নবগ্রাম হাট থেকে শ্যামাঙ্গ ঊর্ধ্বশ্বাসেই পলায়ন করেছিলো। নিশ্চয়ই পলায়ন সেটা। তোমার নিজের অনিচ্ছায়, ভীত হয়ে, লাঞ্ছিত হয়ে, দ্রুত স্থান ত্যাগ করাকে আর কি বলা যায়? নিশ্চয়ই তাকে পলায়ন বলতে হবে। শ্যামাঙ্গ পথ ভুল করে। ঐ সময় তার দিগ্বিদিক জ্ঞান থাকবার কথা নয় এবং ছিলোও না। সে পশ্চিমাভিমুখে অগ্রসর হয়। পথ ছিলো বনভূমির মধ্য দিয়ে। ঐ বনভূমিরই মধ্যে এক পল্লীতে রাত্রিবাস করে সে তার যথাসর্বস্ব হারায়। শুনেছিলো সে যে বনভূমির পল্লীগুলিতে দস্যুদের বাস। তবু ঈশ্বরের কাছে সে কৃতজ্ঞ যে দস্যুরা তার প্রাণ হরণ করেনি। করতে পারতো–সাধারণত করাই নিয়ম–কিন্তু যে কোনো কারণেই হোক, তার ক্ষেত্রে ঐ ব্যতিক্রমটি ঘটেছে।
কপর্দকহীন অবস্থায় সে বনভূমিও অতিক্রম করে। দেখে যে রাত্রিকালই বরং ভ্রমণের জন্য অধিকতর নিরাপদ। ব্যাঘের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়নি। কিন্তু বরাহ ভল্লুক ইত্যাদির সঙ্গে কয়েকবারই তার সাক্ষাৎ লাভ ঘটেছে। দেখেছে, মানুষের চাইতে পশু সত্যিই কম বিপজ্জনক।
যে বর্ধিষ্ণু গ্রামটিতে প্রথম এবং সাদর আপ্যায়ন পায় তার নাম কুসুম্বী। সেখানে সে কয়েকদিন অবস্থান করে। গৃহস্থ ছিলেন কুম্ভকার–সুতরাং দরিদ্র হলেও কর্মের বিনিময়ে তারা তাকে উত্তম আশ্রয় দেয়।
সে তখন অনন্যোপায়। তাকে কিছু উপার্জন করতে হবে। তারপর তাকে আবার গৃহে প্রত্যাগমনের চেষ্টা করতে হবে। তার এখন মনে হয়, গুরু বসুদেব সম্ভবত এই সকল পরিস্থিতির জন্য শেষ পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করেছেন। তার হাসি পায় নিজের অবস্থা দেখে। আসলেই সে মূর্খ। যে শক্তি সমগ্র সংসারে বিস্তৃত, সেই শক্তির প্রতিকূলে সে যেতে চেয়েছে কোন সাহসে? তার শক্তি কোথায় যে সুধীমিত্রের মতো সামন্তপতির ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাবে? ধর্ম আছে, শাস্ত্র আছে, সংস্কার আছে–সে নিজ ইচ্ছায় চলতে চাইলেই হলো? নীচ দস্যুর কাছে যে কৃপার পাত্র–তার আবার শিল্পী হবার সাধ?
কুসুম্বীতে অধিকাংশই ক্ষেত্ৰকর। এখানে ভূমি প্রায়শঃ সমতল এবং নদীতীরবর্তী বলে বৎসরের অধিকাংশ সময় থাকে আর্দ্র ও উর্বরা। গৃহস্থরা ধনশালী না হলেও প্রায় সকলেই সম্পন্ন। সুতরাং শ্যামাঙ্গকে অবাঞ্ছিত জ্ঞান করে না কেউ। তদুপরি সে কর্মবিমুখ নয়–কুম্ভকারের কাজগুলি সে যত্নসহকারেই নিষ্পন্ন করে। মনোহরদাস বৃদ্ধ হয়েছেন, সকল কাজ তাকে দিয়ে হয় না। ওদিকে আবার তার পুত্রটি রত্নবিশেষ। বুদ্ধিতে বাতুলপ্রায়–এবং শ্রমকাতর। অথচ এই সময়ই কুম্ভকারদের উপার্জনের কাল, দূরে–অদূরে মেলা হচ্ছে, তৈজসাদি যতো অধিক নির্মিত হবে ততোই উপার্জন বৃদ্ধি পাবে। মনোহরদাস চিন্তাগ্রস্ত ছিলেন। এমন সময় শ্যামাঙ্গকে পেয়েছেন তিনি। তাঁর আশা, শ্যামাঙ্গ যদি তার কাছে থাকে, তাহলে এ বৎসর ভালো উপার্জন করবেন। তাই তিনি শ্যামাঙ্গকে স্নেহ প্রদর্শন করতে কখনও কার্পণ্য বোধ করেন না। কিন্তু শ্যামাঙ্গের আচরণ লক্ষ্য করে মনে তার শঙ্কা জাগে। মনে হয় তরুণটি অত্যধিক রহস্যময়। একেকদিন দিগন্ত পানে এমন উদ্ভ্রান্ত দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে যে ডাকলেও উত্তর পাওয়া যায় না। কিংবা বালখিল্য পুত্তলি নির্মাণের সময় এমন অভিনিবেশসহকারে সে কাজ করে, যে না দেখলে বিশ্বাস হবার কথা নয়। মনোহরদাস অবাক হন, একটিমাত্র পুত্তলি গঠনেই সে দণ্ডাধিককাল ব্যয় করে। তবে হ্যাঁ–যা করে সে, তার তুলনা হয় না। মৎস্য হোক, গোয়ালিনী হোক, মৃৎশকট হোক, পক্ষী হোক–বড় সুন্দর পুত্তলিগুলি।
শ্যামাঙ্গ যেদিন কর্ম থেকে অবকাশ প্রার্থনা করলো সেদিন মনোহরদাস বিলক্ষণ উদ্বিগ্ন হলেন। বারবার জানতে চাইলেন–বৎস, আমরা জানি তোমাকে স্বদেশে প্রত্যাগমন করতে হবে–কিন্তু তবু এখানে কি তোমার কোনো সমস্যা হয়েছে, বলো?
না না, এ আপনি কি বলছেন, শ্যামাঙ্গ বৃদ্ধকে আশ্বস্ত করতে চেষ্টা করে। বলে, আপনার কৃপায় আমার জীবন রক্ষা পেয়েছে, সে কথা কি বিস্মৃত হওয়া সহজ, আপনিই বলুন?
সে বৃদ্ধকে বোঝাতে চেষ্টা করে যে অন্যকিছু নয়–সে পার্শ্ববর্তী গ্রাম উজুবটে যাবে–সেখানে তার বন্ধু আছে কয়েকজন। তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা তার অতীব প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। সাক্ষাৎ করেই পুনরায় চলে আসবো, শ্যামাঙ্গ বৃদ্ধকে জানায়। বলে, আপনি নিশ্চিত থাকুন, আমার দ্বারা আপনার কোনোরূপ ক্ষতি আমি হতে দেবো না।
হ্যাঁ, উজুবটেই যাবে সে। দুজন যোগীর সঙ্গে অতি সম্প্রতি তার সাক্ষাৎ হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন পশ্চিমদেশাগত–সে উজুবট যাওয়ার জন্য ব্যাকুল। সঙ্গী যোগীটি প্রকৃতই যোগী, সকল ব্যাপারেই তার সীমাহীন অনাসক্তি। সঙ্গীর উজুবট গ্রামে যাবার আগ্রহ দমন করে রেখেছে সে অদ্ভুত কৌশলে। এতকাল বলে এসেছে উজুবট বহুদূর। সে এখন সে কথা বলতে পারে না, কেননা আগন্তক যোগী স্থানীয় ভাষা বিলক্ষণ বুঝতে শিখেছে। সে এখন বলে, উজুবটের গ্রামপতি এবং তার অনুচরেরা ভয়ানক যোগীদ্বেষী, একবার যদি আয়ত্তের মধ্যে পায়, তাহলে আর রক্ষা নেই।
শ্যামাঙ্গের সঙ্গে পরিচিত হওয়ায় যোগীটি প্রথম বুঝতে পারে যে, তার সঙ্গীটি তার সঙ্গে এতকাল চাতুরী করে এসেছে। সে শ্যামাঙ্গকে ক্রমান্বয়ে অনুরোধ করতে থাকে। জানায়, উজুবটে তার একজন গুরু অবস্থান করছেন–তাঁর কাছে একটি সংবাদ অবশ্যই উপস্থিত করতে হবে–ইতোমধ্যেই অনেক বিলম্ব হয়ে গেছে তার।
শ্যামাঙ্গের মনেও একটি বাসনা ছিলো। তার বিপদগ্রস্ত অনিশ্চিত অবস্থায় বাসনাটি প্রবল হতে পারেনি–বলা যায়, সুপ্ত অবস্থাতেই বিরাজ করছিলো। কিন্তু যেই তার অবস্থা কিঞ্চিৎ স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে, অমনি সে উজুবট গ্রাম সম্পর্কে সংবাদাদি সংগ্রহ করতে আরম্ভ করে দিলো। ঐ সময়ই সে নিজের মনের একটি দিক আবিষ্কার করে স্তম্ভিত হয়ে যায়। তার ধারণা ছিলো মায়াবতীর মাতাকে দেখবার জন্যই সে উজুবট যাবে। তার মাতৃময়ী মূর্তিটি তার মনে বারবার আসছিলো। এই প্রকার যখন তার মানসিক অবস্থা, ঐ সময়, একদিন মনোহরদাস একটি পুত্তলি তার হাতে এনে দিলেন। জানতে চাইলেন, এইটি কি তোমার গঠন?
কেন, কি হয়েছে? শ্যামাঙ্গ ঈষৎ শঙ্কা বোধ করে, কারণ মনোহরদাসের মুখ অতিশয় গম্ভীর ঐ সময়।
মনোহরদাস জানায়, এ কি গোয়ালিনী মূর্তি হয়েছে, তুমিই বলো?
শ্যামাঙ্গ তখন মনোযোগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। এবং চকিতেই বিমূঢ় হয়ে যায়। এ কে? এ কার মূর্তি? ক্ষুদ্র পুত্তলি–কিন্তু ভঙ্গিটি অবিকল ধরা পড়েছে–রমণীর গমনভঙ্গি ওটি–দৃষ্টি দূরে নিবদ্ধ, গ্রীবাটি ঈষৎ বঙ্কিম, দক্ষিণপদ সম্মুখে প্রসারিত। রমণীটিকে এবং নিজ মনের একটি দিক একত্রে আবিষ্কার করে সে মরমে মরে গেলো। ছি ছি–এ কোন চিত্র তার অন্তরে মুদ্রিত হয়ে রয়েছে চিরকালের জন্য? এ তো অবিকল লীলাবতী, উজুবট গ্রামের লীলাবতী!
সে মনোহরদাসকে জিজ্ঞাসা করে, তাহলে কি পুত্তলিগুলি বিনষ্ট করতে হবে?
না, তা নয়, চিন্তিত মুখে বলেন মনোহরদাস, পুত্তলি অত্যন্ত সুন্দর হয়েছে, আমার চিন্তা হচ্ছে, এই পুত্তলি অধিক সংখ্যায় বিক্রয় হবে কিনা–ক্রেতারা তো গোয়ালিনী চাইবে তোমার কাছে–এ কি গোয়ালিনী? যদি গোয়ালিনী না হয়, তাহলে বলো, এর নাম কি দেবে? মালিনী?
নাম? শ্যামাঙ্গ এই দিকটি কখনই চিন্তা করেনি। সে বললো, নাম যে কুলসূচক হতেই হবে, এমন কি কোনো বিধান আছে? নাম তো ব্যক্তির পরিচায়ক চিহ্ন মাত্র। যে কোনো নাম দিলেই হয়।
বলল, কি নাম দেবে? মনোহরদাস আগ্রহভরে শ্যামাঙ্গের মুখপানে চান।
শ্যামাঙ্গের মনে তখন একটি নামই উচ্চারিত হচ্ছে। বললো, ওর নাম দিন লীলাবতী!
লীলাবতী! মনোহরদাস ক্ষণেক চিন্তা করলেন, তারপর বললেন, উত্তম–তাই হোক, এই নতুন পুত্তলির নাম হোক লীলাবতী।
শ্যামাঙ্গ মনোহরদাসকে সন্তুষ্ট করলো বটে, কিন্তু নিজ বিবেকের নিকট সে অপরাধ বোধ করতে লাগলো। নিজ মনের এ কি রূপ দেখছে সে? কখন লীলাবতী এমনভাবে তার মানস লোকে স্থান করে নিয়েছে, সে জানতেও পারেনি। শোণিত ধারার প্রবাহ কি মানুষ জানতে পারে? লীলাবতী কি তাহলে তার শোণিত ধারার মধ্যে মিশে গিয়েছে? সে কি মিশেছে তার শ্বাসে–নিঃশ্বাসে? তার স্বপ্নে? কল্পনায়?
ছি ছি, এ কী হলো? ধিক তোকে শ্যামাঙ্গ? শতবার ধিক তোকে–বিশ্বাসঘাতক কোথাকার!
নিজেকে শ্যামাঙ্গ ধিক্কার দেয়। হ্যাঁ বিশ্বাসঘাতকতাই তো সে করেছে। লীলাবতীর কাছে সে না প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছে যে তার স্বামী অভিমন্যু দাসকে এনে দেবে? আর সে নিজেই কিনা হয়ে পড়লো আসক্ত? ছি ছি, ছি ছি, শ্যামাঙ্গ বিবেক দংশনে অস্থির হয়ে ওঠে।
কিন্তু এসবই বালির বাঁধ–ক্ষণে থাকে, ক্ষণে থাকে না। বরং ঐ প্রকার বিবেক দংশন তার আবেগকে অধিকতর উদ্দীপ্ত করে তুললো। যোগীটির পীড়াপীড়ি উপলক্ষ মাত্র–এমনকি মায়াবতীর মাকে প্রণাম করার ইচ্ছাটিও উপলক্ষ বই অন্য কিছু নয়। সে যোগীটির সঙ্গে উজুবটের দিকে যাত্রা করলো।
পথে দুজনায় নানা প্রসঙ্গ নিয়ে আলাপ। উজুবট গ্রামে কোনো সিদ্ধা বা যোগী আছে। এমন সংবাদ শ্যামাঙ্গ পূর্বে কখনও পায়নি। শুনলো, ঐ গ্রামে যোগী গুরু সিদ্ধপা অবস্থান করছেন। সিদ্ধপা অসাধারণ শক্তিমান যোগী–যোগবলে তিনি অসাধ্য সাধন করতে পারেন। চক্ষুর নিমেষে তিনি ত্রিভুবন ভ্রমণ করেন, সর্প–মারী–ভয় তাকে দেখে শতহস্তেন দূরাৎ পলায়ন করে–আরও আশ্চর্য, আকাশচারী দেবগণ পর্যন্ত অনুমতি ব্যতিরেকে তার উপর দিয়ে গমনাগমন করতে পারেন না–তিনি সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান মহাদেবের অত্যন্ত প্রিয় ভক্ত।
নির্জন পথের সঙ্গী দীর্ঘ পথক্ৰমণকালে স্বভাবতই বন্ধু হয়। তদুপরি যাত্রা যদি হয় পদব্রজে, তাহলে তো কথাই নেই–শয়ন গৃহের বিশ্রম্ভালাপের বিবরণ পর্যন্ত পরস্পরের নিকট অজানা থাকে না। যোগীটি নিজ গুরুর প্রশস্তি আরম্ভ করে। এবং ঐ প্রসঙ্গেই নানান বিষয় এসে যায়। যেমন পশ্চিম দেশে মাৎস্যন্যায় আরম্ভ হয়ে গেছে। এক যবন দলপতি রাজপুরুষদের নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে–রাজা কোথায়, কেউ জানে না। এই যবন জাতি অশ্বারোহণে অত্যন্ত দ্রুতগতি–আর অস্ত্রচালনায় যন্ত্রবৎ। হিংস্রতায় একেকজন যমের অনুচর। তাদের রক্তপিপাসা কিছুতেই নিবৃত্ত হয় না এবং নরমুণ্ড দিয়ে তারা গেণ্ডয়া খেলে থাকে।
শ্যামাঙ্গ এই যবন জাতি সম্পর্কে শুনেছিলো শুকদেব ও দীনদাসের কাছে। শুনেছিলো এদের মধ্যে একশ্রেণী আছে যারা সজ্জন এবং বিনয়ী। সে বললো, কিন্তু আমি তো শুনেছি যবনেরা ভদ্র, বিনয়ী এবং সজ্জন, তারা কি সত্যিই নিষ্ঠুর?
যোগীটি ঐ কথায় হাসে। বলে, আপনাকে কি বলবো, স্বচক্ষে দৃষ্ট ঘটনাকে তো আর মিথ্যা বলতে পারবো না–মহানন্দা তীরবর্তী দুইখানি গ্রাম তারা ধূলিতে মিশিয়ে দিয়েছে। আপনাদের প্রত্যয় হয়তো হবে না, কিন্তু অপেক্ষা করুন, স্বচক্ষেই দেখবেন ওরা এদেশেও আসছে।
সে কি? শ্যামাঙ্গ অবাক হয়ে যায়। মুখে বাক্য নিঃসৃত হয় না পক্ষ দুই আগে শুকদেব যে বলেছিলেন কোনো ঘটনাই কার্যকারণ ব্যতিরেকে ঘটে না–তাহলে যবন জাতির আগমনের এইটিই কি তাৎপর্য? সে বলে, আপনি কি প্রকৃত সংবাদ জানেন যে যবনেরা পুনর্ভবার পূর্বতীরেও আসছে?
যোগী ঐ কথার উত্তরে সহসা কিছু বলে না। পরে জানায়, বন্ধু শ্যামাঙ্গ, যদি চক্ষু উন্মীলিত রাখো, তাহলেই বুঝতে পারবে, পরিস্থিতি কিরূপ ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। এদেশে সদ্ধর্মী ভিক্ষুদের উপর অত্যাচার ও লাঞ্ছনা আমরা আবাল্য দেখে আসছি উপরন্তু এখন আরম্ভ হয়েছে প্রজাপুঞ্জের উপর অত্যাচার। রাজশক্তি প্রজাপুঞ্জকে রক্ষা তো করেই না, বরং রাজশক্তির অত্যাচার এবং নিগ্রহে প্রজাপুঞ্জের প্রাণ এখন ওষ্ঠাগত। বহিরাগত যবন জাতি বিভিন্ন স্থানে এখন কেন্দ্র স্থাপন করেছে–সদ্ধর্মী ভিক্ষুরা প্রতিদিন তাদের দুঃখের কথা নিবেদন করছে ঐ সকল কেন্দ্রে। আর প্রতিদিনই তারা অগ্রসর হয়ে আসছে। তুমি শুনলে অবাক হবে যে তোমাদের এই অঞ্চল থেকেও একজন ভিক্ষু ঐরূপ একটি তুর্কি কেন্দ্রে গিয়েছে।
বিশ্বাসঘাতক, শ্যামাঙ্গ ক্রুদ্ধ মন্তব্য করে।
বন্ধু উত্তেজিত হয়ো না, সকল কর্মের নিজস্ব যৌক্তিকতা থাকে–ঐ ভিক্ষুটিও সম্ভবত তার কর্মের যৌক্তিকতা দেখাতে পারবে। শুনতে পেয়েছি তনকূলের তুর্কি কেন্দ্র থেকে এই পক্ষকালের মধ্যেই একটি অশ্বারোহী দল উজুবট গ্রাম অভিমুখে আগমন করবে।
কেন, সেখানে কি হয়েছে? শ্যামাঙ্গ উদগ্রীব হয়ে জানতে চায়।
জানি না, যোগীটি দীর্ঘশ্বাস মোচন করে। বলে, আমি এই সংবাদটিই গুরু সিদ্ধপার কাছে জানাতে চাই।
ভারাক্রান্ত মন নিয়ে অবশেষে উজুবটে প্রবেশ করে শ্যামাঙ্গ। সঙ্গে যোগীটি থাকায় পথিমধ্যে সকলেই তাদের প্রতি তির্যক দৃষ্টিপাত করছিলো। কিন্তু শ্যামাঙ্গের সেদিকে মনোযোগ ছিলো না। সে মনে মনে উত্তেজিত হয়ে উঠেছিলো। দ্রুত পদক্ষেপে সে অগ্রসর হচ্ছিল। মনে কেবল একটি চিন্তা, কখন শুকদেবের গৃহে সে উপনীত হবে।