০৯. শুক্লযজুর্বেদ – নবম অধ্যায়

নবম অধ্যায়

 মন্ত্রঃ– দেব সবিতঃ প্ৰসুব যজ্ঞং প্রসুব যজ্ঞপতিং ভগায়। দিব্যো গন্ধর্বঃ কেতপূঃ কেতং নঃ পুনাতু বাচস্পতিবাজং নঃ স্বদতু স্বাহা।১৷৷ ধ্রুবসূদং ত্বা নৃষদং মনঃসদমুপম গৃহীতোহসীন্দ্রায় ত্বা জুষ্টং গৃহূমেষ তে যোনিরিায় ত্বা জুষ্টতম। অশ্লষদং ত্বা ঘৃতসদং ব্যোমসদমুপযামগৃহীতোহসীন্দ্ৰায় ত্বা জুষ্টং গৃহ্বাম্যেষ তে যোনিরিায় ত্বা জুষ্টতম। পৃথিবিসদং ত্বাহন্তরিক্ষসদং দিবিসদং দেবসদং নাকসমূপযামগৃহীতো হসীন্দ্ৰায় ত্বা জুষ্টং গৃহাম্যেষ তে যোনিরিায় ত্বা জুষ্টতম৷৷২। অপাং রসমুদ্বয়সং সূর্যে সন্তং সমাহিত। অপাং রসস্য যো রসস্তং বো গৃহ্বাত্তমমুপমগৃহীতোহসীন্দ্রায় ত্বা জুষ্টং গৃহাম্যেষ তে যোনিরিন্দ্রায় ত্বা জুষ্টত৷৷৩৷ গ্ৰহা উর্জাহুতয়ো ব্যন্তো বিপ্রায় মতি। তেষাং বিশিপ্রিয়াণাং বোহহমিষমূর্জং সমগ্রভমুপমগৃহীতোহসীন্দ্ৰায় ত্বা জুষ্টং গৃহূমেষ তে যোনিরিদ্ৰায় ত্বা জুষ্টতমম। সচৌ স্থঃ সং মা ভদ্রেণ পৃঙক্ত বিপৃচৌ স্থা বিমা পানা পৃঙক্তম্৷৷৷৷ইন্দ্রস্য বজ্রোইসি বাজসায়ায়ং বাজং সে। বাজস্য নু প্রসবে মাতরং মহীমদিতিং নাম বচসা করামহে। যস্যামিদং বিশ্বং ভুবনমাবিবেশ তস্যাং নো দেবঃ সবিতা ধর্মং সাবিষৎ৷৷৷৷ অস্বন্তরমৃত ভেষজমপামুত প্রশস্তিবাশ্বা ভবত বাজিনঃ। দেবীরাপো যোব ঊর্মিঃ প্রতৃর্তিঃ ককুম্মান বাজ সাস্তেনায়ং বাজং সেৎ৷৷৬৷৷ বাতো বা মনো বা গন্ধর্বাঃ সপ্তবিংশতিঃ। তে অগ্ৰেহমযুঞ্জস্তে অস্মিঞ্জমা দধুঃ।।৭৷৷ বাতরংহা ভব বাজিনজ্যমান ইন্দ্রস্যেব দক্ষিণঃ শ্রিয়ৈধি। যুঞ্জন্তু ত্বা মরুতে বিশ্ববেদস আ তে ত্বষ্টা পসু জবং দধাতু।৮৷৷ জবো যন্তে বাজিন্নিহিত গুহা যঃ শ্যেনে পরীত্তো অচরচ্চ বাতে। তেন নো বাজি বলবান্ বলেন বাজজিচ্চ ভব সমনে চ পাররিষ্ণু। বাজিনো বাজজিত বাজং সরিষ্যন্তো বৃহম্পর্ভোগম্বজিত৷৷৷৷ দেবস্যাহং সবিতুঃ সবে সত্যসবসসা বৃহস্পতরুত্তমং নাংক রুহেয়। দেবস্যাহংসবিতুঃ সৰে সত্যসবসইন্দ্রসস্যাত্তমংনাকং রুহেয়৷ দেবস্যাহং সবিতুঃ সবে সত্যপ্ৰসবসসা বৃহস্পতরুত্তমং নাকমরুহ। দেবস্যাহং সবিতুঃ সবে সত্যপ্রসবসইন্দ্রস্যোত্তমং নাকমরুহ৷১০৷ বৃহস্পতে বাজং জয় বৃহস্পতয়ে বাচং বদত বৃহস্পতিং বাজং জাপয়ত। ইন্দ্র বাজং জয়েন্দ্রায় বাচং বদতেন্দ্রং বাজং জাপয়ত।।১১। এষা বঃ সা সত্যা সংবাগভূদ্যয় বৃহস্পতিং বাজমজীজপতাজীজপত বৃহস্পতিং বাজং বনস্পতয়ো বিমুচ্যধ্ব। এষা বঃ সা সত্যা সংবাগভূদ্যয়েন্দ্ৰং বাজমজীজপতাজীজপতেন্দ্রং বাজং বনম্পতয়ো বিমুচ্যধ্বম্।১২৷৷ দেবস্যাহং সবিতুঃ সবে সত্যপ্ৰসবসসা বৃহস্পতাজজিতে বাজং জেষ। বাজিনো বাজিজিতোহধ্বন স্কভুবন্তো যোজনা মিমানাঃ কাষ্ঠাং গচ্ছত।১৩৷ এষ স্য বাজী : ক্ষিপণিং তুরণ্যতি গ্রীবায়াং বন্ধো অপিকক্ষ আসনি। তং দধিক্রা অনু সংসনিষ্যদৎপথামঙ্কাংস্যন্বাপনীফণত্ স্বাহা।১৪৷ উত স্মাস্য দ্রবস্তুরণ্যতঃ পর্ণং ন বেরনুবাতি প্রগধিনঃ। শ্যেনস্যেব ধ্রুজতো অঙ্কসং পরি দধিক্রা সহোৰ্জা তরিত্ৰতঃ স্বাহা৷১৫।শং নো ভবন্তু বাজিনো হবে দেবতাতা মিতদ্রবঃ স্বাঃ। জয়ন্তোহহিং বৃকং রক্ষাংসি সনেম্যস্মযবন্নমীবাঃ।১৬৷৷ তে নো অৰ্বন্তো হবনশ্রুততা হবং বিশ্বে শৃন্বন্তু বাজিনো মিতদ্রবঃ। সহস্রসা মেধতা সনিষ্যবো মহো যে ধনং সমিথেষু জভ্রিরে৷১৭৷৷ বাজে বাজেহবত বাজিনো নো ধনেষু বি অমৃতা ঋতজ্ঞাঃ। অস্য মধ্বঃ পিবত মাদয়ং তৃপ্তা যাত পথিভির্দেবযানৈঃ১৮৷৷ আ মা বাজস্য প্রসবো জগম্যাদেমে দ্যাবাপৃথিবী বিশ্বরূপে। আ মা গন্তাং পিতরা মাতরা চা মা সোমো অমৃতত্বেন গম্যাৎ। বাজিনো বাজজিতে বাজং সংসো বৃহম্পর্ভোগমবজিত নিমৃজানাঃ।১৯৷৷ আপয়ে স্বাহা স্বাপয়ে স্বাহাইপিজায় স্বাহা তবে স্বাহা বসবে স্বাহাহহপতয়ে স্বাহা হতুমুগ্ধায় স্বাহা মুগ্ধায় বৈনংশিনায় স্বাহা বিনংশিন আন্ত্যায়নায় স্বাবাহত্যায় ভৌবনায় স্বাহা ভুবনস্য পতয়ে স্বাহা হধিপতয়ে স্বাহা।।২০৷ আয়ুজ্ঞেন কল্পতাং প্রাণো যজ্ঞেন কল্পতাং চক্ষুর্যজ্ঞেন কল্পতাং শ্রোত্রং যজ্ঞেন কল্পতাং পৃষ্ঠং যজ্ঞেন কল্পতাং যজ্ঞো যজ্ঞেন কল্পতা। প্রজাপতেঃ প্রজা অভূম স্বর্দো অগম্মামৃতা অভূম।।২১৷৷ অস্মে বো অত্ত্বিন্দ্ৰিয়মস্মে নৃমূত ক্রতুরস্মে বৰ্চাংসি সন্তু বঃ। নমো মাত্রে পৃথিব্যৈ নমো মাত্রে পৃথিব্যা ইয়ং তে রার্ড যন্তাহসি যমনো ধ্ৰুবোহসি ধরুণঃ। কৃষ্যৈ ত্বা ক্ষেমায় ত্বা রয্যৈ ত্বা পোয় ত্বা।২২। বাজস্যেমং প্রসবঃ সুষুবেংগ্রে সোমং রাজানমোষধীষ্ণু। তা অস্মভ্যং মধুমতীৰ্ভবন্তু বয়ং রাষ্ট্রে জাগৃয়াম পুরোহিতাঃ স্বাহা।২৩ বাজস্যেমাং প্রসবঃশিশিয়ে দিবমিমাং চ বিশ্বা ভূবনানি সম্রাট। অদিসন্তং। দাপয়তি প্রজানন্ত স নো রয়িং সর্ববীরং নি যচ্ছতু স্বাহা।২৪৷ বাজস্য নু প্রসব আ বভূবেমা চ বিশ্ব ভুবনানি সর্বতঃ। সনেমি রাজা পরি যাতি বিদ্বান্ প্রজাং পুষ্টিং বর্ধমানো অস্মে স্বাহা৷৷২৫৷৷ সোমং রাজানমবসেহগ্নিমন্বারভামহে। আদিত্যান্বিষ্ণুং সূর্যং ব্রহ্মাণং চ বৃহস্পতিং স্বাহা।।৬৷৷ অর্যমণং বৃহস্পতিমিং দানায় চোদ্দয়। বাচং বিষ্ণুং সরস্বতীং সবিতারং চ বাজিনং স্বাহা।।২৭৷৷ অগ্নে অচ্ছা বদেহ নঃ প্রতি নঃ সুমনা ভব। প্র নো যচ্ছ সহস্ৰজিৎ ত্বং হি ধনদা অসি স্বাহা।।২৮। প্র নো যচ্ছত্বৰ্যমা প্র পূষা প্র বৃহস্পতিঃ। প্র বাদেবী দদাতু নঃ স্বাহা।।২৯৷ দেবস্য ত্বা সবিতুঃ প্রসবেংশ্বিনোবাহুভ্যাং পূষ্ণো হস্তাভ্যাম্ সরস্বত্যৈ বাচো যন্তুৰ্যন্ত্রিয়ে দধামি বৃহম্পতেষ্ট্র সাম্রাজ্যেনাভি যিঞ্চাম্যসৌ৷৷৩০৷ অগ্নিরেকাক্ষরেণ প্রাণমুদজয়ত্ত মুজ্জেষমশিনে দ্ব্যক্ষরেণ দ্বিপদো মনুষ্যানুদজয়তাং তানুজ্জেং বিষ্ণুক্ষরেণ শ্রীল্লোকানুদজয়ত্তানুজ্জেষং সোমশ্চতুরক্ষরেণ চতুষ্পদঃ পশুনুদজয়ত্তানুজ্জেষ৷৷৩১। পূষা পঞ্চাক্ষরেণ পঞ্চ দিশ উদজয়ত্তা উজ্জেষং সরিদা ষড়ক্ষরেণ ষড় ঋতুনুদ জয়ত্তানুষেং মরুতঃ সপ্তাক্ষরেণ সপ্ত গ্রাম্যান্ পশূনুদজর্যস্তানুজ্জেষং বৃহস্পতিরষ্টা ক্ষরেণ গায়ত্রীমুদজয়ত্তামুজ্জেষ৷৷৩২। মিত্রো নবাক্ষরেণ ত্রিবৃতং স্তোমমুদজয়ত্ত মুজ্জেষং বরুণো দশাক্ষরেণ বিরাজমুদজ্জয়ত্তামুজ্জেষমিন্ত্রং একাদশাক্ষরেণ ত্রিষ্টুভমু দজয়ামুজ্জেষং বিশ্বে দেবা দ্বাদশাক্ষরেণ জগতীমুদজয়স্তামুজ্জেষ৷৷৩৩৷৷ বসবস্ত্রয়োদশাক্ষরেণ ত্রয়োদশং স্তোমমুদজয়স্তমুজ্জেষংরুদ্রাশ্চতুর্দশা-ক্ষরেণ চতুর্দশং স্তোমমুদজয়স্তমুজ্জেমাদিত্যাঃ পঞ্চ দশাক্ষরেণ পঞ্চদশং স্তোমমুদজয়স্তমুজ্জেম দিতিঃ যোড়শাক্ষরেণ যোড়শং স্তোমমুদজয়ত্তমুজ্জেষং প্রজাপতিঃ সপ্তদশাক্ষরেণ সপ্তদশং স্তোমমুদজয়ত্তমুজ্জেষ৷৷৩৪৷৷ এষ তে নিঋতে ভাগস্তং জুষস্বা স্বাহা হপ্পির্নেত্রেভ্যো দেবেভ্যঃ পুরঃসম্ভঃ স্বাহা যমনেত্রভ্যো দেবেভ্যো দক্ষিণাসঃ স্বাহা বিশ্বদেবনেত্রেভ্যো দেবেভ্যেঃ পশ্চাৎস্যঃ স্বাহা মিত্রাবরুণনেত্রেভ্যো বা মরুন্নেত্রেভ্যো বা দেবেভ্য উত্তরাসত্ত্যঃ স্বাহা সোমনেত্রেভ্যা দেবেভ্য উপরিসজ্ঞ্যো দুবস্বত্ত্যঃ স্বাহা।।৩৫৷৷ যে দেবা অগ্নিনেত্রাঃ পুরসদস্তেভ্যঃ স্বাহা যে দেবা যমুনেত্রা দক্ষিণাসদস্তেভ্যঃ স্বাহা যে দেবা বিশ্বদেবনেত্রাঃ পশ্চাৎসদস্তোভ্যঃ স্বাহা যে দেবাঃ মিত্রবরুণনেত্রা বা মরুনেত্রা বোত্তরাসদস্তেভ্যঃ স্বাহা যে দেবা সোমনেত্রা উপরিসদো দুবস্বন্তস্বেভ্যঃস্বাহা।৩৬।অগ্নে সহস্ব পৃতনা অভিমাতীরপাস্য। দুষ্টরস্তরন্নরাতীবর্চো ধা যজ্ঞবাহাস।।৩৭৷৷ দেবস্য ত্বা সবিতুঃ প্রসবেংশ্বিনোর্বাহুভ্যাং পূষ্ণো হস্তাভ্যাম্। উপাং শাৰীর্ষেণ জুহোমি– হতং রক্ষঃ স্বাহা রক্ষসাং ত্বাবধায়াবধিষ্ম রক্ষোহবধিম্মামুমসৌ হতঃ।।৩৮। সবিতা ত্বা সবানাং সুবতামগ্নিগৃহপতীনাং সোমো বনস্পতীনা। বৃহস্পতিবার্চ ইন্দ্রো জ্যৈষ্ঠ্যায় রুদ্রঃ পশুভ্যো মিত্রঃ সত্যো বরুণো ধর্মপতীনা৷৩৯৷ ইমং দেবা অসপত্নংসুবধ্বং মহতে ক্ষত্রায় মহতে জ্যৈষ্ঠায় মহতে জানরাজ্যায়েন্দ্রস্যেন্দ্রিয়ায়। ইমমমুষ্য পুত্রমমুষ্যৈ পুত্ৰমস্যৈ বিশ এষ বোহমী রাজা সোমোস্মাকং ব্রাহ্মণানাং রাজা।।৪০৷৷

[ কণ্ডিকা-৪০ মন্ত্র-১১৭]

.

মন্ত্ৰার্থঃ– [এই অধ্যায়ের কণ্ডিকা ৩৪ পর্যন্ত বাজপেয় ভাগের মন্ত্র কথিত হয়েছে। এর অঙ্গভূত যজ্ঞে ঘৃতের আহুতি দেওয়া হয়]

১। হে দ্যোতমান সবিতাদেব! তুমি দয়া করে বাজপেয় যজ্ঞকে অনুমোদিত করো। এবং যজ্ঞের পালক যজমানকে ভগ অর্থাৎ বাজপেয়যাগরূপী ঐশ্বর্যের নিমিত্ত প্রেরিত করো। দ্যুলোকস্থ, রশ্মিসমূহের ধারক এবং অন্নকে পবিত্র করণশালী সূর্যদেব আমাদের হবিষণ্ণকে পবিত্র করুক। বাণীর (বাকের) স্বামী প্রজাপতি আমাদের হবিরান্নকে আস্বাদিত করুক।

২। (প্রাতঃ সবনে আগ্রায়ণ গ্রহকে গ্রহণ করার পর তিনটি অতিগ্রহকে গ্রহণ করণীয়। পুনরায় ষোড়শীগ্রহ গ্রহণ পূর্বক পঞ্চ ইন্দ্রদেবতাক গ্রহকে গ্রহণ করণীয়)–হে সোম! তুমি উপযাম পাত্রে গৃহীত হয়েছ। আমি ইন্দ্রের নিমিত্ত প্রিয় তোমাকে গ্রহণ করছি। আমি ধ্রুব পৃঙ্খীলোকে স্থিতিশালী; মনুষ্যলোকে স্থিতিশালী, ও মনে স্থিতিশালী তোমা হেন সোমকে গ্রহণ করছি। হে সোম! এই তোমার স্থিত হওয়ার স্থান। ইন্দ্রের অত্যন্ত প্রিয়, হে সোম! আমি তোমাকে সেই ইন্দ্রের নিমিত্ত গ্রহণ করছি। জলে স্থিতিশালী (উদকসদ), ঘৃতে স্থিতিশালী (ঘৃতসদ) এবং অন্তরীক্ষে স্থিতিশালী (ব্যোমসদ) তুমি হেন সোমকে ইন্দ্রের নিমিত্ত গ্রহণ করছি। তুমি উপযাম পাত্রের দ্বারা গৃহীত হয়েছ। ইন্দ্রের প্রতিকারী তুমি হেন সোমকে আমি গ্রহণ করছি। হে সোম! এই তোমার স্থান। ইন্দ্রের অত্যন্ত প্রীতিকারী তুমি হেন সোমকে আমি গ্রহণ করছি। পৃঙ্খীলোকে স্থিতিশীল (পৃথ্বীসদ), অন্তরিক্ষে স্থিতিশীল (অন্তরিক্ষসদ), দ্যুলোকে স্থিতিশীল (দিবিসদ), দেবগণে স্থিতিশীল (দেবসদ), এবং স্বর্গে স্থিতিশীল (স্বর্গসদ), তুমি হেন সোমকে আমি গ্রহণ করছি। হে সোম! তুমি উপম পাত্রের দ্বারা গৃহীত হয়েছ। ইন্দ্রের প্রীতিকরী তুমি হেন সোমকে আমি গ্রহণ করছি। হে সোম! এই তোমার স্থান! ইন্দ্রের অত্যন্ত প্রীতিকর তুমি হেন সোমকে আমি গ্রহণ করছি।

৩। (এই তিন যজুর্মন্ত্রে ইন্দ্রদেবতাক তিনগ্রহ গ্রহণীয়)–জলের সারভূত এবং অন্নকে পর্ধনশীল বায়ু সূর্যে সমাহিত। জলের সাররূপ বায়ুরও যে সার– সেই সাররূপ অতিশ্রেষ্ঠ প্রজাপতিকে আমি, হে দেবগণ! তোমাদের নিমিত্ত গ্রহণ করছি; (অর্থাৎ সোমরূপে বায়ু এবং তার অভিমানী দেবতা প্রজাপতিকে গ্রহণ করছি)। হে সোম! তুমি উপযাম পাত্রের দ্বারা গৃহীত হয়েছ। ইন্দ্রের প্রীতিকরী তুমি হেন সোমকে আমি গ্রহণ করছি। হে সোম! এই তোমার স্থান। ইন্দ্রের নিমিত্ত অত্যন্ত প্রীতিকর তোমাকে আমি গ্রহণ করছি৷

৪। (এই মন্ত্রে চারিটি ইন্দ্রগ্রহকে গ্রহণ করা উচিত।…) অন্ন বা বলের আহ্বান করণশীল মেধাবী যজমান বা ইন্দ্রকে বিশিষ্ট বুদ্ধি প্রদানশীল সেই তোমরা হেন অধরেষ্ঠের প্রিয় গ্রহ সমূহে অন্ন এবং রসকে আমি গ্রহণ করছি। হে সোম! তুমি উপযাম পাত্রের দ্বারা গৃহীত হয়েছ। ইন্দ্রের নিমিত্ত প্রীতিকর তুমি হেন সোমকে আমি গ্রহণ করছি। (অধ্বর্যু কর্তৃক সোমগ্রহকে অক্ষের উপর এবং নেষ্ঠা নামক ঋত্বিক কর্তৃক সুরাহকে অক্ষের নীচে ধারণ করণীয়…)—হে সোম ও সুরাহ! তোমরা দুজন একসাথে যুক্ত হয়ে যাও। এবং তোমরা দুজন আমাকে কল্যাণের সাথে সংযোজিত করো।…. হে সোম ও সুরাগ্রহ! এক্ষণে তোমরা পৃথক-পৃথক হয়ে গিয়েছ, অর্থাৎ বিযুক্ত হয়েছ। তোমরা দুজন আমাকে পাপ হতে পৃথক্‌ (বা বিযুক্ত) করো।

৫। (মহা মরুতৃতীয়ের অন্তে মহেন্দ্রগ্রহকে গ্রহণের পূর্বেই রথবাহনাচ্ছাদক শকট থেকে রথকে নামানো কর্তব্য)-হে রথ তুমি ইন্দ্রের বজ্রস্বরূপ। তুমি জন্ম প্রদানশালী। তোমার এই যজমান অন্নকে প্রাপ্ত করুক। অন্নের প্রাপ্তি বা অনুজ্ঞার নিমিত্ত আমি এই মহতী মাতা অদিতিকে বেদ বাক্যের দ্বারা অনুকূলা করছি। যে এই অদিতিতে: (দ্যাবাপৃথিবীতে) এই সমগ্র লোক সমাধা হয়েছে, সেই ভূমিতে সবিতাদেব আমাকে (যজমানকে) অবস্থান প্রদান করুক।

৬। জলের অন্দরে অমৃত আছে এবং জলের অন্দরে ভৈষজ্যও নিহিত আছে। হে অশ্বগণ! তোমরা সেই জলের প্রশস্তিসমূহে (উন্নত গুণাবলীতে) সঙ্গত হয়ে অন্ন বা বেগশালী হও। হে দ্যোতমানা জলরাশি! অত্যন্ত বেগশালিনী তোমাদের যে লহর (কল্লোল) আছে, তোমরা যে উচ্চ উচ্চ জলনিচয়ের সাথে যুক্ত এবং যে তোমরা অন্নকে প্রাপ্ত করণশালিনী আছে– তাদের দ্বারা এই যজমান অন্নকে সম্প্রপ্ত করুক৷

৭। (দক্ষিণে স্থিত অশ্বকে রথে সংযোজিতব্য)-বায়ু, মন এবং সপ্তবিংশ নক্ষত্র গন্ধর্ব আছে। তারা ভূমিকে ধারণশালী। তারাই পূর্বে অশ্বকে রথের মুখে সংযোজিত করেছিল। তারাই অশ্বে বেগ ধারণ (বা স্থাপন করেছিল।

৮। হে অশ্ব! রথে সংযোজন-কৃত হয়ে তুমি বায়ুর বেগের ন্যায় বেগশালী হও। (রথের) দক্ষিণ ভাগে স্থিত তুমি ইন্দ্রের সমান শোভায় সমৃদ্ধ হও। হে অশ্ব! সর্বধন মরুৎবর্গ তোমাকে রথে সংযোজিত করুক। ত্বষ্টাদেব তোমার পাদসমূহে বেগকে স্থাপন করুক।

৯। (এই যজুর্মন্ত্রে তৃতীয় দক্ষিণাপ্রষ্টি অশ্বকে রথে সংযোজিত করণীয়) হে অশ্ব! তোমার যে বেগ তোমার হৃদয়ে স্থাপিত, তোমার যে বেগ শ্যেন পক্ষীতে সঙ্গত হয়ে গতি সম্পন্ন করায়, এবং তোমার যে বেগ বায়ুতে প্রদত্ত হয়ে প্রবর্তিত হয়ে থাকে; হে অশ্ব! সেই ত্রিবিধ বেগের দ্বারা বলবান্ হয়ে তুমি আমাদের অন্নকে বিজয় করণশালী হও; এবং যুদ্ধে আমাদের উত্তীর্ণকারী হও। (বৃহস্পতির চরু অশ্বকে আঘ্রাণ করিয়ে)–হে অশ্বগণ! অন্নকে তোমরা মন্ত্রের দ্বারা প্রাপ্ত করে বৃহস্পতির এই চারুভাগকে আঘ্রাণ করো।

১০। সত্য আদেশ (অর্থাৎ যার অনুশাসন বা আদেশকে কেউই চলাতে পারে না) সবিতা দেবতার অনুজ্ঞায় (বা অনুশাসনে) বর্তমান আমি বৃহস্পতির উত্তম স্বর্গে আরোহণ করব। সত্যাদেশ সবিতাদেবের অনুজ্ঞায় বর্তমান আমি ইন্দ্রের উত্তম স্বর্গে আরোহণ করব৷

১১। হে বৃহস্পতি! তুমি অন্নকে বিজয় করো। (বেদির নিকটস্থ স্থানে গঠিত বল্লীতে লগ্নীকৃত ১৬টি দন্দুভীর মধ্যে একটিকে যজুঃ মন্ত্রে বাদ্য করণীয়)–হে দুন্দুভীসকল! তোমরা বৃহস্পতির নিমিত্ত ধ্বনিত হও। তোমরা বৃহস্পতির দ্বারা অন্ন বিজয় করাও। হে ইন্দ্র! তুমি অন্নকে বিজয় করো। হে দুন্দুভীসকল! তোমরা ইন্দ্রের নিমিত্ত ধ্বনি উৎসারিত করো ৷

১২। মন্ত্রের দ্বারা বাদিত হওয়া দুন্দুভীকে এই যজুর্মন্ত্রে বল্লী হতে অবতারিত করছি। হে দুন্দুভীসকল! এই তোমাদের যথার্থ সিদ্ধ হওয়া যে, যার দ্বারা তোমরা বৃহস্পতিকে অন্ন জয় করিয়েছ। হে দুন্দুভীসকল! এক্ষত্রে তোমরা উন্মুক্ত হও। –হে দুন্দুভীসকল! তোমাদের বাদিত বাণী সত্যসিদ্ধ হয়েছে যে, যার দ্বারা তোমরা ইন্দ্রকে অন্নবিজয় করিয়েছিলে। হে কাষ্ঠের দ্বারা নির্মিত দুন্দুভীসমূহ! তোমরা ইন্দ্রকে অন্ন বিজয় করিয়েছিলে। এক্ষণে তোমরা বিমুক্ত।

১৩। সত্য প্রশাসন সবিতা দেবের অনুজ্ঞায় বর্তমান আমি হেন যজমান অন্নকে জয় করেছি-ও বৃহস্পতির অন্নকে জয় করব। অন্নকে জয়শালী হে বেগবান্ অশ্বসমূহ! অন্ন জয় করে, বিক্ষুব্ধ করে এবং অনেক যোজন পরিমিত মার্গের শেষ সীমা পর্যন্ত গমন করো বা পৌঁছাও ৷৷

১৪। গ্রীবা (ঘাড়), কক্ষা (বগল), এবং মুখে বন্ধনপ্রাপ্ত এই অশ্ব কশার (অর্থাৎ চাবুকের) আঘাতরূপ সংকেতে তেজের সাথে দ্রুত গমনশালী হয়। পাদের উপর ভর করে চলনশীল এই অশ্ব আরোহীর অভিপ্রায় অনুসারে পদক্ষেপ করে মার্গের লক্ষণগুলি বা চিহ্নগুলির লক্ষ্য রেখে গমন করে থাকে। স্বাহা মন্ত্রে এই ঘৃতের আহুতি প্রদত্ত হচ্ছে।

১৫। মার্গে তেজের সাথে ধাবমান হয়ে অত্যন্ত ত্বরাযুক্ত সীমাকে অতিক্রমণে ইচ্ছাশীল এবং অশ্বের বস্ত্র-চামর প্রভৃতি পক্ষীর পংখের (পান্নার) ন্যায় স্পষ্টই পরিলক্ষিত হচ্ছে। বাজপক্ষীর ন্যায় বেগে উড্ডীয়মান এবং বলের সাথে মার্গকে অতিক্রম করণশালী এই অশ্বের চামর ইত্যাদি চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। স্বাহা মন্ত্রে এই আহুতি প্রদত্ত হচ্ছে৷

১৬। যজ্ঞের অন্দর আহ্বানসমূহে পরিমিতগামী, সুন্দরবর্ণ, সর্প-বৃক-রাক্ষসদের কবল হতে আমাদের রক্ষা করে এবং শীঘ্রই আমাদের সর্বরোগ-ব্যাধিগুলিকে দূর করে এই অশ্ব আমাদের নিমিত্ত কল্যাণকারী হোক৷

১৭। আহ্বান শ্রবণশালী, পরিমিতাগামী, সহস্র রূপ দানশালী, যজ্ঞে ধন ইত্যাদির দাতা এবং যুদ্ধের যে বহুমূল্য রত্ন ইত্যাদিকে আহরণ করণশালী সকল অশ্ব আমাদের আহ্বান শ্রবণ করো।

১৮। অন্ন-অন্নের প্রাপ্তি এবং ধনসমূহেরও লাভের নিমিত্ত মেধাবী, অমরধর্মা এবং সত্য বা যজ্ঞকে জ্ঞাতশালী হে অশ্বসমূহ! তোমরা আমাদের রক্ষা করো। তোমরা সকলে এই নবারের (উড়িধান্যের) চরুকে পান (গ্রহণ) করো এবং আনন্দিত হও। তৃপ্ত হয়ে দেবান পথে গন্তব্যকে প্রাপ্ত হও।

১৯। অন্নের প্রভূত উৎপত্তি আমাতে প্রাপ্ত হোক এবং বিবিধ রূপশালিনী এই দ্যাবাপৃথিবী আমায় প্রাপ্ত হোক। আমার মাতা-পিতা আমাতে অনুকূলতার সাথে প্রাপ্ত হোক। অমৃত হয়ে সোম আমাকে প্রাপ্ত হোক। অন্নকে জয়শীল, পবিত্র হওনশীল এবং সপ্রাপ্তিযোগ্য হে অশ্বগণ! তোমরা বৃহস্পতির ভাগ নীবার চরুকে আঘ্রাণ করো। (এই যজুর দ্বারা নীবার চরুকে অশ্বগণের দ্বারা আঘ্রাত করণী)।

২০। (সম্বত্রাভিমাণী প্রজাপতি দেবতার উদ্দেশ্যে স্তুতি) সকলকে প্রাপ্ত করণশালী প্রজাপতি দেবতার নিমিত্ত স্বাহামন্ত্রে এই ঘৃতাহুতি প্রদান করছি। শুভতার সাথে সকলকে প্রাপ্ত করণশালী প্রজাপতি দেবের নিমিত্ত … পুনঃ পুনঃ উৎপন্ন হওনশালী প্রজাপতি দেবের নিমিত্ত….। যজ্ঞস্বরূপ বা সঙ্কল্পরূপ প্রজাপতি দেবের নিমিত্ত…। নিবাসের হেতুস্বরূপ, দিবসের স্বামী স্বরূপ, দিবসস্বরূপ, মুগ্ধশীল সত্তাস্বরূপ, বিনাশশীল পদার্থ সমূহে বিদ্যমান স্বরূপ, অন্ত্যস্থানে উৎপন্নস্বরূপ, অন্ত্যস্বরূপ, ভুবনে উদ্ভূত ভুবনের স্বামী স্বরূপ এবং সকলের অধিপতি প্রজাপতি দেবের উদ্দেশে স্বাহা মন্ত্রে এই ঘৃতাহুতি প্রদান করছি৷৷

২১। বাজপেয়-যাগের দ্বারা আমার (অর্থাৎ যজমানের) আয়ু কল্পিত (সম্পাদিত) হোক। যজ্ঞের দ্বারা প্রাণ কল্পিত হোক। চক্ষু যজ্ঞের দ্বারা কল্পিত হোক। শ্রোত্র যজ্ঞের দ্বারা কল্পিত হোক। আমার পৃষ্ঠদেশ যজ্ঞের দ্বারা কল্পিত হোক, যজ্ঞ যজ্ঞের দ্বারা কল্পিত হোক। আমরা (যজমান ও যজমানপত্নী) প্রজাপতি দেবতার অপত্য হয়ে গিয়েছি। হে দেবগণ! আমরা স্বৰ্গকে প্রাপ্ত হয়েছি। আমরা অমর হয়ে গিয়েছি৷৷

২২। (শূপের উপর আরোহিত হয়ে যজমান দিসমূহকে অবলোকন করছেন)–হে দিকসমূহ বা দিকের অধিষ্ঠাত্ দেবগণ! তোমাদের (অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে বিদ্যমান) বলবীর্য আমাদের হোক। তোমাদের ধন, সঙ্কল্প, বিবিধ তেজও আমাদের হোক। (যুপের উপর থেকে যজমান ভূমিকে দর্শন করেন)–মাতা পৃথিবীকে নমস্কার। মাতা পৃথিবীকে নমস্কার। (চামড়া হতে উদুম্বর কাষ্ঠের আসন্দী–কেদারাসদৃশ চৌকি স্থাপনীয়)-হে আসন্দী!–এই তোমার জ্য। (ঐ আসন্দীর উপর যজমানের উপবেশন করণীয়) –হে যজমান! তুমি সকলের নিয়ামক! তুমি স্বয়ংই সংযমনকর্তা। তুমি ধ্রুব এবং ধারক। আমি তোমাকে কৃষিকার্যের নিমিত্ত এই আসন্দীর উপর উপবেশন করাচ্ছি। লব্ধ সামগ্রীর পরিচালনের নিমিত্ত, ধনের নিমিত্ত, এবং পুত্র পশু ইত্যাদির পুষ্টির নিমিত্ত তোমাকে আমি এই আসন্দীতে উপবেশন করাচ্ছি৷৷

২৩। অন্নের উৎপাদক প্রজাপতি সৃষ্টির আদিকালে এই রাজা সোমকে ঔষধিসমূহ ও জলসমূহে উৎপন্ন করেছিলেন। সেই জল ও ওষধিসমূহ আমাদের নিমিত্ত মধুরতা যুক্ত হোক। আমরা পুরোহিতবর্গ রাষ্ট্রের সদা জাগরিত (সচেতনসম্পন্ন বা অপ্রমত্ত) থাকব। স্বাহা মন্ত্রে এই আহুতি প্রদত্ত হচ্ছে।

২৪। অন্নের উৎপাদক পরমাত্মা এই পৃথিবী, এই দ্যুলোক এবং এই সমস্ত ভূতজাতকে (অর্থাৎ প্রাণীবর্গকে) আশ্রিত করেছিল; (অর্থাৎ সকলকে অধীনস্থ করেছিল বা সকলের মধ্যে ব্যাপ্ত হয়েছিল) সেই পরমাত্মা জ্ঞাত হয়ে বুদ্ধি প্রেরণ পূর্বক আমাকে অর্থাৎ হবিঃ না সমর্পণকারীকেও দেবগণের উদ্দেশ্যে হবিঃ প্রদান করিয়ে থাকে। সেই পরমাত্মা আমাদের সকল বীরের সাথে যুক্ত ধন প্রদান করুক। তার নিমিত্ত স্বাহা মন্ত্রে এই আহুতি প্রদান করছি৷৷

২৫। অন্নে উৎপাদক সেই প্রজাপতি এইসব ভূতমাত্রকে উৎপন্ন করেছিল। সেই চিরন্তন রাজা আপন অধিকারকে জ্ঞাত হয়ে স্বেচ্ছায় সর্বত্র গমন করে থাকে। সে-ই আমাদের সন্তান এবং ধন ইত্যাদির পুষ্টি (অর্থাৎ সমৃদ্ধি) সাধন পূর্বক সর্বত্র ব্যাপ্ত হয়ে থাকে। তার উদ্দেশ্যে স্বাহা মন্ত্রে এই আহুতি প্রদত্ত হচ্ছে ৷৷

২৬। রক্ষার নিমিত্ত রাজা সোম, অগ্নি, দ্বাদশ আদিত্য, বিষ্ণু, সূর্য,ব্রহ্মা এবং বৃহস্পতিদেবকে আমরা আহ্বান করছি। তাদের উদ্দেশ্যে স্বাহা মন্ত্রে এই আহুতি প্রদান করছি।

২৭। অর্যমা, বৃহস্পতি এবং ইন্দ্রকে, হে ঈশ্বর! তুমি দানের নিমিত্ত প্রেরণ করো। বাকের অধিদেবতা সরস্বতীকে, বিষ্ণু (বা সূর্য)-কে সবিতাকে এবং অন্নবান প্রজাপতিকে দানের নিমিত্ত প্রেরিত করো। স্বাহা মন্ত্রে, তাদের উদ্দেশ্যে, এই আহুতি প্রদান করছি৷৷

২৮। হে অগ্নি! আমাদের এই যজ্ঞে তুমি আমাদের হিতকথা শ্রবণ করাও এবং আমাদের প্রতি শুভ কল্পশালী হও; (অর্থাৎ আমাদের মঙ্গলকারক হও)। হে সহস্র ধন ইত্যাদির বিজেতা অগ্নি! তুমি আমাদের ধন ইত্যাদি প্রদান করো। তুমিই ধন দানশালী। তোমার উদ্দেশে স্বাহা মন্ত্রে এই আহুতি প্রদান করছি।

২৯। অর্যমা, পূষা ও বৃহস্পতি আমাদের অভীষ্ট ধন ইত্যাদি প্রদান করুক। তাদের উদ্দেশ্যে স্বাহা মন্ত্রে এই আহুতি প্রদান করছি।

৩০। হে যজমান! সবিতাদেবের অনুজ্ঞায় বিদ্যমান আমি অশ্বিন্দ্বয়ের বাহুসমূহ এবং পূষা দেবতার হস্তসমূহের দ্বারা নিয়মন করণশালিনী সরস্বতীর নিয়ন্ত্রিত ধনে প্রতিস্থাপিত করছি। এক্ষণে অমুক নামধারী তুমি হেন যজমানকে আমি বৃহস্পতিদেবের সাম্রাজ্যে অভিসিঞ্চিত (বা অভিষিক্ত) করছি। (অর্থাৎ রাজাসনের উপর উপবেশন করাচ্ছি)।

৩১। (এখন এই যজুগুলির সংজ্ঞা উজ্জিতি। এর দ্বারা ঘৃতাহুতি প্রদান করা হয়; অথবা যজমানকে পাঠ করানো হয়।….ইত্যাদি)–অগ্নি একাক্ষর ছন্দের দ্বারা পঞ্চধা প্রাণকে বিজয় করেছিল; আমিও (যজমানও) সেই ছন্দের দ্বারা আপন পঞ্চধা প্রাণকে জয় করব। অশ্বিনদ্বয় দুই অক্ষরশালী ছন্দের দ্বারা দুই পাদশীলা মনুষ্যগণকে বিজয় করেছিল, আমিও সেই ছন্দের দ্বারা মনুষ্যগণকে জয় করব। বিষ্ণু তিনি অক্ষরশালী ছন্দের দ্বারা তিন লোককে জয় করে নিয়েছিল; আমিও সেই ছন্দের দ্বারা তিন লোককে বিজয় করে নেব। সোম চার অক্ষরশালী ছন্দের দ্বারা চতুষ্পদ-সম্পন্ন পশুগণকে বিজয় করেছিল; আমিও সেই চতুরাক্ষরশালী ছন্দের দ্বারা চতুষ্পদ পশুগণকে বিজয় করব।

৩২। পূষাদেব পঞ্চ অক্ষরশালী ছন্দের দ্বারা প্রধান দিকগুলিকে এবং এক অবান্তর দিককে মিলিয়ে মোট পঞ্চ দিককে বিজয় করেছিল; আমিও সেইভাবে তাদের (অর্থাৎ ঐ পঞ্চ দিকগুলিকে) বিজয় করব। সবিতাদেব ষট্‌ (ছয়) অক্ষরশালী ছন্দের দ্বারা ছয় ঋতুকে বিজয় করেছিল; আমিও সেইভাবে সেই ছয় ঋতুকে জয় করব। মরুৎবর্গ সপ্ত সংখ্যক অক্ষরশালী ছন্দের দ্বারা সাতটি গো-ইত্যাদি গ্রাম্য পশু জয় করেছিল। আমিও সেইভাবে তাদের জয় করব। বৃহস্পতি দেবতা অষ্ট অক্ষরশালী ছন্দের দ্বারা গায়ত্রীছন্দের অভিমানিনী দেবতাকে জয় করেছিল। আমিও সেইভাবে সেই অষ্টাক্ষর-সম্পন্ন ছন্দের দ্বারা গায়ত্রীর অধিষ্ঠাত্রীকে জয় করব।

৩৩। মিত্রদেব নব (নয়) অক্ষরশালী ছন্দের (বা মন্ত্রের) দ্বারা ত্রিবৃৎ স্তোমকে বিজয় করেছিল। আমিও সেইভাবে ত্রিবৃৎ স্তোমকে বিজয় করব। বরুণদেব দশ অক্ষরশালী ছন্দের দ্বারা বিরাজ নামা শ্রুতিপ্ৰসিদ্ধা ছন্দাভিমানিনী দেবতাকে জয় করেছিল। আমিও সেই ভাবে বিরাজকে বিজয় করব। ইন্দ্রদেব একাদশ অক্ষরশালী ছন্দের দ্বারা ত্রিষ্ঠুভ ছন্দকে বিজয় করেছিল। আমিও সেইভাবে ত্রিষ্ঠুভ ছন্দকে বিজয় করব। বিশ্বদেরগণ দ্বাদশ অক্ষরশালী ছন্দের দ্বারা জগতী ছন্দকে বিজয় করেছিল। আমিও সেইভাবে ঐ জগতী ছন্দকে বিজয় করব।

৩৪। বসুগণ ত্রয়োদশ অক্ষর সম্পন্ন ছন্দে ত্রয়োদশ স্তোমকে বিজয় করেছিল। আমিও সেইভাবে ত্রয়োদশ স্তোমকে বিজয় করব। রুদ্রদেবগণ চতুর্দশ অক্ষরশালী ছন্দের দ্বারা চতুর্দশ স্তোমকে বিজয় করেছিল। আমিও সেইভাবে চতুর্দশ স্তোমকে বিজয় করব! আদিত্যগণ পঞ্চদশ অক্ষরশালী ছন্দের দ্বারা পঞ্চদশ স্তোমকে বিজয় করেছিল। আমিও সেইভাবে সেই পঞ্চদশ স্তেমকে বিজয় করব। অদিতি দেবী ষোড়শ অক্ষরযুক্ত ছন্দের দ্বারা ষোড়শ স্তোমকে বিজয় করেছিল। আমিও সেইভাবে সেই স্তোমকে বিজয় করব। প্রজাপতি দেবতা সপ্তদশ অক্ষরশালী ছন্দের দ্বারা সপ্তদশ স্তোমকে বিজয় করেছিল। আমিও সেই সপ্তদশ অক্ষরযুক্ত ছন্দের দ্বারা সপ্তদশ স্তোমকে বিজয় করব।

৩৫। (বাজপেয় যজ্ঞের মন্ত্র সমাপ্ত হলো। এখন রাজসূয় যজ্ঞের মন্ত্র প্রারম্ভ হচ্ছে)। (চরু নির্মাণের নিমিত্ত চাউলকে পিষ্ট বা চূর্ণ করার উদ্দেশ্যে প্রস্তরের নীচে স্থাপন পূর্বক শভ্যার উপর পেষণ করে পতিত চাউলগুলি সুবাতে ভরে দক্ষিণাগ্নির উপর দক্ষিণ দিকে আহুতি প্রদেয়)। হে পৃথিবী! এই পিষ্ট চরু তোমার ভাগ। তুমি একে সেবন করে। তোমার উদ্দেশ্যে স্বাহা মন্ত্রে আহুতি প্রদান করছি। (পশ্চিম ইত্যাদি দিকসমূহে আহবনীয় অগ্নি স্থাপন করে সেগুলিতে প্রতিটি মন্ত্রে ঘৃতাহুতি প্রদেয়)। পূর্ব দিকে উপবেশনশীল এবং অগ্নিনেতৃক (অগ্নির নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত) দেবগণের নিমিত্ত স্বাহা মন্ত্রে এই আহুতি প্রদান করছি। দক্ষিণ দিকে উপবেশনশীল এবং যমনেতৃক দেবগণের উদ্দেশ্যে স্বাহা মন্ত্রে এই আহুতি প্রদান করছি। পশ্চিম দিকে উপবেশনশীল এবং বিশ্বদেবনেতৃক দেবগণের নিমিত্ত স্বাহা মন্ত্রে এই আহুতি প্রদত্ত হচ্ছে। উত্তর দিকে উপবেশনশীল এবং মিত্র-বরুণ দেবদ্বয়ের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত বা মরুত্বর্গের নেতৃত্বাধীন দেবগণের উদ্দেশ্যে স্বাহা মন্ত্রে এই আহুতি প্রদান করছি। উপরে স্থিতিশীল, পরিচর্যাশালী এবং সোম যাদের নেতা, সেই দেবগণের উদ্দেশ্যে স্বাহা মন্ত্রে এই আহুতি প্রদান করছি।

৩৬। (পঞ্চভাগে বিভক্ত করে স্থাপিত হওয়া আহবনীয় অগ্নিকে একত্র করে এই পাঁচটি যজুর্মন্ত্রের সাথে ঘৃতাহুতি প্রদেয়)। যে দেবতা পূর্ব দিকে উপবেশনশীল এবং অগ্নিনেতৃক, তাদের নিমিত্ত স্বাহা মন্ত্রে এই আহুতি প্রদান করছি। যে দেবগণ দক্ষিণ দিকে উপবেশনশীল এবং যমের নেতৃত্বে অধিষ্ঠিত, তাদের উদ্দেশ্যে স্বাহা মন্ত্রে এই আহুতি প্রদান করছি। যে দেবগণ পশ্চিম দিকে উপবেশনশীল এবং বিশ্বদেবগণের নেতৃত্বাধীন, তাদের নিমিত্ত স্বাহা মন্ত্রে এই আহুতি প্রদান করছি। উত্তর দিকে উপবিষ্ট যে দেবগণ মিত্র ও বরুণের বা মরুত্বর্গের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত, তাদের নিমিত্ত স্বাহা মন্ত্রে এই আহুতি প্রদান করছি। যে দেবগণ উপর দিকে স্থিতিশালী, পূজার যোগ্য এবং সোম যাদের নেতা, তাদের উদ্দেশ্যে স্বাহা মন্ত্রে এই আহুতি প্রদান করছি।

৩৭। হে অগ্নি! তুমি শত্রুসেনাগণকে অভিভূত না করে তাদের দূরে বিতাড়িত করে দাও। হে দুর্নিবার অগ্নি! শত্রুগণের অপচেষ্টা নিরাকৃত (বা খণ্ডন) করে তুমি যজ্ঞের নির্বাহক যজমানে ব্রহ্মতেজ বা অন্ন ধারিত (বা স্থাপিত) করো।

৩৮। সবিতাদেবতার অনুশাসনে বর্তমান হয়ে অশ্বিনদেবদ্বয়ের বাহুসমূহ এবং পূষাদেবের হস্তের দ্বারা ইম, হে তণ্ডুল (অর্থাৎ অপমার্গের হোমের নিমিত্ত গৃহীত চাউল)! তোমাকে উপাংশুগ্রহের বীর্য (অর্থাৎ বল)-স্বরূপ সোমের সাথে হোম করছি। এক্ষণে সমস্ত রাক্ষস নিহত হয়ে গিয়েছে। সেই নিমিত্ত স্বাহা মন্ত্রে এই আহুতি প্রদান করছি। হে সুক্ (ঘৃতাধার যজ্ঞপাত্র)! আমি তোমাকে রাক্ষসগণের বধের কারণ ঘূর্ণন করছি (ঘোরাচ্ছি)। আমি এই রাক্ষসবর্গকে হনন করছি। এক্ষণে এই সমস্ত রাক্ষসবর্গ নিহত হয়ে গিয়েছে।

৩৯। হে যজমান! সবিতাদেব সকলকে অনুশাসনের আধিপত্যে আপনাকে প্রেরিত করুক (অধিপতি করুক)। হে যজমান! অগ্নি আপনাকে গৃহস্থের আধিপত্যে প্রেরিত করুক। হে যজমান! রাজা সোম আপনাকে বন, বৃক্ষ ইত্যাদির আধিপত্যে প্রেরিত করুক। হে যজমান! বৃহস্পতি আপনাকে বাণীর আধিপত্যে (বিদ্বত্তা বা পাণ্ডিত্যে) প্রেরিত করুক। হে যজমান! ইন্দ্র আপনাকে জ্যেষ্ঠত্বের আধিপত্যে প্রেরিত করুক; (অর্থাৎ আপনাকে জ্যেষ্ঠ করুক)।হে যজমান! রুদ্র আপনাকে পশুগণের আধিপত্যে প্রেরিত করুক। হে যজমান! সত্য অনুশাসন মিত্র ও বরুণ আপনাকে ধর্মাধিকারীগণের আধিপত্যে প্রেরিত করুক। (এই সবিতা-অগ্নি সোম-বৃহস্পতি-ইন্দ্র-রুদ্র-মিত্ৰ বরুণ ইত্যাদি অষ্ট দেবতা হবিঃসমূহের দেবতা), হে যজমান! আপনাকে বিবিধ পদার্থের আধিপত্যে আসিঞ্চিত করুক।

৪০। হে দেবসূ হবির্ভাগ দেবগণ! তোমরা এই (দেবদত্ত ইত্যাদি) যজমানকে শরহিত করে মহত্রাজকার্যে প্রেরিত করো; মহাজ্যেষ্ঠত্বের নিমিত্ত প্রেরিত করো; মহৎ জনরাজ্যের (বা প্রজাতন্ত্রের) নিমিত্ত প্রেরিত করো; ইন্দ্রকে পরম উৎকৃষ্ট বলের নিমিত্ত প্রেরিত করো। যজ্ঞদত্ত ও যজ্ঞশ্রী ইত্যাদির পুত্র এই দেবদত্ত নামক রাজা এবং কুরু-পাঞ্চাল প্রভৃতি দেশের অধিবাসীগণের আধিপত্যে প্রেরিত করো। হে কুরু-পাঞ্চাল প্রভৃতি দেশবাসীগণ! এই দেবদত্ত তোমাদের রাজা হবে। পরন্তু, হে দেশবাসীগণ! আমাদের ব্রাহ্মণগণের রাজা তো এই সোম– (যজ্ঞদত্ত, যজ্ঞশ্রী, দেবদত্ত ইত্যাদি মানুষের নামগুলি এবং কুরু পাঞ্চাল ইত্যাদি দেশগুলির নাম কল্পিত। যজ্ঞকালে যথাযথ ব্যক্তির ও দেশের নাম ঐ ঐ নামের স্থানে উচ্চারিতব্য)।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *