১০. ভারতের বাইজি-সংস্কৃতি ও গণিকাবৃত্তি
বাবু কালচারের কথা আলোচনা করতে গিয়ে বাইজি প্রসঙ্গটা এসেছিল। তাই বাইজি নিয়ে একটু বিস্তারিত আলোচনা করতে মন চাইছে। আমাদের সমাজে গণিকাদের মতো বাঈজিরাও ঘৃণ্য, সমাজচ্যুত, প্রান্তিক। বাইজি আর গণিকা যেন সমার্থক। বাইজিদের নাচনেওয়ালি বা নর্তকীও বলা হয়। বাইজি’ হিন্দি শব্দ বাই-এর সঙ্গে ‘জি’ যুক্ত হয়ে বাইজি’ কথাটি প্রচলিত হয়েছে। অতীতে ভারতের উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র ও গুজরাট রাজ্যে বাই’ শব্দ দ্বারা ধ্রুপদী নৃত্য-গীতে পারদর্শী সম্ভ্রান্ত মহিলাদের বোঝানো হত। খুব ছোটো থাকতেই তাঁরা ওস্তাদদের কাছে তালিম নিয়ে নৃত্যগীত শিখতেন। শিক্ষা শেষে শাস্ত্রীয় নৃত্যগীতকে পেশা হিসাবে নিলে লোকে তাদের বাই’ শব্দটির সম্মানসূচক ‘জি’ শব্দটি জুড়ে দিত, তখন তাদের নামে শেষে ‘বাইজি’ শব্দটি শোভা পেত। বাইজি অর্থ পেশাদার নর্তকী ও গায়িকা। বাইজিদের নানা নামে পরিচয় আছে, যেমন–খেমটাওয়ালি, জান, তওয়াইফ, নাচনি, নাচওয়ালি, বাইওয়ালি ইত্যাদি। বইজিরা নিজগৃহে আসর বসিয়ে অথবা বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে, মহফিল দরবারে আমন্ত্রিত হয়ে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে নৃত্যগীত পরিবেশন করেন। আগেকার দিনে নবাব, নৃপতি, রাজা, মহারাজা, জমিদার, আমলাবর্গের পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁদের ঘরোয়া অনুষ্ঠানে, আসরে, রংমহলে, বাগানবাড়িতে, প্রমোদবিহারে বাইজিরা নাচ-গান করতেন।
খ্রিস্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষার্ধে বাংলায়, বিশেষ করে কলকাতায় বাইজিদের আগমন ঘটতে থাকে। অযোধ্যার বিতাড়িত নবাব ওয়াজেদ আলি শাহের (১৮২২-১৮৯৭) কলকাতার মেটিয়াবুরুজ এলাকায় নির্বাসিত জীবনযাপনকালে সেখানে যে সঙ্গীত সভার পত্তন ঘটে, তাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক বাঈজির আগমন ঘটে। বেশিরভাগ বাইজিই রাগসঙ্গীত ও শাস্ত্রীয় নৃত্য বিশেষত কখকে উচ্চশিক্ষা নিতেন। বাইজিদের নাচ-গানের আসরকে ‘মুজরো’ বলা হয়, আবার তাকে মেহফিল বা মাহফেলও বলা হয়ে থাকে। মেহফিলে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে অংশগ্রহণ ছাড়াও কোনো কোনো বাইজি রাজা-মহারাজা-নবাবদের দরবার থেকে নিয়মিত মাসিক বেতন পেতেন। বাইজিদের নাচ-গানে মোহগ্রস্ত হওয়ার কারণে কোনো কোনো নবাব-রাজা মহারাজা বা ধনাঢ্য ব্যক্তির পারিবারিক ও আর্থিক জীবনে বিপর্যয়েরও সৃষ্টি হয়েছে। বিশ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত বাইজিদের জন্য পরিচিত ছিল লখনউ, এলাহাবাদ, বেনারস, কানপুর, পাটনা, আগ্রা, বরোদা, কলকাতা, দিল্লি প্রভৃতি স্থান। প্রাথমিক যুগের নামকরা বাইজিদের মধ্যে ছিলেন নিকি, আসরন, জিন্নাত, বেগমজান, হিলা, মির্জাজান, নান্নিজান, সুপনজান প্রমুখ। এদের মধ্যে নিকি বাইজি ১৮২৩ সালে রাজা রামমোহন রায়ের বাগানবাড়িতে নৃত্যগীত পরিবেশন করে দেশি-বিদেশি রসিকজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। পরবর্তীকালে খ্যাতিলাভকারী বাঈজিদের মধ্যে শ্রীজান, মুশতারি, মাশকাজান, গহরজান, জদ্দনবাই, জানকী বা ছাপ্পান্ন ছুড়ি, জোরোবাই, আবদনবাই, নাছমিবাই, নীলম, রোশনারা, আসতারি, রসুলুন, কালীবাই, হীরাবাই, কেশরবাই, সরস্বতী, মুন্নি, কানিজান, আমিরজান, গাঙ্গু, বিদ্যাধরী, সিদ্ধেশ্বরী প্রমুখের নাম সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। হেকিম হাবিবুর রহমান তার লেখায় অনেক বাইজির নাম বলেছেন, যেমন—আবেদি বাই, আমু, গা, নোয়াবিন, পিয়ারী বেগম, আচ্ছিবাই, ওয়াসু, বাতানি, হীরা, লক্ষ্মী, জামুরাদ, রাজলক্ষ্মী। এ ছাড়া সত্যেন সেনের লেখা থেকে জানকীবাই ও মালেকাজানের নাম জানতে পারি।
নাচ গান ও রূপের নেশায় উচ্চমান অর্জন হলেও কোনো পুরুষ শিল্পী কিন্তু এই সব বাইজির সঙ্গে এক আসরে বসতে চাইতেন না। কলকাতার একটি আসরে মোস্তারিবাই পূরবী রাগে খেয়াল গেয়ে সুরের মদিরায় শ্রোতাদের এমন আচ্ছন্ন করেছিলেন যে, ওই আসরে পরবর্তী শিল্পী বিখ্যাত ফৈয়াজ খা, এনায়েত খা ও হাফেজ খাঁ মঞ্চে উঠতেই অস্বীকৃতি জানলেন। ইন্দোররাজ শিবাজী হোলকারের সভার বিখ্যাত বীনাকার স্বয়ং বন্দে আলি খাঁ। বীণা বাজিয়ে সুরের ইন্দ্রজালে মুগ্ধ করেন সব শ্রোতাদের, শিবাজীর খাস নর্তকী চুন্নাবাই কিন্তু ছিলেন সেদিন মুগ্ধ শ্রোতাদের আসরে। খুশি হয়ে রাজা ইনাম দিতে চেয়েছিলেন বীণাকারকে। সুরমুগ্ধ রাজাকে চমকে দিয়ে বন্দে আলি খাঁ ইনাম হিসাবে চেয়ে বসলেন বাইজি চুন্নাবাইকে।
“বাড়ি বাড়ি বা বাঈ ভেডুয়া নাচায় বাঈ
মনোগত রাগ সুর ধরে,
মৃদু তান ছেড়ে গান, বিবিজান নেচে যান।
বাবুদের লবেজান কোরে।”
ঈশ্বরগুপ্তের কলমে ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগের কলকাতায় বাইবিলাসের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেছেন এই কবিতাটিতে। সেকালের বাবুবিলাসের প্রধান উপকরণই ছিল বাইজি ও বাইনাচ। সেই বাবুরা সাহেবদের খুশি করার জন্যেও বাইজির আমদানি করত ভিন রাজ্য থেকে। সুদূর লখনউ থেকে বাইজি আনা হত আসরে। তবে আসর সেকালের কলকাতায় কিছু ব্যাপার নয়। অষ্টাদশ শতাব্দী থেকেই কলকাতা শহরে বাইচের নেশা জড়িয়ে গিয়েছিল। কোনো উৎসব লাগলেই হল, অমনি বাইজি এসে গেল নাচঘরে। মুজরোর খরচের বহর দেখিয়ে এবং রূপ-জৌলুসের বাহারে চোখ ধাঁধিয়ে এক বাবু আরেক বাবুকে টক্কর দিয়ে বড়োই আমোদ পেতেন। বাইজি নাচ ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে গেল। তবে বাইজি নাচ ক্রমশ ভারতে সীমাবদ্ধ না থেকে ইউরোপীয় সমাজেও প্রচলন হয়ে গিয়েছিল। বাইজি নাচ সেসময় স্ট্যাটাস সিম্বল হিসাবে দেখা হত। কলকাতার সাংস্কৃতিক পরিবেশ লখনউ, বেনারসের বাইজিদের স্বপ্ন দেখিয়েছে। সেরা বাইজি বলতে যা বোঝায়, তাঁর অধিকাংশই ছিল অবাঙালি।
“তখন আমি দস্তুরমতো গানের চর্চা করি। কোথায় কে গাইয়ে-বাজিয়ে এলো সব খবর আসে আমার কাছে। কাশী থেকে এক বাইজি এসেছে, নাম সরস্বতী, চমৎকার গায়। শুনতে হবে। এক রাত্তিরে ছ’শো টাকা নেবে। শ্যামসুন্দরকে পাঠালুম, “যাও দেখো কত কমে রাজি করাতে পারো।’ শ্যামসুন্দর গিয়ে অনেক বলে করে তিনশো টাকায় রাজি করালে।”—‘জোড়াসাঁকোর ধারে’ নিবন্ধে সরস্বতী বাইজির গান শোনার স্মৃতিচারণ করছেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাইজির গান শুনবেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুররা শুনতেন! মাত্র দুটি গানের জন্য এক রাতে ৩০০ টাকা দিয়ে! সে যুগে ৩০০ টাকার মূল্য নেহাত কম নয়। নাটোরের মহারাজা জগদীন্দ্রনাথও। এহেন সিদ্ধান্ত নিয়ে অসন্তোষ চেপে রাখেননি–“অবনদা, করেছ কী! তিনশো টাকা জলে দিলে?” এদিকে শ্যামসুন্দর এসে জানালেন, টাকার সঙ্গে দু-বোতল ব্র্যান্ডিও চাই সরস্বতীর। ব্র্যান্ডি না-খেলে তিনি নাকি গাইতেই পারেন না। অবনীন্দ্রনাথ তাতেও রাজি। গান তিনি শুনবেনই। সরস্বতী গাইতে শুরু করলেন রাত ১০টায়। একটা গানেই রাত ১১ টা বাজল। এ প্রসঙ্গে অবনীন্দ্রনাথ লিখছেন–“এক গানেই আসর মাত। গানের রেশে তখনও সবাই মগ্ন। সরস্বতীবাই বললেন, “আওর কুছ ফরমাইয়ে’।” তাঁকে এরপর একটা ভজন গাইতে বললেন অবন ঠাকুর। সরস্বতী গাইলেন ‘আও তো ব্রজচন্দলাল। মুগ্ধতার মীড়ে আরও একবার টান পড়ল। অবনীন্দ্রনাথ তাড়াতাড়ি করে ছবি এঁকে রাখলেন তাঁর। গান শেষ, বাই উঠে পড়লেন। অবনীন্দ্রনাথের মনে হল, দু-খানা গানের জন্য ৩০০ টাকা দেওয়া সার্থক।
নগেন্দ্রনাথ ঘোষ এক জায়গায় বলছেন, কলকাতায় বাইজি নাচের প্রবর্তক রাজা নবকৃষ্ণ দেব। তাঁর ইংরেজ আনুগত্য ছিল প্রশ্নাতীত। এই নবকৃষ্ণই ছিলেন কবিয়াল হরু ঠাকুর ও নিতাই দাসেরও পৃষ্ঠপোষক। তাঁর সভায় বাইচের আয়োজন হত ‘এলিট’ সাহেব-সুবো আর বাবুদের জন্য। কবিগানের দরজা সেখানে সাধারণের জন্যেও ভোলা। এমন ‘নষ্ট মেয়েমানুষ’ বাইজিদের নাচ-গানের পরে সেই কবিগানকে ঘোর অশ্লীল মনে হয়েছিল রেভারেন্ড ওয়ার্ডের। ১৮০৬ সালে শোভাবাজারের রাজা রাজকৃষ্ণ দেবের বাটিতে তিনি আমন্ত্রিত হয়েছিলেন বাই নাচ দেখতে। এই আয়োজন বাছাই করা মানুষদের জন্য। ভোররাতে বাই নাচের পরে শুরু হল হরু ঠাকুর আর নিতাই বৈরাগীর কবিগান। বন্ধ দরজা হাট করে খুলে দেওয়া হল সাধারণের জন্য। পিলপিল করে ঢুকল লোক। শুরু হল ‘অশ্লীল’ কবিগান। রেভারেন্ড ওয়ার্ডের মনে হল, বাই নাচের একদম বিপরীত মেজাজের অনুষ্ঠান এসব।
তবে নিন্দে-মন্দর বিপরীত স্রোতও ছিল সে সময়। সেখানে খেমটা নাচ আর বাইজি নাচের মধ্যে রুচি ও সংস্কৃতির পার্থক্যও খোঁজা চলছিল। দেখা গেল, বাইজি নাচ তুলনামূলক অনেক সভ্য, শালীন। বাইজি নাচকে ভুলবশত মহারাষ্ট্রের নৃত্য হিসাবে উল্লেখ করে বঙ্কিমচন্দ্রের ‘বঙ্গদর্শন’-এ লিখেছেন–“খেমটা তান্ত্রিক, মহারাষ্ট্র নৃত্য পৌরাণিক। পুরাণের ন্যায় এই নৃত্যের গাম্ভীর্য আছে।” খেমটা এই লেখার লেখকের চোখে ‘ছোটলোকের আমোদ’, ‘কুৎসিত নাচ’। সাধারণী’ পত্রিকাও খেমটাকে ‘নীচ ভাববাদ্দীপক জঘন্য’ নাচ বলে প্রশংসা করছে বাই। নাচের। অর্থাৎ বাই নাচের শ্রেণিচরিত্রগত একটি পার্থক্যও স্বীকৃত হচ্ছিল সমাজে। ভাবটা এমন যেন বাইরা ‘নষ্ট মেয়েমানুষ’ হতে পারে, কিন্তু তাঁদের শিল্পটি উচ্চাঙ্গের। তা উচ্চকোটির আস্বাদনের সামগ্রী।
বাইজি মানেই যেমন গণিকা নয়, তেমনি গণিকা মানেই বাইজি নয়। আবার বাইজিও গণিকা হতে পারে, গণিকাও বাইজি হতে পারে। তাই আমাদের সমাজে বাইজি আর গণিকা সমার্থক হয়ে আছে। ভবানীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়ও বাইজি আর গণিকাকে একই মনে করতেন। তিনি তাঁর ‘নববাবুবিলাস’ গ্রন্থে লিখেছেন–“গাওনা বাজনা কিছু শিক্ষা করো যাহাতে সদা জিউ খুসি থকিবেক এবং যত প্রধানা নবীনা গলিতা যবনী বারাঙ্গনা আছে ইহাদিকের বাটীতে মধ্যে মধ্যে যাতায়াত করিয়া ঐ বারাঙ্গনাদিকের সর্বদা ধনাদি দ্বারা তুষ্ট রাখিবা, কিন্তু যবনী বারাঙ্গনাদিগের বাই বলিয়া থাকে, তাহা সম্ভোগ করিবা, কারণ পলাণ্ড অর্থাৎ পেঁয়াজ ও রশুন যাহারা আহার করিয়া থাকে তাহারদিগের সহিত সম্ভোগে যত মজা পাইবা এমন কো রাঁড়েই পাইবা না।”
বাইজি যেমন নাচ ও গান করত, তেমনই দেহসম্ভোগও করত। তা ছাড়া সেসময়ে নাচা-গানা একমাত্র বাইজি নারীরাই করত। দেবদাসী, গণিকারাও নাচত। সাধারণ নারীদের তা নিষিদ্ধ ছিল। সেই কারণেই নৃত্যশিল্পী বা নাচনেওয়ালি বা নর্তকীদের ঘৃণার চোখে দেখা হয়। সেসময় নাচ করা মেয়েদের বিয়ে দেওয়া মুশকিল ছিল। যেসব মেয়েরা শখ করে নাচ করত তাঁদের ‘বাইজি’ বা ‘নর্তকী’ বলে ঘৃণা করত সমাজ। আজও রক্ষণশীল পরিবারের বাবা-মায়েরা কখনোই নাচ করা মেয়ের সঙ্গে তাঁদের ছেলের বিয়ে দেন না।
বাইজির পেশার বাইরে মেয়েদের নাচ করার অভ্যেস শুরু হয়েছে, এই তো সেদিন। যাই হোক, গণিকাদের যেমন প্রকারভেদ ছিল, বাইজিদেরও প্রকারভেদ ছিল। বাইজিদেরকে চার শ্রেণিতে ভাগ করা হত। যেমন—(১) যাঁর নামের সঙ্গে ‘বাই’ শব্দটি থাকত, তিনি শুধুই গান করতেন। যেমন–মুন্নিবাই। (২) যাঁর নামের সঙ্গে ‘জান’ শব্দটি ব্যবহৃত হত, নাচ ও গান উভয়ই করতেন। যেমন–গহরজান। (৩) যিনি কেবলই অতিথিদের আদর-আপ্যায়ন করতেন, তাঁকে ‘কানিজ’ বলা হত। (৪) যিনি কেবলই গণিকাবৃত্তি করতেন, তাঁকে ‘খানাগি’ বলা হত। বাবুদের অবশ্য সবই চলত।
ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে কলকাতায় বাবুগিরির বড়োই টালমটাল অবস্থা হল। বাণিজ্যলক্ষ্মীর কৃপা থেকে বঞ্চিত হতে থাকল বাবুরা। কেউ উঠতির মুখে তো কেউ পড়তির মুখে। বাইজি নাচ ও খেমটা নাচ সেকালে ঢাকার মানুষদেরও জীবনের অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কবি নবীনচন্দ্র সেন তাঁর ছেলের বিয়েতে ঢাকা থেকে বাইজি আনতে পেরে গর্ব অনুভব করেছিলেন। ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলে বাইজি বা গণিকাঁপাড়া ছিল। সে সময় বাইজিপাড়া হিসাবে গঙ্গাজলি ও সাঁচিবন্দর ছিল। ঢাকার ইসলাম পুর ও পাটুয়াটুলির মোড় থেকে যে পথটি ওয়াইজঘাট নামে বুড়িগঙ্গার দিকে চলে গেছে তার নাম ছিল গঙ্গাজলি। সন্ধ্যা নেমে আসার সঙ্গে সঙ্গে তবলার বোল, সেতারের ঝংকার আর নুপুরের নিক্কণ গঙ্গাজলির পরিবিশ মুখরিত হয়ে উঠত। বাবু আর সাহেবদের আলবোলার গুড়গুড় শব্দ পরিবেশের সঙ্গে ছিল সংগতিপূর্ণ।
নাট্যকার সাঈদ আহমেদ তাঁর একটি লেখায় বলেছেন—কাছেই ছিল মহেশ ভট্টাচার্যর বিশাল হোমিওপ্যাথিক ওষুধের দোকান, গঙ্গাজলির উল্টোদিকে ছিল কালীমন্দির। গঙ্গাজলি ছিল দোতালা প্রশস্ত বাড়ি। নীচতলায় বাইজিদের কাজের লোকেরা থাকত। বাইজিরা থাকতেন দোতালায়। বাঁকওয়ালা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে হত। বারান্দায় পাতা থাকত ইজিচেয়ার। বাইজিদের খাসকামরা সাজানো থাকত শান-শওকতে। ফরাশ বিছানো ঘর।
গঙ্গাজলির অধিকাংশ বাঈজিরা প্রতিদিন সকালে গঙ্গাজলি থেকে স্নানের জন্য দল বেঁধে বুড়িগঙ্গায় যেতেন। স্নান সেরে বুকে গামছা জড়িয়ে কোমড়ে পিতলের কলসি নিয়ে সিক্ত ভূষণে বাইজিরা লাইন দিয়ে ফিরে আসতেন। এ দৃশ্য উপভোগ করতে কৈশোরে বন্ধুদের নিয়ে ওয়াইজ ঘাট এলাকায় যেতেন নাট্যকার সাঈদ আহমেদ। শিল্পী পরিতোষ সেনও কিন্তু ভুলে যাননি সিক্ত বসনে বাইজিদের ঘরে ফেরার দৃশ্যর বর্ণনা দিতে। তিনি লিখছেন—“আমাদের পাড়ায় বারবনিতারা প্রতিদিন সকালে স্নান করতে বুড়িগঙ্গা যায়। তাঁদের স্নানে যাওয়ার পথটি আমাদের বাসার সামনে দিয়ে। ফেরার পথে ভেজা কাপড়ে কালী মন্দিরে প্রণাম করে আমাদের গলির মুখে আবার দেখা হয়। সকালবেলার এই মনোরম দৃশ্যটি আমাদের পাড়ার পুরুষদের চোখকে বেশ তৃপ্তি দিত। তাঁদের মন মেজাজ খোশ রাখে। দিনটি ভালো কাটে।” সদ্যস্নাত তরুণীদের প্রথম সারির মাঝখানে ১৬ ১৭ বছরের একটি মেয়ের আকর্ষণীয় বর্ণনাও দিয়েছিলেন পরিতোষ সেন। সেই সরস বর্ণনা শামীম আমিনুর রহমানের একটি লেখায় পাচ্ছি—“মুখটি অবিকল লিচুর মতো গোল। থুতুনিটি ঈষৎ তীক্ষ্ণ, ঠোঁট দুটি যেন রসালো দুটি কমলার কোয়া। তাঁর নাকের ছোট্ট পাটা দুটি প্রতিটি নিঃশ্বাসের সাথে সাথে ফুলে ফুলে উঠছিল। গোটা শরীরটি যেন মুর্শিদাবাদী রেশম দিয়ে মোড়ানো। এমনই মসৃণ আর চকচকে তাঁর ত্বক। পাকা পাতিলেবুর গায়ে হাল্কা গোলাপি রঙের পোঁচে যে রঙের মিশ্রণ হয় ঠিক তেমনই তাঁর গায়ের রঙটি। তার নীল কালো চোখ। দুটি যেন স্তম্ভিত মেঘ মুখের অর্ধেকটাই জুড়ে আছে।” পরিতোষ সেন আরও বর্ণনা দিয়েছেন—“ভেজা কাপড়টি মেয়েটির গায়ে লেপটে থাকায় কারণে তাঁর শরীরের প্রতিটি অঙ্গ যেন একটি ফুলের বিভিন্ন পাপড়ির মতো আলাদা সত্ত্বা নিয়ে সরল বৃন্তটির উপর দাঁড়িয়ে আছে। এক একটি পাপড়ি যেন একেকটি ফুল। বাকি মেয়েকটির মতো তার কাঁধেও পেতলের কলসি ভরা বুড়িগঙ্গায় জল। এই কলসি আর নিতম্ব দুইই মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। দুইই টলোমলো। এমনই সুন্দর সাবলীল আর বেপরোয়া।”
সত্যেন সেন তার রচনায় ঢাকার জানকীবাইয়ের কথা বলেছেন। এলাহাবাদের মেয়ে ছিলেন। থাকতেন ঢাকায়। সে সময় তিনিই ঢাকার সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক প্রাপ্ত বাইজি ছিলেন। একদিনের মুজরোতে তাঁকে ১৫০০ টাকা দিতে হত তৎকালীন সময়ে। জানকী ছিলেন এক নবাবের রক্ষিতা। নবাব তাতে এতই মুগ্ধ ছিলেন যে, কেউ যেন তাঁর কাছ থেকে জানকীকে ছিনিয়ে নিতে না পারে সেই জন্য কিছুটা কুৎসিত করার নিমিত্তে জানকীকে ৫৬ টি ছুরির আঘাত করেছিলেন। সে কারণে জানকী ছাপান্ন ছুড়ি নামে পরিচিত ছিল। ঢাকার বাঈজিদের নিয়ে তথ্য পাওয়া যায় হেকিম হাবিবুর রহমানের লেখায়। এলাহিজান উত্তর ভারত থেকে ঢাকায় এসেছিলেন। নওয়াব আবদুল গনির কাছ থেকে তিনি নিয়মিত মাসোহারা পেতেন। নবাব সাহেবের কাছ থেকে আরও অনেকে মাসোহারা পেতেন, যাঁদের কথাও হেকিম সাহেব তাঁর লেখায় উল্লেখ্য করেছেন। হেকিম হাবিবুর রহমানের লেখায় পাওয়া যায় আচ্ছিবাইকে। আচ্ছিবাইকে নবাব সাহেবের সব থেকে ‘পেয়ারী বাইজি’ বলে উল্লেখ্য করেন। লক্ষ্ণৌর এই বাইজি ছিলেন নৃত্যে সুনিপুণা। হেকিম সাহেবের মতে ঢাকায় এরপরে এত বড়ো মাপের আর কোনো নর্তকী আসেনি। হীরা বাইজি নাকি নাচে খুব দক্ষ ছিলেন, হীরা বাইজি যখন নাচতেন তখন তাঁর গায়ের কালো রং থেকে নাকি আলো ঠিকরে পড়ত। হীরা বাইজির মেয়ে পান্না কিন্তু গজল গেয়ে সুখ্যাতি অর্জন করেছিল।
সত্যেন সেনের লেখায় মালকাজান সম্বন্ধে জানা যায়। মালকাজান মুজরো করতে ঢাকা আসতেন। সে সময় তিনজন মালকাজান ছিলেন। আগ্রাওয়ালি মালকাজান, বেনারসের চুলবুলিয়া মালকাজান ও ভাগলপুরী মালকাজান। উপমহাদেশের বিখ্যাত বাইজি গওহরজান ছিলেন বেনারসের চুলবুলিয়া বা বড়ো মালকাজানের কন্যা। অসামান্য রূপসী মালকাজানের পূর্ব নাম ছিল লেডি এডেলাইন। আর্মেনিয়ান ইহুদি। স্বামী রবার্ট ইউয়ার্ডের সঙ্গে বিচ্ছেদ হলে পরে এডেলাইন বাইজিবৃত্তি গ্রহণ করে। এরপর ইসলাম ধর্মগ্রহণ করে নিজের নাম রাখেন মালকাজান। আর মেয়ে এঞ্জেলিনার নাম রাখেন গওহরজান। গওহরজান ছিলেন ভীষণ শৌখিন আর ফ্যাশন সচেতন। নিজেকে সবসময়ই সাজিয়ে গুছিয়ে উপস্থাপন করতেন। বস্তুত গওহরজানের হাত ধরেই কিন্তু শিল্পীদের ফ্যাশন সচেতনতা এ দেশে শুরু হয়। গওহরজানের মা মালকাজানের সৎ বোন ছিল জদ্দনবাই। জদ্দনের মা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে এবং জীবিকার কারণে মেয়েকে বাই হিসাবে তৈরি করে। জদ্দনবাই বেশ কয়েক বার বিয়েও করেন। জদ্দনবাই ঢাকার বিভিন্ন মেহফিল মাতিয়ে রাখতেন। তিনি ঢাকার নবাবের ঘনিষ্ট সান্নিধ্য পেয়েছিলেন বলেও জানা যায়। জদ্দনের শেষ স্বামী উত্তম চাঁদমোহন জদ্দনের প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে মুসলমান হন, আর তাঁকে বিয়ে করেন। মোহন নিজের নাম রাখেন আবদুর রশিদ। মাওলানা আবুল কালাম আজাদ এ বিয়েতে সাক্ষী হন।
১৮৭৩ সালে কলকাতার মেয়েরা যখন রঙ্গমঞ্চে আসার অনুমতি পেলেন, তখন সর্বপ্রথম গণিকাপল্লির সংগীতে পারদর্শীরাই কিন্তু মঞ্চে এসেছিলেন। তখন থেকে বিংশ শতাব্দীর ত্রিশের দশক পর্যন্ত কিন্তু সমস্ত অভিনেত্রীরাই সুগায়িকা ছিলেন। এ প্রসঙ্গে বিনোদিনী, তিনকড়ি, তারাসুন্দরী থেকে বিংশ শতাব্দীর আঙ্গুরবালা, ইন্দুবালা পর্যন্ত অনেকের কাছে নাম করা যায়। কাননদেবী এখনও অনেকেরই প্রিয়। কাননদেবী অভিনয়ও করতেন। ঢাকার প্রথম পূর্ণাঙ্গ নির্বাক চলচিত্র ছিল ‘দ্য লাস্ট কিস’-এর নায়িকা ছিল ললিতা। তাঁকে বাদামতলির গণিকাপল্লি থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল। তাঁর আসল নাম ছিল বুড়ি। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর। দ্যা লাস্ট কিসের সহ নায়িকা চারুবালাকে আনা হয় কুমারটুলির গণিকালয় থেকে। জিন্দাবাহার লেন থেকে আনা হয়েছিল দেববালাকে।
বাইজি বা গণিকা থেকে যেমন অভিনেত্রী ও গায়িকার ইতিহাস আছে, তেমনি বাইজি থেকে বেগম হওয়ার ইতিহাসও আছে। যেমন–মণি বা মুন্নিবাই। ইতিহাসের এক ধূলি-সময়ের কথা। মুন্নিবাই ছিল নবাব আলিবর্দি খাঁর জলসাঘরের এক বাইজি। অসম্ভব সুন্দর দেহবল্লরীর অধিকারিণী ছিলেন তিনি। তাঁর রূপ-মাধুরী আর নাচের নুপুরের নিক্কণে নবাব অন্দরমহলের অনেক যুবা পুরুষেরই অন্তরে কাঁপন ধরত। মিরজাফরেরও অন্তর কাঁপিয়েছিল এই নর্তকী। আলিবর্দি খাঁর প্রধান সেনাপতি থাকা অবস্থায় মিরজাফর প্রায়ই জলসাঘরে গিয়ে মুন্নিবাইয়ের সঙ্গে ফুর্তি করত। তখন থেকেই তাঁর স্বপ্ন ছিল মুন্নিবাইকে বিয়ে করার।কিন্তু রাজকীয় প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী জলসাঘরের কোনো নর্তকী অভিজাত মুসলমানের পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব ছিল না।মিরজাফর তাঁর লালিত স্বপ্ন পূরণ করেন পলাশি যুদ্ধের পর পুতুল নবাব হয়ে। তাঁর প্রথম স্ত্রী শাহ বেগমের আকস্মিক মৃত্যু হলে তাঁর স্বপ্নপূরণের সুযোগ এসে যায়। সমস্ত লোকলজ্জার মাথা খেয়ে তিনি এই নর্তকী মুন্নিবাইকে বিয়ে করে বেগমের মর্যাদা দেন।এইভাবেই শুরু হয়েছিল মুর্শিদাবাদে জেনানা মহলে বাইজি থেকে বেগম হওয়ার অধঃপতিত কাহিনি।
কথিত আছে, ‘দুশ্চরিত্রা’ এই মুন্নিবাইকে মিরজাফর আর-এক লম্পট লর্ড ক্লাইভের কাছে মনোরঞ্জনের জন্য পাঠাতেন। মুন্নিবাই তাঁর রূপ-মাধুরীতে বিমুগ্ধ করত ক্লাইভকে। সেইসঙ্গে তাঁদের নাবালক পুত্র নাজিমের জন্য বাংলার পরবর্তী নবাবের পদটিও নিশ্চিত করিয়ে নিয়েছিলেন। প্রায় সময়েই মিরজাফর অন্যান্য নারী ও নর্তকীদের সঙ্গে সুরাপানে মত্ত থাকত, আর এইসব নারীদের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ করে দিত স্বয়ং মুন্নিবাই। এই সুযোগে মুন্নিবাইও রাজমহলের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতেন। বাংলার নবাবিও চালাত ইংরেজ লর্ডদের সঙ্গে যোগসাজস ও মনোরঞ্জন করে এই নাচনেওয়ালি। তাহলে দেখা যাচ্ছে মুন্নিবাই বাইজি থেকে বেগম হলেন বটে, কিন্তু বেগম থেকে যে-কোনো স্বার্থে গণিকা হতেও তাঁর আপত্তি ছিল না।
বাইজিদের জীবনে যেমন হাসি-আনন্দ আছে, তেমন আছে দুঃখ-বেদনারও ইতিহাস। গণিকা ও বাইজি নামোচ্চারণে ছিল সমাজের বাঁকা চোখের ভ্রুকুটি। সমাজ তাঁদের অপাঙক্তেয় করে রাখলেও সমাজের ব্যক্তিবর্গরা তাঁদের গুণপনাকে কাজে লাগাতে কসুর করেনি। কিন্তু তাঁদের ভিতর কিন্তু সুরেবেসুরে বেজে উঠত–“ছিঃ ছিঃ এত্তা জঞ্জাল”। গণিকাদের মতোই বাইজিদেরও দিনগত বৃত্তিক্রিয়া যেন জীবন-মৃত্যুর সহবাস। গানই ছিল তাঁদের পারাপারের কাণ্ডারী। গানেই তাঁদের মুক্তির আনন্দ, গানেই পরিস্ফুট বেদনার কান্না। বাইজিদের কিছু গান আমি এখানে উল্লেখ করব। যেসব গানে খুঁজে পাবেন বাইজদের সুখ-দুঃখ-যন্ত্রণার কাহিনি।
(১) লুম খাম্বাজ # কাওয়ালি
অনেক দিনের পরে দেখা, কেমন ছিলে বলো না।
দাসী বলে গুণমণি, মনে কি হে ছিল না।
আসি বলে চলে গেলে, সে আসা কি এই আসিলে
ভালোবাসি বলে কি রে, আসিতে ভালোবাসো না।
তোমা সনে প্রেম করে, জ্বালাতন যার পরে,
যত দুঃখ সই অন্তরে, জেনেও কি তা জানো না।
(২) খেমটা
অমন করিয়ে আঁখি আর ঠের নারে।
আর ঠের না আঁখি প্রাণে মেরো নারে।
তুমি যে চাওনি চাও, ও চাউনি কোথা পাও,
উড়ে যায় প্রাণপাখি মন তত বোঝে নারে।
(৩) কাওয়ালি
আগে আমার ছিল না সে জ্ঞান।
তুমি হইবে জাদু, পরেরই পরান।
তোমাতে আমারি আশ, তুমি হলে পরবশ,
অমৃত জানিয়ে বিষ, করিছিরে পান।
(৪) মিশ্র বেহাগ # খেমটা
আছে যার নয়ন।
রূপে যদি না ভোলে তার মন,
জানি নয়ন তার কেমন।
ধীরে ধীরে নয়নে পশে, রূপ হৃদয়ে বসে,
গুমোর যায় ভেসে, রূপে মন বসে,
জোর চলে না, বুঝ মানে না,
সাধে মন পায়ে বাঁধন।
নয় তো পরে কে করে যতন।
(৫) খাম্বাজ # একতাল
আজ তোমাকে দেখতে এলেম, অনেক দিনে পরে।
ভয় নাইকো সুখে থাকো, অধিকক্ষণ থাকব নাকো,
আসিয়াছি দু-দণ্ডেরি তরে।
দেখব শুধু মুখখানি, শুনব দুটি মধুর বাণী,
আড়াল থেকে হাসি দেখে, চলে যাব দেশান্তরে।
কোনো কোনো বাইজি সামাজিক কল্যাণমূলক কাজের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। সময়, চাহিদা ও মূল্যবোধের পরিবর্তন, নবাব-রাজা-মহারাজাদের পতন ইত্যাদি কারণে বাইজিদের অস্তিত্ব এখন লুপ্ত হয়েছে। তাঁদের নৃত্য সঙ্গীতে পারদর্শিতা, রূপলাবণ্য ও গুণের কথা কেবল বিধৃত হয়ে আছে বিভিন্ন লেখায়। আজও বউবাজার এলাকার বহু অট্টালিকা (বাইজিবাড়ি) ভগ্নপ্রায় অবস্থায় নির্জনে পড়ে আছে। আছে কিছু বাইজি পরিবার। কিন্তু সেখানে আর সুরের কলতান শোনা যায় না, বেলোয়ারি ঝাড়ে বাতি জ্বলে না, রসিকজনের যাতায়াতও আর নেই।