০৯. হাতে একটা কমলালেবু

হাতে একটা কমলালেবু নিয়ে টগর বসে আছে। টগরের গায়ে লাল একটা সোয়েটার। কত দ্রুতই না বড় হয়ে যাচ্ছে ছেলেটি। শিশুরা বোধ হয় সময়কে পেছনে ফেলে এগুতে থাকে।

রোদ এসে পড়েছে তার চোখে-মুখে। সে তাকিয়ে আছে রাস্তার দিকে। গভীর মনোযোগে কী যেন দেখছে সে।

দরজার আড়াল থেকে রানু দৃশ্যটি দেখল। এত মন দিয়ে সে কী দেখছে। রাস্তার ওপাশে পা ছড়িয়ে একটা কুকুর রোদ পোহাচ্ছে। এছাড়া দেখার মত কোথাও কিছু নেই।

এমন অদ্ভুত হচ্ছে কেন ছেলেটা? ঘুম থেকে উঠেছে ছটায়, এখন বাজে দশটা। কমলা হাতে বসে আছে, একবারও বলেনি খুলে দাও। যেন হাতে নিয়ে বসে থাকতেই আনন্দ। রানু ডাকল, টগর। সে ফিরে তাকাল এবং ফিক করে হেসে ফেলল।

কমলা খুলে দেব?

দাও।

রোদে বসে আছে কেন? একটু সরে ছায়াতে বাস।

টগর বাধ্য ছেলের মত সরে বসল। রানু কমলার খোসা ছড়াতে ছড়াতে বলল, এখন তোমার শরীর ভাল তাই না টগর?

হ্যাঁ।

নাও কমলা নাও। দেখি কাছে আসত, গা গরম কী না দেখি। না জ্বর নেই। টগর খোসা ছাড়ানো কমলা হাতে ঠিক আগের জায়গায় গিয়ে বসল। ঠিক আগের মতই তাকিয়ে রইল রাস্তার দিকে। রানু বলল, হাতে নিয়ে বসে আছ কেন খাও। খেয়ে আমাকে বল মিষ্টি না টক।

মিষ্টি।

রাস্তায় কী দেখছি তুমি?

টগর লজ্জিত ভঙ্গিতে হাসল। সব শিশুরাই কী এমন চমৎকার করে হাসে?

না টগর একাই এমন হাসতে পারে? কী সুন্দর টোল পড়ছে। চিবুকে।

রানু ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলল। টগর বলল, পানি খাব।

শোবার ঘরে অপলা চেঁচিয়ে পড়ছে। তার পড়ার ভঙ্গি ও অদ্ভুত। চেচিযে চেঁচিয়ে এবং হোেট হেঁটে না পড়লে তার নাকি পড়া মুখস্থ হয় না। কেউ যে পড়াশোনা এত সিরিয়াসলি নেয় তা রানুর জানা ছিল না। আপলার মেট্রিক বা ইন্টারমিডিয়েট রেজাল্ট এমন কিছু আহামারি নয়। কিন্তু মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় সে প্রথম হয়েছে। ক্লাসের পড়াশোনা এখনও শুরু হযনি। কিন্তু আপলার ভাবে মনে হচ্ছে সামনেই ফাইনাল। রানু বলল, টগরকে এক গ্লাস পানি এনে দে তো অপলা। দরজার পাশ থেকে রানুর নড়তে ইচ্ছে হচ্ছে না। টগর রাস্তা থেকে কখন চোখ ফিরিয়ে নেয়। তাই তার দেখার ইচ্ছা।

টগর এক চুমুক পানি খেয়েই গ্লাস সরিয়ে দিল। অপলা বলল, টগর আমাকে একটা কোয়া দে তো দেখি। মিষ্টি আছে?

হ্যাঁ।

খুব মিষ্টি?

হুঁ খুব মিষ্টি।

ওয়াক থু। তেঁতুলের মত টক। তুই এটাকে বলছিস মিষ্টি। একটা চড় খাবি।

টগর খিলখিল করে হেসে উঠল। যেন এ রকম মজার কথা সে আর শোনেনি। হাসি থামিয়ে সে হঠাৎ গম্ভীর হয়ে বলল, খালামণি, আমাকে কোলে নাও।

পড়া বন্ধ করে আমি এখন বাবু সাহেবকে কোলে নেই। সখা কত।

একটু নাও।

এখন না, পড়া শেষ হোক।

অপলা ভেতরে ঢুকে গেল। রানু তাকিয়ে আছে টগরের দিকে। টগরের মুখ উজ্জ্বল হয়ে আছে। অপলার সঙ্গে তার সম্পৰ্পক বেশ আন্তরিক। কিন্তু রানুর সঙ্গে নয়। রানুকে সে কী একটু ভয় করে? মার সঙ্গে তার কী কোন দূরত্ব তৈরি হয়েছে? রানু বলল, আমার কোলে উঠতে চাও? টগর লজ্জিত ভঙ্গিতে মাথা নিচু করল। সে কী চায় নাকি? মার চেয়ে সে-কি বাবাকেই বেশি পছন্দ করে?

টগর!

উঁ।

বেড়াতে যাবে আমার সাথে?

হুঁ।

কোথায় যেতে চাও বল। তুমি যেখানে যেতে চায় সেখানেই নিয়ে যাব। বল কোথায় যাবে?

এই প্রশ্নটি উদ্দেশ্যমূলক। রানু দেখতে চায় টগর তার বাবার কাছে যাবার কথাটি কী ভাবে বলে। কিন্তু শিশুরা খুব সাবধানী। জীবনের কিছু কিছু জটিলতা তারা ভালই বুঝতে পারে। টগর তার বাবার কাছে যাবার কথা কিছুই বলল না। চোখ মিটমিট করতে লাগল।

বলো কোথায় যাবে?

তোমার ইচ্ছা।

আমার ইচ্ছা মানে? তোমার নিজের কোনো ইচ্ছা নেই?

টগর কোনো কথা বলল না। রানু বলল, বাবার কাছে যাবে? টগর তাকিয়ে আছে তার দিকে। যেন ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না। ঠাট্টা ভাবছে হযত।

যাবে?

সে মাথা নাড়াল। রানু বলল, মাথা নাড়ােনাড়ি নয়। পরিষ্কার করে বল। যাবে?

হুঁ।

ঠিক আছে নিয়ে যাব। তোমাকে ও বাড়িতে রেখে চলে আসব। যতক্ষণ ইচ্ছা তুমি থাকবে। তারপর তোমার বাবা তোমাকে দিয়ে যাব।

টগর তাকিয়ে আছে উজ্জ্বল চোখে। শিশুরা মনের মধ্যে অনেক কিছু পুষে রাখে। বাবার কাছে যাওয়াটা যে টগরের কাছে এত বড় একটা ব্যাপার তা সে কখনো বুঝতে দেয়নি।

রানু এ বাড়িতে প্রায় ছ’মাস পড়ে এসেছে। গেটের সামনে দাঁড়িযে তার মন খারাপ হল। সব কিছু অবিকল আগের মত আছে। কিছুই বদলায় নি। সে-কী। আশা করছিল। এই ছমাসে সব বদলে যাবে?

আকবরের মা বারান্দায় দাঁড়িয়ে ওদের রিকশা থেকে নামতে দেখছে। রানুকে দেখে সে ঠিক বিশ্বাস করতে পারেনি। কিংবা বিশ্বাস করলেও এতই হকচাকিযে গিয়েছে কী করবে বুঝে উঠতে পারছে না। এমন সময় সে সম্বিৎ ফিরে পেল। প্ৰায পাগলের মত সিঁড়ি ভেঙে নামতে লাগল। রানুর প্রতি মুহূর্তে ভয় হচ্ছিল সে সিঁড়িতে একটি পতনের শব্দ শুনবে এবং আকবরের মা বালির বস্তার মত গড়িয়ে পড়বে। রানু, টগরের হাত ধবে দাড়িযে ছিল। টগর হাত ছাড়িয়ে ছুটে গোল সিঁড়ির দিকে। যেন এই মুহূর্তে তার মাকে প্রযোজন নেই।

ওসমান সাহেব বাসায্য নেই। রানু খানিকটা স্বস্তি বোধ করল। কী অবস্থা হয়ে আছে বাড়ির। মশারি তোলা হয়নি, ঘরময় সিগারেটের ছাই। এক গাদা বই বিছানায় ছড়ানো। টেবিল ল্যাম্প জ্বলছে। এখনো নেভানো হয়নি।

ঘরের এ অবস্থা কেন আকবরের মা?

আকবরের মা প্রশ্নটা না শোনার ভান করল।

এ ঘর কতদিন ধরে এরকম?

কালকেই পরিষ্কার করছি। একদিনে এই অবস্থা।

ও গিয়েছে কখন।

খুব ভোরে। নাস্তাও খায় নাই।

এতক্ষণ তুমি কী করছিলে? কোনো ভদ্রলোকের বাড়ি সকাল বেলা এ রকম থাকে? কী আশ্চর্য।

রানুর বিরক্তির সীমা রইল না। যদিও এ বাড়ি অপরিষ্কার থাকলে তার কিছুই যায় আসে না। তবু এ রকম একটা অবস্থা সহ্য করা মুশকিল। বাথরুমে ভেজা কাপড় ছাড়ানো। বেসিন নোং হয়ে আছে। রানু বলল, ও আসবে কখন?

আফা, কিছুই কইয়া যায় নাই।

ঘর-দোয়ার যে এরকম করে রাখি সে কিছু বলে না?

আকবরের মা চুপ করে রইল।

জীতু মিয়া কোথায়?

বাজারে গেছে।

সমস্ত ঘর আজ পরিষ্কার করবে। পানি দিয়ে মুছবে। কাঁপেট রোদে দিবে। বাথরুম পরিষ্কার করবে।

জি আইচ্ছা।

আকবরের মা হেসে ফেলল এবং সঙ্গে সঙ্গেই হাসি গোপন করার জন্যে অন্যদিকে মুখ ফেরাল। সেকি ভাবছে রানু ফিরে এসেছে? বসার ঘরে টেলিফোন বাজছে। আকবরের মা টগরকে কোলে নিয়ে ঘুরছে। রানু বিরক্ত মুখে বলল, টেলিফোন ধরছ না কেন?

টেলিফোন ধরতে আমাকে নিষেধ করছে।

কেন? নিষেধ করছে কেন?

মিলা আফা রোজ টেলিফোন করে। ভাইজান রাগ হইছে।

ছোট বোন টেলিফোন করলে রাগ করবে। কেন? এসব কী ধরনের কথা?

রানু এগিযে গিয়ে ফোন ধরল। মিলিই করেছে। মিলি অবাক হয়ে বলল, কে ভাবী?

হ্যাঁ।

তুমি এখানে কেন?

টগরকে নিয়ে এসেছি। কাঁদছিল।

তোমার সঙ্গে আমার অনেক কথা আছে ভাবী, তুমি থাক কিছুক্ষণ। আমি আসছি।

আমি বেশিক্ষণ থাকব না মিলি। আমি এক্ষুণি রওনা হচ্ছি।

ঠিক আছে ভাইয়াকে দাও। তার সঙ্গে আমার খুব দরকারি কথা।

ও তো বাসায় নেই।

ভাবী শোন, ভাইয়া আমার সঙ্গে এত খারাপ ব্যবহার করে কেন?

টেলিফোন করলেই সে রিসিভার নামিয়ে রাখে। বাসায় বলে দিয়েছে। আমি টেলিফোন করলে বলতে সে বাসায় নেই। সে এরকম করছে কেন?

তোমার ভাই তুমি ভাল বলতে পারবে।

বাবুর জন্যে একটা নাম চাচ্ছি দুমাস ধরে। প্রথম অক্ষর হবে মা, এটা দিচ্ছে না। শুধু ঘুরাচ্ছে।

তার কাছ থেকে নাম দিতে হবে এমন তো কোন কথা নেই। তোমরা একটা নাম দিয়ে দাও।

তুমি বুঝতে পারছি না ভাবী,-আমি সবাইকে বলেছি আমার ভাই নাম রাখছে। এখন তার আকিকা হচ্ছে সামনের মাসে তিন তারিখে, এগারো দিন মোটে আছে।

মিলি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। তারপর পরই রানু শুনল মিলি কাঁদছে। রানু বিরক্ত স্বরে বলল, কাদছ কেন তুমি? এখানে কাদার মত কী হল? মিলি ধরা গলায় বলল, গতকাল সকাল বেলায় টেলিফোন করেছিলাম, ভাইয়া বলল, নাম রাখ মাকাল। মা দিয়ে শুরু। রানু বেশ অবাক হল। এরকম নীচ ধরনের রসিকতা করবার লোক সে নয়। এবং মিলিকে সে যথেষ্টই পছন্দ করে। তাহলে এরকম কথা বলার মানে!

রানু বলল,–মিলি, তুমি নিজে একটা সুন্দর নাম রাখ, তারপর সবাইকে বল তোমার ভাই এই নাম রেখেছে। ঠিক আছে?

আচ্ছা।

এখন তাহলে রাখি?

তুমি নিজেও আমাকে দশ বারটা নাম দিবে ভাবী। মা দিয়ে শুরু হবে। এবং তিন অক্ষরে হবে।

এত বাধ্যবাধকতা কেন? নামের মত সামান্য ব্যাপার নিয়ে এত রকম কন্ডিশন দেয়া ঠিক না।

নামে কিছু না আসলে গেলে তুমি তোমার ছেলের জন্য এত সুন্দর নাম রাখলে কেন?

আমি রাখিনি তোমার ভাইয়ের নাম।

সে তার নিজের ছেলের জন্যে রাখবে। আর আমার বাবুর জন্যে রাখবে না কেন?

রানু একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল। মিলি বড় ঝামেলা করে। তার সঙ্গে টেলিফোন কথা বলা মানেই হচ্ছে সমস্তটা দিন মাটি। তাও একবারে তার কথা শেষ হবে না। টেলিফোন নামিয়ে রাখার কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার রিং করবে।

আফা আপনার চা।

শুধু চা নয়। সঙ্গে বিসকিট চানাচুর। একটা ট্রেতে করে বেশ সাজিয়ে গুছিয়ে এনেছে। রুপোর টে। রানু তীক্ষু কণ্ঠে বলল, কতবার বলেছি। এই ট্রেট। কখনো বের করবে না। বলিনি?

আকবরের মা জবাব দিল না।

টগর কোথায়?

ঘুমাইতাছে।

এখন ঘুমাচ্ছে কী? এখন ঘুমাবার সময়?

নিজে নিজে গিয়া বিছানায় শুইছে। এখন গিয়া দেখি ঘুমাইতাছে। আবার ঘুমের মইধ্যে হাসে।

টগর শুয়েছে তার ছোট খাটে। আরাম করে ঘুমুচ্ছে। নিজের বাড়িতে ফিরে আসার আনন্দেই ঘুম এসে গেছে বোধ হয়। রানু, টগরের কপালে হাত রেখে উত্তাপ দেখল গা ঠাণ্ডা। সে মৃদু স্বরে ডাকল টগর, বাড়ি যাবে না? টগর জবাব দিল না। সত্যি সত্যি ঘুমুচ্ছে, ভান নয়।

আফা বাজার আসছে।

বাজার আসছে ভাল কথা, আমাকে ডাকািছ কেন?

কী রানমু কন।

রোজ দিন যা রাঁধ তাই রাধবে। আমাকে জিজ্ঞেস করছি কেন? ঘর পরিষ্কার করেছ?

জি না।

আগে ঘর ঠিকঠাক কর। এ রকম নোংরা বাড়িতে আমি দাঁড়িয়েই থাকতে পারছি না। গা ঘিন ঘিন করছে।

আকবরের মা ভয়ে ভয়ে বলল আফা আপনে দুপুরে খাইতেন না?

না। আমি দুপুবে খাব না। টগরের ঘুম ভাঙলেই চলে যাব।

বাজার দেখতেন না?

জীতু মিয়া পর্দার আড়াল থেকে উঁকি দিচ্ছিল। রানু বলল, কেমন আছিস তুই? দেখি এদিকে আয়, তো! জীতু মিয়া এগিয়ে এসে টপ করে পা ছুঁয়ে সালাম করল।

টগর নির্বঘ্নে ঘুমুচ্ছে। নিশ্চিন্ত আবামের ঘুম। রাণু তার পাশে কিছুক্ষণ বসল। তারপর বারান্দায গিয়ে বসল খানিক্ষণ। এখানে কিছু ফুলের টবি ছিল; দু’টি ধ্বজনীগন্ধার ঝাড় শুকিযে কাঠ হয়ে আছে। পানি-টানি দেয়া হয় না।

ওসমান সাহেব বারটার দিকে এলেন। কিছু কিছু মানুষ কখনও অবাক হয় না। তিনিও কী সে রকম? রানুকে চেযার পেতে বারান্দায় বসে থাকতে দেখে একটুও অবাক না হয়ে বললেন, কেমন আছ?

–ভাল।

টগরকে নিয়ে এসেছ?

হ্যাঁ। ঘুমুচ্ছে।

শরীর ঠিক আছে তো?

ঠিকই আছে।

তিনি লজ্জিত ভঙ্গিতে বললেন, তুমি আসবে জানলে ঘর-দোয়ার ঠিকঠাক করে রাখতে বলতাম। আঁস্তাকুড় বানিয়ে রেখেছে।

এদের কিছু বল না কেন?

প্রথম প্রথম বলতাম। এখন বলি না। মানুষের এক সময় সব কিছুই অভ্যেস হয়ে যায়।

কিছু কিছু জিনিস অভ্যাস হওয়া ঠিক না। নোংরামি হচ্ছে তার মধ্যে একটা।

তিনি অল্প হাসলেন। হাসি মুখেই বললেন, তুমি না এলে আজ তোমার ওখানে যেতাম। যদিও আজ বুধবার না। তবে আজকের দিনটা ইম্পর্টেন্ট। আমার একটা বই রাশিয়ান ভাষায় অনুবাদ হবে বলে খবর পাওয়া গেছে। ফাইন্যাল কিছু না অবশ্যি।

কোন বইটা?

আন্দাজ করে তো কোনটা?

রানু কিছু বলল না। ওসমান সাহেব বললেন, চা-টা কিছু খেয়েছ?

হ্যাঁ।

আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকলে কেমন হয় রানু? রাতে কোন একটি ভাল রেস্টুরেন্ট…

রানু সে প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বিরক্ত স্বরে বলল, মিলি টেলিফোন করেছিল। সে তার বাবুর জন্যে একটা নাম চেয়েছে আর তুমি বলেছ মাকাল নাম রাখার জন্যে, এর মানে কী?

ওসমান সাহেব বিস্মিত হয়ে বললেন, এ রকম ক্রুয়েল রসিকতা কারো সঙ্গেই করি না। মিলি বানিয়ে বানিয়ে অনেক কিছু বলে। ওর কথা বাদ দাও। আমার প্রশ্নের জবাব দাও। থাকবে। আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত?

মিলি চুপ করে বাইল। ওসমান সাহেব বললেন, আমি কখনো তোমার কাছে বেশি কিছু চাইনি, চেয়েছি?

এত প্যাচাল প্রশ্নের দরকার নেই। যা বলতে চাও সরাসবি বল?

তিনি নরম করে বললেন, তুমি থাকবে আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত?

না। এখানে এসেছি বলেই তুমি অন্য রকম ভাবতে শুরু কবেছ। অন্য রকম ভাবার কোনো কারণ নেই। আমি যা করেছি। খুব ভেবে-চিন্তে করেছি। আমি কোনো খুকি না। হুঁট করে কিছু কাবাব বয়স আমার না।

ওসমান সাহেব অল্প হাসলেন। রানু ক্ষিপ্ত হয়ে বলল, হাসছ কেন?

তোমার রাগ দেখে হাসছি। অনেকদিন রাগাতে দেখি না তোমাকে।

রানু বলল, আমি এখন উঠব। তুমি যদি তোমার ছেলেকে রাখতে চাও রাখতে পার।

না, রাখতে চাই না। মাঝরাতে তোমার জন্যে কাঁদতে শুরু করবে।

ভুলেই গিয়েছিলাম। বাচ্চাদের কান্না তো তুমি আবাবা সহ্য করতে পাব না। তোমার সূক্ষ্ম অনুভূতি আহত হয়। লেখা আটকে যায়।

লেখা আমার এমনিতেই আটকে গেছে। একটি লাইনও লিখতে পারছি না।

সাহিত্যের তো তাহলে বিরাট ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।

ওসমান সাহেব ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, এখন তো আমরা দু’জন দুপ্রান্তের মানুষ। তুমি এসেছ বেড়াতে। কাজেই আমরা কী এখন সহজ ভাবে গল্প-টল্প করতে পারি না?

রানু চুপ করে রইল।

তোমার অফিস কেমন চলছে রানু?

ভালই।

চাকরি মনে ধরেছে?

মনে ধরাধরির কী আছে? চাকরি কী স্বামী নাকি যে মনে ধরতে হবে?

ওসমান সাহেব প্রায় নিশ্চিত মনে ছিলেন রাতের খাবার পর্যন্ত রানু থাকবে। কিন্তু সে থাকল না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *