নবম পরিচ্ছেদ – বিবাহ ও দাম্পত্য জীবন
স্ত্রী, পুরুষ পরস্পর দাম্পত্য বন্ধনে আবদ্ধ হওয়াকে নিকাহ বা বিবাহ বলে। মানুষে-মানুষে স্থায়ী মহব্বত বা অকৃত্রিম ভালবাসা জন্মান, সন্তান-সন্ততি উৎপাদন ও কাম্য সাধন এই তিনটিই হইল বিবাহের প্রধান উদ্দেশ্য। তাই কামভাবের উত্তেজনা সহ্য করিতে পারিলেও বিবাহ করা সুন্নত। সহ্য করিতে না পারিলে বিবাহ করা ওয়াজেব বা ফরজ–একান্ত কর্তব্য। আবার খোরপোষে অসমর্থ হইলে বিবাহ করা মাকরূহ।
কামুক মানব কামভাবের উত্তেজনা সহ্য করিতে অক্ষম হইয়া উচ্ছৃঙ্খল হইবে বলিয়াই খোদা তাআলা তৎপূর্বে তাহার ব্যবস্থা করতঃ স্বীয় পবিত্র কালামে ফরমাইয়াছেন :-
“তোমরা (স্বামী-স্ত্রী) একত্রে থাকিয়া (সুখে-শান্তিতে) বসবাস করিবার জন্য (আল্লাহ তালায়া) তোমাদের দেহ হইতে (তোমাদের) জোড়কে (অর্ধাঙ্গিনীকে) সৃষ্টি করিয়াছেন।
সৃষ্টি করিয়া তিনি আবার বলেন :-
“স্ত্রীলোক তোমাদের পোশাক এবং তোমরা স্ত্রীলোকের পোশাক। এইজন্যই স্ত্রীলোককে পুরুষের অর্ধাঙ্গিনী বলা হয় যে, স্ত্রী ব্যতীত স্বামীর যেরূপ দুঃখময় ও অশান্তির জীবন হয়, এরূপ আর কিছুতেই হয় না। সুতরাং পয়গম্বর, পীর, অলী, গাউছ, কুতুব সকলেই এই শান্তির ছায়াতলে আশ্রয় লইয়াছিলেন।
এমন একটি হাদীছ আছে :-
“অবিবাহিত পুরুষের ৭০ রাকাত নামাজ অপেক্ষা বিবাহিত পুরুষের দুই রাকাতই উত্তম। আরও একটি হাদীছে আছে, অবিবাহিত পুরুষের ৮২ রাকাত নামাজ অপেক্ষা বিবাহিত পুরুষের দুই রাকাতই যথেষ্ঠ। হযরত (দঃ) আরও একটি হাদীছে বলেন, সমস্ত পৃথিবীটাই সুখ-ভোগের বস্তু এবং যাবতীয় সুখ-ভোগের বস্তুসমূহের মধ্যে সতী-সাধ্বী নারীই সর্বোৎকৃষ্ট। আরও একটি হাদীছে আছে, একদল সাহাবা দাম্পত্য জীবনকে খোদা-প্রাপ্তি পথের কণ্টক বিবেচনায় উহা পরিত্যাগ করতঃ নির্জনে বসিয়া বসিয়া আল্লাহর ধ্যান করিতেছিলেন। রছুলুল্লাহ (দঃ) তাঁহাদিগকে ডাকিয়া বলিলেন, হে ছাহাবাগণ! তোমাদের রছুল স্বয়ং বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হইয়া সংসার যাত্রা নির্বাহ করতঃ আল্লাহর ধ্যান করিতেছেন, আর তোমরা তাঁহার চেয়েও বড় হইলে? ইহা শুনিয়া ছাহাবাগণ নিজ নিজ ভ্রম ছাড়িয়া রছুলের অনুসরণ করিলেন। কিতাবে আছে, যাঁহারা স্ত্রী, পুত্র, পরিবার ও সংসার ছাড়িয়া নির্জনে গিয়া আল্লাহর উপাসনা করিতেছেন, তাঁহাদের তুলনায় যাঁহারা স্ত্রী, পুত্র, পরিবার লইয়া সংসারযাত্রা নির্বাহ করতঃ খোদা তালায়ার জরুরী উপাসনায় রত আছেন, তাঁহারা (খোদার নিকট) অনেক উচ্চস্তরে আছেন। এমনকি ইহাদের মর্যাদা চার আনা, আর ইহাদের মর্যাদা ১৫।।০ আনা। হযরত (দঃ) আরও একটি হাদীছে বলেন, পরিবারের জন্য নিজে জিনিস-পত্র বহন করিয়া আনিলে ৭০ বৎসরের শাপ মোচন হইয়া যায়। হযরত আলী (রাঃ) বলেন, আল্লাহর দানসমূহের মধ্যে হাছীনা (সতী-সাধ্বী) স্ত্রীর ন্যায় দান আর কিছুই নাই। এই কার্যে এত পূণ্য হয় বলিয়াই হযরত রছুলে মকবুল (দঃ) সাদর সম্ভাষণে বলেন :-
“বিবাহ করা আমার ছুন্নত। যে (বিনা গুজবে) আমার ছুন্নত ছাড়িয়া দিবে সে আমার উম্মত নহে।” আরও একটি হাদীছে আছে, স্বামী-স্ত্রী যখন (হাসি-খুশীতে) দেখা-সাক্ষাৎ করে, তখন আল্লাহ তালায়াও তাহাদের উভয়ের প্রতি রহমতের নজর করে, আরও একটি হাদীছে আছে, বিবাহিত পুরুষের নিদ্রা অবিবাহিত পুরুষের এবাদত অপেক্ষা উত্তম। আরও একটি হাদীছে আছে, যে বিবাহ করে নাই সে শয়তানের সমতুল্য।
পাঠক! উল্লিখিত কোরআনের আয়াত ও হাদীছসমূহের দ্বারা বুঝা যায় যে, বিবাহ করা উত্তম এবাদত, মানসিক দুঃখ নিবারক, হৃদয়ে শান্তিদায়ক ও ধর্মের সহায়ক। অতএব যাহার স্ত্রী নাই তাহার পূণ্য সঞ্চয় অল্প হয়, দুঃখময় জীবন হয়, অশান্তিপূর্ণ ঘর হয়; যদিও সে পার্থিব ধনে ধনবান হয়। তাই বিবাহ করা সকলেরই কর্তব্য।