হঠাৎ আমার নামে রসায়ন বিভাগের ঠিকানায় একটা বিয়ারিং চিঠি এসেছে। টিকিট ছাড়া চিঠি। পিয়নের কাছ থেকে চিঠি নিতে হলে দু’আনা দিতে হবে। দু’আনায় দুই কাপ চা পাওয়া যায়। আমি নিজে এক কাপ খেতে পারি। একজন বন্ধুকেও খাওয়াতে পারি। কী করব বুঝতে পারছি না। বাসার চিঠি না। বাসার চিঠি বাবার আরদালি আনা-নেওয়া করে। কোনো গুরুত্বপূর্ণ চিঠি কেউ টিকিট ছাড়া পাঠাবে না। পিয়নকে ফিরিয়েই দিচ্ছিলাম। কী মনে করে দু’আনা গচ্চা দিয়ে খাম নিলাম। খুলে দেখি নাদিয়া পাঠিয়েছে। সে লিখেছে (সম্বোধনহীন চিঠি)–
প্রথমেই বলি বিয়ারিং চিঠি কেন পাঠিয়েছি। বিয়ারিং চিঠি কখনো মিস হয় না। রেজিস্ট্রি চিঠিও প্রায়ই হারায়। পোস্টাপিস থেকে খুলে দেখে ভেতরে টাকা আছে কি না। বিয়ারিং চিঠি কেউ খোলে না।
এখন সম্পূর্ণ অন্য বিষয়ে কথা বলব। আমরা ক্লাসের মেয়েরা নিজেরা তুমি তুমি করে বলি। ছেলেরাও নিজেদের মধ্যে তুমি তুমি করে বলে। অথচ একটা ছেলে যখন একটা মেয়ের সঙ্গে কথা বলবে তখন আপনি। ব্যাপারটা কি যথেষ্টই হাস্যকর না? এখন থেকে আমি তোমাকে তুমি করে বলব। তুমিও অবশ্যই আমাকে তুমি বলবে।
আমি এই চিঠিটা তোমাকে ধন্যবাদ জানানোর জন্যে লিখছি। তুমি আমার হাতের ছাপ দেখে খুব গুছিয়ে অনেক কিছু লিখেছ। তুমি লিখেছ—আমার হাত বিজ্ঞানীর হাত।
আমি মাদাম কুরির মতো বড় বিজ্ঞানী হব।
মাদাম কুরী হওয়ার আমার কোনো শখ নেই। আমি পার্ল এস বাকের মতো লেখিকা হতে চাই।
আমি প্রথম যে উপন্যাসটা লিখব তার নাম ‘হাজেরা বিবির উপাখ্যান’। হাজেরা বিবি হচ্ছেন আমার দাদি।
উপন্যাসের প্রথম লাইনটাও ঠিক করা—আজ হাজেরা বিবির বিয়ের দিন।’ এই লাইনটা আমি অবশ্যি পার্ল এস বাকের কাছ থেকে চুরি করেছি। উনার লেখা গুড আর্থ উপন্যাসের প্রথম লাইন হচ্ছে—আজ ওয়াং লাং-এর বিয়ের দিন।
আমি অবশ্যি আমাকে নিয়েও একটা উপন্যাস লিখতে পারি। সেটাও খারাপ হবে না। নিজেকে নিয়ে যদি লেখি তার প্রথম লাইনও হবে–“আজ তেজল্লীর বিয়ের দিন। তোজল্লী আমার আরেকটি নাম। এই নামে শুধু দাদি আমাকে ডাকেন।
তুমি আমার হাতের ছাপ দেখে লিখেছ—আপনার বিয়ে নিয়ে আপনি যতটা ঝামেলা হবে বলে আশা করছেন তত ঝামেলা হবে না। আপনি আপনার পছন্দের কাউকে বিয়ে করবেন, তবে আপনি বিয়ের পরপর দেশ ত্যাগ করবেন। কখনো দেশে ফিরবেন না।
আমার বিয়ে নিয়ে নানান ঝামেলা কিন্তু হচ্ছে। হঠাৎ একদিন শুনলাম, আমার বিয়ে হবে পশ্চিম পাকিস্তানের এক নওজোয়ানের সঙ্গে। এতে পূর্বপাকিস্তান-পশ্চিম পাকিস্তানের সম্প্রীতি বৃদ্ধি পাবে। ইত্যাদি। আমি তখন বাবাকে গিয়ে বললাম, পিতাজি হামনে মাগরেবি পাকিস্তানকা নওজোয়ান শাদি নাহি করুন্সি।
বাবা আমার বেয়াদবি দেখে হতভম্ব হলেন। তার মেয়ে উর্দু কথা বলে তার সঙ্গে ফাজলামি করবে এটা তিনি নিতেই পারলেন না। আমি কিন্তু মোটেই ফাজলামি করছিলাম না।
আমি দাদিজানকে ঘটনা বললাম। দাদিজান বললেন, আমারে একটা হাছুন দে। হাছুন দিয়া পিটায়া তোর বাপের মাথা খাইকা পশ্চিম পাকিস্তান বাইর করতেছি।
ওই সমস্যার সমাধান হলেও নতুন সমস্যায় আছি। বাবা এখন যে ছেলের সঙ্গে বিয়ে ঠিক করেছেন সে একজন খুনি। নিজের মামাকে গুলি করে খুন করেছে। এই খুনি কিন্তু দেখতে রাজপুত্রের মতো। মাইকেল এঞ্জেলে তাকে পেলে সঙ্গে সঙ্গে পাথর কেটে মূর্তি বানানো শুরু করতেন।
দেখলে কত লম্বা চিঠি লিখছি! রাত জেগে চিঠি লিখতে আমার খুব ভালো লাগে। তুমি জানিয়েছ আমার হাতে সুলেমানস রিং আছে। যাদের হাতে এই চিহ্ন থাকে, তারা আধ্যাত্মিক ক্ষমতাসম্পন্ন হয়।
আমার কোনোই আধ্যাত্মিক ক্ষমতা নেই। ভয় পাওয়ার ক্ষমতা আছে। দিঘির জলে নিজের ছায়া দেখে এমনই ভয় পেয়েছিলাম। কয়েক ঘণ্টা অচেতন ছিলাম। এখন ভালো। বাবা বলছেন, শরীর পুরোপুরি সারলে ঢাকায় যেতে পারব, কিন্তু দিঘির ঘাটে কখনোই যেতে পারব না।
তবে আমি নিয়মিতই দিঘির ঘাটে যাচ্ছি। মা আমার জন্যে তার দেশের বাড়ি থেকে বারো বছর বয়েসী একটি মেয়ে আনিয়ে দিয়েছেন। মেয়েটার নাম বিছুন (অর্থাৎ পাখা)। আমি তার নাম বদলে রেখেছি পদ্ম। কারণ সে পদ্মের মতোই সুন্দর। মেয়েটার ডিউটি হচ্ছে, সে এক সেকেন্ডের জন্যেও আমাকে চোখের আড়াল করতে পারবে না।
তা সে করছে না। সে আমার সঙ্গে ছায়ার চেয়েও ঘনিষ্ঠভাবে আছে। অন্ধকারে মানুষের ছায়া থাকে না। সে অন্ধকারেও থাকে এবং টকটক করে সারাক্ষণ কথা বলে। তার প্রধান আগ্রহ শিল্লুকে। রোজ আমাকে চার-পাঁচটা শিল্লুক ধরবে। উদ্ভট উদ্ভট সব শিল্লুক। যেমন—
কৈলাটির নানি
হাত দিয়া ধরলে পানি।
এই শিল্লুকের অর্থ হলো, আকাশ থেকে পড়া শিল। শিল হাত দিয়ে ধরলে পানি হয়ে যায়। এখন তুমি বলো কৈলাটির নানির সঙ্গে শিলের কী সম্পর্ক?
তোমাকে দীর্ঘ চিঠি লিখলাম। আমার মন বলছে, তুমি এই চিঠি তোমার সব বন্ধুদের পড়াবে এবং বলবে, নাদিয়া নামের একটি মেয়ে আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। এই কাজটি করো না। আমি প্রেমেপড়াটাইপ না।
ভালো থেকো।
তোজল্লী, নাদিয়া, দিয়া
পুনশ্চ : পদ্ম মেয়েটিকে নিয়ে যা লিখলাম সবই মিথী। পদ্ম নামে কেউ নেই। আমি যে বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলা শিখে গেছি তা প্রমাণ করার জন্যেই পদ্ম। তুমি নিশ্চয়ই বিশ্বাস করে ফেলেছ পদ্ম বলে একজন আছে।
মোটামুটি অপরিচিত কোনো তরুণীর কাছ থেকে পাওয়া আমার জীবনের দীর্ঘতম পত্র। প্রথমেই ইচ্ছা হলো, কেমিস্ট্রির সব ছাত্রছাত্রীকে একত্র করে চিঠিটা পড়ে শোনাই।
অনেক কষ্টে এই লোভ সামলালাম। বিকালে কেমিস্ট্রি প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস ছিল। ক্লাস বাদ দিয়ে চলে গেলাম পাবলিক লাইব্রেরিতে। গুড আর্থ আগেই পড়া ছিল। মনে হলো আমার এই বই আরেকবার পড়া উচিত।
রাত আটটা পর্যন্ত লাইব্রেরি খোলা। আটটা পার করে হলে ফিরলাম। হলে তখন ভয়ঙ্কর অবস্থা। তিনটা ডেডবডি গেস্টরুমের সামনে পড়ে আছে। রক্তে মেঝে ভেসে যাচ্ছে।
ডেডবডিগুলি কার? এখানে কেন? ঘটনা কী? কিছুই জানি না। ডেডবড়ি মানেই কান্নার শব্দ, আতরের গন্ধ। এখানে তার কিছুই নেই। হলের কর্মকর্তা প্রভোস্ট হাউজ টিউটর কাউকে দেখা যাচ্ছে না। দারোয়ানদের শুকনো মুখে ঘুরতে দেখা যাচ্ছে। হলের ভেতরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া কিছুই হচ্ছে না।
ডাইনিং হল খোলা আছে। ক্ষুধার্ত ছাত্ররা রাতের খাবার খেতে যাচ্ছে। আমিও খেতে গেলাম। ইমপ্রুভড ডায়েট ছিল। পোলাও-মাংস-দৈ। খাওয়া শেষ করে হলের স্টোর থেকে দশ পয়সা দিয়ে একটা ক্যাপসর্টেন সিগারেট কিনে লম্বা টান দিলাম। জীবনের প্রথম সিগারেট। যেখানে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছি, সেখান থেকে তিনটা ডেডবড়ি দেখা যাচ্ছে। আমি বিকারশূন্য অবস্থায় সিগারেট টানছি। যেন আশেপাশের জগতের সঙ্গে আমার কোনো যোগ নেই। আমি সিস্টেমের ভেতরের কেউ না। আমি সিস্টেমের বাইরের একজন।
তার পরদিন দুপুরে আরেকটি ঘটনা ঘটল মহসিন হলের পাশেই জিন্নাহ হল। জিন্নাহ হলের পাঁচতলায় একজন এনএসএফ নেতার ঘরে সতেরো-আঠারো বছরের এক তরুণী। এক পর্যায়ে এই তরুণী নিজেকে বাঁচানোর জন্যে পাঁচতলার জানালা থেকে লাফ দিয়ে পড়ল। সঙ্গে সঙ্গেই মারা গেল। কাকতালীয়ভাবে এই মেয়েটির নামও নাদিয়া। অনেকের সঙ্গে আমিও মেয়েটিকে দেখতে গেলাম। মধ্যবিত্ত ঘরের মায়া মায়া চেহারার এক তরুণী। চোখে কাজল দেওয়া। তার গায়ে গাঢ় নীল রঙের শাড়ি। নীল শাড়ির ওপর রক্ত ভেসে উঠছে। সালভাদর দালিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, সৌন্দর্য কী?’
তিনি বলেছিলেন, সৌন্দর্য হচ্ছে রঙের সঙ্গে রঙের খেলা।
যে ছাত্রের ঘর থেকে লাফিয়ে পড়ে মেয়েটি মারা গেল, তার কিছুই হলো না। সে বহাল তবিয়তে বাস করতে লাগল। তার একটা ভারী মোটর সাইকেল ছিল। সে বিকট শব্দে মোটর সাইকেলে করে ঘুরতে লাগল।
মহসিন হলের ক্যান্টিনে সে কিছু বন্ধুবান্ধব নিয়ে খেতে বসেছে। আমি তাদের পাশের টেবিলে আছি। তাদের আলোচনা শুনছি। আলোচনার বিষয়বস্তু রাশিয়ান ছবি ‘Baliad of a Soulder’। মোটরসাইকেলওয়ালা নাকি এই ছবি পাঁচবার দেখেছে। এবং প্রতিবারই কেঁদেছে।
পাঠ্যবই পড়তে কারোরই ভালো লাগার কথা না। শুকনা বই থেকে বিদ্যা আহরণ। সন্ধ্যার পর দরজা লাগিয়ে এই কাজটি নিয়মিত করি। আমাকে খুব ভালো রেজাল্ট করে পাশ করতে হবে। বাবার স্বপ্ন CSP অফিসার হওয়ার চেষ্টা চালাতে হবে। শুনেছি cSP-দের ইংরেজির ভালো দখল থাকতে হয়। হলের রিডিংরুমে পত্রিকা আসে। প্রায়ই গম্ভীর মুখে Observer পত্রিকার এডিটরিয়েল পড়ি। ইংরেজি শেখার জন্যে না-কি এডিটরিয়েলের বিকল্প নেই। ইংরেজি গল্পউপন্যাসও পড়ি। পড়ার আনন্দের জন্যে পড় না, ইংরেজি শেখার জন্যে পড়া।
দেশ যখন সংঘাতের দিকে যাচ্ছে, স্বাধীন বাংলাদেশের বীজ বোনা হচ্ছে, তখন আমি চোখ বন্ধ করে পাকিস্তানের অফিসার হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
নাদিয়া লেখিকা হতে চায় এই বিষয়টা আমাকে অবাক করেছে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, প্রফেসর এইসব হওয়া যায়। লেখক কি হওয়া যায়? লেখক হওয়ার সুযোগ থাকলে ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনার ব্যবস্থা থাকত। আগ্রহীরা ঔপন্যাসিক হবার ক্লাসে অনার্স নিত।
নাদিয়ার চিঠি কি কোনোভাবে আমাকে প্রভাবিত করেছিল? মনে হয় করেছে। এক হরতালের দিনে আমি দরজা বন্ধ করে একটা ছোটগল্প লিখে ফেললাম। নাম ‘গন্ধ। লেখা শেষ করে নিজে পড়লাম। আমার পাশের রুমে থাকতেন ফিজিক্সের ছাত্র আনিস সাবেত। তাকে পড়তে দিলাম। তিনি বললেন, গল্পের নাম ‘গন্ধ না দিয়ে দুর্গন্ধ দিলে ভালো হতো। গল্প থেকে দুর্গন্ধ আসছে।
গল্প ছিড়ে কুটিকুটি করে কেমিস্ট্রিতে মন দিলাম।
বাইরে অশান্ত নগরী। মিটিং, মিছিল, হরতাল। আমার জীবন তরঙ্গহীন। ক্লাস থাকলে ক্লাসে যাই। ক্লাস না থাকলে দরজা বন্ধ করে ঘরে বসে থাকি। নিউ মার্কেটের ভেতর একটা চায়ের দোকান আছে, নাম “লিবার্টি কাফে’। এই কাফেতে চা ছাড়াও মহার্ঘ পানীয় কফি পাওয়া যায়। চায়ের দাম দুআনা, কফি আট আনা। আমার খুব যখন মেজাজ খারাপ থাকে, তখন লিবার্টি কাফেতে কফি খেতে যাই। একটা বইয়ে পড়েছি কফি এবং চকলেট মেজাজ ঠিক করে একদিন লিবার্টি কাফেতে কফি খেতে গেছি। কেবিন থেকে একজন কেউ ডাকল, হুমায়ূন, চলে আসেন।
তাকিয়ে দেখি মনিরুজ্জামান ভাই। NSF-এর পাতিনেতা। সঙ্গে অনেকে আছেন। দোলনকে চিনলাম। ভয়ে বুক কেঁপে গেল। কেবিনে যাওয়ার অর্থই হয় না। না গিয়েও উপায় নেই।
আমি কেবিনে ঢুকলাম। মনির ভাই পরিচয় করিয়ে দিলেন। ব্রিলিয়ান্ট ছেলে। স্ট্যান্ড করা। হিপনোটিজম জানে। ম্যাজিক জানে।
দোলন বিরক্ত চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন, কাটলেট খাবেন?
আমি বললাম, না।
অন্য কিছু খাবেন?
না।
দোলন আমাকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় মন দিলেন। আলোচনার বিষয় NSF দুই ভাগে ভাগ হয়ে ভালো হয়েছে। ভাগাভাগি আরও আগে হওয়াই উচিত ছিল।
NSF দুই ভাগে ভাগ হয়েছে এই তথ্য আমি জানতাম না। লিবার্টি কাফেতে ঢোকার কারণে জানলাম NSF-এর এক ভাগ আয়ুবপন্থী এবং পুরোপুরি পাকিস্তানপন্থী। তাদের প্রধান জমির আলী। দ্বিতীয় ভাগের প্রধান দোলন। তারা মোনায়েম-বিরোধী।
এই সময় আমার এক বন্ধু জনৈকা তরুণীর প্রেমে পড়ল। তরুণীর নাম রূপা। বন্ধুর প্রেমপত্র লিখে দেওয়ার পবিত্র দায়িত্ব পড়ল আমার হাতে। রূপার চিঠি সে আমাকে এনে দেয়। আমি আগ্রহ নিয়ে পড়ি। উত্তর লিখতে বসি। চিঠি চালাচালি চলতে থাকে। রূপা আমাকে চেনে না। আমিও তাকে চিনি না। গভীর আগ্রহ এবং আনন্দ নিয়ে তাকে চিঠি লিখে যাই। মাতাল সময়ে লেখা প্রেমপত্রগুলিই হয়তোবা আমার প্রথম সাহিত্যকর্ম।
আমার বন্ধুর সঙ্গে রূপা মেয়েটির বিয়ে হয়নি। আমার বন্ধু তার পরিচিত এক আত্মীয়াকে বিয়ে করে শ্বশুরের পয়সায় ইংল্যান্ড চলে গেল। তার বিয়ের দাওয়াতে কুমিল্লা গিয়েছিলাম। বিয়ের আসরে বন্ধুপত্নীকে দেখে ধাক্কার মতো খেলাম। অতি স্বাস্থ্যবতী কন্যা। মাথা শরীরের তুলনায় ছোট। মেয়েটিকে অত্যন্ত আনন্দিত মনে হলো। সে সারাক্ষণই হাসছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই মেয়েটির সারাক্ষণ হাসির কারণ বের করলাম। তাঁর দাত মুখের বাইরে। ঠোট দিয়েও সেই দাত ঢেকে রাখা যায় না।
রূপাকে আমি দেখি নি। তার ছবি দেখেছি। কী মিষ্টি কী শান্ত চেহারা! পটে আঁকা ছবি। রূপা যেন হারিয়ে না যায় তার জন্যেই হিমুর বান্ধবী হিসেবে আমি তাকে নিয়ে আসি। হিমুকে নিয়ে লেখা প্রতিটি উপন্যাসে রূপা আছে।
আমরা কাউকেই হারাতে চাই না, কিন্তু সবাইকেই হারাতে হয়।