১০. ইস্তিস্কা ও সূর্য গ্রহণের নামায

১০. ইস্তিস্কা ও সূর্য গ্রহণের নামায

সালাতুল ইস্তিস্কা [ইস্তিষ্কা আরবি শব্দ। এর অর্থ পানি চাওয়া বা পানি প্রার্থনা করা। অনাবৃষ্টি হলে অথবা পানির প্রয়োজন দেখা দিলে রসূলুল্লাহ (ﷺ) মহান প্রতি পালকের নিকট পানি প্রার্থনা করতেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি কখনো দু’রাকাত নামাযও পড়তেন।]

রসূলুল্লাহ (ﷺ) কয়েক পদ্ধতিতে পানির জন্য প্রার্থনা করেছেন বলে প্রমাণিত আছে। সেই পদ্ধতিগুলো নিম্নরূপ:

এক জুমার দিন খুতবা প্রদানকালে নিম্নোক্ত দু’আ পাঠ করে তিনি পানি প্রার্থনা করেছেন:

(আরবী******************)

অর্থ : আয় আল্লাহ, আমাদের পানি দাও। আয় আল্লাহ আমাদের বৃষ্টি দাও। আয় আল্লাহ, আমাদের পানি পান করাও! আয় আল্লঅহ, আমাদের পানি পান করাও।”

দুই : একবার লোকেরা পানির অভাব ও অনাবৃষ্টির কথা জানালে তিনি তাদরে কথা দিলেন, ইস্তিষ্কার নমায পড়ার জন্যে তিনি বেরুবেন। কথামতো সূর্যোদয় হলে তিনি বেরুলেন। অত্যন্ত নত, বিনীত নও জড়সড় প্রার্থর ন্যায় তিন লোকদের নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। মিম্বরে উঠলেন (মিম্বরে উঠার কথাটি সহীহ কিনা সন্দেহ আছে) এবং এভাবে দু’আ করলেন:

আরবী**************)

অর্থ: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি মহাবিশ্বের মালিক, যিনি দয়ার সাগর পরম করুণাময়, যিনি প্রতিফল দিবসের একচ্ছত্র অধিপতি। কোনো ইলাহ নেই আল্লাহ ছাড়া, তিন যা ইচ্ছা তাই করেন। আয় আল্লাহ, তুমিই আল্লাহ তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তুমি যা ইচ্ছা তাই করো আয় আল্লাহ, কোনো ইলাহ নাই তুমি ছাড়া। তুমি মহাধনী, মহাপ্রাচুর্যের অধিকারী আর আমরা তো ফকির, নিঃস্ব, তোমার মুখাপেক্ষী। তুমি দয়া করে আমাদরে প্রদি বৃষ্টি বর্ষণ করো। আর যতোটুকুই আমাদের প্রতি বর্ষণ করবে, সেটাকে আমাদরে জন্যে শাক্তি লাভের উৎস বানাও এবং একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে আমাদের জীবিকার উপকরণও বানাও।”

এরপর তিনি হাত তুললেন এবং বিনয়, কান্নাকটি ও রোনাজারির মাধ্যমে দু’আ করতে শুরু করলেন। হাত এতোটা উপরের দিকে উঠালেন যে, তার বগলের সুফায়দী দৃষ্টি গোচর হলো। অতপর জনমন্ডলীকে পিছে রেখে কিবলামুখী হলেন। এসময় তিনি তঁঅর চাদরেরও দিক পরিবর্তন করে নিলেন। ডানদিকের অংশ বাম দিকে এবং বাম দিকের অংশ ডান দিকে নিলেন। তেমনি পিঠের অংশ বুকের দিকে এবং বুকের অংশ পিঠে নিলেন। এসময় তাঁর গায়ে ছিলো কালো চাদর। এভঅবে কিবলামুখী হয়ে তিনি দু’আ করতে লাগলেন। তাঁর সাথে সাথে জনমন্ডলীও রোনাজারির মাধ্যমে দু’আ করতে থাকলো।

অতপর তিন মিম্বর থেকে নামলেন এবং উপস্থিত জনতাকে নিয়ে দুই রাকাত নামায পড়লেন। এই দুই রাকাত ছিলো ঈদের নামাযের মতেো আযান ও ইকামত বিহীন। এ নামাযে তিনি উচ্চস্বরে কিরাত পড়েন। প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা আ’লা এবং দ্বিতীয় রাকাতে আল গাশিয়া পড়েন। তিন: তৃতীয় পদ্ধতিটি ছিলো এরক যে, তিনি জুমার দিন ছাড়া অন্য কোনো দিন মসজিদে নববীর মিম্বরে উঠে একাকী পানি প্রার্থনা করেছেন। এসময় তিনি নামায পড়েছেন বলে বর্ণিত হয়নি।

চার: চতুর্থ পদ্ধতিটা এই ছিলো যে, তিন মসজিদে বসে হাত তুলে পানি প্রার্থনা করেছেন এবং এই ভাষায় দু’আ করেছেন:

(আরবী******************)

অর্থ: আয় আল্লাহ! মিষ্টি পানির বৃষ্টি দিয়ে আমাদের পানি পান করাও। পর্যাপ্ত বৃষ্টি দাও, মন্থর নয়, ক্ষিপ্ত বৃষ্টি দাও। ক্ষতিকর নয়, কল্যাণকর বৃষ্টি দাও।”

পাঁচ : তিনি মসজিদের বাইরে যাওয়ারাব-এর কাচে গিয়ে পানি প্রার্থনা করেছেন। বর্তমানে সেই জায়গাটাকে ‘বাবুস সালাম’ বলা হয়। একটি পাথর ছুঁড়লে যতোদূরে যায়, এই জায়গা মসজিদ থেকে ততোটা দূরে ছিলো।

ছয়: কখনো কখনো তিনি যুদ্ধের সময় পানি প্রার্থনা করেছেন। প্রতিপক্ষ মুশকিরকরা পানির কুয়া, চৌবাচ্চা ও ঝর্ণনা দখল করে নিলে ‍মুসিলমরা পিপাসার্ত হয়ে পাড়ে। তাঁরা অস্থির হয়ে তাঁর কাছে পানির অভাবের কথা জানায়। তখন তিন পানি চেয়ে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করেন।

মুনাফিকরা মুসলমানদের বলীছল, ইনি যদি নবী হতেন, তবে তিনি অবশ্যি পানি প্রার্থনা করলে পানি পাওয়া যেতো, যেভাবে মূসা আ. পানি প্রার্থনা করে পানি পেয়েছিলেন। একথা নবী করীম (ﷺ) এর কানে এলে বললেন, তারা কি সত্যি এমনটি বলেছে? তবে অচিরেই তোমাদের প্রবু তোমাদের পিপাসা মিটিয়ে দেবার ব্যবস্থা করবেন। একথঅ বলে তিনি হাত উঠালেন। প্রবুর কাছে পানি প্রার্থনা করলেন। দু’আ থেকে তাঁর হাত নামাবার আগেই আকাশ মেঘে ছেয়ে গেলো। প্রচুর বৃষ্টিপাত হলো। খাল বিল ও নালায় পানির স্রোত বয়ে চললো। সবাই পানি পান করে পরিতৃপ্ত হলো। এসময় তিনি নিম্নোক্ত ভাষায় পানি প্রার্থনা করেছিলেন:

(আরবী*****************)

অর্থ: “আয় আল্লাহ! তোমার বান্দাদেরকে আর তোমার পশু-পাখিগুলেকে পানি পান করাও। তোমার রহমত ছড়িয়ে দাও। তোমার মত শহরকে জীবিত করে দাও। আমাদেরকে মিষ্টি পানির বৃস্টি বর্ষিয়ে পান করাও এবং পরিতৃপ্ত করে দাও। এ বৃষ্টিকে আমাদের জন্যে কল্যাণকর করো, ক্ষতিকর করোনা। তা শীঘ্রি বর্ষণ করো, বিলম্ব করোনা।”

-রসূলুল্লাহ (ﷺ) যখনই বৃষ্টি প্রার্থনা করেছেন, বৃষ্টি হয়েছে।

-কখনো প্রচুর বৃষ্টিপাত হতো এবং তা ক্ষতির কারণ হতো, তখন রসূলুল্লাহ (ﷺ) বৃষ্টি বন্ধ হবার জন্যে প্রার্থনা করতেন।

-মেঘ দেখলে রসূরুল্লাহ (ﷺ) –এর মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হতো। কারণ তিনি মেঘ থেকে আল্লহর আযাবের আশংকা করতেন। যখন বর্ষণ হতো, তখন তাঁর চেহারায় খুশি ও আনন্দের আভা ফুটে উঠতো।

সালেম ইবনে আবদুল্লাহ তাঁর পিতা আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে মরফু হাদিস বর্ণন করেছেন। তাতে তিনি বরেন, রসূরুল্লাহ (ﷺ) –এর বৃষ্টি প্রার্থনার দু’আ ছিলো নিম্নরূপ:

(আরবী*******************)

অর্থ : আয় আল্লাহ! আমাদের এমন বৃস্টিপাত দ্বারা পান করাও যাতে পরিতৃপ্ত হই। এমন বৃষ্টিপাত- যা প্রচুর, পরিপূর্ণ, ঘন ও স্থায়ী। আয় আল্লাহ, বৃষ্টিপাত করে আমাদের পান করাও। আমাদেরকে নিরাশ ও বঞ্চিত লোকরেদ অন্তর্ভুক্ত করোনা। আয় আল্লাহ৯! তোমার বান্দারা, তোমার শহরগুলো, তোমার পশুপাখি এবং সৃষ্টিকূল ক্ষুধা-তৃষ্ণা ও দুঃখ কষ্টের মধ্যে আপতিত হয়েছে। এর ফরিয়াদ আমরা তোমার ছাড়া আর কারো কাছে করছিনা। আয় আল্লাহ! আমাদের জন্যে ফসল উৎপন্ন করে দাও! আমাদের পশুগুলোর উলান দুধে ভরে দাও! আমাদেরকে আসমান ও যমীনের বরকত (প্রাচুর্য) থেকে পান করাও! আমাদের যমীনের বরকত (প্রাচুর্য) উৎপন্ন করে দাও! আমাদের ক্ষুধা-তৃষ্ণা, দুঃখ কষ্ট ও বস্ত্রহীনতা দূর করে দাও! আমাদের সমূহ বিপদ মুসীবত দূরে করে দাও- যা তুমি ছাড়া কেউই দূর করতে পারেনা। আয় আল্লাহ! আমরা তোমার কাছেই ক্ষমা প্রার্থনা করছি। অবশ্যি অবশ্যি তুমি পরম ক্ষমাশীল দয়াময়। আমাদের জন্যে আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটাও।”

-ইমাম শাফেয়ী বলেছেন ইমামগণ ইস্তিষ্কা করার সময় এই দু’আটি করুক- তা আমার খুবই পছন্দ।

– ইমাম শাফেয়ী আরো বলেছেন: আমরা বিশ্বস্ত সূত্রে সংবাদ পেয়েছি, রসূরুল্লাহ (ﷺ) দুই হাত তুলে পানি প্রার্থনা (ইস্তিষ্কা) করতেন।

-রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: বৃষ্টির সময় দু’আ করলে তা ব্যর্থ হয়না।

কসুফ বা সূর্য গ্রহণের নামায [সাধারণত ‘কসূফ’ বলা হয় সূর্যগ্রহণকে আর ‘খসূফ’ বলা হয় চন্দ্রগ্রহণকে। কিন্তু হাদিসে সূর্যগ্রহণকেই কসূফ এবং খসূফ বলা হয়েছে। রসূল (ﷺ) চন্দ্রহগ্রহণের সময় নামায পড়েছেন বলে প্রমাণ নেই। কসূফের নামায এবং খসূফের নামায বলতে সূর্য গ্রহণের নামাযকেই বুঝায়।]

একবার সূর্য উদিত হয়ে কিছুটা উপরে উঠলে সূর্যগ্রহণ শুরু হয়। রসূরুল্লাহ (ﷺ) পেরেশান ও ব্যতিব্যস্ত হয়ে চাদর টানতে টানতে দ্রুত ঘর থেকে মসিজিদের দিকে বেরিয়ে আসেন। এসময় তিনি সামনে গিয়ে জনতাকে নিয়ে দুই রাকাত নামায পড়েন। প্রথম। রাকাতে সূরা ফাতিহার পর একটি লম্বা সূরা পড়েন। উচ্চস্বরে কিরাত পড়েন। তারপর লম্বা রুকূ করলেন। রুকূ থেকে মাথা উঠিয়ে দীর্ঘ কিয়াম করলেন। এটা সূরা কিরাতের কিয়াম নয়, রুকুর পরের কিয়াম। রুকূ থেকে মাথা উঠাবার সময় বলেন সামিৎআল্লাহ লিমান হামিদাহ রাব্বানা লাকাল হাম্দ।” তারপর আবার কিরাত শুরু করলেন। আবার দীর্ঘ রুকূ করেন। তবে এবার পয়লা বারের তুলনায় কিছুটা কম সময় থাকলেন। অতপর সাজদায় চলে গেলেন এবং লম্বা সাজদা করলেন।

-দ্বিতীয় রাকাত একই ভাবে পড়লেন।

-এভাবে প্রতি রাকাতে তিনি দুটি রুকূ ও দুটি সাজদা করলেন।

-এভাবে আসলে নামায মোট চার রাকাত হলো এবং চার রাকাতের চারটি রুকূ এবং চারটি সাজদা হলো।

এ নামায পড়ার সময় তিনি জান্নাত ও জাহান্নাম দেখেছিলেন।

নামায শেষ করে তিনি জনতার উদ্দেশ্যে এক মর্মস্পর্শী খুতবা (ভাষণ) প্রদান করেন। তাঁর সে ভাষণের যতোটুকু লোকেরা মুখস্ত রেখেছে তা বিভিন্ন রাবি বর্ণনা করেছেন। একটি বর্ণনা অনুযায়ী তিনি সে ভাষণে বলেছেন সূর্য-চাদ আল্লাহর নিদর্শন সময়হের মধ্যে দুটি নিদর্শন। কারো জীবন বা মৃত্যুর সাথে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের কোনো সম্পর্ক নাই। যখন চন্দ্র-সূর্যে গ্রহণ লাগতে দেখবে, তখন তোমরা আল্লাহকে ডাকবে, আল্লাহর শ্রেস্ঠত্ব প্রকাশ করবে, নামায পড়বে এবং দান-সাদকা করবে। হে মুহাম্মদের অনুসারী দল! আল্লাহর কসম, আল্লাহর কোনো বান্দা বা বা্দী ব্যভিচার করবে- এর চাইতে অধিক ক্ষোভের বিষয় আল্লাহর কাছে আর কিচু নাই। হে মুহাম্মদের অনুসারীগণ! আল্লাহর কসম, আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে, তবে অবশ্যি কম হাসতে এবং বেশি কাঁদতে।”

“আমি তোমাদেরকে যেসব জিনিসের ওয়াদা দিয়েছি, তা সবই এসময় এখঅন থেকে দেখতে পেয়েছি। এমনকি আমি জান্নাত দেখার পর সেখান থেকে একগুচ্ছ আংগুর ছিঁড়ে আনবার ইচ্ছা করি, তখন তোমরা আমাকে একটু সামনে এগুতে দেখেছো। কিন্তু একটু সামনে এগুতেই আমি জাহান্নাম দেখতে পেলাম। তার একটি অংশ আরেক অংশ থেকে ভয়ংকর-বীভৎস! তার একটি অংশ আরেক অংশকে চিবিয়ে গ্রাস করছে! এ সময় তোমরা আমাকে পিছিয়ে আসতে দেখেচো। আমি জাহা্নাম থেকে ভয়াবহ কোনো দৃশ্য দেখিনি। আমি দেখতে পেলাম জাহান্নামে যারা শাস্তি ভোগ করছে তাদের বেশিরভাগই নারী।”

-লোকেরা জিজ্ঞাসা করলো: হে আল্লাহর রসূল! এর কারণ কি?

-তিনি বললেন: এর কারণ হলো তাদের অকৃতজ্ঞতা।

-জিজ্ঞাসা করা হলো: তারা কি আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞ?

-তিনি বললেন: তারা স্বামী ও প্রতিবেশীর প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। কেউ যতোই তাএদর উপকার করুক, তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেনা। তুমি যদি সারাজীবনও একজন নারীর উপকার ও কল্যাণ করতে থাকো, অতপর তোমার দ্বারা যদি সামান্য কোনো ত্রুটি হয়ে যায়, তবে সে বলে উঠবে: ‘আমি কখনো তোমার থেকে ভালো কিছু পাইনি।”

‘আমার কাছে অহী করা হয়েছে, তোমাদেরকে কবরে পরীক্ষায় ফেলা হবে। সে পরীক্ষা (ফিতানা) হবে দাজ্জালের পরীক্ষার মতো বা সে পরীক্ষার কাছাকাছি। সেখানে তোমাদের প্রত্যেকের কাছে কেউ এসে প্রশ্ন করবে: এই ব্যক্তি (মুহাম্মদ) সম্পর্কে তুমি কী জানো?

মুমিন জবাবে দিবে: ইনি মুহাম্মদ। তিনি আল্রাহর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট প্রামণ ও হিদায়াত নিয়ে এসেছিলেন। আমরা তাঁর আহবানে সাড়া দিয়ে ঈমান এনেছি এবং তাঁর অনুসরণ করেছি।

তখন তাকে বলা হবে: নিরাপদে ঘুমাও। তুমি পুণ্যবান। আমরা জানতাম, তুমি অবশ্যি মুমিন।

কিন্তু জবপাবে মুনাফিক বলবে: আমি তো তার সম্পর্কে কিছুই জানিনা। লোকজনকে তার সম্পর্কে বিভিন্ন কথা বলতে শুনেছি, আমিও তাই বলেছি।”

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল তাঁর মুসনাদে অপর একটি সূত্রে রসূলুল্লাহ (ﷺ) –এর ইস্তিস্কা নামাযের পরের ভাষণ উল্লেখ করেছেন। তাতে বলা হয়েছে: রসূরুল্লাহ (ﷺ) নামাযের সালাম ফিরালেন এবং হামদ, ছানা ও কালেমা শাহাদাত পাঠ করে ভাষণ (খুতবা) প্রদান করলে। ভাষণে তিনি বলেন: হে জনতা! আমি তোমাদেরকে আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, আমি কি আমার প্রবুর বার্তা পৌঁছে দিতে কোনো প্রকার ত্রুটি করেছি?

তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললো: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি। আপনি আপনার প্রভুর বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন, আপনার অনুসারীদের কল্যান কামনা করেছেন এবং আপনার দায়িত্ব পূর্ণরূপে সম্পাদন করেছেন। আপনি কোনো কিছুতেই ত্রুটি করেননি।”

অতপর তিনি বললেন: একদল লোক মনে করে, সূর্য গ্রহণ, চন্দ্র গ্রহণ এবং নক্ষত্রের কক্ষচ্যুতি পৃথিবীর কোনো বড় ব্যক্তিত্বের মৃত্যুর কারণে ঘটে থাকে। এসবই মিথ্যা। বরং এগুলো সবই আল্লাহর নিদর্শন। তিনি চান এগুলো থেকে তাঁর বান্দারা শিক্ষা গ্রহণ করুক এবং তওবা করে নিজেদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করুক।

আল্লাহর কসম, আমি যখন নামাযে দাঁড়িয়েছি, তখন তোমাদের দুনিয়াও আখিরাতের সমস্ত অবস্থা অবলোকন করেছি। আল্লাহেই অধিক জানেন। ত্রিশজন বড় মিথ্যাবাদীর আগমন ছাড়া কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবেনা। শেষজন কানা দাজ্জাল। তার বাম চোখ বিলুপ্ত থাকবে। যখন সে বের হবে, সে নিজেকে ইলাহ বলে দাবি করবে। যে ব্যক্তি তার প্রতি ঈমান আনবে এবং তাকে সত্য বলে স্বীকার করবে, তার অনুসরণ করবেচ, তার অতীতের কোনো নেক আমলই তার কোনো কাজে আসবেনা। আর যে ব্যক্তি তাকে অমান্য ও অস্বীকার করবে, তার অতীতের কোনো পাপের জন্যেই তাকে শাস্তি দেয়া হবেনা। সে কা’বা ও বায়তুল মাকদাস ছাড়া গোটা পৃথিবী দখল করে নেবে। সে মুমিনদের বায়তুল মাকদাকে অরুদ্ধ করে ফেলবৈ। তকন মুমিনদের এক সাংঘাতিক অভ্যুত্থান ঘটবে। এর ফলে সে এবং তার বাহিনী ধ্বংস হয়ে যাবে। তখন দেয়ালে ভিত আর গাছের শিকড় পর্যন্ত ডেকে লবে হে মুসিলম, হে মুমিন! এই যে এখানে একটা ইহুদি বআ কাফির। এসো তাকে হত্যা করো….।”

সূর্য গ্রহণের নামায ও খুতবা সংক্রান্ত এ বর্ণনাগুলো নবী করীম (ﷺ) থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।

সূর্য গ্রহণের নামায সম্পর্কে অন্যরকম পদ্ধতির বর্ণনাও আছে। সেসব বর্ণনা অনুযায়ী তিনি কখনো প্রতি রাকাতে তিন রুকূ, কখনো চার রুকূ এবং কখনো সাধারণ নামাযের মতো এক রুকূ দিয়ে নামায পড়েছেন।

তবে শ্রেষ্ঠ ইমামগণ এসব বর্ণনাকে সঠিক মনে করেননা। যেমন ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, ইমাম বুখারি এবং ইমাম শাফেয়ী। তাঁরা এসব বর্ণনাকে ভ্রান্ত মনে করেন।

ইমাম আবু ঈসা তিরমিযি ইমাম বুখারির বক্তব্য উল্লেখভ করে বলেছেন যে তিনি বলেন আমার দৃষ্টিতে সূর্যগ্রহণের নামায সংক্রান্ত হাদিস সমূহের মধ্যে সবচাইতে সহীহ বর্ণনা হলো: রসূল (ﷺ) চার রুকূ এবং চার সাজদা দিযে এই নামায পড়েছেন। প্রতি রাকাতে দুই রুকূ এবং দুই সাজদা করেছেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *