হাসান খুব অবাক হয়ে লক্ষ্য করল, ইলা অন্তুর মৃত্যু সংবদি খুব সহঞ্জভাবে গ্রহণ করেছে। তার মধ্যে কোন রকম উত্তেজনা বা উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে না। হাসান ভেবেছিল ইলা জানতে চাইবে–কিভাবে মারা গেল? কখন মারা গেল? ইলা সেদিক দিয়ে গেল না। সে শুধু ঠাণ্ডা চোখে তাকিয়ে রইল। জানতে চাইলে হাসান বিপদে পড়ত, কারণ সে নিজেও পুরোপুরি জানে না।
ভাবী, ডেডবড়ি কি নিয়ে আসব?
না। তোমার ভাই চান না। তুমি তো এ বাসার ঠিকানা হাসপাতালে দিয়ে আস। নি। তাই না?
জ্বি-না, আমি ভর্তি করবার সময় শুধু লিখেছিলাম, ঝিকাতলা, ঢাকা। ওর অবস্থা খারাপ ছিল। এত কিছু লেখার সময় ছিল না।
ঠিকানা না দিয়ে ভালই করেছ। তোমার ভাই খুশি হয়েছে।
ডেডবডি কি হাসপাতালেই থাকবে?
থাকুক, তোমার ভাই বলেছে বেওয়ারিশ লাশের জন্যে ওদের অনেক ব্যবস্থা আছে।
ভাবী, আমি তাহলে যাই?
একটু দাঁড়াও। তোমার জন্যে আমি সামান্য একটা উপহার কিনেছি। দেখ তো তোমার পছন্দ হয় কি-না।
ইলা শার্টের প্যাকেটটা হাসানের দিকে বাড়িয়ে দিল। হাসনি অবাক হয়ে প্যাকেটটা নিল।
আমি তো তোমার মাপ জানি না। অনুমানে কিনেছি। পরে দেখ হয় কি না। না হলে বলবে, তোমাকে নিয়ে গিয়ে বদলে নিয়ে আসব।
হাসান ধন্যবাদ-সূচক কিছু বলতে গেল, বলতে পারল না। সে কিছুই বুঝতে পারছে না। আজ এই চমৎকার মেয়েটা এমন আচরণ করছে কেন?
ইলাকে আজ তার কাছে লাগছেও অন্য রকম। মুখ ফোলা ফোলা। চোখের নিচে কালি পড়েছে। হাসানের খুব ইচ্ছা করছে জিজ্ঞেস করে, আপনার কি হয়েছে? জিজ্ঞেস করতে পারছে না।
ভাবী যাই?
আচ্ছা যাও।
হাসান গেল না। দাঁড়িয়ে রইল। ইলা বলল, কিছু বলবে হাসান?
জ্বি-না।
আমি তোমার চাকরির কথা তোমার ভাইকে কিছু বলি নি। ওকে বললে কোন লাভ হবে না। আমি অন্য একজনকে বলব। তাঁকে বললে কাজ হবে। যাকে বলব তাঁর ক্ষমতা খুবই সামান্য। তবু উনি কিছু কিছু জোগাড় করে দেবেন।
কবে কথা বলবেন?
