তারপর।
তারপর নদীর স্রোত বয়ে চললো। কখনো ধীরে কখনো জোরে। কখনো মিষ্টি মধুর ছন্দে।
সেদিন হাটবার। সওদা করে বাড়ি ফিরছে মন্তু। দুপয়সার পান।
এক আনার তামাক। আর দশ পয়সার বাতাসা।
কার্তিকের শেষে অগ্রহায়ণের শুরু। ঘরে ঘরে ধান উঠেছে। অনেক রাত পর্যন্ত কারো চোখে ঘুম থাকে না। কাজ আর কাজ। সারাদিন ধান কেটে এনে পারা দিয়ে রাখে। রাতে গরু দিয়ে মাড়ায়। তারপর ঝেড়ে মুছে সব পরিষ্কার করে রাখতে রাখতে রাত অনেক গড়িয়ে পড়ে।
হাট থেকে বাড়ি ফিরে এসে মন্তু দেখে, উঠোনে আসর জমিয়ে বসে পুঁথি পড়ছে সুরত আলীর বড় ছেলেটা। মৃত বাবার এ গুণটি অতি সুন্দরভাবে আয়ত্ত করেছে সে। দূর থেকে শুনলে অনেক সময় বোঝাই যায় না। মনে হয় সুরত আলী বুঝি বসে বসে পুঁথি পড়ছে।
শুন শুন বন্ধুগণরে শুন দিয়া মন।
ভেলুয়ার কথা কিছু শুন সর্বজন।
আজ উঠোনে এসে দাঁড়াতে ওদের সবার কথা মনে পড়লো মন্তুর।
বুড়ো মকবুল, রশীদ, আবুল, সুরত আলী।
কেউ নেই।
জীবনের হাটে সকল বেচাকেনা শেষ করে দিয়ে একদিন অকস্মাৎ কোথায় যেন হারিয়ে গেছে ওরা।
টুনির সঙ্গে দেখা হয় নি অনেক বছর।
প্রথম প্রথম খোঁজ খবর নিতো। আজকাল সে সময় হয়ে ওঠে না মন্তুর। সারাদিন কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকে সে।
হীরন আজকাল বুড়ো মকবুলের ঘরে থাকে। বহু আগে স্বামী তালাক দিয়েছে ওকে। আবার বিয়ে হয়েছিলো। বছর তিন চারেক ঘর-সংসার করার পর সেখান থেকেও তালাক পেয়ে বাড়ি ফিরে এসেছে। তারপর আর বিয়ে হয়নি।
এবার ওর একটা ভালো দেখে বিয়ে দেবার চেষ্টা করছে মন্তু। এখন সে বাড়ির কর্তা। সবার বড়ো। যে-কোন কাজে সবাই এসে পরার্শ নেয় ওর।
উঠোনে এসে দাঁড়াতে ওর হাত থেকে পান, তামাক আর বাতাসাগুলো এগিয়ে নিলো আম্বিয়া। তারপর কোলের বাচ্চাটা ওর দিকে বাড়িয়ে ধরে বললো, দুপুর থাইকা কানছে একটু কোলে নাও।
কোলে নিয়ে ছেলেকে আদর করলো সে।
মন্তুকে এগিয়ে আসতে দেখে সবাই পথ ছেড়ে আসরের মাঝখানে বসালো ওকে। এক ছিলিম তামাক সাজিয়ে ওর হাতে দিয়ে গেলো আম্বিয়া। ধীরে ধীরে রাত বাড়তে লাগলো। চাঁদ হেলে পড়লো পশ্চিমে।
উঠোনের ছায়াটা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হলো। পরীর দীঘির পাড়ে রাতজাগা পাখির পাখা ঝাঁপটানোর আওয়াজ শোনা গেলো। সুরত আলীর ছেলেটা তখনো একটানা পুঁথি পড়ে গেলো।
কি কহিব ভেলুয়ার রূপের বাখান।
দেখিতে সুন্দর অতিরে রসিকের পরাণ।
কাশের চন্দ্র যেনরে ভেলুয়া সুন্দরী।
দূরে থাকি লাগে যেন ইন্দ্রকুলের পরী।
সুর করে ঢুলে চুলে এক মনে পুঁথি পড়ছে সে। রাত বাড়ছে। হাজার বছরের পুরনো সেই রাত।
খুব খুব ভালো লাগার একটি উপন্যাস। পড়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ।
হৃদয় ছুয়ে যাওয়া সাহিত্য কর্ম। এমন সুন্দর উপন্যাস বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে।
হৃদয় ছোয়ে দেওয়া উপন্যাস
উপন্যাসের সাখে এটা আমার ও কথা হাজার বছরে র পুরনো রাত
সত্যিই খুব সুন্দর একটি উপন্যাস ।পড়তে ভালোই লেগেছে।
খুবই সুন্দর ছিল
হাজার বছরের পুরনো সেই গ্রাম সেই মানুষের চরিত্র চলা ফেরা ঠিক যেনো চোখের সামনে ভেসে উঠল পুরো উপন্যাস জোরে. সুন্দর এর চেয়ে সুন্দর গ্রাম বাংলার এই উপন্যাসের সব গুলা কথা……….।