০৯. নিউমার্কেটে এশার সঙ্গে দেখা হল

নিউমার্কেটে এশার সঙ্গে দেখা হল।

কী সুন্দর তাকে লাগছে! এশা হচ্ছে সেই রকম মেয়ে, যাকে যেদিন দেখা যায় সেদিনই মনে হয় সে সাজের নতুন কোনো কায়দা করেছে—যার জন্যে তাকে অন্য যেকোনো দিনের চেয়ে সুন্দর লাগছে। আজ তাকে লাগছে ইন্দ্রাণীর মতো। হালকা নীল রঙের একটা শাড়ি। সেই নীলের ছায়া যেন চোখে পড়েছে। যেমন নীল-নীল লাগছে তার চোখ। সে নরম গলায় বলল, আমি ভেবেছিলাম তুমি আসতে পারবে না। তোমার বাবার শরীর কেমন?

ভালো।

সত্যি ভালোতো? আমি খুব খারাপ দেখেছিলাম।

এখন চমৎকার! খাওয়াদাওয়া করে বারান্দায় বসে আছেন।

আশ্চর্য তো!

একে বলে মিরাকুলাস রিকভারি। ধীরেনবাবু বলে আমাদের একজন ডাক্তার আছেন, তিনি যাকে বলে সাক্ষাৎ নীলরতন রায় কিংবা এই জাতীয় কিছু। এক ডোজ কী খাইয়ে দিয়েছেন-বাবা উঠে বসে বললেন, হুঙ্কা বোলাও।

ঠাট্টা করছ?

আরে না! বাবা অসুস্থ থাকলে আসতাম নাকি?

আমার কেন জানি মনে হয় অসুস্থ থাকলেও তুমি আসতে। পুলিশ-বক্সের সামনে যেতে বলেছিলাম। গিয়েছিলো, তাই না?

হুঁ।

তুমি যাবার কিছুক্ষণ পরই আমি গেলাম। এক পুলিশ অফিসার আমাকে খুব যত্ন করল। তোমার নাকি খুব বন্ধু।

বোসম ফ্রেন্ড। পুলিশের কোনো হেল্প লাগলে বলবে, ব্যবস্থা করে দেব। ডেকেছ কেন, ব্যাপারটা কি?

এক জায়গায় আমার সঙ্গে যেতে হবে।

কোথায়?

বলছি। খুব তৃষ্ণা লেগেছে। দাঁড়াও, পানি খেয়ে নিই। খুব ঠাণ্ডা পানি খেতে ইচ্ছা করছে।

ঠাণ্ডা পানি এখানে পাবে কোথায়?

পাব। ওষুধের দোকানগুলোতে ফ্রিজ থাকে। ওরা ফ্ৰিজে ঠাণ্ডা পানি রাখে। মিষ্টি করে চাইলে দেয়।

এশা এত মিষ্টি করে পানি চাইল যে, ফার্মেসির ছেলেটি বলল, আপা বসুন, পানি দিচ্ছি।

বসব না ভাই। এক জায়গায় যেতে হবে।

এশা পানি খেল অনেক সময় নিয়ে। যেন পানি নাচা খাচ্ছে। তার কপালে খুব সূক্ষ্ম ঘাম। ঠোঁট দুটি ফ্যাকাসে। কিছু একটা নিয়ে সে মনে হচ্ছে খুব চিন্তিত।

আমি বললাম, আমরা যাব কোথায়?

মগবাজারের দিকে।

ব্যাপারটা কি?

বলব। যেতে-যেতে বলব। একটা রিকশা নাও। রোগা দেখে একজন রিকশাওয়ালা নেবে, যে খুব আস্তে আস্তে যাবে। যত দেরিতে পৌঁছানো যায় ততই ভালো। আমার ভয় করছে।

কোনো রিকশাওয়ালা মগবাজারে যেতে রাজি না। সেখানে নাকি বিরাট গণ্ডগোল হয়েছে। বাস পুড়েছে, পুলিশের জিপ পুড়েছে। দোকান ভাংচুর হয়েছে। একটা ঘড়ির দোকান লুট হয়েছে। পুলিশের গুলিতে দুজন নাকি মারা গেছে।

নিৰ্ঘাত মাসুমের কাণ্ড। একটা কিছু সে নিশ্চয় ঘটিয়েছে। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, মগবাজারে এত বড় কাণ্ড ঘটল, তার কোনো ছাপ এখানে নেই। দিব্যি দোকানপাট খোলা, ব্যবসাবাণিজ্য চলছে।

এক বুড়ো রিকশাওয়ালাকে পাওয়া গেল। সে সম্ভবত মগবাজারের গণ্ডগোলের কথা জানে না। ভাড়াও চাইছে কম। বুড়ো রিকশাওয়ালাগুলো খুব কম ভাড়া চায়। এত কষ্ট করে রিকশা টানে যে, শেষ পর্যন্ত দুটা টাকা বাড়তি দিতে হয়, তার পরেও মনে অনুশোচনা গেঁথে থাকে বুড়োলোকটাকে কষ্ট দেবার জন্যে।

এশা বলল, হুড নামিয়ে দাও। হাওয়া খেতে খেতে যাই। রিকশাওয়ালা এতই কমজোরি যে, হুড নামাতে গিয়েই পরিশ্রমে সে হাঁপাচ্ছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *