়ে উঠল, চোখের নজর কম হলে আর কাজল দিয়ে কি হবে . . .

সবাই আবার হো হো করে হেসে উঠে। কাজল ভাই ঘড়ি দেখে বললেন, দুই নম্পর্বর দলটা তো এখনো এল না। ওদের জন্যে অপেক্ষা করব না কি শুরু করে দেব?

কালোমতন একজন তার গোফ টানতে টানতে বলল, নদীতে গান বোটের বড় উৎপাত, অনেক সময় লাগে পার হতে। তার ওপর বড় রাস্তায় মিলিটারী পাহারা দিচ্ছে সোজাসুজি আর আসা যায় না। দুনিয়া ঘুরে ধান ক্ষেতের মাঝ দিয়ে হেঁটে হেঁটে আসতে হয়।

ফর্সা মতন একজন বলল, গুলীর বাক্স মাথায় নিয়ে।

গ্রামের লোকজন অবশ্য সাহায্য করে।

তা করে। না হলে উপায় ছিল?

কাজল ভাই বললেন, আমরা তাহলে ওদের ছাড়াই শুরু করে দেই।

হ্যাঁ, শুরু করেন।

কাজল ভাই পকেট থেকে কিছু কাগজ বের করে সামনে রেখে হারিক্যানটা উসকে দিলেন। আমরা মাথা উঁচু করে দেখলাম আমাদের আঁকা স্কুলের ম্যাপিটা। রাশেদ চোখ বড় বড় করে বলল, আমাদের ম্যাপ।

হ্যাঁ, কাজল ভাই এক গাল হেসে বললেন, এখন বলা যায় সোনার খনি।

কাজল ভাই ম্যাপিটার দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, এটা কি শ্ৰেদ্ধকাল মত আঁকা হয়েছে। এক ইঞ্চি সমান দশ গজ। এইটা কি সত্যি?

হ্যাঁ। আমি মাথা নাড়লাম, আশরাফ গ্রাফ পেপারে ঐকেছিল, হেঁটে হেঁটে মেপেছে সবকিছু।

ভেরি গুড। কাজল ভাই খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন, এই যে লাইব্রেরির ঘর স্কুল থেকে একটু আলাদা, এখানে লিখেছ মূল অস্ত্রাগার। এটা কি সত্যি?

রাশেদ মাথা নেড়ে বলল, সত্যি।

কেমন করে জান?

আমি দেখেছি।

কি দেখেছ?

দেখেছি মিলিটারীগুলি অপারেশন শেষ করে এসে সব অস্ত্র এখানে জমা দেয়। গুলীর বাক্সগুলি এনে এখানে রাখে।

সব সময় কয়জন পাহারা থাকে। এখানে। যারা মাথায় গুলীর বাক্স নিয়ে গেছে তারা বলেছে ভিতরে নাকি শুধু মেশিন গান আর মেশিন গান।

কাজল ভাই লাল পেন্সিল দিয়ে লাইব্রেরিটা ঘিরে একটা দাগ দিলেন। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, এর দরজা কোন দিকে?

আমরা দেখিয়ে দিলাম, এদিকে আছে। ওদিকেও আছে।

ফর্সা মতন ছেলেটা জিব দিয়ে চুকচুক করে বলল, এদিকে হলে ভাল হত।

কাজল ভাই বললেন, হ্যাঁ। তবে এটা বড় সমস্যা না।

সবাই পুকুরটা নিয়ে খানিকক্ষণ কথা বলল, কাজল ভাই এক সময় জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি বলতে পারবে এই পুকুরের ঢালুতে যদি কেউ শুয়ে থাকে তাহলে কি স্কুলের দোতলা থেকে দেখা যায়?

না। আমি আর রাশেদ একসাথে মাথা নাড়লাম।

কেমন করে জান?

আমরা লুকোচুরি খেলার সময় মাঝে মাঝে এখানে লুকাই, তখন দেখেছি।

তার মনে পুকুরের ঢালুতে কেউ থাকলে ছাদে যে ব্যাংকার করেছে সেখান থেকে দেখা যাবে না?

না।

গুড। কাজল ভাই খুশি খুশি মুখে পুকুরকে ঘিরে কয়েকটা ক্রস ঐকে বললেন, গুড এখান থেকে কভার দিলে পুরোটা নিরাপদ।। দুইটা এস. এম. জি. হলেই পুরোটা কভার হয়।

সবাই মাথা নাড়ল।

গোঁফওয়ালা ছেলেটা বলল, এই পুরো জায়গার মধ্যে সমস্যা হচ্ছে এই বাংকার। মর্টার দিয়ে চেষ্টা করা যায় না?

না। কাজল ভাই মাথা নাড়লেন, কাছে বাড়িঘর দোকানপাট। পাবলিক মারা পড়বে।

রাশেদ বললেন, ছাদের বাংকারে মিলিটারী থাকে না। শুধু দরকারের সময় উঠে।

তুমি কেমন করে জান?

আমি দেখেছি। মাঝে মাঝে প্র্যাকটিস করে তখন দৌড়ে গিয়ে ছাদে উঠে। তা ছাড়া এখন বর্ষার সময়, বাংকারে ভাল ছাদ নাই, কেউ থাকে না।

সত্যি?

হ্যাঁ, তা ছাড়া মিলিটারীরা জোককে খুব ভয় পায়। বর্ষার সময় এই দিকে অনেক জোক। আর—

আর কি?

আমাদের স্কুলের দোতলা এখানে শেষ হয় নাই। সিঁড়িটা খোলা, এই দিক দিয়ে গেছে। রাশেদ ম্যাপে হাত দিয়ে সিঁড়িটা দেখিয়ে বলল, এই সিঁড়ি দিয়ে বাংকারে যেতে श्।

কাজল ভাই ভুরু কুচকে রাশেদের দিকে তাকালেন। রাশেদ বলল, রাস্তার এই পাশে কেউ যদি একটা স্টেনগান না হয় মেশিন গান নিয়ে বসে থাকে, যদি সিঁড়ির দিকে গুলী করতে থাকে তাহলে কেউ সিঁড়ি দিয়ে ছাদে যেতে পারবে না।

কাজল ভাই একটু অবাক হয়ে রাশেদের দিকে তাকালেন, তারপর জিজ্ঞেস করলেন, রাস্তার এই পাশে কি আছে?

নূর মোহাম্মদের বেকারী। রুটি তৈরি করে। এই পাশে উত্তম লক্ট্রী। এইখানে আরেকটা চায়ের দোকান।

এটা ইটের দালান?

হ্যাঁ।

তুমি শিওর?

শিউর।

এখান থেকে সিঁড়িটা কভার করা যাবে?

যাবে।

কাজল ভাই এবং অন্যেরা ম্যাপিটার দিকে তাকিয়ে নানারকম কথা বলতে শুরু করলেন কি একটা ব্যাপার নিয়ে দুজনের খানিকক্ষণ তর্কও হল। কাজল ভাই একসময় সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, আমার মনে হয় এই লোকেশানটা একটা এটাকের জন্যে খুব ভাল। খুব সুন্দর পজিশন দেওয়া যাবে। আমার ইচ্ছা অস্ত্রাগার থেকে কয়টা রকেট লঞ্চার নেওয়া। খুব অভাব রকেট লঞ্চারের। যদি নেওয়া না যায় ঘরটা উড়িয়ে দেওয়াও খারাপ না।

ফর্সা মতন ছেলেটা বলল, কিন্তু গ্লোবাল প্ল্যানের তো রদবদল করা যাবে না। প্রাইমারী মিশন হচ্ছে জিরো প্লাস টুয়েন্টি ফোর আওয়ারে—

না। প্রাইমারী মিশন তো রদবদল করছিও না। এই অপারেশনটা দুই নম্বর দলের জন্য। সব লোকাল ছেলেরা।

আমি জিজ্ঞেস করলাম, প্রাইমারী মিশনটা কি?

কাজল ভাই হেসে বললেন, এটা একটা টপ সিক্রেট অপারেশান, কাউকে বলার কথা না। কখন হবে কোথায় হবে কেউ জানে না। খুঁটিনাটি সব কিছু শুধু আমি জানি।

কালো মতন গোফ ওয়ালা ছেলেটা বলল, আমাদের উপর কি অর্ডার আছে জান?

কি?

যদি হঠাৎ আমার কোন কারণে মিলিটারীদের হাতে ধরা পড়ে যাই তাহলে নিজেরাই যেন প্রথমে কাজল ভাইকে গুলী করে মেরে ফেলি! ধরা পড়ার পর অত্যাচার করে যেন কিছু বের করতে না পারে।

রাশেদ চোখ কপালে তুলে বলল, গুলি করে মেরে ফেলবেন? কাজল ভাইকে?

