১০. মেহেম অ্যাট দ্য মিনিস্ট্রি
কয়েকঘণ্টা ঘুমানোর পর মি. উইসলি ছেলেমেয়েদের ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিলেন। মন্ত্রের দ্বারা টেন্ট থেকে সব জিনিসপত্র গুছিয়ে নিলেন। কিডিচ খেলা দেখা শেষ হয়েছে, এবার বাড়ি ফেরার পালা। সময় নষ্ট না করে যাত্রা শুরু করলেন। পথে মি. রবার্টসের সঙ্গে দেখা হল। মি. রবার্টের মুখ–চোখ দেখে মনে হয় তখনও তার সম্মোহনের ঘোর কাটেনি। মি. রবার্ট বলল–মেরী ক্রিস্টমাস… কেমন কথাগুলো জড়ান জড়ান।
মি. উইসলি বললেন–ঠিক হতে আরও কিছু সময় নেবে। মন্ত্রবলে একবার স্মৃতি চলে গেলে ঠিক হতে বেশ সময় লাগে। স্মৃতি মডিফাইড করলে… চালচলন সবকিছু উল্টোপাল্টা হয়ে যায়। ঠিক হয়ে যায় পরে অবশ্য। পোর্ট–কীর স্থানে খুব ভিড়–সকলেই ক্যাম্পসাইট ছেড়ে বাড়ি ফেরার জন্য ব্যস্ত। আসতেও ব্যস্ততা ফিরতেও ব্যস্ততা। বেসিলের সঙ্গে কথাবার্তা বলার পর উইসলি একটি পুরনো গাড়ির টায়ার পেয়ে গেলেন। খুব একটা ভাল না হলেও মন্দ নয়। তখন বেশ বেলা হয়ে গেছে, সূর্য মধ্য গগনে। ওরা ওট্টারি সেন্ট ক্যাচপোল ধরে দ্য বাররোর দিকে চলল। তখন সবে ভোর। ওরা এতো ক্লান্ত যে কেউ কারো সাথে কথা বললো না। ওদের মাথায় চিন্তা কখন বাড়ি ফিরে আরাম করে প্রাতঃরাশ করবে। গলির মুখে সামান্য বাঁক নিলেই দ্যা বাররো দেখতে পেল। স্যাঁতস্যাঁতে রাস্তাটায় ওদের হাঁটার শব্দের প্রতিধ্বনি হতে লাগল।
–ওহ… ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, অজস্র ধন্যবাদ আমরা এসে গেছি!
মিসেস উইসলি ওদের জন্য সদর দরজায় অধীর আগ্রহে দাঁড়িয়েছিলেন। ওদের দেখে খুশিতে উপচে পড়ে একের পর এককে বুকে টেনে নিতে লাগলেন। তখনও তিনি রাতের পোশাক ছাড়েননি। পায়ে বেডরুম স্লিপার। মুখ তার বিমর্ষ, চিন্তার ছাপ… হাতে এক কপি ডেইলি প্রফেট।… বললেন–আর্থার আমি তোমাদের জন্য সত্যি ভীষণ ভাবছিলাম… ভীষণ চিন্তায় ছিলাম।
মি. উইসলিকে জড়িয়ে ধরার সময় হাত থেকে ডেইলি প্রফেট মাটিতে পড়ে গেল। হ্যারি হেঁট হয়ে কাগজটা তুলতে গিয়ে প্রথম পৃষ্ঠায় চোখ পড়ল শিরোনাম সিনস অব টেরর অ্যাট দ্য কিডি ওয়ার্ল্ডকাপ, সম্পূর্ণ খবর… একটা গাছের ওপর ডার্ক মার্কের ফটোগ্রাফ।
মি. উইসলি হাঁফ ছেড়ে মিসেস উইসলিকে বললেন–তোমাদের কোনও বিপদ–আপদ হয়নি তো?… ওঃ তোমরা সব বেঁচে ফিরে এসেছ। রাত জাগরণে ওদের সবারই চোখ লাল।
ফ্রেড আর জর্জকে যখন জোড়ে কাছে টেনে আনলেন তখন ওদের শুধু মাথা ঠোকাঠুকি হল।
–মাম, ব্যাথা দিচ্ছ কেন?
–তোমাদের যেতে নিষেধ করা উচিত ছিল আমার। মি. উইসলির দিকে তাকিয়ে আবার বললেন, কি হতো যদি ইউ–নো–হুঁ তোমাকে পেয়ে যেত। এরপর ছেলেদের দিকে তাকিয়ে বললেন, আরেকটি কথা, ফ্রেড ও জর্জ তোমরা দুজনেই পরীক্ষায় বেশি পেচা পাওনি… তাতে আমার মনে কত আঘাত লেগেছে জান? ওদিকে ইউ–নে–হুঁ যদি তোমাদের ক্ষতি করত?
–মল্লি ওসব বলে কী লাভ? যা হবার তাতো হবেই। ওকে… আমরা সবাই ভাল আছি।… যেতে যেতে খুব চাপাগলায় বললেন, বিল কাগজটা আমাকে দিও, কি লিখেছে দেখি।
হৈ হৈ করতে করতে সকলেই ব্রেকফাস্ট খেতে কিচেনে এল। হারমিওন মিসেস উইসলির জন্য এককাপ কড়া কফি বানিয়ে দিল। মি. উইসলি খাচ্ছেন অগডেনের ওল্ড ফায়ার হুইস্কি। বিল কাগজটা মি. উইসলির হাতে দিল। উইসলি কাগজটায় চোখ বুলোতে লাগলেন–পার্সি পেছন থেকে পড়তে লাগল।
-এমন হবে জানতাম। মি. উইসলি বললেন। পড়লেন মন্ত্রণালয়ের গাফিলচতি, দোষী ধরা পড়েনি–নিরাপত্তার অভাব–কালো জাদুকররা অবাধে বিচরণ করছে… জাতীয় মর্যাদাহানি… কে লিখেছে? ও হ্যাঁ অবশ্যই, রিটা স্কীটার।
–নিশ্চয়ই খবরটা সে মন্ত্রণালয় থেকে পেয়েছে, পত্রিকায় খবরটা পড়েই মি. উইসলি বললেন।
পার্সি দারুণ রেগে বলল–ওই মেয়েটির দেখছি মিনিস্ট্রিতে অবাধগতি। গত সপ্তাহে ও লিখেছে, কলড্রনের থিকনেস নিয়ে অযথা আমরা তর্ক–বিতর্ক করে সময় নষ্ট করেছি… যখন আমরা আমাদের ভ্যামপায়ারের ওপর স্ট্যাম্প মারতে পারি। যেন প্যারা বার গাইডলাইনসে লেখা নেই কি করতে হবে, না করতে হবে।
বিল হাই তুলতে তুলতে বলল, পার্সি একটা উপকার করতে পারবে? চুপ করে থাক… বক বক করবে না।
উইসলির চোখ দুটো হুইস্কির গ্লাসের ভেতর দিয়ে বড় বড় দেখাল… ডেইলি প্রফেটের প্রথম পৃষ্ঠার শেষের দিকে এসে বললেন–আমার প্রসঙ্গ রয়েছে দেখছি।
মিসেস উইসলির সামনে দুটো গ্লাস–হুইস্কি আর চা।
উত্তেজনার বসে দুটোই এক সঙ্গে চুমুক দিতেই গলায় আটকে গেল। কাশতে কাশতে উত্তেজিত হয়ে বললেন–দেখি দেখি।… কোথায় আমার চোখে পড়েনি।
মি. উইসলি পড়তে লাগলেন
জাদুকর ও ডাইনিরা–যারা ভীত–সন্ত্রস্ত হয়ে অরণ্যে ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে ছিলেন এবং অপেক্ষা করছিলেন মন্ত্রণালয় থেকে সঠিক খবেরর আশায়। তারা অনিবার্যভাবে হতাশ হয়েছেন। ডার্ক মার্কের আবির্ভাবের পর একজন মন্ত্রণালয়ের আধিকারিক সেখানে উপস্থিত ছিলেন–বলেছেন, কেউ আহত হয়নি; কিন্তু তার চেয়ে বেশি কিছু খবর দিতে রাজি হননি। তবে তার বক্তব্যের সত্যতা সম্পর্কে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। গুজব ছড়িয়েছে যে কিছু মৃতদেহ অরণ্য থেকে সরানো হয়েছে ঘটনার এক ঘণ্টা পর–তা তদন্ত করা অত্যন্ত আবশ্যক
কাগজটায় চোখ বুলানো হলে মি. উইসলি বললেন–সত্যই তো–কাগজটা পেছন ফিরে পার্সির হাতে দিলেন। যা দেখেছি তেমন তো কেউ আঘাত পায়নি। কোনো মৃতদেহও দেখিনি। এখন দেখব রোজই ঘোড়ার মুখের খবর বেরুচ্ছে।… অরণ্য থেকে অনেক মৃতদেহ সরান হয়েছে।
তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললেন–মল্লি আমাকে আজ একটু তাড়াতাড়ি অফিসে যেতে হবে… দেখি আমার জন্য ওখানে কি অপেক্ষা করছে।
পার্সি বলল–ড্যাড আমিও তোমার সঙ্গে যাব। মি. কাউচের কাজের জন্য হয়ত আমাকে দরকার হতে পারে। কলড্রন সংক্রান্ত রিপোর্ট ওর হাতে দিতে চাই।
ও কিচেন থেকে ব্যস্ত সমস্ত হয়ে বের হলো।
মিসেস উইসলি স্বভাবতই একটু উদ্বিগ্ন। বললেন–তোমার তো আজ ছুটি… অফিসে যাবার দরকার নেই। তাছাড়া ডার্ক মার্কের ব্যাপারে তুমি কি বলবে? তোমাকে ছাড়াও ওদের কাজ চলবে।
মি. উইসলি বললেন–না মল্লি আমাকে একবার অফিসে যেতেই হবে।… আমার রোবটা পড়েই চলে যাচ্ছি।
হ্যারির মাথায় হেডউইগের চিন্তা–সিরিয়সের জবাব। ও বলল–মিসেস উইসলি হেডউইগে আমার কোনও চিঠি এনেছে?
–নাতো।… কোনও চিঠিপত্র তো আসেনি।
রন, হারমিওন কৌতূহলী হয়ে হ্যারির দিকে তাকাল।
ওদের অর্থপূর্ণ দৃষ্টি হ্যারির মনঃপুত হল না। বিষয় পরিবর্তন করার ছুতোয় বলল–তোমার ঘরে জিনিসপত্র রেখে আসি রন?
রন বলল–অবশ্যই। হারমিওন তুমি?
–হ্যাঁ, আমাকেও তো রাখতে হবে। চল। ওরা তিনজনই কিচেন ছেড়ে নিজেদের ঘরে চলে গেল।
দরজাটা বন্ধ করতে করতে রন বলল–ব্যাপার কী হ্যারি? সিরিয়সকে কী চিঠি দিয়েছ?
হ্যারি খাটে বসে বলল-একটা কথা তোমাকে বলিনি রন। গত শনিবার মাঝরাতে বিশ্রি একটা স্বপ্ন দেখে আমার ঘুম ভেঙে গেলে মাথায় আর কপালের কাটা দাগে আবার ব্যথাও অসম্ভব যন্ত্রণা দেখা দেয়।
প্রিভেট ড্রাইভে বসে সেই দুঃস্বপ্ন দেখার কথা বলার পর ওদের প্রতিক্রিয়া কেমন হতে পারে এমন একটা ছবি ওর মনে ছিল… দেখল সেইরকমই। হারমিওন স্বপ্নের কথা শোনার পর ওকে এন্তার বই পড়ার কথা শুধু নয়–আলবাস ডাম্বলডোর থেকে ম্যাডাম পমফ্রের রেফারেন্স বই–রাত্রির বিভীষিকা স্বপ্ন পড়তে উপদেশ করল।
রন হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে রইল। বলল–ও কী সেই স্বপ্নে এসেছিল? ইউ নো হু এসেছিল কি? গতবার যখন তোমার কাটাদাগটা চুলকোয়, অসম্ভব ব্যথা অনুভব কর, তখন তো সে হোগার্টে ছিলো? মানে ইউ–নো–হু।
–না প্রিভেট ড্রাইভে সে ছিলো না। কিন্তু আমি তাকে স্বপ্নে দেখেছি; হ্যারি বলল–পিটার ওয়ার্ম টেল আরও অনেক কিছু–সব আমার এখন মনে নেই। ওরা একজনকে হত্যার পরিকল্পনা করছিল। আমাকেও…। বলতে গিয়ে থেমে গেল।
রন বলল–ওর নাম উচ্চারণ করো না।… স্বপ্ন… স্বপ্ন মাত্র…
–মনে আছে প্রফেসর ট্রেলানে কি বলেছিলেন?… গত বছরের শেষে।
হারমিওন বলল–হ্যারি প্লিজ তুমি ওইসব বৃদ্ধ থোকাবাজদের কথা বিশ্বাস করবে না।
হ্যারি বলল–তুমি যাই বল, সেই সময় তুমি ওখানে ছিলে না, তার কথা শোননি। উনি বলেছিলেন ডার্কলর্ড ফিরে আসবে। ফিরে আসবে আগের চেয়ে শুধু অনেক শক্তিশালী হয়ে নয়, আরও ভয়ানক রূপে। ওসব পুরনো চেলা চামুণ্ডাদের আবার হাতের মুঠোতে আনবে।… ডেথ ইটারস। এরপর ওদের কথা বার্তা কিছুক্ষণ বিরতি। রন গেল বিছানার চাদর ঠিক করতে। বিরতি ভেঙে হারমিওন হ্যারিকে জিজ্ঞেস করলো–তুমি হঠাৎ হেড উইগের কথা তুললে কেন? তুমি কী চিঠির আশা করছ?
–আমি সিরিয়সকে আমার সেই স্বপ্নের কথা লিখেছি। আমি জবাবের প্রতীক্ষা করছি।… আমি জানি সিরিয়স আমাকে সাহায্য করবেন। তবে ইদানীং কোথায় আছেন জানি না। আফ্রিকাতে থাকতে পারেন।
***
পরের পুরো সপ্তাহতেই মি. উইসলি আর পার্সি বেশির ভাগ সময় বাসায় থাকলেন। দুজনে খুব ভোরে ওদের ঘুম ভাঙার আগে বেরিয়ে যান, ফেরেন গভীর রাতে।
যেদিন ওরা হোগার্টে ফিরে যাবে তার আগেরদিন ছিল রোববার। বন্ধু প্রতিবেশীরা হাউলার পাঠাচ্ছে হাসাহাসি, গোলমাল, অকেজো পটকা…। সেটা না খুললে সশব্দে ফেটে যায়।
–বুঝতে পারি না হাউলার পাঠিয়ে ওরা কি মজা পায়। ও ওয়াল থাউসেন্ড ম্যাজিক্যাল হার্বস অ্যান্ড ফাঙ্গি বইটি বন্ধ করতে করতে জিন্নি বললো। এই শোন, পার্সি বললো, ওয়ার্ল্ডকাপে মুন্ডুনগাস ফ্লেচার ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে তার বার কামরার টেন্ট নষ্ট করার জন্য… তবে লোকটা দারুণ কুঁড়ে… হয়ত কাজ ফেলে তখন ঘুমাচ্ছিল।
মিসেস উইসলির গ্র্যান্ডফাদারের দেওয়াল ঘড়ি দারুণ পছন্দ, হ্যারিরও দারুণ পছন্দ ঘড়িটি। তবে কেউ যদি সময় জানতে চায় তাহলে এ ঘড়ি দিয়ে কোন কাজ হবে না। তবে ঘড়িটি খোঁজ–খবর দিতে পারে। ঘড়িতে আছে নয়টা সোনার হাত। প্রতিটি হাতে উইসলি পরিবারের নাম খোদাই করা। ঘড়ির সারা গায়ে কোন সংখ্যা নেই। কি সদস্যরা কোথায় আছে সেই হাত দেখলে জানা যায়। বাড়িতে স্কুলে কাজে… পাত্তা নেই, হাসপাতাল, জেলখানা…।
আট নম্বর হাত জানাচ্ছে ওরা বাড়িতে; কিন্তু উইসলি কাজে মিসেস উইসলি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
মিসেস উইসলি বললেন–ডার্ক লর্ড ইউ–নো–হুঁ আসার খবর পাওর পর থেকেই তোমার বাবার অফিসে কাজ বেড়ে গেছে। কাজ–কাজ আর কাজ। তাড়াতাড়ি না এলে তার রাতের খাবার ঠাণ্ডা হয়ে যাবে।
পার্সি বলল–ড্যাডি মনে করেন ওয়ার্ল্ডকাপে একটা ভুল করেছেন। সত্যি যদি তাই হয় তাহলে ওই ভুল কাজটি মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া করা ঠিক হয়নি। আসলে উনি তো সেই বিভাগের হেড।
–ওই বাজে মহিলা যা লিখেছে তার জন্য তুমি তোমার বাবাকে দায়ি করছ? মিসেস উইসলি রেগে গিয়ে বললেন।
–আবার ওদিকে বাবা কিছু না বললেও রিটা লিখত–মিনিস্ট্রি থেকে কেউ কিছু না বলাটা ঘোরতর আপত্তিজনক!–পার্সি তখন রনের সঙ্গে দাবা খেলছিল। খেলছে। ওই রিটা স্কিটার দুনিয়ার কাউকে ভাল বলে না। মনে আছে ও সমস্ত এিংগটস (জাদুকরদের ব্যাংক) কার্স ব্রেকারদের ইন্টারভিউ নিয়েছিল? আর আমাকে লম্বা চুলওয়ালা পিলক (মূর্খ–মূল্যহীন) লিখেছিল?
–ও, অনেক সময় পার হয়ে গেল। আমি একটু যাচ্ছি …
–না মা। একটু থাক।
বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটা জানালার কাঁচে ফটফট শব্দ করে গড়িয়ে পড়ছে। হারমিওন মন দিয়ে স্ট্যান্ডার্ড বুক অফ স্পেলস গ্রেড ফোর পড়ছে। মিসেস উইসলি হারমিওন, হ্যারি আর রনের জন্য ডায়গন অ্যালেতে (জাদুকরদের বিশেষ বাজার) ফিরে এসেছেন। চার্লি ফায়ার প্রুফ বেলা ক্লাভা নিয়ে ব্যস্ত। হ্যারি ওর ফায়ার বোল্ট পালিশ করছে। ওর তেরতম জন্মদিনে হারমিওন ওকে ব্রুমস্টিক সার্ভিসিং কিট দিয়েছে। পায়ের কাছে ওটা পড়ে আছে। ফ্রেড আর জর্জ ওদের ভবিষ্যতের কর্মপন্থা নিয়ে কথাবার্তা বলছে।
মিসেস উইসলি ওদের ফিসফিস করে কথা বলতে দেখে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন–তোমরা কি করছ?
–হোমওয়ার্ক, ফ্রেড বলল।
মিসেস উইসলি বললেন–হোমওয়ার্ক? ছুটিতে হোমওয়ার্ক! আমাকে তোমরা বোকা পেয়েছ?
–হোস্টেলে কিছুটা বাকি ছিল, জর্জ বলল।
–তোমরা নতুন কিছু করছ নাকি? তোমরা উইসলির উইজার্ড হুইজেস নতুন করে লিখছ?
–মাম্ আগামীকাল যদি হোগার্টস এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় জর্জ আর আমি দুজনেই মারা যাই… তখন তুমি আমাদের জন্য দুঃখ পাবে এবং ভাববে তুমি সবসময়ই অযথা আমাদের দোষ দিয়েছ।
সকলেই ওর কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠল। মিসেস উইসলিও বাদ গেলেন না সেই হাসির স্রোতে ভেসে যেতে।
কিছুক্ষণ পরে মি, উইসলি ফিরলেন। বাইরে অসম্ভব ঠাণ্ডা, বাড়ির ভেতরটা উষ্ণ। একটা হাতলওয়ালা চেয়ারে বসে সামনের টেবিলে রাখা একটা ছোট ফুলকপি লোফালুফি করতে লাগলেন।–রিটা স্কিটার সারাদিন মিনিস্ট্রিতে খবর সংগ্রহের আশায় জুতোর সুকতলা খুলে ফেলেছে। এখন খবর পেয়েছে বেচারি বার্থা হারিয়ে গেছে। তো কাল সকালের ডেইলি ফেটের ওইটাই শিরোনাম হবে। আমি বেগম্যানকে বলেছি, সব চেয়ে ভাল হবে যদি তুমি ওকে একটা ঘরে তালাবন্ধ করে রাখ!
পার্সি বলল, ক্রাউচও এই কথা সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে বলে আসছেন।
উইসলি বললেন–ক্রাউচের ভাগ্য ভাল রিটা উইঙ্কীর ব্যাপারে কিছু পায়নি। ও যদি জানত হ্যারির জাদুদণ্ড হাতে ও ধরা পড়েছে; ওটা দিয়ে ডার্ক মার্ক জাদু করেছে, তাহলে সাতদিন কাগজে ওই প্রসঙ্গের কচকচানি চলত।
পার্সি বলল, আমরা একটা ব্যাপারে সবাই একমত যে এলফ ভুল করেও জাদু করেনি।
হারমিওন বলল–ডেইলি প্রফেট তো জানে না, ক্রাউচ এলফদের সঙ্গে কত খারাপ ব্যবার করেছে।
–শোন হারমিওন, পার্সি বলল–ক্রাউচের মতো একজন মিনিস্ট্রির বড় কর্তা তার কর্মচারীর কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য নয়…।
–তার মানে… উইঙ্কী ওর ক্রীতদাসী বলে? যে ওকে ভাল খেতে–পরতে দেয় … পারিশ্রমিকও দেয় না।
মিসেস উইসলি ওদের তর্ক–বিতর্ক থামিয়ে সকলকে বললেন–তোমাদের ছুটি শেষ… হোগার্ট ফেরার পালা… স্কুলের জিনিসপত্র, জামা–কাপড়, ড্রেস সব গুছিয়ে নাও ট্রাঙ্কে।
… কিছু সময় পরে রন নিচে এসে মাকে বলল–মা তুমি জিন্নির ড্রেস আমাকে দিয়েছ কেন?… মিসেস উইসলিকে ড্রেসটা দেখাল।
–কে বলল?
–স্কুলের লিস্টে ওটা কিনতে বলেছে; দেখনি? আশ্চর্য!
–আমার সঙ্গে ঠাট্টা করছ মা! রন বলল।… এটা তো মেয়েদের…।
–সকলেই পরে তুমিও পরবে রন।
–আমি উদম হয়ে থাকব… তবু এটা পরবো না।
–বাচ্চা ছেলের মতো দুষ্টুমি করবে না, হ্যারিও পরবে।
হ্যারির ড্রেস দেখে রন বলল–আমারটা ওর মতো নয় কেন?
–তোমারটা সেকেন্ডহ্যান্ড তাই। সেকেন্ডহ্যান্ড যেমন পাওয়া যায়। মিসেস উইসলি একটু অখুশি হয়ে বললেন।
কথাটা শুনে হ্যারি বিমর্ষ হলো। ওর মা-বাবার রেখে যাওয়া সব সোনা–দানা গ্রিংগটম ভোল্টে আছে। সেখান থেকে মারি ওদের কিছু দিতে চায়, কিন্তু ও জানে ওরা তা নেবে না।
রন একগুঁয়ের মতো বলল–আমি এটা পারবো না।
–খুব ভাল। তাহলে নগ্ন হয়ে যেও। হ্যারি সেই সময় তুমি কিন্তু ওর একটা ছবি তুলে রাখবে। হাসব কি কাঁদব জানি না।
দরজাটা শব্দ করে বন্ধ করে দিয়ে মিসেস উইসলি চলে গেলেন। ঘরে ঝটপট ডানার শব্দ শোনা গেল।
রন দেখল পিগউইজেয়ন বিরাট একটা পেচার খাবার ঠোঁটে চেপে বসে রয়েছে। এতবড় সে না পারছে গিলতে, না ওগড়াতে।
রন রেগেমেগে ওর কাছে গিয়ে ঠোঁট থেকে খাবারটা টেনে মাটিতে ফেলে দিল।