বাল্মীকি : মহাকবি, মহাঋষি এবং আর্যায়নের প্রতিনিধি
মহর্ষি বাল্মীকি চলেছেন আশ্রম ছেড়ে আচমনের পথে, সঙ্গে আছেন যোগ্য শিষ্য ভরদ্বাজ। প্রকৃতি রূপে বিমুগ্ধ হতে হতে বাল্মীকি উচ্চারণ করছিলেন বেদমন্ত্র। হঠাৎ তাঁর পায়ের সামনে লুটিয়ে পড়ে তীরবিদ্ধ রক্তাক্ত এক বিষণ্ণ ক্রৌঞ্চ। আবেশ আর মন্ত্রপাঠে ছন্দপতন ঘটে গেল মহর্ষির। এ দৃশ্যে মহর্ষি বেদনাহত হলেন, বেদমন্ত্রের পরিবর্তে উচ্চারিত মহর্ষির মৌলিক শ্লোক–
“মা নিষাদ প্রতিষ্ঠাং ত্বমগমঃ শাশ্বতীঃ সমাঃ।
যৎ ক্রৌঞ্চমিথুনাদেকমবধীঃ কমমোহিতম্।”
মহর্ষি বাল্মীকি নিষাদ বা ব্যাধকে অকারণে অভিসম্পাত করলেন।
প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক বীরেন্দ্র মিত্র তাঁর ভাষ্যে বলেছেন–“আসলে এই কাহিনিটি বাল্মীকি-প্রবর্তিত নবীন। শ্লোকচ্ছন্দ ও অপূর্ব কাব্যরচনার জন্মবৃত্তান্ত। এ কাহিনির সঙ্গে বাল্মীকির অনন্যসুলভ কবিত্ব উন্মেষের কথা সংশ্লিষ্ট আছে, নেই রামকাহিনির কোনো সম্পর্ক। কিন্তু রামায়ণ কথাকাব্যের মধ্যে কৌশলে এই বিচ্ছিন্ন ঘটনাটি সংযুক্ত করে দিয়েছেন কোনো বুদ্ধিমান পুরাণকার, যাঁর উদ্দেশ্য ছিল মহাকবি বাল্মীকির উপরে আর্য দেবায়নের মহামন্ত্রী ব্রহ্মার ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করা।”
স্বরাজ্যর প্রজাপতি হলেন ব্রহ্মা। তাই দেবস্তাবক পুরাণকার চাননি ব্রহ্মাকে অতিক্রম করে মহাকবির প্রতিষ্ঠা হোক। সেই উদ্দেশ্যেই তিনি রামকাহিনির সঙ্গে নবছন্দের উৎপত্তি-কথাকে জুড়ে দিয়ে ব্রহ্মাকেই পরমস্রষ্টা নির্মাণ করলেন। আর্য দেবায়তনপ্রধান ব্রহ্মা যখন বলছেন, আমার ইচ্ছাতেই তোমার দ্বারা এমত শ্লোকসৃষ্টি সম্ভব হয়েছে, তখন বাল্মীকি নতমস্তকে ব্রহ্মার সেই আত্মস্তুতি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন, আপন মেধা ও কৃতিত্বের অস্বীকৃতি হজম করে। হজম না-করেই-বা উপায় কী! কার ঘাড়ে কটা মাথা আছে যে, ব্রহ্মাসহ ব্রহ্মাবাদীদের তুচ্ছতাছিল্য করবে? তাঁদের মান্য না-করার ফল যে ভয়ংকর। তার এমন শোচনীয় অবস্থা হবে যে, গাছের লতাপাতা-পাখিপক্ষীরাও কাঁদতে থাকবে। ব্রাহ্মণ্যশক্তির সামান্যতম প্রতিবাদ যাঁরাই করেছেন, তাঁদেরই ঝাড়েবংশে সাফ করে দিয়েছে ব্রাহ্মণ্য-সন্ত্রাস। সেই ব্রাহ্মণ্য-সন্ত্রাসের মর্মন্তুদ কাহিনি রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণগুলির ছত্রে ছত্রে বর্ণিত আছে। যদুবংশের ধ্বংস, মহাপ্রস্থানের পথে পাণ্ডবদের রহস্যমৃত্যু, ধৃতরাষ্ট্র-গান্ধারী-কুন্তীর জীবন্ত অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু, কৃষ্ণের নির্জন-মৃত্যু, লক্ষ্মণের আত্মহনন, শাম্বের নির্বাসন সবই ব্রাহ্মণ্য-সন্ত্রাসের নমুনা। ব্রাহ্মণ্যবাদের শর্ত একটাই–কেবলমাত্র বিশ্বাস করো, কৈফিয়ত চেয়ো না, তর্ক করার দুঃসাহস দেখিয়ো না, নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করো। অন্যথায় সমূলে বিনাশ।
যাঁরা মনে করেন রামায়ণ একটি কল্পগল্প, বাল্মীকি বলে কেউ কোথাও কোনোদিন ছিলেন না, তাঁদের সঙ্গে আমি একমত নই। বাল্মীকি নিছক কোনো কল্পিত পুরষ নন, তিনি সম্পূর্ণ রক্তমাংসের সাধক মানুষ। বাল্মীকির রামায়ণও কবির মনোজগতের কল্পিত কাহিনি নয়, ব্রহ্মার সুপারিশ ও পৃষ্ঠপোষকতায় রাজা ও ব্রাহ্মণ্যবাদের বাল্মীকির স্তুতি। এমনই হুকুম ছিল।
তাহলে এত তর্ক কেন রামায়ণ আর রামকে নিয়ে? তর্কে অবকাশ তখনই এসে যায়, যখন বিকৃতি আসে। বিকৃতি? হ্যাঁ, বিকৃতি। বাল্মীকিকে সামনে রেখে পরবর্তী কবিরা যথেচ্ছভাবে বিকৃতি করেছেন অনুবাদের ছলনায়। কেউ অনুবাদ করেননি, সকল কবিই নিজের নিজের মনগড়া কাহিনি ফেঁদে বাল্মীকির কাহিনি বলে প্রচার করেছেন। কৃত্তিবাস, তুলসীদাস, রঙ্গনাথন প্রমুখ কবিরা বাল্মীকির রামায়ণে আমূল বিকৃতি করে ফেলেছেন। রামের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলতর করতে বাল্মীকির রামায়ণের বিকৃতি ঘটিয়েছেন তা নয়, তাঁরা নির্দ্বিধায় বাল্মীকির পরিচিতিকেই কালিমা লেপন করে দিয়েছেন। মহর্ষি মহাকবিকে ঠাঙাড়ে দস্যু, খুনি বানাতে একবারের জন্য কৃত্তিবাসের হাত কাঁপেনি। এ সময় হলে এদের বিরুদ্ধে অনুবাদের নামে তথ্য বিকৃতির অভিযোগ আনা যেত। যাঁরা মূল রামায়ণের বারোটা বাজিয়ে ছেড়েছেন তাঁরা মহান হলেন কী করে! মিথ্যার আবরণে প্রকত সত্য চিরকালের জন্য চাপা পড়ে গেল, তথাকথিত ধর্মবেত্তা ও বুদ্ধিজীবীরাও মুখ বুজে মেনে নিলেন। কেউ একটা প্রতিবাদ, একটা অভিযোগ করেননি। তাঁরাও গড্ডলিকাপ্রবাহে গা ভাসিয়ে দিলেন। আর তার ফলেই যত বিপত্তি, যত বিড়ম্বনা।
এ প্রসঙ্গে বীরেন্দ্র মিত্র লিখেছেন- “ইতিহাস কোনোকালেই অবশ্য অবিকৃত থাকে না। কোনো যুগেই সে যুগের অবিকৃত ইতিহাস রচিত ও প্রাপ্তব্য নয়। তা আগেও হয়নি, আজও হচ্ছে না। কারণ, যখনই যিনি অথবা যে বংশ ক্ষমতায় থাকেন, পুরাণ বা ইতিহাস তখন তাঁর অথবা সেই ক্ষমতাধীশ বংশের গুণকীর্তনকারী মিথ্যাভাষণের বিকৃত স্কুপে পরিণত হয়। যশ-পুরস্কারলোভী বুদ্ধিজীবীরা সেই বিকৃতি ঘটিয়ে নিজেদের আখের গোছান। ক্ষমতাধীশের শত্রুপক্ষ এবং সমকক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রকৃত কীর্তি গায়েব হয়ে যায়, ফলে জাতীয় ইতিহাস সর্বযুগেই গদীনসীনের কীর্তিঘোষক পুরাণে পর্যবসিত হয়।”
মূল সংস্কৃত ভাষায় রচিত রামায়ণটিই বাল্মীকির। যদিও বোর মনে করেন, বাল্মীকির রামায়ণের আগে দশরথজাতক’ নামে বৌদ্ধগ্রন্থটি রচিত হয়েছে। বর্তমানে সংস্কৃত ভাষার যে রামায়ণটির সর্বশেষ সংস্করণ আমরা পাই তা যে আদিরূপে নয়, তা প্রায় সব গবেষকই মেনে নিয়েছেন। রামায়ণ একক কোনো বাল্মীকির রচিত নয়। অসংখ্য কবিদের বিভিন্ন সময়ে সংযোজন-বর্জনের মধ্য দিয়েই আজকের রামায়ণ। তবে ভাবতে অবাক লাগে, প্রায় সমমানের কবি আমাদের দেশে এত ছিল। অনেকে মনে করেন, বাল্মীকি বা নারদ কেউ নয়, রামকথার স্রষ্টা রাম নিজেই। পর্যটক নারদ সেটাই প্রত্যক্ষভাবে জানিয়াছেন, বাল্মীকি তাঁর মুখে শুনতে চাইলেন। মনে হয় বাল্মীকি লোকমুখে যা শুনেছিলেন তা সত্য কি না জানার জন্য (verify) সর্বজ্ঞ যোগী নারদকে জিজ্ঞাসা করলেন। অনেকে বলেন, বাল্মীকি নারদের মুখে রাম কাহিনি প্রথম শুনেছিলেন, সুতরাং বাল্মীকি রাম কাহিনির স্রষ্টা নন। প্রচলিত একটি কাহিনি ইত্যাদি। একথা বোধহয় বলা যায় না। কারণ বাল্মীকি জিজ্ঞাসা করলেন
“কো স্বস্মিন্ সাম্প্রতং লোকে গুণবান কশ্চ বীৰ্য্যবান।।
ধর্মজ্ঞশ্চ কৃতজ্ঞশ্চ সত্যাবাক্যো দৃঢ়তঃ” ইত্যাদি।
‘সাম্প্রতম’–বর্তমান সময়ে, ইহলোকে এই ভূখণ্ডে কে এমন ব্যক্তি আছেন যিনি গুণবান বীর্যবান প্রভৃতি গুণসম্পন্ন? নারদ তপঃ স্বাধ্যায়রত’, বাল্মীকিও তপস্বী–উভয়ই জ্ঞানী। যেমন প্রশ্ন–এর উত্তর কি একটি ‘প্রচলিত কাহিনি’ হবে? এটা কি বর্তমান ব্যক্তি, না কল্পিত ব্যক্তি? দশরথ-তনয় রাম যে বাল্মীকির সমসাময়িক, সেটি পূর্বাপর ঘটনাবলির দ্বারাই প্রমাণিত।
কে এই বাল্মীকি? ইনি কি ভার্গব বংশজাত স্বয়ং বাল্মীকি চ্যবণ? ইনি কি অনার্য বংশজাত মহাকবি বাল্মীকি? বস্তুত তাঁর সম্বন্ধে ভরসা করার মতো ঐতিহাসিক বা পৌরাণিক কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। কৃত্তিবাসের রত্নাকর দস্যু থেকে বাল্মীকিতে পরিণত হওয়ার গল্প তো আগেই আলোচনা করেছি। মূলত হাতের কাছে নিজাম দস্যু বা ডাকাতের নিজামউদ্দিন আউলিয়া হওয়ার ঘটনাকে ঝেড়ে রত্নাকর দস্যু থেকে বাল্মীকির হয়ে যাওয়ার গল্প ফেঁদেছেন কৃত্তিবাস–পাপে পরিপূর্ণ (কতটা পাপ করলে পরিপূর্ণ হয় এবং ‘রাম’ শব্দটি উচ্চারণ করা যায় না, সে ব্যাপারে কোনো নির্দেশিকা কোনো শাস্ত্রে পাই না। রত্নাকর তো কেবলই ডাকাতি করতেন। এবং হত্যা করতেন। অবশ্য মহাপাতক’ বলে একটি শব্দ পাওয়া যায়, বলা হয়েছে তাঁরাই মহাপাতক যাঁরা ব্রহ্মহত্যা, সুরাপান, ব্রাহ্মণের ধন অপহরণ, গুরুপত্নী গমন ইত্যাদি করে।) দস্যু ‘রাম’ উচ্চারণ করতে পারে না। তাই মরা মরা বলতে বলতে উলটো উচ্চারণে ‘রাম রাম’ বলতে শিখেছেন। আসলে বোধহয় কৃত্তিবাস বলতে চেয়েছেন জীবনভর ‘রাম রাম’ জপ করলে শত মহাপাতকও মুক্তি পায়। বাল্মীকি যেকথা লঙ্কাকাণ্ডের শেষ অধ্যায়ে বলেছেন, সেটাই কৃত্তিবাস শুরুতেই বলে নিয়েছেন, যাতে ভক্তপাঠকগণ শুরু থেকেই রামকে ‘ভগবান’ হিসাবে সমীহ করেন। অথচ বাংলা ভাষা ছাড়া আর অন্য কোনো ভাষাতেই, বিশেষ করে সংস্কৃত ভাষাতে মরা’ শব্দ উচ্চারণ করতে করতে মরে গেলেও ‘রাম’ বলার সুযোগ নেই।
বেশিরভাগ বাঙালির কাছে রামায়ণজ্ঞান হল কৃত্তিবাসের শ্রীরাম পাঁচালী’ বা ‘কৃত্তিবাসী রামায়ণ’। বাল্মীকির রামায়ণের সঙ্গে পরিচয় খুব বাঙালিরই আছে। কৃত্তিবাসী রামায়ণকে যেভাবে পাই কৃত্তিবাস নামক কোনো একজন বিশিষ্ট কবি যে তাঁর কাব্যপুথি গুণগ্রাহীদের হাতে তুলে দিয়ে গেছেন, গবেষণায় এমন কোনো সূত্র পাওয়া যায়নি। তা ছাড়া পল্লবগ্রাহিতা এবং প্রক্ষিপ্ত রচনার বাহুল্যের জন্য কৃত্তিবাসী রামায়ণ’ অপ্রামাণিকতা দোষে দুষ্ট।
বাল্মীকি যেহেতু রামচন্দ্রের সমসাময়িক, সেই কারণে তাঁর জীবনের বহু ঘটনার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত। তা ছাড়া সীতার শেষ জীবনও কেটেছিল বাল্মীকির আশ্রমে। সুতরাং ধ্যান করার প্রয়োজন নাই, সীতার মুখে বাল্মীকি অবশ্যই রামচন্দ্রের বনবাস জীবনের সকল ঘটনা জেনেছেন। গর্ভবতী অবস্থায় সীতার নির্বাসন ও বাল্মীকির আশ্রমে আশ্রয়লাভ হয়েছিল। সেখানে লবকুশের জন্ম ও কৈশোরকাল অতিবাহিত হয়। যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত শত্রুয় লবণবধের উদ্দেশ্যে মধুপুরী যাওয়ার কালে শ্রাবণ মাসে লবকুশের জন্ম। মথুরায় (মধুপুর) শাসন প্রতিষ্ঠিত করে দশ বছর পরে শত্রুঘ্ন যখন রামচন্দ্রকে দর্শনের উদ্দেশ্যে অযোধ্যা যান তখন একরাত্রি বাল্মীকির আশ্রমে বাস করার কালে রামায়ণ গান শুনেছিলেন। বাল্মীকি স্বয়ং ঐতিহাসিক রামচন্দ্রের সকল ঘটনার সঙ্গে সম্যকভাবে পরিচিত ছিলেন। এরপর আর প্রয়োজন হবে কেন নারদের কাছ থেকে রামকথা শুনে যাচাই করে নেওয়ার?
বাল্মীকি সংস্কৃত সাহিত্যের আদিকবি নামে কথিত। বাল্মীকিকে আদিকবি বা কবিগুরু বলার কারণ, প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, তিনিই প্রথম সংস্কৃত কাব্যে শ্লোকের রচয়িতা। তাঁকে ‘রামায়ণ’ ছাড়াও যোগবাশিষ্ঠ’ নামক অপর এক হিন্দু ধর্মগ্রন্থের রচয়িতাও মনে করা হয়। বাল্মীকিধর্ম ‘রামায়ণ’ ও ‘যোগবাশিষ্ঠ গ্রন্থদ্বয়ে বর্ণিত বাল্মীকির শিক্ষা অবলম্বনে সংগঠিত একটি ধর্মীয় আন্দোলন। মুনিবর শিষ্যগণকে নিয়ে আশ্রমে উপবিষ্ট আছেন, এমন সময়ে ব্রহ্মা উপস্থিত হলেন। তিনি ব্রহ্মাকে ব্যাধ-বৃত্তান্ত বলে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করে শোনান। ব্রহ্মা বললেন–“শোকের সময় এটি তোমার মুখ হতে নিঃসৃত হয়েছে। অতএব, এটি শ্লোক নামে অভিহিত হোক”। তুমি এরূপ শ্লোকে রামচরিত আখ্যায়ক রামায়ণ গ্রন্থ রচনা করো। সেই অনুসারে মুনিবর বাল্মীকি রামায়ণ রচনা করেন। শোক থেকে উৎপন্ন এই সংস্কৃত সাহিত্যের প্রথম শ্লোক। পরবর্তীকালে এই শ্লোকের ছন্দেই বাল্মীকি সমগ্র রামায়ণ রচনা করেন। এই কারণে এই শ্লোকটিকে সংস্কৃত সাহিত্যের প্রথম শ্লোক, রামায়ণকে প্রথম কাব্য ও বাল্মীকিকে ‘আদিকবি’ নামে অভিহিত করা হয়।
এই রামায়ণ ছয়টি (মতান্তরে সাতটি) কাণ্ড বা খণ্ডে বিভক্ত ছিল। রামায়ণের উপজীব্য অযোধ্যার রাজকুমার রামের জীবনকথা। খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ থেকে ১০০ অব্দের মধ্যে কোনো এক সময়ে এই মহাকাব্য রচিত হয়। এই মহাকাব্য মহাভারতের পূর্বসূরি। খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দী থেকেই বাল্মীকিকে ধ্রুপদি সংস্কৃত সাহিত্যের জনক মনে করা হতে থাকে। অশ্বঘোষের ‘বুদ্ধচরিত’ কাব্যে আছে–“বাল্মীকির কণ্ঠস্বর এমন এক কাব্য উচ্চারণ করেছিল যা মহাদার্শনিক চ্যবনও রচনা করতে পারেননি।’ এই উক্তি ও তার পূর্বাপর শ্লোকগুলির বক্তব্য থেকে বাল্মীকি ও চ্যবনের মধ্যে একটি পারিবারিক সম্পর্কের কথা অনুমিত হয়ে থাকে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাল্মীকি কর্তৃক রামায়ণ রচনার নেপথ্য-আখ্যান অবলম্বনে ‘বাল্মীকি-প্রতিভা গীতিনাট্যটি রচনা করেছিলেন। তবে বাল্মীকির রামায়ণের শেষভাগে জানা যাচ্ছে যে রামচন্দ্র যশোলাভেই বাল্মীকিকে রামকাহিনি লিখতে বলেছিলেন–“ভগবান! এই সমস্ত ব্ৰহ্মলোকাই ঋষি আমার ভবিষ্যচরিত শুনিতে উৎসুক হইয়াছেন, অতএব আগামীকল্য হইতে তাহা আরম্ভ করুন।”
জিতেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর “রামায়ণের উৎস কৃষি” গ্রন্থে বলেছেন–“শোকবিহ্বল বাল্মীকির কণ্ঠ হতে শ্লোক উগ্নীত হওয়ার পরক্ষণেই ছন্দোবদ্ধ তন্ত্ৰীলয়সমন্বিত অভিশাপ বাণীর মধ্যে বাল্মীকি ‘বেদ অপৌরুষেয়’ এই নির্ণয় করে বিস্মিত হলেন ভেবে নিতে একটু অসুবিধা হচ্ছে। কেননা অভিশাপকালে কি কেউ অভিশাপ বাণীটি ছন্দোবদ্ধ ও তন্ত্ৰীলয়সমন্বিত করে তোলার জন্য সচেতন থাকেন? এও যদি সম্ভব হয় তাহলে বাণীটি উদ্গীত হওয়ার পরক্ষণেই তাৎক্ষণিক পরিবেশ ও ঘটনা ভুলে বাণীটির ছন্দ ও সুর নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করতে পারেন?”
রামায়ণ তথা পৌলস্ত্যবধ কাব্য রচয়িতা বাল্মীকি ছাড়াও আরেকজন বাল্মীকির কথা জানা যায়। তিনি ভৃগুপুত্র চ্যবণ। চ্যবণই হলেন আদি বাল্মীকি। অনেক পণ্ডিতগণ মনে করেন, রামায়ণের রচনা শুরু হয়েছিল আদিকবি চ্যবণেরই হাতে। অশ্বঘোষের মতে, রামায়ণের বাল্মীকি হলেন চ্যবণ অথবা চ্যবণপুত্র অথবা চ্যবণ বংশজাত ভার্গবাকেউ বলেন বাল্মীকি বরুণের পুত্র। বল্মীক মানে উইপোকার ঢিবি, উইপোকার ঢিবি বা বল্মীক আকৃতির মাটির ঘরে বাল্মীকি বাস করতেন এ কাহিনি অনেক জায়গায় পাওয়া যায়। এমন ঘরে বাস করতেন বলেই চ্যবণ মুনি বাল্মীকি নামে পরিচিত ছিলেন। ভারতের একটি অনার্য জাতি বাস করেন, তাঁরা বাল্মীকি, তাঁদের পদবি বাল্মীকি–রামায়ণ রচয়িতা এঁদেরই পূর্বপুরুষ কি না, ভাবা যেতে পারে। অপরদিকে ‘ভিল রামায়ণ’-এর ভিলরা বাল্মীকির বংশধর বলে দাবি করেন। ভিল রামায়ণে বাল্মীকির নাম রত্নাকর ভিল। রামায়ণে উল্লিখিত দক্ষিণ কোশলের (বর্তমানে ছত্রিশগঢ়) যে অঞ্চলে বাল্মীকির আশ্রয় ছিল বলে দাবি করা হয়, সেই অঞ্চলটি মূলত ভিল জাতির আদি বাসস্থান, বিন্ধ্যপার্বত্য অঞ্চল। ঐতিহাসিক রোমিলা থাপার সহ অনেক ঐতিহাসিকই মনে করেন, রামায়ণের রাম-রাবণের যুদ্ধের মূল কাহিনি এসেছে বিন্ধ্য পার্বত্য অঞ্চলের দুই গোষ্ঠীর লড়াই থেকে। তবে নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী বাল্মীকিকে আদিবাসী বা বনবাসী মানুষ বলে স্বীকার করেন না, তাঁর মতে বাল্মীকি ভার্গব ব্রাহ্মণ। অপরদিকে মহাভারতের দ্রোণপর্বের চতুর্থ অধ্যায়ে উল্লেখ আছে–বাল্মীকি একটি জাতিবিশেষের নাম। বাল্মীকি মানে বল্মীকভব। বাল্মীকি কোনো ব্যক্তিবিশেষের নাম নয়। বাল্মীকি হল একটি পদবি এবং বাল্মীকি পদবির মানুষরা ভারতের মুক্তিসংগ্রামের কাহিনি লিখেছেন। বর্তমানে ওরা মেথরের কাজ করেন। বল ধাতু আর কীক প্রত্যয় জুড়ে বল্মীক শব্দটি নিষ্পন্ন হয় (বল + কীক = বল্মীক)। বল ধাতুর সঙ্গে কীক জুড়তে গেলে মাঝে একটি ম আসে, একে বলে বর্ণের আগম বা বর্ণাগম। বল্মীক মানে শুধু উইঢিবি নয়, এখানে বল্মীক মানে সংগৃহীত ঘটনাপরম্পরার স্তূপ।পাণিনি বলেছেন–‘বাল্মীকি বাৎস্যায়ন গোত্রের নাম। বাল্মীকি জাতিরা অধুনা দিল্লির কাছে বসবাস করে এবং এঁরা অস্পৃশ্য। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেছেন–তিনি রাজা দশরথের সমসাময়িক ভৃগুবংশীয় আর্য ব্রাহ্মণ। তাঁর কবিখ্যাতিও সম্প্রসারিত ছিল। সেই খ্যাতি শুনে আর্যদেবতা ব্রহ্মা পদাধিকারী স্বয়ং আসেন তাঁকে রামায়ণ রচনার ভার অর্পণ করতে। কারও মতে বাল্মীকির আগে রামায়ণ রচনার চেষ্টা করেন শতপথ ব্রাহ্মণ ও মহাভারতের পৌরাণিক ঋষি চ্যবন। আচার্য সুনীতিকুমারের মতে, ভৃগুবংশীয় ঋষি চ্যবন বাল্মীকির পূর্বপুরুষ এবং তপস্যাকালে তাঁর বল্মীকস্তূপে পরিণত হওয়ার অলৌকিক কাহিনিটি বাল্মীকির কবিখ্যাতির সুন্দরভাবে মিশে গেছে। মহাভারতের চ্যবনকে ভৃগুপুত্র ভার্গব বলা হয়েছে। ডঃ ভবতোষ দত্ত এ বিষয়ে বলেছেন–ভৃগুবংশে বল্মীকাচ্ছাদিত হওয়ায় কিংবদন্তী থাকায় প্রত্যেকেই বাল্মীকি নামে পরিচিত হতেন। না-হলে বাল্মীকি যুদ্ধকাণ্ডের শেষে কেন লিখবেন–“আদিকাব্যমিদং চার্যং পুরা বাল্মীকি কৃত”, অর্থাৎ পুরাকালে ঋষি বাল্মীকি এই আদিকাব্য রচনা করেছিলেন। স্বয়ং গ্রন্থ রচনা করে বাল্মীকি একথা লিখলেন কেন? তাহলে কি এটি পরবর্তী সংযোজন? নাকি মহাকবি বাল্মীকি স্মরণ করেছেন আর-এক বাল্মীকিকে? তাহলে এই বাল্মীকি কি উত্তরকাণ্ড ও বালকাণ্ডের প্রথমাংশের রচয়িতা, যিনি অযোধ্যাকাণ্ড থেকে লঙ্কাকাণ্ডের বাল্মীকির কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন বা ঋণ স্বীকার করছেন? উত্তরকাণ্ডে বাল্মীকির আশ্রমে সীতার অবস্থান, লবকুশের জন্ম এবং তাঁদের রামায়ণ শিক্ষা, লক্ষ্মণবর্জন, শম্বুক হত্যা, সদলবল মিলে সরযূ নদীতে প্রাণবিসর্জনই প্রধান ঘটনা। দুটো ঘটনাকে মেলানো যায় না। পরের বাল্মীকি হয়তো কেবলমাত্র উত্তরকাণ্ডেরই দর্শক। এই অংশে তাই বাল্মীকির উপস্থিতি লক্ষ করা যায়, যিনি ব্রাহ্মণ্যবাদের পৃষ্ঠপোষক। যেমন অধ্যাত্ম রামায়ণের বাল্মীকি অরণ্যকাণ্ড থেকেই স্বয়ং দর্শক হয়ে উপস্থিত আছেন। সাম্প্রতিককালের পণ্ডিতরা বলছেন সমগ্র উত্তরকাণ্ড এবং বালকাণ্ডের চারটি সর্গ পরে সংযোজিত হয়েছে। এই দুই অংশের ভাষা ও রচনারীতিও স্বতন্ত্র। এ বাল্মীকি নিশ্চয় আদিকবি বাল্মীকি নন। আদিকবি বাল্মীকির রচনা কেবলমাত্র অযোধ্যাকাণ্ড থেকে লঙ্কাকাণ্ড।
গোটা রামায়ণে বাল্মীকি রচিত মহাকাব্য পেলেও, একেবারে শেষ অংশে (উত্তরকাণ্ডে) এসে আমরা বাল্মীকিকেই পেয়েছি। বাল্মীকি এ পর্যায়ে এসে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। গর্ভ লক্ষণাক্রান্ত সীতাকে নির্জন শ্বাপদসংকুল জঙ্গলে লক্ষ্মণ পরিত্যাগ করে এলে তখন বাল্মীকির সঙ্গে সীতার দেখা হয়। পরিত্যক্ত সীতাকে তাঁর আশ্রমে এনে কন্যাস্নেহে পালন করেছিলেন। সীতা এই আশ্রমে প্রায় দশ বছর ছিলেন। এই দশ বছরে সীতার খবর অযোধ্যার কেউ নেয়নি, রামও নয়। তবে কুশ ও লবের জন্মরাত্রে শত্রুয় এসেছিলেন বাল্মীকির আশ্রমে। না, বউদি সীতা এবং ভাইপো দেখতে তিনি আসেননি, এসেছিলেন নিজের কাজে। রাত্রিযাপনের জন্যই কেবল বাল্মীকির আশ্রমকে তিনি ব্যবহার করেছিলেন।
বাল্মীকি সীতার গর্ভজাত যমজ সন্তান কুশ ও লবকে রামায়ণ গানে পারদর্শী করে তুলেছিলেন। একদিন সেই প্রশস্তিমূলক রামায়ণ গান শোনাতে লবকুশকে সঙ্গে নিয়ে রামের যজ্ঞসভায় পৌঁছে যান বাল্মীকি। সীতার ‘আত্মশুদ্ধি’-র পরীক্ষার সময়েও বাল্মীকি রামচন্দ্রের রাজসভায় স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন। বাল্মীকির কাছে দশ বছর যাবৎ আশ্রিতা সীতা দশমবর্ষীয় দুই বালকের মাকে আবার সন্দেহ। যজ্ঞসভায় উপস্থিত সকলের সামনে রামচন্দ্র বললেন–সীতাকে যদি পাপস্পর্শ না-করে থাকে, তাহলে তিনি যেন এখানে উপস্থিত হয়ে আত্মশুদ্ধি করেন। আসলে সীতা বিসর্জনের দশ বছর পরও সীতা এখনও বেঁচে আছেন, এটাই তো রামের কাছে অবিশ্বাস্য। বিগত দশ বছরে রাম একবারের জন্যেও খবর নেননি স্ত্রী বেঁচে আছেন না মরে গেছেন। মনে মনে সীতাহীন জীবন মেনে নিয়েই রাম উদবেগহীন দশ-দশটা বছর কাটিয়ে দিল! তাই সীতাদেবী চোখের আড়াল যেমন হয়েছেন, মনের আড়ালও হয়ে গেছেন।
সীতাকে নিয়ে সভায় আসতে বাল্মীকি সম্মত হয়েছেন। বাল্মীকি সভাস্থলে প্রবেশ করলেন, সঙ্গে সীতাও। সীতাকে শপথ নিয়ে আজ আত্মশুদ্ধি করে সতী কি না প্রমাণ দিতে হবে। বাল্মীকি রামচন্দ্রের অমূলক সন্দেহ নিরসনের চেষ্টা করতে লাগলেন। রাম-রাবণ-বান্দর-ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়-শূদ্র সকলেই যখন সীতাকে ‘অপবিত্র’ সাব্যস্ত করেই চললেন, তখন বাল্মীকিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি বললেন–“এই দুই যমজ কুশীলব জানকীর গর্ভজাত। আমি সত্যই কহিতেছি, ইহারা তোমারই ঔরসজাত পুত্র। দেখো, আমি পুত্ৰপরম্পরায় প্রচেতা হইতে দশম। আমি যে কখনও মিথ্যা কহিয়াছি, ইহা আমার স্মরণ হয় না। এক্ষণে আমার বাক্যে বিশ্বাস করো, ইহারা তোমারই ঔরসজাত পুত্র। আমি বহুকাল তপস্যা করিয়াছি, এক্ষণে যদি জানকীর চরিত্রগত অনুমাত্রও ব্যতিক্রম ঘটিয়া থাকে, তবে আমায় যেন সেই সঞ্চিত তপস্যার ফলভোগ করিতে না-হয়। আমি এ যাবৎকাল কায়মনোবাক্যে কখনও পাপাঁচরণ করি নাই; এক্ষণে যদি জানকী নিষ্পাপ হন, তবে সেই পাপ না-করিবার ফল আমায় যেন ভোগ করিতে হয়।…জানকীকে শুদ্ধাচারিণী বুঝিয়া বন হইতে লইয়া আসি। এক্ষণে এই পতিপরায়ণা তোমার মনে আত্মশুদ্ধির প্রত্যয় উৎপাদন করিবেন।” মহামুনি বাল্মীকির শপথবাক্যকে রামচন্দ্র এভাবে হেলায় দূরে ঠেলে দেবে সে কথা স্বয়ং ভাবতে পারেননি। রামচন্দ্র অবিচল, সিদ্ধান্তে অটল। সীতাকে আর কোনো প্রয়োজন নেই। সীতার থাকা আর সীতার যাওয়ার মধ্যে কোনো প্রভেদ নেই। অতএব চিতা সাজাও এবং পোড়াও। সীতার শেষতম আশ্রয়দাতা বাল্মীকিও সীতাকে রক্ষা করতে পারলেন না। তবে বাল্মীকির উপস্থিতিতেই সীতা রামের আদেশকে অগ্রাহ্য করলেন। তিনি পরীক্ষা দিলেন না। স্পর্শাস্পর্শের বিষয়ে কোনো কৈফিয়ত পর্যন্ত দিলেন না। পৃথিবী বিদীর্ণ হলে তার মধ্যে সীতা প্রবেশ করলেন। এই পাতাল প্রবেশের ঘটনা হরপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মতে, “বাস্তব অবস্থার পটভূমিকায় একথা মনে করা বোধহয় অসংগত হবে না যে, যজ্ঞস্থলের কোনো খনিত কূপে অথবা কোনো যজ্ঞকুণ্ডে আত্মবিসর্জন দিয়েছিলেন সীতা।” বাল্মীকির আশ্রমে বাস করেও সীতা রেহাই পেলেন না৷ আসলে লঙ্কা জয়ের পর (ভুল বললাম। লঙ্কা জয়ের পর নয়, আরও অনেক আগে রাবণ কোলে চাপিয়ে সীতাকে হরণের কাহিনি জটায়ুর কাছ থেকে শোনার পর থেকেই। “অঙ্ক, আরোপ্য তু পুরা রাবণেন বলা ধৃতা”–ওহে সীতা, তোমাকে তো রাবণ কোলে তুলে নিয়ে গিয়ে তাঁর রথে চাপিয়ে ছিল। সুতরাং তোমার সতীত্ব তো প্রশ্নাতীত নয়া) থেকে রাম সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছেন যে তিনি আর স্ত্রীকে গ্রহণ করবেন না। তাই তিনি তিন-তিনবার নিজের স্ত্রীকে সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছেন। একবার শ্বাপদসংকুল গভীর জঙ্গলে, দু-বার লেলিহান আগুনে। সিদ্ধান্ত যখন পূর্বেই স্থির হয়ে আছে, তখন বাল্মীকি কেন স্বয়ং ভগবান বিষ্ণু এলেও তা নড়চড় হওয়ার উপায় নেই। এ কোন্ রাম, যিনি বাল্মীকিকে অপমান করেন, নিজপুত্রদের স্বীকার করেন না! নিশ্চয় এ রাম সেই প্রেমিক রাম নয়, রাজা রাম বটে! অবাক হই না, কারণ পূর্বে তিনি সর্বসমক্ষে বলেই দিয়েছেন “কুকুরে চাটা ঘি ভোগ করা যায় না”। অতএব ‘আপ রুচি খানা, পর রুচি পরনা। তবে অনেকে মনে করেন উত্তরকাণ্ডের বাল্মীকি আদি কবি নন, ইনি তৎকালীন জনৈক প্রচেতা বংশীয় দশম পুরুষ। অতএব উত্তরকাণ্ডের ঘটনাগুলি ইতিহাস বলে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া যায় কি? কেন নয়? প্রক্ষিপ্ত হতেই পারে। তাই বলে ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই একথা বলা যায়। ব্রাহ্মণ্যবাদের উত্থান এই পর্বতেই, যা ঐতিহাসিকভাবে সত্য।
মুনিবর বাল্মীকির শেষ পরিণতি বা মৃত্যু সম্বন্ধে কিছুই জানা যায় না।