১০
গুলশান থানার ওসি বিরক্ত চোখে তাকিয়ে আছেন। তিনি তাঁর ওসি জীবনে এত বিরক্ত চোখে বোধহয় কারো দিকে তাকান নি। ওসি সাহেবের ঠিক সামনের চেয়ারে মিসির আলি বসে আছেন। মিসির আলি কয়েকবার খুব আন্তরিক ভঙ্গিতে ওসি সাহেবের দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করলেন। ওসি সাহেব পাত্তা দিলেন না। পাত্তা দেবার কথাও না। মিসির আলি নামের এই মানুষটি তাঁর সারাটা দিন নষ্ট করেছে। সকাল ন’টার সময় এসেছে, এখন বাজছে একটা। যাবার নাম নেই। চুপচাপ চেয়ারে পা তুলে বসে আছে। ক্ষুধা-তৃষ্ণা কিছুই বোধ হয় মানুষটির নেই।
ওসি সাহেব হাই তুলতে তুলতে বললেন, ‘আজ চলে যান মিসির আলি সাহেব। আজ আর হবে না। দীর্ঘদিন আগের ব্যাপার। পুরানো রেকর্ডপত্র কোথায় আছে কে জানে। সতের বছর তো অল্প সময় নয়।’
মিসির আলি বললেন, ‘আমি বরং সন্ধ্যার দিকে একবার আসি।’
‘সন্ধ্যার দিকে আসার দরকার নেই। সামনের সপ্তাহে খোঁজ নিয়ে যাবেন।’
‘তথ্যটা জানা আমার খুব দরকার। সতের বছর আগে বাথরুমে অল্পবয়সী একটা ছেলে মারা গিয়েছিল। এই বিষয়ে থানায় কোনো জিডি এন্ট্রি করা হয়েছে কিনা, পোস্ট মার্টেম হয়েছে কি না, হয়ে থাকলে তার রিপোর্ট…….’
ওসি সাহেব অসহিষ্ণু গলায় বললেন, ‘মিসির আলি সাহেব, দেশটা বিলেত—আমেরিকা না—বাংলাদেশ। এই দেশে এক সপ্তাহ আগের জিনিসই পাওয়া যায় না। আপনি এসেছেন সতের বছর আগের ব্যাপার নিয়ে।’
‘আমার খুব প্রয়োজন ছিল।’
‘সতের বছর আগে কী ঘটেছিল তা নিয়ে মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই। বর্তমানে কী ঘটছে তা নিয়ে মাথা ঘামান।’
‘পাওয়া যাবে না বলছেন?’
‘পাওয়া না-যাবারই কথা।’
‘রেকর্ড নিশ্চয়ই কোথাও রাখা হয়।’
‘তা রাখা হয়। ফাইলের গুদামে পড়ে থাকে। একসময় পোকায় কাটে। আমার ধারণা আপনি যে-রেকর্ডের কথা বলছেন তা এখন উই পোকার পেটে।’
‘খুঁজে দেখবেন না?’
‘উইপোকার পেট চিরে খুঁজতে বলছেন?’
‘জ্বি-না—গুদামের কথা বলছি।’
‘বললাম তো খোঁজা হচ্ছে।’
‘তাহলে সন্ধ্যাবেলা একবার আসি?’
ওসি সাহেব হতাশ গলায় বললেন, ‘আসুন। শুধু সন্ধ্যায় না। রাতে একবার আসুন। মাঝরাতেও আসুন।’
‘আপনি মনে হচ্ছে আমার ওপর বিরক্ত হচ্ছেন।
‘হ্যাঁ, হচ্ছি। পুলিশে কাজ করি বলে কি বিরক্তও হতে পারব না? অনেক আজব চিড়িয়া আমি আমার পুলিশী জীবনে দেখেছি, আপনার মতো দেখি নি।’
‘আপনার বিরক্তি উৎপাদন করেছি বলে দুঃখিত।’
‘শুধু বিরক্তি না ভাই আপনি আরো অনেক জিনিস উৎপাদন করেছেন। তার মধ্যে রাগও আছে। নেহায়েত হোম ডিপার্টমেন্টের চিঠি আছে বলে কিছু বলি নি।’
মিসির আলি হাসলেন। ওসি সাহেব তীব্রগলায় বললেন, ‘হাসছেন কেন?’
মিসির আলি বললেন, ‘আর হাসব না। তবে আমি আসব। সন্ধ্যা সাতটার দিকে আসব।’