০৯. সারা বাড়িতে আজ চন্দনার ভূত

॥ নয় ॥

সারা বাড়িতে আজ চন্দনার ভূত ঘুরে বেড়াচ্ছে।

দেবাশিস একা সিগারেট খেল অনেকক্ষণ। আবার উঠল। জানালাটা দিয়ে ঝুঁকে পড়ল রাস্তার ওপর। বহু নীচে ফুটপাথ! মাঝখানে নিরালম্ব শূন্যতা! চন্দনা কী করে অত সাহস পেল?

দেবাশিস তো পারে না। চাঁদের আলোয় ভেসে যাচ্ছে কলকাতা। ঘর সাজাবে বলে, ফুলশয্যা বলে ফুল এনেছিল সে। এখন এই নিশুতরাতে সেই গন্ধ ছড়াচ্ছে। কী গভীর সুগন্ধ! সুগন্ধটা টেনে রাখে তাকে।

দেবাশিস প্রেতের মতো একা এসে বসে সোফায়। মাথার চুল মুঠো করে ধরে! রবি নেই। রবি এখন মণিমার বুক ঘেঁষে অঘোরে ঘুমোচ্ছ!

একবার রবির ঘরে এল ‘দেবাশিস। রোজ রাতেই আসে। ঘোট ঘোট শ্বাস ফেলে রবি ঘুমোয়। চেয়ে দেখে। পাশ ফিরিয়ে দিয়ে যায়। আজ রবির ছোট্ট বিছানাটা ফাঁকা পড়ে আছে।

আজকের দিনটা কেমন যেন! হাতের মুঠো থেকে পয়সা হারিয়ে গেলে শিশু যেমন অবাক তেমনি লাগছিল দেবাশিসের।

রবি নেই! তৃণা নেই।

ভালই। এ একরকমের ভালই।

প্রেতের মতো ভয়ংকর শুকনো একটা হাসি হাসল দেবাশিস।

বুকে এখনও যেন রবির খেলনা পিস্তলের মিথ্যে গুলি বিধে আছে। বড় যন্ত্রণা।

অস্ফুট শব্দ করল দেবাশিস; যন্ত্রণাটার অর্থ বুঝতে পারল না।

কালই ইনডেক-এর একটা মস্ত কন্ট্রাক্ট শুরু হচ্ছে আসানসোলে। সকালের গাড়িতেই চলে যেতে হবে।

দেবাশিস শুল। ঘুম আসছে ভারী ক্লান্তির মতো। ঘুমচোখে মনে পড়ল, ভুল করে কাল বিকেলে বাসস্টপে আসতে বলেছে তৃণাকে। এসে ফিরে যাবে।

ফোন করবে? থাকগে! আজ একটা ভুলের দিন গেল। আজ আর ভুলগুলোকে ঠিক করার চেষ্টা করবে না। থাক। ভুলের দিনটা কেটে যাক।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *