১০৮ টি নীলপদ
সৃষ্টির একবারের শুরুর সেই সময়টা। আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তিনি জান্নাতে থাকেন। একা একা কিছুটা বিষণ্ণ মনে ঘুরে বেড়ান। আই রিপিট জান্নাতে মন খারাপ করে ঘুরে বেড়ান। অবশেষে আল্লাহ্, অদিমের সঙ্গিনী হিসেবে হাওয়াকে সৃষ্টি করলেন। আদমের বিষণ্ণতা কেটে গেল।
স্বামী-স্ত্রী এবং তাদের মধ্যেকার অন্তরঙ্গতী আল্লাহর এক বিশাল নিয়ামত। তারা একজন অপরের চোখ শীতলকারী, প্রশান্তি দানকারী। হাজার বছর ধরেই স্বামী-স্ত্রীর এই অসম্ভব সুন্দর সম্পর্ক, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, ত্যাগ স্বীকারের অগণিত কাহিনি লিপিবদ্ধ হয়েছে, মহাকাব্য রচিত হয়েছে, রচিত হয়েছে অসংখ্য অশ্রু ঝরানো উপাখ্যান। কিন্তু আমাদের এই তথাকথিত “আধুনিক মহান সভ্যতায়” বদলে গেছে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটা ঠুনকো হয়ে গেছে। ভালোবাসায় মিশে গেছে ফরমালিন। কমে গেছে একে অপরের প্রতি দায়বদ্ধতা, বিশ্বস্ততা।
আমাদের দাদা-দাদি, নানা-নানিদের জেনারেশন; অত দূরে যেতে হবে না, আমাদের বাবা-মার জেনারেশানে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে যে পরিমাণ সততা ছিল, আবেগ ছিল তা আমাদের জেনারেশানের মধ্যে খুঁজে পাওয়া কঠিন। বছরের পর বছর ধরে তারা একসঙ্গে একই ছাদের নিচে থেকেছেন, জীবনের সব দুঃখ কষ্ট সহ্য করেছেন, একসঙ্গে সব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন, হাতে হাত রেখে দাঁড়িয়েছেন জীবনের পক্ষে। আমাদের জেনারেশনের দাম্পত্য জীবন অনেকটা পিকনিকের মতো। একে অন্যকে দেখে দুজনকেই দুজনের অনেক “কুউউল” মনে হলো, তারপর দুজনে বিয়ে করে কিছুদিন “এনজয় করল। তারপর একরাতে মশারি খাটানো নিয়ে দুজনের হালকা কথা কাটাকাটি শুরু। তারপর ঝগড়া। তারপর রাতদুপুরে দুই পক্ষের অভিভাবক ডেকে ডিভোর্স। খালাস।
আবার কিছুদিন পর অন্য একজনকে দেখে অনেক “কুউউল” মনে হলো। তারপর আবার বিয়ে। কিছুদিন এনজয়। ফেসবুকের টাইমলাইন ভর্তি বেডরুম সেলফি, তারপর একদিন সামান্য কারণে হুট করে ডিভোর্স। এ দুষ্ট চক্র চলতেই থাকে।
কিন্তু কেন? কেন হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসা স্বামী-স্ত্রীর মধুর সম্পর্কের আজ এই বেহাল দশা? কেন এক নিদারুণ দুঃসময়ে টালমাটাল পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী বন্ধনগুলোর একটি? অনেকগুলো ফ্যাক্টর আছে এর পেছনে। পুঁজিবাদী চিন্তাভাবনা, সৃষ্টিকর্তাকে ভুলে নিজের প্রবৃত্তির দাসত্ব করা, সেকুল্যারিযমের প্রসার, মিডিয়ার মগজধোলাই, নারীবাদের উখীন…
এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হলে পর্নোগ্রাফি, আইটেম সং, নারীকে শুধু দেহসর্বস্ব ভোগের বস্তু বা “সেক্স অবজেক্ট” হিসেবে দেখানোর ট্রেন্ড, সর্বোপরি মিডিয়ার সব দিকে ব্যাপক যৌনায়ন। এ গুরুতর কিন্তু অনালোচিত বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই এগোবে আমাদের এ লেখাটি।
আমাদের প্রজন্ম লাগামছাড়া অশ্লীলতা আর বেহায়াপনায় গা ভাসিয়েছে, অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। এক-দুই ঘণ্টা ইন্টারনেটে কাটিয়েই তারা বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে যত “যখন কিছুই লুকানোর থাকে না” টাইপ মেয়েদের ছবি দেখে ফেলে, তা আমাদের বাপ-দাদারা সারা জীবনে দেখেছে কি না সন্দেহ। হাই স্পিড ইন্টারনেট, অ্যান্ড্রয়েড ফোনের কল্যাণে পর্ন ভিডিও আজ আলু-পটলের মতোই সহজলভ্য। আর আমাদের ছেলে-মেয়েরা তা গিলছেও গোগ্রাসে। প্রতি সেকেন্ডে গড়ে ২৮,২৫৮ জন মানুষ পর্ন দেখছে।
University of Montreal এর গবেষকরা, জীবনে একবারও পর্ন দেখেনি এমন একজনকেও খুঁজে পাননি। নিরাপত্তা প্রযুক্তি বিষয়ক কোম্পানি Bitdefender এর গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, পর্ন সাইটে যাতায়াত করে এমন প্রতি ১০ জনের মধ্যে ১ জনের বয়স দশ বছরের নিচে। আর এ দুধের বাচ্চাগুলো রেইপ পর্ন (ধর্ষণের চিত্রায়ণ) টাইপের জঘন্য জঘন্য সব ক্যাটাগরির পর্ন দেখে।
পর্ন ভিডিও দেখে, চটি গল্প পড়ে বেড়ে ওঠা এসব ছেলে-মেয়েরা যৌনতা সম্পর্কে অতিরঞ্জিত, অবাস্তব ধারণী নিয়ে বড় হয়। ওদের যৌন শিক্ষার মাধ্যমও এই পর্নোগ্রাফি।
National Union of Students (US) এর জরিপ থেকে দেখা যাচ্ছে, স্কুল কলেজ-ইউনিভার্সিটির ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে শতকরা ৬০ জন যৌনতা সম্পর্কে জানার জন্য পর্ন ভিডিও দেখছে।
অস্ট্রেলিয়ান গবেষক মারি ক্র্যাব এবং ডেইভিড করলেট-এর ভাষ্যে, “আমাদের সংস্কৃতিটাই এমন হয়ে গিয়েছে যে কিশোর, তরুণরা কীভাবে যৌনতাকে উপলব্ধি করবে এবং যৌনতার মুখোমুখি দাঁড়াবে সেটা শেখাচ্ছে পর্ন। যৌন শিক্ষার প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে গেছে পর্ন।”
মানুষ কোনো কিছু বার বার দেখতে থাকলে এবং সেটা তার ভালো লাগলে একসময় না-একসময় সে সেটা নিজে করে দেখতে চায়। কাজেই বিয়ের পর শুরু হচ্ছে ঝামেলা। পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হওয়ার কারণে বিয়ের আগেই স্বামীর মনে নারীদেহের বিভিন্ন অঙ্গের আকার-আকৃতি সম্পর্কে অতিরঞ্জিত এবং অবাস্তব ধারণা থাকে।
তার অবচেতন মন ধরে নেয় সব নারীর দেহই পর্ন ভিডিওর অভিনেত্রীদের মতো আর বাস্তবের নারীও বিছানায় পর্ন অভিনেত্রীদের মতোই বেপরোয়া। কিন্তু সে যখন আসল সত্যটা আবিষ্কার করে, তখন হতাশ হয়ে যায় এবং দাম্পত্য জীবনে শুরু হয় অশান্তি।
মুদ্রার ওপর পিঠটাও দেখে নেয়া যাক। পর্ন ভিডিওতে আসক্ত নারীরাও ছেলেদের দেহ সম্পর্কে অতিরঞ্জিত ধারণা করে বসে থাকে। বিয়ের পর যখন আবিষ্কার করে তার স্বামীর দেহ পর্ন ভিডিওতে দেখানো পুরুষদের মতো না, স্বামী পর্ন ভিডিওতে দেখানো পুরুষটার মতো কাজ করতে পারছে না বা অত সময় ধরে পারছে না– তখন সে তার স্বামীকে নিয়ে অসন্তুষ্টিতে ভোগা শুরু করে। শুরু হয় দাম্পত্য কলহ। পরকীয়ার সূত্রপাত হয়। পরকীয়ার পালে জোর হাওয়া লাগতে ইন্ডিয়ান বস্তাপচা সিরিয়াল তো আছেই। দুজনের কেউই ভেবে দেখছে না, পর্ন ভিডিওতে যেগুলো দেখানো হচ্ছে সেগুলো কতটা বানোয়াট, কতটা এডিটিং করা। পর্ন-অভিনেত্রীদের “ফিগার” বলুন আর পর্ন-অভিনেতার বিভিন্ন অঙ্গ বলুন, সবকিছুই এডিটিংয়ের মাধ্যমে স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত বড় আকারে পর্ন ভিডিওতে উপস্থাপনা করা হয় অথবা অনেক ঘাম ঝরিয়ে, বিশেষ ব্যায়াম করে, সার্জারির মাধ্যমে এগুলো বড় করা হয়।
সাধারণ নারী-পুরুষের দেহ তাঁদের মতো হবে না এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পর্ন দেখার কারণে দর্শক এটাকেই স্বাভাবিক মনে করছে। ভাবছে তার স্বামী/স্ত্রীর বিশেষ অঙ্গগুলোকে ছোট কিংবা অনাকর্ষণীয়। আর ত্রিশ-চল্লিশ মিনিটের একটি পর্ন ভিডিও হয়তো এক সপ্তাহ ধরে শুটিং করা হচ্ছে, অভিনেতারা যৌনশক্তি-বর্ধক নানা ধরনের ড্রাগস নিয়ে তাতে পারফর্ম করছে, অথচ ভোক্তারা নীল স্ক্রিনের সামনে পর্ন ভিডিও দেখে ভেবে নিচ্ছেন, তারা বোধহয় এক নাগাড়েই চল্লিশ-পঞ্চাশ মিনিট “প্রেম করতে পারে। পর্ন-আসক্ত স্ত্রী ভাবছে, “পর্ন ভিডিওর অভিনেতা এতক্ষণ পারলে আমার স্বামী কেন পারছে না? তার নিশ্চয় সমস্যা আছে?” পর্ন আসক্ত স্বামী ভাবছে, “আরে সে এতক্ষণ পরলে আমি কেন পারি না? নিশ্চয় আমার কোনো সমস্যা আছে!” এইভাবে পর্ন-আসক্ত স্বামী তার আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে আর স্ত্রীরাও অসন্তুষ্টিতে ভুগছে। স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসায় ভাটা পড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের (যৌনবিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক, মনোবিদ, মনোবিজ্ঞানী, অধ্যাপক) শতাধিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে পর্ন, মারাত্মক রকমের যৌনসমস্যা সৃষ্টি করে। লিঙ্গোত্থানজনিত সমস্যা (erectile disfunction) থেকে শুরু করে, অকাল বীর্যপাত, যৌনতার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলা, অতৃপ্ত থাকা, স্বামী স্ত্রীর মধ্যেকার ভালোবাসা কমে যাওয়া, যৌনতায় আগ্রাসন প্রদর্শন… লম্বা লিস্ট। বর্তমান সময়ে বিশ্বজুড়ে যুবকদের যৌনসমস্যা যতটা বৃদ্ধি পেয়েছে পৃথিবীর ইতিহাসে এর আগে কখনো এ রকম হয়নি। ৭ জন নেভি চিকিৎসকসহ আরও অনেক বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে লিখিত একটি গবেষণাপত্রে দেখা যাচ্ছে, ১৪ থেকে ৩৫ শতাংশ পুরুষ লিঙ্গেীখানজনিত সমস্যায় আক্রান্ত। যৌনতায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন এমন পুরুষের সংখ্যা প্রতি এক শ জনে ১৬ থেকে ৩৭ জন। এই পুরুষদের কারও কারও বয়স ৪০ বা তার চেয়ে কম। কেউ কেউ ২৫ বছর বয়সী টগবগে যুবক, কেউ কেউ সদ্য কৈশোরে পা দেয়া টিনেইজার!”,
ফ্রি অনলাইন পর্নোগ্রাফি যুগের আগে করা বিভিন্ন গবেষণা থেকে দেখা গেছে ৪০ বছর বা তার চেয়ে কমবয়সী পুরুষদের মাত্র ২-৫ শতাংশ লিঙ্গোত্থানজনিত সমস্যায় আক্রান্ত। ৩৫ বছর বা তার চেয়ে কমবয়সী কেউ এ সমস্যায় আক্রান্ত, এমনটা শোনাই যেত না। তার মানে গত কয়েক বছরে তরুণ, যুবকদের মধ্যে লিঙ্গোত্থানজনিত সমস্যা বেড়েছে প্রায় ১০০০%! এর জন্য কে দায়ী?
১) ২৪ টি গবেষণায় দেখা যাচ্ছে পর্ন-আসক্তি নানা রকম যৌন জটিলতা সৃষ্টি করে। পর্ন-আসক্তদের বাস্তব জীবনে যৌনতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিলে তাদের উত্তেজিত হতে বা সার্থক যৌনমিলনের জন্য তৈরি হতে সমস্যা হয়।
২) ৫৫ টিরও বেশি গবেষণা থেকে দেখা যাচ্ছে পর্ন-আসক্তির কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেকার ভালোবাসা কমে যায়। যৌনজীবন নিয়ে দম্পতিরা অসন্তুষ্টি, অতৃপ্তিতে ভোগেন।
সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে একদম তরতাজা তরুণরাও যৌনতায় অনাগ্রহ প্রকাশ করছে! সেই গবেষণৗতে দাবি করা হয় পর্নোগ্রাফি এই সব তরতাজা। তরুণদের যৌনতায় অনাগ্রহের পেছনে দায়ী হতে পারে।
জাপানের তরুণ-তরুণীরা অত্যাধিক পর্ন-আসক্তির কারণে যৌনতার প্রতি আগ্রহ একেবারেই হারিয়ে ফেলছে। অ্যামেরিকার তরুণরা বিয়েতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এর পেছনে অনেকগুলো কারণের মধ্যে পর্ন-আসক্তি অন্যতম বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা।
পর্ন-আসক্তি বিয়ের ধারণাটাই বদলে ফেলে। বিয়েকে উপস্থাপন করে শুধু কামনা, পূরণের মাধ্যম হিসেবে। বিয়ে মানে যে শুধু শারীরিক মিলনের সামাজিক স্বীকৃতি, বিয়ে মানে দুটি মনের মিলন, সুন্দর পৃথিবীর জন্য হাতে হাত রেখে সংঘবদ্ধ লড়াই, অনেক দায়িত্ব-কর্তব্য পালন এই মৌলিক সত্যকে ভুলিয়ে দেয় পর্ন আসক্তি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব তরুণরা চিন্তা করছে–”ইন্টারনেট পর্ন দিয়েই তো যৌনাকাঙ্ক্ষা মেটাতে পারছি। কী দরকার বিয়ের ঝামেলা পোহানোর! কী দরকার আরেকজনের মানুষের সাথে একই ছাদের নিচে একই বিছানা শেয়ার করার, আরেকজন মানুষের দায়িত্ব নেয়ার।”
যৌনজীবনের ওপর পর্ন-আসক্তি কী বিরূপ প্রভাব ফেলে, শুনে নেয়া যাক কয়েকজন বিশেষজ্ঞের মুখ থেকে। ইটালিয়ান সোসাইটি অফ অ্যান্ড্রোলজি অ্যান্ড সেক্সয়াল মেডিসিনের প্রাক্তন সভাপতি ড. কার্লো ফরেস্টা বলেন, “ইন্টারনেট পর্ন তরুণদের যৌনক্ষমতা নষ্ট করে দিচ্ছে। শুরুটা হয় সফটকোর পর্নের প্রতি সংবেদনশীলতা কমে যাওয়ার মাধ্যমে, তার পরের ধাপ হলে যৌনতায় আগ্রহ কমে যাওয়া। আর সবশেষে বীর্যপাত বন্ধ হয়ে যায়।”
“দেখুন, ত্রিশ বছর আগে যখন কেউ লিঙ্গোত্থানজনিত সমস্যায় পড়তেন, তখন তা হতো মূলত বার্ধক্যজনিত কারণে। সাধারণত ৪০ বছর বয়সের পর এ সমস্যা দেখা দিত। বয়স বাড়ার সাথে সাথে রক্তনালি সংকুচিত হয়ে পড়ে এবং বীর্যপাত কঠিন করে ফেলে। ৩৫ বছরের নিচে কারও এমন বড় ধরনের সমস্যার কথা শোনা যেত না বললেই চলে। কিন্তু সেটা ছিল ইন্টারনেট পর্নের আবির্ভাবের আগের কথা। এখনকার দিনে অনলাইন মেসেজ বোর্ড ভর্তি থাকে তরুণদের লিঙ্গোত্থানে অক্ষমতা-সংক্রান্ত অভিযোগে। তারা লিঙ্গোত্থানজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন এই কারণে না যে তাদের যৌনাঙ্গে সমস্যা, তাদের সমস্যাটা মস্তিষ্কে; যেটা পর্ন আসক্তির প্রভাবে বদলে গিয়েছে।”
কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউরোলজি ও রিপ্রোডাকটিভ মেডিসিনের ক্লিনিক্যাল প্রফেসর এবং পুরুষদের স্বাস্থ্য, বিশেষ করে যৌনবিষয়ক রোগনির্ণয় ও চিকিৎসায় অন্যতম পথিকৃৎ ড. হ্যারি ফিশ বলেন, “যখন আমি বলছি, পর্ন অ্যামেরিকার যৌন আচরণকে ধ্বংস করছে, আমি মজাও করছি না, বাড়িয়েও বলছি না। নারী-পুরুষের সম্পর্কের মাঝে পর্ন-আসক্তি কী গভীর ক্ষত তৈরি করে চলেছে, তা আমি প্রতিনিয়ত দেখতে পাই। আমি বিশ্বাস করি, সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টির ক্ষেত্রে পর্নই একমাত্র ও সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যবহির্ভূত কারণ। এটি যৌনস্বাস্থ্যের সব কটি দিকেরই ক্ষতি করছে।”
“…একজন মানুষ যখন পর্ন দেখে অরি হস্তমৈথুন করে তখন সে যেন নিজেই নিজের পায়ে কুড়াল মারে। পর্দার দৃশ্যের মাধ্যমে উত্তেজিত হওয়ার ফলে ধীরে ধীরে বাস্তবজগতের রক্তমাংসের নারীদের দ্বারা উত্তেজিত হওয়া তার জন্য অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। সফল যৌনমিলনের জন্য যতটুকু সময় উত্তেজিত থাকা দরকার, সে ততটুকু সময় উত্তেজিত থাকতে পারে না বা তৃপ্তি লাভ করতে পারে না।”
“পর্ন হলো সেই কালপ্রিট যা আপনার যৌনজীবনের বারোটা বাজিয়ে দেবে।”
“পর্ন এমন এক ভার্চুয়াল স্বর্গরাজ্যের কথা বলে, যা যৌনতায় ভরা। যৌনতা আর যৌনতা, শুধুই যৌনতা। বিভিন্ন ধরনের যৌনতা আর অসীম সুখ। পর্ন যেটা বলে না তা হলো, একজন ব্যক্তি যতই সেই ফ্যান্টাসি জগতের গভীরে যায়, বাস্তবতা ততই বিপরীত হয়ে দেখা দেয়। পর্ন-আসক্তি আসক্তদের যৌনক্ষুধী যেমন কমিয়ে দেয়, তেমনই যৌনতৃপ্তি থেকেও দূরে রাখে।”
পর্ন-আসক্ত সঙ্গী তার সঙ্গিনীর প্রতি আকর্ষণ বোধ করছে না৫, স্বাভাবিক যৌনক্রিয়ায় উত্তেজিত হতে সমস্যা হচ্ছে, যৌনমিলন পানসে মনে হচ্ছে, তৃপ্ত হতে পারছে না, একেবারেই সঙ্গিনীর সঙ্গে অন্তরঙ্গতা থেকে দূরে থাকছেন এ রকম অসংখ্য ঘটনার কথা আমরা জানি।
পর্ন-আসক্ত সঙ্গী তার সঙ্গিনীর পোশাক-আশাক, চেহারা, ফিগীর, আচার-আচরণ সবকিছু নিয়ে খুবই খুঁতখুঁতে হয়ে পড়ে। সব সময় নিজের সঙ্গিনীকে নীল পর্দার অভিনেত্রীদের সাথে তুলনা করে। আচার-আচরণে, কথাবার্তায় সঙ্গিনীকে সেটা জানিয়ে দিতেও দ্বিধাবোধ করে না। এতে করে সঙ্গিনীর ওপর একটা চাপ তৈরি হয়। ফলে পর্দার অভিনেত্রীদের তারা প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ধরে নিচ্ছে, তাদের সঙ্গে এক অসম প্রতিযোগিতায় নামছে। স্বামীর সন্তুষ্টির জন্য বা স্বামীকে নিজের প্রতি আকর্ষিত করার জন্য চুলের কাটিং, পোশাক-আশাক, শরীরের গড়ন, আচার আচরণ সবকিছুই পরিবর্তন করতে হচ্ছে। অ্যানাল সেক্স আর ওরাল সেক্সকেও হ্যাঁ বলতে হচ্ছে। কিন্তু তারপরেও স্বামীকে সন্তুষ্ট করা সম্ভব হচ্ছে না।
স্ত্রীরা নিজেদের ভাবছেন বঞ্চিত, অবহেলিত, প্রতারণার শিকার। বাড়ছে হতাশী, বাড়ছে বিষণ্ণতায় ভোগ। পর্ন-আসক্তির বৈশিষ্ট্যই এমন যে, আসক্তরা ধীরে ধীরে সফটকোর পর্ন ছেড়ে হার্ডকোর পনের দিকে ঝুঁকে পড়ে।
“হালকা জিনিস” আর ভালো লাগে না, উত্তেজিত হতে আরও “কড়া” কিছু প্রয়োজন হয়। বাস্তব জীবনেও পর্দায় দেখানো পদ্ধতিতে যৌনমিলন করতে চায়।
সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্ন ভিডিওগুলোর শতকরা ৮৮ শতাংশ দৃশ্যে শারীরিক আগ্রাসনের প্রদর্শনী রয়েছে এবং শতকরা ৪৯ শতাংশ দৃশ্যে রয়েছে মৌখিক আগ্রাসন। ৬৪ শতকরা ৯৫ ভাগ ক্ষেত্রেই এই শারীরিক ও মৌখিক নির্যাতন যাদের ওপর চালানো হচ্ছে সেই পর্ন অভিনেত্রীরা হাসিমুখে পরম আনন্দে অথবা নীরবে নির্যাতন সহ্য করে নিচ্ছেন। তার মানে দর্শকদের এ মেসেজটাই দেয়া হচ্ছে যে, নারীরা পুরুষের কাছে এগুলোই চায়, নারীরা এভাবেই তৃপ্তি পায়, যৌনমিলন করতে হয় এভাবেই।
পর্নে দেখানো পদ্ধতিতে যৌনমিলনের সময় পুরুষেরা অজান্তেই সঙ্গিনীদের নির্যাতন করে চলেছেন; মৌখিক এবং শারীরিকভাবে। টেরও পাচ্ছেন না। সঙ্গিনী বাধা দিলে রেইপ পর্যন্ত করে ফেলছেন, কিন্তু নিজে বুঝতেই পারছেন না। ভাবছেন এটাই বোধহয় অন্তরঙ্গতার পথ, তার সঙ্গিনী এসবে খুব আনন্দ পান। গত কয়েক বছরে অ্যানাল আর ওরাল সেক্সের মতো জঘন্য, বিকৃত এবং হারাম” যৌনাচারের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। এর অন্যতম কারণ হলো পর্ন ভিডিওগুলোতে এই বিকৃত যৌনাচারগুলোর আধিপত্য।
পর্দার নারীরা হাসিমুখে এসব বিকৃত যৌনাচারে অংশগ্রহণ করে, কাজেই পর্ন আসক্ত পুরুষরা ধরে নিচ্ছেন তাদের সঙ্গিনীরাও হাসিমুখে রাজি হয়ে যাবে। স্বেচ্ছায় রাজি না হলে নারীদের এসব বিকৃত যৌনাচারে বাধ্য করা হচ্ছে। প্রয়োজনে মারধরও করা হচ্ছে।
পর্ন ভিডিওতে এই যৌনাচারগুলো আকর্ষণীয়, তৃপ্তিদায়ক হিসেবে উপস্থাপন করা হলেও আদতে এ যৌনাচারগুলো প্রচণ্ড ক্ষতিকর, অস্বাস্থ্যকর, নোংরা এবং নারীদের জন্য অত্যন্ত কষ্টকর। অ্যানাল সেক্সের কারণে মলাশয়ে ক্যান্সার হতে পারে, নারী এবং পুরুষ দুজনেরই। যে যৌনক্রিয়াগুলোর মাধ্যমে এইচআইভি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে, অ্যানাল সেক্স সেগুলোর মধ্যে শীর্ষে। সমকামী অ্যানাল। সেক্সের কারণে অসংখ্য পুরুষ এইডস আক্রান্ত হচ্ছে, নারীদের সংখ্যাও কম নয়। এইডস ছাড়াও এর মাধ্যমে হারপিস, গনোরিয়া, ক্ল্যামিডিয়া, সিফিলিসের মতো মারাত্মক রোগ হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ওরাল সেক্সের কারণে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ভয়ঙ্কর গনোরিয়া রোগের জীবাণু ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বে। বিশ্বে প্রায় সাত কোটি ৮০ লাখ মানুষ প্রতিবছর এ রোগ সংক্রমণের শিকার হচ্ছেন, যা অনেকের ক্ষেত্রে সন্তান। জন্মদানে অক্ষমতার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা WHO অন্তত ৭৭ টি দেশের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখেছে, গনোরিয়ার অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে ওঠার প্রবণতা অত্যন্ত ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। হারপিস, ক্ল্যামিডিয়া, হেপাটাইটিসহ আরও অনেক যৌনবাহিত ইনফেকশীন (STIs– Sexually Transmitted Infections) ছড়িয়ে পড়তে পারে ওরাল সেক্সের মাধ্যমে। মুখ ও গলার ক্যান্সারেরও অন্যতম কারণ ওরাল সেক্স।
The New England Journal of Medicine এ প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র অনুযায়ী ওরাল সেক্স গলায় ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। পাঁচ জনের কম সঙ্গী বা সঙ্গিনীর সঙ্গে ওরাল সেক্সে লিপ্ত হয়েছে এমন ব্যক্তির গলায় ক্যান্সার হবার আশঙ্কা, যিনি কখনোই ওরাল সেক্স করেননি তার দ্বিগুণ। আর যাদের পাঁচ জনের বেশি সঙ্গী বা সঙ্গিনী রয়েছে তাদের গলার ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা ২৫০% বেশি।
অ্যানাল সেক্স, ওরাল সেক্সের মতো কাজগুলো দম্পতিদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, ভালোবাসা কমিয়ে দেয়। এ বিকৃত যৌনাচারগুলো দাম্পত্য কলহ, অশান্তি, মনোমালিন্য, অতৃপ্তির অন্যতম কারণ। পর্নোগ্রাফি অ্যানাল সেক্স, ওরাল সেক্সের মতো বিকৃতিগুলোকে সমাজের মূলধারায় নিয়ে এসে, স্বাভাবিক করার মাধ্যমে সমকামিতার সামাজিক স্বীকৃতির জন্য চমৎকার ভিত্তি তৈরি করে দিচ্ছে। বাড়ছে শিশুকাম। বাংলাদেশেও অ্যানাল সেক্স এবং ওরাল সেক্স নীরব মহামারির আকার ধারণ করেছে। আমাদের পেইজে এ রকম এমন অনেক খবর এসে পৌঁছেছে, স্ত্রীর আপত্তির মুখেও স্বামী অ্যানাল বা ওরাল সেক্সে স্ত্রীকে বাধ্য করছে। পর্ন-আসক্তি স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক বিশ্বাসে ফাটল ধরায়। কমিয়ে দেয় পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ। পর্ন-আসক্ত ব্যক্তি একজন সঙ্গী? সঙ্গিনীতে সন্তুষ্ট হতে পারে না। এ আসক্তি খুলে দেয় পরকীয়া থেকে পতিতাগমন, সবকিছুর দুয়ার।
পর্ন-আসক্তি সন্তান লালন-পালনে অনীহা সৃষ্টি করে। বাচ্চা-কাচ্চা লালন-পালন করা তো আর কম ঝামেলার কাজ না! রাত-বিরাতে বিছানা ভিজিয়ে ফেললে ডায়াপার বদলে দাও, টাঁ ট্যাঁ করে কেঁদে উঠলে সুখের ঘুম ছেড়ে বাচ্চার কান্না। থামাও, স্কুলে নিয়ে যাও, কোচিং এ নিয়ে যাও, হ্যাঁনো ত্যানো আরও কত কী!
পর্ন-আসক্তরা ভার্চুয়াল সেক্স ফ্যান্টাসির ফাঁদে ফেঁসে সারাক্ষণ পর্ন ভিডিও নিয়ে পড়ে থাকে। বাস্তব জীবন সম্পর্কে একেবারেই দায়িত্বজ্ঞানহীন হয়ে পড়ে। তাদের সময় কোথায় বাচ্চার জন্য আলাদাভাবে চিন্তা করার? বাবা-মা পর্ন-আসক্ত এমন পরিবারের বাচ্চারা প্রচণ্ড অবহেলায় বেড়ে ওঠে; স্নেহ-ভালোবাসা-শাসন তেমন একটা পায় না। বাচ্চাদের দীর্ঘমেয়াদি মানসিক ক্ষতি হয়, স্কুলে পিছিয়ে পড়ে, বন্ধুদের সঙ্গে সহজভাবে মিশতে পারে না, ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে যায়।
ছেলেবেলায় সবারই রোল মডেল থাকে তাদের বাবা-মা। সবাই মনে করে তার বাবা-মা পৃথিবীর সেরা বাবা-মা, সবার চেয়ে বেশি স্মার্ট, এমন একজন, যে সবকিছু। জানে, সবকিছু পারে–সুপারম্যান। বাবার চশমাটা চোখে দিয়ে আর কোটটা ছোট্ট শরীরে চাপিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভাবে একদিন সেও বাবার মতোই হবে। ছেলে-মেয়েরা যখন একটু বড় হয়, বুঝতে শেখে চারপাশের জগৎ সম্পর্কে, তখন বাবা-মার অন্ধকার জগৎটা তাদের কাছে উন্মোচিত হয়ে গেলে শ্রদ্ধার গভীরতা কমে যায়। বাবা-মার জন্য ভালোবাসার যে একটা মহাসমুদ্র ছিল ছোট্ট বুকটীতে তাতে ভাটা পড়তে সময় লাগে না। বাবার আদরের স্পর্শে মেয়ে হয়তো পবিত্রতার অভাব অনুভব করে।
পর্ন-আসক্তি থেকে শুরু হওয়া লিঙ্গোত্থানজনিত সমস্যা, অকাল বীর্যপাত, যৌনাকাঙ্ক্ষা কমে যাওয়া, অতৃপ্তি, যৌন-নির্যাতন, বিকৃত যৌনাচার, পারস্পরিক বিশ্বাস, শ্রদ্ধাবোধ কমিয়ে দেয়া, সবকিছুই অনিবার্য এক করুণ পরিণতির দিকে নিয়ে যায়; বিচ্ছেদ। American Sociological Association এ উপস্থাপিত একটি গবেষণাপত্র অনুযায়ী বিবাহিতদের মধ্যে যারা পর্ন-আসক্ত, তাদের বিচ্ছেদের আশঙ্কা স্বাভাবিকের তুলনায় দ্বিগুণ। অ্যামেরিকায় শতকরা ৫৬ টি বিবাহ-বিচ্ছেদের মূল কারণ সঙ্গী/সঙ্গিনীর পর্ন-আসক্তি।
আর এই বিবাহবিচ্ছেদ সূচনা করে আরও অনেক সমস্যার।
বিবাহবিচ্ছেদের শিকার পরিবারে সন্তানেরা খুব সহজেই বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে। তাদের জেল খাটার হার স্বাভাবিক পরিবারে বেড়ে ওঠা ছেলেমেয়েদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। স্বাভাবিক পরিবারের সন্তানদের তুলনায় ভগ্ন পরিবারের সন্তানদের দারিদ্র্যের সম্মুখীন হবার সম্ভাবনা দ্বিগুণ। সেই সঙ্গে শিক্ষাজীবনে বা পেশাদার-জীবনে তারা স্বাভাবিক পরিবারের সন্তানদের তুলনায় পিছিয়ে পড়ে। তাদের বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। অনেকেই তাদের সৎ বাবার দ্বারা যৌন-নিপীড়নের শিকার হয়। অনেকে বাসা থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়–এদের অনেকের ঠিকানা হয় পতিতালয়ে, পর্ন ইন্ডাস্ট্রি বা মিডিয়ায়। অনেকই শারীরিক এবং মানসিক পীড়ন সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করে বসে।
বিবাহবিচ্ছেদ মনের সুখ-শান্তি কেড়ে নেয়, হতাশা আর বিষণ্ণতার সৃষ্টি করে, এমনকি অনেক সময় মানুষ আত্মহত্যাও করে–এটা তো জানা কথা। তবে বিবাহবিচ্ছেদ আর্থিক ক্ষতিও করে। সমান যোগ্যতার অধিকারী বিবাহিতরা, ডিভোর্সিদের তুলনায় শতকরা ১০-৪০ শতাংশ বেশি উপার্জন করে থাকে। প্রতিবছর পুরো অ্যামেরিকাজুড়ে বিবাহবিচ্ছেদের কারণে জনগণকে কমপক্ষে প্রায় ১১২ বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত ট্যাক্স দিতে হয়৷
আসলে পর্ন ভিডিও বলুন, হলিউডের মুভিই বলুন কিংবা বলিউডের আইটেম সং–সব জায়গাতেই নারীকে বানিয়ে ফেলা হয়েছে সেক্স অবজেক্ট। নারীর একটাই পরিচয় “যৌনবস্তু”। শুধু যেন পুরুষের যৌনপিপাসা মেটানোর জন্যই পৃথিবীতে তার আগমন। অন্যদিকে পুরুষকে উপস্থাপন করা হচ্ছে বাইসেপ ট্রাইসেপের হাটবাজার বসিয়ে ফেলা একজন মাসলম্যান, একজন সেক্স পাওয়ার হাউয হিসাবে। স্বামী-স্ত্রীর পবিত্র ভালোবাসাটাকে সীমাবদ্ধ করে ফেলা হয়েছে “যৌনতার” মাঝে। যেকোনো মূল্যে পাশবিক উপায়ে একে অপরের দেহকে ভোগ করা, ক্ষণিকের সুখ আদায় করে নেয়াটাই যার শেষ কথা এবং আসল উদ্দেশ্য।
ভালোবাসা যে শুধু দেহের মিলন নয়, ভালোবাসাতে যে মনের মিলনটাই বড় এটা আজ মিথ্যে হতে বসেছে। ভালোবাসার জন্য একসময় পুরুষ দুরন্ত ষাঁড়ের চোখে লাল কাপড় বাঁধতে চেয়েছিল, চ্যালেঞ্জ নিয়েছিল সারা পৃথিবী তন্ন তন্ন করে খুঁজে ১০৮ টি নীলপদ্ম আনার, প্রিয়তমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে রেখে পার করে দিতে চেয়েছিল সারাটি জীবন, নারীরা কথা দিয়েছিল পথ চেয়ে থাকার অনেক অনেক বছর। আজ সেই নারীরাই, আজ সেই পুরুষরাই “ভালোবাসাটাকে” নির্বিকার মুখে ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে ডাস্টবিনে।
পর্ন ভিডিওর নোংরা ফ্যান্টাসির জগৎ থেকে বের হয়ে এসে, ভোগবাদী চিন্তাভাবনাকে দূরে ঠেলে একটু রোমান্টিক হয়ে দেখুন না! স্ত্রীকে ভালোবাসতে আর সম্মান করতে শিখুন রাসূলের মতো করে। পুরস্পরের সীমাবদ্ধতা, দোষ ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দিন। একে অন্যের প্রতি সহনশীল হোন, বিশ্বস্ত হোন।
ভুলে ভরা গল্প লিখতে লিখতে তো পার করে দিলেন অনেক দীর্ঘাত। অযথা ভুলে ভালোবাসার রৌদ্রোজ্জ্বল, শান্ত, নিরুপদ্রপ চেনা উপকূলে আহ্বান করে নিয়ে আসলেন রুদ্র ঝড়ের সংবাদবাহী কালো মেঘ। আর কত? যথেষ্টেরও বেশি কি হয়নি? এবার তবে থামুন। এক জীবনে আর কত বার নষ্ট হবেন?
ফাগুনের তারাভরা একরাতে জ্যোৎস্নায় হেলান দিয়ে বসুন দুজনে। কান্নার রং মুছে ফেলে চোখ রাখুন ওর চোখে। হাওয়ার গল্প শুনে পার করুন কিছুটা সময়। নিজের কর্কশ মুঠিতে, জীবনসাথির কোমল মুঠো নিয়ে বলুন,
“মেয়ে, এখন আমি আমার ভুল বুঝতে পারি। আমার ক্ষমা চাইতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে গা ঝাড়া দিয়ে নোংরামিগুলো ফেলে জীবনের পক্ষে দাঁড়াতে, ভালোবাসার সেই চেনা উপকূলে ফিরে আসতে। ইচ্ছেপূরণের এই দুঃসাহসিক যাত্রায় এভাবেই তোমার হাতটা ধরে রাখতে দেবে না?”