মহাদেবের অনুচর
মহাদেবের আরও অনুচর ছিল । যথা কুবের, নন্দী, ভূঙ্গী, মহাকাল, গণদেবতাগণ, বেতাল, যোগিনী, ভৈরবী, যক্ষ, রাক্ষস ইত্যাদি। যক্ষ ও রাক্ষসদের জন্ম সম্বন্ধে রামায়ণে আছে –ব্ৰহ্মা প্ৰথম জল সৃষ্টি করেন । তারপর সেই জল রক্ষার জন্য প্ৰাণী সৃষ্টি করেন। প্ৰাণীদের মধ্যে যারা বলে যক্ষামঃ অর্থাৎ আমরা পূজা করব, তারাই যক্ষ হলেন । আর যারা বলল রক্ষামঃ অর্থাৎ আমরা জল রক্ষা করব, তার হল রাক্ষস । যক্ষদের রাজা কুবের । কৈলাসের অলকাপুরীতে তার বাসস্থান । কুবের মহাদেবের ধনরক্ষক । তিনি মানুষকে ধনপ্রদান করেন ।
ভৃঙ্গী ও মহাকাল দুজনেই শিবের অনুচর। শিব যখন একবার পাৰ্বতীর সঙ্গে বিহার করছিলেন, ভূঙ্গী ও মহাকাল দ্বাররক্ষক রূপে নিযুক্ত ছিল। গোপনে তারা শিব ও শিবানীর বিহার দেখে। এতে শিবানী ক্রদ্ধ হয়ে এদের মনুষ্যযোনিতে জন্ম হবে বলে অভিশাপ দেন । তখন ভৃঙ্গী ও মহাকাল শিবানীর কাছে প্রার্থনা করে যে শিব ও শিবানীও যেন মনুষ্যরূপে জন্মগ্রহণ করেন, কেননা তারা শিবানীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করতে চায় । শিব দক্ষের পৌত্র পৌষ্যের পুত্ররূপে জন্মগ্রহণ করে। তখন তাঁর নাম হল চন্দ্ৰশেখর। ওদিকে শিবানী ইক্ষাকুবংশীয় রাজা কুকুৎস্থের কন্যারূপে জন্মগ্রহণ করেন । তখন, তার নাম হল তারাবতী । চন্দ্ৰশেখরের সঙ্গে তারাবতীর বিবাহ হয় । তঁদের দুটি বানর পুত্র জন্মগ্রহণ করে । তারাই হচ্ছে বেতাল ও ভৈরব। এটা কালিকাপুরাণের কাহিনী । বামনপুরাণের অপর এক কাহিনী অনুযায়ী অন্ধকাসুরের সঙ্গে মহাদেবের যখন যুদ্ধ হয়, অন্ধক তখন মহাদেবের মাথায় পদাঘাত করে । তাতে মহাদেবের মাথা চারভাগে বিভক্ত হয়ে রক্তধারা নিৰ্গত হতে থাকে । এই রক্তধারা থেকে ভৈরবের জন্ম হয়। এ ভৈরবের নাম লম্বিতরাজ। তবে এছাড়া আরও ভৈরব ছিল যথা নন্দী, ভৃঙ্গী, মহাকাল ও বেতাল ।
গণদেবতারাও শিবের অনুচর। এদের অধিপতি গণেশ । গণেশের নিবাস কৈলাস। গণদেবতারাও কৈলাসে বাস করেন ।
যোগিনীরা শিবানীর সহচরী। তারা বিভিন্ন সময়ে শিবানীকে সাহায্য করে ও তাঁর আদেশ অনুসারে কাজ করে । যোগিনীরা সংখ্যায় চৌষট্টি জন । তাদের মধ্যে প্ৰধান হচ্ছে ভৈরবী । তিনি দশমহাবিদ্যার অন্যতমা ।