মোগলাই কলকাতা
‘যব ছোড় চলে লক্ষ্নৌ নগরী…।’ ১৮৫৬ সাল। ব্রিটিশ সরকার বাহাদুর অন্যায়ভাবে ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদ করলেন লখনউয়ের শেষ স্বাধীন নবাব ওয়াজেদ আলি শাহকে। সাধের লখনউ ছেড়ে কলকাতায় চলে এলেন ভগ্নমনোরথ নবাব। শহরের দক্ষিণপ্রান্তে মেটিয়াবুরুজের ভূতঘাট, আজকের গার্ডেনরিচ অঞ্চলে, গঙ্গার ধারে হাজারখানেক একরের ওপর জমিতে গড়ে তুললেন বিশাল সুরম্য প্রাসাদ। সে এক মিনি লখনউ। আক্ষরিক অর্থেই। উপমাটা ব্যবহার করলাম কারণ নবাব তাঁর সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন তাঁর বিশাল পরিবার, হাতিঘোড়া, অগুনতি বেগম-বাঁদী-হারেমসুন্দরী-তওয়াইফ (বাঈজী)—গাইয়ে-বাজিয়ে-লোকলস্কর-পাত্রমিত্র-অমাত্য-পরিষদ-মোসাহেব-কবি-নোকর-খানসামা-বাবুর্চি মায় একটা আস্ত চিড়িয়াখানা পর্যন্ত। নবাবের সঙ্গে সঙ্গে লখনউ ছেড়ে কলকাতায় চলে এসেছিলেন বহু আমির ব্যবসায়ী আর রহিস, জ্ঞানীগুণী মানুষজন। অচিরেই মেটিয়াবুরুজের বিস্তীর্ণ অঞ্চল-জুড়ে গজিয়ে উঠল আরেকটা ছোটখাটো লখনউ। কলকাতার নব্য বাবুসমাজের গণ্যমান্যদেরও নিয়মিত আনাগোনার পীঠস্থান হয়ে উঠল মেটিয়াবুরুজে নবাবের প্রাসাদ। নৃত্যগীত-শিল্পকলা-কবিতা-শেরশায়েরি, খানাপিনা, তহেজিব… সব মিলিয়ে নতুন এক মিশ্র সংস্কৃতির তত্কালীন ভরকেন্দ্রের নাম মেটিয়াবুরুজ।
আসলে নবাবের মেটিয়াবুরুজ তথা কলকাতায় আগমনের উদ্দেশ্য ছিল তাঁকে অন্যায়ভাবে উচ্ছেদ করার বিরুদ্ধে বড়লাটবাহাদুরের কাছে দরবার করা। প্রয়োজনে লন্ডনে প্রিভি কাউন্সিল অবধি যাওয়া। সেই উদ্দেশে নিজের মা, ভাই ও ছেলেকে পাঠিয়েছিলেন লন্ডনে। কিন্তু লাভের লাভ বলতে প্রায় কিছুই হল না। রাজমাতা আর ভাই প্রবাসেই দেহত্যাগ করলেন। হতাশ শাহজাদা। একা। নিঃসঙ্গ। ফিরে এলেন মেটিয়াবুরুজে, নবাবের কাছে।
‘খোয়াব থা যো কুছ ভি দেখা/যো শুনা আফসানা থা…’ (যা দেখেছি সবই স্বপ্ন/শুনেছি যা কিছু সবই গল্পকথা…)। ১৮৮৭। জীবনের শেষ শায়েরিটি লিখে বরাবরের মতো দুনিয়াদারি ছেড়ে চলে গেলেন ভগ্নমনোরথ মেটিয়াবুরুজের নবাব। অন্য কোনও শেরশায়েরির দেশে। নাচগানের আসর, শিল্প-কবিতা-সংস্কৃতি, জাঁকজমক, কোলাহলমুখর হর্ম্যপ্রাসাদ… সময়ের কালগ্রাসে অতীত হয়ে গেল। কেবল একটি জিনিস ছাড়া। নবাবি খানা। লখনউ ছেড়ে চলে আসার সময় নবাব তার সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন শতাধিক পাচক বা বাবুর্চিকে। তাদের হাতের রান্না, এককথায় অমৃতসমান। কতরকম যে পদ তার ইয়ত্তা নেই। বিরিয়ানি, চাঁপ, কাবাব, কোফতা, কোর্মা, খুশকা পিলাও, জর্দা পিলাও, দালগোস্ত, ফিরনি… এক সে বাঢ় কর এক উমদা রন্ধনশিল্প সব। নবাব চলে গেলেন। রয়ে গেল নবাবি খানা। নবাবি রসুইখানা থেকে বের হয়ে ছড়িয়ে পড়ল শহরের কোনায় কোনায়। ঢুকে পড়ল সাধারণের হেঁশেলে। তার মধ্যে জনপ্রিয়তায় একনম্বরে অবশ্যই বিরিয়ানি। ঘি-জাফরানস্নাত সুগন্ধী বাসমতী চাল আর মাংসের স্বর্গীয় দমপোক্ত কুইজিন। এ প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখা ভাল একমাত্র কলকাতাতেই বিরিয়ানিতে আলু এবং কোথাও কোথাও ডিম দেবার রেওয়াজ রয়েছে। সারা দেশে আর কোথাও এই নজির নেই। এরও একটা নির্দিষ্ট ইতিহাস আছে। আগেই বলেছি মেটিয়াবুরুজে নবাববাড়ির রান্না, মূলত বিরিয়ানি দ্রুত সাধারণের মধ্যে বিশেষভাবে মুসলমান এলাকাগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। এদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন অত্যন্ত দরিদ্রশ্রেণির মানুষ। মাংস জোগাড় করে ওঠা সবসময় সম্ভব হত না সবার পক্ষে। ফলে মাংসের বিকল্প হিসেবে আলু এবং ক্ষেত্রবিশেষে ডিম দেওয়ার প্রচলন হয়। পরবর্তীতে মাংস থাকলেও সঙ্গে আলু এবং ডিম দেওয়ার রেওয়াজটা কিন্তু রয়েই গিয়েছে কলকাতার বিরিয়ানি রন্ধনপ্রণালীতে।
এই মোগলাই রসনা সংস্কৃতির হাত ধরেই পরবর্তীতে কলকাতার বুকে গজিয়ে উঠতে থাকে একের পর এক মোগলাই খানার হোটেল। এর মধ্যে সবচেয়ে পুরনো এবং বনেদিয়ানায় সেরা চিৎপুর রোডের ‘রয়্যাল’। নাখোদা মসজিদের কাছে। মোগলাই কুইজিনের সেরা ঠিকানা। এদের রান্নার প্রতিটি পদই যাকে বলে সত্যিই রাজকীয়। নামের সঙ্গে সাজুয্য রেখেই। তবে সুকুমার রায়ের ভাষায় ‘কিন্তু সবার চাইতে সেরা’ অবশ্যই—চাঁপ। দোকানের মুখেই কাচাধারের আড়ালে বিশাল তাওয়ায় ভাজা হয়ে চলেছে সবসময়। তাওয়ার চারধারে চুপচুপে তেল-ঘি-মশলায় স্নানরত মাংসখণ্ড। থেকে থেকে রোগনের ছিটে। সঙ্গে সঙ্গে গর্বিত অভিমানে ফ্যাঁস করে উঠছে তাওয়ায়। রেয়াজি খাসির পাঁজরা ছাড়া আর কিছুই ব্যবহার করা হয় না আক্ষরিক অর্থেই ‘রয়্যাল’ এই চাঁপে। ধীরেসুস্থে প্রবেশ করুন দোকানে। গুছিয়ে বসুন টেবিলে। ‘ফরমাইয়ে সাহাব’। সামনে এসে দাঁড়াবেন পরিবেশনকারী। শ্বেতশুভ্র পোশাকের কাঁধে ততোধিক সাদা তোয়ালে। চিকেন আর মাটন—দু’ধরনের চাঁপই পাওয়া যায় এখানে। কোলস্টরেলের আতঙ্ক না থাকলে আপনি অর্ডার করুন মাটন চাঁপ। অনেকেই চাঁপের জুড়িদার হিসেবে বিরিয়ানি অথবা পরোটার কথা বলেন। প্রতিবেদকের পরামর্শ মানলে আপনার পছন্দ হোক নান। মানে নানরুটি। বাটার অথবা প্লেন। যে-কোনও একটা। একপাশটা ছিঁড়ে নিয়ে এক টুকরো ধোঁয়াওঠা চাঁপের সঙ্গে… মুখে পোরা মাত্র সমস্ত ইন্দ্রিয় জুড়ে রিনরিন করে ওঠা সুমনের গানের সেই লাইন—‘তোমার তুলনা আমি খুঁজি না কখনও, বহু ব্যবহার করা কোনও উপমায়…।’
রয়্যাল ঘোর কাটিয়ে এবার এগোনো যাক। চিৎপুর রোড ধরে সোজা এগিয়ে লালবাজার টপকে প্যারাডাইস সিনেমার সামান্য আগে ‘আলিয়া।’ মোগলাই খানার আরেক সাধনস্থল। রয়্যালের মতোই এদেরও সবকটি পদই অনবদ্য এদের নিজস্ব গবেষণাগারে। তবে এদের বিশেষত্ব এমন একটি পদে যা বোধহয় কলকাতার আর কোনও মোগল বিপণিতেই পাওয়া যায় না। ‘থাল্’ অর্থাৎ মুর্গ মুসল্লম। আস্ত জাফরান রঙা ভাজা একটা মুরগির পেটের মধ্যে সুগন্ধী মশলা আর ডিমের পুর। এককথায় লাজিজ্! জনশ্রুতি (সত্যিমিথ্যে যাচাই করবার সুযোগ নেই), দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সবিশেষ প্রিয় ছিল এই পদটি। ডিমের বদলে মুসল্লমের মধ্যে নাকি পুরে দেওয়া হত একটি মুরগিছানা। আলিয়ায় অবশ্য সেরকম কিছু হয় না। পাঠকদের অবগতির জন্য জানিয়ে রাখি অসামান্য এই পদটিতে খাদ্যদ্রব্যের পরিমাণটি কিন্তু বিপুল। বেশিরভাগ মোগলাই আইটেমের মতো বেশ খানিকটা গুরুপাকও বটে। নেহাৎই ভীম, খালি, গামা বা বকরাক্ষসের ভাইভাতিজা না হলে অথবা দলে নিদেনপক্ষে তিন-চারজন না থাকলে একা আস্ত একটা মুর্গ মুসল্লম ট্রাই না করাই ভাল। এরপর পাঠকের ইচ্ছে।
আলিয়া থেকে বেরিয়ে উলটো ফুটে প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট ধরে সেন্ট্রাল অ্যাভেনিউ। রাস্তা টপকে ঢুকে পরুন চাঁদনি চকে। চাঁদনি অঞ্চলের একদম পিছনদিকে সাবির। যাকে জিজ্ঞেস করবেন দেখিয়ে দেবে। এতক্ষণ ধরে মোগলাই রান্নার গুরুপাকের কথাই বলছিলাম। আসুন এবার একটি সুপাচ্য কুইজিনের সন্ধান দিই। সাবিরের রেজালা। গুরুপাক খানা খেতে খেতে একঘেয়েমিতে ভোগা এবং যারপরনাই বিরক্ত বাদশা জাহাঙ্গির তার খাস বাবুর্চিকে একবার একটি সহজপাচ্য পদ বানাতে আদেশ দেন। যার নিটফল রেজালা। সামান্য ঘি, একচিলতে জাফরান, বাকি মশলা বলতে গোলমরিচ, এলাচ, দারচিনি, কাঁচালঙ্কা, শুকনো লঙ্কা (অল্প), শা-মরিচ, চারমগজ, তালমাকনা, পোস্ত, পেঁয়াজ, রসুন… কোটা, বাটা এবং গোটা। ঘিয়ে সাদা রঙের দইয়ের সুপের মধ্যে ভাসমান গোটা একটা শুকনো লঙ্কা আর মাথা উঁচিয়ে ভেসে থাকা গোল পেঁয়াজ। মাঝখানে তুলতুলে সোনালি মাংসখণ্ড। একটা নলির টুকরো ভাগ্যক্রমে পেয়ে গেলে তো কথাই নেই। বাকিটা জাদুবাস্তব! দু’রকম রেজালাই পাওয়া যায় সাবিরে। চিকেন এবং মাটন। তবে খেলতে হলে মাটনের ময়দানেই খেলা ভাল। মাটনের পাশে চিকেন রেজালা, যেন হিমালয়ের পাশে অযোধ্যা পাহাড়। অধিক মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। তবে কিছুদিন আগে আমার দুই খাদ্যরসিক লেখকবন্ধু শ্রীসত্যবান মিত্র ও উল্লাস মল্লিক, সাবিরে খেতে গিয়ে এবং ফিরে এসে বিস্তর অভিযোগ জানিয়েছিলেন। খাবারের মান নাকি ভীষণভাবে পড়তির দিকে। বহুদিন হল যাওয়া হয়নি ওদিকটায়। তবু নিজের চোখে অথবা চেখে না দেখে চূড়ান্ত মন্তব্য করা উচিত নয় কখনওই। কিন্তু বন্ধুদ্বয়ের কথায় ন্যূনতম সত্যতা বা সারবত্তা থাকলেও ব্যাপারটা সত্যিই অত্যন্ত দুঃখজনক। একই সঙ্গে মর্মান্তিক।
চাঁদনি মার্কেট থেকে একটু দূরেই এলিট সিনেমার উলটোফুটে রাস্তার ওপর আমিনিয়া। আমিনিয়া মানে একটুকরো শৈশব। অনেক অনেক স্মৃতি। বাবা-মা’র সঙ্গে নিউমার্কেটে পুজোর বাজার সেরেই নেক্সট স্টেশন আমিনিয়া। পরতে পরতে খুলে যাওয়া লাচ্ছা পরটা আর ভুনা গোস্ত! দুধসাদা চিনেমাটির প্লেটে চারধারে বৃত্তাকারে ছড়িয়ে থাকা সোনালি লালচে তেলের সীমারেখা। মাঝখানে চাপধরা জমাট মাংস। সঙ্গে অনেকক্ষণ ধরে লেবুর রসে জারিয়ে রাখা শশা-পেঁয়াজ-গাজর আর টম্যাটোর সালাদ। ভাবামাত্র এই এত বছর বাদেও নাকে সেই স্বর্গীয় সুবাসের ঝাপটা। জিহ্বায় তরল বন্যা। অহো!
সেই চিৎপুর থেকে ধর্মতলা। বলি অনেক তো হল এদিকটায়। চলুন এবার এ চত্বরের মায়া কাটিয়ে এগনো যাক। পকেট বুঝে ধরে ফেলুন ট্যাক্সি অথবা কর্পোরেশনের উলটোদিকে গ্র্যান্ট স্ট্রিট থেকে শেয়ারের অটো। নেমে পড়ুন পার্কস্ট্রিট-মল্লিকবাজারের মোড়ে। দু’পা এগিয়েই নিউ পার্কস্ট্রিটের ওপর সিরাজ। রসিকজনের মতে অওধি বিরিয়ানির সেরা ঠিকানা। জাফরান, গোলাপজল, ক্যাওড়া, জায়ফল-জয়িত্রি আর ঘিয়ের পাঁচমিশেলি বেহস্তের খুশবু। জুঁইফুলের মতো সাদা আর কাঁচাসোনা রঙের আধ আঙুল লম্বা সুগন্ধি বাসমতী চাল। পেল্লায় এক টুকরো নরম মাংস। সঙ্গে বড় একটা জাফরান রঙা আলুর টুকরো আর সেদ্ধ গোটা ডিম। চামচের বদলে হাতই ভাল। মুখে পড়ামাত্র—‘ইরশাদ, ইরশাদ!’
ইদানীং পার্ক সার্কাস সেভেন পয়েন্টসের ওপর আরসালান বা ট্রামডিপোর গায়ে জিশান, সিরাজের জনপ্রিয়তায় কিছুটা ভাগ বসালেও সিরাজ সিরাজই। বনেদিয়ানার ঠাটবাট নিয়ে আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে মল্লিকবাজারের মোড়ে, ঠিক সেই কবিতার মতো। ‘তালগাছ একপায়ে দাঁড়িয়ে/সব গাছ ছাড়িয়ে…।’
তবে রসিকজনেরা যতই সিরাজকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিন না কেন, এই অধমের মতে অওধি অর্থাৎ লখনওভি বিরিয়ানির সেরা ঠিকানা রহমানিয়া। কোনও চ্যালেঞ্জে যাব না। সিরাজ, জিশান, আরসালানের মতো নামীদামি রেস্তোরাঁর দাপটে অনেকটাই ব্রাত্য হয়ে গেছে প্রাচীন এই খাদ্যপ্রতিষ্ঠানটি। এ জে সি বোস রোডের ওপর সিরাজের লাগোয়া এই হোটেল। ‘ওমুক হোটেল তমুক রেস্তোরাঁয় খেয়ে এলুম’—ব্র্যান্ড কনশাসনেসের এই হ্যাঙওভারটা যদি কাটিয়ে উঠতে পারেন, তা হলে সাহস করে একদিন ঢুকেই পড়ুন রহমানিয়ায়। দুধারের দেয়ালে টাঙানো সচিত্র অওধি বিরিয়ানির ইতিহাস। দেখতে দেখতে বিরিয়ানির সঙ্গে অর্ডার করুন এদের বিখ্যাত মাটন কোর্মা। মুখে দিলেই প্রতিবেদকের দাবির সারবত্তা প্রমাণিত হবে। আর হ্যাঁ, শেষপাতে চেয়ে নিন ফিরনি। বাঙালি পায়েসের মোগলাইতুতো বোন। গুঁড়ো আধভাঙা চাল আর জমাট ক্ষীরের তৈরি গোলাপ জলের সুগন্ধ ডেজার্ট। প্রথমবার কাশ্মীর দর্শনের অভিজ্ঞতায় বিস্ময়স্তব্ধ সম্রাট জাহাঙ্গিরের ভাষায় বলে উঠতেই হবে ‘আগর ফিরদওস ওয়া রহি জমিনস্ত্/হামিনস্তু হামিনস্তু হামিনস্ত্’। স্বর্গ যদি কোথাও থাকে তা এখানেই, তা এখানেই!
এ প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি একসময় মোগলাই খানার আরও দু’টি উমদা ঠিকানা ছিল কলকাতায়। বছর দুয়েক হল পুরনো ঠিকানা বদলে উলটোফুটে যেখানে স্থানান্তরিত হয়েছে সিরাজ, সত্তর দশকে ঠিক সেখানটাতেই ছিল সোসাইটি হোটেল। কার চাঁপ সেরা? সোসাইটি না রয়্যাল? এ নিয়ে বিপুল তর্ক ছিল স্পষ্টতই দু’ভাগে বিভক্ত মোগলাই খাদ্যপ্রেমীদের মধ্যে সে সময়। নব্বই দশকের মাঝামাঝি কোনও অজ্ঞাত কারণে (অনেকের মতে শরিকি বিবাদে) বন্ধ হয়ে যায় মোগলাই খানার বেতাজ বাদশা এই সরাইখানা।
দ্বিতীয়টি আমজাদিয়া। পুরনো কলকাতায় মোগলাই খাদ্যবিলাসের আরেক অবশ্য গন্তব্য তীর্থস্থল। শিয়ালদা ফ্লাইওভার থেকে নেমেই ঠিক মির্জাপুর অধুনা সূর্য সেন স্ট্রিটের মোড়ে। সিরাজ, সোসাইটির এ শহরে পা রাখার অনেক আগে থেকে কাচ্চি এবং পাক্কি, লখনউ এবং হায়দ্রাবাদি দু’ ধরনের বিরিয়ানির আঁতুরঘর। ছেলেবেলায় বেশ কয়েকবার গেছি বাবার সঙ্গে। এখনও মনে আছে দোকানের বাইরে এবং ভিতরের দেয়ালজোড়া সাদা চিনেমাটির টুকরোর ম্যুরালে মুগল শিল্পকলার কারিকুরি। বড় বড় থাম। সার সার টেবিল, মার্বেলের স্ল্যাব বসানো। ঘি-জাফরান-চর্বিদার খাসিগোস্তের গন্ধে ম ম করছে চারপাশ। টেবিলে বসলেই পরিবেশক উসমান চাচা, বাবার পরিচিত, সামনে এসে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করতেন, “ক্যা দাদা, কাচ্চি না পাক্কি?” অর্থাৎ আমজাদিয়ায় যখন এসেছে তখন কাচ্চি বা পাক্কি, বিরিয়ানি খাবেই। এতটাই প্রত্যয় প্রশ্নের মধ্যে। সমগ্র কলকাতাবাসীর দুর্ভাগ্য ষাটের দশকের প্রায় গোড়ার দিকেই বন্ধ হয়ে যায় আমজাদিয়া। আজকের প্রজন্ম চাখতেই পারল না কাচ্চি আর পাক্কি বিরিয়ানির স্বাদ। আফশোস! কিন্তু শুধুমাত্র অতীতকে আঁকড়ে ধরে বসে থাকলেই তো চলবে না। তাই চরৈবতি চরৈবতি। বলি কি গোমাংসে যদি আপত্তি না থাকে তা হলে আপনার জন্য এ শহরে অপেক্ষা করছে আরও কয়েকটি স্বর্গীয় রসনার ঠিকানা। তার মধ্যে অবশ্যই একনম্বরে আসবে নিজাম। আর তাদের এক্সক্লুসিভ অ্যান্ড প্রিমিয়াম ব্র্যান্ড— ‘বিফ রোল।’ কলকাতা কর্পোরেশন বিল্ডিংয়ের ঠিক উলটোদিকে প্রায় নিউমার্কেটের গা ঘেঁষে এই অত্যাশ্চর্য রোল বিপণি। বিফ রোল। কাগজে গোল করে মোড়া মুচমুচে লাচ্ছা পরোটা, খাঁটি বনস্পতিতে ভাজা, মধ্যে নরম শিককাবাবের টুকরো। সঙ্গে ঝিরঝিরে করে কাটা পিঁয়াজের রিং। অল্প কাঁচালঙ্কা কুচি, গোলমরিচের গুঁড়ো আর সামান্য ভিনিগার অথবা পাতিলেবুর যোগ্য সংগত। ব্যস, আজকাল চারদিকে গজিয়ে ওঠা রোল সেন্টারগুলোর মতো হাবিজাবি চিলি বা টম্যাটো সস—নৈব নৈব চ। কামড় বসানোমাত্র মুখ দিয়ে একটি কথাই বেরিয়ে আসতে বাধ্য— ‘সাধু, সাধু!’ বাকিটা বর্ণনা করা আমার পক্ষে সাধ্যের অতীত। এই বিফ রোলেরও কিন্তু একটা বিচিত্র ইতিহাস আছে। চল্লিশের দশক। ব্রিটিশ আমল। কলকাতা ময়দান কাঁপাচ্ছে দুর্ধর্ষ মহামেডান স্পোর্টিং। কালে খাঁ, বাচ্চি খাঁ, জুম্মা খাঁ, নুর মহম্মদ, হাফেজ রশিদ… বিপক্ষের ত্রাস এক সে এক কিংবদন্তি ফুটবলার সব। গোরাদের হারিয়ে পর পর পাঁচবার কলকাতা ফুটবল লিগ বিজয়ী প্রথম স্বদেশি টিম। আনন্দে আত্মহারা কাজী নজরুল আস্ত একটা কবিতাই লিখে ফেলছেন— ‘এ যে লীগ বিজয় নয় রে ভাই, দিগ্বিজয়’। দলের প্রতিটা খেলা দেখতে সমর্থকদের ভিড় উপচে পড়ত ময়দানে। খেলা ভাঙার পর তারাই দলে দলে এসে ভিড় জমাতেন নিজামে। বিখ্যাত পরোটা আর কাবাবের লোভে। স্বাভাবিকভাবেই দোকানে একসঙ্গে অত লোকের জায়গা করে দেওয়া সম্ভব হত না দোকান মালিকদের পক্ষে। কিন্তু খদ্দেরদের সকলেরই চাই কাবাব-পরোটা। ফলে সময়ও লাগত প্রচুর। সঙ্গে উপরি পাওনা অত্যুত্সাহী এবং উগ্র সমর্থকদের বিশৃঙ্খলা, হৈ হট্টগোল। অবস্থা সামাল দিতে এক অভিনব পন্থা আবিষ্কার করলেন কর্তৃপক্ষ। পরোটাকে গোল করে কাগজের মোড়কে মুড়ে ভেতরে পুরে দেওয়া কাবাব আর পেঁয়াজের টুকরো। ধরিয়ে দেওয়া কাস্টমারের হাতে হাতে। ব্যস! সমস্যার সমাধান এক মুহূর্তে। জন্ম নিল ভুবনবিখ্যাত বিফ রোল। সেই ট্র্যাডিশন আজও চলে আসছে সমানে। তবে বেশ কয়েক বছর হল মালিকানা বদল হয়েছে নিজামের। নতুন কর্তৃপক্ষের হাতে পড়ে কেমন যেন একটা কর্পোরেট কর্পোরেট চেহারা নিয়েছে প্রাচীন এই প্রতিষ্ঠান। ঝকঝকে এসি রেস্তোরাঁ। কাচের দরজায় টাঙানো ‘নো-বিফ’ প্ল্যাকার্ড। পুরনো কৌলীন্য আর বনেদিয়ানার গৌরব অনেকটাই অতীত এখন। বিফের চেয়ে মাটন আর চিকেনের বিভিন্ন পদকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে ইদানীং। তবুও পিছনদিকে একফালি জায়গায় পুরনো ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখা হচ্ছে এখনও। এসি নেই। পুরনো কাঠের চেয়ার টেবিল। তবু ওখানেই যান। দেখেচেখে নিন প্রায় বিলুপ্ত এই ঐতিহাসিক রোল-সভ্যতাকে। পুরোটা ‘নো বিফ’ জোনে চলে যাওয়ার আগেই।
নিজামের ঠিক গায়েই আরেক আদি বিফ রোলের হোটেল। বিহার। কৌলীন্য বা নামডাকে নিজামের তুলনায় খানিকটা ফিকে পড়ে গেলেও খাবারের মান স্বাদে-গন্ধে কিছুমাত্র কম নয়। জানিয়ে রাখা দরকার শিককাবাব ছাড়াও সুতি-কাবাব, শাম্মী-কাবাব, রেশমি-কাবাব সহ একাধিক প্রাণহরা কাবাবের ঠিকানা এই নিজাম এবং বিহার। তবে সবার সেরা ক্ষিরি-কাবাব। গরম পরোটার মধ্যে গুঁজে দেওয়া ছোট ছোট নরম কচকচে দুঘবাঁটের টুকরো। কাগজের মোড়কটা ছিঁড়ে স্রেফ একটা কামড়। বাকিটা? মাশাআল্লা!
এবার মিশন মধ্য কলকাতা। এন্টালি অঞ্চল। মৌলালি মোড় থেকে সি আই টি রোড ধরে বিরশুলহাট বা ফুলবাগান বাসস্টপ। পুরো ফুটপাত আর গলি জুড়ে বিশাল চামড়ার হাট। জুতো, চপ্পল, ব্যাগ, বেল্ট… আরও কত কিছু। উলটোফুটে মেহদিবাগানের গলি। সংখ্যালঘু মহল্লা। অপরিষ্কার, ঘিঞ্জি, ভিড়ভাট্টা, হই হট্টগোল… ব্যাপারগুলোকে মাথা থেকে ঘণ্টাখানেকের জন্য হাটিয়ে দিতে পারলে ঢুকে পরুন এলাকায়। যে কাউকে জিজ্ঞেস করুন কায়ুম বা জম্জম্ কোথায়। অত্যন্ত সহৃদয়, আন্তরিক মানুষজন সব। যে কেউ বাতলে দেবেন বিশদভাবে। গলি তস্য গলির মধ্যে প্রথমে কায়ুম। শ’দুয়েক মিটার বাদে ইসমাইল স্ট্রিটের গলিতে জম্জম্। বিফ নির্ভর মোগলাই খানার কলকাতা সেরা দুই হোটেল। এদের বিরিয়ানি থেকে শুরু করে চাঁপ, ভুনা, কোফতা, প্রতিটি আইটেমই এককথায় দুরন্ত। তবে র্যাঙ্কিং নাম্বার ওয়ান অবশ্যই জমজমের বিফ-স্টু। স্টু বলতে আমরা সাধারণত ট্যালটেলে ঘোলাটে সাদা রঙের একটা কিছু বুঝি। এদের বিফ-স্টু কিন্তু মোটেই সেরকম নয়। লালচে সুগন্ধী মশলাদার ঘন ঝোল। সঙ্গে নান, তন্দুরি বা রুমালি রুটির যে-কোনও একটা। ঝোলে ডুবিয়ে… জাস্ট কোনও কথা হবে না কাকা।
এছাড়াও কায়ুম বা জমজমের আরেকটা পদের কথা উল্লেখ না করলে এদের রন্ধনশৈলীর প্রতি অবিচার হবে বোধহয়। আরবি হালিম। পাঁচমিশেলি ডাল, ঘি, কাবাবচিনি, এক নম্বর পাঞ্জাবি গম, দালিয়া, অজস্র ধরনের এক্সক্লুসিভ মশলার মিশ্রণে তৈরি হয়ে এই অমৃত পদ। পাওয়া যায় একমাত্র রমজানের মাসে। সারাদিনের উপবাসব্রত বা রোজা ভাঙার পর ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষের ডেলিকেসি। ক্লান্তি অপহরণকারীও বটে। চিনেমাটির পিরিচভর্তি, গরম গরম, ওপরে ভাসমান লালচে ভাজা পিঁয়াজ, ধনেপাতার কুচি আর রোগনের ছিটে। তবে অতুলনীয় এই খাদ্যবস্তুটি একমাত্র রমজানের মাসেই পাওয়া যায়। তাও আবার সন্ধেবেলায়। চাহিদা প্রচুর। তাই ইচ্ছে থাকলে বিকেল বিকেল পৌঁছে যান মেহদিবাগানে। দেরি করলে চেখে দেখার সুযোগ ফসকে যেতে পারে। এখানে জানিয়ে রাখি আরসালান, সিরাজ, রয়্যাল, জিসান সহ কলকাতার অন্যান্য নামী মোগলাই রেস্তোরাঁগুলোও বছরের এ সময়টা মাটন হালিম বানিয়ে থাকে। সেসবও তাদের নিজস্ব স্বকীয়তায় অনবদ্য। তবে ওই যে বললাম মাংস হিসেবে হালিমের সেরা উপকরণ বিফ। তবে একান্তই আপত্তি থাকলে মাটনে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে পারেন। কী আর করা যাবে।
বছর চল্লিশ আগেকার কথা। কলকাতা শহরে ধুন্ধুমার শীত পড়ত তখন। গ্রিন হাউজ এফেক্ট বা এল-নিনোর নামও শোনেনি কেউ। মনে আছে এইরকম এক শীতের ভোরবেলায় সূর্য ওঠার অনেক আগে অভিন্নহৃদয় বন্ধু হায়দর আলি নস্কর ওরফে কোচনের আধভাঙা স্কুটারের পেছনে চেপে ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে পৌঁছে গেছিলাম জাকারিয়া স্ট্রিট। নাখোদা মসজিদের পাশের গলিতে। সার সার হোটেল। আধো কুয়াশামাখা অন্ধকার। প্রতিটা হোটেলের সামনে লাইন দিয়ে রাখা ছোট বড় স্টেইনলেস স্টিল আর অ্যালুমিনিয়ামের ক্যান। তীব্র কৌতূহল হল। “ব্যাপারটা কী?” প্রশ্ন করলাম কোচনকে। “সে কথা পরে হবে। আগে এগোই চল।” বলেই হনহন করে হাঁটা লাগাল কোচন। খানিকটা এগিয়েই একটা হোটেলের সামনে পুরনো সাইনবোর্ডে লেখা—‘সুফিয়া’। “এলাকার মধ্যে এটাই বেস্ট। চল সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ি। এরপর ভিড় বেড়ে যাবে।” কোচনের কথাই সত্যি। ইতিমধ্যেই আলোয়ান গায়ে জড়িয়ে লোকজন ভিড় জমাতে শুরু করেছে দোকানের সামনে। ক্যানের মালিকরাও এসে দাঁড়িয়ে পড়তে শুরু করেছেন লাইনে। ভোরের আজান পড়ামাত্র ভেতর থেকে ঘড়ঘড় শব্দে খুলে গেল রোলার গেটটা। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সবাই মুহূর্তের মধ্যে চোঁ চাঁ টেনে দৌড় লাগাল দোকানের মধ্যে। হাতে কোচনের হ্যাঁচকা টান। পড়ি কি মরি করে ঢুকে হাঁপাতে হাঁপাতে বসে পড়া গেল একটা কাঠের বেঞ্চিতে। “এক নাহারি, এক পায়া, আট ডালপুরি।” বেয়ারা এসে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এক নিশ্বাসে অর্ডার করল কোচন। অর্ডার নিয়ে চলে গেল বেয়ারা। আমি মুখ ঘোরালাম দরজার দিকে। ততক্ষণে গেটের সামনে ঢিমে আঁচের উনুনে এনে বসানো হয়েছে পেল্লায় সাইজের দুটো হাঁড়ি। দু’-দুজন কর্মচারী গোল হাতায় করে লাইনে খদ্দেরদের ক্যানে ঢেলে দিচ্ছে তরল মতো একটা কিছু। ওপরে পাতিলেবু চিপে ছড়িয়ে দিচ্ছে কাঁচালঙ্কা আর ধনেপাতার কুচি। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে আমাদের টেবিলেও বড় বড় দুটো পিরিচে সাজিয়ে এসে পড়ল। ওই একই তরল খাদ্যবস্তু। টকটকে লালচে সুপের মতো চেহারা। ওপরে ভাসমান ধনেপাতা আর কাঁচালঙ্কার কুচি। পাশে একটুকরো পাতিলেবু। আরেকটা প্লেটে ফুলকো ফুলকো আটখানা ডালপুরি। পাতিলেবু চিপে, ধোঁয়াওঠা ঝোলে চুবিয়ে একটুকরো দাঁতে কেটেই বাকরহিত হয়ে গেছিলাম কিছুক্ষণ। সে কি সুতার। জাস্ট হেভেনলি! আর স্বাদ? নোনতা স্বাদের কোনও খাবারকে কি মধুর বলা চলে? কিন্তু বিশ্বাস করুন, এই এতগুলো বছর বাদেও ‘মধুর’, এই শব্দটা ছাড়া আর কোনও উপমা মাথায় আসছে না। কোচনের কাছেই জেনেছিলাম দুটো পিরিচে একটার নাম নাহারি, অন্যটা পায়া। সারারাত ঢিমে আঁচে ফুটিয়ে বানানো হয় এই বিস্ময় পদযুগল। রান্নার পদ্ধতি আর মশলাপাতি প্রায় একইরকম। ফারাকের মধ্যে পায়ার উপকরণ গোরু অথবা খাসির ঠ্যাং আর নাহারিতে লাগে বাত্তি (পেটের দিক) অথবা করেলির (হ্যামস্ট্রিং) নরম মাংস। ডালপুরির স্বাদও একেবারে অন্যরকম। সাধারণত ময়রার দোকানে আমরা যে ডালপুরি খেয়ে থাকি তার সঙ্গে মেলে না একদম। ভেতরে ডালের বদলে ছাতুর পুরের সঙ্গে মেশানো পিঁয়াজ, রসুন, ধনেপাতা আর কাঁচালঙ্কার ছোট ছোট কুচি। ঘি বা ডালডার বদলে ব্যবহার করা হয় সাদা তেল। ফুলকো, কুড়মুড়ে, হাতেগরম। খেতে অন্যরকম কিন্তু স্বাদে অনবদ্য। তবে মোগলাই খানার বারোমাস্যায় হালিমের মতো পায়াও এ শহরে ক্ষণিকের অতিথি। অনেকটা সাইবেরিয়ার পরিযায়ী হাঁসের মতো। শীতকালে মাত্র মাসতিনেকের জন্য দেখা দিয়েই উধাও শহর থেকে। তা হলে আর কী? একপেট খিদে আর এক জিভ জল নিয়ে ‘বদর, বদর’ বলে বেরিয়ে পড়ুন একদিন ভোরে পরিযায়ী পায়া সন্ধানে।
* আসলে মোগলাই কলকাতার বদলে এই প্রতিবেদনের শিরোনাম হওয়া উচিত ছিল ‘অওধ-ই-কলকাতা’ অথবা ‘লখনওভি কলকাতা’। কারণ কলকাতায় নবাবি খানার জনপ্রিয়তার পিছনে মোগল সভ্যতার অবদান অতি সামান্য। কিন্তু মোগলাই শব্দটার বিপুল পরিচিতির কথা মাথায় রেখেই প্রতিবেদনের উপরোক্ত শিরোনামটিই বহাল রাখলাম।