শায়লা অবাক হয়ে বললেন, তুই কোত্থেকে?
তিথি বলল, তোমাকে নিতে এসেছি মা। স্যুটকেস গুছিয়ে নাও। আজ দুপুরে একটা ট্রেন আছে ঢাকা যাবে।
তুই হড়বড় করিস না তো। তোর সাথে এটা কে?
ইনার নাম নুরুজ্জামান। ইনি পাতার বাঁশি বাজান। ইনি আমাকে পাহারা দিয়ে নিয়ে এসেছেন।
তোর হড়বড়ে কথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে।
মাথা আরো গুলিয়ে যাবে যখন আসল কথা শুনবে।
আসল কথা কি?
আসল কথা হল আমার বিয়ে। বিয়ের তারিখ তোমার অনুপস্থিতিতেই মোটামুটি ঠিক করা হয়েছে–আসছে বৃহস্পতিবার। যার সঙ্গে বিয়ে তাকেও সঙ্গে করে নিয়ে এসেছি। সে সরাসরি তোমার সামনে আসতে ভরসা পাচ্ছে না বলে বেবীটেক্সিতে বসে আছে। তুমি যদি ভরসা দাও তাহলে তাকে নিয়ে আসতে পারি। মা আনব?
শায়লা মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন। তার মাথা সত্যি সত্যি এলোমেলো হয়ে গেছে। তিনি তার নিজের মেয়েকে এত হাসিখুশি কখনো দেখেন নি। হীরক খণ্ডে আলো পড়লে হীরক খণ্ড যেমন ঝলমল করতে থাকে—তিথিও তেমনি ঝলমল করছে। শায়লার চেঁচিয়ে বলতে ইচ্ছা করছে–তুই হঠাৎ এত সুন্দর হয়ে গেলি কি ভাবে? কিন্তু তিনি কিছু বলতে পারছেন না। তার কথা বন্ধ হয়ে গেছে।
তিথি বলল, মা, তুমি যেহেতু হ্যাঁ না কিছুই বলছ না তখন ধরে নিচ্ছি তোমার সম্মতি আছে। নুরুজ্জামান সাহেব, আপনি দয়া করে মারুফকে ডেকে আনুন।
শায়লা দেখলেন, নীল রঙের হাওয়াই শার্ট পরা টকটকে ফর্সা একটা ছেলে হাসি মুখে তাঁর সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। এত সুন্দর একটা ছেলে কিন্তু চুল আঁচড়ায়নি কেন?
তিথি বলল, মা, ওর নাম মারুফ। এখন তুমি ইচ্ছা করলে একটা বটি দিয়ে আমাদের দুজনকে কেটে চার টুকরা করে ফেলতে পার, কিংবা আদর করে পাশাপাশি দাড়া করাতে পার। কোষ্টা করবে তুমি ঠিক কর।
মারুফ সালাম করবার জন্যে নিচু হয়েছে। শায়লা কিছুক্ষণের জন্যে পাথরের মূর্তির মত শক্ত হয়ে রইলেন। তারপরই মারুফের মাথায় হাত রাখলেন। তার আরেকবার মনে হল–তিথি কেন লক্ষ্য করে না যে এর চুল আঁচড়ানো নেই।
শায়লা তাকালেন তিথির দিকে। মার হাসি দেখে তিথির চোখ ভিজে উঠছে।