দশম অধ্যায়– একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় শূন্যস্থান?
একশ ইঞ্চি টেলিস্কোপে চোখ রেখে বহু দূরের কোনো ছায়াপথ দেখা বা ১০০ মিলিয়ন বছরের প্রাচীন কোনো জীবাশ্ম কিংবা ৫০০,০০০ বছর পুরোনো কোনো পাথরে গড়া যন্ত্র হাতে মুঠোয় ধরা বা বিশাল সময় আর শূন্যতার সেই অতিক্ৰমণ যা কিনা আজ গ্রান্ড ক্যানিয়ন, তার সামনে দাঁড়ানো কিংবা অপলক দৃষ্টিতে মনোযোগের সাথে কোনো বিজ্ঞানীর কথা শোনা, যিনি এই মহাবিশ্বের সৃষ্টির রহস্যকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন, এইসব কিছুর চেয়ে আত্মাকে আমূল নাড়িয়ে দেবার মত আসলেই আর কি আছে? এটাই তো গভীর আর পবিত্র বিজ্ঞান।
— মাইকেল শেরমার
‘এই বইটি একটি অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ শূন্যস্থান পূরণ করবে। এই ঠাট্টাটি কাজ করে কারণ আমরা একই সাথে এর দুটো ভিন্ন আর বিপরীত অর্থ বুঝতে পারি। ঘটনাচক্রে অন্তত আমি মনে করি, এটি একটি উদ্ভাবিত চালাকী, কিন্তু বিস্মিত হই যখন দেখি প্রকাশকরাও আসলেই আন্তরিকতার সাথে এটি ব্যবহার করেন আর খানিকটা নির্দোষভাবেই, যেমন: http://www.amazon.co.uk/tel-quel reader-patric-french/dp/0415157145 এই লিংকটি দেখতে পারেন একটা বইয়ের জন্য যা কিনা একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় শূন্যস্থান করবে পোষ্ট-স্ট্রাকচারালিস্ট সাহিত্য আন্দোলনে। আমার মনে হয় খুব সঠিকভাবেই প্রযোজ্য যে এই সুস্পষ্টভাবে প্রয়োজনাতিরিক্ত বইটি মিশেল ফুঁকো, রোলাঁ বার্থ, জুলিয়া ক্রিষ্টেভা এবং উঁচুস্তরের ফ্রাঙ্কোফোনিজমের এইসব আইকনদের নিয়ে।
কিন্তু ধর্ম কি একটি খুব প্রয়োজনীয় একটি শূন্যস্থান পূরণ করে? প্রায়ই বলা হয় আমাদের মস্তিস্কে ঈশ্বর আকৃতির একটি শূন্যস্থান আছে যা পূর্ণ হওয়ার একটি প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে থাকে: ঈশ্বরের জন্য আমাদের মনস্তাত্ত্বিক একটি প্রয়োজনীয়তা কিংবা চাহিদা আছে– একজন কাল্পনিক বন্ধু, বাবা বা বড় ভাই, আমাদের সব স্বীকারোক্তির শ্রোতা, যা কাছে আমরা মনের গোপন কথা বলতে পারি– এই চাহিদাটি সন্তুষ্ট করার প্রয়োজন আছে আমরা সেটা পূরণ করার তাগিদ অনুভব করি, ঈশ্বরের অস্তিত্ব থাকুক বা না থাকুক। কিন্তু হতে কি পারে না যে ঈশ্বর সেই জায়গাটি বেদখল করে রেখেছেন, যে স্থানটি অন্য কিছু দিয়ে পূর্ণ করাটাই আমাদের জন্য ভালো হতো? হয়তো বিজ্ঞান? শিল্পকলা? মানুষের বন্ধুত্ব? মানবতা? মৃত্যু পরবর্তী কোনো জীবনকে বিশ্বাসযোগ্যতা না দিয়ে বাস্তব পৃথিবীতে এই জীবনের জন্য ভালোবাসা? প্রকৃতির জন্য ভালোবাসা বা তেমন কিছু যা বিখ্যাত কীটতত্ত্ববিদ ই. ও. উইলসন (১) নাম দিয়েছিলেন বায়োফিলিয়া (২)?
কোনো না কোনো এক সময় ভাবা হয়েছিল ধর্ম মানব জীবনে প্রধান চারটি দ্বায়িত্ব পালন করে থাকে: ব্যাখ্যা বা কার্যকারণ বর্ণনা, পরামর্শ, সান্তনা এবং অনুপ্রেরণা। ঐতিহাসিকভাবে ধর্ম আমাদের নিজেদের অস্তিত্ব কিংবা এই মহাবিশ্ব, যেখানে আমরা বাস করছি তার প্রকৃতি ব্যাখ্যা করার প্রচেষ্টা করেছে। আর এখন এই দ্বায়িত্ব পালনে এটিকে সম্পূর্ণভাবে অতিক্রম করে গেছে বিজ্ঞান এবং আমি এই বইয়ের চতুর্থ অধ্যায়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। পরামর্শ বা সুনির্দিষ্ট অনুরোধ বলতে আমি বোঝাতে চেয়েছি নৈতিক সেই সব নির্দেশগুলো যা আমরা কিভাবে আচরণ করবো তার নির্দেশ বা উপদেশ দেয় এবং অধ্যায় ৬ ও ৭ এ যে বিষয়টি নিয়ে আমি আলোচনা করেছি। তবে সান্ত্বনা দেয়া আর অনুপ্রাণিত করা এই দুটি বিষয়কে আমি যথেষ্ট সময় দিতে পারিনি, সেকারণে এই শেষ অধ্যায়ে সংক্ষিপ্তভাবে বিষয়গুলো নিয়ে আমি আলোচনা করবো। সান্তনা বিষয়টির সূচনা পর্ব হিসাবে আমি শৈশবের একটি প্রপঞ্চ বা খুব প্রচলিত ঘটনা, তথাকথিত ‘কাল্পনিক বন্ধু’ বিষয়টি দিয়ে আলোচনা শুরু করতে চাই, যা আমি বিশ্বাস করি ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
বিঙ্কার
আমার ধারণা, ক্রিষ্টোফার রবিন (৩) আসলেই নিজে বিশ্বাস করতেন না যে ছোট শুকর ছানা বা পিগলেট (৪) আর উইনি-দি পুহ (৫) সত্যি তার সাথে কথা বলতো। কিন্তু ‘বিষ্কার’ কি এর থেকে আলাদা?
বিষ্কার– আমি তাকে যে নামে ডাকি আমার একান্ত গোপন একটি বিষয়
এবং বিষ্কার হচ্ছে সেই কারণ, যার জন্য কখনো আমি
একা নই।
নার্সারীতে খেলার সময়, সিঁড়িতে বসে..
যে কাজেই ব্যস্ত থাকিনা কেন, বিঙ্কার সেখানে থাকে সব সময়ই।
ওহ! বাবা বুদ্ধিমান, খুব বুদ্ধিমান একজন মানুষ
আর মা তো পৃথিবীর শুরুর থেকেই সবার সেরা।
আর ন্যানী তো ন্যানী এবং আমি যাকে ডাকি ন্যান..
কিন্তু তারা কেউ পায় না বিঙ্কারকে দেখতে।
বিঙ্কার সবসময় কথা বলে, কারণ আমি শেখাচ্ছি কিভাবে কথা বলতে হয়।
মাঝে মাঝে সে এই কাজটি করে মজার একধরনের শব্দ করে।
এবং মাঝে মাঝে সে এই কাজটি করতে চায় একধরনের গর্জন করে,
আর তার জন্য সেই কাজটা আমার করতে হয় কারণ তার গলায় ব্যাথা।
ওহ! বাবা বুদ্ধিমান, খুব বুদ্ধিমান একজন মানুষ
আর মা তো সব জানেন যা কিছু জানা সম্ভব,
আর ন্যানী তো ন্যানী, আমি তাকে নান বলেই ডাকি
কিন্তু তারা বিঙ্কারকে চেনেন না।
বিঙ্কার সাহসী সিংহের মত যখন আমরা পার্কে দৌড়াই
বিঙ্কার বাঘের মত সাহসী যখন আমরা অন্ধকারে শুয়ে থাকি।
বিঙ্কার হাতির মত সাহসী, সে কখনোই কখনোই কাঁদেনা,
শুধুমাত্র ( অন্য মানুষদের মত) যখন তার চোখে সাবান যায়।
ওহ বাবা তো বাবা, সে বাবার মত একজন মানুষ।
আর মা তো মা, যতটুকু কেউ মায়ের মত হতে পারে।
আর ন্যানী তো ন্যানী, আমি তাকে নান বলেই ডাকি
কিন্তু তারা বিষ্কারের মত না,
বিঙ্কার লোভী না, কিন্তু নানা কিছু খেতে সে ভালোবাসে
তাই কেউ যখন আমাকে চকলেট দেয়, তাদেরকে বলতে হয়
“ওহ, বিঙ্কার একটা চকলেট চায়, তাই আমাকে কি দুটো দেয়া যাবে?
আর তারপর আমি তার হয়ে খাই, কারণ তার দাঁতগুলো নতুন।
বেশ আমি বাবাকে খুব ভালোবাসি, কিন্তু আমার সাথে খে
লার সময় নেই তার।
আর মাকেও আমি খুব ভালোবাসি, কিন্তু মাঝেমাঝে
তাকেও চলে যেতে হয় কাজে।
আর ন্যানীর সাথে আমি রাগ করি প্রায়ই যখন সে জোর
করে আমার চুল আঁচড়ে দিতে চায়…
কিন্তু বিষ্কার সবসময় বিষ্কার, সবসময় সে আমার সাথেই থাকে।
— এ. এ. মিন্ন, নাউ উই আর সিক্স (৬)
এই কাল্পনিক বন্ধুর বিষয়টি কি উঁচু পর্যায়ের কোনো বিভ্রম, শৈশবের মনগড়া কল্পনা থেকে কি এটি ভিন্ন শ্রেণীর কিছু? আমার নিজের অভিজ্ঞতা কোনো সহায়তা করবে না এ বিষয়ে। অনেক বাবা-মায়ের মত আমার মা আমার শৈশবের নানা ছেলেমানুষি কথার বিস্তারিত রেকর্ড রাখতেন তার ডায়রীতে। সাধারণ কিছু ভান করা ছাড়াও (যেমন, এখন আমি চাঁদে বাস করা মানুষ, একজন ব্যাবিলনীয় একটা একসেলারেটর), আমার বিশেষ পছন্দ ছিল দ্বিতীয় স্তরের ভান করার খেলাগুলো (এখন আমি একটি প্যাঁচা, যে ওয়াটারহুইল এর রুপ ধরে বসে আছে), যা খুবই স্বতঃস্ফুর্ত এখন আমি ছোট একটা ছেলে, যে নিজেকে রিচার্ড বলে দাবী করছে), একবারও বিশ্বাস করিনি যে শুধুমাত্র কল্পনা করেই আমি আসলেই সেসব কিছু হয়ে গেছি। আমি মনে করি এটাই স্বাভাবিক সত্যি সাধারণ শৈশবের এই সব ভান করার শিশুসুলভ খেলাগুলোয়। কিন্তু আমার কোনো ‘বিষ্কার ছিল না। যাদের ছিল যদি তাদের প্রাপ্তবয়স্ক বয়সের দেয়া স্বীকারোক্তিগুলোকে মেনে নেই, কমপক্ষে বেশ কিছু স্বাভাবিক মানুষের দেখা মিলবে যাদের শৈশবে এধরনের কোনো একটি কাল্পনিক বন্ধু ছিল, যাদের অস্তিত্ব আছে বলে তারা সে সময় সত্যি বিশ্বাস করতেন এবং হয়তো কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা তাদেরকে স্পষ্ট এবং জীবন্ত দেখতেও পেতেন চমৎকার সুখকর কোনো দৃষ্টিবিভ্রমে। আমার সন্দেহ শৈশবের এই বিঙ্কার থাকার বিষয়টি প্রাপ্তবয়স্কদের ঈশ্বর ধারণায় বিশ্বাসকে বোঝার জন্য একটি ভালো মডেল হতে পারে। আমার জানা নেই কোনো মনোবিজ্ঞানী সেই দৃষ্টিভঙ্গিতে বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করেছেন কিনা, কিন্তু এ বিষয়ে কোনো গবেষণা অর্থবহ হবার সম্ভাবনাই বেশী। সঙ্গী এবং বিশ্বস্ত বন্ধ, সারাজীবনের জন্য বিঙ্কার : নিঃসন্দেহে ঈশ্বর এই একটি ভূমিকা পালন করছেন– একটি সম্ভাব্য শূন্যস্থানের সৃষ্টি হবে, যদি সেখান থেকে ঈশ্বরকে বাদ দিতে হয়।
অন্য একটি শিশু, একটি মেয়ে, তার ছোট বেগুনী রঙের একটি মানুষ ছিল, যে তার কাছে সত্যি এবং দৃশ্যমান একটি অস্তিত্ব, বাতাসে আলোকচ্ছটা ছড়িয়ে যে তার নিজেকে আবির্ভূত করে হালকা টুং টাং একটি শব্দ তুলে। সে তার কাছে সবসময় আসে, বিশেষ করে যখন সে একা থাকে। কিন্তু তার বয়স বাড়ার সাথে এই দেখা হবার ব্যপারটাও কমে যেতে থাকে। কিন্ডারগার্টেনে। যাবার ঠিক আগে কোনো একটি নির্দিষ্ট দিনে এই ছোট বেগুনী মানুষটি তার কাছে আসে, একই ভাবে বাতাসে হঠাৎ করে টুং টাং শব্দ করে সে দৃশ্যমান হয়, এবং ঘোষণা দেয় সে আর তার কাছে আসবে না। বিষয়টি শিশুটিকে বিষণ্ণ করেছিল, কিন্তু ছোট বেগুনী মানুষটি তাকে বলে, সে এখন যথেষ্ট বড় হয়েছে আর তাকে আর তেমন প্রয়োজন নেই এখন, ভবিষ্যতেও প্রয়োজন নেই। তাকে অবশ্যই ছেড়ে যেতে হবে, কারণ অন্য শিশুদের দেখাশোনা করতে হবে তাকে। তার কাছে অবশ্য সে প্রতিজ্ঞা করে যদি আসলেই কখনো তার প্রয়োজন হয় তবে সে দেখা দেবে অবশ্যই। বহু বছর পরে স্বপ্নে সত্যি সে ফিরে এসেছিল তার কাছে, যখন তার জীবনে একটি ব্যক্তিগত সমস্যা চলছিল এবং তার জীবন নিয়ে সে কি করবে বা কি সিদ্ধান্ত নেবে সেটা নিয়ে তার বেশ ভাবতে হচ্ছিল। তার শোবার ঘরের দরজা খুলে গিয়েছিল এবং এক বাক্স বই আবির্ভূত হয় সেখানে, যা ঠেলে তার ঘরে ঢুকিয়ে দেয় ছোট বেগুনী রঙের সেই মানুষটা। সে এটার ব্যাখ্যা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার উপদেশ হিসাবে। যে উপদেশটা সে মেনেছিল এবং পরবর্তীতে প্রমাণিত হয় কাজটি সে ঠিক করেছিল। এই গল্পটি আমাকে প্রায়ই অশ্রুসিক্ত করে এবং মানুষের জীবনে একটি কাল্পনিক ঈশ্বরের সান্ত্বনা এবং উপদেশ দেবার ভুমিকাটা বোঝার মত সবচেয়ে কাছাকাছি একটি অবস্থানে নিয়ে আসে। একটি সত্তা কেবল কল্পনায় যার অস্তিত্ব আছে তারপরও কোনো শিশুর কাছে তা সম্পূর্ণ সত্যি মনে হয় এবং যা তাকে এখনও সান্ত্বনা আর পরামর্শ দেয়। হয়তো এমনকি আরো ভালো যে: কাল্পনিক বন্ধু– কাল্পনিক ঈশ্বর– যারা তাদের সবটুকু সময় আর ধৈর্য নিয়ে মনোযোগ দিতে পারেন যারা কষ্ট পাচ্ছে তাদের প্রতি। এবং মনোবিজ্ঞানী বা পেশাজীবি কাউন্সেলরদের তুলনায় তারা অবশ্যই যথেষ্ট সহজলভ্য।
ঈশ্বররা কি তাহলে, তাদের সান্তনা আর উপদেশ প্রদানকারীর ভুমিকায় বিবর্তিত হয়েছেন কাল্পনিক বিঙ্কারদের কাছ থেকে, কোনো এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক ‘ছদ্ম রুপান্তর’ এর মাধ্যমে? এই সিউডোমরফোসিস বা ছদ্ম রুপান্তর হচ্ছে শৈশবের কিছু বৈশিষ্ট্য প্রাপ্তবয়স্ক হবার পরে মনোজগতে যখন টিকে থাকে সেগুলোর স্বরুপ নিয়েই: পিকিনেস কুকুরদের পিডোমরফিক মুখ থাকে বা প্রাপ্তবয়স্কদের মুখ দেখতেও শিশু কুকুরের মত লাগে। বিবর্তনের এটি একটি খুব পরিচিত প্যাটার্ন, মানুষের কিছু শারীরিক বৈশিষ্ট্যাবলী, যেমন, আমাদের স্ফীত গোলাকার কপাল এবং ছোট চোয়াল যা সাধারণত আমাদের বিকাশের এর জন্য জরুরী মনে করা হয়। বিবর্তনবিদরা আমাদের বর্ণনা করেছেন তরুণ এইপ বা নরবানর হিসাবে এবং প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় তরুণ শিম্পাঞ্জি বা গরিলারাই বরং মানুষের মত বেশী দেখতে হয়ে থাকে। ধর্ম কি মূলত বিবর্তিত হয়েছিল জীবনের সেই মুহূর্তের ধীর বিলম্বতার মাধ্যমে, বহু প্রজন্মান্তরে যখন শিশুরা তাদের বিঙ্কার বা কাল্পনিক বন্ধুকে পরিত্যাগ করেছিল, ঠিক যেমন বিবর্তনের সময়ে আমরাও মন্থর করেছিলাম আমাদের কপালের আরো সমতল হয়ে যাওয়া বা চোয়ালের বাইরের দিকে বের হয়ে আসার প্রক্রিয়াটিকে।
আমার মনে হয়, পূর্ণতার জন্য আমাদের উচিৎ হবে এর উল্টো সম্ভাবনার কথা ভাবা। প্রাচীন পূর্বপুরুষ বিঙ্কার থেকে বরং ঈশ্বরদের বিবর্তিত হবার বদলে ভাবা উচিৎ বিঙ্কাররা কি প্রাচীন। দেবতাদের থেকে বিবর্তিত হয়েছিল? আমার কাছে এটার সম্ভাবনাই কম মনে হয়। আমাকে বিষয়টি এভাবে ভাবিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মনোবিজ্ঞানী জুলিয়ান জেনেসের (৭) এর ‘দি অরিজিন অব কনসাশনেস ইন দ্য ব্রেকডাউন অব দ্য বাইক্যামেরাল মাইন্ড’নামের বইটি, এর নামের মতই বইটাও অদ্ভুত। এটি সেই বইগুলোর মত, হয় এটি পুরোপুরি বাজে আর অসার একটি বই অথবা কোনো একাগ্রচিত্তের চূড়ান্ত প্রতিভাবান কারো সৃষ্টি, এর মাঝামাঝি কিছু না, সম্ভবত এটি সারহীন কোনো বই, কিন্তু এখনও আমি আমার বাজী ধরছি না সে বিষয়ে।
জেনেস লক্ষ করেছিলেন যে অনেক মানুষই তাদের চিন্তার প্রক্রিয়াগুলো বোঝেন, তাদের মাথার মধ্যে অন্য কোনো একজন ‘প্রোটাগোনিষ্ট এর সাথে নিজের কথোপকথন’ হিসাবে। এখন আমরা বুঝতে পারি এই দুই কণ্ঠস্বরই আসলে আমাদের নিজেদের বা যদি সেটা না বুঝতে পারি তাহলে মানসিক রোগী হিসাবে আমাদের চিকিৎসা নিতে হয়। এটাই সংক্ষিপ্তভাবে হয়েছিল ইভলীন ওয়াহর (৮) ক্ষেত্রে। কখনোই চিবিয়ে চিবিয়ে কথা না বলার মানুষ ওয়াহ তার একজন বন্ধুর কাছে মন্তব্য করেছিলেন, ‘তোমাকে আমি বহুদিন দেখিনি কিন্তু আসলে আমি খুব কম মানুষই দেখেছি, কারণ কি তুমি জানো? আমি পাগল হয়ে গিয়েছিলাম তার সুস্থ হবার পর, ওয়াহ ‘দি অরডিল অব গিলবার্ট পিনফোল্ড’নামে একটি উপন্যাস লিখেছিলেন, সেখানে তিনি তার সেই বিভ্রমগুলোর বর্ণনা দিয়েছিলেন, কি ধরনের গায়েবী কথা তিনি শুনেছিলেন।
জেনেস এর প্রস্তাব হচ্ছে ১০০০ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দের কিছু সময় আগে মানুষ সাধারণত এই দ্বিতীয় কণ্ঠস্বরটির– গিলবার্ট পিনফোন্ডের কণ্ঠস্বর– ব্যপারে অজ্ঞ ছিল, আসলেই তাদের কোনো ধারণাই ছিল না এই কণ্ঠস্বর আসলে তাদের নিজেদের ভিতর থেকেই আসে। তারা ভেবেছিল এই ‘পিনফোল্ড’ কণ্ঠস্বর আসলে কোনো ঈশ্বর: যেমন, অ্যাপোলো বা আসতারটে বা ইয়াহয়ে বা খুব সম্ভবত কোনো ছোটখাট গৃহপালিত দেবতা, যা তাদের উপদেশ বা নির্দেশ প্রদান করছেন নানা বিষয়ে। জেনেস এমনকি দেবতাদের এই কণ্ঠস্বরের উৎস চিহ্নিত করেছিলেন আমাদের কথা নিয়ন্ত্রণ করার মস্তিস্ক যেখানে, তার বিপরীত অর্ধাংশে। জেনেসের প্রস্তাবনা হচ্ছে এই ‘দ্বি-প্রকোষ্ঠ বা বাইক্যামেরাল মনের (৭) ভেঙ্গে পড়াটা ছিল একটি ঐতিহাসিক ক্রান্তিলগ্ন। এটি ইতিহাসের সেই মূহুর্ত যখন মানুষ বুঝতে পেরেছিল যে বাইরের যে আওয়াজটি তারা শুনছে বলে মনে করে এসেছে, সেটি আসলে সৃষ্টি হচ্ছে তাদের ভিতরে। জেনেস এমনকি এই ঐতিহাসিক ক্রান্তিকালীন মুহূর্তটি মানব সচেতনতার বা সজ্ঞানতার সূচনালগ্ন হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন।
একটি প্রাচীন মিসরীয় অভিলিখন আছে সৃষ্টিকর্তা দেবতা পাটা (Ptah) সম্বন্ধে, যেখানে অন্যান্য নানা দেবতাদের পা’টার কণ্ঠস্বর বা জিহ্বার নানা রুপ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। আধুনিক অনুবাদগুলো আক্ষরিকার্থে কণ্ঠস্বর শব্দটিকে বাদ দিয়েছে এবং অন্যান্য দেবতাদের ব্যাখ্যা দিয়েছে তার (পাটার) মনেরই। ইন্দ্রিয়গোচর সত্তা হিসাবে। জেনেস এধরনের পাণ্ডিত্যপূর্ণ ব্যাখ্যাকে অস্বীকার করেছেন, বরং এর আক্ষরিক অর্থটাকে গুরুত্ব দিয়েছেন; দেবতারা হচ্ছেন শব্দবিভ্রমের কারণে সৃষ্ট কণ্ঠস্বর, যা মানুষের মস্তিস্কের মধ্যে কথা বলে। জেনেস আরো প্রস্তাব করেন এধরনের দেবতারা আসলে বিবর্তিত হয়েছে মৃত রাজাদের স্মৃতি থেকে, যারা এখনও, (কথার কথা) তাদের প্রজাদের নিয়ন্ত্রণ করে তাদের মাথায় কল্পিত কণ্ঠস্বরের মাধ্যমে। আপনি এই তত্ত্বটিকে বিশ্বাস করুন বা না করুন জেনেস এর বইটি যথেষ্ট কৌতূহলোদ্দীপক যে এটি একটি ধর্ম সংক্রান্ত বইয়ে উল্লেখিত হয়েছে।
এখন আমি জেনেস থেকে একটি সম্ভাবনা ধার করে একটি তত্ত্ব প্রস্তাব করছি, দেবতারা আর বিঙ্কাররা আমাদের ক্রমউন্নয়ন বা বিকাশের সাথে জড়িত, কিন্তু পিডোমরফোসিস তত্ত্বের বিপরীত দিক বরাবর। এর অর্থ হচ্ছে সেই প্রস্তাব যা বলছে যে দ্বি-প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট মনের হঠাৎ করে বিলুপ্তি ইতিহাসে ঘটেনি বরং এটি ক্রমান্বয়ে শৈশবের সেই মুহূর্তের দিকে পশ্চাদপসরণ যখন বিভ্রমের কণ্ঠস্বর আর অশরীরি উপস্থিতিকে ঘটা করে থামিয়ে দিয়েছিল মিথ্যা বলে। পিডোমরফোসিস তত্ত্বের বিপরীতমুখী, বিভ্রান্ত মনে কল্পনায় দেবতারা প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের মন থেকে প্রথমে অপসারিত হয়েছিল, এবং তারপর এটি আরো অনেক বেশী শৈশবে পশ্চাদপসরণ করেছিল, যতক্ষণ না পর্যন্ত আজকের বিষ্কার বা ছোট বেগুনী মানুষ প্রপঞ্চ হিসাবে এটি তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারে, এই তত্ত্বের সমস্যা হচ্ছে এটি প্রাপ্তবয়স্কদের মনে আজও দেবতাদের অস্তিত্বকে ব্যাখ্যা করে না।
হয়তো বিঙ্কারদের পূর্বপুরুষ হিসাবে দেবতাদের না, বিঙ্কারদেরই দেবতাদের পূর্বপুরুষ ভাবা উত্তম হতে পারে। কিংবা দুটিকে একই মনস্তাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার উপজাত হিসাবে দেখা উচিৎ। ঈশ্বর এবং বিষ্কারদের যে একই গুণটি আছে, সেটি হলো সান্ত্বনা দেবার ক্ষমতা আর নতুন নতুন ধারণাগুলোকে পরীক্ষা করে দেখার জন্য জীবন্ত একটি সাউন্ডিং বোর্ড বা আদর্শ শ্রোতা। পঞ্চম অধ্যায়ের ধর্ম বিবর্তনের মনস্তাত্ত্বিক উপজাত তত্ত্ব থেকে আমরা বেশী দূর যাইনি।
সান্ত্বনা
এবার দেখার সময় এসেছে গুরুত্বপূর্ণ যে দ্বায়িত্বটা ঈশ্বর পালন করে আমাদের জীবনে আমাদের প্রবোধ বা সান্ত্বনা দেয়ার গুরুদ্বায়িত্ব, এবং মানবতার সেই চ্যালেঞ্জ, যদি তার অস্তিত্ব না থাকে, তার জায়গায় অন্য কিছুকে প্রতিস্থাপন করার বিষয়টিকে। অনেক মানুষ যারা মেনে নিয়েছেন যে ঈশ্বরের সম্ভবত কোনো অস্তিত্ব নেই, এবং নৈতিকতার জন্যে আদৌ তার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই, তারা এখনও সেই শুরুতেই ফিরে আসেন একটি যুক্তি নিয়ে, তাদের ভাষায় যে যুক্তিটা হচ্ছে সবার উপরে.. ট্রাম্প কার্ডের মত কাজ করে: ঈশ্বরের জন্য একটি কথিত মনস্তাত্ত্বিক ও আবেগীয় প্রয়োজনের অস্তিত্ব আছে। আপনি যদি ধর্মকে অপসারণ করেন, মানুষ এর বিরুদ্ধে প্রায়শই হিংস্রভাবে অবস্থান নিয়ে জিজ্ঞাসা করেন, বেশ, সেই জায়গাটি আপনি তাহলে কি দিয়ে পূরণ করবেন? আপনার কাছে কি আছে একজন মুমূর্ষ রোগীর সান্ত্বনা বা শোকাতুর কোনো মানুষের জন্যে। নিসঙ্গ এলিয়ানর রিজবীদের (১০) জন্য কি আছে আপনার কাছে, যাদের জন্য ঈশ্বরই একমাত্র বন্ধু?
এই কথার প্রত্যুত্তরে প্রথম যা বলা উচিৎ তা আসলে বলার কোনো প্রয়োজন থাকা উচিৎ না। ধর্মের সান্ত্বনা দেবার ক্ষমতা তাকে কিন্তু সত্য বলে প্রমাণিত করছে না। এমনকি আমরা যদি বিশাল একটি ছাড় দেই, এমনকি যদি চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হয় ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস মানুষের মনস্তাত্ত্বিক বা আবেগীয় সুস্থতার জন্য সম্পূর্ণভাবে জরুরী; এমন কি যদি সব নাস্তিকরা নিরন্তর মহাজাগতিক উৎকণ্ঠা আর চিন্তায় হতাশাগ্রস্থ উন্মত্ত হয়ে আত্মহননের দিকে ধাবিতও হয়.. তা হলে এর কোনোটাই ধর্মীয় বিশ্বাস যে সত্য এমন কোনো প্রস্তাবের পক্ষে সামান্যতম প্রমাণের যোগান দেয় না। হতে পারে এটি সেই তত্ত্বের পক্ষে প্রমাণ যোগাবে, যা দাবী করছে, ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই তা জানার পরও তার অস্তিত্ব আছে বলে নিজেকে বিশ্বাস করানোর একটি আকাঙ্খ। যেমনটি আমি ইতিপুর্বে উল্লেখ করেছিলাম, ডেনেট (১১), তার ব্রেকিং দ্য স্পেল (১২) বইয়ে ঈশ্বর বিশ্বাস আর বিশ্বাসকে বিশ্বাস করার মধ্যে পার্থক্যটি উল্লেখ করেছিলেন: সেই বিশ্বাস যা বিশ্বাস করার জন্য তীব্র ইচ্ছা বিরাজ করে এমনকি যদি সেই বিশ্বাসটি নিজেই মিথ্যা হয়: ‘মহাপ্রভু, আমি বিশ্বাস করি, আমাকে তুমি আমার অবিশ্বাস দূর করতে সাহায্য করো (মার্ক ৯:২৪); বিশ্বাসীদের উৎসাহ দেয়া হয় তাদের বিশ্বাস প্রচারণার জন্য, তার উপর তাদের পূর্ণ আস্থা থাকুক বা না থাকুক। হয়ত যদি আপনি কোনো কিছু যথেষ্ট পরিমান বার পুনরাবৃত্তি করতে থাকেন, তাহলে সম্ভাবনা আছে নিজেকেও সেটি সত্যি বলে আপনি বিশ্বাস করাতে পারবেন। আমি মনে করি, আমরা সবাই এমন মানুষদের চিনি যারা ধর্মীয় বিশ্বাসের ধারণাটি বিশেষভাবে উপভোগ করে থাকেন এবং এর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের আক্রমণ অপছন্দ করেন, যদিও তারা নিজেরা অনিচ্ছাসত্ত্বে স্বীকার করেন, তাদের নিজেদের সেই বিশ্বাসটি নেই।
ডেনেট এর পার্থক্য করার বিষয়টি পড়ার পর আমি এটিকে বার বার ব্যবহার করার উপলক্ষ্য পেয়েছি। এটিকে অতিরঞ্জিত বলা ভুলই হবে, সংখ্যাগরিষ্ঠ নিরীশ্বরবাদীদের যাদের আমি চিনি, তারা তাদের অবিশ্বাসকে লুকিয়ে রাখেন ধার্মিকতার মিথ্যা একটি মুখোশের আড়ালে। তারা নিজেরা অতিপ্রাকৃত কিছুতে বিশ্বাস করেন না, কিন্তু অযৌক্তিক বিশ্বাসের প্রতি তাদের অস্পষ্ট তবে বিশেষ একটি অনুরাগ থেকেই যায়। তারা বিশ্বাসকে বিশ্বাস করেন। বিস্ময়করভাবে অসংখ্য মানুষই আপাতদৃষ্টিতে ‘ক সত্য এবং ‘এটাই কাম্য যে মানুষ বিশ্বাস করবে ক সত্য এই দুটির মধ্যে পার্থক্য করতে পারেন না। বা তারা এই যুক্তির ভ্রান্তিটা আসলেই বুঝতে পারেন না কিন্তু অনায়াসেই সত্যকে অপ্রয়োজনীয় হিসাবে সরিয়ে রাখেন যখন মানুষের অনুভূতির সাথে তুলনা করা হয়। আমি মানুষের অনুভূতিকে সমালোচনা করছি না। কিন্তু একটা জিনিস স্পষ্ট হওয়া দরকার, কোনো একটি নির্দিষ্ট কথোপকথনে, যা নিয়ে আমরা কথা বলছি; সত্য আর অনুভূতি, দুটোই হয়তো গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে কিন্তু তারা একই বিষয় না।
যাই হোক না কেন, আমার কাল্পনিক এই আপোষটি অতিরিক্ত বিশাল মাপের এবং ভুল। আমার জানা মতে, নিরীশ্বরবাদীদের সাধারণত অসুখী, বিষণ্ণ, উৎকণ্ঠিত আর শঙ্কিত হবার প্রবণতা থাকেন, এমন কোনো প্রমাণ নেই। কিছু নিরীশ্বরবাদী সুখী, অন্যরা অসুখী, একই ভাবে যেমন কিছু খ্রিষ্টান, ইহুদী, মসুলমান, হিন্দু, বৌদ্ধরাও যেমন অসুখী, যখন কিনা তাদের মধ্যে অন্যরাও আছেন যারা সুখী। হয়তো পরিসংখ্যান নির্ভর প্রমাণে বিশ্বাস (বা অবিশ্বাস) এবং সুখের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কর অস্তিত্ব আছে। কিন্তু আমার সন্দেহ এটি আসলেই কোনো শক্তিশালী সম্পর্ক কিনা, আর বিশ্বাস বা অবিশ্বাস যে কোনো দিকেই তা হোক না কেন? আমার কাছে বরং সেই প্রশ্নটিকে আরো কৌতুলোদ্দীপক মনে হয়, যা আমাদের জিজ্ঞাসা করে, যদি আমরা ঈশ্বর ছাড়াই বাঁচি, সেজন্য হতাশা অনুভব করার কি কোনো ভালো কারণ আছে? আমি এই বই শেষ করবো সেই যুক্তি দিয়ে, যা কিনা ঠিক এর বিপরীত, বরং এটি ঊনোক্তি হবে এমন কিছু বলা যে কেউই একটি সুখী এবং পরিপূর্ণ জীবন কাটাতে পারবেন যে কোনো ধরনের অতিপ্রাকৃত একটি ধর্মবিশ্বাস ছাড়া। প্রথমে, অবশ্যই আমাকে ধর্মের সান্ত্বনা প্রদান করার দাবীটা ভালো করে পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
শর্টার অক্সফোর্ড ডিকশনারী অনুযায়ী Consolation বা প্রবোধ বা সান্ত্বনা হচ্ছে দুঃখ বা মানসিক কষ্ট কিংবা যন্ত্রণার নিরসন। আমি সান্ত্বনাকে দুই ভাগে বিভক্ত করবো:
১) প্রত্যক্ষ শারীরিক: কোনো মানুষ যে কিনা কোনো এক রাতের জন্য জনমানবহীন কোনো দূর্গম পাহাড়ে আটকে আছেন, তিনি হয়তো সান্ত্বনাময় সুখ খুঁজে পান বিশালাকার সেন্ট বার্নার্ড কুকুরের উষ্ণ শরীরে, তবে অবশ্যই ভুলে যাবেন না, তার গলায় বাধা ব্র্যাণ্ডির বোতলটার কথাও। একটি ক্রন্দনরত শিশু হয়তো সান্ত্বনা পেতে পারে যদি তাকে শক্ত করে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে আশ্বাস দেয়া যায় কানে কানে।
২) ইতিপূর্বে বোধগম্য হয়নি এমন কোনো সত্য আবিষ্কারের মাধ্যমে বা বিদ্যমান তথ্যাদির মধ্যে ইতিপূর্বে অজানা সত্যকে বোঝার জন্য কোনো উপায় আবিষ্কার এর মাধ্যমে পাওয়া সান্ত্বনা; একজন মহিলা যার স্বামী, যিনি যুদ্ধে মারা গিয়েছিলেন হয়তো সান্ত্বনা পাবেন তার দ্বারা গর্ভবতী হয়েছেন এমন কিছু উদ্ভাবন করে কিংবা ভেবে যে তার মৃত্যু হয়েছে বীরের মত। আমরা আরো সান্তনা পেতে পারি কোনো পরিস্থিতি সম্বন্ধে নতুনভাবে চিন্তা করার কোনো উপায় খুঁজে পেলে। একজন দার্শনিক হয়তো দেখাতে পারবেন যখন কোনো বদ্ধ মানুষ মারা যান, সে মুহূর্তটি কিন্তু বিশেষ কোনো মুহূর্ত নয়। একসময় যে শিশু সে ছিল তা বহু আগেই মারা গেছে। সেটা হঠাৎ করে বাঁচা বন্ধ করার জন্যে নয় বরং ক্রমেই বড় হয়ে যাবার মাধ্যমে সেটি ঘটছে। শেক্সপিয়ারে বর্ণিত মানুষের সাতটি বয়সকালের প্রত্যেকটিতে সে মারা যায় যখন নতুন পর্বে ধীরে ধীরে সে রুপান্তরিত হয়। এই দৃষ্টিভঙ্গিতে অবশেষে যে মুহূর্তে যখন একজন বৃদ্ধ মানুষ মৃত্যুবরণ করেন, সেটি কোনো অংশে তার সারা জীবনে সেই ধীর গতিতে বহুবার হওয়া মৃত্যুগুলোর চেয়ে আলাদা কিছু না (১৩)। কোনো মানুষ যার নিজের মৃত্যুর বিষয়টি আদৌ উপভোগ করেন না তাদের এই পরিবর্তিত দৃষ্টিভঙ্গি সান্তনাদায়ক মনে হতে পারে। বা হয়তো বা না, এটি গভীর ভাবনা চিন্তার মাধ্যমে সান্ত্বনা পাবার একটি উদাহরণ। মৃত্যুভয়কে তুচ্ছ করা মার্ক টোয়াইন (১৪) উদ্ধতিটাও আরেকটি উদাহরণ হতে পারে: “আমি মৃত্যকে ভয় পাই না, আমার জন্মের আগে, হাজার কোটি বছর ধরে আমি মৃতই ছিলাম এবং সেজন্য সামান্যতম কোনো অসুবিধা আমার হয়নি। এই অনুধাবনটি আমাদের অবশ্যম্ভাবী মৃত্যুর মূল সত্যটিকে কোনোভাবে পরিবর্তন করে না ঠিকই, কিন্তু অবশ্যম্ভাবী এই ঘটনাটিকে আমরা ভিন্নভাবে দেখার একটা সুযোগ পাই..যা আমরা সান্ত্বনা মনে করতে পারি। টমাস জেফারসনও (১৫) মৃত্যুকে কোনো ভয় করেননি, কোনো ধরনের মৃত্যু পরবর্তী জীবনে আপাতদৃষ্টিতে তার বিশ্বাস ছিল না। ক্রিস্টোফার হিচেন্সের (১৬) ভাষায়, তার জীবনের শেষাংশে জেফারসন, একাধিকবার তার বন্ধুকে লিখেছিলেন তিনি কোনো শঙ্কা বা আশা ছাড়াই জীবনের শেষ দিনটির দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। যা যথেষ্ট ছিল বোঝনোর জন্য যে খুবই নির্ভুলভাবে, তিনি খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী ছিলেন না।
বার্ট্রান্ড রাসেলের (১৭) এর ঘোষণা নিয়ে বেশ জোরালো একটি বুদ্ধিবৃত্তিক বিতর্ক হতে পারে। তার ১৯২৫ সালের প্রবন্ধ ‘হোয়াট আই বিলিভ’ এ তিনি বলেছিলেন:
‘আমি বিশ্বাস করি যখন আমি মৃত্যুবরণ করবো আমিও পঁচে গলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবো, এবং আমার আমি বলে কোনো কিছু টিকে থাকবে না আর। আমি তরুণ নই এবং আমি জীবনকে ভালোবাসি। কিন্তু নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবার চিন্তার ভয়ে আমার এই শঙ্কায় কম্পমান অবস্থাটিকে নিন্দা করা উচিৎ। কারণ অবশ্যই এক সময় শেষ হয়ে যাবে তাসত্ত্বেও সুখ আসলেই সত্যিকারের সুখ, সেভাবেই আমাদের চিন্তা এবং ভালোবাসা কখনো তাদের মুল্য হারায় না সেগুলো চিরস্থায়ী নয় শুধুমাত্র এই কারণে। অনেক মানুষই গবের সাথে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন, নিশ্চয়ই সেই গর্ব আমাদেরকেও ভাবতে শেখানো উচিৎ, সত্যিকারভাবে এই মহাবিশ্বে মানুষের অবস্থান কোথায়। এমনকি বিজ্ঞানের খোলা জানালা দিয়ে আসা বাতাস প্রথমে যদি ঐতিহ্যবাহী মানবতার রুপধারণকারী পুরাণ কাহিনীর অন্দরমহলের আরামদায়ক উষ্ণতার পরে আমাদের শীতল অনুভূতিতে কম্পমানও করে, তারপরও মনে রাখতে হবে পরিশেষে বিজ্ঞানের খোলা জানালা দিয়ে প্রবেশ করা মুক্ত নতুন বাতাস নিয়ে আসে প্রাণশক্তি এবং সুবিশাল দিগন্ত, যার নিজস্ব একটি অসাধারণত্ব আছে।
ষোল বছর বয়সে আমি যখন স্কুল লাইব্রেরীতে রাসেলের এই প্রবন্ধটি প্রথম পড়েছিলাম, এটি আমাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। কিন্তু আমি ভুলে গিয়েছিলাম। খুব সম্ভবত আমি এই লেখাটির প্রতি অবচেতন মনে আমার শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছিলাম যখন ২০০৩ সালে ‘এ ডেভিল’স চ্যাপলিন’ লিখেছিলাম (১৯):
জীবনকে এভাবে দেখার মধ্যে আসলেই শুধু মাহাত্মের চেয়েও বেশী কিছু আছে, অজ্ঞতার নিরাপত্তার চাদরের নীচের তুলনায় যা খুবই বিষণ্ণ হতাশ কিংবা শীতল মনে হতে পারে, কিন্তু অনুধাবন করার সেই শক্তশালী তীব্র ঝড়ো বাতাসের মুখোমুখি দাঁড়ালে গভীর আত্মতৃপ্তি অনুভব করা সম্ভব, ইয়েটস এর Winds that blow through the starry ways এর মত।
ধর্ম কিভাবে নিজেকে তুলনা করে, যেমন ধরুন বিজ্ঞানের সাথে, যখন বিজ্ঞানই এই দুই ধরনের সান্তনা যযাগান দেয়? টাইপ ১ সান্ত্বনার দিকে প্রথম নজর দেই, খুবই সম্ভব যে ঈশ্বরের শক্তিশালী বাহু, এমন কি যা খুব বিশুদ্ধভাবে শুধু কল্পনারই হোক না কেন, সেটি আসলেই সত্যিকারের বন্ধুর আলিঙ্গনের মতই একই ভাবে কাউকে প্রবোধ দিতে পারে বা গলায় ব্রান্ডির বোতল ঝোলানো সেন্ট বার্নার্ড কুকুর যা দিতে পারে কোনো আটকে পড়া পর্বতারোহীকে। কিন্তু অবশ্যই বৈজ্ঞানিক ঔষধও আমাদের স্বস্তি দিতে পারে, যা ব্র্যাণ্ডির চেয়ে আরো কার্যকরী।
এবার টাইপ ২ সান্ত্বনার দিকে নজর দেই: ধর্ম খুবই প্রভাবশালী বা কার্যকর হতে পারে এটা বিশ্বাস করা কিন্তু খুবই সহজ; ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের মুখে মানুষ, যেমন, ভুমিকম্পের সময়, সচরাচরই রিপোর্ট করে থাকেন তারা প্রায়ই সান্ত্বনা পেয়ে থাকেন এটা ভেবে যে, যা হচ্ছে তা সবই ঈশ্বরের ইচ্ছায় ঘটছে, সবই তার নির্ভুল পরিকল্পনারই একটি অংশ। কোনো সন্দেহ নেই সময় হলে এর ফলাফল শুভ হবে। যদি কেউ মৃত্যু ভয় পায়, আত্মার অমরতা নিয়ে তার আন্তরিক বিশ্বাস সান্ত্বনা হতে পারে, যদি না অবশ্য, তিনি মনে করেন মৃত্যুর পর তার জায়গা হবে নরকে বা নরকে যাবার আগে পারগেটিরতে (রোমান ক্যাথলিক ধর্ম মতে পারগেটরি হচ্ছে সেই জায়গা যেখানে সংক্ষিপ্ত যাত্রা বিরতি নিতে হয় আত্মাকে বিশুদ্ধ হয়ে স্বর্গে প্রবেশ করার জন্য)। মিথ্যা বিশ্বাস কিন্তু সত্য বিশ্বাসের মতই প্রবোধ দিয়ে থাকে, ঠিক বিভ্রম ভাঙ্গার সেই মুহূর্ত অবধি। এটি ধর্মীয় নয় এমন বিশ্বাসের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। ক্যান্সারে মৃত্যু পথযাত্রী কোনো রোগীকে ডাক্তার যেমন সান্ত্বনা দিতে পারেন তিনি আসলে সুস্থ হয়ে গেছেন এমন কোনো মিথ্যা কথা বলে, সেটাও কাজের হবে, ঠিক অন্য কোনো রোগী যাকে কিনা সত্যি বলা হয়েছে তার অসুখ ভালো হয়ে গেছে, তার ক্ষেত্রে যা ঘটে। ডাক্তারের মিথ্যা সান্তনা বিশ্বাসের চেয়ে মৃত্যুর পর জীবন আছে এমন কোনো আন্তরিক আর অকুণ্ঠ বিশ্বাসের ভ্রম সব মোহমুক্তি থেকে অনেক বেশী সুরক্ষিত। ডাক্তারের মিথ্যা কাজ করে যতক্ষণ না পর্যন্ত রোগের উপসর্গ সুস্পষ্ট না হয়। মৃত্যুর পরবর্তী কোনো জীবনের বিশ্বাসী কেউ কোনোদিনও আসলে বিভ্রান্তি মুক্ত হয় না।
জরিপ জানাচ্ছে প্রায় ৯৫ শতাংশ আমেরিকাবাসী বিশ্বাস করেন, তাদের মৃত্যুর পরও তারা বেঁচে থাকবেন পরজন্মে। কিন্তু যে ভাবনাটা আমার মনে উঁকি দিচ্ছে তাহলো,আসলেই ঠিক কত জন মানুষ যারা এমন কোনো বিশ্বাসে তারা বিশ্বাসী বলে দাবী করেন? আসলেই কি তারা অন্তরের অন্তস্থল থেকে সেই বিশ্বাসকে ধারণ করেন? যদি সত্যি তারা আন্তরিক হয়ে থাকেন, তাদের কি সবারই সেই অ্যাম্পলফোর্থ মঠ প্রধান বা অ্যাবটের মত আচরণ করা কি উচিৎ নয়? যখন কার্ডিনাল বাসিল হিউম তাকে জানান, তিনি মারা যাচ্ছেন, অ্যাবট তার জন্য অত্যন্ত খুশী হয়েছিলেন: “অনেক শুভেচ্ছা, দারুণ ভালো খবর, আমি যদি আপনার সঙ্গী হতে পারতাম। অ্যাবটের ক্ষেত্রে মনে হয় তিনি সত্যি আন্তরিকভাবেই তা বিশ্বাস করতেন। কিন্তু এটি ঠিক সেই কারণেই এতই দুর্লভ এবং অপ্রত্যাশিত যে তার গল্পটি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, আমাদের মজার খোরাক জোগায় প্রায় অনেকটা সেই মজার কার্টুনের মত যেখানে একজন তরুণী পুরো নগ্ন হয়ে একটা ব্যনার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, ব্যানারে লেখা Make love not war, সেখানে একজন দর্শক মন্তব্য করছেন, Now that’s what I call sincerity!; কেন সব খ্রিষ্টান বা মুসলিমরা একই রকম কিছু বলেন না যেমন, মঠ প্রধান তার বন্ধু মারা যাচ্ছেন এমন খবর শুনে মন্তব্য করেছিলেন? যখন কোনো ধার্মিক মহিলাকে ডাক্তার জানান যে তার জীবনের আর মাত্র কয়েকমাস অবশিষ্ট আছে, কেন তিনি অধীর আগ্রহ বোধ করে না মৃত্যু পরবর্তী জীবনের জন্য, যেমন, লটারীতে সেশেলেস দ্বীপে একটি ভ্যাকেশন জেতার খবর পেলে যেমন অনুভব করতেন? ‘আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না!” কেনই বা তাকে দেখতে আসা সব ধর্মবিশ্বাসীরা, আগে চলে গেছেন এমন সব মানুষদের পৌঁছানোর জন্য নানা বার্তা দিয়ে ভারাক্রান্ত করে ফেলে না? যেমন,’আমার চাচা রবার্টকে দেখলে তাকে আমাদের ভালোবাসা জানিও..।
মারা যাচ্ছেন এমন কারো উপস্থিতিতে ধর্মপ্রাণ মানুষরা কেন এভাবে কথা বলেন না? হতে কি পারে না যে, আসলে তারা যা বিশ্বাস করেন তা আসলে ভান করে বিশ্বাস করেন, আদৌ সত্যিকারের কোনো বিশ্বাস তাদের নেই? অথবা তারা বিশ্বাস করেন, কিন্তু মারা যাবার প্রক্রিয়াটা নিয়ে আরা শঙ্কিত, আর সেটি সঙ্গত কারণেই, যেহেতু আমাদের প্রজাতি হচ্ছে একমাত্র প্রাণী প্রজাতি যাদের পশু-চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে যন্ত্রণামুক্ত হয়ে মরবারও অনুমতি নেই। কিন্তু তাই যদি হয় তাহলে ইউথানাসিয়া বা চিকিৎসক বা অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সহায়তায় আত্মহত্যার বিরুদ্ধে সবচেয়ে সরব প্রতিবাদটা কেন আসে ধর্মপ্রাণ বিশ্বাসীদের কাছ থেকে? ‘অ্যাবট অব অ্যামপলফোর্থ’ বা ‘সেশেলেস দীপপূঞ্জে ছুটি কাটানোর’ মৃত্যুর মডেলের ক্ষেত্রে আপনি কি আশা করবেন না যে, ধর্মীয় মানুষরাই এই পৃথিবীর অসুন্দর জীবনে প্রতি সবচেয়ে কম মোহাচ্ছন্ন হবেন? তারপরও একটি বিস্ময়কর সত্য হচ্ছে যে, আপনার যদি এমন কারো সাথে দেখা হয় যে মার্সি কিলিং এর তীব্র প্রতিবাদ করে বা সহায়তার মাধ্যমে আত্মহত্যার করার প্রতিবাদ করে, আপনি বড় অঙ্কের টাকা বাজী রাখতে পারেন, তাদের ধার্মিক হবার সম্ভাবনাই বেশী। আর এর পোষাকী কারণ হতে পারে যে, তারা বিশ্বাস করেন সব ধরনের হত্যাই পাপ। কিন্তু কেন এটাকে তাদের পাপ মনে হয়, যদি আপনি আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করেন যে কারো স্বর্গ যাত্রাকে আপনি তরান্বিত করছেন?
আত্মহত্যাকে সহায়তার করা ব্যপারে আমার দৃষ্টিভঙ্গি এর বীপরিতে, তা এসেছে মার্ক টোয়াইনের কিছু পর্যবেক্ষণের উপরে, আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, মরে যাবার ব্যপারটা না জন্মানোর মতই– কোনো পার্থক্য নেই। আমি ঠিক তেমনই থাকবো, যেমন আমি ছিলাম উইলিয়াম দ্য কনকরার বা ডায়নোসর বা ট্রাইলোবাইটদের সময়। সেখানে কোনো ভয়ের কিছু নেই। কিন্তু মারা যাবার প্রক্রিয়াটি ভীতিকর হতে পারে, যা নির্ভর করে আমাদের ভাগ্যের উপর, হতে পারে তা যন্ত্রণাময় আর অস্বস্থিকর, সাধারণত যে ধরনের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা অভ্যস্ত হয়েছি জেনারেল অ্যানাশথেশিয়া বা চেতনানাশক দিয়ে নিজেদের সুরক্ষা করতে, যেমন আপনার অ্যাপেনডিক্স কেটে বাদ দেবার কোনো অপারেশন। আপনার পোষা প্রাণীটি যদি যন্ত্রণায় সহ্য করে মারা যেতে থাকে, আপনাকে নিষ্ঠুরতার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হবে, যদি না আপনি পশু-চিকিৎসকের সহায়তা নিয়ে চেতনানাশক ওষুধ দিয়ে সহজে তার মৃত্যুর ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হন। কিন্তু যখন আপনার ডাক্তার এই দয়াশীল কাজটা করবে, যখন আমি নিদারুণ যন্ত্রণায় মৃত্যুর দিন গুনছি, সেই চিকিৎসকের খুন করার দায়ে অভিযুক্ত হবার সম্ভাবনা আছে। আমি যখন মৃত্যুশয্যায়, আমি চাইবো আমার জীবন শেষ হোক কোনো চেতনানাশক ঔষধের প্রভাবে, ঠিক যেন এটা কোনো অসুস্থ অ্যাপেনডিক্স, কিন্তু আমাকে সেই সুযোগ নেবার অনুমতি দেয়া হবে না, কারণ Homo sapiens (২০) প্রজাতি সদস্য হয়ে জন্ম নেবার দুর্ভাগ্য হয়েছে, বিষয়টি ভিন্ন হতে যেমন আমি যদি Canis familiaris (২১) বা Felis catus (২২) প্রজাতির কোনো সদস্য হতাম, এই সুযোগ নিতে আমার কোনো অসুবিধা হতো না। অন্ততপক্ষে এটাই বর্তমান পরিস্থিতি, যদি না আমি আরো উন্মুক্ত চিন্তায় অগ্রসর কোনো এলাকা যেমন সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ড বা ওরেগন না যাই। এধরনের আলোকিত জায়গাই বা কেন এত দুর্লভ– এর মূল কারণ মূলত ধর্মের প্রভাব।
কিন্তু হয়তো বলা যেতেই পারে, আপনার অ্যাপেনডিক্স (২৩) ফেলে দেয়া আর পুরো জীবনটাই নিয়ে নেয়ার মধ্যে কি কোনো গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য নেই? আসলেই না, বিশেষ করে যখন আপনি নিশ্চিৎ মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। এবং আপনার যদি মৃত্যু পরবর্তী জীবনের উপর আন্তরিক ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে থাকে; আপনার যদি সেই বিশ্বাস থাকে, তাহলে মারা যাওয়াটা শুধু একটি জীবন থেকে অন্য জীবনে অতিক্রম করা ছাড়া আর কিছুই না। যদি এই উত্তরণ বা পরিবর্তনের ক্রান্তিকাল যন্ত্রণাময় হয়, তাহলে আপনি ঠিক যেমন কোনো চেতনানাশক ছাড়া আপনি শরীর থেকে অ্যাপেনডিক্স সরাতে চাইবেন না, তেমনি চেতনানাশক ছাড়া এই যন্ত্রণাময় ক্রান্তিকাল অতিক্রম করতেও আপনি চাইবেন না। শুধুমাত্র আমরা যারা মৃত্যুকে একটি সমাপ্তি হিসাবে দেখি, নতুন কোনো জীবনের উত্তরণ হিসাবে না, সরল মনে ভাবতে পারা যেতে পারে যে শুধুমাত্র তারাই তো এই স্বেচ্ছামৃত্যু বা সহায়তার মাধ্যমে আত্মহত্যার প্রতিবাদ করার কথা। তারপরও আমরাই এর সমর্থন করছি (২৪)
এই সূত্রে, একজন পরিচিত সিনিয়র নার্সের একটি পর্যবেক্ষণকে আমরা কিভাবে দেখতে পারি, যিনি তার সারাজীবন একটি বৃদ্ধাশ্রম পরিচালনা করেছেন, যেখানে মৃত্যু নিত্যদিনের ঘটনা; তিনি লক্ষ করেছিলেন যে মানুষগুলো মরতে বেশী ভয় পায় তারা বেশীর ভাগই ধর্মবিশ্বাসী। তার এই পর্যবেক্ষণটিকে পরিসংখ্যানগত ভাবে প্রমাণ করার প্রয়োজন আছে, কিন্তু তাকে যদি সত্যি ধরে নেই, তাহলে সেখানে ব্যপারটা কি ঘটছে? সেটা আর যাই হোক না কেন, সরাসরি মৃত্যু পথযাত্রীদের জন্য ধর্মের সান্ত্বনা দেবার শক্তির পক্ষে জোরালো কোনো যুক্তি দিচ্ছে না (২৫)। ক্যাথলিকদের ক্ষেত্রে, হয়তো তারা পারগেটরি ভয় পায়? সাধুসদৃশ কার্ডিনাল হিউম তার এক বন্ধুকে বিদায় চিঠিতে লিখেছিলেন:”বেশ বিদায়, তোমার সাথে পারগেটরীতে দেখা হবে, মনে হচ্ছে…; কি… মনে হয় হিউমের দয়ালু চোখে সন্দেহবাদের ঝলক ছিল?
পারগেটরির মতবাদ, ধর্মীয় মন কিভাবে কাজ করে সেই অযৌক্তিকতার একটি দারুণ উদাহরণ। পারগেটরি হচ্ছে বলা যায় স্বর্গীয় এলিস দীপপুঞ্জের মত, নরক সদৃশ্য একটি ওয়েটিং রুম বলা যায়, যেখানে মৃত আত্মারা যায়, যাদের পাপ ততটা খারাপ নয়, যে তাদের নরকে পাঠাতে হবে; তবে তাদের এখনও কিছুটা শাস্তিমূলক শিক্ষার প্রয়োজন আছে, যা তাদের বিশুদ্ধ করবে, স্বর্গের পাপমুক্ত বিশুদ্ধ এলাকায় প্রবেশ করার জন্য। মধ্যযুগে চার্চ অর্থের বিনিময়ে ‘ইনডালজেনস বা ক্ষমা বিক্রি করতো, এর মানে হচ্ছে এই নরক সদৃশ ওয়েটিং রুম বা পারগেটরিতে আপনি কত দিন কম থাকতে পারেন সেই দিনগুলির মূল্য হিসাবে চার্চ অর্থ সংগ্রহ করতো। সেই সময় চার্চ আক্ষরিকভাবেই অর্থের বিনিময়ে সার্টিফেকেট প্রদান করতো (কি বিস্ময়কর আত্মম্ভরিতা), পারগেটরি থেকে কয়দিন তাদের মুক্তি মিলেছে ..কয়টা দিন তারা কিনেছেন সেটি উল্লেখ করে। রোমান ক্যাথলিক চার্চ এমন একটি প্রতিষ্ঠান যার অর্থ সম্পত্তি জড়ো করার কথা বর্ণনা করতে গেলে ‘অসৎ উপায়ে সংগৃহীত’ কথাটি হয়তো বিশেষভাবে আবিষ্কার করতে হবে। এই টাকা বানানোর ছল চাতুরী, নরক থেকে মুক্তি বিক্রয় বিশ্বের সবচেয়ে সেরা ঠগবাজী। নাইজেরিয় ইন্টারনেট ঠগবাজীর মধ্যযুগীয় সমতুল্য, তবে ক্যাথলিক চার্চ অনেক বেশী সফল হয়েছিল।
১৯০৩ সালেও দশম পোপ পায়াস রীতিমত গণনা করে সংখ্যাটা হিসাব করতেন, আধিপত্যের ক্রমবিন্যাসে প্রতিটি স্তরের কে কতদিন এই পারগেটরি থেকে মুক্তি পাবার উপযুক্ত: যেমন কার্ডিনালরা ২০০ দিন, আর্চ বিশপরা ১০০ দিন, বিশপরা মাত্র ৫০ দিন; তার সময়ে, যদিও এই সব ইনডালজেন্স সরাসরি টাকার বিনিময়ে বিক্রি হতো না। এমন কি মধ্যযুগেও অর্থই শুধু একমাত্র মাধ্যম ছিলনা পারগেটরি থেকে মুক্ত দিন’ বেচাকেনার জন্য, আপনি পার্থনা করেও এর মুল্য পরিশোধ করতে পারতেন, হয়তো মৃত্যুর আগে আপনি নিজে বা মৃত্যুর পর আপনার পক্ষ থেকে অন্য কেউ এছাড়াও মৃত্যুর পর এই প্রার্থনা কেনা যেত টাকা দিয়ে। আপনি যদি ধনী হতেন, আপনি আপনার আত্মার জন্য সব কিছুর সংস্থান করে যেতে পারতেন অনন্তকালের জন্য। আমার নিজের অক্সফোর্ড কলেজ, নিউ কলেজ, প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৩৭৯ সালে (এটি তখন নতুন) সেই শতাব্দীর অন্যতম সেরা একজন ধনবান জনহিতকারী ব্যক্তির অর্থ সাহায্যে, তিনি হলেন উইলিয়াম অফ উইকাম, উচেষ্টারের বিশপ ছিলেন তিনি। একজন মধ্যযুগীয় বিশপ সেই সময়ের এক একজন বিল গেটস হতে পারতেন, তথ্য প্রবাহের সেই পথ (ঈশ্বর বরাবর) নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে এবং বিপুল ধন সম্পদ জড়ো করতে পারতেন।
তার নিয়ন্ত্রণাধীন গীর্জা বেশ অস্বাভাবিকভাবে বড় ছিল, উইকাম তার সম্পদ আর প্রভাব ব্যবহার করে দুটি অসাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। একটি উইনচেষ্টারে, অন্যটি অক্সফোর্ডে। উইকামের কাছে শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় ছিল। কিন্তু নিউ কলেজের ইতিহাসের আনুষ্ঠানিক দলিল যা প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭৯ সালে এর ছয় শতক পুর্তিতে, সেখানে বিষয়টি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে এই কলেজ তৈরীর মূল উদ্দেশ্য হলো, একটি বিশেষ চান্ট্রি (২৬) বা তার বিদেহী আত্মার শান্তির জন্য নিয়মিত প্রার্থনা করা। এজন্যে তিনি দশজন চ্যাপলেইন, তিন জন কেরানী ও ১৬ জন্য কোরাস শিল্পীর সব ধরনের বন্দোবস্ত করেছিলেন কলেজের গীর্জায় বিশেষ সার্ভিস দেবার জন্য। তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন কলেজের অর্থনৈতিক অবস্থা যতই খারাপ হোক না কেন, কোনো অবস্থাতে এদের যেন ছাটাই না করা হয়। উইকাম তার নতুন কলেজ এর সব ভার ছেড়ে দিয়েছিলেন ফেলোশিপের উপর, একটি স্বনির্বাচিত গ্রুপ, যা গত ৬০০ বছর ধরে একটি প্রাণীর মত তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। স্পষ্টতই তিনি আমাদের উপর ভরসা করেছিলেন যে শতাব্দীর পর শতাব্দী আমরা তার আত্মার পরিত্রাণের জন্য প্রার্থনা করবো।
বর্তমানে কলেজের একজনই চ্যাপলেইন আছেন (২৭) এবং কোনো ক্লার্ক নেই। শতাব্দীর পর শতাব্দী পারগেটরীতে থাকা উইকামের জন্য প্রার্থনার স্রোতধারা বর্তমানে ক্ষীণ একটি ধারা হয়ে বছরে মাত্র দুবারে এসে টিকেছে। শুধু কোরাস গায়করা একা একাই নানা স্বরে তাদের প্রার্থনা সঙ্গীত গেয়ে চলছেন, আর তাদের সেই সমবেত সঙ্গীত সত্যি বিস্ময়কর তার যাদুকরী মোহময়তায়। এমনকি আমারও সেই ফেলোশিপের একজন সদস্য হয়ে একটি বিশ্বাস ভাঙ্গার জন্য খানিকটা অপরাধবোধ অনুভূত হয়। তার নিজের সময়ে ধারণা অনুযায়ী উইকাম বর্তমান যুগের কোনো ধনী ব্যক্তি যা করতেন তার সমতুল্য কাজটি করেছিলেন, বর্তমান সময়ের কোনো ধনী ব্যক্তি হয়তো ক্রায়োজেনিক কোনো কোম্পানীতে মোটা অঙ্কের টাকা জমা করতেন যা তার শরীরকে শীতলীকরণ করে রাখার নিশ্চয়তা দেয় যে অসুখের কারণে আপনি বর্তমানে মারা যাচ্ছেন তার চিকিৎসা করার ক্ষমতা অর্জন না করে।যা যে কোনো ধরনের মানব সৃষ্ট বা প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে আপনার শরীরকে রক্ষা করার প্রতিজ্ঞা করবে যত দিন না পর্যন্ত ভবিষ্যতের কোনো দিন চিকিৎবিজ্ঞানের যথেষ্ট অগ্রগতি হয় এবং সেই প্রযুক্তির উদ্ভাবন হয়, যে প্রযুক্তি জানবে কিভাবে আপনাকে এই শীতলীকরণ থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় আনা ও সুস্থ্য করে তোলা যায়। আমরা নিউ কলেজের পরবর্তী ফেলোরা কি এর প্রতিষ্ঠাতা পিতাকে দেয়া প্রতিজ্ঞাটা অস্বীকার করছি। যদি তাই হয়, তাহলে আমরা সঠিক সঙ্গেই আছি। শত শত মধ্যযুগীয় পৃষ্ঠপোষক তাদের উত্তরাধিকারদের বিশ্বাস করেই মারা গেছেন। যাদের যথেষ্ট বিশাল অংকের টাকা তারা দান করে গেছন, পারগেটরিতে যখন থাকবেন তাদের পরিত্রাণ কামনা করে প্রার্থনা করা হবে এই ধারণায়। আমি বাধ্য হচ্ছি চিন্তা করতে যে, ইউরোপের শিল্প ও স্থাপত্যের মধ্যযুগীয় সম্পদের কি পরিমান অংশ আসলে পরকালের শাস্তির জন্য ডাউন পেমেন্ট হিসাবে করা হয়েছে, যে বিশ্বাস এখন ভঙ্গ করা হয়েছে।
কিন্তু পারগেটরির এই উদ্ভট মতবাদের বিরুদ্ধে আমাকে যে বিষয়টা সত্যি বিস্মিত করে, তাহলে এর সপক্ষে ধর্মতত্ত্ববিদদের দাবী করা প্রমাণগুলো: যে প্রমাণগুলো এত চরমভাবে দুর্বল যে সেগুলো এর দাবী করা অবস্থান তো দিচ্ছেই না বরং হাস্যকর করে তুলেছে বিষয়টি। ক্যাথলিক এনসাইক্লোপিডিয়ার পারগেটরি বিষয়টি লক্ষ করলে দেখা যায় সেখানে প্রমাণসমূহ নামে একটি অনুচ্ছেদ আছে, যা পারগেটরির অস্তিত্বের প্রমাণ হিসাবে ধরা হচ্ছে। যদি খুব সরলভাবে মৃতরা স্বর্গ কিংবা নরকে যায় এই পৃথিবীতে তাদের করা পাপের জন্য, তাহলে তো তাদের জন্য প্রার্থনা করা কোনো অর্থই নেই। কেন মৃত মানুষের জন্য আমরা প্রার্থনা করবো, যদি সেই বিশ্বাসটি না থাকে যে যারা ঈশ্বরের দয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, প্রার্থনার ক্ষমতা আছে তাদের জন্যে তা শান্তি এনে দেবে। এবং তারপরও মৃতদের জন্য আমরা দোয়া করি, তাই না? সেকারণে পারগেটরীর নিশ্চয়ই কোনো অস্তিত্ব আছে। নাহলে আমাদের এই দোয়া অর্থহীন। সুতরাং Q.E.D (২৮); এটি সত্যিই একটি বড় উদাহরণ, ধর্মতত্ত্ববিদদের মনে সাধারণত যুক্তি হিসাবে কি গণ্য হতে পারে।
এই বিস্ময়কর non sequitur (২৯) সমতুল্য বা অযৌক্তিক অনুমান অন্য একটি উদাহরণের, যা আরো বড় ক্ষেত্রে, সান্ত্বনা থেকে নেয়া যুক্তির সাধারণ ব্যবহার। অবশ্যই একজন ঈশ্বর আছেন, এই যুক্তি বলছে কারণ যদি ঈশ্বরের অস্তিত্ব না থাকতো জীবন হতো শূন্য, অপচয়, অর্থহীনতা আর গুরুত্বহীনতার একটি মিশ্রণ। কিভাবে প্রয়োজনীয় হতে পারে যে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাতে হবে শুরুতেই এই যুক্তিটি পরাজিত হয়েছে কিনা। হতে পারে জীবন শূন্য, হতে পারে মৃতদের জন্য আমাদের দোয়া অর্থহীন, এর বিপরীতটা মনে করা এই উপসংহারের সত্যতা যা আমরা প্রমাণ করার চেষ্টা করছি সেটি মেনে নেয়া। প্রস্তাবিত সিলোজিজম (বা দুটি প্রস্তাবনা থেকে নেয়া সিদ্ধান্ত-অনুমান) (৩০) স্পষ্টভাবে সারকুলার বা আবদ্ধ যুক্তি। আপনার স্ত্রীকে ছাড়া আপনার জীবন হয়তো অসহ্য, শূন্য আর হাহাকারময় মনে হতে পারে, কিন্তু তা দুঃখজনভাবে সেটি তার মৃত অবস্থার কোনো পরিবর্তন ঘটায় না। এই পূর্বধারণার মধ্যে শিশুসুলভ কিছু বিষয় আছে, যেমন, আপনার জীবনের লক্ষ্য এবং অর্থপূর্ণ করে তুলতে অন্য কারোর (শিশুদের ক্ষেত্রে তাদের পিতা মাতা, পূর্ণবয়স্কদের ক্ষেত্রে ঈশ্বর) দ্বায়িত্ব আছে, এটি সেই সব মানুষদের ছেলেমানুষী যারা কিনা যখনই গোঁড়ালী মচকায়, চারপাশে তাকিয়ে খুঁজে বের করা চেষ্টা করেন, কার বিরুদ্ধে আইনী মামলা করা যায়। আমার ভালো থাকার জন্য কাউকে না কাউকে অবশ্যই দায়ী হতে হবে, এবং আমি যখন আঘাত পাবে তার জন্য কাউকে না কাউকে অবশ্যই দোষী হতে হবে। এই একই ধরনের বালখিল্যতা কি সত্যি সত্যি ঈশ্বরের প্রয়োজনীয়তার কারণ নয়? আমরা কি আবারও সেই বিষ্কারে ফেরত যাচ্ছি?
সত্যিকারের প্রাপ্তবয়স্ক দৃষ্টিভঙ্গি হলো এর বিপরীত, আমাদের জীবন ততটুকুই পূর্ণ আর অর্থবহ আর চমৎকার হবে যতটুকু আমরা তা করতে চাই। সত্যি সত্যিই আমরা আমাদের জীবনকে আসলে অসাধারণ করে তুলতে পারি। যদি বিজ্ঞান জাগতিক বস্তুবাদী নয় এমন কোনো সান্ত্বনা দেয়, এটি আমার শেষ বিষয়টির সাথে মিশে যায়…অনুপ্রেরণা।
অনুপ্রেরণা
ব্যক্তিগত অভিরুচি আর বিবেচনা প্রক্রিয়ার উপর বিষয়টি নির্ভর করে, যার কিছুটা দুর্ভাগ্যজনক প্রভাব আছে; যে যুক্তির প্রক্রিয়া মূলত আমি ব্যবহার করব সেটি যুক্তি অপেক্ষা বরং ভাষার আলঙ্কারিক ব্যবহারই বেশী মনে হতে পারে। এর আগেও আমি তা ব্যবহার করেছি, যেমন করেছেন অনেকেই এর আগে। সাম্প্রতিক কিছু উদাহরণ দেয়া যেতে পারে, যেমন কার্ল সেগান তার ‘পেল ব্লু ডটে’ (৩১), ই, ও, উইলসন তার ‘বায়োফিলিয়ায়’ (৩২), মাইকেল শেরমার তাঁর ‘দ্য সোল অফ সায়েন্সে’ (৩৩) এবং পল কার্টজ তার “অ্যাফারমেশনে’ (৩৪) আর “আনউইভিং দ্য রেইনবো’তে (৩৫) আমি চেষ্টা করেছিলাম সেই বার্তাটিকেই ব্যাখ্যা করতে যে, বিস্ময়করভাবে ঠিক কতটা বেশী ভাগ্যবান যে আমরা বেঁচে আছি, যখন ডিএনএর সেই সন্নিবেশন প্রক্রিয়ার লটারীতে বিশাল সংখ্যক মানুষের হয়তো কোনোদিনও জন্মই হবে না। আমরা যারা কেবল যথেষ্ট ভাগ্যবান হিসাবে বেঁচে আছি তাদের জন্য আমি জীবনের আপেক্ষিক সংক্ষিপ্তটাকে কল্পনা করি সময়ের একটি সুবিশাল স্কেল ধরে এগুতে থাকা খুব সরু লেজারের একটি স্পটলাইট। সেই স্পটলাইটের আগে ও পেছনে ঢেকে আছে মৃত অতীতের গভীর অন্ধকার অথবা অজানা ভবিষ্যতের অন্ধকার। আমরা বিস্ময়করভাবে ভাগ্যবান এই স্পটলাইটে নিজেদের অস্তিত্বকে খুঁজে পেয়েছি, এই সূর্যের নীচে আমাদের সময় যতই সংক্ষিপ্ত হোক না কেন। যদি আমরা এর একটি সেকেন্ডও অপচয় করি বা আক্ষেপ করি যে এটি নিরস বা শূন্য বা কোনো শিশুর মতো) যদি বলি বোরিং, সেটি কি খুব বেশী মাত্রায় অসংবেদনশীল অবমাননা হবে না.. সেই জন্ম না নেওয়া অসংখ্য হাজার কোটি মানুষদের জন্য, যারা জীবনের কোনো স্পর্শ পায়নি? অনেক নিরীশ্বরবাদী আমার চেয়ে আরো বেশী ভালোভাবে বলেছেন, জীবন মাত্র একটি, এই জ্ঞানটি আমাদের জীবনকে আরো মহামূল্যবান করেছে। জীবনকে ভালোবাসার অনুপ্রেরণাদায়ী, জীবনকে আরো সুন্দর করার প্রেরণা দেয় নিরীশ্বরবাদীদের দৃষ্টিভঙ্গি, একই সাথে এটি সেই সব মানুষদের আত্মবিভ্রম আর খামখেয়ালী চিন্তা আর বিরক্তিকর আত্মকরুণা দিয়ে কখনোও কলুষিত হয়নি, যারা মনে করেন তাদের কাছে জীবন ঋণী। এমিলি ডিকিনসন (৩৫) বলেছিলেন, যেহেতু আর কখনোই পুনরাবৃত্তি হবে না, একারণেই জীবন এত মধুর (৩৬);
That it will never come again
Is what makes life so sweet.
যদি ঈশ্বরের মৃত্যু একটি শূন্যস্থান সৃষ্টি করে যায়, বিভিন্ন মানুষ এটি পূর্ণ করবে ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে, আর আমার উপায় হচ্ছে ভালো মাত্রায় বিজ্ঞান, সৎ আর পদ্ধতিগত প্রচেষ্টা, যা সত্যিকার পৃথিবী সম্বন্ধে সত্যটা খুঁজে বের করে। আমি মহাবিশ্বকে বোঝার মানবিক প্রচেষ্টাকে দেখি মডেল তৈরী করার একটি এন্টারপ্রাইজ হিসাবে। প্রত্যেকেই তাদের মাথার ভিতরে এই পৃথিবীর একটি মডেল তৈরী করার চেষ্টা করেন, যেখানে আমাদের বসবাস। ন্যূনতম মডেলটি ছিল আমাদের পূর্বপুরুষদের, যার শুধু প্রয়োজন ছিল এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য। প্রাকৃতিক নির্বাচনের দ্বারা এই সিমুলেশন সফটওয়্যারটি তৈরী এবং বাগ বা ক্রটি মুক্ত হয়েছে, এবং এটি সবচেয়ে দক্ষ ছিল আফ্রিকার সাভানায় আমাদের পূর্বপুরুষদের পরিচিত পৃথিবীতে: একটি ত্রিমাত্রিক বিশ্ব, মধ্যম আকৃতির নানা বস্তুর, তারা মধ্যম গতিতে পরস্পর সাপেক্ষে গতিময়। অপ্রত্যাশিত বোনাস হিসাবে আমাদের মস্তিস্ক ঘটনাচক্রে যথেষ্ট শক্তিশালী আরো সমৃদ্ধ বিশ্ব মডেল যা মাঝারী উপযোগীতাবাদের মডেল থেকে ভিন্ন যা কিনা একসময় আমাদের পূর্বপুরুষদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন ছিল। শিল্প আর বিজ্ঞান এই বোনাসের একটি অন্যতম প্রকাশ। একটি শেষ দৃশ্যকল্প রচনা করার সুযোগ দিন, মনকে উন্মুক্ত ও সাইকিকে সন্তুষ্ট করার বিজ্ঞানের শক্তিকে যা প্রকাশ করবে।
সব অবগুণ্ঠন বোরকার জননী
অত্যন্ত দুঃখজনক যে দৃশ্যটি এখন আমাদের রাস্তায় ইদানীং রাস্তায় দেখা যায়, তা হলো সেই সব রমনীদের দৃশ্য, যাদের আপাদমস্তক অবয়ব কিংবা আকারহীন কালো কাপড়ে ঢাকা, চোখের সামনে সামান্য একটু ছিদ্র দিয়ে যারা উঁকি দিয়ে সারা পৃথিবীকে দেখছেন। এই বোরকা নারীদের শোষণ করার অস্ত্রই শুধু নয়, তাদের স্বাধীনতা আর সৌন্দর্যের নির্মম নীপিড়ন, শুধুমাত্র সুস্পষ্ট পরুষতান্ত্রিক নিষ্ঠুরতা আর দুঃখজনকভাবে নতি স্বীকার করা নারীর আত্মসমর্পনের চিহ্নই শুধু নয়। আমি এই বোরকার সেই সরু ছিদ্রকে ব্যবহার করতে চাই অন্য আরেকটি জিনিসের প্রতীক হিসাবে।
আমাদের চোখ তড়িৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গ বর্ণালীর খুব সংকীর্ণ একটি অংশই অনুভব করতে পারে। আমাদের দৃশ্যমান আলো সুবিশাল অন্ধকার বা আলোহীন তরঙ্গ বর্ণালীর সামান্য একটি উজ্জ্বল অংশ আমাদের জন্য, যা বিস্তৃত রেডিও তরঙ্গর দীর্ঘ তরঙ্গের প্রান্ত থেকে হ্রস্ব দৈর্ঘের গামা রে পর্যন্ত। এবং এই দেখার সীমানাটা যে কত সংকীর্ণ সেটা খুবই কঠিন আসলে বোঝা এবং আর সেটা বোঝানোও একটি চ্যালেঞ্জ এর মত। সেকারণে একটা সুবিশাল বোরকার কথা কল্পনা করুন, যার সামনে দেখার জন্য খানিকটা খোলা অংশ থাকে সাধারণত যতটুকু প্রশস্ত হয়ে থাকে, যেমন ধরুন সেই ছিদ্রটি প্রায় এক ইঞ্চি। কাল্পনিক সেই বোরকার দেখার ছিদ্রের উপরে কালো কাপড়ের দৈর্ঘ্য যদি অদৃশ্য বর্ণালী বা স্পেকট্রামের হ্রস্ব দৈর্ঘ তরঙ্গ অংশের প্রতিনিধিত্ব করে এবং ছিদ্রের নীচের অংশের কাপড় যদি দীর্ঘতর তরঙ্গের প্রতিনিধিত্ব করে, তাহলে বোরকাটিকে ঠিক কত বড় হতে হবে সেই একই স্কেলে মাত্র এক ইঞ্চি ছিদ্রের জায়গা দিতে? লগারিদম স্কেলের অবতারণা করে বোধগম্যভাবে এটা উপস্থাপন করা খুবই কঠিন কারণ একটি বিশাল দৈর্ঘ্যের কথা আমরা ভাবছি সেটা বোঝানোর জন্য। আর কোনো বইয়ের শেষ অধ্যায় লগারিদম নিয়ে আলোচনা শুরু করার জন্য অবশ্যই উপযুক্ত জায়গা না। তবে আমার কথা মেনে নিতে পারেন, যে সেই মাত্রায় এটি সব বোরকার মহাজননীর আকারেরই হবে। দৃশ্যমান আলোর এক ইঞ্চি জানালা হাস্যকরভাবে ক্ষুদ্র মাইলের পর মাইল কালো কাপড়ের তুলনায় যা কিনা আমাদের দৃষ্টিতে অদৃশ্য স্পেকট্রামের প্রতিনিধিত্ব করছে। বোরকার নীচ প্রান্তের রেডিও ওয়েভ থেকে মাথার উপরের প্রান্তে গামা রে পর্যন্ত। বিজ্ঞান আমাদের জন্য যা করে, তা হচ্ছে এটি আমাদের দিগন্তটাকে প্রসারিত করে, আরো প্রশস্তভাবে জানালাটা খুলে দেয়, তীব্র আনন্দময় বন্ধনহীন মুক্ত স্বাধীনতায় এটি আমাদের অনুভূতিগুলোকে উন্মুক্ত করে দেয়।
মহাকাশ স্ক্যান বা পদ্ধতিগতভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য অপটিক্যাল টেলিস্কোপগুলো কাঁচের লেন্স আর আয়না ব্যবহার করে, তারা যা দেখে তা হলো কিছু নক্ষত্র, যা ঘটনাচক্রে সংকীর্ণ একটি সীমানার আলোকতরঙ্গ বিকরণ করে, যাকে আমরা দৃশ্যমান আলো বলি। কিন্তু এমনও টেলিস্কোপ আছে যারা এক্সরে অথবা রেডিও তরঙ্গ দেখতে বা শনাক্ত করতে পারে। যা আমাদের উপহার দেয় অন্য এক রাতের আকাশে নক্ষত্রের সম্ভার। ক্ষুদ্র স্কেলে সঠিক ফিল্টারসহ ক্যামেরা অতিবেগুনী রশ্মি দেখতে পারে, এবং আমরা ফুলের ছবি তুললে দেখতে পাই ফুলের মধ্যে অপার্থিব নানা দাগ বা চিহ্ন যা আমরা খালি চোখে দেখিনা, যাদের মনে করা হয় আপাতদৃষ্টিতে পরিকল্পনা করা হয়েছে কীটপতঙ্গের চোখের জন্য; পতঙ্গের চোখে দেখার দৃশ্যমান আলোক তরঙ্গের স্পেকট্রাম আমাদের মতই, শুধু তা খানিকটা সেই কাল্পনিক বোরকার উপরের দিকে সরে গেছে, তারা লাল রঙ দেখতে পারে না, তবে অতিবেগুনী রশ্মির (অতিবেগুনী রশ্মির বাগান) বর্ণালীর এর অনেকটুকই দেখতে পারে যা আমরা পারি না (৩৭)।
সরু জানালা দিয়ে দেখা দৃশ্যমান আলোর এই রুপক আরো প্রশস্ত হয় বিস্ময়কর বিশাল বর্ণালীতে.. যা বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখাতেও আমাদের সাহায্য করে। আমরা বাস করি সুবিশাল গভীরতার নানা মাত্রার একটি মিউজিয়ামে, বিশ্বটাকে দেখি আমাদের সেই সব ইন্দ্রিয় আর স্নায়ুতন্ত্র দিয়ে যার ক্ষমতা আছে ক্ষুদ্র মাঝারী পর্যায়ের সব কিছু অনুভব করার, মাঝারী পর্যায়ের গতিতে চলাচল করার, আমরা অভ্যস্ত সেই সব বস্তু নিয়ে, কয়েক কিলোমিটার থেকে (পাহাড়ের চূড়া থেকে এক মিলিমিটারের এক দশমাংশ (পিনের অগ্রভাগ) অবধি। এর বাইরে এমন কি আমাদের কল্পনাও প্রতিবন্ধী, আমাদের দরকার গণিত আর নানা যান্ত্রিক উপকরণের, সৌভাগ্যক্রমে যা আমরা ব্যবহার করেতে শিখেছি। এই নানা আকারের, দূরত্বের বা গতির সীমানা বা রেঞ্জ যার সাথে আমাদের কল্পনা মোটামুটি পেরে ওঠে স্বস্তির সাথে, আসলেই খুব সীমিত আর সংকীর্ণ, সেই সামান্য সীমানার অবস্থান আসলেই সম্ভব হতে পারে এমন বিশাল একটি রেঞ্জ বা সীমানার মধ্যে কোনোখানে, কোয়ান্টামের বিস্ময়কর ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জগতের সীমানা থেকে আইনেস্টাইনিয় মহাজগতের অসীম বিশালতায়।
আমাদের কল্পনাগুলো হতাশাজনকভাবে অনুপযুক্ত ঐতিহাসিকভাবে পরিচিত মধ্যবর্তী এই সংকীর্ণ অংশের বাইরে কোনো দূরত্বর সাথে খাপ খাইয়ে নেবার জন্যে। আমরা ক্ষুদ্র বল হিসাবে ইলেকট্রনকে কল্পনা করি, যা কেন্দ্রের একগুচ্ছ বলকে ঘিরে, যারা প্রোটন আর নিউট্রনকে প্রতিনিধিত্ব করছে– প্রদক্ষিণ করছে। কিন্তু সেটা আদৌ এর সত্যিকারের চেহারা না, ইলেকট্রন ছোট বলের মত দেখতে না, সেগুলো আমাদের পরিচিত এমন কোনো কিছুর মতই না। আর বিষয়টা স্পষ্টও না যে এই সদৃশ্যতা মানে এমন কিছু যখন আমরা বাস্তবতার খুব কাছাকাছি থেকে তা ভাবার চেষ্টা করবো, আমাদের কল্পনা এখনও কোয়ান্টাম জগতের সেই এলাকার ধারে কাছে যাবার জন্যে প্রস্তুত হয়নি। সেই মাত্রায় কোনো বস্তু তাদের যেমন আচরণ করা উচিৎ, যেমনটা ভাবতে আমরা বিবর্তিত হয়েছি, সেভাবে আচরণ করেনা। এছাড়া আলোর গতির মোটামুটি কাছের কোনো বস্তু কিভাবে আচরণ করবে সেটার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারিনি। সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান আমাদের ব্যর্থ করে। কারণ আমাদের সেই সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান এমন একটি পৃথিবীতে বিবর্তিত হয়েছে যেখানে কোনো কিছু দ্রুত নাড়াচড়া করে না বা কোনো কিছুই খুব ছোট বা খুব বড় না।
বিখ্যাত জীববিজ্ঞানী জে. বি এস. হলডেন (৩৮) তার বিখ্যাত প্রবন্ধ ‘পসিবল ওয়ার্ল্ডস’এর শেষাংশে লিখেছিলেন, “আপাতত আমার নিজের সন্দেহ হচ্ছে যে মহাবিশ্ব সম্বন্ধে আমাদের যা ধারণা, এটি তার চেয়েও শুধু বেশী অদ্ভুতই না, বরং আমরা যা ধারণা করতে পারি তার চেয়েও অনেক বেশী অদ্ভুত। আমার সন্দেহ আমরা যা স্বপ্নে দেখতে পারি, বা যতটুকু স্বপ্নে আমাদের দেখা সম্ভব তার চেয়েও অনেক কিছু আছে এই মহাবিশ্বে, যে দর্শনে আমরা ভাবিনা কেন..। কথা প্রসঙ্গে হলডেনের অবতারণা করা হ্যামলেটের বিখ্যাত যে সংলাপটি আমাকে বিস্মিত করে যা সাধারণও সঠিক অর্থে উপস্থাপন করা হয় না। সাধারণত গুরুত্বটা দেয়া হয় your বা আপনার শব্দটার উপর:
There are more things in heaven and earth, Horatio,
Than are dreamt in your philosophy.
আসলেই এই পংক্তিটি প্রায়ই খেয়ালখুশী মত ব্যবহার করা হয়, উদ্দেশ্য, হোরেশিও সব জায়গার ‘অগভীর’ যুক্তিবাদী আর সন্দেহবাদীদের প্রতিনিধিত্ব করছেন। কিছু গবেষক জোর দিয়েছেন ‘philosophy’ শব্দটার উপর যেখানে your প্রায় অদৃশ্য; dreamt of in your Philoshphy এর চেয়ে। বর্তমান আলোচনায় বিষয়টি বিবেচ্য না। বর্তমান আলোচনার জন্য এই পার্থক্য গুরুত্বপূর্ণ না, শুধু দ্বিতীয় ব্যাখ্যাটি ইতিমধ্যে হলডেনে ‘যেকোনো’ দর্শনের ব্যাখ্যার বিবরণ দিয়েছে।
এই বইটি যাকে উৎসর্গ করা হয়েছে তিনি বিজ্ঞানের বিস্ময়ের মাঝে তার জীবিকা খুঁজে পেয়েছিলেন। যাকে তিনি পৌঁছে দিয়েছিলে কমেডির নতুন দিগন্তে। ১৯৯৮ সালে কেমব্রিজে তার একটি তাৎক্ষণিক বক্তৃতা থেকে কিছু অংশ, যা আগেও উল্লেখ করেছিলাম আমি : ‘বাস্তবতা হচ্ছে, আমরা গ্যাস দিয়ে ঢাকা একটি গ্রহের পৃষ্ঠে মাধ্যাকর্ষণের একটি গভীর কুয়ার মত গর্তে বসবাস করি, যে গ্রহটি ৯০ মিলিয়ন মাইল দূরে একটি পারমানবিক আগুনের গোলকের চারপাশে ঘুরছে এবং এটাকে আমরা ভাবছি স্বাভাবিক, অবশ্যই বিষয়টি ইঙ্গিত করে আমাদের বোঝার ক্ষমতা কি পরিমান একপেশে হয়েছে। অন্য কল্প-বিজ্ঞানের লেখকরা যখন বিজ্ঞানের অদ্ভুত বিষয়গুলো ব্যবহার করে, রহস্যময়তা অনুভব করার আমাদের শক্তিটাকে জাগিয়ে তোলেন, তখন ডগলাস অ্যাডামস সেই একই বিষয়গুলো ব্যবহার করেছিলেন আমাদেরকে হাসানোর জন্য। (যারা তার ‘দ্য হিচ হাইকারস গাইড টু গ্যালাক্সী’ পড়েছেন তারা হয়তো সেই infinite improbability drive এর উদাহরণটা এখানে মনে করতে পারেন।) হাস্যরস আর কৌতুক হয়তো তর্কসাপেক্ষে সবচেয়ে সেরা প্রতিক্রিয়া হতে পারে আধুনিক পদার্থবিদ্যার নানা প্যারাডক্স এর প্রতি কারণ এর বিকল্প, আমি মাঝে মাঝে ভাবি, হতে পারে চোখের পানি ফেলা।
কোয়ান্টাম মেকানিক্স, সেই কিছু মানুষের বোঝার জন্য সংরক্ষিত বিংশ শতাব্দীর সেরা বৈজ্ঞানিক অর্জন দারুণভাবে সফল হয়েছে সত্যিকার বাস্তবতা সম্বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভবিষ্যদ্বাণী করতে। রিচার্ড ফাইনমান (৩৯) এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলো সূক্ষ্মতা তুলনা করেছিলেন উত্তর আমেরিকার মত কোনো বিশাল ভূখণ্ডের প্রশস্ততা পরিমাপের ভবিষ্যদ্বাণীটি একটি চুলের প্রশস্ততা সমান সূক্ষ্মতা অর্জন করতে সফল হওয়ার সাথে। আর এই পূর্বধারণা করার ক্ষমতাই বলছে। কোয়ান্টাম তত্ত্বের কিছু না কিছু আছে যা কোনো না কোনোভাবে সত্যি। আমাদের জানা আর আর সবকিছুর মতই সত্যি, এমনকি আমাদের সাদামাটা কাণ্ডজ্ঞানের বাইরে না। কিন্তু যে ধারণা বা প্রাকশর্তগুলো কোয়ান্টাম তত্ত্বে প্রয়োজন সেই সব ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য,তারা এতই রহস্যময় যে এমনকি মহান ফাইনম্যান নিজেই বলতে বাধ্য হয়েছিলেন (এই উদ্ধৃতির বেশ কয়েকটি সংস্করণ আছে, যাদের মধ্যে এটি সবচেয়ে নিকটতম): ‘আপনি যদি ভাবেন যে আমি কোয়ান্টাম তত্ত্ব বুঝতে পেরেছেন… আপনি আসলে কোয়ান্টাম তত্ত্বটি বোঝেননি (৪০)।
কোয়ান্টাম তত্ত্ব এত বেশী অদ্ভুত যে পদার্থবিজ্ঞানীদের আপাতদৃষ্টিতে স্ববিরোধী কোনো না কোনো একটির ব্যাখ্যার সাহায্য নিতে হয়। সঠিক শব্দ হবে আশ্রয় নিতে হয়। ডেভিড ডয়েশ তার ‘দ্য ফ্যাব্রিক অব রিয়েলিটি’(৪১) বইটিতে কোয়ান্টাম তত্ত্বের বহু জগত বা বহু বিশ্ব ব্যাখ্যাটি মেনে নিয়েছেন, এটির সম্বন্ধে সবচেয়ে খারাপ যেটি আপনি বলতে পারবেন তাহলে এটি অস্বাভাবিক মাত্রায় অপচয়মূলক। এটি বিশাল দ্রুত বাড়তে থাকা বহু মহাবিশ্বের প্রস্তাব করেছে, একই সমান্তরালে যাদের অস্তিত্ব, যারা পরস্পরকে শনাক্ত করতে পারে না, শুধুমাত্র খুবই সংকীর্ণ কোয়ান্টাম মেকানিক্স-এর পরীক্ষার পোর্টহোল বা ঘুলঘুলি ছাড়া। এরকম বেশ কয়েকটি মহাবিশ্বে আমি ইতিমধ্যেই মৃত। এর অল্প কয়েকটিতে আপনার হয়তো সবুজ রঙের গোফ আছে ইত্যাদি।
এর বিকল্প কোপেনহেগেন ব্যাখ্যা একই রকম উদ্ভট তবে এত অপচয়মূলক না, শুধু বিস্ময়কর মাত্রায় প্যারাডক্সিকাল। এরউইন শ্রোডিঙ্গার (৪২) এটি ব্যঙ্গ করেছিলেন তার বিড়ালের প্যরাবল ব্যবহার করে। শ্রোডিঙ্গারের বিড়াল একটি বাক্সে বন্দী, যেখানে বিড়ালটিকে হত্যা করার একটি মেকানিজম আছে যা সক্রিয় হয় একটি কোয়ান্টাম মেকানিকাল কোনো ঘটনায়। সেই বাক্সের ঢাকনী খোলার আগে, আমরা জানি না বিড়ালটি কি মরে গেছে না বেঁচে আছে। সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান বলছে যে, যাই হোক না কেন বিড়ালটি অবশ্যই হয় জীবিত না হয় মৃত এই বাক্সের মধ্যে। কোপেনহেগেন ব্যাখ্যা এই কমন সেন্সটাকে বিরোধীতা করছে। যা কিছুর অস্তিত্ব আছে এই বাক্সটি আমাদের খোলার আগে তা হচ্ছে সম্ভাবনা। যখনই আমরা বাক্সটি খুলছি, তখনই ওয়েভ ফাংশন ব্যর্থ হচ্ছে আমাদের হাতে থাকছে শুধু একটি ইভেন্ট বা ঘটনাঃ বিড়ালটি মারা গেছে বা বিড়ালটি বেঁচে আছে। যতক্ষণ না আমরা বাক্সটি খুলছি, এটি যেমন মরেনি আবার তেমন বেঁচেও নেই।
আর ‘বহু বিশ্ব ব্যাখ্যা এই একটি ঘটনাটিকে দেখছে অন্যভাবে, যে কিছু মহাবিশ্বে বিড়ালটি মূত, কিছু অন্য মহাবিশ্বে বিড়ালটি বেঁচে আছে। কোনো ব্যাখ্যাই মানুষের কমনসেন্স বা সাধারণ অন্তর্গত বোধকে সন্তুষ্ট করতে পারেনা। কিন্তু আরো জাদরেল পদার্থবিজ্ঞানীরা ব্যপারটা নিয়ে আদৌ চিন্তিত নন। আসল ব্যপারটা হচ্ছে গাণিতিক, পরীক্ষামূলকভাবে নানা ভবিষ্যদ্বাণী সত্য প্রমাণিত হয়। আমরা অধিকাংশই খুবই দুর্বল সেগুলো বোঝার জন্য। আমাদের যা প্রয়োজন তা হলো এক ধরনের দৃশ্যপট কল্পনা করে নেয়া, আসলে কি ঘটছে তা বোঝার জন্য। প্রসঙ্গক্রমে আমি বুঝতে পারি, শ্রোডিঙ্গার প্রথমত তার বিড়ালের চিন্তার পরীক্ষাটি প্রস্তাব করেছিলেন কোপেনহেগেন ইন্টারপ্রিটেশনের অসারতাগুলো বোঝতে আর সেগুলো চিহ্নিত করতে, যা তিনি দেখেছিলেন।
জীববিজ্ঞানী লুইস ওলপার্ট বিশ্বাস করেন যে, আধুনিক পদার্থবিদ্যার অদ্ভুত বিষয়গুলো আসলে হিমশৈলের উপরিভাগ পর্যন্ত। সাধারণভাবেই বিজ্ঞান, প্রযুক্তির ব্যতিক্রম সেই বিষয়গুলো সাধারণ কাণ্ডজ্ঞানকে লণ্ড ভণ্ড করে দেয় (৪৩)। একটি পরিচিত উদাহরণ যেমন, আপনি যখনই এক গ্লাস পানি খাচ্ছেন, বেশ ভালো সম্ভাবনা আছে যে আপনি সেখানে অন্তত একটা অণু শোষণ করে নেবেন যা কোনো একসময় অলিভার ক্রমওয়েলের মূত্রনালী দিয়ে বের হয়েছে, এটি খুবই মৌলিক একটি সম্ভাবনা তত্ত্ব। একটি পূর্ণ গ্লাসের মধ্যে যে পরিমান অণু আছে তার সংখ্যা, সারা পৃথিবীতে পূর্ণ গ্লাসের সংখ্যার চেয়েও অনেক বেশী। সুতরাং যখনই আমরা পুরো এক গ্লাস পানি খাই আমরা পৃথিবীতে অস্তিত্ব আছে এমন পানির অণুর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আমরা ভেতরে নিচ্ছি। অবশই ক্রমওয়েল বা মূত্রথলীর কোনোটারই কোনো বিশেষ বিশেষত্ব নেই। আপনি কি এই মাত্র সেই নাইট্রোজেন অণুটা নিশ্বাসের সাথে গ্রহন করলেন যা কিনা কোনো এক সময় লম্বা সাইকাড (৪৪) গাছের বা দিকে দাঁড়ানো তৃতীয় ইগুয়ানোড়নটা (৪৫) তার প্রশ্বাসের সাথে বাতাসে ছড়িয়ে দিয়েছিল? আপনি কি খুশী না, এমন একটা পৃথিবীতে বেঁচে থেকে, যেখানে শুধুমাত্র এই ধরনের কল্পনা বা ধারণাই সম্ভব না, আপনি সৌভাগ্যবানও যে এটি কেন হতে পারে সেটি বুঝতেও সক্ষম? এবং অন্য কাউকে সেটা প্রত্যক্ষভাবেই ব্যাখ্যা করতে পারেন, সে আপনার নিজস্ব মতামত বা বিশ্বাস হিসাবে না, বরং এমন একটি রুপে, যখন তারা আপনার যুক্তিটি বুঝতে পারবে, বাধ্য হবে ব্যপারটা মেনে নেবার জন্য? হয়তো এই বিষয়টি কার্ল সেগান বোঝাতে চেয়েছেন তার ‘দ্য ডিমন হান্টেড ওয়ার্ল্ড’ (৪৬) বইটি লেখার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করার সময়; ‘বিজ্ঞানকে ব্যাখ্যা না করা আমার জন্য অসম্ভব, যখন আপনি প্রেমে পড়েন, আপনি সারা পৃথিবীকে জানাতে চান। এই বইটা একটি ব্যক্তিগত জবানবন্দী, যা বিজ্ঞানের সাথে আমার আজীবন প্রেমকাহিনীর প্রতিফলন।
জটিলতর জীবনের বিবর্তন, এবং সত্যিকারভাবেই এমন মহাবিশ্বে জীবনের অস্তিত্ব, যে মহাবিশ্ব পদার্থবিদ্যার সব আইন মেনে চলে– বিষয়টা অত্যন্ত চমৎকারভাবে বিস্ময়কর– বা বিস্ময়করই হতো, কারণ হচ্ছে সেই সত্যিটা, বিস্ময় বা অবাক হওয়া এমন একটি আবেগ এর অস্তিত্ব শুধু সেই মস্তিস্কে যা কিনা আবার সেই একই বিস্ময়কর প্রক্রিয়ারই ফসল। একটি অ্যানথ্রপিক দৃষ্টিভঙ্গিতে তাহলে, আমাদের অস্তিত্ব কোনো বিস্ময়ের কারণ হওয়া উচিৎ না। কিন্তু আমি ভাবতে চাই, আমি আমার অন্য মানব সমগোত্রীয়দের হয়ে বলছি, দাবী করছি, যাই হোক না কেন এটি আসলেই চূড়ান্তভাবেই বিস্ময়কর।
ব্যপারটা ভেবে দেখুন। একটি গ্রহে, সম্ভবত সমস্ত মহাবিশ্বে একটি মাত্র গ্রহে যে অণুগুলো যা কিনা পাথরের টুকরা ছাড়া আর জটিলতর কিছু তৈরী করে না সাধারণত, তারা নিজেদের একত্র করেছে পাথরের তুল্য আকারের কোনো টুকরো থেকে অস্বাভাবিক মাত্রায় জটিলতা সৃষ্টি করেছে, যারা কিনা দৌড়াতে লাফাতে, সাঁতার কাটতে, উড়তে, দেখতে শুনতে শিকার করে খেতে পারে অন্যান্য জীবন্ত জটিল টুকরোগুলোকে। এছাড়াও কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা চিন্তা করতে বা অনুভব করতে সক্ষম, কখনো অন্য জটিল পদার্থের টুকরার প্রেমেও পড়ে। আমরা এখন জানি মূলত কিভাবে এই কৌশলটি কাজ করে, কিন্তু শুধুমাত্র ১৮৫৯ সালে থেকে। ১৮৫৯ সালের আগে এমন ধারণা খুবই অদ্ভুত ছিল। ডারউইনের কল্যানে এটি আসলেই খুব অদ্ভুত। ডারউইন বোরকার সেই সরু জানালাটা টেনে ধরে আরো প্রশস্ত করে দিয়েছিলেন। যা আমাদের বোঝার ক্ষমতাটির বিস্ময়কর পরিবর্ধনের সুযোগ করে দিয়েছিল, এর চোখ ধাঁধানো নতুনত্ব এবং মানুষের আত্মিক অনুভবকে একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেবার ক্ষমতার হয়তো এর আগে আর কোনো উদাহরণ নেই..যদি না কোপার্নিকাস এর সেই অনুধ্যান যে মহাবিশ্বের কেন্দ্র পৃথিবী না, হয়ে থাকে।
বিংশ শতাব্দীর সেরা একজন দার্শনিক লুদভিগ ভিটগেনস্টাইন (৪৭) একবার তার এক বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘আমাকে বলো তো, কেন সবাই সবসময় বলে যে মানুষের জন্য এটাই স্বাভাবিক মনে করা যে সূর্যই পৃথিবীর চারপাশে ঘুরছে, বরং এর উল্টোটা না, অর্থাৎ পৃথিবী ঘুরছে না। তার বন্ধু উত্তর দিয়েছিলেন, ‘বেশ স্পষ্টতই এর কারণ হচ্ছে, শুধুমাত্র ‘দেখে’ আপাতদৃষ্টিতে সেটাই যেন মনে হয়, সূর্যটাই পৃথিবীর চারপাশে ঘুরছে। এর উত্তরে ভিটগেনস্টাইন বলেছিলেন, ‘বেশ, তাহলে কেমন লাগতো দেখতে যদি আপাতদৃষ্টিতে দেখে মনে হতো যেন পৃথিবীটা ঘুরছে?” আমি মাঝে মাঝে ভিটগেনস্টাইনের এই মন্তব্যটি উল্লেখ করি আমার বক্তৃতা দেবার সময়, আশা করি দর্শকরা হাসবেন। বরং, তারা মনে হয় খানিকটা অবাক হয়ে চুপ হয়ে যান।
সীমিত যে বিশ্বে যেখানে আমাদের মস্তিস্ক বিবর্তিত হয়েছে, বড় কোনো বস্তুর তুলনায় ক্ষুদ্র বস্তু গতিময় এমনটাই মনে হয়, যাদের মনে হয় এই গতিময়তায় পেছনের প্রেক্ষাপট তৈরী করছে শুধু। যখন পৃথিবী ঘুরছে, যে সমস্ত বস্তু আকারে বড় তাদের আকারে বড় মনে হয় কারণ তারা নিকটে, পাহাড়, গাছ, দালান, মাটি ও সবই নড়ছে ঠিক একই তালে একে অপরের এবং পর্যবেক্ষকের সাথে, যা সূর্য আর নক্ষত্রের গতির সাথে আপেক্ষিক। আমাদের বিবর্তিত মস্তিস্ক চোখের সামনের গাছ পর্বত এর তুলনায় দূরে অবস্থিত এই সব নক্ষত্রদের উপর গতির বিভ্রম সৃষ্টি করে।
উপরের বিষয়টি নিয়ে আমি আরো খানিকটা আলোচনা করবো, যে ভাবে আমরা পৃথিবীটাকে দেখি, যে কারণে আমরা কিছু জিনিস সহজাতভাবে বুঝতে পারি সহজে এবং অন্য কিছু জিনিস যেমন বুঝতে বেশ কঠিন মনে হয়, সেটা হলো আমাদের মস্তিস্ক নিজেরাই বিবর্তিত অঙ্গ, মাথায় থাকা কম্পিউটার, যা আমাদের সাহায্য করে এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য– আমি মিডল ওয়ার্ল্ড বা মাঝারী পৃথিবী নামটি ব্যবহার করবো যেখানে কোনো বস্তু কিনা আমাদের বেঁচে থাকার জন্য জরুরী তারা খুব বড়ও না বা আবার খুব ছোটও তা বোঝানোর জন্য। যে বিশ্বে হয় কোনো কিছু স্থির দাঁড়িয়ে অথবা আলোর গতির তুলনায় কম গতিতে গতিশীল, যেখানে খুব কম সম্ভাব্য কোনো কিছুকে নিরাপদে মনে করা যেতে পারে অসম্ভব কোনো কিছু হিসাবে। আমাদের মনের বোরকার জানালা সংকীর্ণ কারণ আমাদের পূর্বপুরুষদের বেঁচে থাকার জন্য সাহায্য করতে এটির এরচেয়ে বেশী প্রশস্ত হবার কোনো প্রয়োজন ছিল না।
বিজ্ঞান আমাদের শিখিয়েছে, সব বিবর্তিত সহজাত প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে, আপাতদৃষ্টিতে ঘণ বস্তু যেমন, স্ফটিক এবং পাথর আসলে তৈরী মূলত শূন্যস্থান দিয়ে। খুব পরিচিত উপমায় নিউক্লিয়াসকে তুলনা করা হয় একটি বড় খেলা স্টেডিয়ামের মাঝে বসা একটি মাছির সাথে, এর পাশের অণুর অবস্থানটি ঠিক স্টেডিয়ামের বাইরে। সবচেয়ে শক্ত ঘণ পাথর তাহলে আসলে প্রায় পুরোটাই শূন্যস্থান, যে শূন্যতাকে ভাঙ্গছে কেবল কিছু ক্ষুদ্র কণা তারা এত বেশী দূরে দূরে বিচ্ছন্ন যে তাদের গণনায় ধরা যায় না। তাহলে পাথর দেখতে এবং অনুভব করতে কেন এমন শক্ত মনে হয়, যা ভেদ করা যায় না?
আমি চেষ্টা করবো না কল্পনা করতে কিভাবে ভিটগেনস্টাইন হয়তো এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন, তবে একজন বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানী হিসাবে, আমি এর উত্তর দেবো এভাবে.. আমাদের মস্তিস্ক বিবর্তিত হয়েছে আমাদের শরীরকে সাহায্য করার জন্য এই পৃথিবীতে টিকে থাকবে আর সেটি এমন একটি মাত্রায় যে মাত্রায় আমাদের শরীর কাজ করে। অণুদের ক্ষুদ্র পৃথিবীতে বিচরণ করার জন্য আমরা কখনো বিবর্তিত হয়নি। যদি আমরা সেভাবে বিবর্তিত হতাম আমাদের মস্তিস্ক তাহলে পাথরকে অনুভব করতে পারতো মূলত শূন্যস্থান হিসাবে। পাথর অনুভূত হয় শক্ত, অভেদ্য কারণ আমাদের হাত তাদের ভেদ করতে পারে না। এবং তাদের ভেদ করতে না পারার কারণ কিন্তু এর কনাগুলোর আন্তঃসংযোগ আর আকারের সাথে সংশ্লিষ্ট না বরং এর কারণ হচ্ছে, শক্তির বলয় বা ফোর্স ফিল্ড যা দূরে দূরে ছড়িয়ে থাকা পার্টিকলের সাথে যুক্ত থাকে ‘কঠিন অবস্থায়। আমাদের মস্তিস্ক এর জন্য উপকারী ঘণ শক্ত এবং অভেদ্য ধারণাটি তৈরী করা, কারণ এটি আমাদের সাহায্য করে এমন একটি পৃথিবীতে আমাদের শরীরের বসবাস, যেখানে বস্তু, যাদের আমরা সলিড বা ঘণ শক্ত বলছি- তারা এই সাথে একই জায়গা দখল করতে পারেনা।
এখানে খানিকটা কৌতুকের অবতারণা করা যেতে পারে, জন রনসনের (৪৮) ‘দ্য মেন হু স্টেয়ার অ্যাট গোটস’ থেকে:
এটি একটি সত্য গল্প। ১৯৮৩ সালের গ্রীষ্মকাল, মেজর জেনারেল আলবার্ট স্টাবলবাইন (তৃতীয়) ভার্জিনিয়া, আর্লিঙটনে, একটি ডেস্কের পেছনে বসে আছেন, তার চোখ দেয়ালের দিকে নিবদ্ধ, যেখানে তার অর্জিত অসংখ্য সামরিক পুরষ্কার শোভা পাচ্ছে। তার দীর্ঘ পেশাগত জীবনের সফলতার প্রামাণ্য স্মারক। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর আর্মি অব ইন্টেলিজেন্সের প্রধান, যার অধীনে আছে ষোল হাজার সেনাসদস্য। তিনি তার পুরষ্কারগুলোর পেছনে থাকা দেয়ালের দিকে মনোনিবেশ করলেন এবং কিছু একটা করার জন্য তিনি বিশেষ তাগিদ অনুভব করলেন, তাকে অবশ্যই সেটি করতে হবে, যদিও সেটি করার ভাবনা এমনকি তাকে শঙ্কিত করে তোলে। যা করা সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছেন, সেটি নিয়ে ভাবতে শুরু করলেন। তিনি তার অফিসেই থাকতে পারেন অথবা পার্শ্ববর্তী অফিসেও যেতে পারেন, এটা তার নিজের পছন্দের উপর নির্ভর করছে এবং তিনি সিদ্ধান্ত নেন, তিনি পার্শ্ববর্তী অফিসে যাবেন। তিনি উঠে দাঁড়ান, তার ডেস্কের পেছন থেকে বেরিয়ে আসেন এবং হাঁটতে শুরু করেন। আমি বোঝাতে চাইছি, তিনি ভাবছেন পরমাণু মূলত দিয়ে তৈরী? শূন্যস্থান, তিনি তার গতি দ্রুত করলেন, ভাবলেন তিনি, আমি মূলত কি দিয়ে তৈরী? পরমানু!! হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিয়ে তিনি প্রায় দৌড় শুরু করলেন… দেয়ালটি আসলে কি দিয়ে তৈরী? তিনি ভাবলেন.. পরমাণু! আমাকে শুধু শূন্যস্থানগুলো মিলিয়ে ফেলতে হবে। এরপর জেনারেল স্টাবলবাইন তার অফিসের দেয়ালের সাথে সজোরে ধাক্কা খেলেন, ধুর, তিনি ভাবলেন। জেনারেল স্টাবলবাইন দেয়ালের মধ্য দিয়ে বারবার তার এই হাটার ব্যর্থ চেষ্টায় হতভম্ব হয়ে পড়েন।
তাদের প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে জেনারেল স্টাবলবাইনকে সঠিক কারণেই, অপ্রচলিত চিন্তার একজন মানুষ বা আউট অব দি বক্স থিঙ্কার বলা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি তিনি তার অবসরে তার স্ত্রীর সাথে পরিচালনা করছেন। প্রতিষ্ঠানটির নাম HealthFreedomUSA, এবং এটির কাজ পুরোপুরি বাড়তি খাদ্যপুষ্টি ( ভিটামিন, খনিজ, অ্যামাইনো অ্যাসিড ইত্যাদি), ভেষজ, হোমিওপ্যাথিক ঔষধ, পুষ্টিকর ঔষধ এবং পরিষ্কার বিশুদ্ধ খাবার (কোনো কীটনাশক, আগাছানাশক এবং অ্যান্টিবায়োটিক দ্বারা দুষিত নয়), কোনো কর্পোরেশন ছাড়া (সরকারী জোর খাঁটিয়ে) ঠিক কি মাত্রার আর চিকিৎসায় আপনাদের এসব ব্যবহার করার অনুমতি আছে। অবশ্য মূল্যবান শারীরিক তরলের ব্যপারে কোনো নির্দেশ নেই (৫০)।
মধ্যম পৃথিবীতে বিবর্তিত হবার কারণে আমরা সহজাতভাবে কিছু ধারণা সহজেই বুঝতে পারি, যেমন :”যখন কোনো একজন মেজর জেনারেল নড়েন, মাঝারী গতিতে, যে গতিতে মেজর জেনারেল ও মধ্যম পৃথিবীর অন্যান্য বস্তুরাও নড়াচড়া করে এবং অন্য একটি মধ্যম পথিবীর বস্তু, যেমন একটি শক্ত দেয়ালে গিয়ে আঘাত করে, এবং তার এই গতির একটি যন্ত্রণাদায়ক একটি সমাপ্তি হয়। আমাদের মস্তিস্কের সেই ক্ষমতা নেই যে সে কল্পনা করতে পারে যে দেয়ালের মধ্যে দিয়ে কোনো নিউট্রিনোর মত অতিক্রম করতে কেমন লাগতে পারে, সেই বিশাল শূন্যস্থান দিয়ে, যা আসলেই এটি সৃষ্টি করে, ঠিক তেমনভাবে আমাদের বোধগম্যতা সামাল দিতে পারে না, কি হতে পারে যখন কোনো বস্তুর গতি হয় আলোর গতির কাছাকাছি।
কোনো সাহায্য ছাড়া মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি, যা বিবর্তিত আর প্রশিক্ষিত হয়েছে মধ্যম মাপের এক পৃথিবীতে, সেকারণেই তাদের গ্যালিলিওকে বিশ্বাস করার কাজটা কঠিন হয়ে পড়ে, যখন গ্যালিলিও আমাদের বলেছিলেন একটি কামানের গোলা আর পালক যদি বাতাসের কোনো ঘর্ষণ ছাড়াই একই সাথে মাটিতে স্পর্শ করে, যখন কোনো হেলানো টাওয়ার থেকে তাদের একসাথে নীচে ফেলা হয়। তার কারণ এই মধ্যম পৃথিবীতে, বায়ুর ঘর্ষণ সব সময় উপস্থিত। আমরা যদি কোনো ভ্যাকুম বা শূন্যস্থানে বিবর্তিত হতাম, আমরা কিন্তু আশা করতাম একটি পালক আর কামানের গোলা একই সাথে মাটিতে পড়বে। আমরা মধ্যম পৃথিবীর বিবর্তিত বাসিন্দা এবং সেটাই আমরা কতটুকু কল্পনা করতে পারি তার সীমানা নির্ধারন করে দেয়। আমাদের বোরকার সরু জানালা আমাদের সুযোগ করে দেয় শুধুমাত্র মধ্যম পৃথিবীটাকে দেখার জন্য, যদি না আমরা বিশেষভাবে প্রতিভাবান বা বিশেষভাবে উচ্চশিক্ষিত মানুষ না হয়ে থাকি।
কোনো একটি অর্থে আমাদের প্রাণীদের যে মধ্যম পৃথিবীতে বেঁচে আছি তাই শুধু না আমাদের অণু-পরমাণুদের আণুবিক্ষণিক জগতেও বাস করতে হয়, যে বিশেষ স্নায়বিক তাড়নাটি আর সংকেতটির এর সাহায্যে আমার চিন্তা করি, আর আমাদের সব কল্পনা শক্তি নির্ভর করে আণুবীক্ষণিক জগতে নানা কর্মকাণ্ডের উপর। তবে আমাদের বুনো পূর্বপুরুষরা এমন কোনো কাজ কোনোদিনও করেনি বা এমন কোনো সিদ্ধান্ত তাদের নিতে হয়নি কখনোই, যা আণবিক জগত থেকে নেয়া কোনো বোঝাঁপড়ার উপর নির্ভর করতে হয়নি। আমরা যদি ব্যাকটেরিয়া হতাম, সারাক্ষণ তাপমাত্রায় তাড়িত অণুদের ধাক্কা খেতাম নিরন্তর, তাহলে সব কিছু ভিন্ন হতো। কিন্তু এমন কোনো ব্রাউনিয়ান মুভমেন্ট (৫১) লক্ষ করার জন্যে আমরা মধ্যম পৃথিবীর মানুষরা খুব বেঢপ আকারের বড়। অনুরুপভাবে আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করা মাধ্যাকর্ষণ শক্তি আর পৃষ্ঠটানের সূক্ষ্ম শক্তির প্রতি আমরা পুরোপুরি বোধহীন; আর কোনো একটি ছোট পতঙ্গ এই অগ্রাধিকারটি উল্টে নেয় এবং পৃষ্ঠটানের শক্তি তার কাছে সূক্ষ্ম না প্রধান হয়ে ওঠে।
স্টীভ গ্রান্ড (৫২) ক্রিয়েশন: লাইফ অ্যান্ড হাউ টু মেক ইট’ বইটিতে আমাদের পদার্থ সম্বন্ধে মোহাবিষ্ট ভাবনার তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। আমাদের চিন্তা করার একটি প্রবণতা আছে শুধু মাত্র শক্ত, ঘণ কোনো বস্তুই হচ্ছে আসলে বস্তু। ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তারতাম্যের ‘তরঙ্গ বা ওয়েভগুলো কে কোনো শূন্যস্থানে মনে হতে পারে ‘অবাস্তব। ভিক্টোরীয় যুগে বিজ্ঞানীরা ভাবতেন তরঙ্গকে হতে হবে কোনো বাস্তব মাধ্যমে সৃষ্ট তরঙ্গে বা ঢেউয়ের মত। কিন্তু এধরনের কোনো মাধ্যম তাদের জানা ছিল না, সুতরাং তারা কল্পনা করে আবিষ্কার করে নিয়েছিলেন একটি মাধ্যমের, যার নাম তারা দিয়েছিলেন লুমিনিফেরাস ইথার। কিন্তু আমরা সব আসল পদার্থকে বোঝার জন্যে বেশী স্বস্তিদায়ক মনে করি শুধুমাত্র যার কারণ আমাদের পূর্বপরুষরা বিবর্তিত হয়েছে মধ্যম পৃথিবীতে,যেখানে কোনো পদার্থের ধারণা উপযোগী একটি ধারণা।
অন্য দিকে এমনকি আমরা মধ্য পৃথিবীর বাসিন্দারা বুঝতে পারি জলের ঘুর্ণিও হচ্ছে একটা বাস্তব জিনিস ঠিক যেমন, পাথরের একটি অস্তিত্ব আছে, এমনকি যখন ঘুর্ণি তৈরী করা পদার্থটি ক্রমাগতভাবে পরিবর্তনশীল। তানজানিয়ার মরুভুমির সমতলে মাসাই আদিবাসীদের কাছে পবিত্রতম আগ্নেয়গিরি ওল দইয়ো লেনগাই এর পাদদেশে একটি বিশাল বালিয়াড়ি আছে যা তৈরী হয়েছে ১৯৬৯ সালে অগ্ন্যুৎপাতের সময় সৃষ্ট ভশ দিয়ে। বাতাস এটির আকারের এই বিশেষ রুপ দিয়েছে। কিন্তু সুন্দর বিষয়টি হলো এটি পুরো শরীর নিয়ে নড়াচড়া করে। যাকে মূলত বলা হয় বারকান (barchan); পুরো এই বালিয়াড়িটি যেন পশ্চিম দিক বরাবর হাঁটছে প্রতিবছর ১৭ মিটার করে। এর বাঁকা চাঁদের মত আকার বা ক্রিসেন্ট রুপটি অক্ষুণ্ণ রেখেছে এবং এটি ধীরে ধীরে যেন আগাচ্ছে এর সুচালো প্রান্ত বরাবর। বাতাস অপেক্ষাকৃত কম ঢাল থেকে বালি উপরের দিকে সরিয়ে দেয়, যখনই প্রতিটি বালু কণা খাড়া খাজের চুড়ায় পৌঁছায় এটি ধীরে ধীরে ধাপে ধাপে গড়িয়ে পড়ে বেশী খাড়া ঢাল বরাবর বালিয়াড়ির ভিতর দিকে।
আসলে এমনকি বারকান একটি তরঙ্গের তুলনায় বরং কোনো একটি বস্তু। কোনো একটি তরঙ্গকে দেখলে মনে হয় যেমন খোলা সাগরের উপর দিয়ে আনুভূমিক তলে সামনে অগ্রসর হচ্ছে, কিন্তু পানির অণুগুলো নড়াচড়া করছে উল্লম্বভাবে বা উপর নীচে, অনুরুপভাবে শব্দ তরঙ্গ বক্তা থেকে শ্রোতা পর্যন্ত যাচ্ছে, কিন্তু বাতাসের অণুগুলো কিন্তু যাচ্ছে না, না হলে সেটি হতো বাতাসে ঢেউ কিন্তু শব্দ না। স্টিভ গ্রান্ড ইঙ্গিত করেন যে আমি ও আপনি কোনো স্থায়ী কোনো কিছুর চেয়ে বরং তরঙ্গের মত। তিনি তার পাঠকদের চিন্তা করতে আমন্ত্রণ জানান..
…আপনার শৈশবের কোনো একটি অভিজ্ঞতাকে মনে করুন। যা আপনি খুব স্পষ্টভাবে মনে করতে পারবেন। এমন কোনো কিছু যা আপনি দেখতে পারবেন, অনুভব করতে পারবেন এমনকি গন্ধ নিতে পারবেন, যেন আপনি ঠিক সেখানেই অবস্থান করছেন। মোট কথা আপনি আসলেই তো সেখানে ছিলেন সেই সময়, তাই না? তা না হলে আপনি কিভাবেই বা তা মনে করতে পারবেন? কিন্তু আসল কথাটি হচ্ছে এটি: আপনি আসলে সেখানে ছিলেন না। আপনার শরীরের একটি পরমাণু– যা এখন আছে তারা কেউই সেই সময় সেখানে ছিল না, যখন ঘটনাটি ঘটেছিল। পদার্থ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় প্রবাহিত হয় এবং ক্ষণিকের জন্য একজায়গায় জড়ো হয়ে আপনাকে তৈরী করেছিল। সুতরাং, আপনি যেই হোন না কেন, আপনি যে পদার্থ দিয়ে তৈরী সেই পদার্থটি আপনি না। এই বিষয়টি যদি আপনাকে শিহরিত না করে, আপনি উপরের লেখাটি আবার পড়ে দেখুন, যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনি কোনো শিহরণ অনুভব না করেন, কারণ এটি খুব জরুরী (৫৪)।
‘আসলেই’..এমন একটি শব্দ, যা আমাদের সামান্য আত্মবিশ্বাসের সাথে ব্যবহার করা উচিৎ না। যদি কোনো নিউট্রিনোর মস্তিস্ক থাকে, যা নিউট্রিনো আকারের কোনো পূর্বপুরুষ থেকে বিবর্তিত হয়েছে, এটি বলতো যে পাথর মূলত পুরোটাই শূন্যস্থানের সমষ্টি। আমাদের মস্তিস্ক বিবর্তিত হয়েছে মধ্যম আকারের পূর্বসূরীদের থেকে, যারা পাথর ভেদ করে হাঁটতে পারতো না, সেখানে আমাদের বাস্তবতা হচ্ছে সেই বাস্তবতা যেখানে পাথর হচ্ছে কঠিন। কোনো একটি প্রাণীর জন্য বাস্তব হচ্ছে যা কিছু এর মস্তিস্ক এর প্রয়োজনে এর অর্থ করে যা সেই প্রাণীটিকে সাহায্য করবে বেচে থাকার জন্য, সেই প্রাণীর জন্য তার মস্তিস্ক যা চায়। যেহেতু বিভিন্ন প্রজাতির বাস বিভিন্ন জগতে, সুতরাং খুবই সমস্যাপূর্ণ নানা ধরনের বাস্তবতা আছে।
আমরা বাস্তব পৃথিবীতে যা দেখি সেটা সত্যিকারের বাস্তব পৃথিবী না, বরং বাস্তব পৃথিবীর একটি মডেল, যা নিয়ন্ত্রণ আর সমন্বয় করে আমাদের অনুভূতিগুলো বা ইন্দ্রিয়গুলোর বহন করে আনা নানা উপাত্তগুলোর-একটি মডেল যা এমনভাবে তৈরী করা হয়েছে যা আমাদের বাস্তব পৃথিবীর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে চলতে সাহায্য করে। আর এই মডেলের প্রকৃতি নির্ভর করে কোনো ধরনের প্রাণী আমরা তার উপর। যে প্রাণী উড়তে পারে তার প্রয়োজন ভিন্ন ধরনের পৃথিবীর মডেল, গাছ বেয়ে ওঠা বা সাঁতার কাটা প্রাণীর মডেল থেকে সেটি ভিন্ন। শিকারী প্রাণীদের মডেল হবে তাদের শিকার থেকে ভিন্ন, এমনকি যদিও তাদের পৃথিবীর কোনো না কোনো জায়গায় অবশ্যই একে অন্যকে অতিক্রম করবে। একটি বানরের মস্তিস্কে অবশ্যই সেই সফটওয়্যার থাকতে হবে যা গাছের ডাল আর কাণ্ডের ত্রিমাত্রিক একটি কাল্পনিক দৃশ্য তৈরী করতে সক্ষম। কোনো একটি ওয়াটার বোটমান (৫৫) এর মস্তিস্কে এই থ্রি ডি সফটওয়্যার দরকার নেই, কারণ এটি পুকুরে পানির পৃষ্ঠে বাস করে যেন কোনো এডউইন অ্যাবটের ফ্ল্যাটল্যাণ্ডে (৫৬); কোনো মোলের (৫৭) সফটওয়্যারের তৈরী করা পৃথিবীর মডেল তার প্রয়োজন মাফিক মাটির নিচে কাজ করার উপযোগী; কোন ন্যাকেড মোল র্যাট সম্ভবত মোলদের মত প্রায় একই ধরনের পৃথিবীর মডেল প্রদর্শনকারী সফটওয়্যার আছে। কিন্তু কাঠবিড়ালী, যদিও এট মোল র্যাট এর মতই রোডেন্ট, তবে তার পৃথিবীর মডেল তৈরী করা সফটওয়্যারটি সম্ভবত অনেক বেশী বানরদের মতই হবার কথা।
দ্য ব্লাইন্ড ওয়াচমেকার (৫৮) এবং অন্যান্য বইগুলোতে আমি একটি প্রস্তাব করেছিলাম, বাদুড়রা হয়তো রঙ দেখতে পায় তাদের কান দিয়ে। বাদুড়ের যে পৃথিবীর মডেল প্রয়োজন, ত্রিমাত্রিক জগতে ওড়ার জন্য পোকামাকড় ধরার জন্য, অবশ্যই নিশ্চিতভাবে সোয়ালো পাখির মডেলের মত, যারা সেই একই কাজটি করে। বাদুড় প্রতিধ্বনি ব্যবহার করে তার জগতের মডেলটিকে নিরন্তর নবায়ন করে আর অন্যদিকে সোয়ালো পাখি ব্যবহার করে আলো, ব্যপারটা ঘটনাচক্রেই ঘটেছে। আমি প্রস্তাব করছিলাম, বাদুড়রা হয়তো অনুভূত রঙের ঔজ্জ্বল্যতা, যেমন লাল বা নীলকে প্রতিধ্বনির কোনো উপযোগী অংশকে অন্তর্গতভাবে চিহ্নিত করে কোনো পৃষ্ঠ বা সারফেস এর গঠন আর আকারগত বৈশিষ্ঠানুযায়ী অনুভব করে। হয়তো কোনো পৃষ্ঠ থেকে ফিরে আসা শব্দের বৈশিষ্ট্য, ঠিক যেমন করে সোয়ালো পাখিরা ঔজ্জ্বলতার একই অনুভূতিকে ব্যবহার করে আলোর দীর্ঘ আর হ্রস্ব দৈর্ঘ্যের তরঙ্গগুলোকে চিহ্নিত করে। মূল বিষয়টি হচ্ছে মডেলটির প্রকৃতি নিয়ন্ত্রিত হয় কিভাবে এটি ব্যবহৃত হবে, সেখানে কোন ধরনের ইন্দ্রিয়ানুভূতির প্রক্রিয়া ব্যবহার হচ্ছে সেটি মূখ্য না। বাদুড়দের থেকে শিক্ষার বিষয় হচ্ছে এটি। মনের মডেলের একটি সাধারণ রুপ হচ্ছে– অনুভূতিবাহী স্নায়ুর মাধ্যমে ক্রমাগত আসতে থাকা নানা তথ্য উপাত্ত যা নিরন্তর পরিবর্তিত হচ্ছে তার বিপরীত– এক ধরনের অভিযোজন, প্রাণীর জীবন যাপনের একটি উপায়, যা কোনো অংশেই তার শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যেমন, তার ডানা, পা কিংবা লেজের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ না।
জে. বি. এস. হলডেন তাঁর ‘পসিবল ওয়ার্ল্ডস’ প্রবন্ধটিতে, যার উদ্ধৃতি আমি উপরে দিয়েছি, কিছু প্রাসঙ্গিক বক্তব্য আছে সেই সব প্রাণীদের সম্বন্ধে যাদের পৃথিবী মূলত পরিচালিত হয় গন্ধ দিয়ে। তিনি লক্ষ করেছিলেন যে কুকুররা খুব কাছাকাছি ধরনের দুটি পৃথক উদ্বায়ী ফ্যাটি অ্যাসিড শুধুমাত্র গন্ধ শুঁকে পার্থক্য করতে পারে, যেমন, ক্যাপ্রিলিক এসিড আর ক্যাপরোয়িক এসিড, এমন কি যখন এক মিলিয়ন অংশে একটি অণু এমন লঘু ঘণত্বে মেশানো হয়। এই দুটি ফ্যাটি অ্যাসিডের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে যে এর ফ্যাটি অ্যাসিড কাঠামোর শিকলটি থেকে ক্যাপ্রিলিক এসিডের মূল আণবিক শিকলটি দুটি কার্বন পরমাণু দীর্ঘতর। হলডেন অনুমান করেছিলেন,একটি কুকুর খুব সম্ভবত ফ্যাটি এসিডদুটিকে আলাদা করতে পারে আণবিক ওজনের ক্রমানুসারে তাদের গন্ধ শোকার ক্ষমতা দিয়ে। ঠিক যেমন করে মানুষ পিয়ানোর কর্ডগুলোকে সাজাতে পারে তাদের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী বা তারা যে ধ্বনি তৈরী করে তার উপর ভিত্তি করে।
আরো একটি ফ্যাটি অ্যাসিড আছে, ক্যাপরিক এসিড, যা প্রায় ঠিক আগের দুটোর মতই, শুধু এর কাঠামোতে আরো বাড়তি দুটি কার্বন পরমাণু আছে। কোনো কুকুর যে কিনা কোনো দিন ক্যাপরিক এসিডের গন্ধ শোকেনি তার কিন্তু এর গন্ধ কল্পনা করা খুব কঠিন হবে না, যেমন আমাদেরও কল্পনা করতে অসুবিধা হয়না, যখন কোনো ট্রাম্পেট খানিকটা উঁচু সুরে বাজতে শুরু করে, যে সুরে কিছুক্ষণ আগে বাজছিল তার থেকে। আমার কাছে পুরোপুরি যুক্তিযুক্ত মনে হয় যে একটি কুকুর বা একটি গণ্ডার হয়তো নানা গন্ধের মিশ্রণকে ব্যবহার করে কোনো সঙ্গীতের ঐক্যতানের স্বরগুলোর মত। হয়তোবা সেগুলো আসলে পরস্পরের সাথে খাপ খাওয়া কোনো সুর না, সম্ভবত কোনো মেলোডি না। কারণ মেলোডির সুর সেই সব নোট বা স্বর দিয়ে তৈরী, যার শুরু ও শেষ হয় হঠাৎ করেই, কোনো সঠিক সময় না মেনেই, গন্ধের ঠিক বিপরীত। বা কুকুর আর গণ্ডার হয়তো রঙের মাধ্যমে গন্ধ শোকে, বাদুড়ের মতোই সেই যুক্তিটাও এখানে প্রযোজ্য।
আরো একবার, যে অনুভূতিবোধগুলো যাকে আমরা বলছি রঙ, সেগুলো আসলে কৌশল, যা আমাদের মস্তিস্ক আমাদের চারপাশের পৃথিবীটির গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো চিহ্নিত করার জন্যে ব্যবহার করে। অনুভব করা রঙ, যা দার্শনিকরা বলেন কোয়ালিয়া (qualia), তাদের আসলে অনুভূত আলোর কোনো নির্দিষ্ট তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। এগুলো হচ্ছে অন্তর্গত লেবেল যা আমাদের মস্তিস্কের হাতে থাকে যখন বাইরের বাস্তবতা সম্বন্ধে তার মডেলটি সে তৈরী করে। সেই প্রাণীর প্রয়োজানুসারে সে বিশেষ জায়গাগুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। আমাদের ক্ষেত্রে বা কোনো একটি পাখির ক্ষেত্রে এর অর্থ হচ্ছে বিভিন্ন তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলো। বাদুড়ের ক্ষেত্রে আমি অনুমান করেছিলাম এটি হতে পারে বিভিন্ন পৃষ্ঠ থেকে ফিরে আসা শব্দ প্রতিধ্বনির বৈশিষ্ট্য বা গঠন, হয়তো চকচকে উজ্জ্বল কোনো কিছুর জন্য লাল, নীল হচ্ছে মখমলের মত, সবুজ হচ্ছে খসখসে ধারালো। এবং কোনো কুকুর আর গণ্ডারের ক্ষেত্রে, এটা কেনই বা তাদের গন্ধ শোকার শক্তির সাথে সংশ্লিষ্ট হতে পারবে না? কোনো বাদুড় বা গণ্ডারের, বা কোনো স্কেটার বা একটি মোল বা ব্যাকটেরিয়া বা ডার্ক বিটলদের আমাদের থেকে ভিন্ন এক অপার্থিব জগত কল্পনার করতে পারার সেই শক্তি আর সুযোগ করে দিয়েছে বিজ্ঞান, যখন এটি আমাদের বোরকার কালো কাপড় টেনে ধরে আমাদের দেখায় বিস্মিত হবার আরো কত বেশী কিছু আছে।
অন্তর্বর্তী পর্যায়ের নানা পর্যবেক্ষণযোগ্য ঘটনার মধ্যম পৃথিবীর রুপকগুলো, যা আমাদের বোরকার সরু ছিদ্রটি দেখার অনুমতি দেয়, সেটি আরো অন্য ধরনের মাত্রা বা স্পেক্টামের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আমরা অসম্ভাব্যতার একটি স্কেল নির্মাণ করতে পারি, অনুরুপভাবে সরু একটি জানালাসহ, যার মধ্য দিয়ে আমাদের সহজাত ভাবনা আর কল্পনা পক্ষে যাওয়া সম্ভব হতে পারে। এই অসম্ভাব্যতার স্পেকট্রামের একটি চূড়ান্ত প্রান্তে আছে সেই সব তথাকথিত ‘হতে পারে এমন সব ঘটনা যেগুলো অসম্ভব আমরা বলি। আর অলৌকিক ঘটনাগুলো হচ্ছে সেই ঘটনাগুলো যা চূড়ান্তভাবে অসম্ভাব্য। একটি ম্যাডোনার মুর্তি আমাদের প্রতি লক্ষ্য করে তার হাত নাড়াতে পারে, যে অণুগুলো এর স্ফটিকাকার কাঠামো তৈরী করেছিল তারা সবাই সামনে পেছনে কম্পমান। আর যেহেতু তাদের সংখ্যা অগণিত এবং তাদের কোনো নির্দিষ্ট পছন্দ নেই তাদের গতিময়তার নির্দেশনার, সেকারণে হাতটি আমাদের ‘মধ্য পৃথিবীতে স্থির থাকে পাথরের মত। কিন্তু হতে পারে যে হাতের কম্পমান পরমাণুগুলো, সব কয়টি একই সাথে একটি দিক বরাবর কেপে উঠতে পারে, এবং আবারো। এবং আবারো, এই ক্ষেত্রে হাত নড়ে উঠবে আমরাও দেখবো এটি হাত নাড়াচ্ছে আমাদের দিকে। এটি হতে পারে, কিন্তু এরকম কিছু না হবার সম্ভাবনা এত বেশী যে, আপনি যদি মহাবিশ্বের সূচনা থেকে সংখ্যা লিখতে শুরু করেন, তারপরও আজ অবধি সব শূন্য লেখা শেষ হবে না। হাত উপরে তুলে হাল ছেড়ে না দিয়ে বরং এমন অসম্ভাব্যতার সম্ভাবনাকে গণনা করার শক্তি বা প্রায় অসম্ভব কোনো কিছুকে পরিমাপ করার শক্তি, মানুষের প্রাণশক্তির প্রতি বিজ্ঞানের মুক্তিদানকারী আশীর্বাদের আরেকটি উদাহরণ।
খুব বেশী কোনো অসম্ভাব্য ঘটনার সামাল দেবার মত যথেষ্ট দক্ষতা মধ্যম পৃথিবীতে বিবর্তনের কারণে আমরা বিবর্তিত করতে পারিনি, কিন্তু মধ্যম বিশ্বে যে ঘটনাগুলো অসম্ভাব্য মনে হয় এই সুবিশাল মহাশূন্যে কিংবা ভূতাত্ত্বিক সময়ে যে ঘটনাগুলো অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠে। বিজ্ঞান এক ঝটকায় সেই সংকীর্ণ জানালাটি খুলে দেয় যার মধ্য দিয়ে আমরা সম্ভাবনার একটি স্পেকট্রাম দেখতে পেতে অভ্যস্ত ছিলাম। আমরা মুক্তি পাই যুক্তি আর গণনার মাধ্যমে এবং সেই সম্ভাবনার এলাকায় প্রবেশ করতে যা আমাদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে ছিল কিংবা যেখানে একসময় বসবাস করতো ডাগনরা। অধ্যায় ৪ এ এই জানালাটির প্রশস্তকরণের সুবিধাটা আমরা হিসাব করেই নিয়েছিলাম, যখন সেখানে আমরা জীবনের উৎপত্তির অসম্ভাব্যতার বিষয়টি আলোচনা করেছিলাম এবং কিভাবে প্রায় অসম্ভব রাসায়নিক একটি ঘটনা অবশ্যই ঘটতে পারে যখন যথেষ্ট পরিমান সময় সেই গ্রহটির হাতে থাকে। এবং সেখানে আমরা বিবেচনা করেছিলাম অনেকগুলো সম্ভাব্য মহাবিশ্বের স্পেকট্রাম, যাদের প্রত্যেকের নিজস্ব একগুচ্ছ প্রাকৃতিক নিয়ম ও ধ্রুব থাকতে পারে। এবং অ্যানথ্রপিক আবশ্যিকতা যা অবশ্যই নিশ্চিৎ করে এরকম সংখ্যালঘিষ্ঠ জীবনবান্ধব জায়গায় আমাদের অবস্থানকে।
আমরা কেমন করে ব্যাখ্যা করবো হলডেনের ‘আমরা যা ধারণা করতে পারি তারচেয়েও বিস্ময়কর এই বাক্যটিকে? নীতিগতভাবে বিস্ময়কর, আমরা যা ভাবতে পারি তার চেয়েও? বা শুধু বিস্ময়কর আমরা যতটুকু ভাবতে পারি, মধ্যম মাপের পৃথিবীতে বিবর্তিত আমাদের মস্তিস্কের সীমাবদ্ধতা মেনে নিয়ে? আমরা কি, অনুশীলন আর শিক্ষার মাধ্যমে মধ্যম এই পৃথিবী থেকে আমাদের মুক্ত করতে পারবে না, কালো বোরকা ছিঁড়ে ফেলে, আমরা কি খুব ছোট, খুব বড় আর খুব দ্রুত চলমান কোন কিছু বোঝার জন্য এক ধরনের সহজাত প্রবৃত্তি এবং সেই সাথে শুধু গাণিতিক ধারণা অর্জন করতে পারবো না? আমি আসলেই এর কোনো উত্তর জানি না, তবে আমি দারুণ ভাবে শিহরিত এমন একটা সময়ে আমি বেঁচে আছি যখন মানবতা আমাদের বোঝার সীমানাটি প্রতিনিয়ত আরো প্রসারিত করে তুলছে; আরো বেশী ভালো, আমরা ধীরে ধীরে একদিন আবিষ্কার করবো যে আসলেই জানার কোনো সীমানা নেই।
পাদটীকা:
(১) এডওয়ার্ড ওসবোর্ন উইলসন (জন্ম ১৯২৯) যুক্তরাষ্ট্রের জীববিজ্ঞানী, কীটতত্ত্ববিদ, তাত্ত্বিক, পরিবেশবাদী ও সোসিওবায়োলজীর প্রবক্তা, লেখক।
(২) বায়োফিলিয়ার ধারণাটি প্রস্তাব করেছিলেন ই, ও, উইলসন তার বায়োফিলিয়া (১৯৮৪) বইটিতে; হাইপোথিসিসটির মূল দাবীটি হচ্ছে পৃথিবীর সব জীব সহজাতভাবে পারস্পরিক একটি সম্পর্ক অনুভব করে।
(৩) ক্রিস্টোফার রবিন– একটি চরিত্র যা সৃষ্টি করেছিলেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক এ. এ. মিন্ন। তাকে আমরা দেখি মিন্ন এর জনপ্রিয় কবিতার বই এবং উইনি-দি-পুহ গল্পগুলোয় এবং চরিত্রটি মূলত লেখকের নিজের ছেলে ক্রিষ্টোফার রবিন মিলনে। চরিত্রটি পরবর্তীতে ডিজনী কার্টুনেও আমরা আবির্ভুত হতে দেখি।
(৪) পিগলেট, লেখক এ. এ. মিন্ন এর সৃষ্ট জনপ্রিয় একটি কাল্পরিক চরিত্র, উইনি দি পুহ’র সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু।
(৫) উইনি দি পুহ বা পুহ বিয়ার, লেখক এ. এ. মিন্ন এর সৃষ্ট জনপ্রিয় একটি কাল্পরিক চরিত্র, একটি অ্যানথ্রোপোমর্ষিক বা নরাত্বরোপিত টেডি বিয়ার, ১৯২৬ সালে তার উইনি-দি-পুহ বইটিতে আবির্ভূত হতে দেখি।
(৬) অ্যালান আলেক্সজাণ্ডার মিন্ন (মি) ( ১৮ জানুয়ারী ১৮৮২–৩১ জানুয়ারী ১৯৫৬) ইংরেজ লেখক, যিনি পরিচিত টেডি বিয়ারকে নিয়ে লিখিত তার বই উইনি দি পুহ এবং শিশুদের জন্য লেখা তার কবিতা সংকলনের জন্য। মিন্ন খুব দক্ষ ছিলেন একজন নাট্যকার হিসাবে, তবে উইনি দি পুহ বইয়ের ব্যাপক সফলতা তার আগের সব সেরা কাজকে সঠিকভাবে মূল্যায়িত হবার সুযোগ। দেয়নি।
(৭) জুলিয়ান জেনেস (Julian Jaynes) (১৯২০-১৯৯৭) যুক্তরাষ্ট্রের মনোবিজ্ঞানী। তার The Origin of Consciousness in the Breakdown of the Bicameral Mind, বইটিতে তিনি প্রস্তাব করেছিলেন প্রাচীন মানুষ সচেতন ছিল না, উনার প্রস্তাবে সচেতনা হচ্ছে দার্শনিকরা যাকে বলেন মেটা-কনসাসনেস বা মেটা-অ্যাওয়ারনেস। যা সাধারণ চেতনার স্তর থেকে উপরে। এখানে দি বাইক্যামেরাল মাইও এর প্রস্তাব করেছিলেন। বাইক্যামেরালিজম ( দ্বি- প্রকোষ্ঠতার দর্শন) মনোবিজ্ঞানের একটি হাইপোথিসিস,যা প্রস্তাব করে মানুষের মন একসময় একটি পরিস্থিতি ছিল যখন কগনিটিভ কর্মকাণ্ডগুলো মস্তিস্কের মধ্যে দ্বিধাবিভক্ত ছিল, যখন মস্তিস্কের একটি অংশ মনে হতো কথা বলতো আর দ্বিতীয় অংশটিকে সেই শুনতো এবং মাণ্য করতো– একটি দ্বিপ্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট বা বাইকামেরাল মাইণ্ড। মনোবিজ্ঞানী জুলিয়ান জেনেস এটি প্রস্তাব করেছিলেন ১৯৭৬ সালে তার The Origin of Consciousness in the Breakdown of the Bicameral Mind বইটিতে। সেখানে তিনি আরো প্রস্তাব করেন এই বাইক্যামেরাল মানসিকতা খুবই মানব মনের স্বাভাবিক ও সর্বজনীন পরিস্থিতি ছিল এমনকি ৩০০০ বছর আগের মত সাম্প্রতিক কোনো সময়েও।
(৮) ইভলিন ওয়াহ, ব্রিটিশ লেখক।
(৯) Evelyn Waugh. The Ordeal of Gilbert Pinfold (1957)
(১০) এলিয়ানর রিজবী, প্রখ্যাত সঙ্গীত গ্রুপ বিটলস-এর একটি গান, এটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৬৬ সালে তাদের রিভলভার অ্যালবামের একটি গান হিসাবে। গানটির মূল রচয়িতা যদিও পল ম্যাকার্টনী তবে গানটির লেখক হিসাবে লেনন-ম্যাকার্টনী দুজনের নাম চিহ্নিত করা হয়েছে। গানটিকে প্রায়ই বর্ণনা করা হয় নিঃসঙ্গ মানুষদের বিলাপ সঙ্গীত হিসাবে (এলিয়ানর রিজবী); এটি একই সাথে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কিছু বিষয়কে ইঙ্গিত করে যখন অনেক নারী যুদ্ধের পর নিঃসঙ্গ হয়েছিল।
(১১) ড্যানিয়েল ডেনেট, দার্শনিক।
(১২) Breaking the Spell: Religion as a Natural Phenomenon: Daniel C. Dennett
(১৩) আমার স্মরণশক্তির উপর নির্ভরশীল হয়ে আমি এই বিতর্কটি সুত্র হিসাবে অক্সফোর্ড এর দার্শনিক ডেরেক পারফিটকে উল্লেখ করছি। যদিও আমি এর উৎস সম্বন্ধে বিস্তারিত গবেষণা করিনি কারণ আমি এটি ব্যবহার করছি শুধুমাত্র দার্শনিক সান্ত্বনার একটি উদাহরণ হিসাবে।
(১৪) মার্ক টোয়াইন –স্যামুয়েল ল্যাংহর্ন ক্লেমেন্স যার মূল নাম, যুক্তরাষ্ট্রের লেখক।
(১৫) টমাস জেফারসন, আমেরিকার প্রতিষ্ঠাতা পিতাদের একজন, স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রের প্রধান রচয়িতা, এবং তৃতীয় প্রেসিডেন্ট।
(১৬) ক্রিস্টোফার হিচেন্স, ব্রিটিশ-আমেরিকরান লেখক, সাংবাদিক।
(১৭) বাট্রান্ড রাসেল, ব্রিটিশ দার্শনিক।
(১৮) মার্ক টোয়াইন ( স্যামুয়েল ল্যাংহর্ন ক্লেমেন্স) (১৮৩৫ ১৯১০) যুক্তরাষ্ট্রের লেখক।
(১৯) Richard Dawkins. A Devil’s Chaplain, subtitled Reflections on Hope, Lies, Science, and Love.
(২০) Homo sapiens: মানুষের প্রজাতির বৈজ্ঞানিক নাম।
(২১) Canis familiaris গৃহপালিত কুকুর এর বৈজ্ঞানিক নাম (Canis lupus familiaris)
(২২) Felis catus: গৃহপালিত বিড়ালের বৈজ্ঞানিক নাম (Felis silvestris catus)
(২৩) অন্ত্রনালীর একটি অংশ।
(২৪) যুক্তরাষ্ট্রের নাস্তিকদের মৃত্যুর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি কেমন সে সংক্রান্ত একটি গবেষণা বলছে ৫০ শতাংশ চায় তাদের জীবন নিয়ে একটি স্মৃতিচারণমূলক কোনো অনুষ্ঠান হোক, ৯৯ শতাংশ কোনো চিকিৎসকের সহায়তা আত্মহত্যার সমর্থক, যারা সেটা চান এবং ৭৫ শতাংশ নিজেদের জন্যও সেটাই চায় আর পুরো ১০০ শতাংশ উত্তরাদাতা এমন কোনো হাসপাতালের কর্মীর সংস্পর্শে আসতে চান না যারা ধর্ম প্রচার করেন: http:// nursestoner, com/ myresearch.html
(২৫) অষ্ট্রেলীয় এক বন্ধু বয়সের সাথে বাড়তে থাকা ধর্মপ্রিয়তা বিষয়টি একটা চমৎক্তার নামকরণ করেছেন, অষ্ট্রেলিয় বাচনভঙ্গিতে এটি বলুন, প্রশ্নের শেষে খানিকটা উঁচু গলা করে, প্রশ্নবোধক হিসাবে প্রকাশ করে, Cramming for the final?;
(২৬) চান্ট্রি ( অবিট বলেও পরিচিত) এক ধরনের ট্রাষ্ট ফান্ড বা অর্থ তহবিল প্রতিষ্ঠিত করা হয় যার মাধ্যমে এক বা একাধিক যাজককে নিয়োগ করা হয় পূর্ব নির্ধারিত সংখ্যক পূর্বনির্ধারিত পর্বে প্রার্থণা সভার আয়োজন করা কোনো একজন মৃত মানুষের বিদেহী আত্মার কল্যানে, বিশেষ করে যিনি এই আর্থিক তহবিলের দাতা, যেন তার আত্মা দ্রুত স্বর্গ লাভ করে।
(২৭) তাও একজন রমনী, বিশপ উইলিয়াম শুনলে কি বলতেন..
(২৮) quod erat demonstrandum এর সংক্ষিপ্ত রুপ যার অর্থ যা প্রমাণ করার দরকার ছিল। সাধারণত গাণিতিক কিংবা দার্শনিক যুক্তি প্রস্তাবনার শেষে থাকে।
(২৯) non sequitur ল্যাটিন ভাষায় এর অর্থ এটি থেকে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি না। যুক্তিবিদ্যার ভাষা এটি হচ্ছে একটি যুক্তি, যেখানে এর মূল প্রস্তাবনা থেকে কোনো নির্দিষ্ট উপসংহারে পৌঁছানো যায় না। non sequitur কোনো যুক্তিতে এর উপসংহার হয় সত্যি নয়তো মিথ্যা, কিন্তু যুক্তি তর্কটি ভ্রান্ত, কারণ মূল প্রস্তাবনা আর উপসংহারের মধ্যে একটা অসংযোগ আছে।
(৩০) একটি সিলোগিজম (syllogism) হচ্ছে একধরনের যুক্তি যেখানে একটি প্রস্তাব (উপসংহার) সম্বন্ধে আমরা ধারণা পেতে পারি দুই বা ততোথিক অন্যান্য প্রস্তাব থেকে।
(৩১) Carl Sagan, Ann Druyan. Pale Blue Dot: A Vision of the Human Future in Space.
(৩২) Biophilia. Edward O. Wilson (1986)
(৩৩) Michael Shermer, The Soul of Science. (http://www.americanscientist.org/ issues/id.3447,y.0, no.,content.true,page.1,css.print/ issue.aspx)
(৩8) Paul Kurtz. Affirmations: Joyful And Creative Exuberance. (৩৫) Richard Dawkins. Unweaving the Rainbow: Science, Delusion and the Appetite for Wonder.
(৩৫) এমিলি ডিকিনসন, যুক্তরাষ্ট্রের কবি।
(৩৬) আর (জীবন) কখনোই ফিরে আসবেনা, সেটাই জীবনকে এত মধুর করেছে।
(৩৭) দি আন্ট্রাভায়োলেট গার্ডেন রয়াল ইনস্টিটিউশনে আমার পাঁচটি ক্রিসমাস লেকচারের একটির শিরোনাম। যা বিবিসি Growing Up in the Universe শিরোনামে প্রচার করেছিল। পুরো পাঁচটি লেকচারের সিরিজই Richard Dawkins Foundation এর ওয়েবসাইট www.richarddawkins.net এ পাওয়া যাবে।
(৩৮) জে. বি, এস, হলডেন –ব্রিটিশ জিনতাত্ত্বিক ও বিবর্তন জীববিজ্ঞানী, ১৯৬১ সালে তিনি ভারতের নাগরিকত্ব গ্রহন করেছিলেন।
(৩৯) রিচার্ড ফাইনম্যান, আমেরিকার পদার্থবিজ্ঞানী, লেখক।
(৪০) একই ধরনের মন্তব্য মনে করা হয় নীলস বোরও করেছিলেন, যে কোনো কেউ যে কোয়ান্টাম তত্ত্বে হতবাক হবে না তারা এটি বুঝতে পারেননি।
(8১) David Deutsch.The Fabric of Reality: The Science of Parallel Universes–and Its Implications
(৪২) এরউইন শ্রোডিঙ্গার, অষ্ট্ৰীয় পদার্থবিজ্ঞানী, ওয়েভ ফাংশানের তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন।
(8৩) Wolpert, L. The Unnatural Nature of Science. London: Faber & Faber.(1992).
(৪৪) সাইকাড রা নগ্নবীজি উদ্ভিদ, পৃথিবীর স্থলভূমিতে প্রথম প্রাধান্যকারী অন্যতম বৃক্ষ, সবচেয়ে পুরোনো জীবাশ্ম পার্সিয়ান পর্বের (২৮০ মিলিয়ন বছর আগে)
(৪৫) ইগুয়ানোডন, ক্রিটাশিয়াস পর্বের শুরুর দিকে (১২৫-১১৩ মিলিয়ন বছর আগে) একটি ডায়নোসর প্রজাতি (1. bernissartensis)
(8৬) 1. bernissartensis
(৪৭) লুদভিগ ইয়োসেফ ইয়োহান ভিটগেনস্টাইন (১৮৮৮ ১৯৫২) অষ্ট্রিয়- ব্রিটিশ দার্শনিক।
(৪৮) জন রনসন (জন্ম ১৯৬৭) ওয়েলশ সাংবাদিক, লেখক।
(8৯) Jon Ronson. The Men Who Stare at Goats (2004)
(৫০) www.healthfreedomusa.org/aboutus/president. shtml–জেনারেল স্টাবলবাইনের একটি বেশ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ প্রতিকৃতি দেখতে চাইলে দেখুন: www.mindcontrolforums.com/images/ Mind94.jpg
(৫১) ব্রাউনিয়ান মোশন/মুভমেন্ট– কোনো তরল বা গ্যাসে অণুদের এলোমেলো গতি
(৫২) স্টিভ গ্রাণ্ড (জন্ম ১৯৫৮) ব্রিটিশ কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও রোবোটিষ্ট।
(৫৩) Creation: Life and How to Make It. Steve Grand
(৫৪) গ্ৰাণ্ডের এই বক্তব্যটির আক্ষরিক সত্যতা নিয়ে অনেকে দ্বিমত থাকতে পারে। যেমন আমাদের হাড়ের অণুদের ক্ষেত্রে। কিন্তু এর মাধ্যমে তিনি যা মূল ভাবটি বোঝাতে চাইছেন সেটির সত্যতা আছে। আপনি কোনো স্থির বস্তু না হয়ে বরং অনেকটা তরঙ্গের মত।
(৫৫) ওয়াটার বোটম্যান– Corixidae পরিবারের পানিবাসী পতঙ্গ।
(৫৬) ফ্ল্যাটল্যান্ড.. বহুমাত্রিক একটি রোমান্স উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৮৪ সালে প্রহসন মূলক উপন্যাসিকা হিসাবে, এর লেখক ছিলেন স্কুলের শিক্ষক এডউইন এবোট। যিনি স্কোয়ার ছদ্মনামে লিখতেন। অ্যাবোট একটি কাল্পনিক দ্বিমাত্রিক জগত ফ্লার্টল্যান্ডের প্রস্তাব করেছিলেন ভিক্টোরিয় ইংল্যান্ডের সংস্কৃতিতে নানা পর্যবেক্ষণগুলো ব্যাখ্যা করার জন্য। তবে এই উপন্যাসিকার সবচেয়ে স্থায়ী অবদান ছিলো, বিভিন্ন ডাইমেনশন বা মাত্রা নিরীক্ষা করা।
(৫৭) মোল –মাটির নীচে বাস করতে অভিযোজিত ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী।
(৫৮) Richard Dawkins.The Blind Watchmaker: Why the Evidence of Evolution Reveals a Universe without Design (1986)
.
সংযুক্তি
কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঠিকানাঃ
আংশিক একটি তালিকাটি কিছু বন্ধুসূলভ ঠিকানার, ধর্মীয় সহিংতা থেকে প্ররিত্রাণের লক্ষ্যে on for Reason and Science: www.richarddawkins.net ওয়েবসাইটটিতে তালিকাটি নিয়মিত হালনাগাদ করে রাখার। আমি ক্ষমাপার্থী নীচের এই তালিকাটি মূলত ইংরেজী ভাষাভাষী দেশগুলোয় সীমাবদ্ধ।
USA
American Atheists
PO Box 5733, Parsippany, NJ 07054-6733
Voicemail:1-908-276-7300
Fax: 1-908-276-7402
Email: [email protected]
www.atheists.org
American Humanist Association
1777 T Street, NW, Washington, DC 20009-7125
Telephone: (202) 238-9088
Toll-free: 1-800-837-3792
Fax: (202) 238-9003
www.americanhumanist.org
Atheist Alliance International
PO Box 26867, Los Angeles, CA 90026
Toll-free: 1-866-HERETIC
Email: [email protected]
www.atheistalliance.org
The Brights
PO Box 163418, Sacramento, CA 95816 USA
Email: [email protected]
www.the-brights.net
Center For Inquiry Transnational
Council for Secular Humanism
Campus Freethought Alliance
Center for Inquiry– On Campus
African Americans for Humanism
3965 Rensch Road, Amherst, NY 14228
Telephone: (716) 636-4869
Fax:(716)636-1733
Email: [email protected]
www.centerforinquiry.net
www.secularhumanism.org
www.campusfreethought.org www.secularhumanism.org/index.php?section=aah&pag e=index
Freedom From Religion Foundation
PO Box 750, Madison, WI 53701
Telephone: (608) 256-5800
Email: [email protected]
www.ffrf.org
Freethought Society of Greater Philadelphia
PO Box 242, Pocopson, PA 19366-0242
Telephone: (610) 793-2737
Fax: (610) 793-2569
Email: [email protected]
www.fsgp.org/
Institute for Humanist Studies
48 Howard St, Albany, NY 12207
Telephone: (518) 432-7820
Fax: (518) 432-7821
www.humaniststudies.org
International Humanist and Ethical Union– USA
Appignani Bioethics Center
PO Box 4104, Grand Central Station, New York, NY 10162
Telephone: (212) 687-3324
Fax: (212) 661-4188
Internet Infidels
PO Box 142, Colorado Springs, CO 80901–0142
Fax: (877) 501-5113
www.infidels.org
James Randi Educational Foundation
201 S.E. 12th St (E. Davie Blvd), Fort Lauderdale, FL
33316-1815
Telephone: (954)467-1112
Fax: (954) 467-1660
Email: [email protected]
www.randi.org
Secular Coalition for America
PO Box 53330, Washington, DC 20009-9997
Telephone: (202) 299-1091
www.secular.org
Secular Student Alliance
PO Box 3246, Columbus, OH 43210
Toll-free Voicemail / Fax: 1-877-842-9474
Email: [email protected]
www.secularstudents.org
The Skeptics Society
PO Box 338, Altadena, CA 91001
Telephone: (626) 794-3119
Fax: (626) 794-1301
Email: [email protected]
www.skeptic.com
Society for Humanistic Judaism
28611 W. 12 Mile Rd, Farmington Hills, MI 48334
Telephone: (248) 478-7610
Fax: (248)478-3159
Email: [email protected]
www.shj.org
Britain
British Humanist Association
1 Gower Street, London WC1E 6HD
Telephone: 020 7079 3580
Fax: 020 7079 3588
Email: [email protected]
www.humanism.org.uk
International Humanist and Ethical Union– UK
1 Gower Street, London WC1E 6HD
Telephone: 020 7631 3170
Fax: 020 7631 3171
www.iheu.org/
National Secular Society
25 Red Lion Square, London WC1R 4RL
Tel: 020 7404 3126
Fax: 0870 762 8971
www.secularisrn.org.uk/
New Humanist
1 Gower Street, London WC1E 6HD
Telephone: 020 7436 1151
Fax: 020 7079 3588
Email: [email protected]
www.newhumanist.org.uk
Rationalist Press Association
1 Gower Street, London WC1E 6HD
Telephone: 020 7436 1151
Fax: 020 7079 3588
Email: [email protected]
www.rationalist.org.uk/
South Place Ethical Society (UK)
Conway Hall, Red Lion Square, London WC1R 4RL
Telephone: 020 7242 8037/4
Fax: 020 7242 8036
Email: [email protected]
www.ethicalsoc.org.uk
Canada
Humanist Association of Canada
PO Box 8752, Station T, Ottawa, Ontario, K1G 3J1
Telephone: 877-HUMANS
Fax: (613) 739-4801
Email: [email protected]
http://hac.humanists.net/
Australia
Australian Skeptics
PO Box 268, Roseville, NSW 2069
Telephone: 02 9417 2071
Email: [email protected]
www.skeptics.com.au
Council of Australian Humanist Societies
GPO Box 1555, Melbourne, Victoria 3001.
Telephone: 613 5974 4096
Email: [email protected]
http://home.vicnet.net.au/-humanist/resources/cahs.htm
New Zealand
New Zealand Skeptics
NZCSICOP Inc.
PO Box 29-492, Christchurch
Email: [email protected]
http://skeptics.org.nz
Humanist Society of New Zealand
PO Box 3372, Wellington
Email: [email protected]
www.humanist.org.nz/
India
Rationalist International
PO Box 9110, New Delhi 110091
Telephone: +91-11-556 990 12
Email: [email protected]
www.rationalistinternational.net/
Islamic
Apostates of Islam
www.apostatesofislam.com/index.htm
Dr Homa Darabi Foundation
(To promote the rights of women and children under Islam)
PO Box 11049, Truckee, CA 96162, USA
Telephone (530) 582 4197
Fax (530) 582 0156
Email: [email protected]
www.homa.org/
Faith Freedom.org
www.faithfreedom.org/index.htm
Institute for the Secularization of Islamic Society
Email: [email protected]
www.secularislam.org
.
তথ্যসূত্র
যে বইগুলো পাঠ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে:
Adams, D. (2003). The Salmon of Doubt. London: Pan.
Alexander, R. D. and Tinkle, D. W., eds (1981). Natural Selection and Social Behavior. New York: Chiron Press.
Anon. (1985). Life– How Did It Get Here? By Evolution or by Creation? New York: Watchtower Bible and Tract Society
Ashton, J. E, ed. (1999). In Six Days: Why 50 Scientists Choose to Believe in Creation. Sydney: New Holland.
Atkins, P. W. (1992). Creation Revisited. Oxford: W. H. Freeman.
Atran, S. (2002). In Gods We Trust. Oxford: Oxford University Press.
Attenborough, D. (1960). Quest in Paradise. London: Lutterworth.
Aunger, R. (2002). The Electric Meme: A New Theory of How We Think, New York: Free Press.
Baggini, J. (2003). Atheism: A Very Short Introduction. Oxford: Oxford University Press.
Barber, N. (1988). Lords of the Golden Horn. London: Arrow.
Barker, D. (1992). Losing Faith in Faith. Madison, WI: Freedom From Religion Foundation.
Barker, E. (1984). The Making of a Moonie: Brainwashing or Choice? Oxford: Blackwell.
Barrow, J. D. and Tipler, F.J. (1988). The Anthropic Cosmological Principle. New York: Oxford University Press.
Baynes, N. H., ed. (1942). The Speeches of Adolf Hitler, vol. 1. Oxford: Oxford University Press.
Behe, M. J. (1996). Darwin’s Black Box. New York: Simon & Schuster.
Beit-Hallahmi, B. and Argyle, M. (1997). The Psychology of Religious Behaviour, Belief and Experience. London: Routledge.
Berlinerblau, J. (2005). The Secular Bible: Why Nonbelievers Must Take Religion Seriously. Cambridge: Cambridge University Press.
Blackmore, S. (1999). The Meme Machine. Oxford: Oxford University Press.
Blaker, K., ed. (2003). The Fundamentals of Extremism: The Christian Right in America. Plymouth, MI: New Boston.
Bouquet, A. C. (1956). Comparative Religion. Harmondsworth: Penguin.
Boyd, R. and Richerson, P. J. (1985). Culture and the Evolutionary Process. Chicago: University of Chicago Press.
Boyer, P. (2001). Religion Explained. London: Heinemann.
Brodie, R. (1996). Virus of the Mind: The New Science of the Meme.Seattle: Integral Press.
Buckman, R. (2000). Can We Be Good without God? Toronto:Viking.
Bullock, A. (1991). Hitler and Stalin. London: HarperCollins.
Bullock, A. (2005). Hitler: A Study in Tyranny. London: Penguin.
Buss, D. M., ed. (2005). The Handbook of Evolutionary Psychology.Hoboken, NJ: Wiley.
Cairns-Smith, A. G. (1985). Seven Clues to the Origin of Life.Cambridge: Cambridge University Press.
Comins, N. F. (1993). What if the Moon Didn’t Exist? New York: HarperCollins.
Coulter, A. (2006). Godless: The Church of Liberation. New York:Crown Forum.
Darwin, C. (1859). On the Origin of Species by Means of Natural Selection. London: John Murray.
Dawkins, M. Stamp (1980). Animal Suffering. London: Chapman & Hall.
Dawkins, R. (1976). The Selfish Gene. Oxford: Oxford University Press.
Dawkins, R. (1982). The Extended Phenotype. Oxford: W. H.Freeman.
Dawkins, R. (1986). The Blind Watchmaker. Harlow: Longman.
Dawkins, R. (1995). River Out of Eden. London: Weidenfeld & Nicolson.
Dawkins, R. (1996). Climbing Mount Improbable. New York: Norton.
Dawkins, R. (1998). Unweaving the Rainbow. London: Penguin.
Dawkins, R. (2003). A Devil’s Chaplain: Selected Essays, London:Weidenfeld & Nicolson.
Dennett, D. (1995). Darwin’s Dangerous Idea. New York: Simon & Schuster.
Dennett, D. C. (1987). The Intentional Stance. Cambridge, MA: MITPress.
Dennett, D. C. (2003). Freedom Evolves. London: Viking.
Dennett, D. C. (2006). Breaking the Spell: Religion as a Natural Phenomenon. London: Viking.
Deutsch, D. (1997). The Fabric of Reality. London: Allen Lane.
Distin, K. (2005). The Selfish Meme: A Critical Reassessment.Cambridge: Cambridge University Press.
Dostoevsky, F. (1994). The Karamazov Brothers. Oxford: Oxford University Press.
Ehrman, B. D. (2003a). Lost Christianities: The Battles for Scripture and the Faiths We Never Knew. Oxford: Oxford University Press.
Ehrman, B. D. (2003b). Lost Scriptures: Books that Did Not Make It into the New Testament. Oxford: Oxford University Press.
Ehrman, B. D. (2006). Whose Word Is It? London: Continuum.
Fisher, H. (2004). Why We Love: The Nature and Chemistry of Romantic Love. New York: Holt.
Forrest, B. and Gross, P. R. (2004). Creationism’s Trojan Horse: The Wedge of Intelligent Design. Oxford: Oxford University Press.
Frazer, J. G. (1994). The Golden Bough. London: Chancellor Press.
Freeman, C. (2002). The Closing of the Western Mind. London:Heinemann.
Galouye, D. F. (1964). Counterfeit World. London: Gollancz.
Glover, J. (2006). Choosing Children. Oxford: Oxford University Press.
Goodenough, U. (1998). The Sacred Depths of Nature, New York:Oxford University Press.
Goodwin, J. (1994). Price of Honour: Muslim Women Lift the Veil of Silence on the Islamic World. London: Little, Brown.
Gould, S. J. (1999). Rocks of Ages: Science and Religion in the fullness of Life. New York: Ballantine.
Grafen, A. and Ridley, M., eds (2006). Richard Dawkins: How a Scientist Changed the Way We Think. Oxford: Oxford University Press.
Grand, S. (2000). Creation: Life and How to Make It. London:Weidenfeld & Nicolson.
Grayling, A. C. (2003). What Is Good? The Search for the Best Way to Live. London: Weidenfeld & Nicolson.
Gregory, R. L. (1997). Eye and Brain. Princeton: Princeton University Press.
Halbertal, M. and Margalit, A. (1992). Idolatry. Cambridge, MA:Harvard University Press.
Harris, S. (2004). The End of Faith: Religion, Terror and the Future of Reason. New York: Norton.
Harris, S. (2006). Letter to a Christian Nation. New York: Knopf.
Haught, J. A. (1996). 2000 Years of Disbelief: Famous People with the Courage to Doubt. Buffalo, NY: Prometheus.
Hauser, M. (2006). Moral Minds: How Nature Designed our Universal Sense of Right and Wrong. New York: Ecco.
Hawking, S. (1988). A Brief History of Time. London: Bantam.
Henderson, B. (2006). The Gospel of the Flying Spaghetti Monster. New York: Villard.
Hinde, R. A. (1999). Why Gods Persist: A Scientific Approach to Religion. London: Routledge.
Hinde, R. A. (2002). Why Good Is Good: The Sources of Morality.London: Routledge.
Hitchens, C. (1995). The Missionary Position: Mother Teresa in Theory and Practice. London: Verso.
Hitchens, C. (2005). Thomas Jefferson: Author of America. New York: HarperCollins.
Hodges, A. (1983). Alan Turing: The Enigma. New York: Simon &Schuster.
Holloway, R. (1999). Godless Morality: Keeping Religion out of Ethics. Edinburgh: Canongate.
Holloway, R. (2001). Doubts and Loves: What is Left of Christianity. Edinburgh: Canongate.
Humphrey, N. (2002). The Mind Made Flesh: Frontiers of Psychology and Evolution. Oxford: Oxford University Press.
Huxley, A. (2003). The Perennial Philosophy. New York: Harper.
Huxley, A. (2004). Point Counter Point. London: Vintage.
Huxley, T. H. (1871). Lay Sermons, Addresses and Reviews. New York: Appleton.
Huxley, T, H. (1931). Lectures and Essays. London: Watts.
Jacoby, S. (2004). Freethinkers: A History of American Secularism New York: Holt.
Jammer, M. (2002). Einstein and Religion. Princeton: Princeton University Press.
Jaynes, J. (1976). The Origin of Consciousness in the Breakdown of the Bicameral Mind. Boston: Houghton Mifflin.
Juergensmeyer, M. (2000). Terror in the Mind of God: The Global Rise of Religious Violence. Berkeley: University of California Press.
Kennedy, L. (1999). All in the Mind: A Farewell to God. London:Hodder &c Stoughton,
Kertzer, D. I. (1998). The Kidnapping ofEdgardo Mortara. New York:Vintage.
Kilduff, M. and Javers, R. (1978). The Suicide Cult. New York:Bantam.
Kurtz, P., ed. (2003). Science and Religion: Are They Compatible?Amherst, NY: Prometheus.
Kurtz, P. (2004). Affirmations: Joyful and Creative Exuberance.Amherst, NY: Prometheus.
Kurtz, P. and Madigan, T. J., eds (1994). Challenges to the Enlightenment: In Defense of Reason and Science. Amherst, NY:Prometheus.
Lane, B. (1996). Killer Cults. London: Headline.
Lane Fox, R. (1992). The Unauthorized Version. London: Penguin.
Levitt, N. (1999) Prometheus Bedeviled. New Brunswick, NJ: Rutgers University Press.
Loftus, E. and Ketcham, K. (1994). The Myth of Repressed Memory:False Memories and Allegations of Sexual Abuse. New York: StMartin’s.
McGrath, A. (2004). Dawkins’ God: Genes, Memes and the Meaning of Life. Oxford: Blackwell.
Mackie, J. L. (1985). The Miracle of Theism. Oxford: Clarendon Press.
Medawar, P. B. (1982). Pluto’s Republic. Oxford: Oxford University Press.
Medawar, P. B. and Medawar, J. S. (1977). The Life Science: Current Ideas of Biology. London: Wildwood House.
Miller, Kenneth (1999). Finding Darwin’s God. New York:HarperCollins.
Mills, D. (2006). Atheist Universe: The Thinking Person’s Answer to Christian Fundamentalism. Berkeley: Ulysses Books.
Mitford, N. and Waugh, E. (2001). The Letters of Nancy Mitford and Evelyn Waugh. New York: Houghton Mifflin.
Mooney, C. (2005). The Republican War on Science. Cambridge, MA:Basic Books.
Perica, V. (2002). Balkan Idols: Religion and Nationalism in Yugoslav States. New York: Oxford University Press.
Phillips, K. (2006). American Theocracy. New York: Viking.
Pinker, S. (1997). How the Mind Works. London: Allen Lane. Pinker, S. (2002). The Blank Slate: The Modern Denial of Human Nature. London: Allen Lane.
Plimer, I. (1994). Telling Lies for God: Reason vs Creationism.Milsons Point, NSW: Random House. Polkinghorne,
J. (1994). Science and Christian Belief: Theological Reflections of a Bottom-Up Thinker. London: SPCK.
Rees, M. (1999). Just Six Numbers. London: Weidenfejd & NicoJson.
Rees, M. (2001). Our Cosmic Habitat. London: Weidenfeld & NicoJson.
Reeves, T. C. (1996). The Empty Church: The Suicide of Liberal Christianity. New York: Simon & Schuster.
Richerson, P. J. and Boyd, R. (2005). Not by Genes Alone: How Culture Transformed Human Evolution, Chicago: University ofChicago Press.
Ridley, Mark (2000). Mendel’s Demon: Gene Justice and the Complexity of Life. London: Weidenfeld & Nicolson.
Ridley, Matt (1997). The Origins of Virtue. London: Penguin. Ronson, J. (2005). The Men Who Stare at Goats. New York: Simon & Schuster.
Ruse, M. (1982). Darwinism Defended: A Guide to the Evolution Controversies. Reading, MA: Addison-Wesley.
Russell, B. (1957). Why I Am Not a Christian. London: Routledge.
Russell, B. (1993). The Quotable Bertrand Russell. Amherst, NY:Prometheus.
Russell, B. (1997a). The Collected Papers of Bertrand Russell, vol. 2:Last Philosophical Testament, 1943-1968. London: Routledge.
Russell, B. (1997b). Collected Papers, vol. 11, ed. J. C. Slater and P. Köllner. London: Routledge.
Russell, B. (1997c). Religion and Science. Oxford: Oxford University Press.
Ruthven, M. (1989). The Divine Supermarket: Travels in Search of the Soul of America. London: Chatto & Windus.
Sagan, C. (1995). Pale Blue Dot. London: Headline,
Sagan, C. (1996). The Demon-Haunted World: Science as a Candle in the Dark, London: Headline.
Scott, E. C. (2004). Evolution vs. Creationism: An Introduction. Westport, CT: Greenwood.
Shennan, S. (2002). Genes, Memes and Human History. London:Thames & Hudson.
Shermer, M. (1997). Why People Believe Weird Things: Pseudoscience,Superstition and Other Confusions of Our Time. New York: W. H.Freeman.
Shermer, M. (1999). How We Believe: The Search for God in an Age of Science. New York: W. H. Freeman.
Shermer, M. (2004). The Science of Good and Evil: Why PeopleCheat, Gossip, Care, Share, and Follow the Golden Rule. New York: Holt.
Shermer, M. (2005). Science Friction: Where the Known Meets theUnknown. New York: Holt.
Shermer, M. (2006). The Soul of Science. Los Angeles: Skeptics Society.
Silver, L. M. (2006). Challenging Nature: The Clash of Science and Spirituality at the New Frontiers of Life. New York: HarperCollins.
Singer, P. (1990). Animal Liberation. London: Jonathan Cape. Singer, P. (1994). Ethics. Oxford: Oxford University Press.
Smith, K. (1995). Ken’s Guide to the Bible. New York: Blast Books.
Smolin, L. (1997). The Life of the Cosmos. London: Weidenfeld &Nicolson.
Smythies, J. (2006). Bitter Fruit. Charleston, SC: Booksurge. Spong, J. S. (2005). The Sins of Scripture. San Francisco: Harper.
Stannard, R. (1993). Doing Away with God? Creation and the Big Bang. London: Pickering.
Steer, R. (2003). Letter to an Influential Atheist. Carlisle: Authentic Lifestyle Press.
Stenger, V. J. (2003). Has Science Found God? The Latest Results in the Search for Purpose in the Universe. New York: Prometheus.
Susskind, L. (2006). The Cosmic Landscape: String Theory and the Illusion of Intelligent Design. New York: Little, Brown.
Swinburne, R. (1996). Is There a God? Oxford: Oxford University Press.
Swinburne, R. (2004). The Existence of God. Oxford: Oxford University Press.
Taverne, R. (2005). The March of Unreason: Science, Democracy and the New Fundamentalism. Oxford: Oxford University Press.
Tiger, L. (1979). Optimism: The Biology of Hope. New York: Simon & Schuster.
Toland, J. (1991). Adolf Hitler: The Definitive Biography, New York: Anchor.
Trivers, R. L. (1985). Social Evolution. Menlo Park, CA: Benjamin/Cummings.
Unwin, S. (2003). The Probability of God: A Simple Calculation thatProves the Ultimate Truth. New York: Crown Forum.
Vermes, G. (2000). The Changing Faces of Jesus. London: Allen Lane.
Ward, K. (1996). God, Chance and Necessity. Oxford: Oneworld.
Warraq, I. (1995). Why I Am Not a Muslim. New York: Prometheus.
Weinberg, S. (1993). Dreams of a Final Theory. London: Vintage.
Wells, G. A. (1986). Did Jesus Exist? London: Pemberton.
Wheen, F. (2004). How Mumbo-Jumbo Conquered the World: A Short History of Modern Delusions. London: Fourth Estate.
Williams, W, ed. (1998). The Values of Science: Oxford Amnesty Lectures 1997. Boulder, CO: Westview.
Wilson, A. N. (1993). Jesus. London: Flamingo.
Wilson, A. N. (1999). God’s Funeral. London: John Murray.
Wilson, D. S. (2002). Darwin’s Cathedral: Evolution, Religion and the Nature of Society. Chicago: University of Chicago Press.
Wilson, E. O. (1984). Biophilia. Cambridge, MA: Harvard University Press.
Winston, R. (2005). The Story of God. London: Transworld/BBC.
Wolpert, L. (1992). The Unnatural Nature of Science. Faber& Faber. Wolpert, L. (2006). Six Impossible Things Before Breakfast: The Evolutionary Origins of Belief. London: Faber & Faber.
Young, M. and Edis, T., eds (2006). Why Intelligent Design Fails: A Scientific Critique of the New Creationism. New Brunswick: Rutgers University Press.