খুব শিগগিরই বলব।
আপনি বরং একটা চিঠি লিখে দিন। আমি হাতে হাতে দিয়ে আসব। আমি এখানে আর থাকতে পারছি না ভাবী।
আচ্ছা তুমি একটু ঘুরে আস। ঘণ্টা খানিক পরে খোঁজ নিও। লিখে রাখব।
জ্বি আচ্ছা।
ইলা দরজা বন্ধ করল। সঙ্গে সঙ্গে চিঠি নিয়ে বসল না। চোখে-মুখে খানিকটা পানি দিল। রান্নাঘরে ঢুকে চায়ের পানি বসাল। চা খেতে ইচ্ছা করছে। চুলায় চায়ের পানি ফুটছে, সে গিয়ে অন্তুর বেতের স্যুটকেসটা খুলল। এই স্যুটকেসটা ইলার, সে অন্তুকে দিয়েছে। স্যুটকেস খুব সুন্দর করে গোছানো। যে সব জিনিস অন্তুর মনে ধরেছে সবই সে স্যুটকেসে তুলে রেখেছে। চায়ের একটা চামচ ভেঙে গিয়েছিল। চামচের সেই মাথা অতি যত্নে তুলে রাখা হয়েছে। জামানের জুতার ফিতা ছিঁড়ে গিয়েছিল। নতুন ফিতা কিনেছে। পুরানো ফিতা ফেলে দিয়েছিল। সেই ফেলে দেয়া ফিতাও স্যুটকেসে রাখা আছে। ইলা যে পাঁচ টাকার নোটটা দিয়েছিল সেটা একটা খামে ভরা। ইলা তার একটা ছবিও খুঁজে পেল। ছবির অর্ধেকটা ছেড়া। তার এবং জামানের পাশাপাশি বসে তোলা বিয়ের সময়কার ছবি। কোত্থেকে অন্তু পেয়েছে কে জানে। ছবির একটি অংশ সে নষ্ট করে ফেলেছে–প্রিয় অংশটি রেখে দিয়েছে।
ছেলেটার নিশ্চয়ই বাবা আছে, মা আছে, ভাইবোন আছে। মরবার সময় তাকে মরতে হয়েছে একদল অপরিচিত মানুষদের মধ্যে। ইলা পাশে থাকলে কি লাভ হত? সে কি বলতে পারত–অমিয়া শোন, এই পৃথিবী তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। এই কষ্ট তোমার প্রাপ্য ছিল না। আমি পৃথিবীর পক্ষ থেকে তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। নাও, তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরে থাক। পৃথিবী ছেড়ে যাবার সময় অতি প্রিয় একজন কাউকে জড়িয়ে ধরে থাকতে হয়–
ইলা স্যুটকেস বন্ধ করে উঠে গেল। চা বানাল। শপ্তি ভঙ্গিতে চা খেয়ে চিঠি লিখতে বসল। সে অনেক দিন ভেবেছে–নাসিম ভাইকে একটা চিঠি লিখবে। একটিই চিঠি। প্রথম এবং শেষ। সেই চিঠিটি আজই লেখা হোক।
ইলা নিজের স্যুটকেস খুলল। এখানে চিঠি লেখার জন্যে খুব দামী কাগজ আছে, খাম আছে। কলম আছে। কোনটাই কখনো ব্যবহার করা হয় নি। ইলা চিঠি শুরু করল খুব ঘরোয়া ভঙ্গিতে–
নাসিম ভাই,
আমার সালাম নিন। চিঠি দেখে নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন। জরুরী কারণে লিখতে বাধ্য হচ্ছি–। যে ছেলেটা চিঠি নিয়ে আপনার কাছে যাচ্ছে, সে খুব সমস্যায় আছে। আপনি তার কোথাও থাকার ব্যবস্থা করে দেবেন। এবং কোন একটা চাকরি বাকরির ব্যবস্থা করে দেবেন। কিভাবে করবেন তা আমি জানি না। বুঝতে পারছি চিঠি এই পর্যন্ত পড়েই আপনি আমার উপর খুব রেগে গেছেন। চেঁচিয়ে বাবু ভাইকে বলছেন–ইলাটার যে মাখা খারাপ তা তো জানতাম না। আমার নিজের নেই ঠিক, আমি অন্যকে কি চাকরি দেব?
আমি জানি কিছু একটা ব্যবস্থা হবেই। তাছাড়া শুনলাম–আপনারা ভাতের হোটেল দিচ্ছেন। সেখানেও তার একটা ব্যবস্থা হতে পারে। সে না হয় বাজার থেকে চাল কিনে আনবে–আপনারা দুই বন্ধু সেই চাল ফুটিয়ে ভতি করবেন–সেই ভাত বিক্রি হবে। আপনি নিশ্চয়ই রাগ করছেন। আমি ঠাট্টা করছি। আপনার সঙ্গে তে মুখোমুখি আমি কখনো ঠাট্টা করি না। আজ করলাম। তা ছাড়া–এম্নিতে আপনাকে আমি তুমি করে বলি–চিঠিতে আপনি লিখছি। প্রভেদটা কি আপনার চোখে পড়েছে?
নাসিম ভাই আজ আমার খুব কষ্টের একটা দিন। আমার বাসার কাজের ছেলেটা মারা গেছে। ওর নাম অন্তু মিয়া। একদিন ভিক্ষা করতে এসেছিল, আমি ভাত-তরকারী খেতে দিয়ে বললাম, কাজ করবি অন্তু? সে হাসতে হাসতে বলল, দ্ধে না। খেয়ে-দেয়ে চলে গেল। সন্ধ্যাবেলা একটা মাদুর নিয়ে উপস্থিত। সে থাকবে। ছেলেটা হাসপাতালে মারা গেছে। আমি তাকে দেখতেও যাই নি। আপনি হলে কি করতেন আমি জানি। হাসপাতালে ছোটাছুটি করে হৈ-চৈ করে একটা কাণ্ড ঘটাতেন। মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর–শব্দ করে কাঁদতে শুরু করতেন। চারপাশে লোক জমে যেত।
ভাইয়া একবার খাঁচা ভর্তি মুনিয়া পাখি কিনে আনল। কয়েকদিন যেতেই একটা পাখি অসুস্থ হয়ে গেল। সে অন্য পাখিগুলি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিল। তার পালক ফুলে গেল। সে একা একা মৃত্যুর জন্য তৈরি হল। একটি পাখিও তাকে দেখতে আসে না। পাখিদের এই অদ্ভুত সাইকোলজিতে আমরা সবাই খুব মজা পেলাম। আপনাকে যখন বলা হল–আপনি মোটেই মজা পেলেন না। অসম্ভব দুঃখিত হলেন। অসুস্থ পাখিটাকে বাঁচাবার জন্যে আপনার সে কি চেষ্টা। দেশে পশু ডাক্তার আছে, পাখি ডাক্তার নেই বলে আপনার কি রাগারাগী। পাখিটা মারা গেল আপনার কোলে। আপনার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগল। রেগে অস্থির হয়ে ভাইয়াকে বললেন–গাধা তোকে কে পাখি কিনে আনতে বলেছে?
আপনি যে কি চমৎকার একজন মানুষ তা কি আপনি জানেন নাসিম ভাই? জানেন না। বাবু ভাইয়াও অসাধারণ একজন মানুষ। আপনাদের দুজনকে এক সঙ্গে দেখলে আমার কি যে ভাল লাগে।
আমি খুব সাধারণ একটি মেয়ে বলেই অসাধারণ মানুষদের অবাক হয়ে দেখি। আমি আপনাকে অবাক হয়ে দেখতাম। অসাধারণ মানুষদের স্বপ্নগুলিও খুব অসাধারণ হয়। কিন্তু আশ্চর্য আপনাদের দুজনের স্বপ্নগুলি খুবই সাধারণ। ভাতের হোটেল দেয়াতেই স্বপ্নের শেষ। অথচ আমি কত সাধারণ একটা মেয়ে, কিন্তু অসাধারণ আমার স্বপ্ন স্বপ্নটা কি আপনাকে বলি। আমি শহর থেকে অনেক দূরে বিরাট জায়গা জুড়ে একটা বাগান বাড়ি করব। সেই বাড়িতে থাকবে অসংখ্য ঘর। কিন্তু মানুষ মাত্র দুজন। বাড়ির চারদিকে ঘন বন। পেছনে বিশাল এক পুকুর। পুকুর ভর্তি জলপদ্ম। জানি না জলপদ্মের ধারণী হঠাৎ কি করে আমার মাথায় এল। এমন না যে আমি খুব কাব্যিক স্বভাবের মানুষ। হয়ত ছোটবেলায় কোন একটা গল্পের বইয়ে জলপদ্মের কথা পড়েছিলাম। কিংবা কে জানে হয়ত বাবার কাছে জলপদ্মের গল্প শুনেছি। সেটাই মাথায় ঢুকে গেছে।
আপনার কি মনে আছে, আমি একদিন আপনাকে বললাম, নাসিম ভাই আমাকে একদিন জলপদ্ম দেখিয়ে অনিবে? আপনি বিরক্ত হয়ে বললেন, জলপদ্ম আমি পাব কোথায়?
বলধা গার্ডেনের পুকুর আছে।
আমার খেয়ে-দেয়ে কাজ নেই তোকে নিয়ে বলধা গার্ডেনে ঘুরে বেড়াব। যা ভাগ।
আমি কিন্তু ঘ্যানঘ্যান করতেই থাকলাম। শেষ পর্যন্তু বিরক্ত হয়ে আমাকে নিয়ে গেলেন। সেদিন বলধা গার্ডেন বন্ধ ছিল। আমরা ঢুকতে পারলাম না। আপনি বিরক্ত হয়ে বললেন, হল জলপদ্ম দেখা? চল এখন বাসায় ফিরি। দিনটা নষ্ট হল। এখন তো জায়গা চিনে গেলি। কাল একবার এসে দেখে যাস। ধর এই কুড়িটা টাকা রেখে দে–রিক্সা ভাড়া।
নাসিম ভাই জলপদ্ম আমার দেখা হয় নি। অলপদ্ম আমি আপনার সঙ্গে দেখতে চেয়েছিলাম। কিছু কিছু জিনিস আছে একা দেখা যায় না। দুজ্জনে মিলে দেখতে হয়।
আজ আপনাকে এসব লেখা অর্থহীন। তবু লিখলাম। যদি অন্যায় করে থাকি ক্ষমা করবেন। আমি আমার জীবনে বলতে গেলে কোন অন্যায়ই করি নি। একটা না হয় করলাম। তাতে ক্ষতি যদি কারো হয়–আপনার হবে। আপনার খানিকটা ক্ষতি হলে, হোক না।
আমার বিয়ের দিন আপনি যখন বরযাত্রী খাওয়ানো নিয়ে খুব ব্যস্ত তখন আমি রুবাকে দিয়ে আপনাকে ডেকে পাঠালাম। আমি সেজেগুজে খাটে বসে আছি। আপনি ঘরে ঢুকে আমাকে দেখে হকচকিয়ে গেলেন। নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, ডেকেছিস কেন?
বিয়ে হয়ে চলে যাচ্ছি–আর তো দেখা হবে না। সালাম করবার জন্যে ডাকলাম।
আমি আপনার পা ছুঁয়ে সালাম করলাম। ঘর ভর্তি লোকজন। আপনি অপ্রস্তুত মুখে হাসছেন। আমি বললাম, নাসিম ভাই, তুমি এমন কাঠের মত দাঁড়িয়ে আছ কেন? মাথায় হাত দিয়ে দোয়া কর। নাকি আমি এতই খারাপ মেয়ে যে আমার মাথায় যুক্তি দেয়া যাবে না?
আপনি আমার মাথায় হাত দিলেন। কি দোয়া করেছিলেন আপনি? প্রিয়জনদের দেয়া কখনো ব্যর্থ হয় না। এই পৃথিবীতে আপনার চেয়ে প্রিয়জন আমার কে আছে? আপনার দোয়া ব্যর্থ হল কেন বলুন তো?
দরজায় শব্দ হচ্ছে। ইলা দরজা খুলল। হাসন দাঁড়িয়ে আছে।
চিঠিটা কি শেষ হয়েছে ভাবী?
হ্যাঁ।
তাহলে খামের উপর ঠিকানা লিখে দিন। আমি নিয়ে যাই।
ইলা খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, চিঠি দেব না। আমি মুখেই বলব। তুমি। চিন্তা করে না। একটা ব্যবস্থা হবেই।
জ্বি আচ্ছা ভাবী।
আরেকটা কথা হাসান–আমাদের পেছনের বাড়ির ফ্ল্যাটে যে ছেলে তিনটা ঢুকেছিল–তাদের তুমি দেখেছ–তাই না?
জ্বি।
তাদের তুমি চেন। অন্তত একজনকে খুব ভাল করে চেন। চেন না?
জ্বি।
পুলিশকে বল নি কেন?
সাহস নাই ভাবী।
ইলা কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে বলল, তোমাকে একটা মজার কথা বলি। ছেলে তিনটাকে আমিও দেখেছি। ঐদিন আমি পেছনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। ওরাও আমাকে দেখেছে। ওরা ঐ বাড়ি থেকে কিছু নিয়ে যায় নি। ওদের সঙ্গে টেলিভিশন সেট ছিল না।
জ্বি ভাবী আমি জানি।
আচ্ছা ঠিক আছে হাসান। তুমি যাও। আমার মাথা ধরেছে–আমি শুয়ে থাকব।
আপনার কি শরীর খারাপ ভাবী?
একটু বোধহয় খারাপ।
ডাক্তার ডেকে আনব?
না ডাক্তার লাগবে না।
ইলা দরজা বন্ধ করে চিঠির কাছে ফিরে এল। কয়েকটা লাইন বাকি আছে। সেই বাকি লাইনগুলি লিখতে ইচ্ছা করছে না। তার খুব খারাপ লাগছে। চিঠি কুচি কুচি করে ছিড়ল। ছোঁড়া টুকরোগুলি নিজের স্যুটকেসে রেখে ঘুমুতে গেল।
দুপুরে রান্না হয় নি। রান্না করতে ইচ্ছা করছে না। জামান বলে গেছে–আজ দুপুরে বাসায় খাবে তৃবু রান্নাঘরে যেতে ইচ্ছা করছে না। শরীরটা এত খারাপ লাগছে
ইলার ঘুম ভাঙল কলিং বেলের শব্দে। একটানা বেল বেজেই যাচ্ছে। বেজেই যাচ্ছে। ইলা উঠে গিয়ে দরজা খুলল–জামান দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখ কঠিন। সে ইলার দিকে অদ্ভুত চোখে তাকাচ্ছে।
অনেকক্ষণ ধরে বেল বাজাচ্ছি। কি করছিলে?
ঘুমুচ্ছিলাম।
দুপুর বেলা ঘুমুচ্ছ?
আমার শরীরটা ভাল না। আমি আজ কিছু আঁখি নি। তুমি হোটেল থেকে কিছু খেয়ে এস।
তোমার ভাই এসেছিল আমার কাচ্ছে। আমার অফিসে।
ও।
কি জন্যে এসেছি জিজ্ঞেস করলে না?
কি জন্যে?
দুহাজার টাকার জন্যে এসেছিল–পুলিশকে মা-কি ঘুষ দিতে হবে। তার যে বন্ধু আছে নাসিম। বিজনেস পার্টনার। ওকে পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে। এখন আছে লালবাগ থানা হাজতে। টাকা আমি তাকে দেই নি, কারণ আমার ধারণা তার কাছে টাকা আছে। না থাকলে কিছুদিন পরপর বোনকে টাকা দেয় কি করে? ঠিক না ইলা?
হ্যাঁ ঠিক।
নিটে হাসানের সঙ্গে দেখা হল। গায়ে নতুন শার্ট। আমাকে দেখে খুব খুশি হয়ে বলল–তুমি কিনে দিয়েছ। শার্টটার কত দাম পড়ল?
তিন শ একুশ।
এরকমই হবার কথা, বিদেশী জিনিস। ইলা, তোমার সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে।
বল।
এখন না। এখন আমি বেরুব। জয়দেবপুর যাব। রাত এগারটার দিকে ফিরব। তখন কথা হবে।
আচ্ছা আমি হাসানকে বলব গেট খোলা রাখতে।
তুমি আমাকে বোকা ভাবলে কেন ইলা?
আমি কাউকে বোকা ভাবি না।
আমাকে ভেবেছ। তুমি ভেবেছ মানিব্যাগ চুরির ব্যাপারটা আমি কখনো ধরতে পারব না।
দুজন তাকিয়ে আছে দুজনের দিকে। এক সময় জামান উঠে দাঁড়াল। ইলা বলল, আজ আমি যাত্রাবাড়িতে আমার মার কাছে যাব। আজ আমার বাবার মৃত্যু বার্ষিকী। আমি ফিরে আসব। রাত এগারটার আগে অবশ্যই ফিরে আসব।
জামান বিচিত্র ভঙ্গিতে হসিল। জামানকে অবাক করে দিয়ে ইলাও তার দিকে তাকিয়ে হাসল। কেন জানি এই মানুষটাকে তার এখন আর ভয় করছে না।