1 of 2

১০. ইহতিকার, বাই সালাম ও মুরাবাহা

দশম অধ্যায় – ইহতিকার, বাই সালাম ও মুরাবাহা

ধারা-২২৭

ইহতিকার (sis) (ক) নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস, তাহা পশু-পাখির খাদ্য হউক অথবা মানুষের ব্যবহার্য দ্রব্যই হউক, ক্রয় করিয়া মূল্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে বাজারজাত না করিয়া আটকাইয়া রাখাকে ইহুতিকার’ বলে।

(খ) নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস এক মাসের অধিককাল আটকাইয়া রাখা নিষিদ্ধ।

(গ) ভবিষ্যত দুর্ভিক্ষ মোকাবিলার জন্য অথবা অতিরিক্ত মৌসুমী উৎপাদন অন্য মৌসুমে সহজলভ্য করার উদ্দেশ্যে ইহতিকার নিষিদ্ধ নহে; যদি তাহাতে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি না হয়।

(ঘ) নিজের চাষাবাদকৃত জমির উৎপাদন ইতিকার করা বৈধ, তবে প্রয়োজনাতিরিক্ত অংশ মানুষের প্রয়োজনের সময় বাজারে ছাড়িয়া দেওয়া উত্তম।

(ঙ) পরিবারের সাংবাত্সরিক ভরণপোষণের পরিমাণ প্রয়োজনীয় দ্রব্য ইহতিকার করিয়া রাখা নিষিদ্ধ নহে।

(চ) জনগণের মধ্যে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে সরকার ইতিকারকারীদেরকে প্রয়োজনাতিরিক্ত মাল বাজারে ছাড়িতে নির্দেশ দিতে পারিবে এবং তাহারা নির্দেশ অমান্য করিলে বল প্রয়োগ, এমনকি শাস্তি বিধানও করিতে পারিবে।

(ছ) সরকার দুর্ভিক্ষ চলাকালে ইহতিকারকারীদের অতিরিক্ত দ্রব্য হস্তগত করিয়া দুর্ভিক্ষ পীড়িত জনগণের মধ্যে বন্টন করিয়া দিতে পারিবে, তবে উৎপাদন মৌসুমে সমপরিমাণ দ্রব্য তাহাদেরকে ফেরত দিতে হইবে।

বিশ্লেষণ

নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করিয়া অতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধির কৌশলৰূপে গুদামজাত করিয়া রাখা বৈধ নহে।

. মহানবী (সা) বলেন :

৩৯১

من احتكر فهو خاطئ .

“যে ব্যক্তি (নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস) গুদামজাত করিয়া রাখে সে অপরাধী” (মুসলিম)।

المحتكر ملعون .

“গুদামজাতকারী অভিশপ্ত” (ইন মাজা, দারিমী)।

من احتكر على المسلمين طعامهم ضربه الله بالخذام

৮১

,

“যে ব্যক্তি মুসলমানদের মধ্যে (অভাব-অনটন সৃষ্টির উদ্দেশ্যে) খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত করিবে (আশংকা আছে যে,) আল্লাহ তাহাকে কুষ্ঠরোগে ও দারিদ্রে নিক্ষেপ করিবেন” (ইবন মাজা, বায়হাকীর শুআবুল ঈমান ও রবীন)।

من احتكر طعاما أربعين يوما يريد به الغلاء نقد برئ

من الله وبرئ الله منه .

“যে ব্যক্তি মূল্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে চল্লিশ দিন পর্যন্ত খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত করিয়া রাখিবে সে আল্লাহর আইন ভঙ্গকারী গণ্য হইবে এবং আল্লাহ তাহার নিরাপত্তার দায়িত্ব ত্যাগ করিবেন” (রবীন)।

بس العبد المحتكر إن أرخص الله الأسعار حزن وان

اغلاها فرح .

“গুদামজাতকারী কতই না ঘৃণিত! আল্লাহ দ্রব্যমূল্য কমাইয়া দিলে সে চিন্তিত হয় এবং বাড়াইয়া দিলে আনন্দিত হয়” রেযীন, বায়হাকীর শুআবুল ঈমান)।

من احتكر طعاما أربعين يوما ثم تصدق به لم يكن

., “যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন যাবত খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত করিয়া রাখিল সে তাহার ঐ মাল দান-খয়রাত করিয়া দিলেও তাহার অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত হিসাবে তাহা যথেষ্ট। হইবে না” (রবীন)।

অতএব নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস অবৈধ স্বার্থ লাভের উদ্দেশ্যে গুদামজাত করিয়া রাখা নিষিদ্ধ। ইহুতিকার বা গুদামজাত করিয়া রাখার পদ্ধতি এই যে, বাজার হইতে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করিয়া তাহা পুনরায় বাজারে না ছাড়িয়া মূল্য বৃদ্ধি

৩৯২

করিয়া অধিক মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে আটক করিয়া রাখা। তবে এক মাস বা তাহার কম সময়ের জন্য আটক করিয়া রাখিলে তাহা ইহতিকারের আওতায় পড়িবে না। ইমাম মুহাম্মাদ (র)-এর মতে, মানুষ ও পশুর জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস আটক করিয়া রাখা ইহতিকার হিসাবে গণ্য এবং ইমাম আবু ইউসুফ (র)-এর মতে, মানুষের ব্যবহার্য যে কোন জিনিস পর্যন্ত ইতিকারের বিধান প্রযোজ্য।

ভবিষ্যত প্রয়োজন বা জরুরী অবস্থা মোকাবিলার জন্য সরকার বিভিন্ন জিনিসের যে মজুদ গড়িয়া তোলে অথবা ব্যবসায়ীগণ মৌসুমী ফসলের উদ্বৃত্ত অংশ অন্য মৌসুমে সহজলভ্য করার জন্য হিমাগারে বা গুদামে যে মজুদ সংরক্ষণ করে তাহা অবৈধ ইহতিকারের আওতায় পড়ে না।

নিজ চাষাবাদের জমির উৎপাদন চাষীর জন্য গোলাজাত করিয়া রাখা বৈধ। তবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত অংশ মানুষের প্রয়োজনের সময় বাজারজাত করা উত্তম। অনুরূপভাবে পরিবারের ভরণপোষণের পরিমাণ সাংবৎসরের প্রয়োজনীয় পরিমাণ জিনিস মজুত করিয়া রাখাও বৈধ।

জনগণের মধ্যে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে সরকার মজুদদারগণকে তাহাদের মাল বাজারে ছাড়িয়া দিতে নির্দেশ দিবে। তাহারা নির্দেশ অমান্য করিলে সরকার তাহাদের উপর বল প্রয়োগ করিতে পারিবে, এমনকি শাস্তিও বিধান করিতে পারিবে। সরকার গুদামজাতকারীদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত মাল তাহাদের সম্মতি ব্যতীত দুর্ভিক্ষপীড়িত জনগণের মধ্যে বন্টন করিয়া দিতে পারিবে। তবে দুর্ভিক্ষাবস্থা দূরীভূত হওয়ার পর উক্ত পরিমাণ মাল মালিকদেরকে ফেরত দিতে হইবে।

ধারা-২২৮

দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ (51) (ক) সাধারণ অবস্থায় দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করিয়া দেওয়া যুক্তিসঙ্গত নহে।

(খ) অসাধু উৎপাদক ও ব্যবসায়ীদের একচেটিয়া মূল্যবৃদ্ধি হইতে জনসাধারণের স্বার্থ রক্ষার্থে সরকার বিশেষজ্ঞ কমিটির পরামর্শ মোতাবেক দ্রব্যমূল্য নির্দিষ্ট করিয়া দিতে পারে।

বিশ্লেষণ

জনসাধারণের জীবনযাত্রা অত্যন্ত কঠিন হইয়া যাওয়ার ফলে জরুরী অবস্থার উদ্ভব হইলে অথবা অসাধু ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামত মূল্যবৃদ্ধি করিলে জনগণের স্বার্থে উক্ত প্রবণতা রোধকল্পে বিশেষজ্ঞ কমিটির (waj, j ai) পরামর্শ গ্রহণ করিয়া সরকার দ্রব্যমূল্য নির্দিষ্ট করিয়া দিতে পারে। ফকীহগণ ইহাকে উত্তম ও গ্রহণযোগ্য বলিয়াছেন। ফকীহগণ একমত হইয়া এই কথাও বলিয়াছেন যে, স্বাভাবিক অবস্থায়

এবং নিষ্প্রয়োজনে দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ না করাই উওম। ইহাতে অন্যায় হস্তক্ষেপ অবিচার হওয়ার আশংকা রহিয়াছে। মহানবী (সা)-এর যুগে দ্রব্যমূল্য নির্দিষ্ট করিয়া দেওয়ার জন্য তাঁহার নিকট আবেদন করা হইলে তিনি যুলুম ও অন্যায় হইতে পারে

এই আশংকায় দ্রব্যমূল্য বাধিয়া দিতে সম্মত হম মাই!

ধারা-২২৯। হস্তগত করার পূর্বে মালের ভোগ ব্যবহার ( 6) (ক) মা ( JL.) অস্থায় প্রকৃতির হইলে ক্রেতা তাহা হস্তগত বা স্থানান্তর না করিয়া পুনরায় বিক্রয় করিতে পারিবে না।

(খ) ওজনবােগ্য বা পরিমাপযোগ্য অস্থাবর প্রকৃতির মাল হস্তগত করার পর ক্রেতা তাহা বিক্রয়কালে ওজন বা পরিমাপ করিয়া বিক্রয় করিবে। ( () ও নযোগ্য বা পরিমাপযোগ্য মাল (পরিমাণ) অনুমান করিয়া কয় করিলে ক্রেতা তাহা অনুমানের ভিত্তিতে বিক্রয় করিতে পারিবে।

(ঘ) গণনাযোগ্য মাল গণনা করিয়া ক্রয় করিবার পর বিক্রয় করার সময় গণনা না করিলেও ক্রয়-বিক্রয় বৈধ হইবে।

(৬) মাল বা প্রকৃতির হইলে তাহা ক্রয় করিবার পর হস্তগত করিবার পূর্বে বিক্রয় করা বা ভাড়া দেওয়া বৈধ।

বিশ্লেষণ

ক্রেতা কখনও কখনও মাল ক্রয়ের পর তাহা হস্তগত করার পূর্বে বিক্রয় করিয়া দেয়। ক্ষেত্রবিশেষে ইহা বৈধ এবং ক্ষেত্রবিশেষে বৈধ নহে। যে মাল অস্থাবর প্রকৃতির এবং যাহার স্থানান্তর সম্ভব সেই মাল ক্রেতা নিজ দখলে আনার পূর্বে বা ক্রয়ের স্থান হইতে সরাইবার পূর্বে পুনরায় বিক্রয় করিতে পারিবে না : আবদুল্লাহ ইবন উমর (র: ) বলেন, মহানবী (সা) মাল ক্রয়ের পর তাহা ক্রেতার নিজ দখলে নেওয়া বা স্থানান্তর করার পূর্বে বিক্রয় করিতে নিষেধ করিয়াছেন।

নিষিদ্ধ করার একটি কারণ এই বর্ণনা করা হইয়াছে যে মাল হস্তগত করার পূর্বে ধ্বংস বা বেদখল হইয়া গেলে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি রদ ( ) হইয়া যাইতে পারে! যেমন মাল ক্রয় করার পর ক্রেতা কর্তৃক হস্তগত করার পূর্বে বিক্রেতার দখলে থাকা অবস্থায় তাহা ধ্বংস হইয়া গেলে দ্বিতীয় ক্রেতার উক্ত মাল পাওয়ার প্রশ্নই উঠে না। এই অবস্থায় ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি সরাসরি রদ (sw) হইয়া যায়। এই আশংকার কারণে মাল ক্রেতা কর্তৃক হস্তগত করার পূর্বে পুনরায় বিক্রয় করা বৈধ নহে।

ওজন বা পরিমাপ করিয়া বিক্রয় না করিলে ঝগড়ার সৃষ্টি হইতে পারে। বিশেষ করিয়া খাদ্যশস্য হইলে তাহা অবশ্যই ওজন করিয়া বিক্রয় করিবে। এই সম্পর্কে মহানবী (সা) হইতে হাদীস বর্ণিত আছে?

৩৯৪

إن النبى صلى الله عليه وسلم نهى عن بيع الطعام حتى

يجرى فيه صاعان صاغ البائع وصاغ المشتري.

“মহানবী (সা) খাদ্যশস্য দুইবার ওজন না করা পর্যন্ত বিক্রয় করিতে নিষেধ করিয়াছেন–বিক্রেতা কর্তৃক ওজন এবং ক্রেতা কর্তৃক (পুনরায় বিক্রয়কালে) ওজন।

অবশ্য খাদ্যশস্য ইত্যাদি স্তুপাকারেও ক্রয়-বিক্রয় করা বৈধ। এই অবস্থায় অনুমানে নির্ধারিত পরিমাণের অধিক হইলে তাহা ক্রেতাই পাইবে। যেমন এক ব্যক্তি দশ হাজার টাকার বিনিময়ে এক স্থূপ ধান ক্রয় করিল এবং স্কুপে পঞ্চাশ মণ ধান অনুমান করা হইয়াছে। এই অবস্থায় অনুমানের কম হইলে তাহাও ক্রেতাকে গ্রহণ করিতে হইবে এবং বেশি হইলে তাহাও ক্রেতাই পাইবে।’

গণনাযোগ্য মাল, যেমন চতুষ্পদ জন্তু, ডিম, ফল ইত্যাদি পুনরায় বিক্রয়ের সময় গণনা না করিলেও তাহা ব্যবহার করা যাইবে। কারণ গণনায় কম হইলে যত সংখ্যক কম হইয়াছে তত সংখ্যক ব্যবহার করা হইয়াছে বুঝিতে হইবে। ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (র) এই মত ব্যক্ত করিয়াছেন। কিন্তু ইমাম আবু হানীফার মতে পুনরায় বিক্রয়ের সময় তাহা গণনা করিতে হইবে।

স্থাবর প্রকৃতির মাল, যেমন জমি, ঘরবাড়ি ইত্যাদি ক্রয় করিয়া দখলে নেওয়ার পূর্বে পুরায় বিক্রয় করা যাইবে অথবা ভাড়াও দেওয়া যাইবে। ইমাম আবু হানীফা ও ইমাম আবু ইউসুফ (র) এই মত ব্যক্ত করিয়াছেন। কিন্তু ইমাম মুহাম্মাদ (র)-এর

মতে স্থাবর সম্পত্তিও হস্তগত করার পূর্বে বিক্রয় করা যাইবে না।

ধারা-২৩০

শিকারী জীবজন্তুর ক্রয়-বিক্রয় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হিংস্র প্রাণী, যেমন বাঘ, সিংহ, পাখি এবং অন্যান্য হিত্র প্রাণীর ক্রয়-বিক্রয় বৈধ।

বিশ্লেষণ

হিংস্র প্রাণী ভক্ষণ করা যদিও হারাম কিন্তু সেইগুলিকে প্রশিক্ষণ দিয়া মানুষের উপকারী কর্মে নিয়োগ করা যেমন বৈধ, তেমনি উহাদের ক্রয়-বিক্রয় করাও বৈধ। শিকারী জন্তু, যেমন বিড়াল, কুকুর, সিংহ, বাঘ, ভালুক, পক্ষী যেমন চিল, বাজ (ঈগল) ইত্যাদি জীবজন্তুকে প্রশিক্ষণ দিয়া মানুষের নানারূপ উপকারী কাজে নিয়োজিত করা যায়। মহানবী (সা) কুকুরের ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করিয়াছেন, তবে শিকারী কুকুর ও পাহারায় নিয়োজিত কুকুরের ক্রয়-বিক্রয় বৈধ রাখিয়াছেন।”

نهى النبي صلى الله عليه وسلم عن بيع الكلب الأ صيد

أو ماشية.

কিন্তু শূকর ও মদের ক্রয়-বিক্রয় সর্বাবস্থায় নিষিদ্ধ। ইসলামী শরীআতে উক্ত দুইটি জিনিস মাল হিসাবে গণ্য নহে। তবে অমুসলিম, বিশেষত, ইহুদী-খৃস্টানদের জন্য তাহাদের নিজেদের মধ্যে শুকর ও মদের ক্রয়-বিক্রয় বৈধ।” সাপও যদি কোন উপকারী কাজে লাগানো যায় তবে তাহার ক্রয়-বিক্রয়ও বৈধ।

ধারা-২৩১

ফলের ক্রয়-বিক্রয় ১. মুকুল হইতে ফল বাহির হওয়ার পূর্বে তাহার ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ। ২. ফল পরিপুষ্ট হওয়ার পূর্বে অথবা পরে তাহার ক্রয়-বিক্রয় বৈধ।

৩. কিন্তু ফল মুকুল হইতে বাহির হইয়াছে এবং কিছু ফল বাহির হয় নাই এই অবস্থায় তাহার ক্রয়-বিক্রয় নিষি।

বিশ্লেষণ

মুকুল হইতে ফল বাহির হওয়ার পূর্বে তাহার ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে ফকীহগণ একমত।

মহানবী (সা) বলেন :

لا تبع ما ليس عندك .

“যে জিনিস তোমার নিকট নাই তাহা বিক্রয় করিও না।”

ফল পরিপুষ্ট হওয়ার পর তাহার ক্রয়-বিক্রয় বেধ হওয়ার ব্যাপারে ফকীহগণ একমত। তবে ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন হওয়ার পর ক্রেতাকে তৎক্ষণাৎ বৃক্ষ হইতে ২০ পাড়িয়া নিতে হইবে। চুক্তিপত্রে ফল গাছে থাকার এবং পর্যায়ক্রমে পাড়িয়া নেওয়ার শর্ত যোগ করা বৈধ এবং ইহাতে চুক্তি ক্রটিযুক্ত (L.L3) হইবে না। পরিপক্ক ফল ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে তাহা বৃক্ষোপরি রাখার শর্ত যোগ করা বা না করা উভয়ই সমান। অবশ্য বৃক্ষোপরি রাখার শর্ত যোগ করিলে ইমাম আবু হানীফা ও অব ইউসুফ (র)-এর মতে ক্রয়-বিক্রয় বৈধ হইবে না, কিন্তু ইমাম মুহাম্মাদ ( 1)- এর মতে বৈধ হইবে।”

ধারা-২৩২

অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় (ক) অগ্রিম মূল্য প্রদানের এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ান্তর মাল ( JL. হস্তান্তরের শর্তে যে ক্রয়-বিক্রয় অনুষ্ঠিত হয় তাহাকে অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় (

t) বলে।

(খ) ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে যে কোন এক পক্ষের প্রস্তাব (CL) ও অপর পক্ষের সমতির (Ji) দ্বারা অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি সম্পন্ন হয়।

বিশ্লেষণ

অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয়..এর প্রতিশব্দ বাই সালাম (L. ) এবং বাই সালাফ (1L. )। কুরআন, হাদীস, সাহাবায়ে কিরামের কার্যক্রম এবং উম্মতের ফকীহগণের ঐকমত্য অনুযায়ী বাই সালাম’ অর্থাৎ ‘অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয়’ বৈধ। ফকীহগণ নিয়োক্ত আয়াত বাই সালামের বৈধতার অনুকূলে পেশ করিয়াছেন :

يأيها الذين آمنوا اذا تداينتم بدين الى أجل مسمی

فاكتبوه .

“হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য ঋণের লেনদেন কর তখন তাহা লিপিবদ্ধ কর” (সূরা বাকারা : ২৮২)।

অগ্রিম যে মূল্য বিক্রেতাকে প্রদান করা হয় তাহা ক্রেতার নিকট মাল হস্তান্তর না করা পর্যন্ত ঋণ হিসাবেই গণ্য হয়। অনন্তর অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের জনা হইয়া থাকে। অর্থাৎ বিক্রেতা চুক্তিপত্রে উল্লিখিত মেয়াদশেষে ক্রেতার নিকট মাল হস্তান্তধ না করা পর্যন্ত সে ক্রেতার খাতক হিসাবে গণ্য হয়। মহানবী (সা) বলেন :

من سلف فليسلف في كل معلوم ووزن معلوم وائی

أجل معلوم .

“যে ব্যক্তি অগ্রিম মূল্য প্রদান করে সে যেন ওজন ও মাপ নির্দিষ্ট করিয়া নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য প্রদান করে।”

উপরোক্ত হাদীসের আলোকে নির্দিষ্ট মেয়াদ ছাড়া অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় বৈধ নহে। কিন্তু ইমাম শাফিঈর মতে তাৎক্ষণিক অর্থাৎ উল্লেখযোগ্য স্বল্প সময়ের জন্যও অগ্রিম

ক্রয়-বিক্রয় বৈধ।*

“আবদুল্লাহ ইবন আবু আওফা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা)-এর যুগে এবং আৰু বকর ও উমার (রা)-এর যুগে আমরা অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় করিতাম।

وروى أن النبي صلى الله عليه وسلم رص في السلم.

“বর্ণিত আছে যে, মহানবী (সা) অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় করিবার অনুমতি প্রদান করিয়াছেন।”

দুইজন বুদ্ধিমান ও দায়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তির প্রস্তাব ও সম্মতির দ্বারা অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি অনুষ্ঠিত হইতে পারে, তাহাদের বালেগ হওয়া শর্ত নহে।

ধারা-২৩৩ অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় বৈধ হওয়ার শর্তাবলী। ১. অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় বৈধ হওয়ার শর্তাবলী নিম্নোক্ত তিন শ্রেণীতে বিভক্ত

০১৭

(ক) চুক্তির (e) সহিত সম্পর্কিত শর্ত (খ) মূল্যের (L i) সহিত সম্পর্কিত শর্তাবলী; (গ) মালের (

4 L ) সহিত সম্পর্কিত শর্তাবলী; ২. মূল চুক্তির সহিত সম্পর্কিত শর্ত এই যে, ক্রেতা ও বিক্রেতা কোন পক্ষই ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বাতিলের এখতিয়ার সংরক্ষণ করিতে পারিবে না।

৩. মূল্যের সহিত সম্পর্কিত শর্তাবলী নিম্নরূপ

(ক) মূল্য নগদ অর্থে (In cash) না মালের (In Kind) মাধ্যমে পরিশোধ করা হইবে;

() মালের মাধ্যমে পরিশোধযোগ্য হইলে তাহা ওজনযোগ্য না পরিমাপযোগ্য হইবে;

(গ) নগদ অর্থ হইলে তাহা দেশী না বিদেশী মুদ্রা পরিশোধযোগ্য হইবে তাহার পত্রিকার উল্লেখ থাকিতে হইবে;

(খ) ঋণও মূল্য হিসাবে গণ্য হইতে পারে।

(ঙ) মূল্য নগদ অর্থে পরিশোধ করা হউক অথব! মালের মাধ্যমে তাহার পরিমাণ উল্লেখ থাকিতে হইবে।

(চ) ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি সম্পাদনের স্থানেই মূল বিক্রেতার নিকট হস্তান্তর করিতে হইবে, অন্যথায় স্থান ত্যাগের সঙ্গে সঙ্গে চুক্তি বাতিল হইয়া যাইবে!

৪, মালের ( Ja) সহিত সম্পর্কিত শতাবলী নিম্নরূপ

(ক) মালের শ্রেণী (১১), প্রজাতি ( ৫। বেশিষ্ট: ০) ও মা (1) সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করিতে হইবে।

(খ) মাল ক্রেতার নিকট হস্তান্তরের সময়কাল নির্দিষ্ট হইতে হইবে, অন্যথায় তৎক্ষণাংহারের শর্ত করিলে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বাতিল হইয়া যাইবে।

(গ) যে মাল ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি করা হইয়াছে তাহ! মেয়াদকাল পর্যন্ত অব্যাহতভাবে বাজারে সহজলভ্য থাকিতে হইবে।

(ঘ) মাল এমন প্রকৃতির হইতে হইবে যাহা নির্দিষ্টকরণের ( ৭) মাধ্যমে স্থিরীকৃত (a) হয়।

(ঙ) ওজন, পরিমাপ অথবা গণনার দ্বারা মালের পরিমাণ নির্দিষ্ট হইবে; (চ) মাল হস্তান্তরের স্থানের উল্লেখ থাকিতে হইবে।

(ছ) মাল এবং মূল্যের মধ্যে এমন কোন সামঞ্জস্য থাকিবে না যাহাতে সূদের যোগ ঘটতে পারে।

(জ) মেয়াদাড়ে বিক্রেতা মাল উপস্থিত করিলে ক্রেতা কোন সঙ্গত কারণ ব্যতীত তাহা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানাইতে পারিবে না; তবে বিক্রেতা শর্তের সহিত অসংগতিপূর্ণ মালউপস্থিত করিলে তাহাকে শর্তানুযায়ী মাল দিতে বাধ্য করা যাইবে।

৩৯৮

বিশ্লেষণ

কোন পক্ষ চুক্তি বাতিলের এখতিয়ার সংরক্ষণ করিলে এবং মজলিস ত্যাগের পূর্বে তাহা প্রত্যাহার করিলে চুক্তি বহাল থাকিবে।

অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে মূল্য নগদ অর্থেও পরিশোধ করা যায় এবং মালের দ্বারাও পরিশোধ করা যায়। মালের দ্বারা মূল্য পরিশোধযোগ্য হইলে তাহা ওজনযোগ্য (যেমন মণ, সের, ছটাক) না পরিমাপযোগ্য (যেমন গজ, ফুট, মিটার) না গণনাযোগ্য মাল তাহার বিস্তারিত বিবরণ দিতে হইবে। উপরন্তু মাল একই শ্ৰেণী বা প্রজাতিভুক্ত হইতে পারিবে না (যেমন ধানের মূল্য ধানের দ্বারা, পাটের মূল্য পাটের দ্বারা পরিশোধ করা যাইবে না)। ঋণও মূল্য হিসাবে গণ্য হইতে পারে। যেমন বিক্রেতার নিকট ক্রেতার কিছু টাকা পাওনা ছিল। এ টাকাও চুক্তিকালে মূল্য হিসাবে ধার্য হইতে পারে। অথবা ক্রেতা বিক্রেতাকে ঋণ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়াছে। পরে অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় চুক্তিকালে ঐ বণ মূল্য হিসাবে ধার্য হইয়াছে। এই ক্ষেত্রে মজলিস ত্যাগের পূর্বে বিক্রেতাকে ঋণ হস্তগত করিতে হইবে অন্যথায় চুক্তি বাতিল হইয়া যাইবে।

মারে সহিত সম্পর্কিত শর্তাবলীর মধ্যে রহিয়াছে? মালের শ্রেণী উল্লেখ থাকিতে হইবে। যেমন সুন্দরবনের মধু না পার্বত্য চট্টগ্রামের মধু, রাজশাহীর পিয়াজ না পরিশালের পিয়াজ ইতাদি। অনুরূপভাবে মালের প্রজাতির ( 2) উল্লেখও বাঞ্ছনীয়। যেমন ধান, পাট, গম, মুগডাল, মরিচ ইত্যাদি। মালের বৈশিষ্ট্য, যেমন ধান উত্ত মানের, মধ্যম মানের না নিম্ন মানের ইত্যাদিও উল্লেখ থাকিতে হইবে। মাসের শরিমাণও উল্লেখ থাকিতে হইব এবং সেই মাল ওজনযোগ্য, পরিমাপযোগ্য, না গণনাযোগ। তার বিবরণও থাকিতে হইবে; মালের ওজন ও পরিমাপ দেশে প্রচলিত এবং সরকার কর্তৃক অনুমোদিত বাটখারা ও পরিমাপ যন্ত্র (যেই ক্ষেত্রে যেইটি প্রযোজ্য। দ্বারা হইতে হইবে।

মাল! তার নিকট হস্তান্তরে সময়কাল নির্দিষ্ট হইতে হইবে : ইমাম মুহাম্মাদ (র) ন্যনপক্ষে একমাস সময়কাল নির্ধারণ করিয়াছেন এবং ফকীহগণ এই মত গ্রহণ করিয়াছেন। ক্রেতার মৃত্যুতে সময়সীমা বাতিল হইবে না, কিন্তু বিক্রেতার মৃত্যুতে মনীমা বাতিল হইবে এবং তৎক্ষণাৎ তাহার পরিত্যক্ত সম্পত্তি হইতে মুক্তিকত মাল পরিশোধযোগ্য হইবে।’

মেয়াদকালে বাজারে মালের সরবরাহ অব্যাহত না থাকিলে অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি সহীহ হইবে না। এমনকি চুক্তিকালে মাল বাজারে বিদ্যমান ছিল কিন্তু মেয়াদশেষে বিদ্যমান নাই, অথবা চুক্তিকালে বিদ্যমান ছিল না কিন্তু মেয়াদশেষে বিদ্যমান আছে, অথবা চুক্তিকালে বিদ্যমান ছিল অথবা চুক্তিকালে ও মেয়াদ শেষে বিদ্যমান, কিন্তু মধ্যবর্তী কালে বিদ্যমান ছিল মা—এইসব অবস্থায়ই চুক্তি বৈধতা

৩৯৯

হারাইয়া ফেলিবে (ফাতহুল কাদীর)। যদি এমন মাল ক্রয়ের চুক্তি করা হইয়া থাকে যাহা মেয়াদকাল পর্যন্ত সহজলভ্য থাকে কিন্তু তাহার পর আর পাওয়া যায় না, তবে ক্রেতা মেয়াদান্তে তাহা হস্তগত করিলেও চুক্তি বহাল থাকিবে। কিন্তু সে ইচ্ছা করিলে চুক্তি বাতিল করিতে পারিবে অথবা মাল বাজারে সহজলভ্য হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করিবে।”

বেস মাল ওজন বা প্যাকিং করার জন্য মজুরীর প্রশ্ন আছে, যেমন—ধান, চাউল, পুস্তক, মেশিনারী ইত্যাদি, সেইসব মাল ক্রেতার নিকট হস্তান্তরের স্থানের উল্লেখ থাকা প্রয়োজন। ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (র)-এর মতে, এটা শর্ত নহে; তবে পক্ষদ্বয় শর্ত হিসাবে গণ্য করিলে তাহাও শুদ্ধ হইবে এবং শর্ত না করিলে যে স্থানে চুক্তি হইয়াছে সেই স্থানই মাল হস্তান্তরের স্থান হিসাবে গণ্য হইবে।”

ধারা-২৩৪

জীব-জর অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় জীবজন্তুর অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় বৈধ নহে, তবে শ্রেণী, প্রজাতি ও ওজন নির্দিষ্ট করিয়া মাহের অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় বৈধ :

তবে শর্ত থাকে যে, যেসব এলাকায় সব ঋতুতে মাছ পাওয়া যায় সেইসব এলাকায় ওজন ৩ শ্রেণী নির্দিষ্ট না করিয়াও মাহের অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় বৈধ।

বিশ্লেষণ

نهى النبي صلى الله عليه وسلم عن السلم في الحيوان .

“মহানবী (সা) জীবজন্তুর অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করিয়াছেন।”

তবে ইমাম শাফিঈ (র)-এর মতে জীবজন্তুর অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় বৈধ। কারণ উহার প্রজাতি, শ্ৰেণী, বৈশিষ্ট্য ও পরিমাণ (সংখ্যা) নির্ণয় করা সম্ভব।

মাছের অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় বৈধ, তাহা জীবিত, মৃত্যু, শুটকি যাহাই হউক না কেন, যদি তাহা ওজন করিয়া ক্রয়-বিক্রয় করার চুক্তি হইয়া থাকে। গণনা করিয়া অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি এই শর্তে বৈধ যে, মেয়াদকালে তাহা বাজারে সহজলভ্য থাকিবে, অন্যথায় বৈধ হইবে না। যেসব এলাকায় সব ঋতুতে মাছ সহজলভ্য সেইসব এলাকায় ওজন ও শ্রেণী নির্দিষ্ট না করিয়া ও মাছের অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় বৈধ:

ধারা-২৩৫ অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয়ে মূল্যের বিপরীতে বন্ধক রাখা (ক) ক্রেতা মূল্যের বিপরীতে বিক্রেতার নিকট হইতে গ্যারান্টি স্বরূপ কিছু বন্ধক রাখিতে পারিবে।

(খ) বন্ধকী মাল ক্রেতার নিকট ধ্বংস হইয়া গেলে তাহার দায় ক্রেতাকে বহন করিতে হইবে।

৪০)

(গ) চুক্তির মেয়াদের মধ্যে বিক্রেতা ঋণগ্রস্ত অবস্থায় মারা গেলে ক্রেতা বন্ধলব্ধ মাল পাইবার অধিক হকদায় বিবেচিত হইবে।”

ধারা-২৩৬

ক্রেতা ও বিক্রেতার মতভেদ (১) মালের (s JL.) প্রজাতি (ori.) ও পরিমাণ সম্পর্কে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে মতভেদ হইতে

(ক। কোন পক্ষের অনুকূলে সাক্ষী বিদ্যমান না থাকিলে আদালত উভয়কে হলফ করিতে বলিবে এবং উভয়ে হলফ করিলে আদালত তাহাদের অভিপ্রায় কি তাহা জিজ্ঞাসা করিবে এবং উভয় পক্ষ বা একপক্ষ চুক্তি বদ (1 ) করিবার

মভিপ্রায় ব্যক্ত করিলে আদালত চুক্তি রদ ঘোষণা করিবে;

(খ) কোনও পক্ষ হলফ করিতে অস্বীকার করিলে আদালত হলফকারীর অনুকূলে রায় প্রদান করিবে;

(গ) কোনও পক্ষ সাক্ষী উপস্থিত করিতে অসমর্থ হইলে আদালত সাক্ষী উপস্থিতকারী পক্ষের অনুকূলে রায় প্রদান করিবে;

(ঘ) উভয় পক্ষ সাক্ষী উপস্থিত করিলে আদালত দুইটি চুক্তি সাব্যস্ত করিবে এবং ক্রেতা ও বিক্রেতাকে তদনুযায়ী কাজ করার নির্দেশ প্রদান করিবে।

(২) মালের ( JL.) মান ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ক্রেতা ও বিক্রেতার ধ্যে মতভেদ হইশে-

(ক)কোনও পঅেনুকূলেসাশী না থেিকল আদালত উভয়কে হল করাইবে;

*) যে পক্ষ সাক্ষ্য পেশ করিতে পারিবে আদালত তাহার অনুকূলে রায় প্রদান করিবে।

(গ) উভয় পক্ষ সাক্ষী উপস্থিত করিলে আদালত তাহার বিবেচনা অনুযায়ী : প্ৰদান করিতে

ঘ) বিক্রেতা ক্রেতাকে ‘নম্নমানের মাল দেওয়ার শর্ত করিয়াছিল বলিয়া দাবি করিলে এবং ক্রেঃ এইরূপ শর্তের কথা অস্বীকার করিলে বিক্রেতার কথাই ধর্তব্য হইবে এবং ইহা বিপরীত হইলে ক্রেতার কথাই ধর্তব্য হইবে।

(৩) মূল্যের প্রজাতি (ws) সম্পর্কে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে মতভেদ হইলে এবং কোনও পক্ষের নিকট সাক্ষী না থাকিলে ক্রেতার কথাই ধর্তব্য হইবে এবং উভয় পক্ষ সাক্ষী উপস্থিত করিলে আদালত তাহার বিবেচনা অনুযায়ী রায় প্রদান করিবে।

(৪) মূল্যের পরিমাণ ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে মতভেদ হইলে সেই ক্ষেত্রে মালের পরিমাণ ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে মতভেদ হওয়ার ক্ষেত্রে প্রদত্ত বিধান [উপধারা (১) ও (২) প্রযোজ্য হইবে।

৪০১

(৫) ক্রেতাওবিক্রেতার মধ্যে সময়সীমা সম্পর্কে মতভেদ হইলে সেই অবস্থায়

(ক) ক্রেতা মেয়াদ নির্দিষ্ট করা হইয়াছে বলিয়া দাবি করিলে তাহার কথা গ্রহণযোগ্য হইবে;

(খ) বিক্রেতা মেয়াদ নির্দিষ্ট করা হইয়াছে বলিয়া দাবি করিলে এবং ক্রেতা তাহা অস্বীকার করিলে বিক্রেতার কথা গ্রহণযোগ্য হইবে;

(গ) কোন পক্ষ সাক্ষী উপস্থিত করিতে পারিলে সেই পক্ষের কথাই গ্রহণযোগ্য হইবে;

(ঘ) উভয় পক্ষ সাক্ষী উপস্থিত করিলে যে পক্ষ মেয়াদ নির্দিষ্ট করা হইয়াছে বলিয়া দাবি করিবে সেই পক্ষের কথা গ্রহণযোগ্য হইবে।

(৬) মেয়াদ নির্দিষ্ট করা হইয়াছে এই বিষয়ে একমত হওয়া সত্ত্বেও উহায়

(ক) পরিমাণ সম্পর্কে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে মতভেদ হইলে ক্রেতার কথাই গ্রহণযোগ্য হইবে যদি কোন পক্ষ সাক্ষী পেশ করিতে না পারে;

(খ) সাক্ষী পেশ করিতে পারিলে তদনুযায়ী সিদ্ধান্ত গৃহীত হইবে; (৭) মেয়াদ শেষ হওয়ার ব্যাপারে মতভেদ হইলে– (ক) বিবাদীর কথা গ্রহণযোগ্য হইবে, যদি কোনও পক্ষের সাক্ষী না থাকে: (খ) যে পক্ষ সাক্ষীউপস্থিত করিতে পারিবে সেই পক্ষের কথা গ্রহণযোগ্য হইবে; (গ) উভয় পক্ষ সাক্ষী উপস্থিত করিতে বিবাদীর কথা গ্রহণযোগ্য হইবে।

৮) সময়সীমার পরিমাণ ও তাহা শেষ হওয়ার ব্যাপারে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে মতভেদ হইলে

(ক) সময়সীমার পরিমাণের ব্যাপারে ক্রেতার কথা গ্রহণযোগ্য হইবে; (খ) সময়সীমা শেষ হওয়ার ব্যাপারে বিক্রেতার কথা গ্রহণযোগ্য হইবে;

বিশ্লেষণ

ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের মধ্যে মালের (Luna La) প্রজাতি।wis) ও পরিমাণ সম্পর্কে যদি মতভেদ দেখা দেয়, যেমন ক্রেতা বলিল, তোমাকে এক মণ গমের ক্রয়মূল্য বাবদ দুই শত টাকা দিয়াছি, কিন্তু বিক্রেতা বলিল, এক মণ বালির বিনিময়ে দুই শত টাকা দিয়াছ, এবং কোন পক্ষের অনুকূলেই সাক্ষী না থাকে তবে আদালত উভয়কে শপথ করাইবে। উভয়ে শপথ করিলে আদালত তাহাদের অভিপ্রায় কি তাহা জিজ্ঞাসা করিবে। উভয়ে অথবা একপক্ষ চুক্তি রদ (n.) করার কথা বলিলে আদালত উহা রদ ঘোষণা করিবে। দুই পক্ষের কেহই চুক্তি রদ করিতে না চাহিলে আদালত তাহাদেরকে তাহাদের নিজ নিজ অবস্থার উপর ছাড়িয়া দিবে, হয়ত তাহাদের মধ্যে পরিবর্তন আসিবে। কোন পক্ষ শপথ করিতে অস্বীকার করিলে আদালত শপথকারীর অনুকূলে রায় প্রদান করিবে। অনুরূপভাবে যে পক্ষ সাক্ষী উপস্থিত করিতে পারিবে আদালত সেই পক্ষের অনুকূলে রায় প্রদান করিবে। উভয়

৪০২

পক্ষই সাক্ষী পেশ করিলে দুটি চুক্তি সাব্যস্ত করা হইবে এবং তদনুযায়ী আদালত ক্রেতাকে আরও দুই শত টাকা বিক্রেতাকে প্রদানের নির্দেশ দিবে এবং বিক্রেতাকে এক মণ গম ও এক মণ বার্লি ক্রেতাকে প্রদানের নির্দেশ দিবে।

মালের ( JL.) মান ও বৈশিষ্ট্য ( ৩) সম্পর্কে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে মতভেদ হইলে এবং কোনও পক্ষের নিকট সাক্ষী না থাকিলে আদালত উভয়কে হলফ করিতে নির্দেশ দিবে। যে পক্ষ সাক্ষী হাযির করিতে পারিবে আদালত তাহার অনুকূলে রায় প্রদান করিবে। উভয় পক্ষ সাক্ষী উপস্থিত করিলে আদালত দুইটি চুক্তির নির্দেশ দিবে। বিক্রেতা যদি ক্রেতাকে বলে যে, সে নিম্নমানের মাল দেওয়ার শর্ত করিয়াছিল এবং ক্রেতা বলে, না এইরূপ কোন শর্ত করা হয় নাই তাহা হইলে বিক্রেতার কথাই ধর্তব্য হইবে এবং ইহার বিপরীত হইলে ক্রেতার কথাই ধর্তব্য।

হইবে।

যদি ক্রেতা-বিক্রেতা মূল্যের প্রজাতি ( ২) সম্পর্কে মতভেদ করে এবং সেই মূল্য যদি এমন জিনিস হয় “যাহা নির্দিষ্টকরণের মাধ্যমে স্থিরীকৃত হয় না”, যেমন ক্রেতা বিক্রেতাকে বলিল, আমি তোমাকে এক মণ গমের পরিবর্তে দুই শত টাকা অগ্রিম প্রদান করিয়ছি, কিন্তু বিক্রেতা বলিল, না, তুমি দশ রিয়াল প্রদান করিয়াছ, এবং দুই পক্ষের নিকটই সাক্ষী নাই, এই ক্ষেত্রে ক্রেতার কথা নির্ভরযোগ্য হইবে। দুই পক্ষ সাক্ষী উপস্থিত করিলে আদালত দুইটি চুক্তির নির্দেশ দিবে।

মূল্যের পরিমাণ ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে মতভেদ হইলে তাহার বিধান মালের (L. ৩) পরিমাণ ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে মতভেদ হওয়ার ক্ষেত্রে প্রদত্ত বিধানের অনুরূপ।

ক্রেতা ও বিক্রেতা সময়সীমা প্রসঙ্গে মতভেদে লিপ্ত হইলে এবং ক্রেতা মেয়াদ নির্দিষ্ট করা হইয়াছে বলিয়া দাবি করিলে তাহার কথাই গ্রহণযোগ্য হইবে। অপরদিকে বিক্রেতা মেয়াদ নির্দষ্ট করা হইয়াছে বলিয়া দাবি করিলে এবং ক্রেতা উহা অস্বীকার করিলে বিক্রেতার কথা গ্রহণযোগ্য হইবে। ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মতে এই অবস্থায় ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বহাল থাকিবে এবং ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (র)-এর মতে ক্রেতার কথাই গ্রহণযোগ্য হইবে এবং চুক্তি বাতিল হইয়া যাইবে, যদি পক্ষদ্বয়ের কেহই প্রমাণ পেশ করিতে না পারে। কোন পক্ষ প্রমাণ পেশ করিতে পারিলে তাহা গ্রহণযোগ্য হইবে। উভয়ে প্রমাণ পেশ করিলে যে পক্ষ মেয়াদ নির্দিষ্ট করা হইয়াছে

বলিয়া দাবি করিয়াছে সেই পক্ষের প্রমাণ গ্রহণযোগ্য হইবে।

মেয়াদ নির্ধারণ করা হইয়াছে এই বিষয়ে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে একমত, কিন্তু উহার পরিমাণ সম্পর্কে তাহাদের মধ্যে মতভেদ আছে। এই অবস্থায় শপথ সহকারে ক্রেতার কথা গ্রহণযোগ্য হইবে, যদি পক্ষদ্বয়ের কেহই সাক্ষী পেশ করিতে না পারে। কোন পক্ষ সাক্ষী পেশ করিতে পারিলে সাক্ষীর ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হইবে। উভয় পক্ষ সাক্ষ্য-প্রমাণ পেশ করিলে বিবাদীর সাক্ষ্য-প্রমাণ গ্রহণ করা হইবে।

৪০৩

মেয়াদ এক মাস ছিল- এই বিষয়ে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে একমত কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার ব্যাপারে মতভেদ সৃষ্টি হইয়াছে। এই ক্ষেত্রে বিবাদীর কথা গ্রহণযোগ্য হইবে। কোন পক্ষ সাক্ষী উপস্থিত করিতে পারিলে সেই পক্ষের কথাই গ্রহণযোগ্য হইবে। উভয় পক্ষ সাক্ষী পেশ করিলে বিবাদীর কথা গ্রহণযোগ্য হইবে।

সময়সীমার পরিমাণ ও তাহা শেষ হওয়ার বিষয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে মতভেদ হইলে সময়সীমার পরিমাণের ব্যাপারে ক্রেতার কথা এবং সময়সীমা শেষ হওয়ার ব্যাপারে বিক্রেতার কথা গ্রহণযোগ্য হইবে।

ধারা-২৩৭ অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি রদকরণ (6) (ক) অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি রদ করা যায়, নির্দিষ্ট সময়সীমার পূর্বেও এবং পরেও, প্রদত্ত মূল্য মুদ্রা ব্যতীত অন্য কিছু মাধ্যমের ক্ষেত্রে বিক্রেতার নিকট বিদ্যমান থাকিলেও অথবা বিনষ্ট হইয়া গেলেও।

(খ) মূল্য মুদ্রা ব্যতীত অন্য কিছু মাধ্যমের ক্ষেত্রে বিক্রেতার নিকট বিদ্যমান থাকিলে সে তাহা ক্রেতাকে প্রত্যর্পণ করিবে এবং বিনষ্ট হইয়া গেলে উহার সমপরিমাণ জিনিস প্রত্যর্পণ করিবে।

(গ) চুক্তি রদ করাকালে মাল ক্রেতার দখলে থাকিলে সে তাহা বিক্রেতাকে ফেরত দিবে।

(ঘ) মেয়াদ শেষ হওয়ার পর চুক্তি আংশিকভাবে রদ করা হইলে তাহাও বৈধ গণ্য হইবে, তবে যতটুকু রদ করা হইয়াছে এবং যতটুকু রদ করা হয় নাই তাহ সুনির্দিষ্ট হইতে হইবে।

(ঙ) মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে চুক্তি আংশিকভাবে রদ করা হইলে এবং আংশিক তৎক্ষণাৎ ক্রেতার দখলে নেওয়ার শর্ত করিলেও তাহা বৈধ হইবে কিন্তু শর্ত বাতিল। গণ্য হইবে এবং মেয়াদশেষে ক্রেতা অবশিষ্ট অংশের দখল পাইবে।

(চ) চুক্তি আংশিক রদ করা হইলে বিক্রেতা ক্রেতাকে রদকৃত অংশের মূল্য ফেরত প্রদান করিবে।

(ছ) চুক্তি রদ করার মজলিসে মূল্য ক্রেতার দখলে নেওয়ার চুক্তি রদকরণ সহীহ হওয়ার জন্য শর্ত নহে।

(জ) চুক্তি রদ করার পর মূল্য সম্পর্কে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে মতভেদ হইলে বিক্রেতার বক্তব্যই গ্রহণযোগ্য হইবে।

(ঝ) ক্রেতা মাল দখলে আনার পর এবং তাহা তাহার নিকট বিদ্যমান থাকা অবস্থায় চুক্তি রদ করা হইলে এবং মূল্য সম্পর্কে তাহাদের মধ্যে মতভেদ হইলে উভয়কে আদালতের সামনে হলফ করিতে হইবে।

৪০৪

(ঞ) ক্রেতা বিক্রেতার অনুকূলে মূল্য হেবা করিলে চুক্তি রদ হইয়া যাইবে, হে বাতিল গণ্য হইবে এবং বিক্রেতা ক্রেতাকে মূল্য ফেরত দিতে বাধ্য থাকিবে।

(ট) মূল্য ফেরত প্রদানের শর্তে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে সন্ধি (10) হইলে তাহাও চুক্তির হিসাবে গণ্য হইবে, তবে সন্ধিকৃত অর্থের পরিমাণ মূল্যের পরিমাণের

অধিক হইতে পারিবে না।

(ঠ) মালের বৈধ জামিনদারের সহিত ক্রেতার সন্ধি বিক্রেতার সহিত সন্ধি হিসাবে গণ্য হইবে।”

ধারা-২৩৮ অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয়ে মালের ত্রুটির কারণে এখতিয়ার (ক) মাল চুক্তিপত্রে উল্লিখিত গুণ ও মান অনুযায়ী না হইলে বা তাহা কটিযুক্ত হইলে ক্রেতা ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বহালও রাখিতে পারে অথবা বাতিলও করিতে পারে।

(খ) মাল ক্রেতার দখলে নেওয়ার পর তাহাতে নূতন এটি সৃষ্টি হওয়ার ফলে কোন পুরাতন এটি প্রকাশ পাইলে এবং বিক্রেতা নূতন কটিসহ মাল ফেরত নিতে সম্মত হইলে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বহাল থাকিবে, কিন্তু সম্মত না হইলে ক্রেতা ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বাতিলও করিতে পারে অথবা বহালও রাখিতে পারে।

(গ) কেতা মাল হবগত করার পর তাহাকে কটি পাওয়া গেলে সে তাহা বিক্রেতাকে ফেরত প্রদান করিবে, কিন্ত তাহাতে আরও কটি যোগ হইলে এবং তাহা কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা ক্রেতার অবহেলার কারণে ঘটিয়া থাকিলে তাহায় এখতিয়ার বাতিল হইয়া যাইবে।

বিশ্লেষণ

মাল ক্রেতার দখলে নেওয়ার পর তাহাতে নতন ক্রটি সৃষ্টি হওয়ার ফলে কোন পুরাতন ঐটি প্রকাশ পাওয়ার ক্ষেত্রে ইমামদের তিনটি মত রহিয়াছে। ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মত ধারায় উল্লেখ করা হইয়াছে।

ইমাম আবু ইউসুফ (র:-এর মতে, বিক্রেতা মাল ফেরত নিতে অসম্মত হইলে ক্রেতা তাহার নিকট হইতে যেইরূপ মাল গ্রহণ করিয়াছিল তদনুরূপ মাল তাহাকে ফেরত দিয়া চুক্তি অনুযায়ী মাল গ্রহণ করিবে। ইমাম মুহাম্মাদ (র)-এর মতে, বিক্রেতার অস্বীকৃতির ক্ষেত্রে ক্রেতা ক্ষতির সমপরিমাণ মূল্য ফেরত পাইবে।

ধারা-২৩৯

অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয়ে প্রতিনিধি নিয়োগ (ক) অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি সম্পাদনের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ করা বৈধ। (খ) মেয়াদান্তে প্রতিনিধি বিক্রেতার নিকট মাল প্রদানের দাবি করিবে। (গ) প্রতিনিধি নিজের পক্ষ হইতে মূল্য পরিশোধ করিতে নিয়োগকর্তা তাহা

৪০৫

পরিশোধ না করা পর্যন্ত মাল নিজ দখলে রাখিতে বা নিয়োগকর্তার নিকট হস্তান্তর করিতে অস্বীকার করিতে পারিবে।

(ঘ) প্রতিনিধির নিজ দখলে রাখা অবস্থায় কিন্তু নিয়োগকর্তাকে প্রদান করিতে অস্বীকার করার পূর্বে মাল বিন বা ধ্বংস হইলে সেই ক্ষেত্রে আমানতের বিধান প্রযোজ্য হইবে; কিন্তু অস্বীকার করার পর মাল বিনষ্ট বা ধ্বংস হইলে সেই ক্ষেত্রে বন্ধকের বিধান প্রযোজ্য হইবে।

(ঙ) প্রতিনিধি কর্তৃক মূল্যের অনুকূলে জামিন অথবা বন্ধক রাখা বৈধ।

(চ) প্রতিনিধি বিক্রেতাকে অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি হইতে অব্যাহতি দিলে অথবা মাল পরিমাণের তুলনায় কম গ্রহণ করিলে নিয়োগকর্তাকে ক্ষতিপূরণ ( ৬) দিতে বাধ্য থাকিবে।

(২) প্রতিনিধি ধারা (২৩৭) মোতাবেক ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি রদ (uil) করিতে পারিবে।

(জ) চুক্তি সম্পাদনের পর প্রতিনিধি নিয়োগকর্তাকে মূল্য পরিশোধের নির্দেশ প্রদান করিয়া মজলিস ত্যাগ করিলে চুক্তি বাতিল হইয়া যাইবে।

(ঝ) চুক্তি সম্পাদনের পর মূল্য গ্রহণের জন্য বিক্রেতার নিয়োগকৃত প্রতিনিধি মূল্য গ্রহণ না করিয়া মজলিস ত্যাগ করিলে চুক্তি তিল হইয়া যাইবে।

(ঞ) যে জিনিস অগ্রিম ক্রয়ের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ করা হইয়াছে সে তাহা ব্যতীত অন্য জিনিস ক্রয় করিলে প্রতিনিধি নিয়োগকর্তাকে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকিবে।

(ট) প্রতিনিধিকে যে ব্যক্তির নিকট হইতে অগ্রিম ক্রয় করার জন্য মূল্য প্রদান করা হইয়াছে, সে ঐ ব্যক্তি ব্যতীত অপর ব্যক্তির নিকট হইতে অগ্রিম ক্রয় করিলে তাহা বৈধ হইবে না।

(ঠ) প্রতিনিধির যোগকৃত কোন শর্তের কারণে চুক্তি ক্রটিপূর্ণ (L) হইলে তাহার জন্য সে দায়ী হইবে না।”

ধারা-২৪০

বাই মুরাবাহা (3 ) (ক) মাল ক্রয়ের পর ক্রয়মূল্যের সহিত নির্দিষ্ট পরিমাণ লাভের অংক যোগ করিয়া উহা পুনরায় বিক্রয় করাকে বাই মুরাবাহা’ (! ) বলে।

(খ) ‘বাই মুরাবাহা’ বৈধ হওয়ার শর্ত দুইটি (১) মাল L UL) নগদ অর্থ না হইয়া পণ্য (Commodity) হইবে; (১) পণ্যের মূল্য অর্থের বিশিত হইতে হইবে।

(গ) প্রথম ক্রেতা বিভীয় ক্রেতার নিকট মাল বিক্রমের উদেশ্যে মূল্য নিরূপণকালে মূল্যের সহিত আনুষঙ্গিক খরচ যোগ করিতে পারিবে।

৪o৬

(খ) বিশ্বাসভঙ্গ হইতে পারে এইরূপ আশংকা হইলে ক্রেতা চাহিলে পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করিয়া মাল মাখিতেও পারে অথবা ফেরত দিতে পারে।

(ঙ) মাল ফেরত দেওয়ার পূর্বে তাহা ধ্বংস বা ক্ষতি হইলে অথবা ফেরতদানে প্রতিক এইরূপটি যুক্ত হইলে ক্রেতাকে উহার মূল্য পরিশোধ করিতে হইবে।

বিশ্লেষণ

শরীআতে ‘বাই মুরাবাহা’ বৈধ গণ্য করা হইয়াছে। কোন ব্যক্তি একটি মাল অপর ব্যক্তির নিকট হইতে যে মূল্যে ক্রয় করিল সেই মূল্যের সহিত নির্দিষ্ট পরিমাণ লাভের অংক যোগ করিয়া ঐ প্রথম ব্যক্তি (ক্রেতা) উক্ত মাল অন্য কোন ব্যক্তির নিকট বিক্রয় করিলে তাহাকে মুরাবাহা বলে। যেমন কোন ব্যক্তি পাঁচ হাজার টাকায় একটি গরু ক্রয় করিল। অপর ব্যক্তি তাহাকে বলিল, গরুটি আমার নিকট অ হাজার টাকায় বিক্রয় কর। সে এক হাজার টাকা লাভে গরুটি তাহার নিকট বিক্রয় করিল। অথবা ক খ-এর নিকট হইতে একটি সেলাইয়ের কল ৫০০০ টাকায় খরিদ করিল। ক ঐ মেশিন গ-এর নিকট ৫৫০০ টাকায় বিক্রয় করিল। ইহার নাম বাই মুরাবাহ। অর্থাৎ ক্রয়মূল্যের সহিত নির্দিষ্ট পরিমাণ লাভ যোগ করিয়া বিক্রয় করাকে মুরাবাহা বলে। মুরাবাহা বৈধ হওয়ার কারণ এই যে, তাহাতে ক্রয়-বিক্রয়ের যাবতীয় শর্ত বিদ্যমান।

যে মাল বিক্রয় করা হইবে তাহার মূল্য মুদ্রায় নির্ধারিত হইতে হইবে অর্থাৎ মালের মূল্য মুদ্রার অংকে এত হইবে। মুরাবাহা বৈধ হওয়ার জন্য মালের মূল্য সুনির্দিষ্ট হওয়া আবশ্যক। মালের মূল্য উহ্য রাখিয়া ক্রয়-বিক্রয় করিলে তাহা বৈধ হইবে না, ইহাতে প্রতারণার উপাদান বিদ্যমান থাকে। শরীআতে প্রতারণা নিষিদ্ধ।

প্রথম ক্রেতা তাহার আনুষঙ্গিক খরচ অর্থাৎ গুদাম ভাড়া, পাহারাদারের মজুরী, পরিবহন খরচ, ওজন বা পরিমাপ করার খরচ ইত্যাদি মালের পুনর্মূল্য নির্ধারণকালে উহার সহিত যোগ করিতে পারিবে।”

প্রথম ক্রেতা দ্বিতীয় ক্রেতাকে প্রতারিত করিলে ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মতে প্রতারিত ব্যক্তি নির্দিষ্ট মূল্য পরিশোধ করিয়া মাল রাখিতেও পারে অথবা ফেরতও দিতে পারে। যেমন প্রথম ক্রেতা শপথ করিয়া দ্বিতীয় ক্রেতাকে বলিল যে, সে দশ হাজার টাকায় মালটি ক্রয় করিয়াছে অথবা সে বলিল, মালের পরিবহন, আমদানি তথা আনুষঙ্গিক খরচ পাঁচ হাজার টাকা পড়িয়াছে, কিন্তু পরে জানা গেল যে, সে মিথ্যা শপথ করিয়াছে এবং কথিত মূল্যের চাইতে কম মূল্যে মাল ক্রয় করিয়াছে বা আনুষঙ্গিক খরচ বাড়াইয়া বলিয়াছে অথবা তাহা সাক্ষ্য-প্রমাণে প্রমাণিত হইয়াছে অথবা প্রথম ক্রেতা স্বীকারোক্তি করিয়াছে।

প্রতারণা ধরা পড়ার পর মাল ফেরতদানের পূর্বে ক্রেতার নিকট তাহা কটিযুক্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হইলে তাহার এখতিয়ার বাতিল হইয়া যাইবে এবং নির্ধারিত মূল্য

৪০৭

পরিশোেধ করিয়া মাল রাখিতে হইবে। অবশ্য ইমাম আবু ইউসুফ (র)-এর মতে যে পরিমাণ প্রতারণা করা হইয়াছে দ্বিতীয় ক্রেতা সেই পরিমাণ মূল্য কম দিতে পারিবে।

9

৬ ০

০ ১ ৫ : 3

তব্যনির্দেশিকা ১.. আলমগিরী, কিতাবুল বুয়ু, বাব ২০, ফাসকুল ইহতিকার, ৩২, পৃ. ২১৩-২১৪।

আলমগিরী, কিতাবুল বু, বাব ২০, ফাসপুল ইহুতিকার, ৩খ, পৃ. ২১৪। তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবন মাজা ও দারিমীর বরাতে মিশকাতুল মাসাবীহ, নূর মোহাম্মদ আজমকৃত বাংলা অনুবাদ, ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবসা-বাণিজ্য পর্ব, ৬খ, পৃ.

৭২, হাদীস নং ২৭৬৮ (৭)। ৪. সুনান আবু দাউদ, কিতাবুল বুয়ু, সহীহ ইবন হিব্বান, কিতাবুল বুয়ু (হাকেমের

রিওয়ায়াত অনুযায়ী) ও হিদায়া, ৩থ, পৃ. ৫৮।

হিদায়া, বুয়, ফাসপুত তাসাররুফ কাবলাল কাবদ, ৩, পৃ. ৫৮। ৬. ইবন মাজা, কিতাবুত তিজারাত, বাবুন নাহুয়ি আন বাইত তাআম কাবলা মা

লাম ইয়াকরিদ; হিদায়া, বু, ফাসত তাসাররুফ কাবলাল কাবদ, ৩২, পৃ. ৫৯। ঐ, ৩, পৃ. ৫৯। ঐ, ৩, পৃ. ৫৮-৫৯।

হিদায়া, বুযু, মাসাইল মানহুরা, ৩, পৃ. ৮৫-৬; সিহাহ সিত্তাহ। ১০. হিদায়া, মাসাইল মানছুরা, ৩, পৃ. ৮৬।

তাতারখানিয়ার বরাতে আইনুল হিদায়া (হিদায়ার উর্দু অনু.), ৩, পৃ. ১৮১। ১২. তিরমিযী, আবু দাউদ ও নাসাঈর বরাতে মিশকাত (বাংলা অনু.), ৬, পৃ. ৫৭,

নং ২৭৪২ (৩৩)। ১৩, ১৪ ও ১৫. হিদায়া, বু, ৩ খ, পৃ. ১০। Sý. To buy a thing for future delivery by a present payment. ১৭.

বুখারী, কিতাবুস সালাম, নং ২০৮০-৮৪ (আধুনিক প্রকাশনী সংস্করণ), তিরমিযী,

কিতাবুল বুয়ু। ১৮. হিদায়া, বুয়ু, বাবুস সালাম, ৩, পৃ. ৭৮।

বুখারী কিতাবুস সালাম, নং ২০৮৫। ২০. শারহু মুসলিম, বাবুস সালাম (ইসলাম কা কানূনে তিজারাত হইতে, পৃ. ১০২)। ২১. ক্রয়-বিক্রয় অধ্যায়ে বরাত সংযোজিত। ২২. আলমগিরী, কিতাবুল বুখু, বাবুস-সালাম, ৩, পৃ. ১৭৮-৯। ২৩. আলমগিরী, বায়ু, বাবুস-সালাম, ৩, পৃ. ১৭৮। ২৪. আলমগিরী, ঐ। ২৫. আলমগিরী, ৩, পৃ. ১৭৯। ২৬. আলমগিরী, ৩থ, পৃ. ১৭৯-৮০। ২৭. ফাতাওয়া কাযীখানের বরাতে আলমগিরী, ৩থ, পৃ. ১৮০।

৪০৮

২৮. আলমগিরী, ৩থ, পৃ. ১৮০; হিদায়া, ৩থ, পৃ. ৭৭। ২৯. আলমগিরী, ৩, পৃ. ১৮০। ৩০. হাকেম ও দারু কুতনী (হিদায়ার পাশ্বটীকা হইতে উদ্ধৃত, ৩২, পৃ. ৭৯)।

হিদায়া, বুয়ূ, বাবুস সালাম, ৩২, পৃ. ৭৭; আলমগিরী, ৩, পৃ. ১৮০। ৩২. হিদায়া, ৩২, পৃ. ৭৭-৮; আলমগিরী, ২য় ফাসল, ৩, পৃ. ১৮৪।

আলমগিরী, ৩, পৃ. ১৮৬। ৩৪. আলমগিরী, কিতাবুল বুয়ু, বাবুস সালাম, ফাসল ৫, ৩, পৃ. ১৯৫-৭।

আলমগিরী, কিতাবুল বুয়ু, বাবুস সালাম, ৫ম ফাসল, ৩থ, পৃ. ১৯৭-৮। ৩৬. আলমগিরী, বাবুস সালাম, ৬ষ্ঠ পরিচ্ছেদ, ৩, পৃ. ১৯৮-২০০।

المرابحة نقل ماملكه بالعقد الأول بالثمن الاول مع .04

পে) 53L; হিদায়া, কিতাবুল বুয়ু, বাবুল মুরাবাহা ওয়াত-তাওলিয়া, ৩য় খণ্ড

হিদায়া, বাবুল মুরাবাহা, ৩থ, পৃ. ৫৪-৫৫। ৩৯. হিদায়া, ৩, পৃ. ৫৫; কিতাবুল ফিকহ আলাল মাহিবিল আরবাআ, কিসমুল

মুআমালা, পৃ. ২৮০-৮১। ৪০. ঐ বরাত। ৪১. হিদায়া, বাবুল মুরাবাহা, ৩থ; কিতাবুল ফিকহ আলাল মাযাহিবিল আরবাআ, ২৩,

পৃ. ২৮১। ৪২. হিদায়া, বাবুল মুরাবাহা, ৩, পৃ. ৫৫-৬; কিতাবুল ফিক্‌হ আলাল মাযাহিবিল

আরবাআ, ২খ, পৃ. ২৮১-২। ৪৩. পূর্বোক্ত বরাত।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *