থানার সামনে পর্যটনের এসি বসানো মাইক্রোবাস অপেক্ষা করছে। মাইক্রোবাসের পেছনে একটি পাজেরো গাড়ি। পাজেরোতে সুলেমান অপেক্ষা করছে। সে টেকনাফ পর্যন্ত যাবে। সুলেমানের সঙ্গে আরো দুজন। এই দুজনের চোখ ছোট ছোট, হাবভাব কেমন কেমন। এরা কখনো চোখে চোখে তাকায় না। কথা বলে মাটির দিকে তাকিয়ে। দুজনের গায়েই চামড়ার জ্যাকেট। থানার বারান্দায় রফিক সাহেবও হাঁটাহাটি করছেন।
শুভ্ৰ বের হতেই রফিক সাহেব এগিয়ে গেলেন। শুভ্ৰ বলল, আপনি এখানে?
রফিক সহজভাবে বললেন, টিচাগাং-এ একটা কাজ ছিল–এসেছিলাম। আজই ঢাকা ফিরে যাব। ভাবলাম, আপনার সঙ্গে দেখা করে যাই। স্যারকে কিছু বলতে হবে?
না, কিছু বলতে হবে না।
আপনারা কি আজ রাতটা চিটাগাং থাকবেন। নাকি রাতেই কক্সবাজার চলে যাবেন?
বুঝতে পারছি না। আমার বন্ধু রানা এইসব দেখছে। সে যা ঠিক করে, তাই।
সুলেমান একটা ব্যবস্থা করে রেখেছে। আমার মনে হয়। সেইটাই ভালো ব্যবস্থা হবে। ছোটখাটো সমস্যা যেহেতু হচ্ছে …
কী ব্যবস্থা?
পর্যটনের মাইক্রোবাস যাবে। আপনারা সবাই বেশ আরাম করে যেতে পারবেন। পেছনে পেছনে সুলেমান যাবে পাজেরো জিপ নিয়ে। দুজন বডিগার্ডও আছে। এ ছাড়াও এসপি সাহেবের সঙ্গে ক্থা হয়েছে। তিনি পুলিশ এসকর্টর ব্যবস্থা করেছেন। পুলিশের একটা জিপ আগে যাবে। টেকনাফ পৰ্যন্ত যাবে। আমি বলছি কি- আপনারা সবাই খাওয়াদাওয়া করে মাইক্রোবাসে উঠে বসুন এবং এক টানে চলে যান টেকনাফ। এটাই সবচে ভালো বুদ্ধি।
ভালো বুদ্ধি মন্দ বুদ্ধি না। আমাদের টিম লিডার হলো রানা। ও যা বলে তাই করা হবে। আপনি গাড়ি-টারি নিয়ে চলে যান।
জি, আচ্ছা।
আর সুলেমানকে বলুন সে যেন আর আমার পেছনে পেছনে না আসে।
জি আচ্ছা, বলে দিচ্ছি। আপনাদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাটা শুধু করি।– সারা দিন খান নি, আমারই খারাপ লাগছে।
কিছু করতে হবে না।
আমি ব্যবস্থা করে রেখেছিলাম।
না। প্লিজ না।
খাবারগুলি প্যাকেট করে পৌঁছে দিই?
আপনাকে কিছু করতে হবে না।
আমি কি তাহলে চলে যাব?
হ্যাঁ, চলে যাবেন। দলবল নিয়ে যাবেন! Leave uns alone.
জি আচ্ছ। আপনার খুব কষ্ট হলো।
কষ্ট কিছু হয় নি। আমি অনেক কিছু শিখেছি। রফিক সাহেব, আপনার সঙ্গে কি সিগারেট আছে? একটা সিগারেট দিন তো।
রফিক বিস্মিত হয়ে তাকালেন। তার কাছে সিগারেট ছিল না। তিনি সিগারেট আনতে নিজেই চলে গেলেন। শুভ্ৰ দাড়িয়ে আছে।
হাজতের দরজা খোলা হয়েছে। ওসি সাহেব দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি আনুশকার দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনারা বের হয়ে আসুন।
আমাদের কি ছেড়ে দিচ্ছেন?
জি।
জরীর কী হবে? ও কি ঐ বান্দমাশটার সঙ্গে যাবে, না। আমাদের সঙ্গে যাবে?
সেটা উনি ঠিক করবেন। উনি যদি আপনাদের সঙ্গে যেতে চান, তাহলে যাবেন। আবার যদি মনিরুজ্জামান সাহেবের সঙ্গে যেতে চান, তাও যেতে পারেন।
থ্যাংক য়্যু ওসি সাহেব। আপনি কি আরেকটা ছোট্ট কাজ করবেন?
কাজটা কী বলুন, দেখি পারি কি-না।
আমি এই পাগলীটাকে সঙ্গে নিয়ে যেতে চাই।
ওকে নিয়ে কী করবেন? আমি ওর চিকিৎসা করাব। সুস্থ করে তুলব।
মিস আনুশকা, এইসব সখ ক্ষণস্থায়ী হয়। কিছুদিন পর দেখবেন অসহ্য বোধ হচ্ছে। না পারছেন গিলতে, না পারছেন উগরে ফেলে দিতে। বরং সে এখানে থাকুক। আমি কোনো—একটা মহিলা সংগঠনে পাঠিয়ে দেব। যোগাযোগও করছি।
আমার সঙ্গে দিয়ে দিতে আইনগত কোনো বাধা আছে?
না, আইনগত কোনো বাধা নেই।
তাহলে ও আমাদের সঙ্গে যাচ্ছে।
ওসি সাহেব হেসে ফেললেন। আনুশকা বলল, মেয়েটার নাম কী?
ওর নাম-টাম নেই—বা থাকলেও এখন কেউ জানে না।
না থাকলেই ভালো। আমি ওর নতুন একটা নাম দেব।
নইমা ঘুমুচ্ছে। মুনা অনেক চেষ্টা করেও তার ঘুম ভাঙাতে পারছে না। আনুশকা বলল, মুনা ভালো করে দেখ, মরে-টরে যায় নি তো?
মুনা হেসে উঠল খিলখিল করে। মুনার সঙ্গে পাগলীটাও হাসতে শুরু করল। তার হাসি আর থামে না। হাসির শব্দে ঘুম ভাঙল নইমার। সে হতচকিত গলায় বলল, কী হয়েছে? কী হয়েছে? মুনা হাসতে হাসতে বলল, আপা, আমাদের ছুটি হয়ে গেছে। আমরা এখন যাচ্ছি।
কোথায় যাচ্ছি?
দারুচিনি দ্বীপ।
আমি কোথাও যাব না। আমি ঢাকা চলে যাব। আনুশকা, আমাকে ঢাকা পাঠাবার ব্যবস্থা কর। অসম্ভব, আমি তোদের সঙ্গে যাব না। মরে গেলেও না। মরে গেলেও না। মরে গেলেও না।
আচ্ছা আচ্ছ, তোকে ঢাকা পাঠাব। এরকম কারিস না তো! গায়ে কি এখনো জ্বর আছে?
মুনা বলল, হ্যাঁ আপা, জ্বর আছে। বেশ জ্বর।