কাজল ভাই চোখ বড় বড় করে বললেন, ধরা পড়লে! ধরা পড়লে। ধরা পড়ার আগে না–

সবাই হো হো করে হেসে উঠল।

ফর্সা ছেলেটা বলল, প্রথম প্রথম যেসব যুদ্ধ হয়েছে সেগুলি-ছিল কোন রকম পরিকল্পনা ছাড়া। এখন সব কিছু বড় পরিকল্পনার মাঝে হচ্ছে। সারা দেশকে এগারোটা সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। একেকটা সেক্টরের দায়িত্বে আছে —

হঠাৎ বাইরে থেকে শীষের মত একটা শব্দ হল সাথে সাথে ভিতরে সবাই চুপ করে গেল। কাজল ভাই আস্তে করে হারিক্যানের আলো কমিয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। বিছানা থেকে একটা স্টেনগান হাতে, নিয়ে আস্তে আস্তে পা টিপে দরজার পাশে দাঁড়ালেন। ফর্সা মতন ছেলেটা আমাকে আর রাশেদকে ফিসফিস করে বলল, মাটিতে শুয়ে পড়।

আমরা মাটিতে উপুর হয়ে শুয়ে পড়লাম। উত্তেজনায় আমার বুক ধ্বকধ্বক করে শব্দ করছে, তার মাঝে প্রায় নিঃশ্বাস বন্ধ করে পড়ে থাকলাম। বাইরে কিছু মানুষের পায়ের শব্দ পেলাম কিছু কথাবার্তা শোনা গেল তারপর আবার চুপচাপ। আবার শীষের শব্দ শোনা গেল, এবার দু’বার। তখন সবাই আবার আস্তে আস্তে কথা বলতে শুরু করুল কাজল ভাই ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন সাবধানে।

ফর্সা মতন ছেলেটা বলল, রাজাকাররা মনে হচ্ছে খুব উৎপাত করছে।

একটা ব্রাশ ফায়ার করে জানিয়ে দিলে হয় আমরা এখানে তাহলে আর ধারে কাছে আসবে না।

সবাই হো হো করে হেসে উঠল।

 

আমরা রাতে মুক্তিবাহিনীর সাথে ভাত খেলাম। খাবার বেশি কিছু ছিল না মোটা লাল চাউলের ভাত আর ডিম। সবাই সেটা এত মজা করে খেল যেন কোরমা পোলাও খাচ্ছে। খাবার পর চা, চিনি নাই বলে গুড চা। খেতে কেমন জানি পায়েশ পায়েশ মনে হয়। খাবার পর মেঝেতে মাদুর পেতে দুটি তেল চিটচিটে বালিশ দিয়ে কাজল ভাই বললেন, তোমরা এখন ঘুমাও। সকালে তোমাদের শহরে পৌঁছে দেয়া হবে।

রাশেদ বলল, আমাদের এখন ঘুম পায় নাই।

না পেলেও ঘুমাতে হবে। মনে কর এটা হাই কমান্ডের অর্ডার।

আমরা তখন শুয়ে পড়লাম। শুয়ে শুয়ে রাশেদ আর আমি ফিসফিস করে কথা বলতে থাকি। এই প্রথম সত্যিকারের মুক্তিবাহিনী দেখছি! কি সাংঘাতিক ব্যাপার!

আমরা চুপচাপ শুয়ে রইলাম। উত্তেজনায় চোখে ঘুম আসতে চায় না। বাইরে একটা কুকুর ডাকছে। দূরে কোথায় যেন একটা শেয়াল ডাকছে, রাতে শেয়ালের ডাক বুকের ভিতর কেমন জানি ফাঁকা ফাকা লাগে। কারণটা কি কে জানে! আরো দূরে কোথায় জানি গুলীর শব্দ হল। কে জানে ব্রীজের উপর মিলিটারীগুলি কাউকে গুলী করে মারছে কি না।

আমার মনে হল কখনো ঘুম আসবে না। কিন্তু শুয়ে থাকতে থাকতে এক সময় সত্যিই ঘুমিয়ে গেলাম। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখলাম আমিও মুক্তিবাহিনী। বিশাল একটা মেশিনগান নিয়ে আমি কাদার মাঝে দিয়ে ছপছপা করে হেঁটে যাচ্ছি। একেবারে সত্যি মুক্তিবাহিনীর মত।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *