১০. নিশাত খুব ভোরবেলায় তার মার বাড়িতে

নিশাত খুব ভোরবেলায় তার মার বাড়িতে চলে এল। মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বাবাকে ধরা।

ফরহাদ সাহেব সকাল আটটার আগেই বাড়ি থেকে বের হন। রিটায়ার করার পর বিদেশি এক কোম্পানিতে কনসালটেন্সি করেন। ওদের অফিস শুরু হয় আটটায়।

গেট খুলে নিশাত অবাক হয়ে গেল। বারান্দায় তার বোন মীরু। ছবছর পর দেখা। এরা থাকে নিউজার্সিতে। দেশে যে বেড়াতে আসবে এরকম কোনো আভাস চিঠিপত্রে ছিল না।

নিশাত ছুটে এসে মীরুকে জড়িয়ে ধরল। মীরু বলল, দম বন্ধ করে মারবি নাকি? ছাড় তো!

না, ছাড়ব না।

নিশাত আনন্দে কেঁদে ফেলল। মীর হাসতে-হাসতে উচু গলায় বলল, এই, তোমারা সবাই এসে দেখে যাও নিশাত কেমন ভ্যাভ্যা করে কাঁদছে। এই মেয়েটা দেখি বড় হল না! মীরুর নিজের চোখ ভিজে গেল। কত দিন পর দেখছে নিশাতকে। খুব সখ ছিল ওদের বিয়ের সময় থাকবে। আসা হয় নি।

মীরুর স্বামী ইয়াকুব বেরিয়ে এসেছে। সে হাসিমুখে বলল, নিশাত, এবার তোমার দুলাভাইকে জড়িয়ে ধরে খানিকক্ষণ কাঁদ। তাকেও তো তুমি অনেক দিন পর দেখছ।

আপনারা কখন এসেছেন দুলাভাই?

ঢাকা এয়ারপোর্টে এসে পৌছলাম রাত দটায়। বেরুতে-বেরুতে সাড়ে তিন। সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যে কাউকে কোনো খবর দেওয়া হয় নি। কাজেই এয়ারপোর্ট থেকে শহরে আসার কোনো ট্রান্সপোর্ট নেই। মহা যন্ত্রণা! তোমরা দুবোন পরস্পরের দুঃখের আলাপ কিছু করে নাও। তারপর আমি কথা বলব। এক কাজ কর, একটা ঘরে ঢুকে যাওবাইরে থেকে আমি দরজা বন্ধ করে দি।

নিশাত বলল, বাচ্চারা কোথায়?

ওদের আনি নি। স্কুল খোলা। বাংলাদেশের স্কুল তো না, যে অ্যাবসেন্ট করা যাবে।

ক দিন থাকবে?

গুনে গুনে দশ দিন। আজকের দিন চলে গেলে থাকবে ন দিন। কাজেই তুই তোর বরকে নিয়ে চলে আয়। এই দশ দিন একসঙ্গে থাকব। তোর বরটা কেমন?

ভালো।

শুকনো মুখে ভালো বলছিস কেন, জোর করে বল। মা বলছিলেন, একটু নাকি গম্ভীর টাইপের, অমিশুক। শ্বশুরবাড়িতে বিশেষ আসেটাসে না।

নিশাত জবাব দিল না। তার একটু মন-খারাপ হল। মা জহিরকে তেমন পছন্দ করেন না। করতেই যে হবে তেমন কথা নেই, কিন্তু যার সঙ্গে দেখা হয় তার সঙ্গেই প্রথমে নিজের অপছন্দের কথাটা বলেন। মীরু আপাকে আসতে-না-আসতেই বলেছেন। দু-একটা দিন অপেক্ষা করতে পারলেন না।

নিশাত, তোর বরকে ইয়াকুবের সঙ্গে জুড়ে দেব, দেখবি সাত দিন তাকে সামাজিক বানিয়ে ছেড়ে দেবে।

সব জামাই কি আর এক রকম হয় আপাং মার বড় দুলাভাইকে মনে ধরেছে, আর কাউকে তাঁর পছন্দ হবে না।

তোর নিজের কি হোর বরকে পছন্দ হয়েছে?

হ্যাঁ, হয়েছে।

গুড। আর কারো পছন্দ হোক না-থোক তাতে কিছু যায়-আসে না। দাঁড়া তোর দুলাভাইকে পাঠিয়ে দিই, জহিরকে নিয়ে আসবে।

কাউকে পাঠাতে হবে না, খবর দিলে নিজেই চলে আসবে।

না, ও গিয়ে নিয়ে আসবে। তোর জন্যে চমৎকার গিফট এনেছি। তোর দুলাভাই পছন্দ করে কিনেছে। বিয়ে উপলক্ষে গিফট। আন্দাজ কর তো কী?

আন্দাজ করতে পারছি না।

দাঁড়া, এখানে আমি নিয়ে আসছি। তার আগে আমার গালে একটা চুমু খা তো।

নিশাত মীরুর গালে চুমু খেল। আবার তার চোখে পানি এসে গেল। মীরু বলল, তোর পাশের ফ্ল্যাটের একটা মেয়ে নাকি রেড় হয়েছে? তুই খুব ছোটাছুটি করছিস?

কে বলেছে?

না, মার কাছে শুনলাম। তুই সাবধানে থাকবি। কেমন ফ্ল্যাট তোদর? ভালো প্রিকশন নেই। ঐ ফ্ল্যাট তুই ছেড়ে দে। অসম্ভব, ওখানে তোক যেতেই দেব না।

নিশাত মুগ্ধ হয়ে মীরুকে দেখছে। কেমন হড়বড় করে কথা বলছে। কী সুন্দর লাগছে আপাকে। গিফট দেখাবার কথা বলেছে, এখন আর তা তার মনে নেই।

নিশাত রান্নাঘরে উঁকি দিল। মা খুব ব্যস্ত। রাজ্যের রান্না মনে হচ্ছে এক দিনে বেঁধে ফেলবেন। তাঁর মুখ আনন্দে ঝলমল করছে। তিনি এক বার শুধু নিশাতের দিকে তাকিয়ে আবার ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।

এত আয়োজন কি শুধু সকালের নাশতার মা?

হ্যাঁ, তুই জহিরকে আনবার জন্য গাড়ি পাঠিয়ে দে।

গাড়ি পাঠাতে হবে না, আমি টেলিফোন করছি, চলে আসবে।

নিশাত তার বাবার খোঁজে গেল। তাঁকে পাওয়া গেল না। তিনি কিছুক্ষণ আগে বেরিয়ে গেছেন। নিশাত জহিরকে টেলিফোন করল।

হ্যালো, তুমি এখানে চলে এস।

কেন বল তো!

আপা আর দুলাভাই এসেছেন আমেরিকা থেকে।

তাই নাকি? হ্যাঁ, সারপ্রাইজড ভিজিট। তুমি চলে এস। অফিসে যেতে হলে এখান থেকে যাবে।

আসছি। নিশাত শোন, ঐ মেয়েটি, মানে পুষ্প, বেশ কয়েক বার এসে তোমার খোঁজ করে গেছে।

কিছু বলেছে?

না, বলে নি।

তুমি কি আসবার সময় জিজ্ঞেস করে আসবে কী ব্যাপার?

জহির কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, আমার কিছু জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা করছে। না। তুমি ইনভলব্‌ড্‌ হয়েছ এই যথেষ্ট। পুরো পরিবারসুদ্ধ ইনভলব্‌ড্‌ হবার কোন কারণ দেখি না।

ইনভলব্‌ড্‌ হবার তো কথা হচ্ছে না। তুমি শুধু জিজ্ঞেস করবে কী ব্যাপার?

এর মধ্যে যদি এখানে আসে তা হলে জিজ্ঞেস করব। আমি নিজে গিয়ে জিজ্ঞেস করতে পারব না।

আচ্ছা, তাই করো।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *