বিকেলবেলা চায়ের টেবিলে শিবেন আবার দেখা পেল সুজিতের। সে জিজ্ঞেস করে জানল, সুনীতার পোর্ট্রেট স্কেচ-এর ব্যাপারটা কী। রঞ্জনের বিষয়েও সে মোটামুটি সুজিতকে জিজ্ঞেস করে জানল, কী কী কথাবার্তা তাদের মধ্যে হয়েছিল। এবং এ কথাও সে শিবেনকে জানাল যে, সে রঞ্জনকে ভালবেসে ফেলেছে।
শিবেন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, তাই নাকি? শেষপর্যন্ত একটা গুণ্ডাকে ভালবাসা? কালাচাঁদের মতো ঘুষি খাবার ইচ্ছে হয়েছে বুঝি?
সুজিত আপন মনেই বলল, রঞ্জন ঠিক পশুর মতোই খেপে যায় যেন।
শিবেন অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। সুজিত যেন এ সময়েই হঠাৎ বিষম খেয়ে বলে উঠল, ওহো, এ কথাটা তো সুনীতাকে বলা হল না।
–সুনীতাকে?নামটা উচ্চারণ করে শিবেনের প্রায় দমবন্ধ হয়ে এল। বলল, সুনীতার সঙ্গে আপনার দেখা হয়েছে নাকি আবার? কবে গেছলেন ওর বাড়িতে, কখন?
সুজিত বলল, আমি তো ওর বাড়ি চিনি না। ও-ই এসেছিল এখানে।
এখানে? এখানে, মানে এ বাড়িতে?
–হ্যাঁ, আপনারা বেরিয়ে যাবার পরেই তো এসেছিল।
শিবেনের কিছুক্ষণ বাক্যস্ফুরণ হল না। সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সুজিতের দিকে তাকাল। যেন সে মিথ্যা বলছে কি না, সেটা যাচাই করতে চায়। জিজ্ঞেস করল, কার কাছে এসেছিল?
–আমার কাছেই এসেছিল, সেইরকমই বলল, দীপুর কাছে সেই স্কেচটা পেয়ে সে না এসে পারেনি।
সুজিতের মনে হল, শিবেনের চোখ দুটি ধকধক করে জ্বলছে। সুজিত সংকুচিত করুণ হেসে জিজ্ঞেস করল, আমার ওপর রাগ হচ্ছে, না?
শিবেন সহসা উঠে দাঁড়াল, তীব্র স্বরে জিজ্ঞেস করল, কেন, আপনার ওপর আমার রাগ হবে কেন?
সুজিত বলল, আপনার মুখ-চোখ দেখে যেন কী রকম লাগছে। আমি কি কোনও অন্যায় করেছি?
শিবেন স্তব্ধ, যেন ক্রুদ্ধ বিস্ময়ে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, আমি আপনাকে ঠিক বুঝতে পারছি না। আপনি শয়তান না মূর্খ ঠিক আন্দাজ করতে পারছি না।
সুজিত বিষঃ হেসে চুপ করে রইল। শিবেন তবু সুজিতকে সহসা ছাড়তে পারল না। জিজ্ঞেস করল, আর কী বলল সুনীতা?
–অনেক কথা। বলল, ও নষ্ট, ভ্রষ্ট। ভাল কোনও কিছুকেই আর বিশ্বাস করতে পারে না। আর আটাশে মার্চ আমাকেও নিমন্ত্রণ করল।
–তাই নাকি?
–হ্যাঁ, ওইদিন নাকি পাঁজিতে পাকা দেখার তারিখ আছে, তাই ওই দিনই ও সব ঠিক বলবে।
পাকা দেখা? বলে শিবেন হো হো করে হেসে উঠল। আবার বলল, আপনাকেও যেতে বলল?
আবার হেসে উঠল, এবং সুজিতের পিঠ চাপড়ে সে বেরিয়ে গেল। তারপরেই এলেন ভুজঙ্গভূষণ। জানালেন, সুজিতের একশো টাকা সবই প্রায় ফুকে দিয়েছেন, এখন আর মাত্র দশ টাকা পড়ে আছে। সুজিত খুব অসহায়ভাবে জানাল, তার কাছে আর টাকা নেই। শুনে ভুজঙ্গভূষণ যেন ব্যথিত বিস্ময়ে জানালেন, সুজিতের কথা শুনে মদ খেতেই নাকি ওঁর লজ্জা করছে।
তারপর সকালবেলা প্রিয়নাথ ও বীরেন্দ্র সবাই কে কী বললেন, সব শুনতে চাইলেন। শোনার পরে একটা ভয়ংকর ইঙ্গিতমূলক কথা তিনি হাসতে হাসতে বললেন। বললেন, আসলে কী জান, ওই বজ্জাত শয়তান মেয়েটাকে শিবেনের সঙ্গে যদি ওরা বিয়ে দিতে পারে, তা হলে মেয়েটা ওদের দখলেইথাকে। মানে বুঝলে না, মধুর ভাণ্ডটা তোমার ঘরে রেখে, আমরা এসে খেয়ে যাব। সুজিতের কান দুটি যেন পুড়ে গেল এ কথায়। সুনীতা ওঁর কাছে কোনও মতেই ভাল হতে পারে না, এটা প্রায় কুসংস্কারের মতো, কিন্তু আর যা বললেন, সেটা একেবারে মিথ্যে ভেবে উড়িয়ে দিতে পারল না সে। কোথায় যেন এর মধ্যে একটা সত্যের ছোঁয়াচ আছে।
.
ইতিমধ্যে টেলিফোনে দোলার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে, দোলা তাকে ডেকে পাঠাল। পর পর দুদিন সুজিত রায়চৌধুরীদের বাড়িতে গেল। কিরণময়ী তাকে ভাল করে খাওয়ালেন, অনেক কথা শুনলেন। এমনকী, সুনীতার বিষয়েও সব কথা। দোলা প্রথমটা একেবারেই থমকে গিয়েছিল, যখন সে শুনল, সুনীতা এসেছিল তার কাছে। নানানভাবে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করে হেসে সে সুনীতার কথা সুজিতকে বলেছে। দু-একবার রাগ করে, কিছুক্ষণের জন্যে কথা বন্ধ করে দিয়েছে, কাছ থেকে উঠে চলে গিয়েছে। আবার ফিরে এসেছে, কথা বলেছে, খিলখিল করে হেসেছে। ক্ষণে ক্ষণে তার নানান পরিবর্তন। মাঝে মাঝে সুজিত বিব্রত হয়ে পড়ে, দোলাকে বুঝে উঠতে পারে না। দোলা তাকে বিস্মিতও করেছে, তার শিক্ষা এবং বিদ্যা দিয়ে। দোলা যে শুধু বুদ্ধিমতী নয়, বিদুষীও, সেটাও সে অনুভব করেছে। দোলা তাকে অনেক গল্প বলেছে নানান বিষয়ে। দেশ বিদেশ ইতিহাস সাহিত্য, অনেক বিষয়ে দোলার সম্যক জ্ঞান তাকে মুগ্ধ করেছে, একই সঙ্গে দোলার, এই সংসারের সকল মালিন্যের বাইরে সুখী পবিত্র জীবনটা তাকে আকর্ষণ করে। দোলার সবথেকে বড় গুণ, ও যে বিরাট ঐশ্বর্যের মধ্যে লালিত হচ্ছে, এ বিষয়ে যেন ওর কোনও ধারণা নেই, কোনও চেতনা নেই। অথচ বীরেন্দ্র রায়চৌধুরীর মেয়ের এটা থাকাই স্বাভাবিক ছিল। ওর শুধু অবাক লাগে, সুনীতা সম্পর্কে সুজিতের কৌতূহল, আবেগ, সুনীতাকে ভাল, দুঃখী, অসহায় বলে ভাবা। তখন যেন দোলারও মনে হয়, সুজিতের মস্তিষ্ক অপরিণত, সে নির্বোধ। অথচ সুজিতকে এই মনে করে শান্তি পায় না। সুজিতও তাকে ব্যাখ্যা করে ঠিক বোঝাতে পারে না।
দ্বিতীয় দিন বিদায় দেবার সময় দোলা নীচে নেমে এসে একটা আশ্চর্য কথা বলল। বলল, আপনি সত্যি সরল, শিশুর মতো। শিশুরা সুন্দর, কিন্তু একটা কথা জানেন তো, অনেক সময় অবুঝ শিশুরা বড় নিষ্ঠুর!
সুজিত হেসে উঠে বলল, ঠিক ঠিক, সত্যি বলেছ। শিশু মাত্রেই অবুঝ আর দায়িত্বহীন, ওরা তো– কিন্তু, কিন্তু
বলতে বলতে সে অবাক হয়ে দোলাকে জিজ্ঞেস করতে গেল, দোলা তাকে কেন এ কথা বলল। ততক্ষণে দোলা ওপরে চলে গিয়েছে, এবং একটা শব্দ পেল সে, ওপরের দরজাটা বন্ধ হয়ে গেল। ইতিমধ্যে বীরেন্দ্রনারায়ণের কানে গিয়েছিল, শিবেনদের বাড়িতে সুনীতা এসেছিল সুজিতের সঙ্গে দেখা করতে। তিনি ফোনে ডেকেছিলেন সুজিতকে, জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন, কেন এসেছিল, কী কথাবার্তা হয়েছে। তিনি শুধু অবাক হননি, মাথামুণ্ডু কিছুই নাকি বুঝতে পারছেন না। কলকাতায় এত লোক থাকতে সুনীতা তার মতো একটা বোকা, মানে যাকে বলে অপরিণত মস্তিষ্কের ছেলের সঙ্গে এত কথা বলতে যাচ্ছে কেন। সুজিত জানিয়েছে, সেটা সে সব ঠিক বুঝিয়ে বলতে পারছে না। বীরেন্দ্র বিস্মিত ও বিরক্ত হয়ে ফোন ছেড়ে দিয়েছেন।
এদিকে, দীপু সেই যে বাড়ির ভিতরে চলে গিয়েছিল, তারপর থেকে খুব সন্তর্পণে সুজিতকে এড়িয়ে চলেছে। সে কখন স্কুলে যাচ্ছে, বাড়ি আসছে, কিছুই টের পাওয়া যাচ্ছে না। দু-একবার যদি বা মুখোমুখি দেখা হয়ে গিয়েছে, দীপু কথা না বলেই পালাতে চেয়েছে। সুজিত দু-একটা কথা জিজ্ঞেস করেছে, জবাব পেয়েছে কাটা কাটা বিচ্ছিন্ন। অথচ সুজিত লক্ষ করেছে, দীপু তাকে দূর থেকে লুকিয়ে দেখে। সে যখন হাঁটতে হাঁটতে মল্লিক বাজারের কবরস্থান আরও পেরিয়ে ল্যান্সডাউনের দিকে বেড়াতে যায়, তখন সে ছায়ার মতো অনুসরণ করে। তবু কাছে আসবে না। একটা বিষয় সুজিত আবিষ্কার করেছে, তার সুনীতাদির সম্পর্কে যারাই উৎসাহী, তারা সবাই মন্দ, সবাই ফেরেব্বাজ। শুধু তাই নয়, এই বয়ঃসন্ধিক্ষণের দীপুর মনে কোথায় একটা ঈর্ষাবোধও আছে ওর সুনীতাদির জন্যে। সুনীতার কাছে। প্রবেশাধিকার দিতে কাউকেই রাজি নয় সে। এই কথাটা ভাবতে সুজিতের ভাল লাগে। এই ঈর্ষার মধ্যে একটা সৌন্দর্য আছে।
আটাশে মার্চের এখনও দিন ছয়-সাতেক দেরি আছে। এই দিনটার কথা বারে বারে ঘুরে ফিরে সুজিতের মনে আসে। একটি যন্ত্রণাদগ্ধ অসহায় প্রাণকে সে প্রতি মুহূর্তে পীড়িত হতে দেখছে যেন, এবং তাকে নিজের বাহুডোরের মধ্যে নিয়ে একটু স্নেহ করতে ইচ্ছে করে। যেমন বাসা-ছাড়া একটি পক্ষীশাবককে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে ইচ্ছে করে। তারপর সে নিজের দিকে তাকিয়ে ভাবে, আমার ওপরে মানুষ কতটুকুই বা ভরসা করতে পারে।
এই সব ভাবনা সে যেদিন ভাবছিল, সেইদিনই প্রাক্-সন্ধ্যায়, উত্তরের খোলা জানালা দিয়ে উঠোনের ওপর মানুষের চলমান জীবনের নানান ছবি দেখছিল। সেই সময়, হঠাৎ তার গায়ে একটি কাগজের টুকরো এসে পড়ল। পিছন ফিরে সে কাউকে দেখতে পেল না। কোলের ওপর দেখল একটি চিরকুট। নিয়ে সে পড়তে লাগল। যদিও কোনও সম্বোধন ছিল না। তাতে লেখা ছিল, তুমি কে, তা বুঝতে পারছি না। তুমি কোথা থেকে এলে, তাও বুঝতে পারছি না। মনে হচ্ছে যেন, সেদিন ট্রেনে, তোমার কামরায়, আমার নিয়তিই আমার হাত ধরে তুলে দিয়ে এসেছিল। আমি সব দেখেছি, সেই যে আমার অহংকার, তুমি তা ভেঙে দিলে। কিন্তু সবই হয়েছিল, সে কথা ঠিক, কেবল তুমি বাকি ছিলে। কিন্তু তুমি আমার ভেসে যাওয়া স্রোতের বুকে এমন এক বাধার সৃষ্টি করলে, এখন আমি তাতে যন্ত্রণা বোধ করছি। পৃথিবীর সহজতম, সরলতম মানুষ তুমি, এই কুটিল রাজ্যে কোন সাহসে এসে ঢুকলে, কোন সাহসে অকপট সত্যি কথা বলতে এসেছ জানি না। সম্ভবত এই সুনীতাকে পূর্ণ করতেই তোমার আবির্ভাব। কিন্তু তা বোধ হয় হবে না। পূর্ণতার যে ইঙ্গিত দেখেছি তোমার চোখে, সেই দেখাই বোধ হয় আমার জীবনের শেষ পাওনা। তুমি পালাও, তুমি পালাও। কিন্তু আটাশে মার্চের আগে নয়, আমার পাকা দেখার নিমন্ত্রণটা রেখে যেয়ো। তুমি কেন এসেছ এই যুগের এই শহরে! তোমরা যে কেউ কারুর যোগ্য নও। জীবনে আমার যা অনুভব করা বাকি ছিল, যে অনুভূতি না হলে, মরণেও শান্তি ছিল না, তাই দেখেছি, পুঞ্জীভূত তোমার চোখে। এই দেখার পরে, আমি ব্যাকুল হয়ে উঠছি, পাগল হয়ে উঠছি, সুখের কষ্টে মরে যাচ্ছি। মনে মনে তোমার কাছেই ছুটে যাচ্ছি। তুমি পালাও, নইলে আমার লোভ যে তোমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলবে। নীচে কোনও ইতি নেই। চিরকুটটি পড়েই সুজিত পিছনে ফিরল, দেখল দীপু তার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সুজিত জিজ্ঞেস করল, তুমি গেছলে বুঝি?
দীপু বলল, আমি তো রোজই যাই।
তাই নাকি? বলনি তো? তুমি এই চিরকুট পড়েছ?
–পড়েছি। পরিষ্কার এবং সহজ জবাব দিল দীপু। আবার আপনি সত্যি চলে যাবেন?
–কোথায়?
–ওই যে সুনীতাদি আপনাকে পালাতে বলেছে?
–কেন পালাতে বলেছে, তুমি বুঝতে পেরেছ?
না, সুনীতাদির কথা আমি সব বুঝতে পারি না।
সুজিত একটু হেসে বলল, আমি চলে গেলে তুমি খুশি হও?
দীপু সহসা জবাব দিল না। একবার মুখ নামাল, আবার মুখ তুলে বলল, না।
-কেন? তুমি তো আর আমার কাছে আসতে চাও না, কথা বলতে চাও না।
দীপু বলল, প্রথমে ভেবেছিলাম, আপনিও দাদাদের মতো খারাপ লোক। এখন আর মনে হয় না। বলেই দীপু হঠাৎ কাছে এসে বলল, সুনীতাদি খালি আপনার কথা বলে কেন বলুন তো?
-তোমার হিংসে হয়?
–এখন আর হয় না।
–কেন?
–সুনীতাদি বলে, তুই, তোর সুজিতদা, তোরা সব এক।
সুজিত দীপুকে কাছে টেনে নিল। বলল, তোমার সুনীতাদিকে বোলো, সুজিতদা পালাবার কথা ভাবে না।
.
এর দিন দুয়েক পরে সুজিত দোলাদের বাড়ি গিয়ে ওর একটা পোর্ট্রেট স্কেচ করে দিল। দোলা একবার কেবল জিজ্ঞেস করেছিল, না দেখে ওর মুখটা সুজিত আঁকতে পারল না কেন। সুজিত বলেছে, চেনা লোক, এবং কাছেই যখন আছে, তখন শুধু শুধু অদর্শনে একলা বসে কেন আঁকবে। মোটের ওপর দোলা খুব খুশি হয়েছে। তৃতীয় দিনে, শনিবারে এক আশ্চর্য ঘটনা ঘটল। শনিবারে সকালবেলা, শিবেন অফিসে বেরিয়ে যাবার পর পিয়ন এসে একটা ডাকের চিঠি দিল সুজিতকে। সোনালি রঙে লেখা একখানি কার্ড ছিল খামের মধ্যে। মোটামুটি যতটা পড়তে পারে, তাতে সুজিত বুঝল, আজ সন্ধ্যায় ক্যালকাটা ওয়েস্টার্ন ক্লাবে একটা পার্টি আছে, এবং সেখানে তার নিমন্ত্রণ। ব্যাপারটা মোটেই তার বোধগম্য হল না। নামটা পরিষ্কারই লেখা ছিল, মিঃ সুজিতনাথ মিত্র। খামের ওপরে, কেয়ার অফ শিবেন রায়। সে প্রথমে দীপুকে বলল। দীপুর ধারণা, বীরেন্দ্র রায়চৌধুরী এ সব করেছে, সুজিতকে সকলের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিতে চায়। দীপু কার্ডটা পড়ে আরও ব্যাখ্যা করেছে, ডিনার ও ককটেল ব্যাপারটা কী। দীপু খুব গম্ভীরভাবে বুঝিয়েছে, ককটেল মানে মদ এক রকমের। সুজিত যেন না খায়।
বিকেলে শিবেনকে বেশ খুশি ও ব্যস্ত দেখা গেল। আগের থেকেই ঘোষিত ছিল, আজ বাইরে নিমন্ত্রণ। সে সান্ধ্যকালীন স্যুটে নিজেকে সাজিয়ে, বিকেলে যখন বাইরের ঘরে এল, সুজিত তখন তাকে নিমন্ত্রণের কার্ডটা দেখাল। শিবেন বিস্ময়ে হতবাক। প্রায় চেঁচিয়ে উঠল সে, ওয়েস্টার্ন ক্লাবে আপনার নিমন্ত্রণ? এর মানে কী?
–মানে তো আমিও জানি না। এটা ডাকে এসেছে।
শিবেন ঠোঁট কামড়ে, কুঁচকে বলল, আশ্চর্য! মিঃ রায়চৌধুরীর ব্যাপার কী? বলেই সেফোন তুলে ডায়াল করল। কথা বলল, আমি শিবেন, কাকাবাবু। সুজিতেরও দেখছি ওয়েস্টার্ন-এ নিমন্ত্রণ। আপনি কিছু জানেন না? তবে? এ তো আশ্চর্য! আপনি কী বলেন? ও যাবে? ওর যদি ইচ্ছে হয়? আচ্ছা। হ্যাঁ, পোশাক তো ওর নেই, দেখি ও কী বলে। আজ্ঞে হ্যাঁ, গাড়ি এলেই আমি চলে যাব।
ফোনটা ছেড়ে দিয়ে সে আবার সুজিতের মুখোমুখি হল। বলল, আপনি যেতে চান পার্টিতে?
সুজিত ঘাড় কাত করে বলল, হ্যাঁ।
–কিন্তু কী পরে যাবেন? আপনার তো কিছুই নেই। আর আমার তো সবই আপনার বেমানান হবে। দেখবেন একবার ট্রাই করে?
সুজিত সম্মতি দিল। শিবেন তাকে তার একজোড়া স্যুট পরিয়ে দিল, দিয়ে হো হো করে হাসতে লাগল। বলল, খুলে ফেলুন, বিশ্রী দেখাচ্ছে।
সুজিত নিজেকে আয়নায় দেখে বলল, একটু বেশি ঢলঢলে লাগছে, আর তো কিছু খারাপ লাগছে না। ভালই তো দেখাচ্ছে আমাকে।
শিবেন হাসতে হাসতে বলল, আপনার অস্বস্তি হচ্ছে না তো? আপনি পারবেন যেতে এভাবে?
সুজিত বলল, তাতে কী হয়েছে। পোশাক তো লজ্জা নিবারণের জন্যে। দেখতে একটু অন্যরকম লাগছে, কিন্তু আমার কিছু খারাপ মনে হচ্ছে না।
শিবেন এক মুহূর্ত অবাক হয়ে তাকিয়ে আবার হো হো করে হাসতে লাগল। বলল, সত্যি, আপনি–আপনি আপনাকে কিছু বলার নেই। চলুন দেখি, গাড়ি এসেছে নাকি।
বেরোবার সময় ভুজঙ্গভূষণ তাকে দেখে ঊনবিংশ শতাব্দীর পোশাকের বিষয় একটা বক্তৃতা দিয়ে দিল। দীপু চোখ কপালে তুলে তাকিয়ে রইল। শিবেন কিন্তু বেশ খুশি।