০৯. বক্তব্য শেষ করবেন কীভাবে
আপনি কি জানতে চান বক্তব্যের কোনো-অংশে আপনি অনভিজ্ঞতা বা অভিজ্ঞতা, অনুপযুক্ততা অথবা আকর্ষণ প্রকাশ করবেন? তা হচ্ছে সূচনা ও শেষ। থিয়েটারে নায়ক নায়িকাঁদের সম্পর্কে একটি অতি পুরাতন প্রবচন প্রচলিত আছে। তা হচ্ছে, “প্রবেশ ও প্রস্থান দিয়ে আমরা তাদের চিনি।”
শুরু ও শেষ। যে কোনো কাজে দক্ষতা প্রকাশ অত্যন্ত কঠিন কাজ। উদাহরণ স্বরূপ, সামাজিক অনুষ্ঠানে আকর্ষণীয় প্রবেশ এবং আকর্ষণীয় প্রস্থান কী উল্লেখযোগ্য কাজ নয়? ব্যবসায়িক আলোচনায় শ্রোতাকে নিজমতে আনা এবং সাফল্য অর্জন করা কী অত্যন্ত কঠিন কাজ নয়?
যে কোনো বক্তৃতায় সমাপ্তি হচ্ছে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ দিক। বক্তা সব শেষে যা বলেন, যে সব শব্দ উচ্চারণ করেন তা শ্রোতাদের কানে অনুরণিত হয়, দীর্ঘ কাল জাগরুক থাকে, স্থায়ী হয়। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষার্থীরা এর গুরুত্ব সঠিক ভাবে উপলব্ধি করতে পারে না। ফলে তাদের সমাপ্তি হয়-রন্ধ্রযুক্ত, ত্রুটিপূর্ণ।
তাদের সাধারণ ভুল কী? এক্ষেত্রে আমরা তার কিছু আলোচনা করব এবং এর প্রতিবিধান অনুসন্ধান করব।
প্রথম, এরূপ বক্তাও আছেন যারা বলেন, “এটাই এই বিষয়ে আমার মোটামুটি বক্তব্য, সুতরাং আমার মনে হয় এখানে শেষ করা উচিত, তাই আমি শেষ করছি,“ এটা সুষ্ঠু সমাপ্তি নয়। এরূপ সমাপ্তি ভুল, এটা আনাড়ীপনা? এটা ক্ষমার অযোগ্য, এটাই যদি আপনার বক্তব্য হয় তবে কেন তা বলে শেষ করছেন এই অভিমত প্রকাশ না করে বক্তব্য শেষ করছেন না? এরূপ করলে আপনার বক্তব্য শেষ হয়েছে তা শ্রোতারা বুঝবে, এতে আপনার অভিরুচিতে তেমন খারাপ কিছু দেখা যাবে না। আপনার বক্তব্য শেষ হয়েছে, এটা বলে না দিয়ে শ্রোতাদের তা উপলব্ধি করতে দিন।
এ ধরনের বক্তাও আছেন যারা বলেন, আমার যা কিছু বলার ছিল আমি বললাম। অতঃপর তিনি শেষ করেন, কিন্তু কীভাবে শেষ করা দরকার তা তিনি জানেন না। জোস বিলিং জনগণকে এই মর্মে উপদেশ দিতেন যে, ষাঁড় সম্পর্কে বলতে হলে তার লেজ নিয়ে শুরু করুন, শিং দিয়ে নয়। আমার মতে, লেজ দিয়ে অর্থাৎ শেষের দিক থেকে শুরু করলে শিং সম্পর্কে অর্থাৎ আগা সম্পর্কে যথাযথ বলা সম্ভব হয় না। এই ধরনের বক্তারা ঘুরেফিরে এক কথা বলেন। ফলে আসল কথা তাদের বলা হয় না, শ্রোতারা তাদের বক্তৃতা হতে কিছু বুঝতে পারেন না। তাদের বক্তৃতা শ্রোতামনে খারাপ ধারনার সৃষ্টি করে।
প্রতিকার কী? বক্তৃতার শেষ টুকু অর্থাৎ সমাপ্তি বা উপসংহার পরিকল্পিত হওয়া উচিৎ নয় কি? যখন আপনি কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে বলছেন তখন বিষয়টি যাতে শ্রোতামনে দাগকাটে, শ্রোতাদের প্রভাবিত করে সেদিকে আপনার লক্ষ্য রাখা উচিৎ নয় কি? তা কী সুস্পষ্টভাবে শান্ত ভাবে বলার পরিকল্পনা আগে থেকেই করা প্রয়োজন নয়?
ওয়েবেস্টার, ব্রাইট গ্লাড-স্টোনের মতো খ্যাতনামা বক্তারা, ভাষার ওপর যাদের দখল ছিল প্রশ্নাতীত তারাও বক্তৃতা লিখে নিতেন এবং উপসংহারে ব্যবহার্য শব্দগুলো মুখস্থ করে নিতেন।
প্রাথমিক শিক্ষার্থীরা এপথ অনুসরণ করলে ভুল করবেন। তাকে মুখস্থ রাখতে হবে তিনি কী বলতে চান তা সম্পূর্ণরূপে। সমাপ্তি অর্থাৎ উপসংহার তাকে বার-বার পুনরাবৃত্তি করতে হবে, প্রস্তুতি নিতে হবে, তবে প্রতিবারে একই শব্দ ব্যবহার না করলেও চলবে। কিন্তু চিন্তা ভাব ও ভাষা একই রাখতে হবে? মৌখিক বক্তৃতা করা কালে শ্রোতাদের মনোযোগ, মতিগতি, লক্ষ্য করে অনেক সময় পরিবর্তন করতে হয়, পরিবর্ধন করতে হয়। কখনো-কখনো বক্তব্যকে, ভাষাকে কঠিন করে প্রকাশ করতে হয়, কখনো বা হাস্যকৌতুক যোগ করতে হয়। সুতরাং যে কোনো বক্তৃতার দুটি বা তিনটি সমাপ্তি বা উপসংহার পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। শ্রোতাদের আস্থা অর্থাৎ মনোযোগ ও মতি গতির সাথে সঙ্গতি পূর্ণ উপসংহার তাহলেই পেশ করা সম্ভব।
কিছু বক্তা কখনো উপসংহারে পৌঁছেন না? বক্তৃতার মাঝ পথেই তারা থেমে যান, শেষ করে ফেলেন। এই ধরনের বক্তার জন্যে অধিকতর প্রস্তুতি বার-বার পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে শিখে নেয়া, প্রস্তুতি নেয়া উচিৎ। বারবার পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে প্রস্তুতি না নিলে তাদের পক্ষে বক্তৃতা শেষ করা সম্ভব নয়।
অনেক শিক্ষানবিশ বক্তৃতাকালে অপ্রত্যাশিতভাবে বক্তব্য শেষ করে ফেলেন। তাদের সমাপ্তির পদ্ধতি বিধিনিয়মের আওতাভুক্ত নয়, সুন্দর নয়। সত্যিকথা বলতে গেলে তাদের বক্তৃতায় কোনোরূপ সমাপ্তি বা উপসংহার নেই, যা আছে তা হচ্ছে অপ্রত্যাশিত সমাপ্তি। সুতরাং এইরূপ বক্তব্যের ফল কল্যাণকর হয় না। এটা একটা সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করে কোনো একজন বন্ধু কর্তৃক বিদায় জানিয়ে, স্বাগতিককে না বলে বিদায় নেয়ার মতো।
লিংকনের মতো বক্তাও তাঁর উদ্বোধনী বক্তৃতার প্রথম খসড়ায় এই ধরনের ভুল করেছিলেন। এই উদ্বোধনী বক্তৃতা তিনি করেছিলেন এক উত্তেজনাপূর্ণ সময়ে। সারাদেশে তখন বইছিল ঘৃণার ঝড়। এই ঝড়ে আকাশ তখন মেঘাচ্ছন্ন। এর কয়েক সপ্তাহ পরেই দেশে রক্তগঙ্গা বয়ে যায়। লিংকন দক্ষিণাঞ্চলের জনগণের উদ্দেশ্যে উপসংহারে যা বলতে চেয়েছিলেন, মূল খসড়ায় তা ছিল নিম্নরূপ:
হে আমার অসন্তুষ্ট দেশবাসী, আপনাদের মনে দেখা দিয়েছে গৃহযুদ্ধের প্রশ্ন। সরকার আপনাদের প্রতিরোধ করবেন না। আপনারা আগ্রাসনকারী না হলে কোনোরূপ সংঘর্ষের সৃষ্টি করতে পারবেন না। আপনারা সরকারকে ধ্বংস করার কোনোরূপ আনুষ্ঠানিক প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করেন নি, কিন্তু আমি সরকারকে রক্ষা করার আনুষ্ঠানিক প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করেছি। আপনারা এই আক্রমণ হতে বিরত থাকতে পারেন। কিন্তু আমি প্রতিরোধ হতে বিরত থাকতে পারি না। আপনাদের জন্য, আমার জন্য নয়, বড় প্রশ্ন হচ্ছে ”শান্তি অথবা যুদ্ধ?”
তিনি এটি তাঁর সচিব মি. সুয়ার্ডকে দেখতে দেন। সুয়ার্ড অত্যন্ত সঠিক ভাবে দেখান যে, এর সমাপ্তি হয়েছে অত্যন্ত সুলবুদ্ধি সঙ্গতি, অপ্রত্যাশিত এবং প্ররোচনামুলক। সুতরাং এর স্থলে তিনি দুটি সমাপ্তি বা উপসংহার তৈরি করেন। তার একটি লিংকন সামান্য সংশোধনীসহ গ্রহণ করেন। শেষ তিনটি বাক্যের পরিবর্তেই এটি ব্যবহার করা হয়। ফলে তাঁর মূল বক্তব্যে যে প্ররোচনা ছিল স্কুলবুদ্ধির লক্ষণ ছিল তা বিদূরিত হয়। তদস্থলে বন্ধুত্বপুর্ণ মনোভাব প্রকাশ পায়। সংশোধনীটি ছিল এই :
আমরা শত্রু নই, বরঞ্চ বন্ধু। আমরা একে অপরের শত্রু হব না। বাধা আসলেও তা আমাদের মধ্যে বিদ্যমান স্নেহের বন্ধন ছিন্ন করতে পারবে না। ভুলবুঝাবুঝি হলেও এমন একদিন আসবে যখন সকলেই একই সুরে একই সাথে ইউনিয়নের জয়গান গাইবে, স্মরণ করবে তাদের যারা আত্মাহুতি দিয়েছে দেশের জন্য, জাতির জন্য, যেসব দেশপ্রেমিক শায়িত রয়েছে কবরগাহে। স্মরণ করবে তাদের যারা দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে যুদ্ধক্ষেত্রে আর চিরশায়িত রয়েছে শুশানে।
একজন শিক্ষানবিশ কীভাবে তাঁর বক্তব্যের উপসংহার তৈরি করতে পারেন। এটা কি যান্ত্রিক নিয়মানুযায়ী করা সম্ভব?
না। সংস্কৃতির মতো এটিও অত্যন্ত সূক্ষ্ণ ব্যাপার। সুতরাং এটা উপলব্ধি করতে হবে অনুভূতি দিয়ে। বক্তা যদি বুঝতে না পারেন যে তার বক্তব্য দক্ষতার সাথে শেষ করা উচিত, তখন কীভাবে তিনি তা করবেন?
তবে এই অবস্থাটা অভ্যাসের মাধ্যমে প্রচেষ্টার মাধ্যমে আয়ত্ত্ব করা যায়। তা করতে হলে খ্যাতনামা বক্তাগণ যে পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন তা অনুসরণ করতে হবে। টরেন্টের এম্পায়ার ক্লাবে তদানিন্তন প্রিন্স
অব ওয়েলস যে বক্তৃতা দিয়েছিলেন এক্ষেত্রে তাই উদাহরণ হিসাবে উল্লেখ করছিঃ
ভদ্র মহোদয়গণ আমার মনে হয় আমি মূল বিষয় হতে সরে গিয়ে নিজের সম্পর্কেই বেশি বলে ফেলছি। তবে আমি আপনাদের বলতে চাই যে, কানাডায় বৃহত্তম জনসমাবেশে বক্তৃতা করার আমি যে সুযোগ পেয়েছি সে সুযোগে আমি মনে কী অনুভব করছি এবং আমার দায়িত্ব সম্পর্কে কী ভাবছি। আমি আপনাদের নিশ্চিত আশ্বাস দিতে পারি যে, আমি আমার দায়িত্ব পালন করছি এবং আপনাদের বিশ্বাসে কোনোরূপ আঘাত হানছি না।
শ্রোতাদের মধ্যে উপস্থিত অন্ধ ব্যক্তিও অনুভব করতে পারেন যে, বক্তব্য শেষ হয়েছে। কেননা, এটা সত্যি সত্যিই এভাবে শেষ হয়, তাই শেষ, অপ্রত্যাশিত সমাপ্তি নয় মাঝপথে শেষ নয়।
লীগ অব নেশন্স এর ষষ্ঠ অধিবেশন উদ্বোধনীর পরের রোববার ড, হ্যারী এমারসন ফসডিক জেনেভার সেন্ট পীরের ক্যাথিড্রেলে এক বক্তৃতা করেন। তিনি বক্তৃতা শেষ করেন এই বাক্য দিয়ে, যারা তরবারি হাতে নেয় তরবারি হয়েই তারা শেষ হয়।” লক্ষ্য করুন তাঁর ধর্মোপদেশ সংক্রান্ত বক্তৃতা শেষে কথাটি।
আমরা যিশুখ্রিস্ট ও যুদ্ধের মধ্যে সমন্বয় সাধনের কথা ভাবতেও পারি না। তাই আজ খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সামনে চ্যালেঞ্জ স্বরূপ। যুদ্ধ হচ্ছে মানবতার বড় শত্রু। কেননা যুদ্ধ ধ্বংস করে মানবতা, মানব সভ্যতা। ইহা খ্রিস্টানদের আদর্শের পরিপন্থী। যিশু যা বলে গেছেন যুদ্ধ তার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। ভগবান সম্পর্কে খ্রিস্টানদের মনে যে বিশ্বাস আছে যুদ্ধ তারো বিরোধী। খ্রিস্টিয় গির্জার উচিত সরাসরি, সুস্পষ্ট ভাবে যুদ্ধের বিরোধিতা করা। কেননা, আমাদের পিতৃপুরুষের সময় তার বর্তমান সময় এক নয়। বর্তমান সময়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালানো অতীব প্রয়োজন।
আজ এখানে দাঁড়িয়ে একজন আমেরিকান হিসাবে আমি আমার সরকারের পক্ষে বলতে পারি না, কিন্তু একজন আমেরিকান ও একজন খ্রিস্টান হিসাবে আমি লাখ লাখ মানুষের পক্ষে কথা বলতে পারি, কামনা করতে পারি বিশ্ববাসীদের কল্যাণ। আমরা বিশ্ব শান্তির জন্য নানাভাবে কাজ করতে পারি। শান্তির পরিপন্থী যা তা মানবতার জন্যে বিপর্যয় স্বরূপ। শান্তি ছাড়া কোনো জাতির কল্যাণ হয় না, হতে পারে না। ”যারা তরবারি হাতে নেয় তরবারি দিয়েই তারা শেষ হয়।”
কিন্তু বক্তৃতার এই সমাপ্তি ও সর্বাঙ্গ সুন্দর সমাপ্তি নয়। এর সাথে লিংকনের দ্বিতীয় উদ্বোধনী বক্তৃতা সমাপ্তির সুর মিলিত হলে হতে পারে সুন্দরতম সমাপ্তি। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন চ্যান্সেলর, আর্ল কার্জন একদা ঘোষণা করেছিলেন, এই নির্বাচন মানবতার, গৌরবও সম্পদ, মানুষের সর্বোত্তম বাকপটুতা, স্বর্গীয় বাকপটুতা।
আমরা মনে প্রাণে আশা করি, অন্তরের সাথে প্রার্থনা করি, যুদ্ধের অভিশাপ দূর হোক। কিন্তু ভগবান যদি ইচ্ছা করেন, সমস্ত সম্পদ নষ্ট না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চলতে পারে। চলতে পারে শত-শত বছর ধরে চলতে পারে অস্ত্রধারীর শেষ রক্তবিন্দু শেষ না হওয়া পর্যন্ত। এতৎসত্ত্বেও তিন হাজার বছরের পুরাতন কথার পুনরাবৃত্তি হতে পারে।”খোদার বিচার সবসময় সঠিক ও খাঁটি।”
কারো প্রতি শত্রুতা নয় সকলের প্রতি সহানুভূতি, সত্যের প্রতি দৃঢ়তা রেখে আসুন আমরা আমাদের কর্তব্য সম্পন্ন করি। জাতির জন্যে যারা প্রাণ দিয়েছে, দিয়েছে আত্মাহুতি, তাদের বিধবা এবং সন্তানদের জন্যে শুধু কিছু করাই কর্তব্য নয় স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠাই আসল কর্তব্য।
এতক্ষণ আপনি যা পড়লেন তা হচ্ছে আমার মতে জীবন্ত মানুষ প্রদত্ত বক্তৃতার সর্বশ্রেষ্ঠ সমাপ্তি।-আপনি কি আমার সাথে একমত? আপনি আর কোনো বক্তৃতায় এরূপ মানবতাবোধ, প্রেম এবং সহানুভূতি পাবেন?
আব্রাহাম লিংকনের জীবনীকার উইলিয়াম ই. বার্টান লিখেছেন, গেটিসবার্গের ভাষণ একটি মহৎ সৃষ্টি। এটা মন্ত্রের চাইতেও বড় কিছু। এটা আব্রাহাম লিংকন প্রদত্ত সকল বক্তৃতা হতে শ্রেষ্ঠতম। এতে বুদ্ধিমত্তা ও আধ্যাত্ত্বিক শক্তি পরিপূর্ণ ভাবে প্রকাশিত।
”এটা পবিত্র কাব্যের মতো,” লিখেছেন কাল স্কুর্জ। আমেরিকার আর কোনো প্রেসিডেন্ট আমেরিকার জনগণের প্রতি এরূপ কথা বলেন নি। আমেরিকার আর কোনো প্রেসিডেন্টের হৃদয় হতে এরূপ শব্দ উৎসারিত হয় নি।
কিন্তু আপনি ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্টের মতো অথবা অটোয়া বা ক্যানবেরার প্রধানমন্ত্রীর মতো কোনো অমর বক্তৃতা করতে যাচ্ছেন না। আপনার সমস্যা হচ্ছে, সম্ভবত একটা সামাজিক সমাবেশে কীভাবে আপনার বক্তৃতার উপসংহার টানবেন। আপনি কীভাবে বক্তৃতা শেষ করবেন? আসুন আমরা দেখি, দেখি এ সম্পর্কে কল্যাণকর কোনো সুপারিশ করা যায় কিনা।
আপনার পয়েন্ট সংক্ষিপ্ত করে নিন।
একজন বক্তা তিন বা পাঁচ মিনিটের একটি বক্তৃতায়ও এত বেশি পয়েন্ট আলোচনা করতে চান যে, শ্রোতারা তাঁর মূল বক্তব্য কী তাও বুঝতে ব্যর্থ হয়। তবে কিছু বক্তা এটা উপলদ্ধি করেন। তবে তাঁদের মনে এরূপ বদ্ধমূল ধারণা থাকে যে, সব পয়েন্ট তাদের মনে পরিস্কার হচ্ছে, শ্রোতারাও সে পয়েন্ট সহজে বুঝবে। এ ধারণা ঠিক নয়। বক্তা নিজে এগুলো জানলেও শ্রোতার কাছে এগুলো সম্পূর্ণ নতুন। কিছু তারা বুঝবেন, কিন্তু অধিকাংশ পয়েন্ট তাদের মনে দাগ কাটবে না কেননা, শ্রোতাদের অনেক পয়েন্ট শুনতে হয়, কিন্তু তাদের স্মরণ থাকে খুব সামান্যই।”
একজন খ্যাতনামা আইরিশ বক্তা বলেছিলেন, প্রথমে তাদের বলুন যে, বলা শেষ হয়েছে। এটা অবশ্য ভালো কথা যে, শ্রোতাদের বলে দেয়া যা বলার তা বলে দিয়েছেন, এই বক্তব্য হওয়া উচিৎ সংক্ষিপ্তসার স্বরূপ।
এখানে একটি উদাহরণ দিচ্ছি। বক্তা শিকাগোর রেলওয়ের একজন ট্রাফিক ম্যানেজার।
ভদ্রমহোদয়গণ, সংক্ষেপে বলতে গেলে আমার বক্তব্য হচ্ছে পূর্ব পশ্চিম ও উত্তরে আমাদের রেলপথ চালু করা হয়েছে এবং অভিজ্ঞ পরিচালন ব্যবস্থার ফলে গত এত বছরে দুর্ঘটনা পরিহার করে আমরা যে অর্থ পেয়েছি তা দিয়ে দক্ষিণ পথে লাইন চালু করা যায়। সুতরাং আমি দক্ষিণের পথে লাইন চালু করার সুপারিশ করছি।
দেখুন তিনি কী করলেন। বাকী অংশ না শুনে ও আপনি বুঝতে পারছেন যে তাঁর বক্তব্য কী হতে পারে, তিনি অতি সংক্ষিপ্ত ভাবে ৫০টি শব্দে সমস্ত বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন।
আপনি যদি মনে করেন যে, এই ধরণের একটি সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা ফলপ্রসূ হয়। যদি মনে করেন তবে. তা অভ্যাস করুন।
কাজের জন্য আবেদন করুন :
এই বক্তৃতার সমাপ্তি অত্যন্ত আবেদন মুলক। বক্তা চান কিছু করা হোক। তা হচ্ছে দক্ষিণ পথে রেল যোগাযোগ চালু করা, তিনি তা করতে বলছেন, দুর্ঘটনা পরিহারের ফলে সঞ্চিত অর্থ ব্যয়ে। বক্তা কাজে যাচ্ছেন, সাড়া চাচ্ছেন, সুতরাং সাড়া মিলছে। এই ধরনের বক্তৃতায় শ্রোতার যেমন সাড়া মেলে, কর্তৃপক্ষেরও অনুরূপ সাড়া পাওয়া যায়।
বাহুল্য বর্জিত আন্তরিক প্রশংসা :
নবযুগ সৃষ্টিতে প্যানসিলভ্যানিয়ার নেতৃত্ব গ্রহণ করা উচিত। প্যানসিলভানিয়া হচ্ছে আমাদের দেশের বৃহত্তম লৌহ ও ইস্পাত প্রস্তুতকারক, বিশ্বের বৃহত্তম রেল কোম্পানি এখানে উপস্থিত। এটা আমাদের তৃতীয় কৃষি রাজ্য, প্যানসিলভানিয়া আমাদের ব্যবসায়ের প্রাণ বিন্দু। সুতরাং দেশের নেতৃত্ব গ্রহণের সঠিক উপযুক্ততা আছে প্যানসিলভানিয়ার।
নিউইয়র্কের প্যানসিলভানিয়া সমিতিতে এই বলেই চার্লস স্কোয়ার তাঁর বক্তব্য শেষ করেন, এতে তাঁর শ্রোতারা আনন্দিত হয়, আশাবাদী হয়। এটা বক্তৃতা শেষ করার একটি প্রশংসনীয় পদ্ধতি। কিন্তু এটিকে আরো ফলপ্রসূগ্রাহী করতে হলে প্রশংসার সাথে-সাথে সত্যকেও তুলে ধরতে হবে। যা সত্য আছে তাও বলতে হবে, ত্রুটি-বিচ্যুতি যা আছে তাও প্রকাশ করতে হবে, তাহলেই বক্তব্য কল্যাণকর হবে, হবে সত্যিকার ফলপ্রসূ।
কৌতুকপূর্ণ সমাপ্তি :
“তাদের হাসিয়ে তুলুন” বলেছেন জর্জ কোহান, “যখন আপনি বক্তব্য শেষ করবেন।” এটা করার ক্ষমতা এবং বক্তব্য আপনার থাকলে খুবই ভালো হয়। কিন্তু কীভাবে? যেমন হেমলেট বলেছেন, প্রতিটি মানুষ তার কর্ম সম্পাদন করেন নিজস্ব পথে।
চরম ধর্মানুগত খ্রিস্টিয় নিয়মনিষ্ঠ ব্যক্তিদের সমক্ষে জন ওয়েসলির সমাধি সম্পর্কে বক্তৃতাকালে লয়েড জর্জ ও শ্রোতাদের হাসিয়ে তুলতেন। কীভাবে তিনি তা করতেন তা লক্ষ্যণীয়। কীভাবে তিনি তার বক্তব্য শেষ করতেন তাও লক্ষণীয়:
আপনারা এই সমাধিক্ষেত্র মেরামতের দায়িত্ব নিয়েছেন, এটা আনন্দের বিষয়। এটা প্রশংসার যোগ্য। তিনি ছিলেন এমন একজন মঠাধ্যক্ষ যিনি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিতেন, অপরিচ্ছন্নতাকে ঘৃণা করতেন। আমার যতটুকু স্মরণ হয় তিনি বলতেন আমরা কাউকে অপরিচ্ছন্ন মর্মানুরাগী হিসাবে দেখতে চাই না। তার এই প্রচেষ্টার ফলেই আপনারা আজ অনুরূপ কাউকে দেখছেন না। সুতরাং তাঁর সমাধি ক্ষেত্রকে অপরিচ্ছন্ন করে রাখা তার স্মৃতির প্রতি অবজ্ঞা এবং অন্যায় কাজ। আপনাদের স্মরণ আছে কি, ময়লা পোশাক পরিহতা একজন তরুণী গির্জার দরজায় এসে যখন বললেন, ভগবান আপনার কল্যাণ করুন মি. ওয়েসলি, তখন তিনি কী বলেছিলেন? তিনি বলেছিলেন, ওহে তরুণী, আপনার মুখমণ্ডল এবং পোশাক পরিচ্ছন্ন হলে আপনার প্রার্থনা ও অধিকতর মূল্যবান হত। (হাসি) অপরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে এটাই ছিল তার অনুভূতি। সুতরাং তার সমাধি অপরিচ্ছন্ন রাখা উচিৎ নয়, রাখা হলে অন্যায় করা হবে। এদিকে লক্ষ রাখুন। এটা একটি পবিত্রস্থান, তীর্থস্থান, এর পবিত্রতা রক্ষা করা দরকার। (হর্ষধ্বনি)
চরম পরিণতি : ভাবারোহ পদ্ধতি হচ্ছে বক্তব্য সমাপনের জনপ্রিয় পদ্ধতি। সকল বক্তার পক্ষে এবং সকল বিষয়ে এরূপ সমাপ্তি নয়। কিন্তু যে ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি অনুসরণ করা যায়, ফল ভালো হয়। এরূপ বক্তব্য বাক্যের পর বাক্য আকর্ষণীয় হয়। তৃতীয় অনুচ্ছেদের ফিলাডেলফিয়ার প্রদত্ত পুরস্কার অর্জনকারী বক্তৃতাটি এই বিষয়ের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।
নায়াগ্রা জলপ্রপাত সম্পর্কে বক্তৃতা স্মরণকালে লিংকন তাঁর নোটে ভাবারোহ পদ্ধতি অনুসরণ করেছিলেন। তিনি কলম্বাসের কাজের সাথে যিশুখ্রিস্ট, মুসা, আদম ও অন্যান্যদের সময় কালের তুলনা করেছিলেন:
প্রাচীন কালের কথা-কলম্বাস যখন এই মহাদেশ আবিষ্কার করেন, যিশু যখন ক্রুশবিদ্ধ হন, মুসা যখন লোহিত সাগর দিয়ে ইসরাইলীদের নেতৃত্ব দেন এবং এমনকি আদম যখন প্রথম সৃষ্টি হন তখনও এই নায়াগ্রা জলপ্রপাত এখানে একই শব্দের পতিত হচ্ছিল। আমেরিকার তথা সকল আমেরিকানের অস্থিমজ্জায় নায়াগ্রার অস্তিত্ত্ব অনুভূত। এর শক্তি দশ হাজার বছর আগে যা ছিল আজো তাই আছে। অনন্তকাল ধরে এটি থাকবে, কখনো শুকাবে না, জমবে না, ঘুমাবে না, বিশ্রাম নেবে না। এর গতি অনাদি অনন্তকাল হতে যে, ভাবে চলে আসছে চলবে ঠিক সেভাবে।
টাউসেন্ট এল ওভারসার সম্পর্কে বক্তৃতাকালে ওয়েণ্ডেল ফিলিপ ও অনুরূপ পদ্ধতি অনুসরণ করেছিলেন। তাঁর বক্তৃতার সমাপ্তি উল্লেখ করা হচ্ছে। এটি বক্তৃতা সংক্রান্ত বইতে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি দৃঢ় ও শক্তিশালী বক্তব্য। বর্তমান যুগের উপযোগী না হলেও এটি আকর্ষণীয়। এটি অর্ধশতাব্দী কাল আগে লেখা। ”এখন থেকে পঞ্চাশ বছর পরে সত্য প্রকাশিত হবে,“ যখন তিনি জন ব্রাউন ও টাউসেন্ট এল ওভার সার সম্পর্কে একথা বলেন তখন কী তা হাস্যকরও কৌতূহল উদ্দীপক হয় না? তার এই ভবিষ্যদ্বাণী কী সত্য? ইতিহাস সম্পর্কে বলা আর আগামী বছরের স্টক মার্কেট বা জমির দামের পূর্বাভাস প্রদান এক জিনিস নয়।
আমি নেপোলিয়নের কথা উল্লেখ করব। যদিও রক্তসাগরে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কিন্তু তিনি কখনো প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করেন নি, “প্রতিশোধ নয়” এটাই ছিল তার জীবনের নীতি, এটিই তিনি মেনে চলেছেন সারা জীবন। জীবন সায়াহ্নে স্বীয় পুত্রকে তিনি বলেছেন, ‘প্রিয় বৎস, একদিন তোমাকে সান্টো ডোকিঙ্গোতে ফিরে যেতে হবে, তখন ভুলে যেও যে, ফরাসিরা তোমার পিতাকে হত্যা করেছে। আমার মনে পড়ে ক্রমওয়েলের কথা, যিনি একজন সাধারণ সৈনিক হয়েও একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যে রাষ্ট্র শেষে মিশে গেছে তার কবরের সাথে। ওয়াশিংটনের কথা আমি উল্লেখ করব, দাসত্ব প্রথার বিরোধী হয়েও যিনি নিজ রাজ্যে দাসত্ব ব্যবসা চালু রাখতে দিয়েছিলেন।
ইতিহাসের ছাত্র হিসাবে আপনি আমাকে গোড়া ভাবতে পারেন। কিন্তু একথা কী অস্বীকার করতে পারেন যে গ্রিক বীর পুলিয়ন রোমান বীর ব্রটাস, ইংল্যান্ডের হাসম্পডেন, ফ্রান্সের লাফায়েত এবং আমাদের ওয়াশিংটন বিশ্বসভ্যতার স্থপতি। আর জব্রাউন হচ্ছেন মধ্যাহ্ন সূর্যকালের সুপরিপক্ব ফল।
আঙুল লাগবে যখন :
একটা সুসমাপ্তি এবং ভালো প্রারম্ভ না পাওয়া পর্যন্ত অনুসন্ধান করুন, পরীক্ষা করুন। অতঃপর দুটোকে একত্রিত করুন।
যে বক্তা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বক্তৃতা করতে সক্ষম নয়, সে সুবক্তা নয় এবং তাকে কোথাও আমন্ত্রণও জানানো যায় না।
এক্ষেত্রে সেল্টসুলটার সুসও একজন ব্যর্থ বক্তা। কেননা তার বক্তৃতাকালে শ্রোতাদের মধ্যে ”উটিসুক নামে এক তরুণ” ঘুমিয়ে পড়েন এবং জানালা ভেঙে পড়ে গিয়ে ঘাড় ভেঙে ফেলা পর্যন্ত তিনি বক্তৃতা করছিলেন। এই ঘটনার পরও তার বক্তৃতা অব্যাহত ছিল। আমি একরাতে একজন ডাক্তারকে ব্রকলিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে বক্তৃতা করতে দেখেছি। এটা ছিল একটি বড় ভোজসভা, বহু বক্তা বক্তৃতা করেন। সকাল দুটায় তিনি বক্তৃতা করতে ওঠেন। তিনি বুদ্ধিমান হলে ডজন খানেক বাক্য বলে শেষ করে দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি কী তা করেছিলেন? না তা করেন নি। কিন্তু তিনি বাণিজ্য সম্পর্কে দীর্ঘ বক্তব্য শুরু করেন। শ্রোতারা তখন কামনা করতে থাকেন, উটিসমের মতো জানালা ভেঙে কেউ পড়ে যাক, কিছু ভাঙুক, নষ্ট হোক। তাঁর বক্তৃতা শেষ হোক।
সাটারডে ইভনিং পোস্টের সম্পাদক মি. লরিমার একদা আমাকে বলেছিলেন যে, তিনি তার পত্রিকায় একটি বিষয় সম্পর্কে ধারাবাহিক নিবন্ধ প্রকাশ ঠিক তখনি বন্ধ করেছেন যখন বিষয়টি ভাবারোহে পৌঁছে এবং পাঠকেরা আরো জানতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। কেন তখন বন্ধ করেন? কারণ, বলেছেন লরিমার, এর পরেই প্রবন্ধ শেষ হয়ে যাবে সহসা? ফলে জনপ্রিয়তা নষ্ট হয়ে যাবে।
বক্তৃতার বেলায়ও এরূপ জ্ঞান এরূপ পদ্ধতি অনুসরণ করা প্রয়োজন। যখন শ্রোতারা আপনার কাছ থেকে আরো কিছু শুনতে চায়, তখনই সমাপ্ত করুন।
যিশু খ্রিস্টের সারমন অন-দি মাউন্ট নামক শ্রেষ্ঠতম বক্তৃতা মাত্র পাঁচ মিনিটে শেষ করা যায়। লিংকনের গেটিস বার্গের বক্তৃতায় আছে মাত্র দশটি বাক্য। দৈনিকের পৃষ্ঠায়–প্রকাশিত একটি হত্যাকাণ্ডের কাহিনীর চাইতে কম সময়ে জীবনের জীবন বৃত্তান্ত পাঠ করে শেষ করা যায়। প্রয়োজন সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা।
আফ্রিকার প্রাচীন মানুষ সম্পর্কে ড. জনসন একটি বই লিখেছেন। তিনি ৪১ বছর তাদের সাথে ছিলেন, তাদের পর্যবেক্ষণ করেছেন। একজন বক্তার গ্রাম্য সমাবেশে বক্তৃতা প্রদানেরও কম সময়ে তার এই বইটি শেষ করা যায়।
এবং সাধারণ শ্রোতারা সাধারণত দীর্ঘ বক্তৃতা পছন্দ করেন না। বক্তব্য বিষয় যাই হোক না কেন। পায়ে চলার পথে আঙুলে আঙুলে লাগতে যে সময় প্রয়োজন অর্থাৎ এক ফুটের সমান তোক বক্তব্য এটিই যেন সবার কাম্য।
অতএব হুঁশিয়ার হোন ভাগ্য সম্পর্কে—
শ্রোতার মনের কথা জানেন না যখন–
তাদের ইচ্ছানুযায়ী শেষ করুন বক্তব্য।
সংক্ষিপ্ত সার :
১। বক্তৃতার সুসমাপ্তি অত্যন্ত গুরুত্ত্বপূর্ণ বিষয়। সব শেষে যা বলা হয় তা দীর্ঘকাল স্মরণ থাকে।
২। এই বিষয়ে আমি যা বলতে চাই তা বলা হল, সুতরাং আমার মনে হয় আমার শেষ করা উচিত তাই আমি শেষ করছি। এরূপ বলে শেষ করবে না, বক্তৃতা শেষ করুন কিন্তু শেষ করছেন বলবেন না।
৩। ওয়েবেস্টার, ব্রাইট ও গ্লাডস্টোন যেভাবে বক্তৃতার উপসংহারের পরিকল্পনা করতেন ঠিক সেভাবে আপনি পরিকল্পনা করুন। অভ্যাস করুন। এলোমেলো ভাবে শেষ করবেন না,
৪। সমাপ্তির ছয়টি পদ্ধতি :
ক। মূল বক্তব্য বিষয়টির সংক্ষিপ্ত সার প্রদান।
খ। কর্মের আবেদন জানানো।
গ। শ্রোতাদের প্রসংসা করা।
ঘ। শ্রোতাদের হাসানো।
ঙ। অর্থপূর্ণ কাব্যাংশ বলা।
চ। ভাবারোহ বা চরম পরিণতি প্রদান।
৫। সুসমাপ্তি ও ভালো সূচনার মধ্যে সমন্ধয় সাধন করুন। শ্রোতারা চাইবার আগেই বক্তব্য শেষ করে ফেলুন। শ্রোতাদের কাছে বক্তব্য শ্রুতিমধুর থাকতে শেষ করা হলে নিজেও সন্তোষ লাভ করবেন।