দশ
কথাগুলো কানে ঢুকছিল না অর্কর। খাওয়া শেষ হওয়ার পর মাধবীলতা ওকে নিয়ে পড়েছিল। প্রাণপণে বোঝাবার চেষ্টা করছিল ছেলেকে। এই বস্তির আর পাঁচটা পরিবারের মত তারা নয়। পৃথিবীতে সবকিছু নষ্ট হয়ে যেতে পারে কিন্তু রুচিবোধ, ভদ্রতা এবং মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর ক্ষমতা যেন লোপ না পায়। ওর বাবা এই দেশটাকে নতুনভাবে গড়তে চেয়েছিল। কোটি কোটি মানুষ যাতে পেটভরে খেয়ে সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশে বাঁচতে পারে সেই স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু বড় দাম দিতে হয়েছে তাকে। সে নিশ্চয়ই প্রতিদিন এটা দেখছে। মাধবীলতা অবশ্য নিজের পরিশ্রমের কথা ছেলের কাছে বলল না। যেন এ এমন ঘটনা যা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়াও লজ্জার। তাদের দুজনের আশাভরসা অর্ক। ওর জন্যেই বেঁচে থাকা যায়। একবছর না হয় পরীক্ষার ফল খারাপ হয়েছে কিন্তু তাতে কিছু এসে যায় না। বাইরের হৈ চৈ থেকে মন সরিয়ে এনে অর্ক পড়াশুনা করুক। মাধবীলতা কিছুদিন বাদেই এখান থেকে উঠে একটু ভদ্র-পাড়ায় চলে যাবে। তখন আর অসুবিধে হবে না অর্কর। যতদূর পড়তে চাইবে অর্ক মাধবীলতা তাকে পড়াবে। বই-এর জগতে একবার ঢুকে পড়লে মনে হবে পৃথিবীতে এর চেয়ে আরাম কিছুতেই নেই। অর্ক এমন কিছু ভবিষ্যতে করুক যাতে তাকে নিয়ে ওরা গর্ববোধ করতে পারে, পাঁচজনকে সে বলতে পারে অর্ক তার ছেলে।
মাঝে মাঝে মন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছিল অর্ক। মায়ের কথা তাকে শুনতে হচ্ছে কিন্তু হারখানা ছাড়া অন্য কিছু সে ভাবতে পারছে না। ভাত খেয়ে মুখ ধোওয়ার সময় সে কলতলাটাও ভাল করে দেখে এসেছে। না, কোথাও হার নেই। তাহলে? এইসময় মাধবীলতা তাকে জিজ্ঞাসা করল, ‘কি হল! আমি যা বলছি তা কানে ঢুকছে?’
‘আমার পড়াশুনা করতে ভাল লাগে না।’ অর্ক মুখ ফেরাল। যেন দম বন্ধ হয়ে গেল মাধবীলতার। এতক্ষণ ধরে বোঝাতে বোঝাতে যে শান্তির ছায়াটুকু জমছিল মুহূর্তেই তা উধাও হল। তবু সে গম্ভীর গলায় জিজ্ঞাসা করল, ‘কি ভাল লাগে?’
‘জানি না।’
‘জানি না বললে চলবে না। তোকে স্পষ্ট বলতে হবে তুই কি করতে চাস। বস্তির ওই লুম্পেনগুলোর সঙ্গে আড্ডা মারলে চলবে?’
‘লুম্পেন? লুম্পেন মানে কি?’
মাধবীলতা হতাশভঙ্গীতে অনিমেষের দিকে তাকাল। অনিমেষ এতক্ষণ ছেলের দিকে তাকিয়েছিল। বলল, ‘পড়াশুনাকে ভালবাসতে হবে।’
‘কি হবে পড়ে? আজকাল কেউ পড়াশুনা করে বড় হয় না।’
‘কি করে হয়?’
‘তাহলে বি. এ. পাশ করে সুদীনদা রকে আড্ডা মারত না। মাদার ডেয়ারির দুধ বেচে যে লোকটা সেও নাকি বি. এ. পাশ। তুমিও তো পড়াশুনা করেছ, কি বড় হয়েছ বল?’ অর্ক সোজাসুজি মাধবীলতাকে প্রশ্ন করল। মাধবীলতার মুখ টানটান, কিন্তু কি করলে বড় হয় এখনও বলিসনি।’
‘আমি জানি না। পড়াশুনা করলে যদি বড় হওয়া যেত তাহলে এত হাজার হাজার ছেলে পড়ছে সব বড় হয়ে যেত। সতীশদাকে পাড়ার সবাই খাতির করে সি পি এমের নেতা বলে। ক্লাশ টেন অবধি পড়েছে, সবাই জানে। সতীশদা একদিন মন্ত্রী হয়ে যাবে, তখন?’ অর্ক উঠে দাঁড়াল।
মাধবীলতা জিজ্ঞাসা করল, ‘কোথায় যাচ্ছিস?’
‘কাজ আছে।’
‘কাজ? তোর আবার কাজ কি! শোন, তোকে একটা কথা স্পষ্ট বলে দিচ্ছি। আমি চাই না যে তুই বারো ক্লাশ পাশ করার আগে আমার অবাধ্য হবি। তারপর তুই যা ইচ্ছে কর আমি দেখতে যাব না। কিন্তু এখন থেকে ওই নোংরা ছেলেগুলোর সঙ্গে মেলামেশা বন্ধ করতে হবে। একজন ছাত্রের যা যা করা দরকার তুমি তাই করবে। সন্ধ্যে হবার আগেই বাড়িতে ফিরবে। এসব যদি না করতে পারিস তাহলে আমাকে স্পষ্ট বলে দে।’
অর্ক মায়ের মুখের দিকে তাকাল। কেন জানে না ওই মুখের দিকে তাকালে তার বুকের ভেতরটায় কেমন ভয় হয়। সে জানে তাদের বাঁচানোর জন্যে মা সারাদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছে। কিন্তু পড়াশুনা করে যে কিছু হয় না এই কথাটা মা বোঝে না কেন? বরং কিলার কথাটা সত্যি, মুরগি ধর আর জবাই কর নইলে তুমি ভেগে যাবে।
ঠিক তখনই দরজায় শব্দ হল, ‘মাস্টারনি!’
মোক্ষবুড়ির গলা। মাধবীলতার কপালে ভাঁজ পড়ল! অর্ক এরকম সুযোগ ছাড়ল না। চট করে ঘুরে দরজার পাল্লা খুলে জিজ্ঞাসা করল, ‘কি চাই?’
বুড়ি তখন দরজার গোড়ায় উবু হয়ে বসেছে, ‘মাস্টারনি নেই?’
মাধবীলতা বুড়িকে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাসা করল, ‘আছি, কি দরকার?’
‘তোমাদের খাওয়া দাওয়া এখনও হয়নি, না?’
‘হয়ে গেছে।’
‘হাঁড়িতে কি দুমুঠো আছে?’
‘কেন?’
‘কাল থেকে কিছু খাইনি আমি। পেটে বড় জ্বালা ধরেছে লা।’ ডুকরে উঠল বুড়ি। অন্ধ চোখ দুটো ভাঁজ করা হাঁটুর ওপর স্থির।
‘বাড়ির লোক খেতে দেয় না?’
‘সে তো কাল শ্মশান থেকে ফেরেনি।’
মাধবীলতা অর্কর দিকে তাকাতে চট করে সে দরজা পার হল, ‘আমি স্কুল থেকে ঘুরে আসছি। দুদিনে কি পড়াল—।’ আর দাঁড়াল না সে। অনুদের ঘর পেরিয়ে কলতলায় এসে আবার থমকে দাঁড়াল। কিলা যদি কাল থেকে ঘরে না ফিরে থাকে তাহলে কোত্থেকে অত মাঞ্জা দিল! কিলার মা নেই, বাপটা খুব শুড্যা। বুড়িটাকে খেতে দেয় না বোধহয়। অর্কর চোখ ঘুরছিল। কলতলার ইটের খাঁজগুলো সে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিল। অনেক ভেবেচিন্তে সে নিশ্চিত হয়েছে যে হারখানা এই কলতলায় পড়েছে। নিশ্চয়ই কোন শালা হজম করেছে মালটাকে।
এর মধ্যে অনেকের চোখেই পড়ে গেছে যে অর্ক কিছু খুঁজছে। কেউ কেউ জিজ্ঞাসা করতে আরম্ভ করল।
এ শালা এক ঝামেলা। বলাও যাবে না আবার চাপলে মুরগি। সে গম্ভীর গলায় বলল, ‘স্নান করার সময় পকেট থেকে একটা টাকা পড়ে গেছে। গোল টাকা।’
সঙ্গে সঙ্গে কয়েক জোড়া চোখ টাকাটাকে খুঁজতে লাগল। অর্ক মনে করতে চেষ্টা করছিল তার স্নানের সময় কে কে ছিল। ওপাশের ঘরের একটা বাচ্চা মেয়ে দাঁড়িয়েছিল তখন। খালি গায়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আঙ্গুল চুষছিল। মনে হতেই অর্ক পাশের সরু গলি দিয়ে এগোল। ঘরের দরজায় মেয়েটা দাঁড়িয়ে আঙ্গুল চুষছে। অর্ক তাকে জিজ্ঞাসা করল, ‘এই, তখন স্নানের সময় আমার পকেট থেকে যেটা পড়েছিল সেটা কে নিয়েছে দেখেছিস?’
খুব দ্রুত ঘাড় নাড়ল মেয়েটা, না। হতাশ হল অর্ক। আর কে ছিল? তখনই ওর মনে সেই কালো মেয়েটির মুখ ভেসে উঠল। কিলা বলে ও নাকি লাইনের। রোজ বিকেলে সেজেগুজে ঈশ্বর পুকুর লেন থেকে বেরিয়ে যায়। সবাই জানে ঝুমকি নার্সিংহোমে আয়ার কাজ করে। কিলা বলে, ফোট্, ওসব নকশা। আমি নিজের চোখে দেখেছি খদ্দেরের সঙ্গে রিকশায় যেতে। এরপরে আর কথা চলে না। মেয়েটার মুখ চোখ দেখে বিশ্বাস করতে অবশ্য ইচ্ছে হয় না অর্কর। কিছুদিন আগে সে কিলাদের সঙ্গে খান্না সিনেমার সামনে দাঁড়িয়েছিল। তখন বিকেল। একটা মেয়েকে দেখিয়ে কিলা বলেছিল, ‘এ শালী রাণ্ডি!’ রকে বসে এইসব শব্দগুলো ভালমতন বুঝে গেছে অর্ক। ও দেখল একটি মাঝবয়সী মেয়ে হেলে দুলে যাচ্ছে। মুখে খসখসে সাদা পাউডার, কাজল চোখ ছাড়িয়ে অনেকটা ডানা মেলেছে। সে চাপা গলায় জিজ্ঞাসা করেছিল, ‘কি করে বুঝলি?’
কিলা হেসেছিল। তারপর বলেছিল, ‘কোথায় ঢোকে দ্যাখ!’ অর্ক দেখেছিল রাস্তা পার হয়ে মেয়েটা চাপা ঘরগুলোর খাঁজে ঢুকে গেল। সেখানে বিভিন্ন বয়সের কুৎসিত চেহারার আরও কিছু মেয়ে দাঁড়িয়ে গল্প করছে। কিলা বলেছিল, ‘এটা খুব খারাপ ঠেক ওস্তাদ, সীতাপতি আর গণপতিদের মন্দির।’ অর্ক জিজ্ঞাসা করেছিল, ‘তারা কে?’
হো হো করে হেসেছিল কিলা, ‘দুই ভাই।’
পরে অবশ্য বিলুর মুখে সীতাপতি আর গণপতির ব্যাখ্যা জেনেছে অর্ক। ভাবলেই গা শিউরে ওঠে। বিলু অবশ্য গোপনে তাকে আর একটা খবর জানিয়েছিল, খুরকিকে নাকি সীতাপতি ধরেছিল, অনেক কষ্টে ছাড়িয়েছে। তারপর থেকে খুরকিকে দেখলেই ওই কথাটা মনে পড়ে। কেমন একটা অস্বস্তি হয়, কথা বলে কিন্তু একটা ব্যবধান রেখে দিতে চায়।
দ্রুত পা চালালো অর্ক। ঝুমকির বাবা দরজায় বসে বিড়ি ফুঁকছিল। তিনবার নিমতলায় যেতে যেতে যায়নি বুড়ো। শরীরের সব কটা হাড় দেখা যায়। হাড়ের ওপর একটা চামড়া টাঙানো। মুখেও এক চিলতে মাংস না থাকায় কঙ্কালের মত দেখায়। অর্ক জিজ্ঞাসা করল, ‘ঝুমকি আছে?’
মাথা নাড়ল বুড়ো, ‘না, ডিউটিতে গেছে।’
শোনামাত্র সন্দেহ পাক খেল, ‘ও তো বিকেলে যায়।’
‘আজ তাড়াতাড়ি গেল।’
‘কোথায় ডিউটি? এই সময় ঝুমকির মা ভেতর থেকে দরজায় এসে দাঁড়াল, ‘কেন, কি দরকার?’
‘দরকার আছে।’ অর্ক চোয়াল শক্ত করল।
‘কাল সকালে এসো। বলে গেছে ফিরতে রাত হবে।’
‘ওসব আমি জানি না। ডিউটিটা কোথায় বলে দিন।’
‘জবরদস্তি নাকি?’
‘সে যদি বলেন তবে তাই। ভাল মুখে বলছি এখনও!’
ঝুমকির বাবার এবার কাশি উঠল। বিড়ির ধোঁয়া গলায় আটকে যাওয়ায় শরীরের খামচা কাঁপতে লাগল থরথর করে। দুটো চোখ ঠিকরে বেরিয়ে এসেছে, মুখে গোঁ গোঁ শব্দ। সেই অবস্থায় হাত নেড়ে বউকে ইশারা করছিল বলে দিতে। তারপর একটু সামলে নিয়ে ঘ্যাসঘেসে গলায় বলল, ‘মেয়ে গেছে কাজ করতে, বললে দোষ কি!’
ঝুমকির মা মুখ ঘোরাল, ‘ধম্মতলায় আয়ার চাকরি।’
‘ধর্মতলার কোথায়?’
‘জানি না। কি একটা সিনেমার সামনে, গোব না কি যেন?’
‘গ্লোব?’
‘ওইরকম। তা ওখানে ওর খোঁজে কেউ গেলে মালিক খুব রাগ করে। এমন কি দরকার তা বুঝছি না।’
অর্ক কথাটার জবাব না দিয়ে নিমুর দোকানের সামনে এসে দাঁড়াল। শিবমন্দিরের রক এখন ফাঁকা। নিমুর দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে দুজন চা খাচ্ছে। কি করা যায়? ঝুমকি যে হারখানা নিয়েছে তার কোন প্রমাণ নেই। কিন্তু আজ এত তাড়াতাড়ি বাড়ি থেকে বের হল কেন? এতেই মনে হচ্ছে ডালমে কুছ কালা হ্যায়। ধর্মতলায় খুব বেশী যায়নি অর্ক। গ্লোব সিনেমাটা কোথায় মনে করতে চেষ্টা করল সে। বিলুটাকে সঙ্গে নিলে কাজ হত কিন্তু শালা হিস্যা চাইবে। তাছাড়া নার্সিংহোমের নামটা সে জানে না। গিয়ে খুঁজে পাবেই বা কি করে? কিন্তু হার পেয়েছে বলে যদি ঝুমকি তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যায় তাহলে ওটা ফর্সা করেই বাড়িতে ফিরবে। সেক্ষেত্রে এখানে বসে আঙ্গুল চুষে কি লাভ। অর্ক ঠিক করল সে যাবে, জায়গাটা মোটেই চেনা নয় কিন্তু চিনে নিতে কতক্ষণ। হন হন করে বড় রাস্তার দিকে যেতে যেতে ওর মনে হল খুরকির মত একটা কিছু সঙ্গে রাখা দরকার। মনের জোর বাড়ে, কাজও দেয়। কি রাখা যায়?
চওড়া সিঁথিতে সিঁদুর পরতে পরতে মাধবীলতা বলল, ‘ছেলেটাকে ফেরাতেই হবে, আমি কিছুতেই হেরে যাব না।’
অনিমেষ শুয়ে শুয়ে মাধবীলতাকে দেখছিল। কথা বলল না।
আয়নার মুখের দিকে তাকিয়ে মাধবীলতা বলল, ‘দু’বছর, মাত্র দুই বছরে ও এতখানি পাল্টে গেল কি করে বুঝতে পারি না।’
অনিমেষ নিচু গলায় বলল, ‘পরিবেশ।’
মাধবীলতা ঘুরে দাঁড়াল। ‘পরিবেশ খারাপ তো আগাগোড়াই ছিল। ভাবলে কূল পাই না, আমাদের ছেলে—।’
এবার অনিমেষের গলার সুর পাল্টালো, ‘তুমি একা থাকলে হয়তো এরকম হতো না। আমিই দায়ী।’
শরীর শক্ত হয়ে গেল মাধবীলতার। দাঁতের তলায় এক চিলতে ঠোঁট চলে এল। অপলকে অনিমেষকে দেখল সে। তারপর ধীরে ধীরে খাটের পাশে এসে হাত রাখল অনিমেষের বুকে, ‘তুমি আমাকে কি মনে কর? যন্ত্র!’
‘মানে?’
‘আমি কখনো ভুল করব না, আমার রাগ অভিমান কিছু থাকবে না? চুপচাপ মুখ বুজে সব সহ্য করে যাব? আমি তো আর পাঁচটা মেয়ের মতনই, তুমি কেন বোঝ না?’ শেষের দিকে মাধবীলতার গলা ধরে এল।
দুহাতে মাধবীলতার হাত টেনে নিল অনিমেষ, ‘কে বলল আমার শরীর গিয়েছে! কিন্তু বোধটুকু তো শেষ হয়নি।’
মাধবীলতা বুক উজাড় করে নিঃশ্বাস ফেলল। তারপর হাত সরিয়ে নিয়ে বলল, ‘আমাদের যেমন করেই হোক এখান থেকে চলে যেতে হবে।’
‘কি করে সম্ভব!’
‘জানি না। দরকার হলে আরও টিউশনি করব।’
অনিমেষ উঠে বসল, ‘তুমি মরে যেতে চাও?’
মাধবীলতা হাসল, ‘না, আমার কপালে মরণ নেই!’
কথাটা শোনা মাত্র অনিমেষ গম্ভীর হল। তারপর বলল, ‘আমি ভাবছি কিছু রোজগারের চেষ্টা করব। এইভাবে আর বসে থাকা যায় না।’
মাধবীলতার কপালে ভাঁজ পড়ল, ‘তার মানে? এই শরীর নিয়ে তুমি বাইরে বের হবে? অসম্ভব।’
অনিমেষ বলল, ‘কেন, আমি তো এখন অনেকটা ভাল আছি।’
মাধবীলতা দৃঢ় গলায় বলল, ‘না, ওসব চিন্তা তোমাকে করতে হবে না।’
অনিমেষ মাথা নাড়ল, ‘বোকামি করছ, সময়ের সঙ্গে তাল মেলাও।’
মাধবীলতা বলল, ‘কি ভাবে রোজগার করবে তুমি?’
‘জানি না। যাহোক কিছু। সামন্য আয় হলে সংসারের উপকার হবে। এসব নিয়ে তুমি ভেব না।’
মাধবীলতা ভারী পা ফেলে আয়নার সামনে চলে এল, ‘এই অবস্থায় তুমি টাকার জন্যে ছুটছ—এটা আমার লজ্জা!’
‘লতা!’
মাধবীলতা চমকে তাকাল। অনেকদিন পরে এই ডাক। অনিমেষ বলল, ‘তুমি একটুও রক্ত মাংসের নও।’
‘তোমার মাথা।’
জামাকাপড় পরা হয়ে গেলে মাধবীলতার একটা কথা মনে পড়ল, ‘জানো, কাল সুপ্রিয়া আমাকে জিজ্ঞাসা করছিল কত বছর বিয়ে হয়েছে? তা আমি বললাম আঠারো বছর।’
‘সে কি?’
‘কেন, অবাক হওয়ার কি আছে। তোমাকে যেদিন প্রথম দেখেছি সেদিনই তো বিয়ে হয়ে গেছে।’
‘পারো বটে।’ অনিমেষ হাসল, ‘দিনগুলো কি দ্রুত চলে যাচ্ছে। জেল থেকে যখন এলাম তখন খোকার বয়স সাত। আর এই আট বছরে ওকে দেখায় কুড়ি। আচ্ছা, আমি কি খুব বুড়ো হয়ে গেছি!’ অনিমেষ মাধবীলতার দিকে তাকাল।
মাধবীলতা ঠোঁট টিপে হাসল, ‘আমাকে দেখে বুড়ি মনে হয়?’
‘মোটেই না।’
‘তোমার ন্যাবা হয়েছে। বাঙালি মেয়েকে চল্লিশে বুড়ি দেখাবে না তো কি! যাক, অনেক দেরি হয়ে গেছে। খোকা ফিরলে পড়তে বসতে বলবে। আমি তাড়াতাড়ি ফিরব।’
তড়িঘড়ি টিউশনি বেরিয়ে গেল মাধবীলতা। তিন নম্বরে তখন প্রচণ্ড শব্দ। হাজারটা মানুষ একসঙ্গে চিৎকার করে কথা বলছে। শব্দ না করে এখানে কেউ থাকতে পারে না। তারপর সন্ধ্যের শুরু থেকে হয় উনুনে আগুন দেওয়া। গলগল করে ধোঁওয়া ঢোকে ঘরে। দুটো স্ত্রীকণ্ঠে কদাকার চিৎকার উঠছে। অশ্লীল শব্দগুলো কি সহজে ওদের জিভে উঠে আসছে। অনিমেষ কান খাড়া করল। একজন অন্যজনকে গালাগাল করছে গতরের দেমাকের জন্যে। তার স্বামীর কি দোষ যদি কেউ গতর দেখিয়ে ডাকে। যাকে বলা হচ্ছে সেও ছাড়ছে না। যে বউ স্বামীকে ধরে রাখতে পারে না তার এত গলার জোর কিসের।
অনিমেষ বিছানা ছেড়ে মাটিতে পা দিল। তারপর ক্রাচে ভর দিয়ে হ্যাণ্ডলুমের পাঞ্জাবিটা গলিয়ে নিল। দরজায় তালা দিয়ে অনিমেষ টুক টুক করে গলি দিয়ে এগিয়ে চলে। বেশ অন্ধকার হয়ে এসেছে। সেই স্ত্রীলোকদুটি ওকে দেখে একবার থমকে গিয়েই পুরোদমে শুরু করল। অনুদের বাড়ির সামনে হরিপদ চুপচাপ বসে আছে। দুটো শিশু মাতৃবিয়োগের চিহ্ন নিয়ে বাপের দুপাশে বসে আছে। অনিমেষ কথা বলতে গিয়ে সামলে নিল। কি কথা বলবে সে। সান্ত্বনা দেবে? কোন মানে হয় না।
অবিনাশের উনুনের কারখানায় সেদিনের মত কাজ সবে শেষ হয়েছে। কারিগররা জামা পরছিল। অনিমেষ ভেতরে ঢুকে বেঞ্চিতে বসল। এক চালায় কারখানা। নিচে টিন পেটাই এবং উনুনের কাঠামো তৈরি হয়। সেগুলোকে চালার ওপরে নিয়ে গিয়ে মাটি লাগিয়ে রোদূরে রেখে দেয় আর একদল। ভাল রোজগার অবিনাশের। আটজন লোক কাজ করে এখানে। অবিনাশ নিজেও খাটে। এককালে ওর পরিবার এই বস্তিতেই ছিল। এখন উল্টাডাঙ্গায় বাড়ি ভাড়া নিয়েছে সে। বছর তিনেক আগে আলাপ হওয়ার পর অবিনাশ বলেছিল, ‘আপনার মত শিক্ষিত লোক এখানে থাকবে ভাবাই যায় না। মাঝে মাঝে পায়ের ধুলো দেবেন, কথা বলে সুখ পাব।’
সেই থেকে এখানেই রোজ একটু বসে অনিমেষ। চারটে নাগাদ আসে আবার ছটায় ফিরে যায়। কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে কথা বলে অবিনাশ, চা খাওয়ায়। আর সেদিনের খবরের কাগজটা পড়া হয়ে যায় অনিমেষের। আজ একটু দেরি হয়ে গেল অনিমেষের। আর আসামাত্রই লোডশেডিং।
অবিনাশ ওকে দেখে ইতস্তত করে বলল, ‘কি ব্যাপার, আজ একটু বিলম্ব হয়ে গেল দেখছি।’
অনিমেষ ক্রাচদুটো পাশে রাখতে রাখতে বলল, ‘হ্যাঁ। আর সেইসঙ্গে লোডশেডিং নিয়ে এলাম।’
অবিনাশ মাথা নাড়ল, ‘জন্ম মৃত্যু বিবাহ এবং লোডশেডিং কখন হবে তা কি কেউ বলতে পারে! তা আমার আজকের কাজ শেষ।’
এই অন্ধকারে কাগজ পড়া যাবে না। অবিনাশ একটা ভুষো মাথা হ্যারিকেন অনেক কসরৎ করে জ্বাললো। কারখানার লোকজন চলে গেলে নিজের জায়গায় বাবু হয়ে বসে বলল, ‘তা বলুন মিত্তির মশাই—।’
আবছা আলোয় অনিমেষ লোকটাকে দেখল। সবসময়েই মনে হয়েছে বেশ সহৃদয়। তবু সে একটু ইতস্তত করছিল।
অবিনাশ জিজ্ঞাসা করল, ‘কিছু বলবেন মনে হচ্ছে!’
‘হ্যাঁ।’ অনিমেষ গুছিয়ে নিল, ‘কি ভাবে বলব ভাবছি।’
‘কি ব্যাপার?’
‘মানে আমার একটা কাজ দরকার।’
‘কাজ? কি কাজ?’
‘যাহোক কিছু! এভাবে বেকার বসে আর থাকা যাচ্ছে না। আপনার কথা মনে পড়ল, যে কোন উপায় যদি বলে দেন!’
‘অ। চাকরির কথা বলছেন?’
‘হ্যাঁ।’
‘বাজার তো খুব খারাপ। চাকরি পাওয়া সত্যিই মুশকিল। তাছাড়া আপনি কি ধরনের চাকরি চাইছেন—!’
‘যে কোন চাকরি। আমার কোন পছন্দ অপছন্দ নেই। যাতে কিছু টাকা আসে তাতেই চলবে।’
‘একটা কিছু না জানলে—।’
‘আমি কিছুই জানি না। তবে চেষ্টা করতে পারি।’
‘দেখুন মিত্তিরবাবু, আমার তো চাকরি দেবার ক্ষমতা নেই তবে একটা কোম্পানিকে জানি আমি তাদের বলতে পারি। তবে ওই পা নিয়ে যাওয়া আসা করতে পারবেন তো?’
‘আমি এখন সব পারবো।’ কথাটা বলে অনিমেষ হাসবার চেষ্টা করতেই বাইরে একটা বিকট শব্দ উঠল। সঙ্গে সঙ্গে দুটো বোমা ফাটার শব্দে কানে তালা লাগার যোগাড়। লোকজন সব পড়ি কি মরি করে বস্তির মধ্যে ঢুকে পড়ছে। তারপরেই চারপাশ চুপচাপ। অবিনাশ লাফিয়ে দরজার কাছে গিয়ে ঝাঁপটা টেনে দিল। আর তখনই গলা শোনা গেল, ‘আরে খানকির বাচ্চারা বেরিয়ে আয় শালা। এক বাপের পয়দা হ’স তো সামনে এসে দাঁড়া।’ যাদের উদ্দেশে এই আহ্বান তাদের কোন সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। দ্বিতীয় গলা বাজল, ‘আবার যদি আমাদের পাড়ায় দেখি তাহলে তিন নম্বর জ্বালিয়ে দেব বলে দিয়ে গেলাম।’ কয়েক সেকেণ্ড শব্দহীন কাটল। তারপরেই ঈশ্বরপুকুর লেনে হই হই পড়ে গেল। যারা এসেছিল তারা ততক্ষণে চলে গিয়েছে। এবার বিভিন্ন বয়সী মানুষ নিমুর চায়ের দোকানের সামনে গলা তুলে প্রতিবাদ জানাচ্ছে ঘটনার। যে বেশী চিৎকার করছে সে তত দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হচ্ছে। বেপাড়ার ছেলে এসে পাড়ায় মাস্তানি করে গেল, মা বোন তুলে কথা বলে গেল, খুরকি কিলা বিলু কোথায়। তিন নম্বরের উচিত এর জবাব দেওয়া।
অনিমেষ বলল, ঝাঁপটা খুলে দিন, হাওয়া আসুক।’
অবিনাশ মাথা নাড়ল, ‘না মশাই, এসব চুল্লুদের বিশ্বাস নেই। হারামির জোঁক এক একটা।’
অনিমেষ নিঃশ্বাস ফেলল, ‘আচ্ছা আপনার কারখানায় কিছু করা যায় না?’
‘কি করবেন? এখানে তো টিন পেটাই আর উনুন বানাতে হয়।’
‘তাই যদি করি! একটা জায়গায় বসে টিন পেটাতে ঠিক পারবো।’
‘ধুৎ, ওসব আপনাকে মানায় নাকি! আপনি শিক্ষিত মানুষ, পাঁচজনে কি বলবে! তাছাড়া কাজটাকে যত সহজ ভাবছেন তা নয়।’
আবছা আলোয় অবিনাশ কান খাড়া করে বলল, ‘এসো।’ ঝাঁপে শব্দ হয়েছিল মৃদু, অনুমতি পাওয়া মাত্র লিকলিকে রোগা একটা লোক সুড়ুৎ করে ঝাঁপ সরিয়ে ঢুকে পড়ল। ময়লা ধুতি পাঞ্জাবি এবং বেশ কালো শরীরটা প্রায় অন্ধকারে অনিমেষের দিকে তাকাল। অনিমেষ লোকটাকে কখনও দ্যাখেনি। অবিনাশ ডাকল, ‘এসো জনার্দন। উনি মিত্তির মশাই, খুব বড় নকশাল ছিলেন, পুলিশ দুটো পা খেয়ে নিয়েছে। তা মিত্তির মশাই—।’ কথাটা শেষ করল না অবিনাশ কিন্তু বোঝা গেল এবার সে অনিমেষকে উঠে যেতে বলছে। জনার্দন বলল, ‘পাঁচমিনিট বসে যাওয়া মঙ্গল। কারণ বাইরের হাওয়া ভাল নয়।’
অবিনাশ তাড়াতাড়ি বলে উঠল, ‘তাই নাকি! তাহলে উঠবেন না, একটু বসুন। মানে, এইসময় আপনি তো কখনও আসেন না তাই সঙ্কোচ হচ্ছিল।’
‘কেন, কিসের সঙ্কোচ?’
‘সারাদিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পর এই সময় জনার্দন আসে। দুই বন্ধুতে মিলে তিনচার গ্লাস খাই। না খেলে শরীর খাটতে পারে না। আপনি ভদ্রলোক, আবার কি ভাববেন—।’ হেঁ হেঁ করে হাসল অবিনাশ।
‘তাতে কি হয়েছে, আপনারা খান আমি চলি।’ অনিমেষ উঠতে যাচ্ছিল কিন্তু অবিনাশ এবার বাধা দিল, ‘না না বসুন। একবার যখন আড় ভেঙ্গে গেছে তখন আর উঠতে হবে না। কই জনার্দন বের কর।’ জনার্দনের হাতে কাপড়ের ব্যাগ ছিল। তা থেকে বাংলা মদের বোতল বের হল। অবিনাশ গ্লাস পেছনের তাক থেকে পেড়ে বলল, ‘মিত্তির মশাই একটুখানি—।’
‘না না। আমার ওসব চলে না।’
জনার্দন বলল, ‘না খাওয়াটা এক ধরনের নেশা। খুব শক্ত নেশা। আমি খাই না কোন শুয়োরের বাচ্চা আমাকে খাওয়াতে পারবে না, এই নেশা খাওয়ার নেশার চেয়ে কম নয়।’
গ্লাসে ঢালতে ঢালতে অবিনাশ বলল, ‘তা কম দিন তো হল না। কুড়িবছর তো বটেই। আমরা দু বন্ধুতে প্রত্যেকদিন খেয়ে যাচ্ছি।’
একটা গ্লাস শেষ করে জনার্দন বলল, ‘মিত্তির মশাই-এর কি করা হয়? মানে চাকরি বাকরি—।’
অবিনাশ বলল, ‘অসুস্থ মানুষ কাজ পাবেন কোথায়! এই তো একটু আগে আমাকে বলছিলেন চাকরির কথা। কিন্তু যা বাজার—।’
অনিমেষ বলল, ‘চাকরি না হোক ব্যবসা পেলে তাই করি।’
জনার্দন জিজ্ঞাসা করল, ‘কিসের ব্যবসা—?’
অনিমেষ হাসল, ‘ভাবিনি। এক জায়গায় বসে করা যায়, এমন যাহোক কিছু। কোন দোকানঘর সস্তায় পেলে—।’
অবিনাশ আঁতকে উঠল, ‘সস্তা? ওই তো, নিমুর দোকানের পাশের রকটা শুনলাম দুহাজার সেলামিতে একজন নিচ্ছে। তিন ফুট বাই চার ফুট। একশ টাকা ভাড়া।’
জনার্দন কিছুক্ষণ লক্ষ্য করল অনিমেষকে, ‘একটা কাজের কথা মনে পড়ল। ব্যবসাও বলতে পারেন। এক জায়গায় বসে বসে কাজ। মাসে পাঁচ ছ’শ হবেই।’ দেশলাই জ্বেলে বিড়ি ধরাল সে।
অনিমেষ উদগ্রীব হল, ‘নিশ্চয়ই পারব। বলুন কি কাজ?’
জনার্দন অবিনাশকে বলল, ‘তোমার ছোট কেতোকে মনে আছে? ও মরার পর এই বস্তিতে ভাল লোক পায়নি খাঁ সাহেব। আমি বললে হয়ে যাবে।’
অবিনাশ মাথা নাড়ল, ‘ও কাজ কি উনি করবেন?’
‘কাজের আবার লজ্জা কি! কাগজ পেন্সিল নিয়ে বসে যাবেন, মাল নেবেন নম্বর লিখে নেবেন।’ আবার গ্লাস তুলে নিল জনার্দন।
অনিমেষ বলল, ‘ঠিক বুঝলাম না।’
ঢকঢক করে অনেকখানি গলায় ঢালল জনার্দন। তারপর বাঁ হাতের পিঠে মুখ মুছে বলল, ‘এই বস্তিতে ছোট কেতোর খুব ভাল বাজার ছিল। একটা ভাল জায়গা বেছে নিয়ে বসে যান। খাঁ সাহেবের লোক আপনাকে ছোট সিলিপের খাতা দিয়ে যাবে। পাবলিক এসে আপনার কাছে নম্বর বললে কার্বন রেখে লিখে দেবেন, পয়সা নেবেন। সন্ধ্যেবেলায় খাঁ সাহেবের লোক সাইকেলে এসে আপনার কাছ থেকে রসিদ আর টাকা নিয়ে যাবে। যার কপালে আছে সে পাবে। মাঝখান থেকে আপনি কমিশন ছাড়বেন। খাঁ সাহেবের দারুণ সুনাম, একটা পয়সা মারেন না। আরে মশাই এই করেই খাঁ সাহেব কলকাতায় তিন-তিনটে বার, বিরাট ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি আর হোটেল খুলে বসেছে।’
‘নম্বরটা কিসের?’
‘উফ্! আপনি কি কোন খবর রাখেন না! দো তিন হাজারি অফিসাররা খেলছে, কলেজের মেয়েরাও বাকি নেই। দু-রকম আছে। রেস। কলকাতা বম্বে ব্যাঙ্গালোর মাদ্রাজে খেলা হয়। পাবলিক ঘোড়ার নম্বর লিখিয়ে পয়সা দেবে। জিতলে পেমেন্ট পাবে। আর দু নম্বর হল সাট্টা। নম্বর মেলাও আর রুপিয়া লেও। বিনা পরিশ্রমে রোজগার করবেন মশাই। মোটা পেমেন্ট পেলে পাবলিক কিছু দিয়ে যাবে আপনাকে, খাঁ সাহেবের কাছ থেকে কমিশন পাচ্ছেনই। রাজি থাকেন তো বলুন।’
জনার্দন কথা শেষ করলে ভারী গলায় অবিনাশ বলল, ‘পুলিসকে দিতে হবে তো কিছু?’
‘জনার্দনের গলা জড়িয়ে আসছিল, ‘সে ব্যাপারটা খাঁ সাহেবের।’
অবিনাশ হাসল, ‘মান লজ্জা ভয় তিন থাকতে নয়। আরে মশাই আগে হল পেট। চাঁদির জুতো মারলে সব শালা চুপ করে থাকে। এই ধরুন আমার কথা। পেটে বিদ্যে নেই, বস্তিতে থাকতাম, উনুন বেচি। এখন মালকড়ি কামিয়ে ফেলাটে ফ্যামিলি রেখে মেয়েকে ইংলিশ স্কুলে পড়াচ্ছি। মিত্তির মশাই, জায়গা আমি ঠিক করে দেব আপনি তিন নম্বরের পেন্সিলার হয়ে যান।’