লরেটা ও আমি রিকশা করে যাচ্ছি। আমি বললাম, তোমার কি মন খারাপ?
না।
আমার তো খুব মন খারাপ লাগছে। তোমার কেন লাগছে না লরেটা?
তোমার কি কান্না পাচ্ছে?
হ্যাঁ।
কই; দেখি?
আমি তাকালাম লরেটার দিকে। লরেটা দেখল আমার চোখ জলে ভেজা। সে মমতাময়ী নারীর গলায় বলল, আমি যখন বড় হব তখন তোমাকে বিয়ে করব।
আমি বললাম, আচ্ছা। আমি কি মাঝে মাঝে তোমার খোঁজ নিতে আসব?
না।
যোগাযোগ তো থাকা দরকার। ধর, ঐ বাড়ি ছেড়ে আমরা চলে গেলাম। তুমি তো জানবে না কোথায় গেছি।
বড় হয়ে আমি তোমাকে ঠিকই খুঁজে বের করব।
ঠিক আছে।
লরেটাকে নামিয়ে দিয়ে ফিরছি, সন্ন্যাসী ভোলাবাবুর সঙ্গে দেখা। গায়ে কোনোই কাপড় নেই। আমাকে দেখেই এই যে এই যে বলে এগিয়ে এলেন। আমি আঁৎকে উঠলাম। ভাবলাম, নিৰ্ঘাৎ কোন উন্মাদ।
টুকু সাহেব, ভালো আছেন? আমি তোলা।
ও আচ্ছা।
কাপড়-চোপড় ছেড়ে পুরো নাঙ্গা হয়ে গেলাম।
তাই তো দেখছি।
শরীরটা ভাল যাচ্ছিল না, জ্বর-জ্বারি হচ্ছিল। একটু বৃষ্টিতেই জ্বর। নাঙ্গা হবার পর শরীরটা ঠিক হয়ে গেছে।
লজ্জা লাগছে না।?
প্রথম বারো ঘন্টা লজ্জা লাগে, তারপর আর লাগে না। চলুন এককাপ চা খাই।
এই অবস্থায় রেস্টুরেন্টে বসে চা খাবেন?
জ্বিনা। মাঠে বসব। ছোেট ছোট ছেলে আছে, তারা চা এনে দিবে। ভাইজান, টাকা আছে তো আপনার কাছে?
জ্বি আছে।
আমরা রেসকোর্সের মাঠে গিয়ে বসলাম। ভোলাবাবু বললেন, আচ্ছা, আপনার কি কখনো সাধু-সন্ন্যাসী হতে ইচ্ছা করে?
না।
করলে সরাসরি নাঙ্গা হয়ে যাবেন। ঈশ্বরের ধ্যান-ট্যান কিছু করতে হবে না। শুধু মনটাকে হাল্কা করে ছড়িয়ে দেবেন। ওতে কাজ হবে।
উপদেশের জন্য ধন্যবাদ।
আমি কিন্তু সাধু হিসেবে অনেক উপরের দরের। আপনি বোধহয় বিশ্বাস করছেন না।
না।
আপনার সম্পর্কে একটা ভবিষ্যদ্বাণী করছি। এই ভবিষ্যদ্বাণীটি হচ্ছে—আপনার জীবনটা কষ্টে কষ্টে কাটবে।
চমৎকার ভবিষ্যদ্বাণীর জন্য ধন্যবাদ।
সতের বছর এই রকম কাটবে, তারপর আপনার বিবাহ হবে। যে কন্যাটির সঙ্গে বিবাহ হবে সে আপনার চেয়ে খুব কম করে হলেও কুড়ি বছরের ছোট।
আমি তীক্ষ্ণ চোখে ভোলাবাবুর দিকে তাকালাম।
ভোলাবাবু হাসি হাসি মুখে তাকালেন। নরম গলায় বললেন, সতের বছর পর বুঝবেন—ভোলাবাবু নকল জিনিস না।
আমি কিছুই বললাম না।
ভোলাবাবু চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললেন–
খেপার মতন কেন এ জীবন,
অর্থ কী তার, কোথা এ ভ্রমণ,
কে তুমি গোপনে চালাইছ মোরে
আমি যে তোমারে খুঁজি।
এই কবিতাটা কার লেখা বলুন তো? বলতে পারলেন না। আমিও জানি না। একবার শুনেছিলাম, মনে গেঁথে আছে। মানুষের মন বড়ই বিচিত্ৰ টুকু সাহেব। বড়ই বিচিত্র।
Motamuti ekta golpo