৯. যখন সবাই মিলে মুক্তিযোদ্ধা ইদরিস মিয়াকে খোঁজ করতে শুরু করেছে।
সকাল বেলা বাচ্চারা যখন নাস্তা করতে বসেছে তখন ইব্রাহীম তাদের সাথে এসে বসল। এর আগে তারা যতবার খেতে বসেছে তখন ইব্রাহীম কাছে আসে নাই। মানুষটা যেহেতু কথা বলে না তাহলে সাথে না বসলেই ভালো। একটা মানুষ সাথে বসে আছে, সবার কথা শুনছে কিন্তু কোনো কথা বলছে না ব্যাপারটা জানি কী রকম। কাল রাত্রেই এইটা নিয়ে আলাপ হয়েছে, টিয়া বলেছে অন্যদের থেকে ইব্রাহীম চাচা আলাদা। যেহেতু ইব্রাহীম চাচা কোনো কথাই বলে না তাই সে বসে থাকলে কোনো সমস্যা হয় না, ইব্রাহীম চাচা একটা ফার্নিচারের মতো, কিংবা ফুলদানির মতো, চুপ চাপ বসে থাকে। কোনো শব্দ করে না।
কাজেই সকাল বেলা যখন ইব্রাহীম চাচা সবার সাথে নাস্তা করতে বসল তাদের টিয়ার কথা মনে পড়ল। তারা পরীক্ষা করতে চাইল আসলেই ইব্রাহীম চাচাকে ফুলদানি হিসেবে চালানো যায় কিনা।
তারা আজকে কীভাবে মুক্তিযোদ্ধা ইদরিস মিয়াকে খুঁজবে সেইটা নিয়ে আলোচনা শুরু করল। মিঠুন বলল, একটা রিকশা ভাড়া করে সেখানে একটা মাইক লাগাব। তারপর সেই মাইকে বলতে থাকব ভাইসব, ইদরিস মিয়া নামে একজনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। তার সন্ধান পেলে যোগাযোগ করুন
সবাই না সূচক ভাবে মাথা নাড়ল। তারপর চোখের কোনা দিয়ে ইব্রাহীম চাচার দিকে তাকাল। সে গভীর মনোযোগ দিয়ে পরটা ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে, মিঠুনের কথা শুনছে বলে মনে হলো না। টিয়ার ফুলদানি থিওরিটি সত্যি হতেও পারে।
রিতু বলল, ছোট বাচ্চা হারিয়ে গেলে মাইকে ঘোষণা দেওয়া যায়। একজন বড় মানুষকে মাইক দিয়ে খোঁজা ঠিক না।
টিটন বলল, মাইকে কথা বলতে হলে পুলিশের পারমিশন নিতে হয়।
টিয়া বলল, রাস্তা এত খারাপ রিকশা যাবে না। তার চাইতে আমরা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নিতে পারি।
তিতু বলল, সবার বাড়িতে যেতে হবে না। যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিল শুধু তাদের বাসায় গেলেই হবে।
রিতু বলল, আমরা পাঁচজন পাঁচটা ভাগে ভাগ হয়ে যাই। তাহলে অনেক তাড়াতাড়ি হবে।
টিয়া বলল, চার ভাগ। মিঠুনকে আলাদা ছাড়া যাবে না। সে একা একা কারো বাড়িতে গেলে ঝামেলা হতে পারে।
মিঠুন গরম হয়ে বলল, কী ঝামেলা।
টিটন বলল, কী না কী বলে ফেলবি। কী না কী করে ফেলবি।
তিতু বলল, আমরা মুক্তিযুদ্ধ গবেষণার ভলান্টিয়ার কার্ড গলায় ঝুলিয়ে যেতে পারি, তাহলে সবাই গুরুত্ব দেবে।
রিতু বলল, গুড আইডিয়া।
টিটন বলল, ইদরিস মিয়ার ছবি থাকলে খুব ভালো হতো। তাহলে সবাইকে দেখাতে পারতাম।
মিঠুন বলল, তোমরা আমার কোনো কথা শুনতে চাও না। আসলে মাইক দিয়ে বলাই সবচেয়ে ভালো। এক সাথে সবাইকে জানানো যাবে। তার সাথে আরেকটা জিনিস করতে পারি।
রিতু ভুরু কুঁচকে বলল, কী জিনিস?
আমরা মাইকে বলতে পারি ইদরিস মিয়া মুক্তিযোদ্ধাকে খুঁজে পেলেই আকর্ষণীয় পুরস্কার।
আকর্ষণীয় পুরস্কার?
হ্যাঁ। মনে করো একটা মোবাইল ফোন। না হলে একটা টেলিভিশন। সবাই যখন একটু অবাক হয়ে মিঠুনের দিকে তাকিয়ে আছে ঠিক তখন ফুলদানী হয়ে বসে থাকা ইব্রাহীম চাচা মুখ খুলল, বলল, ইদরিস মিয়াকে খুঁজে পাওয়া গেছে।
পাঁচজন এক সাথে চিৎকার করে উঠল, খুঁজে পাওয়া গেছে? এরপরেই তারা জিজ্ঞেস করতে চাইছিল, তাহলে এতক্ষণ বললেন না কেন? কিন্তু সেটা জিজ্ঞেস করল না কারণ তারা জানে এটা জিজ্ঞেস করলে ইব্রাহীম চাচা কোনো উত্তর দিবে না।
সবাই ইব্রাহীম চাচার দিকে তাকিয়ে রইল এরপর কী বলে শোনার জন্য, কিন্তু ইব্রাহীম চাচা কিছু বলল না, গভীর মনোযোগ দিয়ে পরোটা ছিঁড়ে ছিঁড়ে মুগডাল দিয়ে খেতে লাগল। শেষ পর্যন্ত রিতু জিজ্ঞেস করল, ইদরিস মিয়াকে কেমন করে খুঁজে বের করেছেন?
ইব্রাহীম চাচা রিতুর প্রশ্নের উত্তর দিল না, বলল, তোমরা সবাই রেডি হও। জায়গাটা বেশ দূর। মনে হয় বেশির ভাগ জায়গা হেঁটে যেতে হবে।
রিতু মুখ শক্ত করে বলল, কিন্তু কিভাবে উনাকে খুঁজে পেলেন বললেন না।
ইব্রাহীম চাচা রিতুর দিকে তাকাল, তখন রিতু আবার বলল, কীভাবে খুঁজে পেয়েছেন?
ইব্রাহীম চাচা বুঝতে পারল রিতু উত্তর না শোনা পর্যন্ত লেগেই থাকবে। তাই মুখ খুলল, বলল, মানুষটাকে কেউ চিনে না। তাই বুঝেছি স্থানীয় মানুষ না, বাইরের মানুষ। বাইরের মানুষ কারা হতে পারে খোঁজ নিলাম, রিকশাওয়ালা, ভ্যান ড্রাইভার, মাটি কাটার ডেইলি লেবারার এরকম কিছু মানুষ বাইরের। তাদের মাঝে খোঁজ নিলাম। তখন জানতে পারলাম সেখানে একজনের নাম ইদরিস মিয়া। খুব গরীব কিন্তু অসম্ভব তেজ। কারো সাথে কথা বলে না। লোকজন ভাসা ভাসা শুনেছে সগ্রামের সময় যুদ্ধ করেছে। জানো তো, গ্রামের মানুষ মুক্তিযুদ্ধকে বলে সংগ্রামের সময় না হলে বলে গণ্ডগোলের সময়।
সবাই মাথা নাড়ল, বলল জানি।
কাজেই বুঝে গেলাম এই ইদরিস মিয়াই আমাদের ইদরিস মিয়া।
টিয়া জিজ্ঞেস করল, উনি কী করেন?
ঠিক নাই। কখনো রিকশা চালান। কখনো মাটি কাটেন। নদীর পাড়ে ছোট একটা চালা ঘরের মতো তৈরি করে সেখানে থাকেন। বিকাল বেলার দিকে বের হয়ে জঙ্গলের দিকে যান।
কেন?
কেউ জানে না। এক দুইজন বলেছে সেখানে গিয়ে একটা গাছের নিচে বসে থাকেন। পাগল কিসিমের মানুষ।
সবাই চুপ করে রইল। ইব্রাহীম চাচা আগে কখনো কথা বলে নাই। এখন যখন শেষ পর্যন্ত তার মুখ খুলানো গেছে কথা বলতেই থাকল, বলল, তার সাথে যারা থাকে তারা বলেছে ইদরিস মিয়া কথা বলে খুব কম কিন্তু যখন কথা বলে খুব শান্তভাবে ধীরে সুস্থে কথা বলে। সুন্দর ভাষায় কথা বলে। এই জায়গা ছেড়ে কোথাও যায় না। মাঝে মাঝে কয়েকদিনের জন্য যদি যায় তাহলে আবার ফিরে আসে।
বাচ্চারা নিজেদের ভিতর এক ধরনের উত্তেজনা অনুভব করে। এখনো কাউকে বলে নাই যে তারা আসলে এসেছে তাদের দাদা কিংবা নানার খোঁজ নিতে। সেটা তারা গোপন রাখতে চায়। যখন তারা ইদরিস মিয়ার সাথে কথা বলবে তখন চেষ্টা করবে ইব্রাহীম চাচা যেন আশে পাশে না থাকে।
ইব্রাহীমের মনে হয় হঠাৎ করে কথা বলার রোগ হয়েছে। সে মুগের ডাল দিয়ে পরটা খাওয়া বন্ধ করে আবার কথা বলা শুরু করল, যার সাথেই যোগাযোগ করেছি, সেই বলেছে ইদরিস মিয়া কারো সাথে কথা বলতে চায় না। একবার নাকী একজন সাংবাদিক তার সাথে কথা বলতে এসেছিল, ইদরিস মিয়া একটা কথাও বলে নাই।
তিতু ভয়ে ভয়ে বলল, আমাদের সাথেও কথা বলবেন না?
ইব্রাহীম চাচা বলল, জানি না। গিয়ে তোমাদের নিজেদের চেষ্টা করতে হবে।
রিতু জিজ্ঞেস করল, আমরা কখন যাব?
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। আমি এক কাপ চা খেয়ে নেই। তোমরা জামা কাপড় পরে আস।
বাচ্চারা যখন জামা কাপড় পরে নেমে এসেছে তখন তারা যদি ভালো করে লক্ষ্য করতো তাহলে দেখতে গেস্টহাউজের সামনে একটা বড় গাছে হেলান দিয়ে বসে থাকা একজন মানুষ তড়াক করে উঠে দাঁড়িয়ে সাইকেল চালিয়ে গ্রামের দিকে ছুটে যাচ্ছে।
সবাই মিলে তিনটা রিকশা করে রওনা দিয়েছে। প্রথম রিকশায় রিতু আর মিঠুন। মিঠুনকে সামলানোর জন্য রিতুকে সব সময় আশেপাশে থাকতে হয়। পরের রিকশাতে টিটন রিতু আর টিয়া। সবার শেষে একটা রিকশায় ইব্রাহীম।
রিকশা করে মিনিট দশেক যাওয়ার পর মিঠুন চলন্ত রিকশা থেকে তড়াক করে লাফ দিয়ে নিচে নেমে গেল। বলল, রিকশাতে ঝাঁকুনির চোটে তার ইয়ে ঢিলে হয়ে যাচ্ছে। ইয়েটা কী জিজ্ঞেস করার পরও সেটা সে ব্যাখ্যা করতে রাজি হলো না দেখে কেউ আর চাপাচাপি করল না। কখন কী বলতে গিয়ে মিঠুন কী বলে ফেলে সেটা নিয়ে সবাই ভয়ে ভয়ে থাকে। মিঠুন বলল, সে রিকশায় পাশে পাশে হেঁটে হেঁটে যাবে। রাস্তা এত খারাপ যে সত্যি সত্যি রিকশায় না গিয়ে হেঁটে হেঁটেই তাড়াতাড়ি যাওয়া যাবে।
তখন অন্যরাও বলল যে তারাও হেঁটে হেঁটে যাবে। এই পুরো পথ রিকশায় গেলে হয় রিকশা ভেঙ্গেচুরে যাবে না হয় তাদের হাড়গোড় ভেঙ্গেচুরে যাবে। তখন রিকশা ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে সবাই হেঁটে হেঁটে যেতে লাগল।
এভাবে যখন তারা আরো কিছুদূর গিয়েছে তখন হঠাৎ ইব্রাহীমের ফোন বেজে উঠল। ইব্রাহীম ফোনটার দিকে তাকাল একটি অপরিচিত নাম্বার থেকে কেউ তাকে ফোন করেছে। সে ফোনটা কানে লাগাল অন্য পাশ থেকে কেউ কথা বলল এবং সেটা শুনে তার ভুরু কুঁচকে উঠল, বলল, কে দেখা করতে চাইছে? অন্যপাশ থেকে কিছু একটা বলল এবং ইব্রাহীমের ভুরু আরো কুঁচকে উঠল, বলল, এখনই? সন্ধ্যাবেলা হলে হয় না?
ইব্রাহীম আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ফোনটা বন্ধ করে অন্যদের দিকে তাকালো। বলল, আমার একটু গেস্টহাউজে যেতে হবে।
রিতু জিজ্ঞেস করল, কেন?
লোকাল পুলিশ থেকে একজন এসেছে সে কথা বলতে চায়।
কী নিয়ে কথা বলবে?
জানি না। খুবই নাকী জরুরি। আমি একটু শুনে আসি।
আমরা তাহলে আস্তে আস্তে হাঁটি?
ইব্রাহীমকে একটু বিভ্রান্ত দেখাল, তারপর বলল, ঠিক আছে তোমরা এই রাস্তা ধরে আস্তে আস্তে হাঁটো আমি যাব আর আসব।
ইব্রাহীম পা চালিয়ে গেস্টহাউজের দিকে রওনা দিল। গেস্টহাউজে পৌঁছতে তার মিনিট দশেক লাগল। গিয়ে দেখে সেখানে কেউ নেই। গেস্টহাউজের কেয়ারটেকার জোরে জোরে মাথা নেড়ে বলল তারা মোটেও তাকে ফোন করেনি। পুলিশ থেকেও কেউ আসে নাই। কেউ তার সাথে কথা বলতে চায় নাই। হঠাৎ করে ইব্রাহীম দুশ্চিন্তিত হয়ে যায়। কোনো একজন তাকে বাচ্চাদের থেকে সরিয়ে নিয়েছে। তাহলে কী তারা বাচ্চাদের কিছু করতে চায়? সময়টা ভালো না, এখানে আজহার আলী নামে একজন রাজাকার কমান্ডার থাকে, মুক্তিযুদ্ধ শব্দটাতেই তার অ্যালার্জি। সে কী বাচ্চাদের কোনো ক্ষতি করতে চায়? হতে পারে এই সরকার রাজাকারের পক্ষের সরকার তাই বলে ছোট বাচ্চাদের কিছু করার দুঃসাহস তাদের হবে? ইব্রাহীম পা চালিয়ে বাচ্চাদের কাছে ফিরে যেতে থাকে।
সে অবশ্যি তখনো জানে না যে যা হবার তা এর মাঝে হয়ে গেছে।
.
ইব্রাহীম চলে যাবার কিছুক্ষণ পরেই একজন মানুষ ছেলেমেয়েদের কাছে। এল। বলল, আমাকে ইব্রাহীম সাহেব পাঠিয়েছেন।
রিতু জানতে চাইল, কেন?
ইব্রাহীম সাহেব বলেছেন মিঠুনকে নিয়ে যেতে।
রিতু অবাক হয়ে বলল, মিঠুন? মিঠুনকে কেন নিয়ে যেতে হবে?
মানুষটা মাথা নাড়ল, বলল, জানি না। ইব্রাহিম সাহেব অপেক্ষা করছেন।
টিয়া বলল, চাচি মনে হয় ঢাকা থেকে ফোন করেছেন।
তিতু বলল, হ্যাঁ হতে পারে। মিঠুনুকে নিয়ে সবাই সব সময় চিন্তা করে।
রিয়া বলল, ঠিক আছে, মিঠুন যা। একা যাবি না, টিটন তুইও সাথে যা।
এবারে মানুষটা খুব ব্যস্ত হয়ে বলল, না,না, একা যেতে বলেছে।
রিতু বলল, একা যেতে বলেছে মানে কী? টিটন সাথে যাক। মিঠুন কোনদিক যেতে কোনদিকে চলে যাবে।
মিঠুন চিউয়িংগাম চিবুচ্ছিল, মুখ থেকে বের করে সেটাকে টেনে লম্বা করে আবার মুখে ঢুকিয়ে বলল, আমি একা যেতে পারব।
তোকে একা যেতে হবে না। আর মুখ থেকে হাত দিয়ে এইভাবে চিউয়িংগাম বের করবি না। ছিঃ।
মিঠুন জিজ্ঞেস করল, কেন? মুখ থেকে চিউয়িংগাম বের করলে কী হয়?
টিয়া বলল, দেখে ঘেন্না লাগে।
মিঠুন বলল, এর সাথে ঘেন্না লাগার কী আছে?
সেইটা যদি না জানিস তোকে মনে হয় আর শেখানো যাবে না।
মানুষটা বলল তাড়াতাড়ি। দেরি হয়ে যাচ্ছে।
রিতু ভুরু কুঁচকে তাকালো, দেরি হয়ে যাচ্ছে মানে কী? ভাবল মানুষটাকে জিজ্ঞেস করবে কিন্তু শেষ পর্যন্ত জিজ্ঞেস করল না। মিঠুন আর টিটনকে বলল তোরা যা। ইব্রাহীম চাচা কী বলে শুনে আয়। সাবধানে যাবি।
মিঠুন মুখের চিউয়িংগামটা আবার টেনে লম্বা করতে করতে হাঁটতে থাকে। টিয়া বলল, ছিঃ মিঠুন! ছিঃ!
মিঠুন আর টিটন মানুষটায় সাথে কিছুদূর হেঁটে যাবার পরই মানুষটা একটা জংলা মতন জায়গার দিকে দেখিয়ে বলল, এখন এইদিকে?
টিটন অবাক হয়ে বলল, কোনদিকে?
এই যে। জঙ্গলের ভিতর দিয়ে।
জঙ্গলের ভিতর দিয়ে কেন?
শর্ট কাট। বলে মানুষটা দুইজনকে প্রায় টেনে জঙ্গলে ঢুকিয়ে ফেলল এবং কিছু বোঝার আগে হঠাৎ করে দুই পাশ থেকে দুইজন মানুষ তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। প্রথমেই তাদের মুখ চেপে ধরল যেন চিৎকার করতে না পারে। দুইজন হুটোপটি করতে থাকে কিন্তু মানুষগুলোয় গায়ে মোষের মতো জোর টিটন আর মিটুন নড়তেই পারল না।
.
ওদিকে রিতু কেমন যেন দুশ্চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে থেকে বলল, জিনিসটা ভালো লাগছে না।
তিতু জিজ্ঞেস করল, কোন জিনিসটা?
এইযে হঠাৎ করে ইব্রাহীম চাচাকে ডেকে পাঠাল। ঠিক তখন আরেকজন এসে বলল, মিঠুনকে ডাকছে। পুরো ব্যাপারটা জানি কেমন।
টিয়া বলল, কেমন আবার কী?
মিঠুন আর টিটনকে যেতে দেওয়া ঠিক হয় নাই।
কেন?
জানি না। কিন্তু মনে হচ্ছে কাজটা ঠিক হয় নাই।
টিয়া বলল, আপু তুমি শুধু শুধু বেশি চিন্তা করো।
কিন্তু কয়েক মিনিটের মাঝে দেখা গেল রিতু শুধু শুধু বেশি চিন্তা করে না, তার চিন্তা করার সত্যিকারের একটা কারণ আছে। ছোট একটা ছেলে একটা লজেন্স খেতে খেতে কোথা থেকে জানি তাদের কাছে হাজির হলো। ছেলেটা লজেন্স চুষতে চুষতে বলল, ঐ স্যার আমারে এই লজেন্সটা দিছে।
একজন স্যার তাকে একটা লজেন্স দিয়েছে সেটা কেন ছেলেটা তাদেরকে বলছে রিতু বুঝতে পারল না। তখন দেখল তার হাতে ভাজ করা একটা কাগজ। ছেলেটা কাগজটা তাদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, স্যার বলছে তোমাগো এই কাগজটা দিতে।
রিতুর বুকটা ধ্বক করে উঠল। সে কাগজটা হাতে নিয়ে ভাঁজ খুলে তাকালো, সেখানে খুবই খারাপ হাতে লেখা:
এই চিঠি পাওয়ার সাথে সাথে তুমরা আমাগো গেরাম তেকে বিদায় হও। যদি বিদায় হও তাইলে তুমাদের ভাইগো ছেড়ে দিমু।
যদি বিদায় না হও তাহলে পরতি ঘণ্টায় একটা করে আঙুল কাটি ফেলমু।
–তুমাগো আজরাইল।
রিতুর হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেল।
তিতু বলল, আমরা কেন এই গ্রাম থেকে বিদায় হব? আমরা কী করেছি?
টিয়া বলল, এইটুকু চিঠিতে আটটা বানান ভুল।