০৯. পারসিক মিশর

৯. পারসিক মিশর

পারসিকগণ

যদিও গ্রিকবিরোধী প্রতিক্রিয়ার ফলেই আমেসিসের সিংহাসন প্রাপ্তি ঘটেছিল, তবু তিনি জীবনের সত্যকে অস্বীকার করতে পারেননি। গ্রিক ভাড়াটিয়াদের তার প্রয়োজন হয়েছিল এবং তিনি সেটা কাজে লাগিয়েছিলেন। তিনি নক্রেটিসকে শুধু যে ব্যবসাকেন্দ্র থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ নগরের রূপ দান করেন তাই নয়, তার প্রয়োজন ছিল গ্রিক মিত্রদের কাছ থেকে সুরক্ষার অঙ্গীকার।

তিনি এশিয়া মাইনরের উপকূলে ঈজিয়ান সাগরে গ্রিক দ্বীপ সামুসের সাথে মিত্ৰতা বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। দ্বীপটি ছিল ক্ষুদ্র, কিন্তু আমেসিসের রাজত্বকালে ভূমধ্যসাগরের পূর্বাঞ্চলে এটি সর্ববৃহৎ নৌবন্দর রূপে গড়ে উঠেছিল। সাইপ্রাস দ্বীপ তখনও আমেসিসের নিয়ন্ত্রণে থাকায় তার নৌবহর এটাকে ব্যবহার করতে পারত। তিনি এমনকি সাইরেনী নগরের এক গ্রিক মহিলাকে বিবাহও করেছিলেন।

গ্রিকদের প্রতি তার অতি উৎসাহের একটি বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল। পূর্ব দিক থেকে তার একটি ভয়ের কারণ ছিল। যদিও আমেসিসের রাজত্বের শুরুর দিকে সেই ভীতি ক্ষীণ হয়ে আসছিল। ক্লান্ত, বৃদ্ধ নেবুচাদ্রেজার ৫৬১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মৃত্যুবরণ করেন এবং তার উত্তরাধিকারীরা ছিল দুর্বল ও শান্তিকামী। পঁচিশ বছর ধরে ক্যালদিয়া মিশরের জন্যে কোনো সমস্যা ছিল না।

ক্ষয়িষ্ণু প্রতিবেশীর চাইতে নিরাপদ আর কিছুই হতে পারে না এবং যে জাতি তার নিজের ভালো বোঝে সে এরূপ প্রতিবেশীকে টিকে থাকতে সাহায্য করে। ইতিপূর্বে নেকো মুমূর্ষ এসিরীয়ার দিকে হাত বাড়িয়ে ছিলেন। এবার আমেসিসও ক্যালদিয়ার সেবা লাভ করতে সচেষ্ট ছিলেন।

মাত্র অর্ধশত বৎসর পূর্বে ক্ষমতার শীর্ষে আরোহণের পর ক্যালদিয়া তখন মৃতপ্রায়। এসিরীয়া পতনের সময় দুই বিজেতা ক্যালদিয়া এবং মেডিয়া লুটের মাল ভাগাভাগি করে নিয়েছিল। ক্যালদিয়ার ভাগে পড়ে সমৃদ্ধ ইউফ্রেটিস তাইগ্রিস উপত্যকা এবং তার পশ্চিমের সমগ্র এলাকা। মেডিয়াকে সন্তুষ্ট থাকতে হয় বৃহত্তর কিন্তু কম উন্নত ক্যালদিয়ার উত্তর পূর্ব অঞ্চল। পঁচাত্তর বছর ধরে মেডিয়া শান্তি এবং অম্প্রসারণশীল নীতি গ্রহণ করেছিল।

বেবিলনীয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমে মেডিয়ার একটি প্রদেশ ছিল যা গ্রিকদের নিকট পরিচিত ছিল পার্সিস এবং আমাদের কাছে যার পরিচয় পারস্য নামে। ভাষা ও সংস্কৃতির দিক দিয়ে পারসিকগণ মেডীয়দের কাছাকাছি ছিল।

৫৬০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে অসীম উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও সক্ষম একজন পারসিক দলপতি খ্যাতির শীর্ষে আরোহণ করতে থাকেন যার নাম ছিল সাইরাস। সাইরাসের দৃষ্টি ছিল মেডিয়ার সিংহাসনের দিকে আর এ ব্যাপারে তিনি ক্যালদীয় রাজা নেবুনিডাসের সহায়তা লাভ করেছিলেন, যার লক্ষ ছিল উত্তরের প্রতিবেশীদের মধ্যে গৃহযুদ্ধ উস্কে দেওয়া। ৫৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সাইরাস মেডীয় রাজধানীর দিকে যুদ্ধযাত্রা শুরু করেন এবং প্রথম অভিযানেই তা দখল করে নেন। তিনি মেডিয়ার সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং তার রাজ্য পারস্য সাম্রাজ্য নামে অভিহিত হয়।

নেবুনিডাস অনেক দেরিতে বুঝতে পারলেন তিনি সাইরাসকে সাহায্য করে ভুল কাজ করেছেন। তিনি চেয়েছিলেন (এই পরিস্থিতিতে সবাই যা চায়) যে দীর্ঘকাল ব্যাপী গৃহযুদ্ধ বজায় থাকবে এবং উভয়পক্ষই পুরুষানুক্রমে দুর্বল ও অসহায় অবস্থায় চলে যাবে। তবে সাইরাসের বিজয়ে দেশটি দুর্বল ও স্থবির রাজার বদলে একজন তেজস্বী যোদ্ধাকে খুঁজে পেল। এবার নেবুনিডাস যে কারও সাহায্য নিতে প্রস্তুত, যে সাইরাসের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে। তবে অত্যন্ত বিলম্ব হয়ে গেছে।

৫৪৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সাইরাস পশ্চিম এশিয়া মাইনরে লিডীয়দের পরাজিত করেন এবং সমগ্র উপদ্বীপ তার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে, এমনকি উপকূলবর্তী গ্রিক শহরগুলিও।

৫৪০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সাইরাস খোদ ক্যালদিয়ার দিকে নজর দিলেন এবং তার বিজয় অভিযাত্রা অব্যাহত রইল এবং এক বছরের মধ্যে তিনি বেবিলনীয়া দখল করে ক্যালদিয়া সাম্রাজ্যের ইতি টানলেন। ৫৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মধ্য এশিয়ায় সাম্রাজ্য বিস্ত রের যুদ্ধে সাইরাস নিহত হন। মাঝে মাঝে তাকে অভিহিত করা হয় সাইরাস দ্য গ্রেট নামে। এই নামটি তার উপযুক্ত ছিল, কারণ তিনি শুধু একজন বিজেতা ছিলেন না, তিনি বিজিতদের প্রতি সহনশীল মানবিক আচরণ করতেন।

সাইরাসের মৃত্যুকালে পশ্চিম এশিয়ার সমস্ত বিখ্যাত সভ্যতা এবং অধিকাংশ যাযাবর এলাকা তার সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে তার সাম্রাজ্যই ছিল সর্ববৃহৎ।

মিশরে আমেসিস এসব কর্মকাণ্ড ভয়ের সাথে লক্ষ করছিলেন। এই বিশাল অভ্যুদয়ের তুলনায় এসিরীয় ও ক্যালদীয় স্মৃতি ছিল নেহায়েত অকিঞ্চিৎকর। আমেসিস সাইরাসের ক্রমবৃদ্ধি হ্রাস করার জন্য তার সব শক্রকে সহায়তা দিয়েছিলেন, তবে প্রত্যেক ক্ষেত্রেই তিনি ব্যর্থ হন। এবার মিশর পারস্যের পথে একা দাঁড়িয়ে রইল। যে দেশ তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল, পারস্য নিশ্চয় তাকে ক্ষমা করবে না।

তবে আমেসিসের ভাগ্য ভালো, কারণ তিনি দীর্ঘ চল্লিশ বছর সমৃদ্ধ মিশরে রাজত্ব করেছেন এবং তার জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছেছেন। পারস্য আঘাত হানার জন্য প্রস্তুত এবং মিশর ভয়ে পিছিয়ে যাচ্ছিল। আঘাত আসার পূর্বেই ৫২৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আমেসিসের মৃত্যু হয়। তার পুত্র যিনি তৃতীয় সামটিক হিসেবে সিংহাসনে আরোহণ করেন তার উপরই দায়িত্ব পড়ে পারস্যের মোকাবেলা করার।

সাইরাসের পুত্র ক্যাম্বিসেস পারস্যের সিংহাসনের উত্তরাধিকার লাভ করেন। তিনি ছিলেন একজন পোড়-খাওয়া শাসক। যিনি তার পিতার অভিযান চলাকালে বেবিলনের শাসনের দায়িত্বে ছিলেন। এবার তিনি পারস্য সম্প্রসারণের যৌক্তিক দ্বিতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করলেন এবং তা ছিল মিশর অভিমুখে।

নীল ব-দ্বীপের সামান্য পূর্বে ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলে একটি দুর্গে মিশরীয় সৈন্যরা অবস্থান নিয়েছিল। এই দুর্গকে তারা বলত পার-আমেন (আমেনের গৃহ)। তবে আমাদের কাছে এর পরিচয় গ্রিক শব্দ পেলুসিয়াম নামে। যার অর্থ কাদার শহর। এটাই সেই জায়গা যেখানে একদা সেনাকেরিবের এসিরীয় বাহিনীকে প্রতিরোধ করে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

এবারই পেলুসিয়াম সত্যিকারের যুদ্ধ দেখতে পেল এবং তা ছিল মিশরের জন্য দুর্ভাগ্যের। কেম্বিসেস মিশরীয় সৈন্যদেরকে তাড়িয়ে নিয়ে যায় এবং শীঘ্রই যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটল। তিনি টলায়মান মেম্ফিসের দিকে অগ্রসর হলেন, মিশর আরও একবার বিদেশিদের অধিকারে চলে গেল।

কেম্বিসেসের মিশরে অবস্থান সম্পর্কে হেরোডোটাস যা বলেছেন তার চাইতে বেশি কিছু আমরা জানি না (এই ঘটনার এক শতাব্দী পরে হেরোডোটাস এখানে এসেছিলেন)। তিনি একজন জাতীয়তাবাদী মিশরীয় পুরোহিতের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন, যে ছিল তীব্র পারস্য-বিরোধী। তার কাছ থেকে কেম্বিসেসের যে চিত্র পাওয়া যায় তাতে যথেষ্ট অতিশয়োক্তি ছিল। তার মতে কেম্বিসেস ছিলেন নিষ্ঠুর, অর্ধোন্মাদ, স্বেচ্ছাচারী। যিনি ইচ্ছাকৃতভাবে মিশরের পবিত্র স্থানগুলি অপবিত্র করেছিলেন এবং মিশরীয় রীতি-রেওয়াজকে ব্যঙ্গ করেছিলেন।

উদাহরণস্বরূপ, কেম্বিসেস যখন মিশরে ছিলেন তখন মিশরীয়রা “এপিস” নামে এক ষণ্ডদেবতার পূজা করত, যিনি মিশরীয়দের ইচ্ছা পূরণ করতে পারতেন। তিনি ছিলেন দেবতা অসিরিসের পার্থিব অবতার। ষাড় ছিল উর্বরতার প্রতীক তারা বিশ্বাস করত, এপিস সন্তুষ্ট থাকলে ভালো ফসল পাওয়া যায় এবং সুসময় আসে। মিশরীয়রা এপিসকে পরম শ্রদ্ধার চোখে দেখত।

হেরোডোটাসের মতে একটি দুর্ভাগ্যজনক অভিযান থেকে ফিরে এসে মিশরীয়রা তার পরাজয়কে মহা আনন্দে উদ্যাপন করছিল এবং এপিসের সম্মানে তাকে পূজো দিয়েছিল। ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে কেম্বিসেস তার তরবারি নিষ্কাশণ করে এপিসের মূর্তিকে আঘাত করেছিলেন।

কেম্বিসেস মিশরেই থেমে থাকতে চাননি। নীলের পশ্চিমে তিনি লিবীয়া এবং গ্রিক নগর সাইরেনি অধিকার করেন। এরপর তার দৃষ্টি নিবদ্ধ হয় দক্ষিণে নুবিয়ার উপর, এমনকি অনেক পশ্চিমে ফিনিসীয় উপনিবেশ কার্ধেজের দিকে। তিনি নুবিয়ার দিকে যাত্রা করেন এবং পথে থিবিস অধিকার করে লুটপাট চালান (অর্ধ শতাব্দী পূর্বে আসুরবনিপাল এই কাজটি করেছিলেন। তিনি নুবিয়ার উত্তর অংশ দখল করতে সক্ষম হন এবং আরও রসদ এবং সৈন্য সরবরাহের জন্য ফিরে আসেন (বিদ্বেষপরায়ণ ব্যক্তিদের নিকট থেকে প্রাপ্ত বিবরণে হেরোডোটাস এটাকে অবমাননাকর পরাজয় হিসাবে গণ্য করে এবং দেবতাদের দ্বারা অভিশপ্ত হয়ে কেম্বিসেস আত্মহত্যা করেন)।

পারসিক রাজাদের মিশরের সপ্তবিংশ রাজবংশ হিসাবে গণ্য করা হয় আর পারসিকরাই ছিল প্রকৃত বৈদেশিক রাজবংশ। এটা লিবীয় বা নুবীয় রাজবংশের মতো ছিল না, যারা শুধু বংশধারা বাদ দিলে পরিপূর্ণ মিশরীয় ছিল। হিক্সসদের মতোও নয় যারা মিশরীয় হয়ে গিয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে পার্সিকরা সত্যিকারের বৈদেশিক রাজবংশরূপে শক্ত হাতে মিশর শাসন করেছিল।

.

এথেনীয়গণ

নিশ্চিতভাবে বলা যায় কোনো কোনো দিক দিয়ে পারসিক শাসন হিতকর ছিল। কেম্বিসেসের মৃত্যুর পর কয়েক মাসের গোলযোগ চলেছিল। রাজকীয় পরিবারের একজন সদস্য প্রথম দারায়ুস ক্ষমতা দখল করেন। তিনি পঁয়ত্রিশ বছর দেশ শাসন করেন (৫২১-৪৮৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)। প্রশ্নাতীতভাবে তিনি ছিলেন সবচেয়ে সক্ষম পারসিক সম্রাট। মাঝে মাঝে তাকে বলা হয় “দারায়ুস দ্য গ্রেট”।

তিনি অত্যন্ত যোগ্যতার সাথে তার বিশাল সাম্রাজ্যকে পুনর্গঠিত করেন এবং দৃঢ়ভাবে মিশর শাসন করেন। তিনি নীলনদ থেকে লোহিত সাগর পর্যন্ত খাল খনন সম্পন্ন করেন যা শুরু হয়েছিল নেকোর আমলে। এর ফলে মিশরীয় বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। প্রকৃতপক্ষে দারায়ুসের আমলে সকল মিশরীয় প্রাচীন রীতিনীতি বহাল থাকে এবং আমেসিসের আমলে মিশর যেমন সমৃদ্ধ ছিল তেমন সমৃদ্ধি লাভ করে। মিশরীয়দেরকে যে কর দিতে হতো তা খুব নিপীড়নমূলক ছিল না। তাহলে তার বিরুদ্ধে আর কি অভিযোগ থাকতে পারে?

তথাপি মিশরীয়দের পশ্চাতে ছিল তিন হাজার বছরের উন্নত ইতিহাস এবং তারা বিদেশি শাসনে নিষ্পেষিত বোধ করত, অন্য কোনো কারণ না থাকলেও তারা বিদেশি শুধু এই কারণে। তারা সুযোগের অপেক্ষা করতে থাকে। তারা আশা করে কোনো এক প্রান্ত থেকে পারস্যের উপর আক্রমণ নেমে আসবে এবং মিশরীয়রা সেই সুযোগ গ্রহণ করবে। ৫১৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে দারায়ুস ইউরোপে প্রবেশ করেন এবং দানিয়ুব নদী পর্যন্ত উত্তর গ্রীসের একাংশ দখল করেন।

গ্রীসের স্বাধীন নগররাজ্যসমূহ দারুণ সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে এবং আত্মরক্ষার্থে যে কোনো ঐক্যবদ্ধ ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত হয়। ৪৯৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে যখন এশিয়া মাইনরের কিছু গ্রিক নগর যা পারস্যের শাসনাধীন ছিল, সেখানে বিদ্রোহ হয়। তাদের সাহায্যার্থে গ্রিক নগর রাষ্ট্র এথেন্স থেকে নৌবহর পাঠানো হয়। ক্ষুব্ধ দারায়ুস বিদ্রোহ দমন করেন এবং অযাচিত হস্তক্ষেপের জন্য এথেন্সকে শাস্তি দিতে সংকল্প করেন।

৪৯০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তিনি একটি ক্ষুদ্র পারস্য বাহিনীকে এথেন্সে প্রেরণ করেন। তবে সমগ্র বিশ্বকে চমকিত করে তদপেক্ষা ক্ষুদ্র এক এথেনীয় বাহিনী ম্যারাথনের যুদ্ধে পারস্য বাহিনীকে পরাস্ত করে। দারায়ুস আরও বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে বৃহত্তর এক সেনাবাহিনী পাঠাবার পরিকল্পনা করেন।

মিশরীয়রা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে এসব ক্রিয়াকলাপ পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। এশিয়া মাইনরের যেসব গ্রিক নগর পারস্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে সাহস দেখায়, নিশ্চিতভাবেই তাদেরকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়। তবে এথেনীয়গণ মিশরকে ঠেকিয়ে রাখে এবং শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হয়। এই অপমানের প্রতিশোধ নিতে পারস্যকে যথেষ্ট শক্তিক্ষয় করতে হয়েছিল। বৃদ্ধ এবং অসুস্থ দারায়ুসের পক্ষে এত বেশি দিকে দৃষ্টি দেওয়া সম্ভব ছিল না। এটাই মিশরের সুযোগ।

ম্যারাথন যুদ্ধের পরিণতি দৃষ্টিতে রেখে মিশর বিদ্রোহ করে। প্রথম দিকে ভালোই চলে। ৪৮৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে দারায়ুসের মৃত্যু হয় এবং মিশর আশা করতে থাকে নতুন সম্রাটের প্রাথমিক ডামাডোলে মিশর তার স্বাধীনতা অর্জনে সক্ষম হবে। দারায়ুসের পুত্র জারেক্সেস সিংহাসনে আরোহণ করে এথেন্স ও মিশরকে দেখতে পেলেন সমস্যাজর্জরিত। তাকে এবার সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এথেন্সের বিরুদ্ধে তার পিতার প্রতিশোধ গ্রহণের ইচ্ছার কথা জারেক্সেসের জানা ছিল। এথেন্স একটি ক্ষুদ্র নগর-রাষ্ট্র আর মিশর একটি বিরাট দেশ, সম্পদশালী ও জনবহুল। কাজেই প্রথমে মিশরের সাথে হিসাব নিকাশ চুকাতে হবে।

আপাতত গ্রীস আক্রমণের সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয় আর বিশাল পারসিক সৈন্যবহর হতভাগ্য মিশরের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। মিশর পরাজিত এবং পদানত হয়। তবে এই কাজে পারস্যকে তিনটি বছর ব্যয় করতে হয়। কাজেই জারেক্সেসের গ্রীস আক্রমণ তিন বছর পিছিয়ে যায়। এই তিন বছরের বিলম্ব এথেন্স ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছিল। তারা তাদের নৌশক্তিকে উন্নত করতে সময় পেয়েছিল। এই শক্তিশালী নৌবহরই ৪৮০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সালামিসের যুদ্ধে পারসিক বাহিনীকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়।

আধুনিক বিশ্ব, যা প্রাচীন গ্রীসের অনেক সংস্কৃতিকে বহন করে, ক্ষুদ্র গ্রীসের দৈত্যাকার পারসিক বাহিনীর বিরুদ্ধে বিজয়কে ডেভিড ও গুলিয়াথের বিস্ময়কর কাহিনীর সাথে তুলনা করা যায়। গ্রীসের এই বিস্ময়কর বিজয় গ্রীসের জনগণ পুরুষানুক্রমে পাঁচ শতাব্দী ধরে উপভোগ করে। তবে একটি বিষয় স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে মিশরের অসফল বিদ্রোহ না ঘটলে গ্রিকদের বিজয় হয়তো কখনোই সম্ভব হতো না।

মিশর যেমন বহুবার তার দুর্বল প্রতিবেশীদের ব্যবহার করেছে নিজ স্বার্থ সিদ্ধিতে, তেমনি এবার গ্রিকদের স্বার্থেও নিজেদের বলি দিতে হল।

মিশরকে গলা টিপে শান্ত করা যায়নি। পুরোহিতদের দ্বারা উদ্দীপ্ত হয়ে মিশর সর্বদাই বিদ্রোহের জন্য প্রস্তুত থাকত। পারসিক শাসনের শেষ ভাগটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সেখানে বিবদমান উত্তরাধিকার নিয়ে গৃহযুদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। তাই সুদূর মিশরে বিদ্রোহ দমনের তেমন সুযোগ ছিল না। তার চেয়েও বড় কথা নূতন দুর্বল কোনো উত্তরাধিকারী দীর্ঘ, ক্লান্তিকর, দূরবর্তী কোনো অভিযানে আগ্রহী নাও হতে পারেন।

কাজেই ৪৬৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে যখন জারেক্সেসের মৃত্যু হয়, তখন সেটা ছিল আর একটি বিদ্রোহের ইঙ্গিত। এবার বিদ্রোহের মূল শক্তি ছিল লিবীয় মরুভূমির কিছু যাযাবর গোষ্ঠী। তারা নামমাত্র পারসিক শাসনের অধীনে থাকলেও মূলত ছিল স্বাধীন। তাদের দলপতিদের একজন ছিলেন ইনারস। তিনি তার সকল শক্তি নিয়ে ব-দ্বীপের দিকে অগ্রসর হলেন। যেখানে অনেক মিশরীয়ই মহানন্দে তার পক্ষ নিল। একটি তীব্র যুদ্ধের পর জারেক্সেসের ভাই, মিশরের গর্ভনর, নিহত হন এবং মিশর আবার স্বাধীন হল বলে মনে করা হয়।

পারস্য সমস্যার মধ্যে থাকলেই মিশরীয়রা নিজেদেরকে অধিকতর নিরাপদ মনে করত। সালামিসের যুদ্ধের সময় থেকেই এথেন্স পারস্যের সাথে অবিরাম যুদ্ধে ব্যাপৃত ছিল। যে যুদ্ধে তারা সর্বদাই সাম্রাজ্যের সীমান্তে খোঁচা দিত। এসব এথেনীয় কার্যকলাপে মিশরের মূল শক্তিকে ব্যাহত করতে পারেনি। তবে এর ফলে পারস্য তার সর্বশক্তিকে মিশরের বিরুদ্ধে কাজে লাগাতে পারেনি। তার চেয়েও বড় কথা মিশরীয় বিদ্রোহের ইঙ্গিত পেয়েই এথেনীয় নৌবহর বিদ্রোহীদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসে।

তবে নতুন পারস্য সম্রাট (মিশরের দুর্ভাগ্য) তেমন দুর্বল ছিলেন না। তিনি ছিলেন। প্রথম জারেক্সেসের পুত্র আর্তাজারেক্সেস। তিনি মিশরে একটি বিশাল বাহিনী প্রেরণ করেন এবং বিদ্রোহীদের সম্পূর্ণরূপে তাড়িয়ে দিয়ে ব-দ্বীপের নিকট একটি দ্বীপে আশ্রয় নিতে বাধ্য করেন। এখানে বিদ্রোহীদের পক্ষে কিছু করা সম্ভব ছিল না, কারণ তাদের সঙ্গে ছিল এথেনীয় নৌবহর। কিন্তু আর্তাজারেক্সেস নীলের একটি শাখা নদীকে দ্বীপ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। যার ফলে জাহাজগুলি অসহায়ভাবে সৈকতে আটকা পড়ে গিয়েছিল এবং এথেনীয়দের দ্বিতীয় একটি নৌবহর দৃশ্যপটে উপস্থিত হওয়ার পূর্বেই অর্ধেকটা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল। ৪৫৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দ নাগাদ বিদ্রোহ সম্পূর্ণরূপে দমন করা সম্ভব হয়। গ্রিক শক্তির অধিকাংশই নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হয় এবং ইনারসকে বন্দী করে হত্যা করা হয়।

সম্পূর্ণ বিষয়টি এথেনীয়দের জন্য এক মহা বিপর্যয়। তবে ইতিহাসে এ সম্বন্ধে বেশি কিছু উল্লেখ করা হয়নি, তার একটি কারণ ঘটনাটি ঘটে এথেন্সের স্বর্ণযুগে। তৎসত্ত্বেও এথেনীয় পরাজয়কে তার বৈদেশিক নীতির দুর্বলতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, যাতে করে তার বন্ধুরা হয়ে পড়ে নিরুৎসাহিত এবং শক্ররা হয় উৎসাহিত। যদি পারসিকদের বিরুদ্ধে প্রথম মিশরীয় বিদ্রোহ এথেন্সকে রক্ষা করে থাকে দ্বিতীয়টি তাকে ধ্বংস করায় সাহায্য করে।

.

সর্বশেষ স্বদেশীয়গণ

আবার মিশরের অপেক্ষার পালা। দুজন পারসিক রাজা এলেন এবং গেলেন। তাদের মধে দ্বিতীয়জন, দ্বিতীয় দারায়ুস ৪০৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। এবার উত্তরাধিকার নিয়ে তীব্র বিরোধ শুরু হল। দারায়ুসের কনিষ্ঠ পুত্র এক বিশাল গ্রিক ভাড়াটিয়া বাহিনী নিয়ে তার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এগিয়ে এলেন। জ্যেষ্ঠ ভ্রাতারই জয়লাভ হল এবং তিনি দ্বিতীয় আর্তাজারেক্সেসরূপে শাসনভার গ্রহণ করেন। তবে যে সময় এসব ঘটনা ঘটছে তখন মিশরীয়রা বিদ্রোহ করার যথেষ্ট সময় পায় এবং এক সংকটময় স্বাধীনতা লাভ করে।

ষাট বছর ধরে এই স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখা গিয়েছিল মূলত গ্রিকদের সাহায্য নিয়ে। ঘটনা এমন দাঁড়ায় যে এ সময় গ্রিক ভাড়াটিয়া সৈন্যদেরই আধিক্য ঘটল কারণ, এ সময় দুটি গ্রিক নগররাষ্ট্র এথেন্স ও স্পার্টার মধ্যে ৪৩১ থেকে ৪০৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দ নাগাদ তীব্র সংঘর্ষ চলছিল। এ ক্ষেত্রে স্পার্টা বিজয় লাভ করেছিল এবং গ্রীসে স্বল্পকালীন সময়ের জন্য প্রাধান্য বিস্তার করতে পেরেছিল। দীর্ঘ যুদ্ধে সর্বস্বান্ত গ্রীসে সৈন্যদের কর্মসংস্থানের তেমন ব্যবস্থা করা যাচ্ছিল না। কাজেই তারা স্বেচ্ছায় মিশর ও গ্রীসে ভাড়াটিয়া সৈন্য হিসাবে যোগ দিত।

মিশরের সর্বশেষ স্বাধীনতার যুগে দুটি রাজবংশ স্বল্পকালীন সময়ের জন্য মিশর শাসন করেছিল। তারা ছিল অষ্টবিংশ ও ঊনত্রিংশ রাজবংশ। সবাই অপেক্ষা করছিল সেই দুর্লভ সময়ের জন্য যখন পারস্য আবার শক্তিশালী হয়ে মিশরে ফিরে আসবে। ৩৭৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দ নাগাদ যখন ত্রিংশ রাজবংশ ক্ষমতাসীন তখন মিশরীয় আগ্রাসন অনিবার্য হয়ে দেখা দিল।

ত্রয়োৰিংশ রাজবংশের প্রথম রাজা ছিলেন প্রথম নেক্টানেবো। তিনি গ্রিক ভাড়াটিয়া সৈন্যদের সাহায্যে নিজের অবস্থানকে সুদৃঢ় করতে চেয়েছিলেন। তিনি তার সৈন্যবাহিনীতে এথেনীয় জেনারেল ক্যাব্রিয়াসকে নিযুক্ত করলেন যার প্রচুর বিজয় লাভের রেকর্ড আছে। ক্যাব্রিয়াস এথেন্সের অনুমোদন ছাড়াই এই পদ গ্রহণ স্বীকার করলেন। তিনি মিশরীয় বাহিনীকে পূনর্গঠিত করলেন এবং সর্বশেষ যুদ্ধ কৌশলে তাদের প্রশিক্ষিত করলেন। আর ব-দ্বীপে একটি সুদৃঢ় সেনানিবাস গড়ে তুললেন যখন বিপরীত দিকে পারসিকরা সুসংগঠিত হচ্ছিল।

দ্বিতীয় আর্তাজারেক্সেস ক্যাব্রিয়াসের মুখোমুখি হতে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। কাজেই তিনি এথেন্সের উপর চাপ সৃষ্টি করেন যাতে ক্যাব্রিয়াসকে ফিরিয়ে নেওয়া যায়। ক্যাব্রিয়াসকে মিশরীয় বাহিনী ত্যাগে বাধ্য করা হয়। তবে ফিরে যাওয়ার আগে তিনি তার আরব্ধ কাজ ভালোভাবেই সম্পন্ন করতে পেরেছিলেন। পার্সিকরা যখন মিশর আক্রমণ করে, তারা এমন প্রতিরোধের সম্মুখীন হয় যে তারা মিশর ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়। ৩৬০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রথম নোনেবো মৃত্যুবরণ করেন। একটি স্বাধীন ও সমৃদ্ধ জাতির শাসন সমাপ্ত হলো।

তার উত্তরাধিকার লাভ করেন তিওস। তার সামনে তখনও পারস্য একটি সমস্যারূপে দাঁড়িয়েছিল। অবশ্য সে সময় গ্রীসের পরিস্থিতি এক অস্বাভাবিক মোড় নিয়েছিল। গ্রিক নগরী থিবিস স্পার্টাকে পরাজিত করেছিল। তবে তার বহুশতাব্দীর সামরিক শৌর্যবীর্য হ্রাস পেয়ে অসহায় পরিস্থিতিতে পৌঁছায়। তার দুই রাজার মধ্যে একজন ছিলেন আজেসিলেউস এবং সমসাময়িক গ্রিকদের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ সেনাধ্যক্ষ, যদিও তিনি স্পার্টাকে রক্ষা করতে পারেননি। স্পার্টার অবস্থা তখন এতই করুণ যে যুবাবস্থায় যে আজেসিলেউস গ্রীসের উপর কর্তৃত্ব করেছিলেন এবং এশিয়া মাইনরে পারস্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বিজয়ী হয়েছিলেন, তিনি অর্থের বিনিময়ে তার প্রতিভাকে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন, যে অর্থের সাহায্যে যুদ্ধ করে তিনি স্পার্টাকে রক্ষা করতে চান।

গর্বিত স্পার্টান রাজাকে এখন ভাড়াটিয়া হিসাবে কাজ করতে হচ্ছে। নিজেকে তিনি তিওসের কাছে বিক্রি করে তার এক স্পার্টান সেনাদল নিয়ে মিশরে উপস্থিত হন। তিওস শুধু হতাশভাবে এই বৃদ্ধ সেনাপতিটির দিকে তাকিয়ে থাকেন (এ সময়ে আজেসিলেউসের ওসের বয়স হয়েছিল আশি বছর), ক্ষীণকায়, ক্ষুদ্র পঙ্গু এক ব্যক্তি। তিওস এই বৃদ্ধটির হাতে মিশরীয় সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ তুলে দিতে রাজি হলেন না। তিনি শুধু ভাড়াটিয়া সৈন্যদলের নেতৃত্ব দিতে পারেন। ইতিমধ্যে ক্যাব্রিয়াস ফিরে এসে মিশরীয় নৌবহরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

তিওস এ সময় অনুভব করেন যে, তিনি এখন পারস্য আক্রমণের মতো যথেষ্ট শক্তিশালী। পারস্য ধীরে ধীরে অবক্ষয়ের দিকে যাচ্ছিল। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার গ্রিক সৈন্যদল পারস্যের উপর দিয়ে ইচ্ছামতো কুচকাওয়াজ করে গিয়েছিল এবং দীর্ঘ অর্ধশতাব্দীকাল রাজত্ব করে দ্বিতীয় আর্তাজারেক্সেস বৃদ্ধ এবং সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন।

অতএব মিশরীয় বাহিনী সিরিয়ার উপর আঘাত হানল। অনেক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট। এথেনীয়, স্পার্টান ও মিশরীয়দের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিল এবং তারা সমস্ত পরিকল্পনাটিকে নস্যাৎ করে দিল। তার চেয়েও বড় কথা তিওসের একজন আত্মীয় সিংহাসন দাবি করে বসল আর তিওস যখন আজেসিলেউসকে আদেশ দিলেন তাকে দমন করার জন্য, তখন স্পার্টা তা প্রত্যাখ্যান করল। তিনি মিশরের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এসেছেন, মিশরীয় জনগণের বিরুদ্ধে নয়।

তিও পারস্যে পালিয়ে যেতে বাধ্য হলেন এবং নতুন দাবিদার দ্বিতীয় নেক্টানেবো মিশরের সিংহাসনে আরোহণ করলেন। আজেসিলেউসের যথেষ্ট শিক্ষা হয়েছে এবং তিনি স্পার্টায় ফিরে যেতে সিদ্ধান্ত নিলেন। তবে ফিরতি পথে সাইরেনিতে তার মৃত্যু হল। ৩৫৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে দ্বিতীয় আর্তাজারেক্সেসের মৃত্যুর পর তার পুত্র তৃতীয় আর্তাজারেক্সেস উত্তরাধিকার লাভ করেন যার অধীনে পারস্য যথেষ্ট শৌর্যবীর্য প্রদর্শন করে।

৩৫১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তৃতীয় আর্তাজারেক্সেস মিশর আক্রমণ করেন। তবে মিশর তার গ্রিক ভাড়াটিয়া বাহিনীর সাহায্যে তাকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়। তিন শতাব্দী ধরে মিশরীয়রা গ্রিক ভাড়াটিয়াদের ব্যবহার করে আসছে। তবে এবারই শেষবারের মতো তারা সফলকাম হয় (এরপর গ্রিকদের আক্রমণে মিশরীয়রা প্রভু ছিল না ভৃত্য হয়ে গিয়েছিল)।

সিরিয়ায় বিদ্রোহের কারণে পারস্য সম্রাটকে তার পরবর্তী উদ্যোগ বিলম্বিত করতে হয়েছিল। অনেক কষ্টে তাকে বিরোধীতাকারীদের দমন করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হয়েছিল। ৩৪০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তিনি আর একবার মিশর অভিযান করেন এবার তিনি নিজেই সৈন্যদলের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।

এটি ছিল মূলত গ্রিকদের বিরুদ্ধে গ্রিকদের যুদ্ধ কারণ উভয় পক্ষেই ছিল গ্রিক ভাড়াটিয়া সৈন্য। দীর্ঘ সংগ্রামের পর পারসিক গ্রিকরা পেলুসিয়ামের যুদ্ধে মিশরীয় গ্রিকদের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন করে। পেলুসিয়ামের দৃঢ় অবস্থান ভেদ করতে সক্ষম হওয়ার পর পিছনে আর কিছুই বাকি রইল না যা পারস্য বাহিনীকে থামিয়ে দিতে পারে।

দ্বিতীয় নেক্টানেবো নুবিয়ায় গিয়ে আশ্রয় নিলেন। তিনিই ছিলেন মিশরের সর্বশেষ বিষাদময় স্বদেশীয় শাসক। যে শাসন কাল শুরু হয়েছিল তিন হাজার বছর পূর্বে মেনেসের আমলে।

অর্ধ শতাব্দী পরে দ্বিতীয় নেক্টানেবোকে দিয়ে মানেথো মিশরীয় রাজবংশের ইতিহাস শেষ করেন। তবে আমরা আরও এগিয়ে যাব।

.

মেসিডোনীয়গণ

আর্তাজারেক্সেস প্রচণ্ড নিষ্ঠুরতার সাথে তার পারসিক শাসন কায়েম করেন, তবে সে শাসন দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। গ্রীসে ঘটে যাচ্ছিল মহা ভয়ংকর সব ঘটনা।

শতাব্দীর পর শতাব্দীব্যাপী গ্রিক নগরীসমূহ পরস্পরের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত, আর ৩৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এই যুদ্ধের বিরাম ঘটে। কোনো একক নগরী অন্য কারও উপর প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। এথেন্স, স্পার্টা, আর থিবিস চেষ্টা করেছিল ঠিকই, তবে সবার ভাগ্যেই জুটেছিল হতাশাজনক দুর্ভাগ্য।

তাহলে এই ধর্মযুদ্ধের নেতৃত্ব কে দেবে? রশি টানাটানিতে যে প্রথম হতে পারে নিশ্চয়ই সে, কিন্তু কেউই তো বিজয়ী হতে পারেনি, আর মনে হচ্ছিল কেউই কোনো দিন বিজয়ী হতে পারবেনা। অন্তত নগর রাষ্ট্রের কেউ নয়।

গ্রীসের উত্তরে ছিল মেসিডন নামে এক রাজ্য। এরা গ্রিক ভাষা ও সংস্কৃতি রপ্ত করেছিল, তবে গ্রিকরা সব সময় তাদের অর্ধবর্বররূপেই গণ্য করে এসেছে।

নিশ্চিত করেই বলা যায় এরা প্রাথমিক গ্রিক ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য কোনো স্বাক্ষর রেখে যেতে পারেনি। সেই মহান সময় যখন গ্রিক নগরসমূহ পারস্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে পারস্য বাহিনীকে পরাজিত করতে পেরেছিল, সে সময় মেসিডোনীয়া পারস্যের অধীন ছিল এমনকি পারস্যের হয়ে যুদ্ধ করেছিল।

৩৫৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে যখন মিশর তার স্বাধীনতার শেষ শাসটি গ্রহণ করছে, তখন এক অনন্যসাধারণ ব্যক্তিত্ব মেসিডোনীয়ার সিংহাসনে আরোহণ করলেন। সেই ব্যক্তিটি ছিলেন দ্বিতীয় কিলিপ, যিনি তার সেনাবাহিনীকে পুনর্গঠিত করেছিলেন। তিনি সুশিক্ষিত, প্রশিক্ষিত, ভারী অস্ত্রসজ্জিত অদম্য এক সেনাবাহিনী গড়ে তুলেছিলেন। তারা দীর্ঘ বর্শা হাতে এমনভাবে সামনে অগ্রসর হতো যেন এক ঘন সন্নিবিষ্ট সজারুর দল এগিয়ে চলেছে।

ঘুষ, মিথ্যা, সামরিক প্রতিরোধ সবই যখন ব্যর্থ, তখন ফিলিপ উত্তর গ্রীসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিলেন। ৩৩৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে গ্রিক নগর থিবিসের নিকট কায়রোনিয়ার চূড়ান্ত যুদ্ধে তিনি থিবিস ও এথেন্সের সম্মিলিত বাহিনীকে পরাজিত করে সমগ্র গ্রীসে প্রাধান্য বিস্তার করলেন।

এবার তাহলে পারস্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা যেতে পারে, কারণ একজন উপযুক্ত নেতা পাওয়া গেছে। পরাজিত গ্রিক নগরবাসী সবাই এজন্য ফিলিপকে নেতা মনোনীত করলেন। তবে ৩৩৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে যখন অভিযান শুরু হতে যাচ্ছে, আর গ্রিক বাহিনী এশিয়া মাইনর অতিক্রম করতে যাচ্ছে, ঠিক তখনই অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ফিলিপকে হত্যা করা হয়।

কিছুদিনের জন্য সমস্ত পরিকল্পনাটাই দুর্বল হয়ে পড়ে। কিছুদিন বিরতির পর ফিলিপের একুশ বছর বয়সী পুত্র তৃতীয় আলেক্সান্ডার সিংহাসনে আরোহণ করলেন। ফিলিপের নিয়ন্ত্রণাধীন নগর ও জাতিগোষ্ঠীগুলি মনে করল একুশ বছর বয়সী নাবালকের রাজত্বকালই বিদ্রোহ করার উপযুক্ত সময়, তবে এর চেয়ে বড় ভুল আর কিছুই ছিলনা, কারণ অনেক দিক দিয়েই তৃতীয় আলেক্সান্ডার ছিলেন এক অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব। তিনি অত্যন্ত সঙ্কটজনক ও হতাশাব্যঞ্জক কোনো যুদ্ধে পরাজিত হননি, তাছাড়া কঠিন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে তিনি এক মুহূর্ত বিলম্ব করতেন না (আর ফলাফল দেখে আমরা সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারি সেসব সিদ্ধান্তই ছিল সঠিক)। ঘটনাচক্রে তিনি তার সেনাবাহিনীতে কয়েকজন অত্যন্ত সুদক্ষ সেনাপতির সমাহার ঘটাতে পেরেছিলেন, একই সেনাবাহিনীতে যেমনটা আর কখনোই দেখা যায়নি ( এদিক দিয়ে কেবল নেপোলিয়নকে ব্যতিক্রমরূপে গণ্য করা যেতে পারে)।

সিংহাসনে আরোহণ করেই আলেক্সান্ডার বিদ্রোহী জাতিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এগিয়ে গেলেন, আর প্রথম আঘাতেই তাদের পরাস্ত করলেন, ঝটিকা অভিযানে এগিয়ে গেলেন গ্রীসের দক্ষিণপ্রান্ত পর্যন্ত, আর দ্বিতীয় আঘাতেই গ্রিক নগরগুলিকে ধরাশায়ী করে ফেললেন। ৩৩৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তিনি গ্রীস ছেড়ে এশিয়ার দিকে অগ্রসর হলেন।

ইতিমধ্যে আতাজারেক্সেস মারা যান ৩৩৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, আর কিছুকাল হট্টগোলের পর ৩৩৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে একজন শান্তশিষ্ট তবে দুর্বলব্যক্তি সিংহাসনের পথ খুঁজে পান, আর তিনি তৃতীয় দারায়ুস নামে শাসনভার গ্রহণ করেন। আলেক্সান্ডারকে কেউই সফলভাবে মোকাবেলা করতে পারেনি (শীঘ্রই তিনি “আলেক্সান্ডার দ্য গ্রেট” নামে পরিচিতি লাভ করেন, তবে যত শাসক “গ্রেট” উপাধি লাভ করেন তার মধ্যে কেবল আলেক্সান্ডারের ব্যাপারেই কোনো প্রশ্ন ওঠেনা)।

পারসিকদের অগ্রবর্তী প্রতিরক্ষাদল যারা ছিল আত্মবিশ্বাসে ভরপুর, তারা এশিয়া মাইনরের উত্তরাঞ্চলের গ্রানিকাস নদীতীরের যুদ্ধে সম্পূর্ণরূপে পরাস্ত হয়।

আলেক্সান্ডার এশিয়া মাইনরের উপকূল ধরে অগ্রসর হয়ে এশিয়া মাইনরের অভ্যন্তরে আঘাত হানেন আর তার চাইতে অনেক বড়, কিন্তু গুণগত দিক থেকে সৈনাপত্যে নিম্নমানের পারসিক বাহিনীকে ভূমধ্যসাগরের দক্ষিণ উপকূলে ঈসাস শহরের যুদ্ধে পরাজিত করেন।

তারপর তিনি সিরীয় উপকূল ধরে অগ্রসর হয়ে নয় মাস অবরোধের পর টায়ার নগরী দখল করে নেন (সম্ভবত এটাই ছিল তার জীবনের সবচাইতে কঠিন যুদ্ধ তবে নেবুচাদ্রেজারের তেরো মাসের অবরোধের কথা ভাবলে এটাকে তেমন বড় মনে হবেনা)।

৩৩২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আলেক্সান্ডার পেলুসিয়ামের সামনে এসে দাঁড়ালেন, তবে এখানে মিশর তার সাথে যুদ্ধে জড়ালো না, যেমনটা মিশর করেছিল সেনাকেরিব, ক্যাম্বিসেস আর তৃতীয় আর্তাজারেক্সেসের আমলে। এটা ঘটল মাত্র নয় বছর পরে যখন পারস্য নেক্টানেবোকে পরাজিত করে মিশরকে রক্তের নদীতে ভাসিয়েছিলেন, আর মিশরীয়দের মনে সেই ক্ষত তখনও শুকিয়ে যায়নি। তাই আলেক্সান্ডারকে ত্রাণকর্তারূপেই স্বাগত জানানো হয়েছিল। বাস্তবিকপক্ষে আলেক্সান্ডার ঈসাসে থাকতেই মিশরীয়রা তার সামনে উপস্থিত হয়ে তাদের দেশকে উদ্ধার করতে আবেদন জানায়।

আলেক্সান্ডার এই অনুকূল অবস্থার সুযোগ নিতে মোটেই বিলম্ব করেননি। তিনি মিশরীয় রীতি অনুসরণ করে মিশরীয় দেবতার নামে বলি চড়াতে ভুল করেননি। বিজেতা হিসাবে নয় বরং মিশরীয় ফারাও রূপেই তিনি পরিচয় দিতে আগ্রহী ছিলেন।

এই উদ্দেশ্যকে পূর্ণতা দিতে তিনি নীল নদের প্রায় তিনশ মাইল পশ্চিমে লিবিয়ার “সিব” মরুদ্যানে গিয়েছিলেন, যেখানে ছিল আমেনের এক শ্রদ্ধেয় মন্দির। সেখানে ফারাও হওয়ার সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছিলেন, এমনকি মিশরীয় রীতি অনুসারে নিজেকে আমেনের পুত্র বলে পরিচয় দিতেও দ্বিধা করেননি। আলেক্সান্ডার যে একজন বিজেতার আত্মম্ভররূপে পরিচয় দিতে মত্ত হয়ে উঠেছিলেন এটা তারই প্রমাণ, আর এজন্য তিনি নিজের উপর দেবত্ব আরোপ করতে চেয়েছিলেন, এছাড়া মিশরীয় পুরোহিতরা তাকে ফারাওরূপে স্বীকার করতনা। তবুও এটা একটা নজির স্থাপন করেছিল, এর সাড়ে ছয়শো বছর পরে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করার পরও সেখানকার সম্রাটরা নিজেদের দেবত্ব আরোপে উন্মত্ততা প্রকাশ করত। অবশ্য এটা প্রথম দিকে গ্রিক রীতিসিদ্ধ ছিলনা। গ্রিকদের কাছে আমেন পরিচিত ছিল আমন নামে আর যেহেতু সতেরো শতাব্দী পূর্বে একাদশ রাজবংশের আমলে মিশরীয়দের সর্বশ্রেষ্ঠ দেবতারূপে তার স্বীকৃতি ছিল, তাই গ্রিকরা তাকে তাদের শ্রেষ্ঠ দেবতা জিউসের সমতুল্য মনে করত। কাজেই সিবর মন্দির উৎসর্গ করা হয়েছিল “জিউস-আমনের” নামে।

আধুনিক রসায়ন শাস্ত্রের সাথে এই মন্দিরের অদ্ভুত যোগসূত্র লক্ষ করা যায়। মরুভূমিতে জ্বালানির খুব অভাব, আর তাই সিবর পুরোহিতরা উটের বিষ্ঠাকে জ্বালানিরূপে ব্যবহার করত। এর থেকে যে কালি মন্দিরের দেয়ালে লেগে থাকত তা দেখতে অনেকটা সাদা স্ফটিকের মতো মনে হতো আর তার নাম দেওয়া হয়েছিল ল্যাটিন ভাষায় “স্যাল এমোনিয়াক (আমনের লবণ)। আর এর থেকে যে গ্যাস নির্গত হয় তার নাম এমোনিয়া।

এভাবেই থিবিসের মহান দেবতা, ইখনাতন যাকে অস্বীকার করতে গিয়ে সফল হননি, আর যাকে দ্বিতীয় রামেসেস নিজের দ্বিতীয় স্থানের মর্যাদা দিয়েছিলেন, আজো তা এক ঝাঁজালো গ্যাসের মাধ্যমে টিকে রয়েছে।

আলেক্সান্ডার অবশ্য ফারাওরূপে বেশিদিন মিশরে থাকতে পারেননি, কারণ তাকে পারস্যের অবশিষ্টাংশ জয় করতে হবে, আর সেজন্য প্রয়োজন বহু বছরের অভিযানের। তার অনুপস্থিতিতে তিনি স্থানীয় মিশরীয়দের গভর্নররূপে মনোনীত করলেন, তবে তাদের উপর আর্থিক দায়িত্ব দেয়ার আস্থা পেলেননা (বিদ্রোহ করতে টাকার প্রয়োজন)। এই দায়িত্ব দিলেন তিনি নক্রেটিসের গ্রিকদের হাতে, যাদের একজন ছিলেন “কিস্নওমেনেস”। কর আদায়ের ক্ষমতাপ্রাপ্ত এই ব্যক্তিটি হয়ে বসলেন মিশরের প্রকৃত শাসক, যদিও মুখরক্ষার খাতিরে শুধু উপাধিটি গ্রহণে বিরত রইলেন।

মিশর ত্যাগ করার পূর্বে আলেক্সান্ডার, নীলের সর্বদক্ষিণের একটি শাখা জরিপ করেন, যেখানে অবস্থান ছিল একটি ছোট্ট শহরের, শহরটির পশ্চিমে একটি শহরতলী নির্মাণের এলাকা চিহ্নিত করেন। নূতন শহরতলীসহ পুরাতন শহরটি তার সম্মানার্থে নামকরণ করা হয় আলেক্সান্দ্রিয়া। এই শহর নির্মাণের মধ্য দিয়ে ক্লিওমেনেস বুঝতে পারেন ৩৩১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে যে মিশরের ভিত নির্মাণ হলো, তা আর কোনো দিনই আগের অবস্থানে ফিরে যেতে পারবেনা। এই শহরের পরিকল্পনাকারী ছিলেন ডাইনোক্রেটিস, যে শহরের রাস্তাগুলি ছিল সোজা সরলরেখায় আর এগুলি সবসময় সমকোণে পরস্পরকে ছেদ করত।

আলেক্সান্ডার অনেকগুলি শহর নির্মাণের আদেশ দিয়েছিলেন যাদের প্রায় সবগুলির নামই ছিল আলেক্সান্দ্রিয়া, তবে মিশরের আলেক্সান্দ্রিয়াই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এখান থেকে নক্রেটিসের বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালিত হতো। যেহেতু প্রাচীন বণিজ্যিক শহর টায়ার ধ্বংস করে ফেলা হয়েছিল, তাই আলেক্সান্দ্রিয়াই হয়ে উঠেছিল পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক বন্দর, অনতিবিলম্বে যা পরিণত হয়েছিল মিশরের রাজধানীতে। এরপর প্রাচীন রাজধানী মেসি ও থিবিস ধীরে ধীরে অবক্ষয়ে নিপতিত হলো।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *