১০. আমাদের সামান্যের জ্ঞান
কোন নির্দিষ্ট সময়ে একজন ব্যক্তির জ্ঞানের কথা বললে সামান্যকে বিশেষের মতই কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়-যা জ্ঞাতোর (পরিচিতির) সাহায্যে জানা যায়, যা বর্ণনার সাহায্যে জানা যায় এবং যা জ্ঞাতোর সাহায্যে বা বর্ণনার সাহায্যে জানা যায় না।
প্রথমে আলোচনা করা যাক জ্ঞাতোর সাহায্যে সামান্যর জ্ঞান নিয়ে। এটি একান্তই স্পষ্ট যে আমরা এরকম সামান্য সম্পর্কে জ্ঞাত হই যেমন, লাল, কালো, মিষ্টি, টক, উচ্চ, কঠিন ইত্যাদি, অর্থাৎ গুণগুলোর সম্পর্কে যেগুলো ইন্দ্রিয় উপাত্তের সাহায্যে পরিস্ফুট হয়। যখন আমরা একটি সাদা অংশ দেখি, তখন আমরা প্রথমত জ্ঞাত হই কোন বিশেষ অংশের সঙ্গে; কিন্তু অনেকগুলো সাদা অংশ দেখলে, আমরা সহজেই শ্বেতত্বকে বার করা শিখতে পারি যা তাদের সবার মধ্যে রয়েছে এবং এটা শেখার মধ্যে দিয়ে আমরা শ্বেতত্ব সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া শিখি। এই একই পদ্ধতি অন্য যে কোন একই ধরনের সামান্যকে জানতে সাহায্য করে। এই ধরনের সামান্যকে ইন্দ্রিয়গত গুণ বলা যেতে পারে। এদেরকে অন্যদের তুলনায় কম চেষ্টা দ্বারা জানা যায় এবং এরা অন্য সামান্যের তুলনায় বিশেষের থেকে দূরে থাকে।
আমরা এরপর সম্বন্ধে আসছি। সব থেকে সহজ সম্বন্ধ উপলব্ধি হয় সেইগুলোর মধ্যে যেগুলো একক জটিল ইন্দ্রিয়-উপাত্তের বিভিন্ন অংশে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, আমি এক নজরে সমস্ত পাতাটি দেখতে পারি যার উপর আমি লিখছি, একভাবে পুরো পাতাটি একটি ইন্দ্রিয়-উপাত্তের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু আমি দেখছি যে পাতাটির কিছু অংশ অন্য অংশের বাঁ দিকে রয়েছে এবং কিছু অংশ অন্য অংশের উপরে রয়েছে। এক্ষেত্রে নির্গত করার পদ্ধতি অনেকটা নিম্নরূপ হতে পারে? আমি পরপর কিছু সংখ্যক ইন্দ্রিয়-উপাত্ত দেখলাম যার এক অংশ অন্য অংশের বাদিকে; আমি দেখছি, ঠিক সেই বিভিন্ন সাদা অংশের ঘটনার মতই, যে এসব ইন্দ্রিয়-উপাত্তের মধ্যে কিছু সাধারণ বিষয় রয়েছে এবং যা এদের মধ্যে সাধারণ তাহলে বিভিন্ন অংশের মধ্যে নির্দিষ্ট সম্বন্ধ অর্থাৎ সেই সম্বন্ধ যাকে আমি বাঁদিকে থাকা বলছি। এভাবে আমি সামান্য সম্বন্ধের সঙ্গে পরিচিত হলাম।
এভাবে আমি কালের ক্ষেত্রে পূর্বের এবং পরের সম্বন্ধকে অবগত হলাম। মনে করা যাক, আমি একসুরে মেলানো ঘন্টাধ্বনি শুনলাম : যখন শেষ ঘন্টাধ্বনির সুর শোনা যাচ্ছে, আমি সমস্ত সুরটি মনে ধরে রাখলাম এবং বুঝতে সক্ষম হলাম যে পূর্ববর্তী ঘন্টাধ্বনি পরবর্তীটির আগে আসছে এবং আমি দেখছি। যে স্মৃতিতেও যা আমি মনে করছি তা বর্তমান সময়ের পূর্বে আসছে। এর যে কোন উৎপত্তিস্থল থেকেই আমি পূর্বের এবং পরের সম্বন্ধ বার করতে পারি, ঠিক যেভাবে আমি সামান্য সম্বন্ধ বার করেছি বাঁদিকে থাকা। এভাবে আমরা দেশ সম্বন্ধের মতকাল সম্বন্ধের সঙ্গে পরিচিত হলাম।
আর একটি যে সম্বন্ধের সঙ্গে আমরা পরিচিত হই তা সাদৃশ্য। যদি আমি সবুজের দু-রকম মাত্রা একসঙ্গে দেখি, আমি দেখব যে এদের একের সঙ্গে অপরের মিল রয়েছে। যদি আমি একই সঙ্গে একটি লাল রঙের মাত্রা দেখি, তাহলে আমি এটাও দেখব যে লালের তুলনায় দুটি সবুজের মধ্যে একটির সঙ্গে আর একটির সাদৃশ্য বেশি রয়েছে। এভাবে আমি সামান্যের সাদৃশ্য বা একীকরণের সঙ্গে পরিচিত হই।
বিশেষের মতই আমরা তাৎক্ষণিকভাবে অবগত হতে পারি যে-সম্বন্ধ সামান্যের মধ্যে রয়েছে তার সঙ্গে। আমরা এইমাত্র দেখলাম যে আমরা বুঝতে পারি একটি লাল রঙের মাত্রা ও একটি সবুজ রঙের মাত্রার সাদৃশ্যের তুলনায় দুটি সবুজের মাত্রার সাদৃশ্য বেশি। এখানে আমরা একটি সম্বন্ধের কথা বলছি অর্থাৎ তুলনায় বেশি। দুই সম্বন্ধের মধ্যে আমাদের এই ধরনের সম্বন্ধের জ্ঞান, যদিও এটাতে বেশি বিমূর্ত শক্তির প্রয়োজন, ইন্দ্রিয়-উপাত্তের গুণাবলি দেখার তুলনায় সম্ভবত একই রকমের তাৎক্ষণিত এবং (অন্তত কিছু ক্ষেত্রে) একইভাবে সন্দেহের অতীত। এভাবে সামান্য সম্পর্কে ও ইন্দ্রিয়-উপাত্ত সম্পর্কে তাৎক্ষণিক জ্ঞান সম্ভব।
পূর্বতসিদ্ধ জ্ঞানের সমস্যায় এখন আবার ফিরে যাওয়া যাক, যা আমরা সামান্যের আলোচনা শুরু করার সময় সমাধান করিনি। এখন আমরা এমন অবস্থায় উপনীত হয়েছি যে পূর্বের তুলনায় এই সমস্যাটির অনেক সন্তোষজনক সমাধান দেয়া সম্ভব। আসুন দুই আর দুই চার এই বচনে ফিরে যাওয়া যাক। যা বলা হয়েছে তার ভিত্তিতে এটি সম্পূর্ণ পরিষ্কার যে এই বচনটি দুই এই সামান্য ও চার এই সামান্যের মধ্যে একটি সম্বন্ধ সূচিত করে। এটি একটি বচনের কথা বলে যা আমরা এখন প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করব? অর্থাৎ সমস্ত পূর্বতসিদ্ধ জ্ঞান সম্পূর্ণভাবে সামান্যের সম্বন্ধ নিয়ে বিচার করে। এই বচনটির গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয়তা রয়েছে এবং এটি পূর্বতসিদ্ধ জ্ঞানের ব্যাপারে আমাদের পূর্বের অসুবিধা সমাধান করার ক্ষেত্রে অনেক দূর যাচ্ছে।
একমাত্র যেক্ষেত্রে প্রথম দর্শনে মনে হতে পারে আমাদের বচনগুলো অসত্য, তা হল সেই ক্ষেত্র যেখানে একটি পূর্বতসিদ্ধ বচন বলে যে সমস্ত একজাতীয় বিশেষ অন্য একটি শ্রেণিতেও থাকে, বা (যা একই বিষয়ে আসে) একই গুণযুক্ত সমস্ত বিশেষের অন্য গুণও থাকে। এই ক্ষেত্রে মনে হতে পারে যেন আমরা এমন। কোন বিশেষ নিয়ে আলোচনা করছি যার গুণ আছে গুণযুক্ত হবার থেকে। এই ক্ষেত্রটি দুই আর দুই চার-এর দ্বারা উপস্থাপিত হতে পারে, কেননা এটিকে এই আকারে বলা যেতে পারে যে কোন দুই আর অন্য যে কোন দুই হয় চার অথবা যে কোন দুই-দুইয়ের গুচ্ছ চার তৈরি করে। যদি আমরা দেখাতে পারি যে এরকম বক্তব্য সত্যিই সামান্য নিয়ে আলোচনা করে, তাহলে বচন প্রমাণিত বলে ধরে নেয়া যেতে পারে।
কোন বচন কি নিয়ে আলোচনা করে তা আবিষ্কারের একটি উপায় হল নিজেদের প্রশ্ন করা যে কোন শব্দ আমরা অবশ্যই বুঝি-অন্য কথায়, কোন বিষয় সম্বন্ধে আমরা অবশ্যই পরিচিত হই-যাতে করে বোঝা যায় যে বচনটি কি বোঝাচ্ছে। যখনই আমরা বুঝি বচনটি কি বোঝাচ্ছে, যদিও আমরা জানতে সক্ষম হই না এটি সত্য বা মিথ্যা কিনা, তখন এটা পরিষ্কার যে আমরা অবশ্যই পরিচিত থাকবো যে এই বচনের দ্বারা কি কাজ করা হয়েছে। এই পরীক্ষা প্রয়োগ করে, এটা দেখা যায় যে বহু বচন যা বিশেষ ক্ষেত্রে, যখন আমরা এর অর্থ এভাবে ব্যাখ্যা করি যে-যে কোন দুইয়ের গুচ্ছচারের গুচ্ছ তৈরি করে, তখন এটা পরিষ্কার যে আমরা বচনটি বুঝতে পারি অর্থাৎ আমরা উপলব্ধি করতে সক্ষম হই এটি কি বোঝাতে চাইছে- যখনই আমরা জানতে পারি গুচ্ছ, দুই ও চার দ্বারা কি বোঝায়। জগতের সমস্ত জুড়ি সম্পর্কে অবগত হওয়া সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয়। যদি এটা প্রয়োজনীয় হত তাহলে স্বাভাবিকভাবেই আমরা বচনটি বুঝতে পারতাম না, যেহেতু জুড়িগুলো হল সংখ্যায় অসংখ্য এবং সুতরাং আমাদের পক্ষে সব জানা সম্ভব নয়। এভাবে যদিও আমাদের সাধারণ বক্তব্য বিশেষ জুড়ি সম্পর্কেই বক্তব্য প্রতিপালন করে, যখনই আমরা জানতে পারি এরকম বিশেষ জুড়ি রয়েছে, যদিও এটি নিজের গ্রহণ করে না বা বোঝায় না যে এরকম বিশেষ জুড়ি রয়েছে এবং এভাবে কোন বাস্তব বিশেষ জুড়ি সম্পর্কে বক্তব্য তৈরি করতে অসমর্থ হয়। যে বক্তব্য দেয়া হল তা সামান্য এই জুড়ি সম্পর্কে এবং কোন এই বা ওই জুড়ি সম্পর্কে নয়।
এভাবে দুই আর দুই হয় চার এই বক্তব্যটি সম্পূর্ণভাবে সামান্য সম্পর্কে আলোচনা করে এবং সুতরাং যে কেউ তা জানতে পারে যে এই সামান্য সম্পর্কে অবহিত এবং দেখতে সক্ষম হয় হয় এদের মধ্যে সম্বন্ধটি যা এই বক্তব্যটি গ্রহণ করে। এটিকে একটি ঘটনা বলে গ্রহণ করা উচিত, যা আমাদের জ্ঞানের উপরে অনুধ্যানের দ্বারা আবিষ্কৃত, যে আমাদের শক্তি আছে কখনও এটা দেখার যে এই ধরনের সম্বন্ধ সামান্যের মধ্যে রয়েছে এবং সুতরাং কখনও পূর্বতসিদ্ধ বচনের সম্বন্ধে সাধারণভাবে জানার ক্ষমতাও আছে, যেমন পাটিগণিত ও যুক্তিবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে। যখন আমরা পূর্বে এই ধরনের জ্ঞান নিয়ে আলোচনা করেছিলাম তখন যে বিষয়টি রহস্যজনক মনে হয়েছিল তা হল এই যে অভিজ্ঞতাকে ধরে নেয় ও নিয়ন্ত্রিত করে। তবে এটি হল একটি ভ্রান্তি যা এখন আমরা দেখব। যার অভিজ্ঞতা সম্ভব এমন কোন বিষয়ই অভিজ্ঞতা ছাড়া স্বাধীনভাবে জানা যায় না। আমরা পূর্বতসিদ্ধভাবে জানি যে দুটি বিষয় এবং অন্য দুটি বিষয় একত্রে চারটি বিষয় তৈরি করে, কিন্তু আমরা একটি পূর্বতসিদ্ধভাবে জানি না যে যদি ব্রাউন এবং জোনস দুজন হয় এবং রবিনসন ও স্মিথ দুজন হয়, তাহলে ব্রাউন, জোনস, রবিনসন ও স্মিথ চারজন হবে। তার কারণ হল এই বচনটিকে ততক্ষণ বোঝাই যাবে না যতক্ষণ না আমরা জানতে পারছি যে এই ধরনের ব্যক্তি রয়েছে যেমন ব্রাউন, জোনস, রবিনসন ও স্মিথ এবং এটি আমরা শুধুমাত্র অভিজ্ঞতার সাহায্যেই পাই। এভাবে আমাদের সাধারণ বচনটি পূর্বতসিদ্ধ হলেও বাস্তব বিশেষের ক্ষেত্রে এর যাবতীয় প্রয়োগের জন্য অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয় এবং সুতরাং একটি ব্যবহারিক উপাদানও থাকে। এভাবে পূর্বতসিদ্ধ জ্ঞানের ক্ষেত্রে যা রহস্যময় বলে মনে হয় তা আসলে ভ্রান্তির উপরে দাঁড়িয়ে আছে বলে দেখা যায়।
এটি আমাদের নির্দিষ্ট আলোচ্য বিষয়কে স্পষ্টতর করে যদি আমরা আমাদের প্রকৃত পূর্বতসিদ্ধ বিধানকে ব্যবহারিক সামান্যকরণের সঙ্গে পার্থক্য করি–যেমন সমস্ত মানুষ হয় মরণশীল। এখানে পূর্বের মত আমরা বুঝব যে বচনটি কি বোঝায় যখনই আমরা এর মধ্যে কি সামান্য রয়েছে তা বুঝি, যেমন মানুষ এবং মরণশীলতা। আমাদের বচনটি কি অর্থ সূচিত করে তা বুঝতে সমস্ত মানবজাতি সম্পর্কে ব্যক্তিগত পরিচিতি থাকা অপ্রয়োজনীয়। এভাবে পূর্বতসিদ্ধ সাধারণ বচন এবং ব্যবহারিক সামান্যকরণের পার্থক্য বচনের অর্থ প্রতিপাদন করার জন্য দরকার হয় না। এট আসে সাক্ষ্যের স্বভাবে। ব্যবহারিক ক্ষেত্রে সাক্ষ্য বিশেষ উদাহরণে আসে। আমরা বিশ্বাস করি সমস্ত মানুষ হয় মরণশীল কেননা আমরা জানি যে অগণিত দৃষ্টান্তে মানুষ মরছে এবং এরকম কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে মানুষ একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর বেঁচে থাকে। আমরা এটি বিশ্বাস করি না কেননা আমরা সামান্য মানুষ এবং সামান্য মরণশীলতার মধ্যে একটি সংযোগ দেখি। এটি সত্যি যে যদি শারীরিবিদ্যা প্রমাণ করতে পারে-সাধারণ নিয়মকে ধরে নিয়ে যে এটি জীবন্ত শরীরকে চালায়- যে কোন জীব চিরকাল বাঁচতে পারে না, যা মানুষ এবং মরণশীলতার মধ্যে একটি সংযোগ দেখায়, যা আমাদের বচনকে গ্রহণ করতে সাহায্য করে মানুষের মরার বিশেষ দৃষ্টান্তের সাহায্য না নিয়েই। কিন্তু এটা শুধুমাত্র এটুকুই বোঝায় যে আমাদের সামান্যকরণ আরও বড় সামান্যকরণের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যার সাক্ষ্য একই প্রকারের যদিও আরও বেশি বিস্তারযোগ্য। বিজ্ঞানের অগ্রগতি এই ধরনের অন্তর্ভুক্তিকে সর্বদাই উৎসাহ দিচ্ছে এবং এভাবে সবসময় বৈজ্ঞানিক সামান্যকরণের আরও বেশি বৈজ্ঞানিক আরোহের ভিত্তি তৈরি করছে। কিন্তু এটি আরও বেশি নিশ্চয়তা দিলেও অন্য ধরনের কিছু দিচ্ছে না? শেষ ভিত্তিটি আরোহের উপরেই দাঁড়িয়ে রয়েছে, অর্থাৎ উদাহরণের থেকে প্রাপ্ত এবং কোন সামান্যের মধ্যে পূর্বতসিদ্ধ সংযোগ নয়, যেমন আমাদের যুক্তিবিজ্ঞান ও পাটিগণিতের আছে।
পূর্বতসিদ্ধ বচন প্রসঙ্গে দুটি বিরুদ্ধ মতকে দেখা প্রয়োজন। প্রথমটি হল, যদি বহু বিশেষ উদাহরণ জানা যায়, তাহলে আমাদের সাধারণ বচনকে প্রথম দৃষ্টান্তে আরোহের সাহায্য নিঃসৃত করা যেতে পারে এবং সামান্যের সংযোগ পরবর্তীকালে দেখা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, এটি জ্ঞাত যে যদি আমরা ত্রিভুজের ধারে লম্বা লাইন আঁকি, তাহলে ঠিক বিরুদ্ধ কোণ থেকে তিনটি লম্বা লাইন একটি দিকে মিলবে। প্রথমত, এই বচনে উপনীত হওয়া সম্ভব সত্যিই বিভিন্ন ক্ষেত্রে লম্বা লাইন এঁকে এবং দেখে যে তারা সর্বদা এক দিকেই মিলছে; এই অভিজ্ঞতা হয়তো আমাদের সাধারণ প্রমাণের দিকে এগিয়ে দেবে এবং আবিষ্কার করতে সাহায্য করবে। এই দৃষ্টান্তগুলো প্রত্যেক গণিতবিদের অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে একই।
অন্য যুক্তিটি আরও চিত্তাকর্ষক এবং দার্শনিক দিক থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এটি হল এই যে কখনও কখনও আমরা একটি সাধারণ বচন সম্পর্কে জ্ঞাত হই সেসব ক্ষেত্রে, যেখানে আমরা তার একটিও দৃষ্টান্ত জানি না। নিম্নলিখিত ক্ষেত্রটি নেয়া যাক। আমরা জানি যে কোন দুটি সংখ্যাকে একত্রে গুণ করা সম্ভব, যা তৃতীয় একটিতে উপনীত হবে এবং যা তাদের যোগফল বলে খ্যাত। আমরা জানি যে সব পূর্ণসংখ্যার জুড়ি যার যোগফল একশোর থেকে কম তাদের আসলে একত্রে গুণ করা হয়েছ এবং তাদের যোগফল গুণের নামতায় লিপিবদ্ধ আছে। কিন্তু আমরা এও জানি যে পূর্ণসংখ্যার জুড়ি অসংখ্য এবং শুধুমাত্র সীমিত সংখ্যক পূর্ণসংখ্যার জুড়িই মানুষের দ্বারা জানা বা চিন্তা করা সম্ভব। এর থেকে এটি নিঃসৃত হয় যে এরকম ধরনের পূর্ণসংখ্যার জুড়ি রয়েছে যা কখনও কোন মানুষ ভাবতে পারেনি এবং কখনও ভাবতে পারবেও না এবং এদের সবাই এমন। পূর্ণসংখ্যার সঙ্গে চলে যার যোগফল একশোর উপরে। সুতরাং আমরা এই বচনে উপনীত হলামঃ সমস্ত দুই পূর্ণসংখ্যার ফল যা কখনও কোন মানুষের দ্বারা। চিন্তিত হয়নি এবং কখনও হবেও না, হল একশোর উপরে। এখানে একটি সাধারণ বচন রয়েছে যার সত্যকে অস্বীকার করা যায় না, এবং তা-ও এই ক্ষেত্রের বিশেষ স্বভাবের থেকে আমরা কোন দৃষ্টান্ত দিতে সক্ষম হই না। কেননা যে-কোন দুটি সংখ্যা যা আমরা চিন্তা করতে পারি তা এই বচনের পদ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।
সাধারণ বচনের জ্ঞানের এই সম্ভাব্যতা, যার কোন দৃষ্টান্ত দেয়া সম্ভব নয়, তাকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অস্বীকার করা হয়, কেননা এটা দেখা যায় না যে এসব বচনের জ্ঞানের জন্য সামান্যের সম্বন্ধে জ্ঞান প্রয়োজনীয় এবং সামান্যের জ্ঞানের দৃষ্টান্তের কোন প্রয়োজন হয় না। কিন্তু এই ধরনের সাধারণ বচনের জ্ঞান খুবই প্রয়োজনীয় যা সাধারণভাবে জ্ঞাত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, পূর্ববর্তী অধ্যায়ে আমরা দেখেছি যে বাহ্য বস্তুর জ্ঞান, ইন্দ্রিয়-উপাত্তের বিপরীতে শুধুমাত্র অনুমানের দ্বারা লাভ করা যায় এবং এরা এমন বস্তু নয় যার সঙ্গে আমরা পরিচিত। এই কারণে আমরা এই ধরনের কোন বচন জানতে পারি না এটি হল বাহ্য বস্তু, যেখানে এটি হল এমন কিছু যা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়। এ থেকে এটি অনুসৃত হয় যে বাহ্য বস্তু সম্বন্ধে আমাদের সমস্ত জ্ঞান হল এমন যার কোন বাস্তব দৃষ্টান্ত দেয়া সম্ভব হয় না। আমরা পরস্পর সংযুক্ত ইন্দ্রিয়-উপাত্তের উদাহরণ দিতে পারি, কিন্তু বাস্তব বাহ্য বস্তু সম্বন্ধে আমরা কোন দৃষ্টান্ত দিতে পারি না। এ কারণে আমাদের বাহ্য বস্তু সম্বন্ধীয় জ্ঞান সবসময়ই সাধারণ জ্ঞানের সম্ভাব্যতার উপর নির্ভর করে যার কোন দৃষ্টান্ত দেয়া যায় না এবং এই একই বিষয় অন্য ব্যক্তির মনের জ্ঞানের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য অথবা অন্য যে কোন বিষয়ের শ্রেণি সম্বন্ধেও প্রযোজ্য যার কোন দৃষ্টান্ত আমাদের পরিচিত নয়।
আমরা যখন জ্ঞানের উৎস সম্বন্ধে বিবেচনা করতে পারি, যেভাবে সেগুলো আমাদের বিশ্লেষনের পথে এগোচ্ছে। আমাদের প্রথমে পার্থক্য করা প্রয়োজন বিষযের জ্ঞান ও সত্যতার জ্ঞানের মধ্যে। প্রত্যেক আবার দুধরনের একটি তাৎক্ষণিক, আরেকটি অ-পরোক্ষ। আমাদের তাৎক্ষণিক বিষয়ের জ্ঞান, যাকে আমরা পরিচিতির জ্ঞান বলি, তাহলে দুধরনের, বিষয়কে বিশেষ বা সামান্যভাবে জানার উপর। বিশেষের মধ্যে, আমাদের ইন্দ্রিয়-উপাত্তের সঙ্গে পরিচিত আছে এবং (সম্ভবত) আমাদের নিজেদের সঙ্গেও রয়েছে। সামান্যের মধ্যে এরকম কোন নীতি নেই যার দ্বারা আমরা স্থির করতে পারি কোনটি পরিচিতির দ্বারা জানা যাবে, কিন্তু এটি স্পষ্ট যে এদের মধ্যে যেগুলো জ্ঞাত হচ্ছে তা হল ইন্দ্রিয়ের গুণ, দেশকালের সম্বন্ধ, সাদৃশ্য এবং কিছু বিমূর্ত যৌক্তিক সামান্য। আমাদের বিষয়ে সম্বন্ধে অপরোক্ষ জ্ঞান যাকে আমরা বর্ণনামূলক জ্ঞান বলে জানি, তা সবসময়ই কোন কিছুর সঙ্গে পরিচিতি এবং সত্যতার জ্ঞান এই দুয়ের সঙ্গে জড়িতে থাকে। আমাদের সত্যের তাৎক্ষণিক জ্ঞানকে অনুভবসিদ্ধ জ্ঞান এবং এভাবে যে সত্যতাকে জানা যায় তাকে স্বপ্রমাণিত সত্য বলা যেতে পারে। এসব সত্যের মধ্যে সেইগুলো রয়েছে যা শুধুমাত্র সেইটুকু বলে যা ইন্দ্রিয়ে দেয়া রয়েছে এবং কিছু বিশেষ বিমূর্ত যৌক্তিক ও পাটিগণিতের নীতি এবং (যদিও কম নিশ্চয়তার সঙ্গে) কিছু নৈতিক বচন। আমাদের অপরোক্ষ সত্যতার জ্ঞানের মধ্যে সমস্ত কিছুই রয়েছে যা আমরা আরোহের স্বপ্রকাশিত নীতির সাহায্য স্বপ্রকাশিত সত্যতার থেকে নিঃসৃত করতে পারি।
যদি উপরিউক্ত বিবরণ সত্য হল তাহলে আমাদের সমস্ত সত্যের জ্ঞান আমাদের অনুভবসিদ্ধ জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল। সুতরাং অনুভবসিদ্ধ জ্ঞানের স্বভাব ও পরিধি আলোচনা করা গুরুত্বপূর্ণ, প্রায় একই পদ্ধতিতে যেভাবে পূর্ববর্তী পর্যায়ে আমরা জ্ঞানের স্বভাবে ও পরিধি নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। কিন্তু সত্যতার জ্ঞান আরও একটি সমস্যা সৃষ্টি কর যা বিষয়ের জ্ঞানের ব্যাপারেও ওঠে না, অর্থাৎ ভ্রান্তির সমস্যা। আমাদের কিছু বিশ্বাস ভ্রান্ত বলে প্রতিপন্ন হয়, সুতরাং এটা দেখা প্রয়োজনীয় যে কিভাবে, যদি আদৌ সম্ভব হয়, আমরা ভ্রান্তির থেকে জ্ঞানের পার্থক্য করতে পারি। এই সমস্যাটি পরিচিতির জ্ঞানের ক্ষেত্রে ওঠে না, কেননা পরিচিতির বিষয় যা-ই হোক না কেন, স্বপ্নে এবং অমূল প্রত্যক্ষে কোন ভ্রান্তি থাকে না যতক্ষণ না আমরা তাৎক্ষণিক বিষয়ের থেকে বাইরে যাই : ভ্রান্তি তখনই জাগে যখন আমরা তৎক্ষণিক বিষয়, যেমন ইন্দ্রিয়-উপাত্তকে কোন বাহ্য বস্তুর প্রতীক বলে মনে করি। এভাবে সত্যতার জ্ঞানের সঙ্গে যুক্ত সমস্যা বিষয়ের জ্ঞানের সঙ্গে যুক্ত সমস্যার তুলনায় বেশি দুরূহ। প্রথম সমস্যাটি জ্ঞানের সত্যতার সঙ্গে যুক্ত বলে, আসুন আমরা পরীক্ষা করি আমাদের অনুভবসিদ্ধ বিধানের প্রকৃতি ও পরিধি নিয়ে।