দরজা জানালা সব বন্ধ। প্রতিটি বন্ধ জানালায় ভারী পর্দা ঝুলছে। দিনের আলোতেও ঘর অন্ধকার। সামান্য যে আলো আসছে সে আলোও আলাউদ্দিন সহ্য করতে পারছেন না। আলো পড়লেই চোখ জ্বলে যাচ্ছে এ রকম হয়। একটা ভেজা তোয়ালে সারাক্ষণ তাকে চোখের উপর দিয়ে রাখতে হয়।
বাথটাব ভর্তি পানির ভেতর সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে আলাউদ্দিন শুয়ে আছেন। অনেকদিন ধরেই এই অবস্থায় আছেন। তাঁর সমস্ত শরীর ফোসকায় ভরে গেছে। কিছু ফোসকা ফেটে ভেতরের পোকা বের হয়ে বাথটাবের পানিতে কিলবিল। করছে।
তীব্র যন্ত্রণায় আলাউদ্দিনের সমস্ত চেতনা আচ্ছান্ন। তিনি সারাক্ষণই চাপা আওয়াজ করেন। দূর থেকে সেই আওয়াজকে কুকুরের ঘড়ঘড় শব্দের মতো শোনায়। তার ক্ষুধা তৃষ্ণার সমস্ত বোধ লোপ পেয়েছে। তার কাছে এখন মনে হয় তিনি খুব ধীরে ধীরে নিচের দিকে নেমে যাচ্ছেন। যাত্রা শুরু হয়েছে অতল কোনো গম্বরের দিকে। সেই অতল গহ্বরে কিছু একটা অপেক্ষা করছে তার জন্যে। সেই কিছুটা কী?
বাথরুমের দরজা ধরে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। আলাউদ্দিনের চোখ বন্ধ। বন্ধ চোখের উপর ভেজা তোয়ালে। তারপরেও তিনি টের পেলেন কেউ একজন এসেছে। আলাউদ্দিন ভাঙা গলায় বললেন, কে?
জবাব দিল কুটু। নিচু গলায় বলল, স্যার আমি।
আলাউদ্দিন বললেন, কী চাও কুটু?
কুটু শান্ত গলায় বলল, চইলা যাইতেছি স্যার। আপনার কাছ থেইকা বিদায়। নিতে আসছি।
আলাউদ্দিন বললেন, আচ্ছা।
বেতনের টাকাটা শুধু নিছি। বাকি টাকা সুটকেসে আছে।
আচ্ছা।
স্যার তাইলে যাই?
যাও। তোমার রান্নায় তোমার সেবায় আমি সন্তুষ্ট। যদি ক্ষমতা থাকতো পাইলট সাহেবের মতো তোমাকে একটু সার্টিফিকেট দিতাম। আমার ক্ষমতা নাই।… কুটু!
জ্বি স্যার।
যাবার আগে একটা ছোট্ট কাজ করে দিয়ে যাও। খুব ভারী একটা তালা বাড়ির দরজায় লাগিয়ে দিয়ে যাও। যেন কেউ ঢুকতে না পারে। আমি চাই না আমাকে এই অবস্থায় কেউ দেখুক।
জ্বি আচ্ছা স্যার।
আলাউদ্দিনের চোখ বন্ধ। চোখ খোলা থাকলে তিনি দেখতে পেতেন কুটু বড় একটা তালা হাতে নিয়েই দাঁড়িয়ে আছে। তাকে ঘরে তালা দিয়ে বলা হবে এটা যেন সে জানত। কুটুর মুখ বিষণ্ণ। বেদনায় কাতর।
আমি নিশ্চিত লেখকের মাথার মধ্যে পোঁকা হইছিল বলেই এমন আচগবি বই লেখা সম্ভব!