১০. যে ডাক্তারের কাছে আমাকে সফিক নিয়ে গেল

যে ডাক্তারের কাছে আমাকে সফিক নিয়ে গেল, আমি তার বেশির ভাগ প্রশ্নের জবাব দিলাম না। অবশ্যি ভদ্রলোকে বলে দিয়েছিলেন কোনো প্রশ্নের জবাব দিতে না চাইলে দেবেন না। আমার দিকে তাকিয়ে হাসবেন। আমি বুঝবো আপনি জবাব দিতে চাচ্ছেন না। ডাক্তারের সঙ্গে নিম্নলিখিত কথাবার্তা হল।

ডাক্তার : কেমন আছেন?

আমি : ভালো।

ডাক্তার : কি রকম ভালো?

আমি : বেশ ভালো।

ডাক্তার : রাতে ঘুম হয়?

আমি : হয়।

ডাক্তার : আপনার নিজের কি ধারণা, আপনার কোনো সমস্যা আছে?

আমি : আছে। একটাই সমস্যা।

ডাক্তার : বলুন তো শুনি।

আমি : আমি একটা খুন করার পরিকল্পনা করেছি।

ডাক্তার : তাই না কি?

আমি : হ্যাঁ তাই।

ডাক্তার : কি ধরনের পরিকল্পনা?

আমি : ব্লুপ্রিন্ট বলতে পারেন। দিনক্ষণ, মার্ডার উইপন সব ভেবে রেখেছি।

ডাক্তার : কাকে খুন করবেন?

আমি : (ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে হাসলাম)

ডাক্তার : কবে নাগাদ খুনটা করবেন?

আমি : (আবার হাসি।)

ডাক্তার : মেয়েদের প্রতি কি আপনার কোন বিদ্বেষ আছে?

আমি : আবারো হাসি।

ডাক্তার : শুনেছি আপনার স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে গেছে। আপনার বন্ধু আমাকে টেলিফোনে বলেছেন। কথাটা কি সত্যি?

আমি : কথা সত্যি নয়। আমি সফিকের লেখা একটা উপন্যাস মুখস্থ বলতে পারি। পুরোটা না, প্রথম পরে পাতা–শুনবেন?

ডাক্তার : দেখি মুখস্থ বলুন তো শুনি।

আমি বলতে শুরু করলাম। ডাক্তার হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলেন। মনে হয় আমার মতো রুগী তিনি এর আগে পাননি। কিছুক্ষণের ভেতরেই আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, উপন্যাসটা কেন মুখস্থ করেছেন? খুব ইন্টারেষ্টিং?

না।

তাহলে? মুখস্থ করার কারণ কি?

এমনি করলাম।

ও আচ্ছ। আপনি আগামী রবিবারে আসতে পারবেন? আরো কিছু পরীক্ষা করবো।

আসবো। রবিবারে আসবো।

ডাক্তারের ঘর থেকে বের হয়ে সফিক বলল, তোর অবস্থা খুবই খারাপ। মনে হয় ব্রেইনের নাট বল্ট সব খুলে পড়ে গেছে।

আমি বললাম, এই ডাক্তার নিশ্চয়ই সব আবার জোড়া লাগিয়ে দেবেন।

তা দেবেন। খুব ভাল ডাক্তার। ভাবছি বাবাকে একবার দেখাবো।

উনারও কি নাট বল্ট খুলে পড়ে গেছে?

হুঁ। আজ বাসায় বিশ্রী এক কাণ্ড করেছেন। সুমিকে মেরে তক্তা বানিয়ে ফেলেছেন। একেবারে রক্তারক্তি। এত বড় মেয়েকে কেউ মারতে পারে?

কি জন্যে মারলেন?

জিজ্ঞেস করিনি। মনে হয় মেডিক্যালে এ্যালাও হয়নি। মনটা খুবই খারাপ হয়েছে। একটা ভাল ছেলে পেলে সুমির বিয়ে দিয়ে দিতাম। আচ্ছা শোন, বাবু কি সুমিকে বিয়ে করবে? তোর কি মনে হয়?

জানি না। জিজ্ঞেস করে দেখতে পারি।

বাবু তো এবার এম এসসি দিচ্ছে তাই না?

দিচ্ছে না। ফার্স্ট পেপার পরীক্ষায় অর্ধেকটা প্রশ্ন আনসার করে হল থেকে বের হয়ে এসেছে।

বলিস কি, কেন?

রূপা ওকে একটা ধাঁধা জিজ্ঞেস করেছিল। ঐ ধাঁধা তার মাথায় ঘুরছে। ধাঁধার উত্তর না জানা পর্যন্ত সে পরীক্ষা দিতে পারবে না।

রূপার কাছ থেকে জেনে নিলেই হয়।

তা হয়। কিন্তু রূপাকে সে পাবে কোথায়?

তার মানে?

ওকে পাওয়া যাচ্ছে না। কোন ট্রেস নেই। কোথায় আছে কেউ কিছু বলতে পারছে না।

সফিক হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি বললাম, আমার সঙ্গে একটু আয়, একটা সাইকেল কিনব।

সাইকেল দিয়ে কি করবি?

তোর উপন্যাসের নায়ক লোকমান সাহেবের মত ঘুরে বেড়াব।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *