১০. প্রণয় মধুর হোক
স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে একটা ব্যাপার ঘটে। ব্যাপারটা সূক্ষ্ম, কিন্তু তারা সবাই গভীর ভাবেই সেটা অনুভব করে। ছাত্র-ছাত্রীরা আর মাত্র দিন কয়েক পরই ডিগ্রী পাবে, পরস্পরের সাথে আশ্চর্য একটা ঘনিষ্ঠতা, প্রায় স্পর্শযোগ্য ভালোবাসা অনুভব করে। তারা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছিল, কেউ কাউকে চিনতো না, এখানে না এলে জীবনে হয়ত কারো সাথে কারো দেখাও হতো না কোনোদিন। এই ক’বছর এক সাথে লেখাপড়া করার পর আবার তারা কে কোথায় চলে যাবে, আর হয়ত কারো সাথে কারো দেখাই হবে না। অথচ এই ঘনিষ্ঠতা আর ভালোবাসার অনুভূতি সহজেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে পরে যদি আবার কখনো কারো সাথে কারো দেখা হয়।
যুদ্ধের নিবিড় অভিজ্ঞতা অর্জনের পর সৈনিকরাও পরস্পরের সাথে এরকম আশ্চর্য ঘনিষ্ঠতা আর একাত্মতা বোধ করে থাকে। একই অভিজ্ঞতা হয় দুর্ঘটনাবশত কোনো ঘরে বা এলিভেটরে আটকা পড়া একদল লোকের।
মেডিটেশন বা ধ্যানের জগতে আরো একটা ব্যাপার ঘটে। গভীর এবং দীর্ঘ মেয়াদী ধ্যানমগ্ন অবস্থায় যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয় মনের সাথে মনের। ধ্যানমগ্ন অবস্থায়। আমাদের মন অত্যন্ত সংবেদনশীল হয়ে ওঠে, তার গ্রহণ ক্ষমতা অস্বাভাবিক বেড়ে যায়, এই সুযোগে আরেকটা মন এসে ছুঁয়ে যায় তাকে আলতোভাবে। আপনার মনের সাথে কার মনের যোগাযোগ হয়? যাকে আপনি ভালোবাসেন, যার সাথে আপনার সারা জীবনের বন্ধন রয়েছে, এ তার মন।
দাম্পত্য জীবনের সবচেয়ে শক্ত ভিত ঘনিষ্ঠতা। ঘনিষ্ঠতা মানে পরস্পরের একান্ত ব্যক্তিগত, স্পর্শকাতর ব্যাপারে নাক গলানো নয়। গভীর সমঝোতা-বোধ আর অন্তরের অন্তস্তল থেকে উঠে আসা দরদ এবং মেনে নেয়ার আগ্রহ থেকেই ঘনিষ্ঠতার জন্ম।
এই ঘনিষ্ঠতাকে আরো নিবিড় এবং মধুর করার জন্যে আপনি ধ্যান পদ্ধতির সাহায্য নিতে পারেন। মনের গভীর স্তরে দুই মনকে এক করা সম্ভব। সুখী হওয়ার জন্যে দম্পতিদের সেই পরামর্শ দেবো–শুধু বিটা লেভেলে নয়, আলফা লেভেলেও আপনারা দু’জন মিল ঘটান মনের।
পদ্ধতিটা সহজ, অনুশীলন করা কোনো সমস্যা নয়।
পরস্পরের সম্মতি আছে এমন একটা জায়গা বেছে নিন, যেখানে থাকলে আপনারা দু’জনেই খুশি হন, স্বস্তি বোধ করেন এবং শান্তি পান। মাঝে মধ্যে আপনারা যেখানে ছুটিতে বেড়াতে যান, এই রকম, একটা জায়গা হতে পারে। কিংবা যেখানে গেলে মধুর অনেক স্মৃতির কথা মনে পড়ে যায়, সেই জায়গাটা বেছে নিন। দু’জনেরই অচেনা একটা জায়গা হলেও চলবে। কিন্তু, এমন একটা জায়গা বেছে নেবেন না যেখানে আপনাদের মাত্র একজন গেছেন বা একজন চেনেন। এ-ধরনের জায়গায় দু’জনের অভিজ্ঞতা দু’রকম হবার ভয় আছে, সমান হারে অংশ গ্রহণের পথে একটা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে ব্যাপারটা।
আরাম করে কাছাকাছি বসুন, চোখ বুজে শরীর ঢিল করে দিন। তারপর যে-যার লেভেলে চলে যান। একজন অপরজনকে সাহায্য করতে পারেন আরও গভীর স্তরে পৌঁছতে। বলুন: আমি দশ থেকে এক পর্যন্ত গুণবো এখন। আমি প্রতিটি সংখ্যা উচ্চারণ করার সাথে সাথে তুমি অনুভব করবে, মনের গভীর স্তরে চলে যাচ্ছো, পৌঁছে যাচ্ছে ধ্যানমগ্নতার গভীরে। দশ-নয়–অনুভব করো গভীরে নেমে যাচ্ছো–আট সাত–ছয়-গভীর থেকে গভীরে, আরো গভীরে–পাঁচ–চার–আরো, আরো গভীরে তিন–দুই-এক। তুমি এখন শান্ত এবং শিথিল, পৌঁছে গেছে মনের গভীর স্তরে। এবার তুমি আমাকে সাহায্য করবে, ওখানে পৌঁছে তোমার সাথে মিলিত হবো আমি।
অপরজন বলবে, আমি ধীরে ধীরে দশ থেকে এক পর্যন্ত গুণতে যাচ্ছি, আমি প্রতিটি সংখ্যা উচ্চারণ করার সাথে সাথে তুমি অনুভব করবে মনের গভীর স্তরে চলে যাচ্ছো, পৌঁছে যাচ্ছো ধ্যানমগ্নতার গভীরে। দশ–নয়–অনুভব করো আমার সাথে
গভীরে নেমে যাচ্ছো–আট–সাত–ছয়–আরো, আরো গভীরে, দুজন একসাথে পাঁচ–চার–আরো গভীরে, আরো কাছে–তিন–দুই-এক। আমরা দুজনেই এখন। আনন্দময় বিশ্রামের মধ্যে রয়েছি, নেমে এসেছি মনের গভীর স্তরে।
ইচ্ছে করলে এই অবস্থায় চোখ খুলেও রাখতে পারেন। চোখ বন্ধ থাকলেও ক্ষতি নেই। দুজনেই মনে মনে বলুন: আমার জীবনের সবচেয়ে বড় চাওয়া, তোমাকে সুখী করা; এবং শুধু তারপরই নিজেকে আমি সুখী করতে চাই। আমার প্রতিজ্ঞা, তোমাকে। আমি যেভাবে হোক সুখী করবো। এবং শুধু তারপরই নিজের কথা ভাববো। আসলে তোমাকে আমি ভালবাসি, তোমার সুখই আমার সুখ।
পরপর কয়েকবার বলুন কথাগুলো। তারপর ফিরে আসুন বিটা লেভেলে।
অনুশীলনটা তো পড়লেন। পড়ার সময় যা মনে হলো, তারচেয়ে অনেক, অনেক বেশি শক্তিশালী একটা অভিজ্ঞতা এটা। একটিবার চর্চা করার পরই এর উপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের মনে বিশ্বাস জন্মে যাবে। এই অনুশীলনের পদ্ধতিটা আপনারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে এক-আধটু হয়ত বদলে নেবেন, তাতে কোনো ক্ষতি নেই। আপনাদের দু’জনের মধ্যে যদি নির্দিষ্ট কোনো সমস্যা থাকে, সাজেশন দেয়ার সময় সেটার সমাধানও চাইতে পারেন।
বিটা লেভেলে মনের মিল ততোটা শক্তিশালী হতে পারে না। শত বিপদেও ছিঁড়বে না, এই রকম শক্ত বাঁধন যদি চান, ধ্যানমগ্ন হয়ে পরস্পরের মনের মিল ঘটান। দেরি করবেন না।