০৯. দ্য উওস অব মিসেস উইসলি
ডাম্বোলডোর হ্যারিকে কোনরকম ভ্রুক্ষেপ না করে আদালত থেকে চলে যাওয়ায় হ্যারির মন খারাপ হয়ে গেল। আঘাতের আবেগ এবং তার থেকে মুক্তির জন্য হ্যারি চেন বাধা চেয়ারে চুপ করে বসে রইল। আদালতের ভেতর যারা ছিল তারা সব এক এক করে নিজেদের কাগজপত্র গুছিয়ে নিয়ে চলে যেতে লাগল। হ্যারি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। কেউ ওর দিকে তাকাচ্ছে না। ফাজের ডানপাশে বসা জাদুকর ডাম্বলডোরের দিকে না তাকিয়ে বরং ব্যাঙের মত মুখ নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইল। ওকে পাত্তা না দিয়ে হ্যারি ফাজের অথবা ম্যাডাম বোনসের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করল। ও আদালত ছেড়ে যেতে পারে কিনা এই আদেশের প্রতীক্ষায় বসে রইল। ফাজ খুব সম্ভব ইচ্ছে করেই হ্যারির দিকে তাকালেন না। ম্যাডাম বোনস ব্রিফকেসে কাগজপত্র গুছিয়ে নিতে খুবই ব্যস্ত। অগত্যা হ্যারি যাবে কি যাবে না এই মনোভাব নিয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকার পর বাইরে যাবার দরজার দিকে এগোল। কেউ যখন ওকে বাধা দিল না, ও তখন তাড়াতাড়ি দরজা খুলে ঘর থেকে বাইরে করিডরে দাঁড়াল।
মি. উইসলি বাইরে দাঁড়িয়েছিলেন একটুর জন্যে হ্যারির ধাক্কা থেকে বেঁচে গেলেন। উইসলির মুখ শুষ্ক।
ডাম্বলডোর হন হন করে চলে গেলেন, আমাকে দেখেও কিছু বললেন না–মি. উইসলি বললেন।
মুক্তি পেয়েছি, হ্যারি খোলা দরজাটা বন্ধ করে দিতে দিতে আপন মনে বললো–আমার বিরুদ্ধে আর কোনও অভিযোগ নেই।
উচ্ছ্বসিত মি. উইসলি হ্যারিকে জড়িয়ে ধরলেন–সত্যি খুব আনন্দের সংবাদ। ওরা তোমার বিরুদ্ধে অনেক তথ্য, অনেক সাক্ষ্যটাক্ষ্য জোগাড় করেও তোমাকে দোষী সাব্যস্ত করতে পারল না। কিন্তু তাহলেও সত্যি বলছি আমি তোমার জন্য কিছু করতে পারিনি।
মি. উইসলি হ্যারিকে ছেড়ে দিলেন। আদালতের দরজা ভেতর থেকে কেউ খুলল। ওয়াইজেনগেমটেরা বেরিয়ে আসছে ঘর থেকে।
মারলিনের দাড়ি! হ্যারিকে তার দিকে টেনে নিয়ে প্রায় চিৎকার করে উঠে বিস্মিত হয়ে বললো। একপাশে সরে এসে সকলের যাতায়াতের সুবিধা করে দিলেন। তোমাকে অবশ্যই ফুল কোর্ট জেরা করেছিল?
–আমার তো তাই মনে হয়, হ্যারি আস্তে আস্তে বললো।
দুচারজন জাদুকর জাদুকরী যাবার সময় হ্যারিকে দেখে মাথা নাড়াল। ম্যাডাম বোনস উইসলিকে দেখে বললো সুপ্রভাত আর্থার, আবার অনেকেই তাকে না দেখার ভান করে চলে গেল। সবশেষে অন্ধকার ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন কর্নেলিয়স ফাজ, সঙ্গে ব্যাঙমুখী ডাকিনী (জাদুকরী)। ফাজ ওদের দিকে তাকিয়ে এমন এক মুখের ভাব করলেন যেন ওরা করিডরের দেয়ালের এক অংশ। কিন্তু সঙ্গের জাদুকরী যাবার সময় হ্যারির দিকে প্রশংসনীয় মুখে তাকাল। সবশেষে বেরিয়ে এল উইসলি। পার্সিও ফাজের মতই ওর বাবা আর হ্যারিকে ইচ্ছাকৃত অবজ্ঞা করে হন হন করে চলে গেল। ওর হাতে পার্চমেন্ট, কিছু কাগজ আর পাখির পালকের কলম। উইসলির মুখ অসাধারণ গম্ভীর হয়ে গেল; কিন্তু পার্সিকে যে দেখেছেন তেমন কিছু প্রকাশ করলেন না।
পার্সি দৃষ্টির বাইরে চলে গেলে উইসলি হ্যারিকে ইশারা করে বললেন–চলো চলো সোজা বাড়ি চল, ওখানে তোমার বন্ধুরা খবর জানার জন্য উদগ্রীব হয়ে বসে আছে। তোমাকে বেথন্যাল গ্রীন টয়লেটের কাছে নামিয়ে দিয়ে আমি চলে যাব, চল।
হ্যারি একগাল হেসে বললো, টয়লেট? ওর কাছে এখন সবকিছু পাঁচগুণ সহজ-সুন্দর-আনন্দ উজ্জ্বল মনে হলো। আর কোনও মনে দুঃখ নেই। ও আবার হোগার্টসে ফিরে যাবে। সিঁড়িতে পা দিয়ে উইসলি বললো–খুবই সাধারণভাবে বলতে পার দুর্ভাগ্যের প্রতিরোধ। কিন্তু ক্ষতিপূরণ খুব একটা বেশি নয়, বলতে পার ধংসসাধন মনোবৃত্তির ভাবনা। মাগলদের বেইটিং কিছু কিছু জাদুকরদের হয়ত মনে হবে খুব মজার ব্যাপার; কিন্তু ওটা হচ্ছে অতি ঘৃণ্য নোংরা মনোবৃত্তির চূড়ান্ত অভিব্যক্তি।
মি. উইসলি কথাটা শেষ না করে থেমে গেলেন। ওরা তখন নতলার করিডরে পৌঁছে গেছে। ওরা দেখল কয়েক ফিট দূরে কর্নেলিয়স ফাজ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফ্যাকাশে মুখের আর সিল্কের মত সোনালী চুলের এক লম্বা লোকের সঙ্গে কথা বলছেন।
ওদের পায়ের শব্দ শুনে ওরা আলোচনা বন্ধ করে দিল। লম্বা লোকটার ঠাণ্ডা ধূসর চোখ খুটো তীক্ষ্ম হয়ে হ্যারির মুখের দিকে বিধল।
লুসিয়াস ম্যালফয় হ্যারিকে তাচ্ছিল্য করে বললেন, ভাল? ভাল আছ, পেট্রোনাসপটার?
হ্যারি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। ওইরকম বিভৎস লম্বালম্বা কাটা চোখ, আলখিল্লা পরা ডেথইটারদের দেখেছিল। আরও একজনের শুনেছিল আর্তস্বর যখন কবরখানায় লর্ড ভোল্ডেমর্ট তাকে নির্যাতন করছিল।
হ্যারি বিশ্বাস করতে পারছে না যে লুসিয়াস ম্যালফয় সাহস করে ওর দিকে কেন তাকাবেন। ও আরও ভাবতে পারে না তিনি ম্যাজিক মন্ত্রণালয়ে কেন এসেছেন। ওই লোকটা যে ডেথইটার কয়েক সপ্তাহ আগে কর্ণেলিয়স ফাজকে জানাবার পরও ফাজ ওর সঙ্গে কথা বলছেন।
ম্যালফয় হাই তুলে অতি আলস্যের সঙ্গে বললেন–মন্ত্রীমশাই এইমাত্র তোমার ভাগ্যবশত ছাড়া পাওয়া সম্বন্ধে বলছিলেন, পটার। আশ্চর্য লাগে ভাবতে, তুমি কি করে ছোট একটা গর্ত দিয়ে সাপের মতো মুচড়ে মুচড়ে বেরিয়ে এলে।
মি. উইসলি সাবধান হওয়ার জন্য হ্যারির কাঁধে মৃদু চাপ দিলেন।
–আমি দারুন চালাক, পালাতে ওস্তাদ; হ্যারি বললো।
লুসিয়াস ম্যালফয়, উইসলির মুখের দিকে তাকালেন।
–আরে আর্থার উইসলি তুমিও! এখানে কি কাজে এসেছ আর্থার?
উইসলি কাঠখোট্টাভারে বললেন–আমি এখানে চাকরি করি।
উইসলির কাঁধের পিছনের দরজার দিকে ভুরু তুলে তাকিয়ে ম্যালফয় বললেন–এই ফ্লোরে? আমি ভেবেছিলাম তুমি তিনতলায়। তুমি কী মাগলদের হাতে তৈরি জিনিসপত্র ছিচকে চোরের মত বাড়ি নিয়ে যাওয়া আর তাদের মায়াজালে আবদ্ধ করার ব্যাপারে জড়িয়ে আছ নাকি হে?
মি. উইসলি হ্যারির কাঁধটা সজোরে আঙ্গুল দিয়ে চেপে বললেন, না।
হ্যারি, ম্যালফয়কে জিজ্ঞেস করল, আপনি এখানে কেন এসেছেন দয়া করে বলবেন?
ম্যালফয় ওর আলখিল্লার সামনের দিকের ভাঁজ ঠিক করতে করতে বললেন, আমি মনে করি না মন্ত্রী মহাশয়ের সঙ্গে আমার কোনও ব্যক্তিগত আলাপ আলোচনা তোমার জানার দরকার আছে।
ভাঁজ ঠিক করার সময় ম্যালয়ের পকেটে সোনার টাকার টুংটাং শব্দ হ্যারির কানে এল। ম্যালফয় আরও বললেন, তুমি ডাম্বলডোরের প্রিয় পাত্র বলে ওর কাছে যা আশা কর তা সকলের কাছে আশা নাও করতে পার। আমি অযথা প্রশ্রয় মোটেই বরদাস্ত করি না। মন্ত্রী মশাই, আমরা কী আপনার ঘরে বসব?
ফাজ, হ্যারি আর উইসলির দিকে পিছন ফিরে বললেন–অবশ্যই অবশ্যই, ওই ধারে চলুন লুসিয়াস।
ওরা দুজনে খুব নিচু গলায় কথা কইতে কইতে চলে গেলেন। যতক্ষণ না ওরা লিফটের ভেতরে গেল উইসলি হ্যারির কাঁধ শক্ত করে চেপে রইলেন।
হ্যারি অসম্ভব রেগে ফেটে পড়ে বললো–ওদের কাজ থাকলে বাইরে দাঁড়িয়ে হিলো কেন? ম্যালফয় এখানে কি করতে এসেছেন?
মি. উইসলিও অসম্ভব উত্তেজিত হয়ে রেগে বললেন–ছিচকের মত কোর্টরুমে যাবার চেষ্টা করতে। উইসলি এধার ওধার তাকালেন পাছে কেউ শুনতে পেয়ে থাকে সেই সন্দেহ নিরসনের জন্য। জানতে গিয়েছিল তোমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে কিনা। আমি এই সম্বন্ধে ডাম্বলডোরকে জানাব। ম্যালফয় আবার কাজের সঙ্গে ফিসফিস গুজগুজ করছে, ডাম্বলডোরের সেটা জানা দরকার।
ওদের কীরকম ব্যক্তিগত বিজনেস থাকতে পারে জানেন?
উইসলি রেগে গিয়ে বললো–সোনা, সোনার বিজনেস। ম্যালফয় কাজ বাগাবার জন্য, যারা কাজ দেয় তাদের গাদা গাদা সোনার টাকা ঘুষ দিয়ে চলেছে। তুমি বোধহয় জান না ম্যালয়ের বড় বড় লোকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা আছে।
লিফটটা বলতে গেলে ফাঁকা ছিল।
হ্যারি বললো–মি. উইসলি, ফাজ যদি ম্যালফয়ের মত ডেথ ইটারদের সঙ্গে মেশেন, যদি ওর সঙ্গে একান্তে কথা বলেন আমরা কেমন করে জানব তাকে ওরা ইসপেরিয়স কার্স প্রয়োগ করেনি?
আমাদের যে সেই সন্দেহ হয়নি তা নয় হ্যারি, কিন্তু ডাম্বলডোর মনে করেন ফাজ এইসময় যা কিছু করছে নিজের খুশিমত করছে। যেমন–ডাম্বলডোর বলেন, মোটেই আরামদায়ক নয়। যাকগে ওই সম্বন্ধে কোন কথা না বলা ভাল, উইসলি বললো।
লিফটের দরজা খুললে প্রায় শূন্য অ্যাট্রিয়মে দাঁড়াল। জাদুকর এরিক ওয়াচ ডেইলি প্রফেটটা পড়ছিল, ওদের দেখে লুকিয়ে ফেলল। আবার ওরা সেই সোনার ফোয়ারার সামনে দিয়ে সোজা চলল।
রন বললো–আমি জানতাম। কথাটা বলে উচ্ছ্বাসে ও হাওয়াতে ঘুষি মারতে থাকে। তুমি সবসময় বেঁচে যাও।
হারমিয়ন বললো, তোমাকে শাস্তি দেয়া ওদের খুব একটা সহজ ব্যাপার ছিল। হ্যারি রান্না ঘরে ঢোকার সময় হারমিওন খুবই উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিল। হ্যারির কথা শোনার পর হারমিওন চোখে কম্পিত হাত চাপা দিয়ে বললো–তোমার বিরুদ্ধে শুধু ডাহা মিথ্যা অভিযোগ।
হ্যারি হাসতে হাসতে বললো, তোমরা নিশ্চিত ছিলে ওরা আমায় কিছু করতে পারবে না। তাহলেও এখন তো খবরটা শুনে দুশ্চিন্তা থেকে বেঁচ্ছে?
মিসেস উইসলি তার অ্যাপ্রন দিয়ে মুখ মুছতে লাগলেন। ফ্রেড, জর্জ, জিনী পাগলের মত নাচানাচি করতে শুরু করল। ওকে কিছু করতে পারেনি, কিছু করতে পারেনি, কিছু করতে পারেনি।
মি. উইসলি বললো, অনেক হয়েছে এইবার তোমাদের তান্ডব নৃত্য আর গান থামাও। মিসেস উইসলিও ওদের তালে তাল রেখে হাসছিলেন। বললেন সিরিয়স, লুসিয়াস ম্যালফয়কে মন্ত্রণালয়ে দেখলাম হে।
–কী বললে? সিরিয়াস তীক্ষ্মভাবে বললেন।
ওকে কিছু করতে পারেনি… পারেনি পারেনি
–অনেক হয়েছে এবার তোমরা চুপ করবে? উইসলি ধমকে উঠলেন। লেভেল লাইনে আমরা ওকে ফাজের সঙ্গে ফিসফিস করে কথা বলতে শুনেছি। একসঙ্গে কাজের অফিসে যেতে দেখেছি ব্যাপারটা ডাম্বলডোরের জানা দরকার।
–সিরিয়স বললেন–চিন্তা করো না আমরা ডাম্বলডোরকে ব্যাপারটা জানাব।
–এবারে আমাকে যেতে হবে। বেথনাল গ্রীনের ডমিটিং টয়লেটে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। মন্ত্রী আমার ফিরতে একটু দেরি হবে। আমাকে টংকসের ব্যাপারে কথা বলতে হবে কিংগল্পে রাতে ডিনারে আসতেও পারে।
ওকে কিছু করতে পারেনি… পারেনি… পারেনি।
মিসেস উইসলি আবার রেগে গিয়ে বললেন, ফ্রেড, জর্জ, জিনী যথেষ্ট হয়েছে এবার তোমরা থামবে? হ্যারি এস এখানে এসে বস। লাঞ্চ খাও, তুমি বলতে গেলে ব্রেকফাস্ট কিছু মুখে দাওনি।
হ্যারির মুখোমুখি ওরা সবাই বসল। হ্যারি থিমন্ড প্লেসে আসার পর আনন্দের চেয়ে বেশি আনন্দ আজ ওদের। লুসিয়ায় ম্যালয়ের সঙ্গে দেখা হবার পর হ্যারি শরীরে যেরকম অস্বস্তিবোধ করছিল সেটা হঠাৎ উবে গেল।
বিষণ্ণ বাড়িটা হঠাৎ দারুণ এক আনন্দ-উচ্ছ্বাসে ভরে উঠল। ক্রেচারকে দেখেও খুব একটা কুৎসিত মনে হল না, যখন ও কিচেনে-হইচই কেন হচ্ছে জানার জন্য কিচেনের খোলা দরজার সামনে দাঁড়াল।
রন হাসতে হাসতে বললো–ডাম্বলডোর তোমার হয়ে ওকালতি করার পর তোমাকে দোষী সাব্যস্ত করার ক্ষমতা ওদের আছে? কথাটা বলে সকলের প্লেটে গাদাগাদা আলুসেদ্ধ ঢেলে দিল।
–হ্যাঁ আমার জন্য লড়েছেন, হ্যারি বললো। কথাটা না বললে ছেলেমানুষির চাইতে অকৃতজ্ঞতা প্রমাণীত হয়। আমার সঙ্গে ডাম্বলডোর কথা না বললেও অন্তত একবার তাকাতেন।
কথাগুলো বলার সময় হঠাৎ ওর কপালের কাটা অংশটা তীব্রভাবে জ্বালা করতে লাগল। ও হাত দিয়ে দাগটা খুব জোরে চেপে ধরল।
হারমিওন হ্যারির দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে বললো–কী হয়েছে?
–কাটা দাগটায় আজকাল সবসময় জ্বালা করে যন্ত্রণা হয়, হ্যারি বললো।
হারমিওন ছাড়া অন্য কেউ হ্যারির অস্বস্তি লক্ষ্য করেনি। ওরা সকলে খাওয়া, হাসিঠাতা নিয়ে ব্যস্ত। ফ্রেড, জর্জ, জিনি খাবার মুখে পুরছে আর গান গেয়ে চলেছে। হারমিওন উদ্বেগের সঙ্গে ওদের মুখের দিকে তাকাল। রন হাততালি দিয়ে বললো–বাজি ফেলে বলছি আজ সন্ধ্যাবেলা ডাম্বলডোর আসবেনই আসবেন। কেন বলত? আমাদের সঙ্গে সেলিব্রেট করবেন।
মিসেস উইসলি বললেন, আমার মনে হয় না উনি আসবেন। কথাটা বলে হ্যারির দিকে একপ্লেট চিকেন রোস্ট এগিয়ে দিলেন। ইদানীং খুব ব্যস্ত আছেন।
ওরা আবার গান শুরু করতেই মিসেস উইসলি রেগেমেগে বললো, চুপ করবে?
***
কয়েকদিন পর হ্যারি লক্ষ্য করল বার নম্বর গ্রিম্মন্ড প্লেসে একজন রয়েছে যে হ্যারির হোগার্টসে ফিরে যাওয়ার কথা শুনে খুব একটা খুশি হয়নি। সিরিয়স হ্যারির সবরকম চক্রান্ত থেকে মুক্ত হবার পর খবরটা শুনে প্রথমে খুবই খুশি হয়েছিলেন। আনন্দে হ্যারির হাত ছাড়তে চান না, কিন্তু হঠাৎ আগের চেয়ে আরও বিষণ ও গুম হয়ে গেলেন। কম কথা বলছেন সকলের সঙ্গে এমন কি হ্যারির সঙ্গেও, বেশির ভাগ সময় মায়ের ঘরে বাকবিকের সঙ্গে রয়েছেন।
হ্যারি সিরিয়স সম্বন্ধে তার মনের কথাটা হারমিওনকে বললে, হারমিওন রেগেমেগে বললো, তুমি নিজেকে অপরাধী মনে করছ, না? ওরা সেই সময় তিন তলার ঘরে একটা কাবার্ড পরিষ্কার করছিল।
তুমি হোগার্টসে পড়াশুনা কর সিরিয়স জানেন। ব্যক্তিগতভাবে মনে করি উনি বার্থপর।
রন বললো, কথাটা একটু রূঢ় হয়ে গেল হারমিওন। তুমি এই বাড়িতে বন্ধুহীন হয়ে থাকতে পারবে না।
হ্যারি বললো, আমার মনে হয় না ওটা সত্যি। আমি ওকে জিজ্ঞেস করলে সোজাসুজি কোনও জবাব দেন না।
হারমিওন বললো, উনি আশা ছাড়তে চান না। মনে হয় নিজেকে একটু অপরাধী মনে করেন। কারণ আমার মনে হয় ওর মনের মধ্যে ছিল হয়তো তুমি স্কুল থেকে বহিস্কৃত হবে। তাহলে তোমরা দুজনে একসঙ্গে থাকতে পারবে না।
–হ্যারি, রন একসঙ্গে বলে উঠল, বিচ্ছিন্ন হবে! হারমিওন শুধু কাঁধে ঝাঁকুনি দিল।
–ঠিকমত কথা বল তোমরা। কিন্তু মাঝে মাঝে আমি ভাবি রনের মা ঠিকই বলেন–সিরিয়স মাঝে মাঝে দোটানায় পড়ে যায়–ভাবে তুমি না তোমার বাবা কে বড়।
–হ্যারি সঙ্গে সঙ্গে বললো, তাহলে তুমি ভাবছ ও ঠিক জায়গায় আঘাত দিয়েছে?
–না, আমি মনে করি বহু দিন একা একা থাকার জন্য ওর এইরকম মানসিক অবস্থা, হারমিওন বললো।
ঠিক সেইসময় মিসেস উইসলি ঘরে ঢুকল।
–ইস, এখনও তোমাদের কাজ শেষ হয়নি? কাবার্ডের দিকে তাকিয়ে মিসেস উইসলি বললেন।
রন বললো–ও, আমরা ভাবছিলাম তুমি এসে বলবে, তোমরা অনেকক্ষণ কাজ করেছ এবার একটু বিশ্রাম নাও। তুমি জান এই পুরনো ঝরঝরে কাবার্ড থেকে কত ময়লা টেনে টেনে বার করেছি? কত পোকা-মাকড় ভর্তি মাটি আমাদের সাফ করতে হয়েছে?
তোমরা অর্ডারটাকে সবরকমভাবে সাহায্য করার জন্য খুব তো আগ্রহ দেখিয়েছিলে, মিসেস উইসলি বললেন, সদর দপ্তরের বাড়িটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে থাকার উপযোগী করা তোমাদের কাজ সেটা বলতে হবে কেন?
রন মুখ ভার করে বললো–এক এক সময় মনে হয় আমি যেন এই বাড়ির একজন এলফ।
হারমিওন বললো–তাহলে বুঝতেই পারছ ওদের কত কষ্ট! আশা করি SPEW-সম্বন্ধে একটু সক্রিয় হবে। আমরা ফান্ড জমা করব SPEW-এর জন্য।
.
ছুটি যত শেষ হয়ে আসে হ্যারি ততো হোগার্টসের দিবাস্বপ্ন দেখে। ও আর হ্যাগ্রিডকে চায়না কিডিচ খেলার জন, হারবোলজী গ্রীন হাউজের সবুজ সজি ক্ষেতেও ঘুরে বেড়াবার কথা ভাবে না। এই নোংরা ধূলোয় ভরা বাড়িটা যত শিঘ্ন পারে ছেড়ে যেতে চায়। বাড়িটার চরম দুর্দাশা, বেশিরভাগ ঘরের দরজা বন্ধ, আলমারির পাল্লাবন্ধ, ক্রেচারের আজেবাজে কথা শোনা। কোনও অসুবিধের কথা সিরিয়সকে বলতে চায় না।
আসল কথা ভোল্ডেমর্টের বিরুদ্ধে যে সংগঠন হয়েছে তার সদর দপ্তরে থাকা হোগার্টসের মত আনন্দ-উদ্দীপনার মধ্যে চলে না।
অর্ডার অব ফনিক্সের অনেক সদস্য নিয়মিত আসে যায়, খাওয়া দাওয়া, গল্পগুজব করে, ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়ে আলোচনা করে। কখনও বা অনেক সময়, কখনও কয়েক মিনিট। মিসেস উইসলি চায় না ছেলেমেয়েরা সেসব কথা শোনে বা তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে। সিরিয়সও চায় না হ্যারি যেটুক জেনেছে তার বেশি কিছু জানুক।
ছুটি শেষ হবার আগের দিন হ্যারি ওর পেঁচা হেডউইগের খাঁচা শুধু নয়, ঘরে যেসব নোংরা ফেলেছে সেগুলো পরিষ্কার করছিল তখন রনের হাতে দুটো ইনভেলাপ দেখতে পেলো। হাত থেকে একটা এনভেলাপ হ্যারির দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বললো–বুকলিস্ট এসে গেছে, একেবারে ঠিক সময়ে। ভাবছিলাম ওরা হয়ত ভুলে গেছে।
হ্যারি চেয়ারের ওপর দাঁড়িয়ে আলমারির ওপরটা পরিষ্কার করছিল সুসংবাদ পেয়ে আনন্দের আতিশয্যে ময়লা ভর্তি থলেটা রনের মাথার ওপর দিয়ে ওয়েস্ট পেপার বাস্কেটে ছুঁড়ে ফেলল। ময়লাগুলো বাস্কেটে শব্দ করে পড়ল। তারপর ও রনের দেয়া খামটার মুখ খুলল। খামের মধ্যে দুটো পার্চমেন্ট। প্রথমটা পয়লা সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল শুরু হবে তার চিরাচরিত নির্দেশ, দ্বিতীয়টা নতুন ক্লাসে কি কি বই লাগবে তার লিস্ট।
বই-এর লিস্টটা পড়তে পড়তে হ্যারি বললো, কেবল দুটো নতুন বই: দ্য স্ট্যান্ডার্ড বুক অব স্পেলস গ্রেড-৫, মিরান্ডা গশক আর ডিফেন্সিভ ম্যাজিক্যাল থিওরী, উইলকার্ট নিখাদ।
শব্দ হল : ক্র্যাক
ফ্রেড আর জর্জ ওদের ঘরে ঢুকে হ্যারির পাশে দাঁড়াল। এত ঘন ঘন ফ্রেড আর জর্জ অ্যাপারেট করে যে হ্যারি অভ্যস্ত হয়ে গেছে।
ফ্রেড কথায় কথায় বললো, আমি বুঝতে পারছি না নিভার্দের বইটা কে সিলেক্ট করল।
জর্জ বললো, মনে হয় ডাম্বলডোর, ডার্ক আর্টস এর বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার জন্য একটা কিছু করতে চাইছেন।
ফ্রেড বললো, সময়ও ঠিক বেছে নিয়েছেন।
হ্যারি চেয়ার থেকে লাফিয়ে নেমে বললো–বল তো তোমরা কী বলতে চাইছ?
ফ্রেড হ্যারিকে বললো–কয়েক সপ্তাহ আগে মা আর বাবাকে এক্সটেন্ডেবল ইয়ার্স সম্বন্ধে কথাবার্তা বলতে শুনেছি। তারা বলছিলেন–এই বছরে কে কাজটা করবে তা নিয়ে ডাম্বলডোর বেশ অসুবিধাতে পড়েছেন।
–খুব একটা আশ্চর্যের ব্যাপার নয়। গত চার বছরে কি হয়েছে ভেবে দেখেছ কি? জর্জ বললো।
–চারজনের মধ্যে একজনের চাকরি গেছে, একজন মারা গেছে, একজনের স্মৃতিশক্তি গেছে, আর একজন নমাস ট্রাঙ্কে তালাবদ্ধ হয়েছিলেন। হ্যারি আঙ্গুল গুনতে গুনতে বললো–বুঝতে পেরেছি তুমি কি বলতে চাইছ।
ফ্রেড বললো, রন তুমি এত চুপচাপ?
রন কোনও জবাব দিল না। হ্যারি ওর দিকে তাকাল। রন অদূরে মুখটা সামান্য ফাঁক করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হোগার্টস থেকে পাঠানো চিঠি পড়ছিল।
–ব্যাপার কি বল? ফ্রেড অধৈর্য হয়ে চিঠিটা পড়ার জন্য রনের পেছনে দাঁড়াল।
ফ্রেডের মুখটাও হাঁ হয়ে গেল।
–প্রিফেক্ট? চিঠিটার দিকে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আবার বললো, প্রিফেক্ট?
জর্জ এগিয়ে এসে রনের হাত থেকে খামটা কেড়ে নিয়ে ছেঁড়া মুখটা হাতের তালুর ওপর রাখল। হ্যারি দেখল টকটকে লাল কিছু জিনিস আর সোনা জর্জের হাতে পড়ল।
–কোনও উপায় নেই, জর্জ বললো চাপা গলায়।
ফ্রেড বললো–কোথায় একটা ভুল হয়েছে। রনের হাত থেকে চিঠিটা ছিনিয়ে নিল। তারপর সেটা আলোর সামনে এমনভাবে তুলে ধরল যেন জলছাপ দেখছে। কোনও সুস্থ মাথার লোক রনকে কখনই প্রিফেক্ট বানাবে না।
যমজ ভাইরা হ্যারির দিকে তাকাল।
ফ্রেড বললো–তোমার ব্যাপারে মোটামুটি আমরা নিশ্চিত ছিলাম। এমনভাবে বললো যেন, ওর প্রিফেক্ট হওয়ার ব্যাপারে হ্যারির হাত আছে।
জর্জ বললো–আমরা জানতাম ডাম্বলডোর তোমাকে বেছে নেবেন।
ফ্রেড বললো–ট্রি-উইজার্ড আর অনেক স্কুলের পাগলরা মনে হয় তোমার বিরুদ্ধে ছিল!
রন স্কুলের প্রিফেক্ট হয়েছে, প্রিফেক্ট হয়েছে।
–মা খবরটা শুনে আনন্দে লাফিয়ে উঠবেন। আমার বিশ্বাস হয় না। প্রিফেক্ট… রন, ভাবতে পারছি না।
জর্জ রনের দিকে হোগার্টস থেকে পাঠান স্কুলের ব্যাজটা এমন এক মুখ করে ছুঁড়ে দিল, যেন ব্যাজটায় সংক্রামক রোগের বীজাণু মাখান আছে।
রন মাটি থেকে ব্যাজটা তুলে নিয়ে সেটার দিকে বেশ খানিকটা সময় তাকিয়ে থেকে হ্যারির দিকে এমনভাবে তাকাল যেন একমাত্র হ্যারিই আসল না নকল যাচাই করতে পারবে। হ্যারি ব্যাজটা নিল। লায়নের ওপর একটি বিরাট পি সুপারইমপোজড করা। প্রথম যখন ও হোগার্টস–এ গিয়েছিল তখন, পার্সির বুকে এইরকম একটা ব্যাজ আটকান দেখেছিল।
বন্ধ দরজাটা দড়াস করে খুলে খেল। ঝড়ের মত ঢুকল হারমিওন। মুখ চোখ লাল, মাথার চুল উড়ছে। ওর হাতে একটা এনভেলাপ।
–সত্যি তুমি পেয়েছ? পেয়েছ? হ্যারির হাতে ব্যাজটা দেখতে পেয়ে আনন্দে হারমিওন চিৎকার করে উঠল।
–আমি জানতাম, ও উত্তেজিতভাবে হাতের খামটা দুলিয়ে দুলিয়ে বললো হ্যারি আমিও পেয়েছি!
–হ্যারি সঙ্গে সঙ্গে ব্যাজটা রনের হাতে দিয়ে বললো, আমি না রন পেয়েছে, আমি না।
–রন? হারমিওন মুখের ভাব বদলে বললো, মানে? তুমি ঠিক বলছ?
রন, হারমিওনের দিকে তাকাতেই ওর মুখটা আরও লাল হয়ে গেল অবিশ্বাসের ছায়া নেমে এল।
–চিঠিতে আমার নাম লেখা আছে, রন বললো।
হারমিওনের মুখটা চুপসে যাওয়া উচিত নয়, তবু এন প্রিফেক্ট হয়েছে শুনে চুপসে গেল। তোতো করে বললো–আ… আমি… উঃ! বাঃ বাঃ রন। সত্যই…।
জর্জ সম্মতিসূচক ভঙ্গিতে বললো–অভাবনীয়, মিসেস উইসলি ঘরে ঢুকলেন। ওর হাতে ইস্ত্রি করা অনেক পোশাক।
–জিনি বলছে বুকলিস্ট শেষ পর্যন্ত আমরা পেয়ে গেছি। কথাটা বলার পর মেঝেতে পড়ে থাকা খামগুলোর দিকে চোখ পড়ল। তারপর বিছানার কাছে গিয়ে জামাকাপড়গুলো দুভাগ করে রাখলেন। তোমরা যদি আমাকে বুকলিস্টটা দাও তাহলে ভিয়াগন অ্যালেতে গিয়ে বইগুলো কিনে আনতে পারি। এই ফাঁকে তোমরা সব জিনিসপত্র গুছিয়ে বাধাছাদা করে ফেল। রন তোমার আরও কিছু পা-জামা আনতে হবে, এগুলো কম করে ছ ইঞ্চি ছোট হয়ে গেছে। দেখছি, দিনে দিনে তুমি কলাগাছের মত লম্বা হয়ে উঠছে। হ্যাঁ, বল কি রং তোমার পছন্দ।
জর্জ একটু যেন ব্যাঙ্গ করে বললো–ওর ব্যাজের সঙ্গে মানান সই লাল আর গোল্ড রং-এর নিয়ে এস।
–ম্যাচ করা? কার সঙ্গে মানানসই; মিসেস উইসলি রনের কাপড় জামার ওপর একজোড়া মেরুন রং-এর মোজা রাখতে রাখতে বললেন।
–ওর ব্যাজ, ফ্রেড বললো, জান না ও একটা সুন্দর চকমকে ব্যাজ পেয়েছে?
মিসেস উইসলি পা-জামা কেনা নিয়ে ভাবছিলেন তাই ফ্রেডের কথাটা কানে গেলো না।
ও… কিন্তু রন, তুমি ব্যাজ পেয়েছ?
কথাটা শুনে রন ব্যাজটা তুলে ওদের সামনে ধরল।
হারমিওনের মত মিসেস উইসলিও আনন্দে খুব জোরে হেসে উঠলেন।
–আমি বিশ্বাস করতে পারছি না, সত্যি পারছি না। ও রন তুমি প্রিফেক্ট হয়েছে সত্যি ভাবতে পারছি না। একজন প্রিফেক্ট। তার মানে আমাদের পরিবারে সকলেই! তারপর দুহাত দিয়ে ছোট ছেলেকে জড়িয়ে ধরলেন।
–দাঁড়াও, তোমার বাবাকে জানতে দাও রন! সত্যি তোমার জন্য আমার গর্বে বুক ফুলে উঠছে, কী দারুণ খবর! দেখ তুমি শেষ পর্যন্ত স্কুলের হেডবয় হবে, বিল আর পার্সির মতো। প্রিফেক্ট হচ্ছে সিঁড়ির প্রথম ধাপ! আমাদের দারুণ দুঃশ্চিন্তার মধ্যে কি আনন্দের সংবাদ, আনন্দে আমার নাচতে ইচ্ছে করছে।
ফ্রেড আর জর্জ মিসেস উইসলির পেছনে দাঁড়িয়ে ক্রমাগত হাঃ হুঃ শব্দ আর মুখ বিকৃতি করতে লাগল। মিসেস উইসলির সেদিকে দৃষ্টি নেই, রনকে আদর করা যেন শেষ হয় না। চুমুতে চুমুতে ওর মুখ গলা ভরিয়ে দিল। রনের গালটা ব্যাজের লাল টুকটুকে রং-এর চাইতে বেশি লাল হয়ে গেল যেন।
–মাম্মা, ছাড় না মা, রন মায়ের বন্ধন থেকে নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করতে করতে বললো।
উইসলি রনকে ছেড়ে দিয়ে বললেন–রন এখন তোমাকে কি দেয়া যায় বলো? আমরা পার্সিকে একটা পেঁচা দিয়েছিলাম, কিন্তু তোমার কাছে তো একটা ছোট পেঁচা রয়েছে।
–কী বললে মাম? রন এমনভাবে বললো–যেন ওর কানে কিছুই ঢোকেনি।
–তোমাকে তো একটা পুরষ্কার দিতে হবে তা নতুন একসেট রোবস কেমন হবে?
ফ্রেড অপছন্দের সুরে বললো–কেন ওর তো আছে। একটু নতুন কড়াই, চার্লির পুরনোটাতো মর্চে ধরে গেছে, নয়তো একটা নতুন ইঁদুর, তুমি তো ইঁদুর ভালবাস।
রন বললো–মা একটা নতুন ঝাড়ু আমাকে দিও।
মিসেস উইসলি নীরব রইলেন। হাতলওয়ালা ঝাড়ুর দাম একটু বেশি।
–খুব দামী নয়, কম দামের হলেও হবে।
কথাটা শুনে মিসেস উইসলি হাসলেন–হা হা নিশ্চয়ই দেব। বাড়ির জন্যও একটা দরকার। যখন মার্কেটে যাব দুটো কিনে আনব। আচ্ছা এখন চলি। তোমার ট্রাঙ্কে সবকিছু ঠিকমত গুছিয়ে নিতে ভুলবে না, ওহ, তুমি তো প্রিফেক্ট, তোমাকে বলতে হবে কেন?
রনের গালে আরও একটা স্নেচুম্বন দিয়ে উইসলি চলে গেলেন।
–রন তোমার গালে একটা চুমু খেতে পারি? ফ্রেড হাসতে হাসতে বললো।
ওরা দুজনে রনকে নানারকম টিজ করার পর ঘর থেকে চলে গেল।
ফ্রেড, জর্জের হাসির শব্দ হারমিওন ঘরের ভেতর থেকে শুনতে পেল। হারমিওন বললো–রন ওদের বোধহয় একটু হিংসে হয়েছে!
রন বললো–আমার তো মনে হয় না। ওরা সবসময় বলে একমাত্র বোকারাই প্রিফেক্ট হয়, যাকগে যা বলে বলুক। ওরা কখনও নতুন ঝাড়ু পায়নি, আমি তো পাচ্ছি। মনে হয় ঝাড়ু পাচ্ছি বলে একটুও হিংসে করছে না।
কথাগুলো বলে রন ঘর থেকে চলে গেল। হ্যারির ইচ্ছে করলো না হারমিওনের দিকে তাকায়। ও নিজের খাটের কাছে গিয়ে মিসেস উইসলির রেখে যাওয়া কাঁচা ইস্ত্রি করা কাপড়, ওই ঘরের এক কোণে রাখা ট্রাঙ্কে ভরতে লাগল।
–হ্যারি? হারমিওন স্বাভাবিকভাবে বললো।
–আমার খুব ভাল লাগছে রন প্রিফেক্ট হওয়াতে। ব্রিলিয়েন্ট! হ্যারি বললো।
–ধন্যবাদ হ্যারি! হারমিওন বললো–তোমার পেচাটা ধার দিতে পারবে? আমি বাবা-মাকে ভাল খবরটা দেব? খবরটা শুনে ওরা খুব খুশি হবেন।
–না না কোনও অসুবিধা হবে না, হ্যারির তখনও গলায় আনন্দের রেশ। ঠিক আছে নিতে পার!
হারমিওন হেডউইগের কাছে গেলে হ্যারি ট্রাঙ্কটা গোছাবার ভান করতে লাগল।
হারমিওন নিঃশব্দে হেডউইগকে নিয়ে চলে গেল।
হ্যারি ওর বিছানায় শুয়ে পড়ে অন্যমনস্ক হয়ে আলমারির দিকে তাকিয়ে হল।
ও ভুলে গেছে। একেবারেই ভুলে গেছে। প্রিফেক্ট চয়ন করা হয় পঞ্চম বর্ষে। দিন ও স্কুল থেকে বহিষ্কারের ব্যাপারে এত ব্যস্ত, আর ভাবনায় ছিল, অন্য কিছু ওর মাথায় ঢোকেনি।
কে যেন ওর মনের ভেতর থেকে বললো–না, চয়ন ঠিক হয়নি।
হ্যারি দুহাতে মুখ ঢাকল। ও যদি জানত প্রিফেক্ট ব্যাজ পাঠানো হয়েছে, তাহলে সেটা ওর জন্য আসতো, রনের জন্য নয়। এর জন্যই কি ও ম্যালয়ের মত উদ্ধত হয়েছে? ও কি অন্যদের চেয়ে নিজেকে সুপিরিয়র মনে করছে? সত্যিই কি ও মনে করছে রনের চেয়ে ও উচ্চতর?
না, ওর মনের ভেতর থেকে ছোট কথাটা বেরিয়ে এল। আমি কিডিচ খেলায় শঠ, কি অন্য কোনও বিষয়ে নয়।
হ্যারি মেনে নেয় সত্যটা। পড়াশুনায় রন ওর চেয়ে ভাল, কিন্তু অন্যদিকে? খাডভেঞ্চার? রন, হারমিওনের সঙ্গে দুঃসাহসিক অভিযান?
আবার মনের মধ্য থেকে বললো, হ্যাঁ রন আর হারমিওন আমার বন্ধু, ওরাই তো সবসময় আমার সঙ্গে থাকে।
সবসময়ে নয়। কুইরেলের সঙ্গে তো ও একাই লড়াই করেছিল। ওরা তোরিভিল আর ব্যাসিলিস্কের মুখোমুখি হয়নি। ও একাই লড়েছিল। প্রাইভেট ড্রাইভে ডিমেন্টরদের সঙ্গে লড়াই? সেখানেও তো ও একা মোকাবিলা করেছিল। ওরা তো
আমার সঙ্গে কবরস্থানে ছিল না, যে রাতে ভোল্ডেমর্ট ফিরে এসেছিল।
আমি ওদের চেয়ে অবশ্যই অনেক বেশি করেছি।
আবার মনের ভেতর গুঞ্জন করে উঠলো। হতে পারে, হতে পারে। বিপদসংকুল কাজ করলেই কি ডাম্বলডোর কে বা কারা প্রিফেক্ট হবে সেটা ঠিক করবেন? হয়ত উনি আরও অন্য কারণে ঠিক করেন, রনের মধ্যে এমনকিছু আছে যা তোমার নেই?
হ্যারি নিজের মনে হেসে উঠল। তারপরেই ওর শরীরটা দুর্বল দুর্বল মনে হল।
রন অবশ্যই ডাম্বলডোরকে প্রিফেক্ট ব্যাজ দিতে বলেনি। সেটা পেয়েছে তার জন্য ওর তো কোন অপরাধ নেই। পৃথিবীর মধ্যে রনের প্রিয় বন্ধু হচ্ছে হ্যারি। ব্যাজ পায়নি বলে মুখ গোমড়া করে থাকতে হবে? ওর দুই ভাইয়ের সঙ্গে এক হয়ে ঠাট্টা করতে হবে? ও ব্যাজ পায়নি বলে বন্ধুর সঙ্গে বন্ধুত্ব নষ্ট করে ফেলবে?
ঠিক সেই সময় ও সিঁড়িতে রনের পদশব্দ শুনতে পেল। ও বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। চোখের চশমাটা ঠিক করে নিল, রন ঘরে ঢুকতেই মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলল।
রন হাসতে হাসতে বললো–ওকে ধরেছি! ও বলছে এবারে ও নিজে যাবে।
হ্যারি বললো–উত্তেজিত হবে না।
নিজের গলার সাজ স্বর শুনে হ্যারি নিজেই আশ্চর্য হয়ে গেল।
–রন তুমি প্রিফেক্ট হয়েছ, তাই আমি খুব খুশি হয়েছি।
রনের মুখ থেকে হাসি মিলিয়ে গেল। বললো–কখনও স্বপ্নেও ভাবিনি আমি প্রিফেক্ট ব্যাজ পাব। আমি ভেবেছিলাম তুমিও পাবে।
–না, আমি অনেক অপ্রিয় গোলমেলে কাজ করেছি। ছাড় তো ওসব কথা। হাতে সময় নেই, ট্রাঙ্ক গুছিয়ে নিতে হবে।
মিসেস উইসলি প্রায় ছটার সময় ডায়গন এলি থেকে কেনাকাটা করে ফিরলেন। হাত ভর্তি বই আরও অনেক কিছু। রন দৌড়ে গিয়ে মার হাত থেকে প্যাকিং কাগজে মোড়া লম্বা প্যাকেটটা নিল। রনের জিনিস এসে গেছে।
শোন, এখন ওটা খুলবে না। ডিনার খেতে কিছু লোকজন আসছেন। তোমরা সবাই নিচে এস।
কিন্তু যেই মিসেস উইসলি ঘরের বাইরে গেলো রন কাগজটা ছিঁড়ে ফেলল। ঝাড়ুটা হাতে নিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল।
বেসমেন্টে, কিচেনে, ডিনার টেবিলে মিসেস উইসলি লাল অক্ষরে বড় বড় করে ব্যানারে লিখেছে
অভিনন্দন
রন ও হারমিওন
নতুন প্রিফেক্ট
দীর্ঘ ছুটির দিনে হ্যারি এই প্রথম মিসেস উইসলিকে খুব খুশির মেজাজে দেখল।
মিসেস উইসলি ছেলেমেয়েদের বললেন–প্রথমে আমি ভেবেছিলাম ছোটখাট একটা পার্টি, ডিনার হবে না। তোমাদের বাবা আর বিল এখনই এসে পড়বেন। রন আমি দুটো পেঁচা পাঠিয়েছিলাম। খবরটা পেয়ে সকলেই দারুণ খুশি।
ফ্রেড চোখ ঘোরালো।
সিরিয়স, লুপিন, টংকস আর কিংগস্নে শ্যাকেলবোল্ট অনেক আগেই এসে গেছে। হ্যারি বাটাররিয়র বোতল খোলার পরই ম্যড-আই-মুডি এসে গেলেন।
আহা, অ্যালেস্টর তুমি এসে গেছ, খুব খুশি হলাম, মিসেস উইসলি হাসতে হাসতে বললেন।
ম্যাড আই কাঁধ ঝাঁকুনি দিয়ে ভ্রমণের আলখেল্লাটা খুলছেন, সেইসময় মিসেস উইসলি বললেন, বেশ কিছুদিন থেকেই তোমার খোঁজ করছি। আমাদের ড্রইংরুমে একটা তালাবদ্ধ রাইটিং ডেস্ক আছে, দেখে দিতে পারবে ওর ভেতরে কি আছে? আমরা ওটাকে ভেঙ্গে খুলিনি যদি কিছু নোংরা জিনিসপত্র থাকে।
–কোনও অসুবিধা নেই মল্লি।
মুডির ইলেকট্রিক নীল চোখ ওপর দিকে উঠে কিচেনের সিলিং-এর দিকে তাকিয়ে রইল।
ড্রইং রুম? মুডি গর্জে উঠলেন, চোখের তারা ছোট হয়ে গেল। ঘরের কোণায় সেই ডেস্কটা আছে? ও হ্যাঁ আমি দেখতে পাচ্ছি, ওটা বোগার্ট। তুমি কি চাও আমি ওপরে গিয়ে ওটা খুলে দিই মল্লী?
নানা তোমাকে কষ্ট করতে হবে না, আমি পরে নিজে করে নেব, মিসেস উইসলি বাধা দিয়ে বললেন–ড্রিঙ্ক শেষ কর। আমরা ছোটখাট আনন্দ উৎসব করতে চাই। আসলে মিসেস উইসলি লাল কালিতে লেখা ব্যানারটা দেখালেন, আমাদের পরিবারে চতুর্থ প্রিফেক্ট। উইসলি রনের মাথার চুলে হাত বুলোলেন।
প্রিফেক্ট, তাই না কি? মুডির স্বাভাবিক চোখ রনের দিকে আর অন্যটা বন বন করে ঘুরতে লাগল। হ্যারির দারুন অস্বস্তি হতে লাগল, চোখের দৃষ্টি মাঝে মাঝে ওর ওপর তারপর সিরিয়স আর লুপিনের ওপর।
মুডি বললেন–সুন্দর, অভিনন্দন। ওর স্বাভাবিক চোখ তখনও রনের দিকে। শাসনকর্তারা মাঝে মাঝে এমনসব কাজ করে বসে, যে সামলানো দায় হয়ে উঠে। কিন্তু আমার মনে হয় ডাম্বলডোর মনে করেন, তুমি সব বড় বড় বিপদআপদ বা ওইরকম কিছু ঠিক সামলে নেবে। তা না হলে তোমাকে কিছুতেই প্রিফেক্ট করতেন না।
রন, মুডির মতামত শুনে হকচকিয়ে গেল; জবাব দেবার প্রয়োজন হল না। ঠিক সেইসময় ওর বড় ভাই আর মি. উইসলি ঘরে ঢুকলেন। সঙ্গে মুন্ডানগাস। রেগে যাওয়া স্বাভাবিক; কিন্তু এত ভাল মেজাজে ছিলেন যে চুপ করে রইলেন। মুন্ডানগাসের চিরাচরিত স্বভাবমত গায়ের বিরাট ওভারকোট ভাল করে পরেওনি। কোটটা খুলে রাখার অনুরোধ না রেখে, মুডির বেড়াতে যাবার ক্লোকের মতই গায়ে জড়িয়ে রাখল।
মি. উইসলি বললেন, তাহলে শুরু করা যাক। (সকলের হাতে ড্রিঙ্কস)। কথাটা বলে উইসলি বড় গেলাসটা তুলে বললেন–রন আর হারমিওন, দুই নতুন গ্রিফিন্ডর প্রিফেক্টস!
রন আর হারমিওন সবাই ওদের উদ্দেশ্যে পান করার জন্য খুব খুশিতে ভরপুর, ওরাও হাততালি দিল।
টংকস হ্যারির পেছন থেকে বললো, আমি স্কুলে কখনও প্রিফেক্ট হইনি।
সকলেই তখন টেবিলে রাখা খাবার নেয়ায় ব্যস্ত। টংকসের টমেটো রং-এর চুলগুলো কোমর ছাড়িয়ে গেছে। দেখতে অনেকটা জিনীর বড় বোনের মত। হেসে হেসে বললো–আমার হাউজের হেড বলত আমার কিন্তু প্রয়োজনীয় ট্যালেন্ট নেই।
যেমন? জিনি সেদ্ধ আলু বাছতে বাছতে বললো।
–কারও কথাবার্তা শুনি না, নিজের মর্জিতে চলি।
জিনী হেসে উঠল। হারমিওন হাসবে কি হাসবে না ভেবে পায় না। এড়িয়ে যাবার জন্য একটা বড় গেলাস ভর্তি বাটারবিয়র নিয়ে চুমুক দিল।
হারমিওনের পিঠে চাপড় মেরে জিনি বললো, সেটা আপনার ব্যাপার।
সিরিয়স হ্যারির পাশে বসেছিলেন। ও যেমন হো হো করে হাসে তেমনই ভাবে হেসে উঠলেন।
–কেউ চেষ্টা করেও আমাকে প্রিফেক্ট বানাতে পারেনি, আমি জেমসের সঙ্গে বেশির ভাগ সময় আড্ডা দিয়ে কাটিয়েছি। লুপিন অবশ্য খুব ভাল ছেলে ছিল, ব্যাজও পেয়েছিল।
লুপিন বললেন–আমার মনে হয় ডাম্বলডোর হয়ত আশা করেছিলেন আমি চেষ্টা করলে আমার বন্ধুবান্ধবদের কিছুটা অন্তত রাশ টানতে পারবো। সত্যি অকপটে স্বীকার করছি আমি ভীষণভাবে হেরে গিয়েছিলাম।
হ্যারির মেজাজ হঠাৎ চাঙ্গা হয়ে গেল। ওর বাবাও তো প্রিফেক্ট হতে পারেনি। সহসা ওর কাছে উইসলির দেয়া পার্টি সজীব হয়ে উঠলো, ও প্লেট ভর্তি খাবার তুলে নিল। যারা যারা পার্টিতে এসেছে তাদের সকলকেই ভীষণ প্রাণবন্ত ও অতি প্রিয় মনে হল।
রন ওর উপহার পাওয়া ঝাড়ুটা সম্বন্ধে উদ্দীপনার সঙ্গে বলতে লাগল। অবশ্য সকলে যে ওর ঝাড়ু সম্বন্ধে শুনতে চায়, তা নয়।
হারমিওন লুপিনের সঙ্গে বাড়িতে যারা কাজকর্ম করে (এলফ) তাদের সম্বন্ধে গভীরভাবে আলোচনা করছিল।
–আমি মনে করি নাৎসী গুপ্ত সংগঠনের মত ওদের আলাদা করে রাখা বোকামী। অনেকটা জাদুকরদের সাংঘাতিক চিন্তাধারা আমরা অন্যদের চাইতে শ্রেষ্ঠর মত।
মিসেস উইসলি আর বিল যথারীতি বিলের হেয়ার স্টাইল নিয়ে তর্কাতর্কি চালাচ্ছেন–সত্যি বিল চুল ছোট করে কাটলে তোমাকে ভাল দেখাবে এটা বোঝে না কেন?
হ্যারির মতামত চাইলে, যেখানে মুন্ডানগাসকে নিয়ে ফ্রেন্ড আর জর্জ আলোচনায় মত্ত হ্যারি সেইদিকে এগিয়ে গেল।
হ্যারিকে দেখে মুন্ডানগাস চুপ করে গেল; কিন্তু ফ্রেড চোখ টিপে হ্যারিকে কাছে আসতে বললো।
ও মুন্ডানগাসকে বললো–আরে না না। আমরা হ্যারিকে বিশ্বাস করতে পারি, ও আমাদের অর্থনৈতিক পৃষ্ঠপোষক বলতে পারেন।
জর্জ বললো–এই দেখ ডাংগস আমাদের জন্য কি এনেছে। জর্জের হাতে শুকনো মটরশুঁটির মত কাল কাল দানা। দানাগুলো থেকে খড় খড় শব্দ হচ্ছে, যদিও মুন্ডানগাস হাত নাড়াচ্ছে না।
জর্জ দানাগুলো দেখতে দেখতে বললো, ভেনোমাস টেন্টাকুলা বীজ। এগুলো আমাদের স্কিভিং স্ন্যাকবকসের জন্যে দরকার কিন্তু তৃতীয় পর্যায়ের নন-ট্রেডেবল সাবস্ট্যান্স। তাই এগুলো ধরে রাখতে সামান্য অসুবিধা হচ্ছে।
ফ্রেড বললো–দাম তাহলে দশ গ্যালিয়নস, কি বলুন ডাংগ?
মুন্ডানগস ওর ঝুলে পড়া লাল চোখ দুটো বড় বড় করে বললো, অনেক ঝাট করে আমাকে এগুলো জোগাড় করতে হয়েছে। শোন, আমি কুড়ি নাটের নিচে দিতে পারবো না। ফ্রেড হ্যারিকে বললো বুঝলে, ডাংগ বেশ মজার মজার কথা বলতে ভালবাসে।
জর্জ বললো, ওর চেয়ে মজার জোক হল ছসিকলে এক ব্যাগ পাখির পালক কেনা।
–সাবধানে কথা বলতো! হ্যারি ওদের সতর্ক করে দেন।
ফ্রেড বললো–কেন? মা তো রনের প্রিফেক্ট হওয়া নিয়ে সকলের সঙ্গে খুব মজা করে চলেছেন।
হ্যারি বললো, সে কথা নয় দেখতে পাচ্ছ না মুডি তোমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে রয়েছে। হ্যারি চুপিসারে আঙ্গুল দিয়ে দেখাল।
মুন্ডানগাস হকচকিয়ে পিছনে তাকাল।
তারপর বললো–ঠিক বলেছ তোমরা, বেশ দশই চলবে, অবশ্য যদি তোমরা তাড়াতাড়ি নাও।
মুন্ডানগাস ওর দুপকেট খালি করে হাত বাড়িয়ে টেবিলের খাবারের দিকে তাকালে ফ্রেড দারুণ খুশিতে উপচে পড়ে বললো, চিয়ার্স হ্যারি! এগুলো দোতালায় নিয়ে গেলে ভাল হয়।
ওরা ওপরে চলে গেলে হ্যারি খুব চিন্তায় পড়ে গেল। ফ্রেড–জর্জ ওদের জোক শপ ব্যবসা শুরু করলে কোথা থেকে ওরা অর্থ পেল তা মি, আর মিসেস উইসলির জানতে চাওয়া স্বাভাবিক। হ্যারি ওদের অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছে জানতে পারলে পারসিকে নিয়ে যে পারিবারিক গোলমাল হয়েছে তা আবার হবে না তো! হ্যারিকে ওরা নিজের ছেলেদের মত ভালবাসে। সেক্ষেত্রে ওদের সঙ্গে জড়িত থাকা কী ঠিক হবে? কারণ ওরা চায় না ফ্রেন্ড জর্জ ওইরকম আজেবাজে কাজ করে সময় ও অর্থ ব্যয় করুক।
ওরা চলে গেলে হ্যারি যেখানে দাঁড়িয়েছিল সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল। কেমন যেন একটা অপরাধ বোধ সমস্ত শরীরটাকে ঘুলিয়ে দিল। ঠিক সেই সময় কে যেন ওর নাম উচ্চারণ করল। কিচেনের ভীষণ কোলাহল হট্টগোলের শব্দ ভেদ করে কিংগশ্নে শেকলবোল্টর গম্ভীর গলা ওর কানে এল।
–আচ্ছা ডাম্বলডোর কেন পটারকে প্রিফেক্ট করলেন না? নিশ্চয়ই তার নিজস্ব কোনও কারণ থাকতে পারে, লুপিন বললো।
কিংগস্লে হাল ছাড়লেন না। বললেন, করলে ছেলেটার নিজের ওপর আস্থা বাড়ত। আমি হলে তো তাই করতাম। বিশেষত যখন ডেইলি প্রফেট কয়েকদিন অন্তর অন্তর ওর বিরুদ্ধে লিখে চলেছে।
হ্যারি অন্যদিকে মুখ করে তাকিয়ে রইল। ও চায় না লুপিন, কিংগশ্নে জানতে পারুক ও তাদের কথা শুনেছে। খুব একটা খাবার ইচ্ছে না থাকলেও খাবার টেবিলের দিকে এগিয়ে গেল। পার্টি সম্বন্ধে ওর আনন্দ উবে গেছে। ইচ্ছে হল ওর ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ে।
ম্যাড আই মুডি তখন একটা চিকেন লেগ নাকের ডগায় এনে পরীক্ষা করছিলেন তাতে রন টংকসকে স্প্যানিশ ওক কাঠ দিয়ে হাতল তৈরির ব্যাপারে বলছিল। বলছিল তাতে অ্যান্টি জিঙ্কস বার্নিশ করা আছে, আর রয়েছে ভাইব্রেসন কন্ট্রোল।
মিসেস উইসলি বড় দেখে একটা হাই তুললেন। –আচ্ছা, আমি যাবার আগে বোগার্টের সঙ্গে বোঝাপড়া করে নেব, ঠিক আছে? শুভ রাত্রি হ্যারি।
মিসেস উইসলি চলে গেলে হ্যারি ভাবল–মিসেস উইসলির পিছু পিছু সকলের দৃষ্টি এড়িয়ে চলে গেলে ভালই হত।
মুডি বললো–শরীর ভাল নেই পটার?
পটার মিথ্যে বললো–খুব ভাল আছে।
মুডি ওর কোমরে বাঁধা ফ্লাস্ক থেকে এক ঢোক মদ্যপান করলেন তারপর ওর ইলেকট্রিক নীল চোখে বাঁকাভাবে হ্যারির দিকে তাকিয়ে বললেন–এদিকে এস। আমার কাছে একটা জিনিস আছে সেটা তোমাকে দেব, তোমার ভাল লাগবে।
কথাটা বলে ওর আলখিল্লার ভেতরের পকেট থেকে প্রায় ঘেঁড়াখোড়া ঝাঁপসা হয়ে যাওয়া একটা অতি পুরনো জাদু খেলা দেখানোর ফটো দেখাল।
মুডি জোরে জোরে বললেন–অরিজিন্যাল অর্ডার অব দ্য ফনিক্স। গত রাতে যখন আমি আমার একটা অদৃশ্য হয়ে যাবার ক্লোক খুঁজছিলাম তখন এটা পেলাম। পডমোর এমন অভদ্র এটা আমাকে ফেরত দেয়নি, ভেবেছিল লোকদের এটা দেখে ভাল লাগবে।
হ্যারি, মুডির হাত থেকে ফটোটা নিল। দেখল, কিছু লোক ভিড় করে ওকে দেখে হাত নাড়ছে, কেউ কেউ তাদের চশমা খুলে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
হ্যারি চিনতে পেরেছে তাও অনাবশ্যকভাবে ফটোতে একটা আঙ্গুল দিয়ে নিজেকে দেখিয়ে বললো–চিনতে পারছ এটা আমি। মুডির কোনও সন্দেহ নেই, যদিও ফটোতে ওর মাথার চুল সামান্য ধূসর আর নাকটা ঠিকই আছে। এই যে দেখছ আমার পাশে কে বলত? ডাম্বলডোর। ওর পাশে ডিভেলাস ডিগগল আর এ হচ্ছে মার্লিন ম্যাকিনন, বেচারী মেয়েটি! ছবিটা তোলার দুসপ্তাহ পরে কেউ ওকে মেরে ফেলেছে, তারপর ওর পরিবারের সকলকে মেরে ফেলেছে। এরা দুজন ফ্রাঙ্ক আর অ্যালিস লংবটম।
ফটোতে অ্যালিস লংবটমকে দেখে ওর পেটে ব্যথা করতে লাগল। ওর সঙ্গে সাক্ষাৎ পরিচয় না হলেও ওর মুখটা হ্যারির খুবই পরিচিত। বন্ধুত্ব মাখান মুখের ভাব। শুনেছে ওর মুখটা অবিকল ওর ছেলে নেভিলের মত ছিল।
মুডি ভেঙ্গে ভেঙ্গে বলতে লাগল–বেচারা, ওদের যা ঘটেছিল তাতে সরে যাওয়া ভাল হয়েছে। আর এটা হচ্ছে অ্যাস্মেলাইন ভান্স, তুমি ওকে দেখেছ? আর এ লুপিন, অবশ্যই চিনতে পারছ। বেনজী ফেনউইক ও দেখছি রয়েছে, কে জানে এখন কোথায়। ফটোগ্রাফারের দোষে অনেকেই পিছনে রয়েছে, ওরা সামনে এসে পাড়ালে পারত।
এই দেখ এডগার বোনস, অ্যামেলিয়া বোনসের ভাই। ওর পরিবারের আর কেউ নেই। এডগার খুব ভাল জাদুকর ছিল। স্টারগিস পডমোর, হে ঈশ্বর আমাকে অন্ধ করে দাও, ওকে খুব কম বয়স্ক দেখাচ্ছে। ক্যারাডক ডিয়ারবর্ণ হঠাৎ উধাও হয়ে গেছে দুর্ঘটনার ছমাস পরে। ব্লিমে ওকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। হ্যাগ্রিড, আজও এমনই দেখতে আছে। এলফিয়স ডোগে, তুমি নিশ্চয়ই ওকে দেখেছ, ওই বোকার মত টুপি পরা আমি ভুলতে চাই। গিডিয়ন প্রেওয়ে, পাঁচপাঁচটা রক্তচোষাদের ডেথইটার ওকে খতম করতে লেগেছিল। আর ওর ভাই ফেবিএন, ওদের সঙ্গে দারুণ বীরের মত লড়াই করেছিল। পাশে দাঁড়াও, একটুও নড়বে না।
ফটোর ছোট ছোট লোকেরা কনুই দিয়ে পরস্পরকে গোতা মারতে থাকে, পেছনে যারা ছিল তারা এগিয়ে আসতে চায় যেন।
–হ্যাঁ হ্যাঁ এই ছবিটা অ্যাবার ফোর্থ, ডাম্বলডোরের ভাই। জীবনে ওকে একবারই দেখেছি, যাকে বলে শক্তিশালী পুরুষ। এ হচ্ছে ডোরকেস মেডোজ, মেয়েটিকে ভোল্ডেমর্ট নিজের হাতে মেরে ফেলেছে। সিরিয়স, ওর তখন মাথায় ছোট ছোট চুল, ছবিটা দেখিয়ে ভাবছি তোমার হয়ত আগ্রহ থাকতে পারে!
হ্যারির ফটোটা দেখতে দেখতে হৃদপিন্ডটা যেন বেরিয়ে আসতে চাইছে মনে হল। ওর বাবা-মা বসে রয়েছে বড় বড় চোখে যেন ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছেন তারা। ওয়ার্মটেলের পাশে বসে ওর চোখ যেন অশ্রুতে ভরা। হ্যারি তাকে কখনও ভুলতে পারে? চিনতে পারবে না? বিশ্বাসঘাতক! ওই তো ভোল্ডেমর্টকে ওর বাবা মার গোপন আস্তানার সন্ধান দিয়েছিল, তাদের হত্যার সহায়তা করেছিল।
কী ভাবছ?
হ্যারি মুডির ছোট ছোট গর্ত, আর কাটা দাগে ভরতি মুখের দিকে তাকাল। মুডির মুখ দেখে মনে হয় ও হ্যারিকে হয়ত খুশি করতে পেরেছে।
–ঠিক আছে, হ্যারি বললো হাসবার ব্যর্থ চেষ্টা করে, ও হ্যাঁ মনে পড়েছে, কাল তো আমাকে হোগার্টসে যেতে হবে, অনেক কাজ পড়ে আছে।
ভাবতে চেষ্টা করল কি করবে। সিরিয়স বললেন, ওপরে তোমার কি কাজ আছে ম্যাড আই মুডি ওর দিকে তাকালেন। হ্যারি কিচেন থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে লাগল। কাউকে ডাকার সুযোগ দিল না।
হ্যারি, মুডির দেখান ফটোটার আগেও ওর মা-বাবার ছবি দেখেছে; কিন্তু বুঝতে পারছে না মুডির ছবি দেখার পর ওর মন এত বিষণ্ণ, এত চঞ্চল হয়ে গেছে কেন। ওয়ার্মটেলকে ও অনেকবার দেখেছে। কিন্তু ফটোর ছবিগুলো ওর দিকে অমনভাবে তাকাবে কেন? যখন ওদের অনেককেই চেনে না। কেউ পছন্দ করবে না। ও রেগেও গেল।
বাবা-মাকে ঘিরে যারা রয়েছে, সকলেরই মুখে হাসি। ফেনউইক যাকে টুকরো টুকরো অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। গিভিয়ন প্রিওয়েট বীরের মত মৃত্যুবরণ করেছে, লংগবটম পাগল বলে ওকে টর্চার করে মেরে ফেলা হয়েছে, ওরা তো কেউ আর ফিরে আসবে না। মুডি হয়ত ভাবছে জীর্ণ গ্রুপ ফটোটা খুব ইন্টারেস্টিং, কিন্তু মুডি কি বুঝতে পারেনি হ্যারির কাছে ছবিটা খুব বিরক্তিকর লেগেছে।
প্রথম ল্যান্ডিং-এ পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে শুনতে পেল কে যেন ড্রইং রুমে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।
হ্যালো, হ্যারি বললো।
কোনও জবাব এলো না, কান্না বন্ধ হল না। ও সিঁড়ির একসঙ্গে দুটো ধাপ লাফিয়ে লাফিয়ে উঠে ড্রইং রুমের দরজাটা খুলল।
ও দেখল একটি মেয়ে অন্ধকার দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে রয়েছে। হাতে ওর জাদুদণ্ড। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার সাথে সাথে ওর সমস্ত দেহটা কাঁপছে। ধূলোতে ভরা জীর্ণ কার্পেটে জানালা দিয়ে চাঁদের আলো ঠিকরে পড়ছে। কে ও? রন? রন মৃত!
হ্যারির বুকের ভেতরটা মনে হল যেন শূন্য হয়ে গেছে, ও যেন ঘরের মেঝে থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে নিচে পড়ে যাচ্ছে, ওর ব্রেইন জমে বরফ শীতল হয়ে গেছে। রন মরে গেছে, না, না, হতেই পারে না।
কিন্তু রন? রনকে তো এইমাত্র ও কিচেনে দেখে এসেছে।
–মিসেস উইসলি, ভীষণ জোরে হ্যারি চিৎকার করে উঠল। মিসেস উইসলি হাঁফাতে হাঁফাতে ঘরে ঢুকে রনকে দেখে ওর জাদুদণ্ড কাঁপা কাঁপা রনের মৃতদেহের ওপর বোলাতে বোলাতে অসম্ভব শব্দভেদী চিৎকার করে উঠলেন, র… র… এ কেমন করে হল?
রনের মৃতদেহ একটু একটু রূপান্তরিত হয়ে গেল বিলের মতো। ও ঈগলের ডানার মত দুহাত ছড়িয়ে শুয়ে পড়লো ওর দুচোখ বিস্ফোরিত শূন্যতায় ভরা।
মিসেস উইসলি আরও জোরে কেঁদে উঠল। অদ্ভুত অসম্ভব, অসম্ভব এ হতে পারে না।
ক্র্যাক
বিলসের মৃতদেহের বদলে হয়ে গেল মি. উইসসলি। চোখের চশমা কাত হয়ে পড়ে আছে, ঠোঁটের এক কোণা থেকে রক্ত বেরিয়ে আসছে।
ক্র্যাক, মৃত দুই যমজ ভাই, ক্র্যাক পার্সি মৃত ক্র্যাক হ্যারি মৃত…।
হ্যারি মিসেস উইসলির দিকে তীক্ষ্মদৃষ্টিতে তাকিয়ে চিৎকার করে বললো মিসেস উইসলি এখনই এখান থেকে আপনি চলে যান।
ব্যাপার কি, এত গোলমাল কিসের? লুপিন দৌড়াতে দৌড়াতে ঘরে ঢুকে বললো। লুপিনের পর প্রায় একইসঙ্গে ঘরে ঢুকলেন সিরিয়স, মুডি বললেন অসম্ভব।
হ্যারির দেহ অদৃশ্য হয়ে গেল। যেখানে ওর দেহ পড়েছিল সেখানটায় গোলাকার রূপালি বাষ্পে ঘিরে রইল। লুপিন তার জাদুদণ্ডটা ঘোরাতেই রূপালি বাষ্প ধোয়ার মত উবে গেল।
মিসেস উইসলি দুহাতে মুখ ঢেকে তীব্র স্বরে হাউ হাউ করে কাঁদতে লাগলেন।
–মল্লী, লুপিন ওর কাছে গিয়ে বললেন–কেঁদো না।
মিসেস উইসলি সান্তনা পাবার জন্য লুপিনের কাঁধে মাথা রাখলেন।
সিরিয়স কার্পেটের প্যাঁচের দিকে তাকালেন। ওখানেই বোগার্ট, হ্যারির রূপ ধরেছিল। লুপিন, হ্যারির দিকে তাকাতেই ও দৃষ্টি সরিয়ে নিল।
লুপিন বললেন–মন্ত্রী এসব বোগার্টের কাণ্ড। স্টুপিড বোগার্ট।
–হ্যারি, আমি দুঃখিত, কে জানে তুমি কি ভাবছ, মিসেস উইসলি বললেন।
–আমরা একটা বোগার্টের হাত থেকে বাঁচাতে পারলাম না।
হ্যারি হাসার চেষ্টা করে বললো–ওসব কথা ভাববেন না।
মিসেস উইসলি আগের মত কাঁদতে কাঁদতে বললেন–আমি আর আর্থার মরে গেলে, বাকি ছেলে–মেয়েরা বাঁচবে কেমন করে, পার্সিও আমাদের ভুলে গেছে।
–ওহ মল্লি কবে থেকে তুমি শুনছো ভোন্ডেমট ফিরে এসেছে। আমি তোমাকে এইটুকু বলতে পারি তোমাদের কারও কোন ক্ষতি হবে না। তুমি কি মনে কর তোমরা মরে গেলে, তোমার ছেলে-মেয়েরা তোমাদের কবরের কাছে গিয়ে অভুক্ত হয়ে মরে যাবে?
হ্যারি ওর ঘরে চলে গেলো। ফটোতে -বাবার হাসি হাসি মুখের কথা মনে হল। বোগার্ট তাহলে রন, হারমিওন ওদের মৃতদেহের রূপ ধারণ করেছে? কোনও সূচনা না দিয়ে ওর কপালের ক্ষতটা জ্বালা করতে শুরু করল। চুলকানি বন্ধ হলে ও ক্ষততে হাত বুলাতে লাগল।
–মাথাটা কেটে ফেলব, হ্যারি দৃঢ় স্বরে বললো।
–পাগলের প্রথম লক্ষণ, নিজের মাথা নিজে কাটার কথা বলছে। দেয়ালে টাঙ্গানো একটা ফাঁকা ফ্রেম থেকে ধূর্ত কণ্ঠে কেউ বললো।
হ্যারি সে কথার ভ্রুক্ষেপ করল না। নিজেকে এই প্রথম যেন বয়স্ক মনে হল। ভাবতে ওর আশ্চর্য লাগল মাত্র একঘণ্টা আগেও তো ও জোকশপ আর প্রিফেক্ট ব্যাজ নিয়ে জোক করেছে, এখন তারা নেই।
ঘর ছেড়ে চলে আসার আগে ওর মুডির কথাটা কানে ভাসতে লাগল। পার্সি সম্বন্ধে তুমি চিন্তা করবে না, গতবারে ডেথ ইটাররা আমাদের চেয়ে বিশগুণ বেশি ছিল। আমাদের একটা একটা করে তুলে নিয়েছিল। এখন অর্ডার বানাবার পর সেই অবস্থা নেই। আমরা শক্তিশালী হচ্ছি। শুধু সময়ের অপেক্ষায় সমগ্র মিনিস্ট্রি আমাদের কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা ভিক্ষা চাইবে। আমি বলতে পারছি না ওইসব ভোল্টেমর্টের অনুগামীদের ক্ষমা করা যাবে কি না।